Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Drama

4  

Debdutta Banerjee

Drama

বৃহন্নলা

বৃহন্নলা

9 mins
5.6K


সানাইয়ের সুর আর লোক সমাগমে সেজে উঠেছে অনুষ্ঠান বাড়ি। আজ যুথির বড় মেয়ের বিয়ে। ঋতিকার গায়ে হলুদ সবে শুরু হয়েছে। হঠাৎ বাইরে এক বিজাতীয় কোলাহলে সবাই বেরিয়ে এল। অনুষ্ঠান বাড়ি দেখেই এক দল বৃহন্নলা এসে ঘিরে ধরেছে। ওরা নাচতে চায়, মেয়েকে আশির্বাদ করতে চায় আর বদলে চায় মোটা বকশিশ।

প্রায় জোড় করেই দলটা ঢুকে পড়ে ভেতরের প্রাঙ্গনে। দলের মুখ‍্য চরিত্র এক বয়স্ক হলুদ শাড়ি পরিহিতা, দু জন মাঝ বয়সী আর তিনজন অল্প বয়সী বৃহন্নলা। লাস‍্যে হাস‍্যে সাজগোজে শাড়ি পরার স্টাইলে ফুটে ওঠে ওদের পরিচয়।

ঋতিকার গায়ে হলুদ লাগিয়ে ওরা তালি বাজিয়ে গান ধরে। ঋতুজা ছিল দোতলায়, গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে এসেছিল ছেলের দুই ভাই বৌদি আর কয়েকজন বন্ধু। তাদের আপ‍্যায়নে ব‍্যস্ত ঋতিকা এসব দেখে যার পর নয় বিরক্ত। ঋতিকা বরাবর কোমল নরম চুপচাপ শান্ত। চেহারাতেও রয়েছে নারীসুলভ কমনীয়তা, কিন্তু মাত্র এগারো মাস দশ দিনের ছোট ঋতুজা একদম উল্টো। চেহারাতেও একটা পুরুষালি ছাপ আর তার সঙ্গে সব সময় প্রতিবাদ করা ওর স্বভাব। ছোট থেকেই মেয়েটা অন‍্যরকম। ঋতিকা একটা বাচ্চাদের স্কুলে পড়ায়, ঋতুজা একটা ব‍্যাঙ্কে কাজ করে। যুথি খুব কষ্টে দুই মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছে। তবে মা ও দিদির অভিভাবক বকলমে ঋতুজা। ওদের মা যুথি ছোট মেয়েকে একটু সমঝে চলে বরাবর। একটু বেশি ভালোও বাসে। আসলে বয়স কালে যে প্রতিবাদ গুলো নিজে করতে পারে নি সে গুলো মেয়েকে করতে দেখে সর্বদা সমর্থন করেই এসেছে। ছোট মেয়েকে ছেলের মত করেই গড়েছিল যুথি।

একটা প্রাইভেট স্কুলে চাকরি করে খুব কষ্টে মেয়েদের বড় করেছিল যুথি। আসলে ঋতিকার জন্মের পরেই শ্বশুর বাড়ির লোকেদেন

র মুখ হাড়ি হয়েছিল। খুব তাড়াতাড়ি ওনারা পুত্র সন্তান চেয়েছিলেন। তমাল বাবু ভেবেই নিয়েছিলেন দ্বিতীয় সন্তান ছেলেই হবে। কিন্তু ওদের সব হিসাব গোলমাল করে যখন ঋতুজা এলো ওর যুথির আর শ্বশুর বাড়িতে ঠাঁই হয়নি। প্রতিবাদ করতে পারেনি যুথি। মুখ বুজে অন‍্যায় কে মেনে দাদার বাড়ি ফিরেছিল। একটু সামলে নিয়ে স্কুলের চাকরি নিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে চলে এসেছিল। ওর ভেতর সেই অদম‍্য রাগ আর প্রতিবাদী হওয়ার ইচ্ছা বোধহয় ধীরে ধীরে ছোট মেয়ের মধ‍্যে সংক্রামিত হয়েছিল। খুব ছোটবেলায় ঋতুজার শরীরে এক জটিল অস্ত্রপাচার হয়েছিল। তখনো শ্বশুরবাড়ির কেউ এসে পাশে দাঁড়ায় নি যুথির।

আজ একুশ বছর পর ঐ কথা গুলো ভাবলে কেমন যেন লাগে।

নিচের গুঞ্জন এবার চ‍্যাচামেচিতে পরিণত হয়েছে। ঋতুজা নিচে নেমে আসে। মা কে কোথাও দেখতে না পেয়ে এগিয়ে যায় ঐ প্রাঙ্গনে। বৃহন্নলাদের দাবী এগারো হাজার টাকা। মামা আর মাসিরা সেটা কমাতে চেষ্টা ক‍রছে। ওরা কিছুতেই কমাবে না। ওরা নাকি মেয়ের বাড়ি কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার নেয়, ছেলের বাড়ি আরো বেশি।

ছোট থেকে কষ্ট করে বড় হয়েছে ঋতুজারা। টাকার মুল‍্য তাই ভালোই বোঝে। দিদির বিয়েতে পাত্র পক্ষের যদিও কোনো দাবী নেই তবুও ও জানে মায়ের তিল তিল করে জমানো টাকা কি করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নিজেরা চাকরি করলেও টাকাটা মায়ের হাতেই দেয় ওরা দু বোন।

-''এগারো হাজারের একটা টাকাও কম নেবো না। এত ঠাটবাট চমক ঝমক আর আমাদের খুশি ক‍রতে তোদের হাত খোলে না কেন রে চিকনা?''

মামাতো দাদাকে উদ্দেশ‍্য করে বলে একজন বৃহন্নলা।

-''একটা পয়সাও দেবো না। বেরিয়ে যাও বলছি। '' ঋতুজা থাকতে না পেরে চিৎকার করে ওঠে।

-''আমাদের তাড়িয়ে দিলে তোদের ভালো হবে না। হায় লাগবে হায়। ''

-''সরকার তোমাদের অর্থ সাহায‍্য করে, তাও তোমরা এমন জুলুম বাজি করছো কেনো।?'' ঋতুজার তেজ একটুকো কমে না। ওর পেছনে তখন আত্মীয়দের চাপা গুঞ্জন, বৃহন্নলাদের রাগাতে চায় না কেউ।

ঋতিকা এসে বোনকে আটকায়, বলে -''এমন করিস না। এটাই ওদের জীবিকা। আর আমার কথাটা একবার ভাব। ''

কিন্তু ওর বোন শুনবে না। বলে -''তুই ভেতরে যা দিদি। আমি দেখছি। ''

-''তুই জানিস বেটি সরকার কি করে ? আমাদের সব খবর রাখিস তুই ?'' বয়স্ক বৃহন্নলা এগিয়ে আসে।

-''কত এনজিও আছে তোমাদের জন‍্য , কত রকম প্রোজেক্ট হচ্ছে তোমাদের নিয়ে .... "

-''এত খবর রাখিস তুই !! তা বল না সরকার কি দেয় ?'' আরেকজন বলে ওঠে।

-''দেখো, সবাই কষ্ট করে রোজগার করে। সেই টাকা তোমাদের এভাবে বিলিয়ে দেবো কেনো ?'' ঋতুজা কিছুতেই হার মানবে না।

এবার নোংরা গালাগালি ভেসে আসে। ঋতুজাও সমানে যুক্তি দিয়ে চলেছে। ঋতিকা সরে আসে, মনটা ভার হয়ে ওঠে ওর। মা ছোট থেকে শিখিয়েছিল এদের সন্মান করতে। বোনটা কি সব ভুলে গেলো!!

ওদিকে বাকিরা বেশ মজা নিচ্ছে। ট্রেনে বাসে ট্র‍্যাফিক সিগনালে এমন তামাশা হামেসাই দেখা যায় যদিও।

হঠাৎ যুথি কোথা থেকে এসে পৌছায় আর এগিয়ে যায় ওদিক পানে। ঋতুজা তখন তুমুল ঝগড়ায় ব‍্যস্ত। যুথি ওকে টেনে আনতে পারে না। হাত জোড় করে বৃহন্নলাদের বলে -''অবুঝ মেয়ে আমার , তোমরা কিছু মনে করো না। আমি তোমাদের খুশি করে দেবো। আমার মেয়েদের যেন অকল‍্যাণ না হয়। ওদের একটু আশির্বাদ করো। ''

ঋতুজা মাকে আগেও দেখেছে ওদের রাস্তা ঘাটে সাহায‍্য করতে। কিন্তু আজ এভাবে ওদের পক্ষ নিতে দেখে অবাক। বলে -''ওদের ভয় পাচ্ছো কেন মা? ওদের অভিশাপে আমাদের কিছুই হবে না। ট্রাষ্ট মি। ''

-''চুপ করো। তুমি ভেতরে যাও, আর মানস, তুমি ওনাদের ভেতরে নিয়ে জলখাবার খাওয়াও। আমি টাকার ব‍্যবস্থা করছি। ''

-''আমরা জলখাবার খাবো না। টাকা দিলে চলে যাবো। '' আরেকজন বলে ওঠে।

বয়স্ক বৃহন্নলা যুথির দিকে তাকিয়ে ছিল। যুথিও এতক্ষণ ওকে দেখে নি। হঠাৎ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে চমকে ওঠে। মানস যুথির দাদার ছেলে। ও যুথির কানের কাছে মুখ এনে বলে -''এগারোই দেবে মাসি? একবার বলে দেখো যদি ....''

-''আরতি মাসি ....'' যুথির গলা দিয়ে অস্ফূটে উচ্চারণ হয় শব্দ দুটো।

-''চিনতে পারলি ... আমি ভাবলাম ... যাক সে সব কথা। তোর মেয়ের বিয়ে বুঝতে পারি নি বেটি। যা দিবি খুশি হয়ে দে। খালি হাতে ফেরাতে নেই আমাদের। '' বয়স্ক বৃহন্নলার স্বরে আর সেই তেজ নেই।

-''তুমি ওনাকে চেনো মা ? "ঋতিকা কখন যেন গা ঘেসে এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। "আমার খুব ভয় করছে। বোনটা কেন এমন করল ?''

-''ওনাদের প্রণাম করো। আর ঋতু ... কোথায় গেলো ও ?'' যুথি চারদিকে তাকায়।

ঋতুজা রাগে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। মা যে কেন এমন করল ওর মাথায় আসে না। এদের তাড়াতে ওর দু মিনিট লাগত শুধু।

মানসদার ছেলে এসে বলে -''ছোট পিপি, ঠামাই ডাকছে বাইরে। "

আবার কি হল কে জানে। জটলাটা ছোট হলেও ঐ হিজড়া গুলো এখনো আছে। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঋতু এগিয়ে যায়।

যুথি ওকে দেখে বলে -''এদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও ঋতু। আর এমন কখনো করো না। ঈশ্বর ওনাদের এভাবে সৃষ্টি করেছেন। আমরা ভাগ‍্যবান যে আমরা এমন নই। ''

ঋতু গোজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মা হঠাৎ ক্ষেপে উঠল কেনো কে জানে। টাকা দিয়ে বিদায় করলেই হয়। তা না করে.... ।

-''কি হলো, ক্ষমা চাও। আর প্রণাম করো। ''

হঠাৎ রুখে ওঠে ঋতুজা। বলে -''প্রণাম কিসের জন‍্য। আর অন‍্যায় করি নি যে ক্ষমা চাইবো। উচিত কথাই বলেছি। ''

-''যা বলছি করো। আমি ওনাকে চিনি। মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধা করি। কিছু এমন কথা আছে যা জানলে তুমিও শ্রদ্ধা করবে । এখন .....''

-''ছোড় না বিটিয়া, ও বাচ্চা আছে। আমরা মনে লাগাই নি। যা ঘর যা বিটিয়া রাণী। '' আরতী বলে ঋতুর উদ্দেশ‍্যে।

চোখের জল মুছে যুথি টাকার বান্ডিল এগিয়ে দেয়। বলে -''আমাদের ভুল বুঝো না। ''

বিয়ে বাড়ির আনন্দের ফাঁকে কাঁঁটার মতো বিধে থাকে ঘটনাটা। ঋতু কিছুতেই ভুলতে পারে না একদল হিজড়ার প্রতি ওর মায়ের পক্ষপাতিত্বর কারণ। চোখ ফেটে জল আসে। যতটা সম্ভব মায়ের থেকে দূরে সরে থাকে, বিকেলে দিদিকে সাজতে পাঠিয়ে ও দোতলার ঘরে উঠে আসে। সবাই এখন সাজতে ব‍্যস্ত। মা ক্লান্ত হয়ে একটু শুয়েছিল কোনের ঘরে। ঋতুর খুব অভিমান হয়। সকালের চেপে রাখা রাগ আর কান্না বিদ্রোহ করতে চায়। অকারণে আলমারিটা ঘটাং করে খোলে ও, তারপর ফেডেড জিন্স আর নেটের টপটা তুলে নেয় পরবে বলে। ছোট থেকেই ঋতু ছেলেদের পোশাক বেশি পরে। দিদির বিয়েতে মা প্রথম শাড়ি কিনে দিয়েছিল ওকে, সকালে মায়ের অনুরোধে হলুদ চুড়িদার পরেছিল। কিন্তু এখন রাগের বহিঃ প্রকাশ দেখাতে ঐ জিন্স আর টপটাই ঠিক হবে। চুল গুলো পনিটেল করে টপটা পরতেই মা উঠে বসে। সূর্যের শেষ আলোর রেশ ধরে ঘরের মধ‍্যে এক অদ্ভুত আলো আঁঁধারের খেলা চলছে।

-''তুই তখন মাত্র কয়েকদিনের, তোদের বাবা আর তার পরিবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, তুই ছিলি প্রি ম‍্যাচিওর । আমি তোকে নিয়ে একাই লড়ছিলাম। হঠাৎ ডাক্তার বলল তোর শারীরিক গঠনে বেশ কিছু জটিলতা আছে।

তোর বাবা মনে প্রাণে ছেলে চেয়েছিল । আমিও ওদের হাতের পুতুল ছিলাম তখন। কত শিকড় বাকর, জল পড়া, তাবিজ, কবচ করেছিল তোর ঠাকুমা, যা দিত খেয়ে নিতাম। হয়তো তার ফলেই ... বিধাতা হয়তো অলক্ষ‍্যে হেসেছিল। খোদার উপর হাত চালানো !! তোর শরীরে পুরুষদের বেশ কিছু লক্ষণ ছিল। আর হাসপাতালের আয়াদের কল‍্যানে সে খবর পৌঁছে গেছিল ওদের কানে। হাসপাতালে এসেছিল ওরা তোকে নিয়ে যেতে। এক মায়ের কোল খালি করে তার দুধের সন্তানকে নিয়ে নিতে, ডাক্তারবাবু আটকেছিলেন। বলেছিলেন খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করলে তুই সম্পূর্ণ নারী হয়ে উঠবি। না, পুরুষ হবি না কিছুতেই। তবে জননাঙ্গ থাকায় তোকে নারীর রূপ দেওয়া সম্ভব। তবে প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। আর হাতে সময় কম। দেরি করা যাবে না।

আমার তখন হাতে টাকা নেই। তোর বাবা শুনে বলেছিল নিয়ে যাক ওরা। আপদ বিদায় হবে। ঠাকুমা দাদু কেউ টাকা দেয়নি। মামাদের ক্ষমতা ছিল সীমিত। আমি ভগবানকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত। ঠিক তখন ঐ আরতি মাসি এসেছিল ভগবানের রূপ নিয়ে। ওর দলের সাথে ঝগড়া করে ও একাই এগিয়ে এসেছিল সেদিন। তুই সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠবি এটা শুনেই ও ওদের দলকে বুঝিয়েছিল। ওরা লোকের বাড়ি শুভ কাজে নাচ দেখিয়ে টাকা নেয়, রাস্তায় নাচে সব পেটের জন‍্য। সেদিন ওরা না দাঁঁড়ালে আজ হয়তো তোকেও ওদের মত কোনো বিয়েবাড়িতে গিয়ে নেচে .....''

-''চুপ করো মা। এসব কি বলছো!!''

-''ঠিক বলছি। সাত মাসের মাংসের ডেলা ছিলিস, পূর্ণতা পায়নি অঙ্গ। একমাত্র ডাক্তার রায় বলেছিল অপারেশন করে তোকে মেয়ে বানানো সম্ভব। কিন্তু কয়েক লাখ টাকা দরকার। ঐ আরতি মাসি ওর দলের বিরুদ্ধে গিয়ে তোর পাশে দাঁড়িয়েছিল সেদিন। আমি তো জন্ম দিয়েছিলাম। ও তোকে দিয়েছিল জীবন। নারীর পরিচয়। পৃথিবীতে আরেকটা হিজড়ার সংখ‍্যা বারুক ও চায়নি। এক মাসে ও টাকাটা জোগাড় করে তোর অপারেশন করিয়েছিল। তোর বাবা ও অন‍্যান‍্য আত্মীয়রা যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তখন ও ঢালের মত পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।

আজ হয়তো এই টাকায় ও আবার কারো চিকিৎসা করাবে। হয়তো কোনো মেয়ের পড়ার টাকা অথবা বিয়ের খরচ দেবে ওরা। হয়তো কোন অসহায় বৃদ্ধর ভরসা হবে, কোন ভিখারির মুখে খাবার তুলে দেবে। তুই বল তো মা ওদের জীবনে আনন্দ কতটুকু ? ওরা কি এই টাকা নিয়ে ফুর্তি করে? ওদের জীবনের দুঃখের খবর কতটুকু রাখিস তুই? তোর চিকিৎসার জন‍্য টাকা জোগাড় করতে ওকে কত কি যে করতে হয়েছিল ....''

-''আর বলো না মা। '' কান্নায় গলা বুজে আসে ঋতুর। তেজি প্রতিবাদী মেয়েটা জড়িয়ে ধরে যুথির পা। বলে -''আগে বলোনি কেনো মা ?''

-''তুই যখন ছোট মাঝে মাঝে আরতি মাসি তোকে দেখতে আসতো। তারপর আমি ভাড়া বাড়িতে চলে গেলে আর যোগাযোগ ছিল না। চাকরি নিয়ে শহরের অন‍্য জায়গায় চলে গেছিলাম। তবে রাস্তায় ওদের দেখলেই খোঁজ নিতাম। আজ এই শুভ দিনে আরতি মাসির দেখা পাবো কখনো ভাবিনি। ওর ঋণ কখনো শোধ হবে না। কিন্তু ওর মত সব বৃহন্নলা দের আমি শ্রদ্ধা করি। ওর দয়ায় তোকে পেয়েছি। ও আমায় লড়তে শিখিয়েছিল। ''

কখন যে বাইরে আঁধার নেমেছে ওরা মা মেয়ে টের পায়নি। অনুষ্ঠান বাড়ির বাইরে ঝোলানো রঙিন আলোর মালা জ্বলে উঠতেই ঘরে এসে পড়ে এক টুকরো রামধনু রঙ। ঋতু উঠে পড়ে মা কে ছেড়ে। জিনসটা পরে একটা ছোট ব‍্যাগ নিয়ে ছুটে নেমে যায় নিচে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বসে যুথি। পাগল মেয়েটা কি করে বসবে কে জানে। কিন্তু আজ না বললে কোনোদিন বলাই হত না কথা গুলো। ওর জানা উচিত সবটা।

লাল বেনারসীতে চন্দনের সাজে অপরূপা হয়ে সিংহাসন আলো করে বসে আছে ঋতিকা। সন্ধ‍্যা থেকে বোনটার দেখা নেই। বর আসলো বলে। কে জানে পাগলীটা কোথায়।

হঠাৎ কমলা কাঞ্জিভরণ শাড়ি পরা ঋতুজাকে আসতে দেখে চিনতে পারেনি ঋতিকা। আর ওর সঙ্গে ওরা কারা? ঐ সকালে যাদের সাথে ঝামেলা হয়েছিল .... ঠিক ঐ হিজড়া গুলোকে কেন টেনে আনছে ঋতু? চমকে ওঠে ঋতিকা। আবার কি ঝামেলা বাধাবে বোন!!

যুথিও ওদের দেখে এগিয়ে আসে। আরতি মাসি আর ওর দল ভীষণ অপ্রস্তুত। বিয়েবাড়িতে নাচতে গাইতে এলেও এ ভাবে অতিথির মতো কখনো ওরা আসেনি আগে। সমাজে ওদের স্থান এখনো সবার নিচে। আর আজ এই পাগলী মেয়েটা ওদের এনে বসিয়ে দিয়েছে মন্ডপের মাঝে। সবাই আরষ্ঠ, মেয়েটা এমন করে টেনে আনল যে ওরা আসতে বাধ‍্য হলো।

ঋতু এসে দিদিকে জড়িয়ে ধরে, বলে -''সকালের জন‍্য আমি ক্ষমা চাইছি। ওরা আজ আমার অতিথি দিদি। তুই রাগ করিস না। ''

-''কি মিষ্টি লাগছে তোকে বোন। কে সাজিয়ে দিল এত সুন্দর করে?'' ঋতিকা বোনকে দেখে মুগ্ধ। আর ব‍্যবহারেও অবাক।

ঋতু আরতি মাসিকে দেখিয়ে বলে -''ঐ যে আমার আরেক মা, আজ জানলাম ওনার জন‍্য আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে রয়েছি। ঐ মা আজ আমায় সাজিয়েছে। বাকিটা তোকে পরে বলব। ঐ বোধহয় বর এলো রে। ''

বাইরে তখন ব‍্যান্ড পার্টির আওয়াজ আর আতস বাজির রোশনাই। শাড়ি সামলে ঋতু ছোটে বাকিদের সাথে বর দেখতে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama