Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sandipa Sarkar

Drama

3  

Sandipa Sarkar

Drama

রক্তে রাঙানো আবির

রক্তে রাঙানো আবির

10 mins
2.1K


'হ্যাপি হোলি মা'।

ঠাকুরকে আবির দেওয়ার পর শাশুড়ি অনুপমাদেবীর পায়ে আবির দিয়ে দিন শুরু করলো রূপমা।নাম যেমন রূপমা,নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চেহারাটাও বানিয়েছেন ভগবান।নিখুঁত সুন্দরী যাকে বলে।এই রূপ দেখেই একদিন শাশুড়ি মা তাকে পছন্দ করে বাড়ির একমাত্র ছেলের বৌ করে ঘরে তুলেছিলেন।সে সব এখন রূপমার কাছে অতীত।স্বপ্নেও ভাবেনি সেই শাশুড়ির খোঁটার পাত্রী হবে সে একদিন।দোলের দিনটাও বাদ পড়লোনা রূপমার, দাঁত খিঁচুনী খাওয়া আজও চলছে।আবির দেওয়ার ঘটা দেখে শাশুড়ি কড়া ভাবে তাকে এবারও মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন "শোনো;যতই ন্যাকামি করো না কেনো, ডাক্তারের কাছে এবারও আমি নিয়ে যাবো।মেয়ের ঢিপি আনা চলবেনা এই বাড়িতে,কান খুলে শুনে নাও"।কান খুলে শুনতে বলতে গিয়ে ঝুলপির কিছু চুল টেনে আঘাতও করলেন।রূপমা মেনে নেওয়ার জগতে নিজেকে ভালোই মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে।পেটেরটাকে বাঁচানোর তাগিদে আরোই প্রতিবাদ করতে পারেনা।দু-বার তার পাঁচমাসে পেটেই ছটপট করে বিদায় জানিয়েছিল অনাগত সন্তান।হয়তো ওরাও মেয়ের ঢিবি ছিলো!এবার শাশুড়ি মায়ের কথায় মনে অনেক প্রশ্ন দানা বাঁধছে রূপমার।নিজের মনকে এই বলে মানিয়ে নিলো আর যাই হোক সন্তান খুনী হবেননা।ওই একটু বেশী ভাবছে।


নাছোড়বান্দা শাশুড়ির নির্দেশে দোলের দিনে সেই প্রাইভেট নার্সিংহোমে যেতে বাধ্য হলো চেক-আপ করতে।প্রতিবারই উনি নিয়ে যান সেখানে। এবারও উনিই নিয়ে যেতে চান।কি করেইবা না বলবে! ওর স্বামী কুনাল নিয়ে যেতে চাইলে অনুপমাদেবী কটাক্ষ করেন,অশান্তি করেন।স্বামীর সাথে যাওয়াটা নাকি অসভ্যতামি।তাই অশান্তি এড়াতে বাধ্য হয়ে কুনালও মায়ের সাথে যেতে বলে রূপমাকে।অনুপমাদেবীর মতে অনভিজ্ঞ কুনাল আর রূপমা এসব ব্যাপার বুঝবেনা।যতটা তার অভিজ্ঞতা বুঝতে পারবে।এবারও তার নড়চড় হলোনা।শাশুড়িমার সাথে রিক্সা করে চলল আবির ওড়া আকাশ দেখতে দেখতে।কচি কচি পিচকারী ধরা হাত গুলো তাক করে আসছে ওর দিকে প্রান পনে ছুঁড়েও গা অবধি আসছেনা দেখে রূপমার মুখে হাসির প্রলেপ জড়িয়ে ধরছে।এবার সব ঠিক থাকলে পরেরবার ওকে নিয়ে রং খেলবে।বাম্পারে লেগে রিক্সাটা থামতে কল্পনার জগত ছেড়ে আবার কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হলো রূপমা।শাশুড়ির সঙ্গে ঢুকলো পরিচিত চেকআপ রুমে।ডাক্তার কোনোবার রূপমাকে কিছু জানাননা।শাশুড়িমা ডাক্তারকে ডেকে পর্দার আড়ালে কথা বলেন।এবারও ব্যতিক্রম হলোনা।প্রতিবারের মতো থম মুখে বেরিয়ে এসেই নরমাল হয়ে গেলেন।কত হাসছেন।ভালো মুখে কথা বলছেন রূপমার সাথে।বাচ্চা কেমন আছে জানতে চাওয়াতে "খুব ভালো আছে" বলে রূপমাকে নিয়ে আবার রঙের ধারার মধ্যে দিয়ে বাড়ি নিয়ে এসে নিজেই পাড়ার বৌ-মেয়েদের ডেকে বাড়িতে রঙ খেলার আয়োজন করলেন।দই দিয়ে সরবত করলেন।সবাইকে দিলেন।কত খুশি দেখাচ্ছিল সবাইকে।কুনালও মাকে খুশি মনে এতো আয়োজন করতে দেখে নিশ্চিন্ত হলো।এবার হয়তো ডাক্তার বলেছেন বাচ্চাটা সুস্হ সবল আছে।আর কোন অঘটন ঘটবে না।রূপমাকে মনের আনন্দে রঙ মাখাচ্ছে কুনাল।কুনাল দেখছে তার মাও আজ অন্যরকম, তিনিও রঙ খেলছেন।শাশুড়িকে খুশি দেখে রূপমা ভাবছে এবার হয়তো ওর সুখের দিন এলো।সব ভালো হবে এবার।রঙে রঙে সারা উঠোন ভরে গেছে।আবিরে, রঙে ভুত করেছে সবাই রূপমাকে।খুশির আবির মেখে সে আনন্দে আত্মহারা।শাশুড়ির কথামতো রান্নাঘর থেকে আর এক গ্লাস দইয়ের সরবত খেয়ে এলো।কিছুক্ষন পরে বমি শুরু হয়ে গেলো, সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত,পাড়া-প্রতিবেশী,শাশুড়িমা,কুনাল সবাই।শাশুড়িমা প্রায় একঘন্টা নিজের হাতে শুশ্রূষা করেই যাচ্ছেন।বমির বাঁধ কমে আসছে, পা দিয়ে রক্তের ধারা বয়ে সাড়া উঠোন থইথই।ঢলে পড়লো রূপমা অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই।


(পরের বছর)


আজ হোলি।সাদা শাড়িতে পরিপাটি করে সেজে এসেছে রূপমা।পায়ে টকটকে লাল আলতা,কপালে বড় টিপ,হাতে আবিরের থালা নিয়ে শাশুড়িমার সাথে জমিয়ে হোলি খেলতে এসেছে রূপমা,প্রতিবারের মতো এবারেও পায়ে আবির দিয়ে দিন শুরু করলো রূপমা।শাশুড়ি এতো রঙ মাখানো পছন্দ করছেনা।এমনি রূপমা তার চোখের বালি।বিয়ের পর থেকেই রূপমার শাশুড়ির তার সব কিছুতেই আদিখ্যেতা মনে হয়েছে।রঙ মাখাতে অনেকবার বারন করে যাচ্ছেন। বারন করলেও শুনছেনা রূপমা।রঙে,আবিরে ভুত করে ছাড়ছে অনুপমাদেবীকে।একদম বাচ্চাদের মতো অবুঝ রূপমার আচরন।অনুপমা দেবী ছাড়! ছাড়! করে চেঁচিয়েও ছাড়াতে পারছেননা।আবির ঝেড়েই যাচ্ছেন গাল,হাত,পা থেকে, আকাশের দিকে মুঠো মুঠো করে আবির ছড়িয়েই যাচ্ছে রূপমা।সব উড়ে চোখে-মুখে আসছে অনুপমাদেবীর।বারন করলেও কে কার কথা শোনে।রূপমা রঙ-আবির ছড়িয়েই যাচ্ছে।সাথে ছোট্ট অতি রুগ্ন হাত-পা ওয়ালা অপুষ্ট মেয়েটাও মায়ের সাথে রঙ খেলছে।রূপমা গত বছরই মনে মনে বলেছিলো সব ঠিক থাকলে পরের বছর পেটের সন্তানটাকে সঙ্গে করে দোল সে খেলবেই।এ সন্তান যে তার বড় আকাঙ্খিত।কত রক্তপিন্ডের বলী দেখে তবে এই মেয়েকে কোলে পেয়েছে।হোক না অপুষ্টি,রুগ্ন তবু তো পেটের সন্তান।ঠাকুমাকে ছোট্ট ছোট্ট হাতে পিচকারী দিয়ে রঙ দিচ্ছে নাতনী।অনুপমাদেবীর নাতনীর সাথে ব্যবহারটাও ভালোনা।তাকেও দূর ছাই করছেন।যা!যা! করে যত তাড়াচ্ছেন, ততো নাতনী আবদারের ঝুলি উজার করে রঙ মাখিয়ে যাচ্ছে ঠাকুমাকে।বৌমা আর নাতনীর জ্বালায় অস্হির অনুপমাদেবী লাঠি হাতে দৌড়ে মারতে ছুটে এলেন ওদের দুজনকে।রূপমাকে চড়ও মারলেন।দুজনেই মজার ছলে হেসেই যাচ্ছে।এতে অনুপমা দেবীর রাগের পারদটা আরো বেড়ে যাচ্ছে। নাতনীর রুগ্ন হাতটা চেপে ধরে "তোর সাহস কম না! একে তো মেয়ের ঢিবি আবার আমার গায়ে রঙ মাখাচ্ছিস"।তবু রুগ্ন হাতে ঠাকুমাকে গালে রঙ মাখাতেই দুটো গাল রঙের বদলে রক্তে ভরে গেলো।ওরে বাবা কত রক্ত।এদিক ওদিক ছুটছেন ভয়ে অনুপমাদেবী।জল খুঁজছেন রক্ত ধুতে।কুনালের নাম ধরে কত ডাকছেন, কুনাল আসছেনা।শাড়ির আঁচল দিয়ে গাল ঘষে ঘষে কত পরিস্কারের চেষ্টা করছেন, পারছেন না। রক্ত,শুধুই রক্ত গাল বেয়ে সাড়া শরীরময় হয়ে যাচ্ছে।"মা সরবত করেছি" বলে দইয়ের সরবতের গ্লাস নিয়ে এগিয়ে আসছে রূপমা।তা দেখে আতঙ্কিত অনুপমাদেবী, সারা ঘর দৌড়াচ্ছেন।পারছেন না।এ বৌ যে নাছোড়বান্দা।অনুপমাদেবীর গাল দুটো শক্ত করে ধরেছে রূপমা,সরবত যে তার শাশুড়িকে খেতেই হবে।রুগ্ন হাতটার কি জোর,অনুপমা দেবীকে চেপে ধরেছে এমন ভাবে ছাড়াতে কষ্ট হচ্ছে।তবু তাকে পালাতে হবে,নাতো এ সরবত যে তাকে খেতেই হবে।কোন রকমে হাত ছিটকে অনুপমাদেবী পাগলের মতো বাঁচার তাগিদে পরিমরি করে দোতলার ঘর থেকে নীচে নেমে আসছেন,পেছন পেছন নাছোড়বান্দা রূপমাও রুগ্ন মেয়েটাকে কোলে করে।নিরুপায় অনুপমা দেবী "টিকটিকি পড়েছে টিকটিকি, ফেলো ফেলো,বিষ" বলে এক ঝটকায় ফেলে দিলেন গ্লাসটা খাবেননা বলে।সপাটে একটা চড় পড়লো অনুপমা দেবীর গালে।

"আহ! কি করছো আয়ুসী?গায়ে হাত তুলছো কেন"?


"দেখলে না কি করলো তোমার মা।সাদা নতুন শাড়িটা দোলে পরবো বলে কিনেছি সেটা ভরে চা ফেলে দিলো।এবার নিজে বানিয়ে খাবেন চা।চা এনে দিচ্ছি খেতে,উনি ঢং করে টিকটিকি বিষ!বিষ! বলে চেঁচাচ্ছেন।অসহ্য।আর আমি কেন মারবো?কে আমার হাতটা ধরে মনে হলো চড়টা মারালো।শোনো কুনাল, একটু পরেই আমার পরিবারের সবাই চলে আসবে দোল খেলতে,এটা আমাদের বিয়ের প্রথম দোল।হতে পারে তোমার সেটা না।তবে আমার তো বিয়ের পর প্রথম দোল।তোমার মার এই মাঝে মাঝে পাগলামি ছাগলামি করা জাস্ট অসহ্য।এইসব সহ্য করে ঘর করবো বলে বিয়ে করে আসিনি,২মাস ধরে বিয়ে করে এসে শান্তি নেই! এতো পাগল আগে তো বলোনি? জানলে কে তোমাকে বিয়ে করতো?আমি কিন্তু এবার মেন্টাল হসপিটালে পাঠিয়ে দেবো।যত সব ন্যাকামী।চুপ করে বসুন" বলে অনুপমাদেবীর কাঁধ দুটো ধরে বসিয়ে দিলো আয়ুসী।কুনালও আর কথা বাড়ালো না।অনুপমাদেবী এতোক্ষনে জ্ঞান ফিরে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখছেন, আয়ুসী আর কুনালের দিকে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন "এসেছিলো, আবার এসেছিলো।রুগ্ন, কি বিশ্রী মেয়েটাকে নিয়ে"।


"হুঁ,ন্যাকামী যতো।কে এসেছিলো?কে আসবে আপনার কাছে?যতসব ভন্ডামী।সারাদিন বিছানায় কাটাবে।কাজের ভয়ে পাগল সেজে থাকা।বুঝিনা ভাবছেন?আমি কিন্তু দোলের পার্টি পন্ড হলে ঘাড় ধরে তাড়াবো আপনাকে, এই বলে গেলাম"।আয়ুসী বেরিয়ে যেতেই কুনাল অনুপমাদেবীকে একচোট নিলো, "তুমি কি এমন করেছিলে রূপমার সাথে?যে এতো ভয় পাও?ভন্ডামী বন্ধ করো" বলে কুনালও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।দোলের খেলা চলছে নীচে।প্রচুর লোকের ভীর।আয়ুসী ওপরে এসে অনুপমাদেবীকে দইয়ের ভালো করে সরবত বানাতে বলে চলে গেলো।রান্না ঘরে বসে দইয়ের সরবত বানাচ্ছেন, আবার কেমন শরীরটা করছে অনুপমাদেবীর।টিকটিকি মরার পচা গন্ধ নাকে আসছে,ঠিক যেমনটা গত বছর নাকে এসেছিলো আর সেই গন্ধটাতেই তো......নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরলেন।কিসব ভাবছেন,বেফাঁস কিছু বেরিয়ে গেলেই মুশকিল! খুব ভয় ভয় করছে।তাড়াহুড়ো করে সরবত বানাচ্ছেন।পালাতে হবে এখান থেকে।এক বছর ধরে কোথাও শান্তি নেই অনুপমাদেবীর।আবার দমকা হাওয়ায় অনুপমাদেবীর শরীর ভারী হয়ে আসছে।এক দৃষ্টে দেখছেন দেওয়ালে দুটো টিকটিকি ঝাপটা ঝাপটি করছে।লাফালেই অনুপমা দেবীর গায়ে।ধুপ করে দুটোই মাটিতে পড়লো, একটা টিকটিকি অনুপমাদেবীর দিকে তাকিয়ে সোজা চলে গেলো।আর একটাকে দেখা যাচ্ছেনা।কোনমতে সরবতটা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন অনুপমাদেবী।কেমন যেন শরীরটা টলছে অনুপমাদেবীর।আবার কি সে এলো তাকে জ্বালাতে!এমন সময় ডাক পড়লো নীচের থেকে সরবত আনার জন্য।পুরো হাঁড়িটা নিয়ে নীচে নেমে দেখছেন রূপমা মাঝ সিঁড়িতে এসে হাঁড়িটা অনুপমাদেবীর হাত থেকে নিয়ে নীচে নেমে গেলো।রুগ্ন মেয়েটাও হয়তো চলে এসেছে।না,কাছাকাছি দেখতে পাচ্ছেনা মেয়েটাকে।অনুপমাদেবী ওপরে উঠে চলে যাবেন না নীচে নামবেন স্হির করতে পারছেননা।ওপরে কেউ নেই, সে ফাঁকে যদি রুগ্ন মেয়েটা ওকে আবার চেপে ধরে রঙের বদলে রক্ত মাখিয়ে দেয়।রূপমাও যদি ওপরে উঠে আসে আবার।ও তো আর মানুষ নেই,মরে গিয়ে প্রতিশোধ নিতে চাইছে।তার চেয়ে নীচেই সবার সাথে থাকা ভালো।কেউ তাঁকে বিশ্বাস করেনা, এমনকি তাঁর পেটের ছেলেটাও রূপমা এসে ভয় দেখায় বিশ্বাস করেনা।উল্টে প্রশ্ন করে "কি এমন করছে যার জন্য ভয় পাও"?মনে মনে অনুপমাদেবী বলে ওঠেন "সব পেটের শত্তুর,মেয়ে এনে কৃতার্থ করে দিচ্ছিল।বংশধর আনার মুরোদ নেই।যার জন্য চুরি করলাম সেই বলে চোর।ভালো করতে নাই কারোর"।ভাবতে ভাবতে নীচে নামছেন আর দেখছেন রূপমার সাথে আয়ুসী দোল খেলছে।অবাক কান্ড! মরে ভুত হয়ে যায়নি তবে,নাকি এ রূপমার ভুত!রুগ্ন মেয়েটা যাকে এতদিন ও ভয় পেত আত্মা বলে সবাই কি বেঁচে আছে?নাকি সবাই আত্মা! নীচে নেমে পড়েছেন একরাশ ঘৃণা নিয়ে দুই বৌয়ের প্রতি।বাড়ি ভর্তি লোকের মাঝে রূপমাকে 'বৌমা' বলে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন অনুপমাদেবী।রূপমার মুখে কোন কথা নেই।আয়ুসীও চুপ।কুনালের কাছে গিয়ে বললেন "বৌ টা বেঁচে থাকতে আবার বিয়ে করলি কেন বাবা"! কুনালও চুপ।সারা বাড়ির লোক চুপ।সরবত নীচে যা দিয়েছিল সব শেষ।আদরের দুই বৌমার জন্য আবার নিজের হাতে সরবত বানিয়ে নিয়ে এসে দিলেন।চারিদিকে রুগ্ন বাচ্চাটাতো দেখা যাচ্ছে না! চোখ বাচ্চাটাকে খুঁজছে।এই সরবতটা ওকেও যে খাওয়াতে হবে।নাতো এক যাত্রায় মা মেয়ের পৃথক ফল হয় কি করে?রূপমার গায়ে হাত দিয়ে সরবতটা খেতে বলে নাতনীর খোঁজ করতে লাগলেন।রূপমার সারা শরীর কাঁপছে, এবার সে মুখ খুললো" তাকে তো আপনি মেরে ফেলেছেন। প্রতিবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেন পেটে মেয়ে আছে শুনেই ডাক্তারের দেওয়া মিসক্যারেজের ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলতেন।তখন বুঝিনি।বুঝলাম শেষবার যখন মরা টিকটিকি গুলে সেই সরবত আমাকে খাইয়ে মেয়েটা, আমাকে দুজনকেই মারলেন।রক্তের স্রোতে এই উঠোন ভেসে গেছিলো।রিপোর্টে মৃত্যুর কারন বেরোলো ফুড পয়জন আর অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরন।কি ঠিক বলছি তো"!বলেই রূপমার শরীরটা আবার একটা ঝাঁকুনি দিলো।


"বেঁচে তো গেছো বাছা।বেশ করেছি,আমার পরিবারে প্রথম সন্তান মেয়ে আসবে তা আমি মেনে নেবোনা।আর তুমি তো আর মরোনি।প্রায় দিন আমাকে একটা রুগ্ন মেয়ে সাথে করে এসে ভয় দেখাও।আর ভয় দেখাতে পারবেনা।সবাইকে আমি পুলিশে দেবো।ভয় দেখিয়ে অসুস্হ করার অভিযোগে।প্রমান করো টিকটিকি মরা আমি দিয়েছিলাম।সরবতের হাঁড়ি থেকে সেদিন তো কোনো টিকটিকি মেলেনি।আমি কি এতোই বোকা টিকটিকিটা মিক্সিতে পেস্ট করে সরবতে মিশিয়ে পুরো সরবতটা ছেঁকে তোমাকে দিয়ে বাকিটা ধুয়ে ফেলে দিয়েছি"।বলেই দু হাতে মুখটা চেপে ধরলেন নিজের।আয়ুসীর কাছে পুরো বয়ানটা রেকর্ড হয়ে গেলো।রূপমার হাতের সরবত টা মুখের কাছে জোর করে ধরে অনুপমাদেবী খাওয়াতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন।কুনাল এক ঝটকায় সেটা ফেলে দিলো। আয়ুসী-রূপমা-কুনাল অনুপমাদেবীকে সাথে করে বাকী সবাই ওপরে রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো একটা পাত্রে মরা টিকটিকি পড়া সরবত তখনও আছে।অনুপমাদেবীও অবাক এবারতো সে মরা টিকটিকি মেশাইনি।বলেই ফেললেন " এ অসম্ভব!বিশ্বাস করো আমি মরা টিকটিকি মেশায়নি।আমিতো পুরো শেষ করবো বলে এবার ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে ছিলাম।বলেই আবার নিজের মুখটা চেপে ধরলেন।সব স্বীকারোক্তির শেষে জানতে পারলেন এটা রূপমা না।ওরই যমজ বোন শ্রীতমা।ক্রাইম ব্রাঞ্চ ডিপার্টমেন্টের অফিসার।আয়ুসীও আর একজন অফিসার।রূপমার বিয়ের সময় শ্রীতমা উপস্হিত থাকতে পারেনি, বাইরে পোস্টিং হয়ে পাঁচ বছরের জন্য চলে গেছিল।বিয়ের চারবছরের মধ্যেই যমজ বোনের মৃত্যুটা শ্রীতমা সহ কুনালেরও স্বাভাবিক লাগেনি।মরার আগে এক ঝলক জ্ঞান এসেছিল রূপমার, শুধু "তোমার মা" কথাটা বলতে পেরেছিলো।তাতেই কুনালের সন্দেহ হয়।আবার নিজের মা কে উপযুক্ত প্রমান ছাড়া কিছু বলা বা ধরাও সম্ভব না।রূপমার বাড়ির লোকের সাহায্যে কুনালের যোগাযোগ আয়ুসীর সাথে।তারপর বৌ সেজে আসা রহস্য উদঘাটনের আশায়।শ্রীতমাকে দেখে রূপমা ভেবে ভুল করবে এটা সবাই জানতো।কুনালও এক সপ্তাহ আগে কোলকাতা ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে গিয়ে প্রথম শ্রীতমা কে দেখে ঘাবড়ে গেছিলো।রূপমার মৃত্যুর পর থেকেই কুনাল লক্ষ্য করতো ওর মা মাঝে মাঝেই কার সাথে বিড়বিড় করে কথা বলেন, ভয়ে শিউরে ওঠেন।বেশী ভয় পেলে রূপমা আর একটা রুগ্ন বাচ্চার কথা বলেন।সারা বাড়ি দৌড়ে বেরান।রক্ত,টিকটিকি বলে চেঁচান।কুনাল একমাত্র জানে তার রূপমা আর তার অপুষ্টি মেয়ে এই বাড়িতেই আছে।সেই মেয়ে যে তারও পরম আদরের ধন।রূপমা আর মেয়েকে নিয়েই যে তার জগৎ।একটুও ভয় হয়না কুনালের মেয়েকে কোলো নিয়ে আদর করতে বা বৌয়ের সাথে আদর-সোহাগের খুনসুটির মুহূর্ত গুলো কাটাতে।সত্যিটা রূপমাকে দাহ করে আসার দিন রাতেই রূপমার কাছ থেকে জেনেছিলো কুনাল,কারন রূপমার আত্মা যে এ বাড়ি থেকে মুক্তি পায়নি।আইন ভুত মানেনা,মানে সত্যি ব্যাখ্যা।তাই অনুপমা দেবীর থেকে সত্যি স্বীকার করিয়ে রূপমার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের জন্য এতো কিছু করা কুনালের, শ্রীতমা আর আয়ুসীর সাথে মিলে।অপরাধ কোনোদিনও চাপা যায় না,অপরাধীকে ধরা একদিন পরতেই হয়।অনুপমাদেবীও আইনের হাতে বন্দী হলেন।তবে একটা কথা কারো মাথায় এলোনা অনুপমাদেবী কি সত্যিই রূপমা আর তার মৃত মেয়েকে দেখতে পেতেন?শ্রীতমা আর আয়ুসী অনুপমাদেবীর মৃতা বৌমা-নাতনীকে দেখার গল্পটাকে হ্যালুসিনেশন বলে কাটিয়ে দিলেও কুনাল একমাত্র জানে তার মা সত্যিই রূপমা আর তার মেয়েকে দেখতে পেতেন।


দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে।অনুপমাদেবীকে পুলিশ ভ্যানে তোলার আগে 

শেষ বারের মতো বাড়িটা ঘুরে দেখলেন পুলিশ পাহারায়।সারাদিন না খাওয়া অনুপমাদেবীকে সবার চোখের সামনে কুনাল দইয়ের সরবত বানিয়ে মিষ্টি সহযোগে দইয়ের সরবত খেতে দিলো।সে সরবত কুনাল-শ্রীতমা-আয়ুসী সহ বাকী পুলিশ কর্তারাও খেলেন।অনুপমাদেবীকে তোলা হলো পুলিশ ভ্যানে।আকাশে বাতাসে তখনও চলছে রঙের মেলা।পিচ রাস্তার লাল রঙ গুলো অনুপমাদেবীর চোখে রক্তের এক একটা ধারা মনে হচ্ছে।আস্তে আস্তে চোখের সামনেটা ধোঁয়াটে হয়ে আসছে,আরো ধোঁয়াটে,চোখের সামনে আবার রূপমা আর রুগ্ন বাচ্চাকে দেখছে।বাচ্চাটা খিলখিলিয়ে হাসছে,সাথে রূপমার অট্টহাসিও কানে আসছে।ধীরে ধীরে চোখের সামনে সব কালো, শুধু কালো।জিভ ভেতরে শুকিয়ে গিয়ে কে যেন টেনে ধরছে।অনুপমাদেবী জড়ানো গলায় 'জ-ল' বলাতে পুলিশ কনস্টেবল জল এগিয়ে দিতে জলের বোতলটা হাতে নিয়েই ঢলে পড়লেন পুলিশ ভ্যানে।মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে।দু-তিনটে শরীরে মোচর তারপর সব শেষ।পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বেরোলো ফুড পয়জন।পেটের ভেতর শেষ খাদ্য বিষক্রিয় তরল পানীয় পাওয়া গেছে।সম্ভবত টিকটিকি জাতীয় কোন প্রানীর বিষ।তবে তদন্তে সরবতের একটা পাত্র থেকে ইঁদুর মারা বিষ,আর সেই বিষের পাত্রে পড়েই টিকটিকিটাও মারা যায়। আরেকটা পাত্র মানে কুনালের বানানো সরবতের পাত্র পরীক্ষা করে কোন বিষের সন্ধান মেলেনি রিপোর্টে।অনুপমাদেবীর মৃত্যু রহস্য, রহস্যই থেকে গেলো সবার কাছে।কিনারা করতে না পেরে এক সময় তদন্ত বন্ধ হয়ে গেলো।শুধু কুনাল জেনেছিল আসল রহস্যটা,সন্তান হারানো মা এতগুলো সন্তানের খুনীকে যে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারেনি।আর এটাই তার শাস্তি স্বরূপ শেষ পরিনতি।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama