LegendOfRam-Sight Beyond Sight
LegendOfRam-Sight Beyond Sight
...সমস্ত প্রাণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে – বলে তিনি চুপ করে গেলেন। কিন্তু কে করল সেই প্রাণ বিনাশ? কোন দানবীয় শক্তির প্রভাবে এ ঘটনা ঘটল? আর এত বড়, এত সুন্দর গ্রহ থেকে প্রাণ বিনষ্ট করা সম্ভবই বা হল কেমন করে? তিনি অবশ্য নিরুত্তর রইলেন।
অবশ্য, যত নতুন দৃশ্যের সঙ্গে অষ্টবসু পরিচিত হচ্ছেন তত তাঁর জ্ঞানবৃদ্ধি ঘটছে একথা অনস্বীকার্য। উদাহরণস্বরুপ, যে কক্ষে তিনি আছেন তার উত্তরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণসার আকাশের দিকে চোখ রাখলে অগুন্তি তারাদের মাঝখানে প্রথমেই একটা বিরাট গোলোকের দর্শন পাওয়া যায়। মহর্ষি মার্কন্ডেয় তাঁকে অভিহিত করেছেন বৃহষ্পতি গ্রহ বলে। আবার, দক্ষিণের জানালায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে প্রথমে একটি হ্রস্ব, ক্ষুদ্র লালচে গোলোক চোখে পড়ে; এটি আমাদের পূর্ব-পরিচিত মঙ্গল; তার পিছনদিকে চোখ রাখলে বেশ কিছুক্ষণ পর একটা আবছা নীলাভ বিন্দু প্রতীয়মান হয়; আবছা, দেখা যায় না বললেই চলে, মহর্ষি মার্কন্ডেয়র মতে ওটি পৃথিবী; সেই গ্রহ যেখান থেকে তাঁরা এসেছেন। মহাবিশ্বে প্রবেশের পর পলকের জন্য অষ্টবসু মহাকাশ-যানের জানালা দিয়ে পিছন দিকে তাকিয়েছিলেন। পৃথিবী যে এত নীল তা তিনি জানতেনই না। মহর্ষি মার্কন্ডেয় তাঁদের জানিয়েছেন, বিরাট বিস্তৃত এই গ্রহের বর্তমানে একভাগ স্থল, বাকি তিনভাগ জল; সেই জলে পড়ে নীল আকাশের প্রতিবিম্ব, তাঁর প্রভাবে পৃথিবীর জল নীল, তাঁরই প্রভাবে আমাদের গ্রহও নীল। সত্যি অদ্ভুত এই জগৎ! প্রাণধারক সুর্যের থেকে দূরত্ব অনুযায়ী পৃথিবী তৃতীয় গ্রহ, তারপর মঙ্গল, তারপরেই বর্তমানে বৃহষ্পতি গ্রহ। মঙ্গল ও বৃহষ্পতির মাঝখানে আগে ছিল ‘অলকা’ গ্রহ, যার অবশেষ এই ‘সোমরস’ গ্রহানু; বিরাট এক গ্রহের অন্তিম স্মারক। ‘যুদ্ধের অন্তিম পরিনতি – শ্মশান’।
ধর্মক্ষেম বলেছিলেন না কথাটি? অনার্যভূমির প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে? আজ সেই কথাটিই আবার উচ্চারিত হল। স্মৃতির স্তুপে অগ্নিসংযোগ হল যেন একপ্রকার! অষ্টবসু জানেন না কোন রণনীতির বলি হল ‘অলকা’ গ্রহ, বিস্ফারিত হয়ে শতধাবিভক্ত হয়ে; তিনি জানেন না কোন কারণে অভিশপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘মঙ্গল’, মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে, কিন্তু দুটি অগ্রসর জাতির পারষ্পরিক বিবাদের বলি হল ঐ দুটি গ্রহের অগুন্তি সাধারন প্রাণ।
আজ থেকে মাত্র কয়েকযুগ আগে, সদ্য পিতৃ-মাতৃহারা এক স্বজনহীন বালক একাকী ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়েছিল ‘গীর’ নামক এক পশ্চিমী জনজাতির লোকেদের হাতে। দুর্ধর্ষ প্রজাতির লোক এরা, স্বভাব নির্মম, ততোধিক নির্মম এদের ক্রীড়া। ‘বুশকাশি’ নামক এক অদ্ভুত ক্রীড়ায় এরা আনন্দ পায়। এই খেলার নিয়ম হল, দুদল ঘোড়সওয়ার থাকবে; প্রত্যেকের হাতে থাকবে তীর-ধনুক, বর্শা বা ফাঁস লাগানো দড়ি। ফাঁকা প্রান্তর দিয়ে একজন বালককে দৌড় করানো হবে আর ঘোড়ার পিঠে বসা তীরন্দাজদের বা দড়িধারীদের কাজ হবে লক্ষ্যভেদ করা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে। যে দল তীর ছুঁড়ে, বা বর্শা চালিয়ে বা দড়ি ছুঁড়ে বালকটিকে বধ করতে পারবে সেই দল হবে বিজয়ী। এই খেলার দুটি নিয়ম চালু আছে – প্রথমত: নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই বালককে মারতে হবে, কাছে গিয়ে তলোয়াড় চালালে খেলোয়াড়েরই মুণ্ড কাটা যাবে; নিজ দলের প্রাপ্ত অঙ্কও কমবে। অতএব, সাধু সাবধান! দ্বিতীয়ত:, আহা! বালক তো? হোক না অন্য কোন জনজাতির, কিন্তু মানুষের বাচ্চা তো? গোরু-ছাগল তো নিশ্চই নয়! তাহলে ওদের জন্যও তো একটা নিয়ম থাকা দরকার, নাকি? যাতে ওরাও প্রাণে বাঁচতে পারে! আছে। ওদের জন্যও নিয়ম আছে। কোন বালক যদি দৌড়িয়ে একটা নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করে যায় তাহলে তাঁকে পিছু ধাওয়া করে আর মারা হবে না। যদিও একথা আলাদা যে বালকদের কখনোই জানানো হয় না যে যেদিক পানে তাঁরা দৌড়চ্ছে সেদিকে কিছুদূর গেলেই মহাবনের সীমানা। যদি বা কোন জংলী জন্তু বা আদিবাসী যোদ্ধার হাত থেকে কোন পলাতক বালক রক্ষা পায়ও, ক্ষুধা-তৃষ্ণার হাত থেকে সে রেহাই পাবে ক
নিজের অজান্তেই ডান কাঁধের পিছনদিকটায় একবার হাত বুলিয়ে নিলেন অষ্টবসু। পুরোন কাটা দাগটা এখনও রয়ে গেছে; সময়ের নিরিখে শরীরের ক্ষতস্থান চলে গিয়েছে বটে কিন্তু মনের ক্ষতস্থান এখনও টাটকা। সত্যিই পরিস্থিতি মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলে। তাকে সাহসি করে দেয়, তাকে নতুন পথ অন্বেষণ করতে বলে। তাঁর সঙ্গে অবশ্য দরকার হয় কিছুটা ভাগ্যের। নয়তো সেই দ্বাদশবর্ষীয় বালকের মাথায় এই বুদ্ধি খেলল কি করে যে সোজা দৌড়নো যাবে না, এতে ওদের লক্ষ্যভেদে সুবিধা হবে? এঁকে বেঁকে সেই প্রান্তসীমা অতিক্রম করে আসে বালকটি; যদিও অক্ষত সে থাকতে পারে নি মোটেও – একটা তীর শাঁ করে উড়ে এসে ডান কাঁধের নীচে আঘাত করে, কিন্তু থেমে যায় নি বালকটি। ঐ তীরবিদ্ধ অবস্থাতেও উঠে দৌড় মারে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে। সীমানা অতিক্রম করে যাওয়ার পর আর পিছনে ফিরে তাকায় নি সে, একটানা দৌড়েই চলে। আর ভাগ্য? অনেকক্ষণ দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে সে যখন পড়ে যায়, চেতনা হারায় তখন তাঁকে উদ্ধার করেন—