#সেরা উপহার
#সেরা উপহার
পার্কের কাছটায় ল্যাম্প-পোস্টের আবছা আলোয় একটা আলো আঁধারির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল মেয়েটা। একটা ছোট কুর্তি আর জিন্স পরা। হাতে একটা ব্যাগ।
বাইকের আলোয় ওকে দেখতে পেয়ে দুটো বাইক থেমে গেছিল, মদ্যপ ছেলে তিনটে বাইক রেখে এগিয়ে গেল। মুখে চটুল হিন্দি গানের কলি। অসহায় মেয়েটা একবার চারপাশে তাকালো, ফাঁকা সল্টলেকের রাস্তায় কেউ কোথাও নেই। মেয়েটা দৌড়ে আরো অন্ধকারে চলে গেলো। পেছন পেছন ছেলে গুলো।
একটা পাশবিক চিৎকার, তারপর তিনটে ছেলের যন্ত্রণা কাতর চিৎকার রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে ভেসে এলো বহু দূর পর্যন্ত।
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে এ গলি ও গলি পার করে সেন্ট্রাল পার্কের পাশে চলে এলো মেয়েটা। একটা গাড়ি জোরে ব্রেক কষেছিল। হেড লাইটের আলোয় শিকার খুঁজে পেয়েছিল নরপশুর দল। শিস দিতে দিতে বেরিয়ে এসেছিল হায়নারূপী চারটে যুবক। মেয়েটা অন্ধকারে লুকিয়ে পড়েছিল। চারপাশে খুঁজতে নেমেছিল শিকারির দল। ওদিক থেকে যেন কার চিৎকার শোনা গেল। বাকি দুজন ছুটে যায়। কিছু বোঝার আগেই চোখ মুখে অসহ্য যন্ত্রণা, জ্ঞান হারায় দুজনেই।
অন্ধকারে রাস্তার ধারে পার্কিংএ গাড়িটা রাখা ছিল। গাড়িটা থেকে ব্যাগে আরো বোতল ভরে নেয় মেয়েটা। গাড়িটা রেখেই গলি পথে এগিয়ে চলে।
নির্জন জায়গাটায় বসে নেশা করছিল ওরা তিনজন। এত রাতে একটা মেয়েকে আসতে দেখে নেশা কেটে যায়, লালসা চকচক করে দু চোখে। এত রাতে এই নির্জন জায়গায় মেয়েটাকে দেখে এগিয়ে আসে ওরা। কাছাকাছি আসতেই ....
. মেয়েটা ওর ব্যাগ থেকে কি যেন ছুঁড়ল। দুজনই যন্ত্রণায় নীল হয়ে মাটির বুকে লুটিয়ে পড়ে....
এত তাড়াতাড়ি কি হল বোঝার আগেই তৃতীয় জনের মুখেও এসে পড়ল কিছু...... সব অন্ধকার। এতদিন এ ভাবে কত মেয়ের সর্বনাশ করেছে ওরা, আজ ....
পরদিন সকালে সব চ্যানেলে একটাই খবর।মাঝ রাতের পরের ঘটনা বলে পেপারে ছোট করে বেরিয়েছে। আগেরদিন রাতে সল্টলেকের পাঁচ জায়গায় অ্যাসিড আ্যটাকে সতেরোটি যুবক আহত। এগারো জনের অবস্থা খুব আশংকাজনক, বাকিরা বলেছে কোনো মেয়ে এই আ্যটাক করেছে। যুবকরা প্রায় প্রতেকেই মদ্যপ ও নেশারু। যুবতীর কোনো খবর নেই।
সবাই সেই মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কোথাও আবার এই প্রশ্ন উঠেছে এ ভাবে কেউ আইন কে কাঁঁচকলা দেখিয়ে এসব করবে কেন ? মানবিক কিছু মুখ সরকারকে আর আইন ব্যবস্থাকে তুলোধোনা করছে। চ্যানেলগুলো বড় বড় বিজ্ঞ জনের সাথে বসে এই ঘটনার চুলচেরা বিচার করতে ব্যস্ত। বেশিরভাগ চ্যানেল বলছে মেয়েটি নিজেও কোনো অ্যাসিড আ্যটাক ভিকটিম। একটি চ্যানেল আবার এর মধ্যে কয়েকজন অ্যাসিড আ্যটাক ভিকটিম মেয়ে জোগাড় করে তাদের ব্যাখ্যা শোনাচ্ছে। রোজকার চেনা ছবিটাই বদলে দিয়েছে একটি মেয়ে। সবাই সিরিয়াল ছেড়ে আজ এ সব দেখতেই ব্যস্ত।
টিভিটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় উদিতা। পাশেই দাদার বড় করে বাঁধানো ছবিতে টাটকা ফুলের মালা। আজ দাদার জন্মদিন, আবার মৃত্যুদিনও। তিন বছর আগে এই দিন রাতেই সেক্টর ফাইভের অফিস থেকে ফেরার পথে এক যুবতীকে শ্লীলতাহানির থেকে বাঁচাতে গিয়ে সল্টলেকের রাস্তায় খুন হয়েছিল তার দাদা উদয়। কদিন চ্যানেল গুলো গরম গরম খবর পরিবেশন করেছিল,মোমবাতি মিছিল আর প্রচুর প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে গেছিল। তারপর লড়াইটা উদিতার একার হয়ে গেছিল। প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করেও কিছু হয় নি, কেউ ধরা পড়েনি। আজ এই বিশেষ দিনে এটাই তার তরফ থেকে দাদাকে আজ জন্মদিনের উপহার। তিনবছর ধরে নিজেকে এই দিনটার জন্য প্রস্তুত করেছিল সে। গাড়ি চালানো থেকে টিপ প্র্যকটিস, তার সাথে কিছু শারীরিক কসরৎ, ক্যারাটেটা ছোটবেলায় শিখেছিল, আবার নতুন করে প্রাকটিশ, আরো অনেক কিছু। ভিতু, লাজুক মেয়েটার আবার পুনর্জন্ম হয়েছিল।
উদিতা সঙ্কল্প করছে এভাবেই ধীরেধীরে সমাজকে কলঙ্ক মুক্ত করবে সে। আবার ধীরে ধীরে অ্যাসিড জোগাড় করে রাখতে হবে। এখন যতদিন এসব নিয়ে চ্যানেলগুলো খবর করবে একটু চুপচাপ থাকতে হবে। তারপর সব ঠান্ডা হলেই আবার....
দাদার ফটোর সামনে ধুপ জ্বালিয়ে দাদার প্রিয় গানের সিডি চালিয়ে দেয় , বেজে ওঠে -"সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজের অপমান......"
সমাপ্ত