Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Manasi Ganguli

Abstract

4.7  

Manasi Ganguli

Abstract

উৎসবে অনটনে

উৎসবে অনটনে

3 mins
749


   আজ পঞ্চমী,ঢাকিরা এসে গেছে। ঢ্যাংকুরাকুর ঢাক বাজিয়ে জানান দিচ্ছে। ছোটরা সব সদলবলে বেরিয়ে পড়েছে বাড়ী থেকে,ঢাকের বাদ্যি শুনে। খানিক বাদে ক্লাবের ছেলেরা লরীতে করে ঢাকীদের নিয়ে ঠাকুর আনতে যাবে। মা দুগ্গা আসবেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে মহাসমারোহে ঢাকের বাদ্যির সাথে মুখ ঢেকে। ষষ্ঠীর আগে মায়ের মুখ দেখা যাবে না। ক'দিন আগে থেকেই ছেলেপিলেগুলো প্যান্ডেলের বাঁশ ধরে ঝুলে কত খেলা।পুজোর আনন্দে তাদের চোখমুখের ভাষা গেছে পালটে,রোজই সবাই দিন গোনে,আর কতদিন। নিজের শৈশবের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে সুমিতার।

   আজ সুমিতার ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে,তারা চাকরীসূত্রে দূরে,কাছছাড়া,পুজোয় আসতেও পারে না,তাই পুজো এখন সুমিতাকে নতুন কোনো আনন্দ দেয় না,বয়স বেড়েছে,শরীরও অক্ষম হচ্ছে,ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখার উৎসাহও তত নেই যদিও একটু-আধটু ইচ্ছে করে কিন্তু গাড়ী নিয়ে চলাফেরা করার উপায় নেই,রাস্তায় যেমন ভিড়,পার্কিং পাওয়া যায় না,তাই সেটুকু ইচ্ছেও মনের মাঝেই চুপসে যায়। শৈশবের স্মৃতিচারণ করেই পুজোটা কাটে। তখন শৈশব জীবনটা ছিল অন্যরকম,এখনকার সাথে তার কোনো মিল নেই।

     ছোটবেলায় ঢাকীরা এসে গেলেই বুকের ভেতরেও যেন ঢাক পিটত ওর। ঢাকীদের আশপাশেই সেক'টাদিন ঘুরে বেড়াত। ছোট্ট ছেলেটা কাঁসর বাজাত,সে ওরই বয়সী,আধময়লা কোঁচকানো জামা পরনে,তার সাথে সুমিতার বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল। ঢাকীদের বাজনার তালে তালে সুমিতা আর পাড়ার অন্যান্য ছোট ছেলেমেয়েরাও নাচত। সে বড় আনন্দের দিন ছিল। ঘুম ভাঙ্গত ঢাকের কাঠির আওয়াজে,বুকের ভেতরটা গুড়গুড় করে। কখন প্যান্ডেলে ছুটবে,বইপত্তর সব ক'দিনের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছে।সে উৎসব বড় আনন্দের। আজ এত সমারোহ চারিদিকে তবু সুমিতার মনে সে আনন্দ নেই।

    যখন বড় হয়েছে,বুঝতে শিখেছে,দেখেছে,সবাই যখন নতুন জামা গায়ে পুজোমন্ডপে,ঢাকীদের গায়ে পুরনো জামা,ছোট থেকেই এটা ওকে বেদনা দিত। ওদের কাছেই শুনেছে,সারাবছর এই একটা মাসই ওরা কাজ পায় এই পুজোর মরশুমে। দূর গ্রামে ওদের বাড়ী,যেখানে কাজের তেমন অবকাশ নেই। বাড়ীর মেয়েরাও যে পরের বাড়ী কাজ করবে,তেমন ধনী বাড়ীও গ্রামে দু'তিন ঘর,তা অত দরিদ্র পরিবারের অত মহিলা,ওই দু'তিনটে বাড়ীতে কতজন আর কাজ করবে! পেটভরা খাবারও রোজ সবার জোটে না। পরের জমিতে কাজ করে সামান্য যা পায়,তাইতে কোনোরকমে নুন ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা হয়। ছোট থেকেই এসব শুনে সুমিতার ওদের প্রতি খুব মায়া।

    প্রতিবছর পুজোর নবমীর দিন ঢাকীদের ব্যানার্জী বাড়ী,মানে সুমিতার বাপের বাড়ী খাবার ব্যবস্থা হত,অন্যান্যদিন অন্য বাড়ী। ঠাকুমা কত কি আয়োজন করতেন। সুক্তো, ডাল,বেগুনী,তরকারী,ছ্যাঁচড়া, মাছ,মাংস,চাটনী,পাঁপড়,দই,মিষ্টি যেন বিয়েবাড়ীর ভোজ,ঢাকীদের মধ্যেও ওইদিনের খাওয়াটা বিশেষ আনন্দের ছিল। ঠাকুমাও খুব যত্ন করে ওদের খাওয়াতেন। ঠাকুমা সবাইকে পরিবেশন করে খাওয়াতে ভালবাসতেন। ঢাকীদের খেতে বসার ব্যবস্থা হয়েছে রান্নাঘরের কোলে দালানে আর সুমিতা ও ভাইবোনেরা ঘরে খাবার টেবিলে। দালান পেরিয়ে ওদের খাবার থালা ঘরে ঢোকার সময় ঢাকীদের চোখে পড়েছে থালায় মুঠো পরিমাণ ভাত,তাই দেখে প্রথম দফা ভাত খাবার পর তারা বলে পেট ভরে গেছে। ঠাকুমা অভিজ্ঞ চোখে ঠিক দেখে ফেলেছেন আর বুঝে নিয়েছেন যে ওরা ভাত নিতে লজ্জা পাচ্ছে। তাই ওদের বললেন,"ওরে তোরা ছেলেপিলেদের থালার দিকে তাকাসনি,পেট ভরে খা,ওরা অতটুকু খাবে আর একটু পরেই লাফাতে লাফাতে আসবে খিদে পেয়েছে বলে।তোরা তৃপ্তি করে খা"। ওদের পরিতৃপ্তি করে খাইয়ে ঠাকুমাও যে কি পরিমাণ তৃপ্তি পেতেন সেটা দেখেছে সুমিতা। একাদশীর দিন চলে যাবার আগে যখন ওরা আসত,ঠাকুমা পুরনো জামাকাপড় তো দিতেনই,সাথে ওদের বউদের জন্য নতুন শাড়ী ও বেশ কিছু টাকা দিতেন ওদের হাতে।এটা ওদের বাড়তি পাওনা ছিল। ঠাকুমা আগে থেকে কিনে গুছিয়ে রাখতেন ওদের জন্য,বলতেন,"ওদের বড় কষ্ট রে"।

    সেইকথাগুলো সুমিতাকে বরাবর নাড়া দিয়েছে,বিয়ের পরও যখনই পুজোয় বাপের বাড়ী গেছে,ঢাকীদের টাকা দিয়েছে সুমিতা। ওরা বংশপরম্পরায় বাপের বাড়ীর পাড়ায় আসে,সেদিনের সেই ছোট ছেলেটি সুমিতার সাথে সাথে বেড়ে উঠেছে। তার মেয়ের বিয়ের জন্য সুমিতার কাছে আবদার করে টাকা নিয়ে গেছে। সুমিতা খুশী হয়ে দিয়েছে।

    আজ জীবনের এতবছর কেটে যাবার পরও সুমিতার মনকে বড় বেশী নাড়া দিচ্ছে এই ঢাকীরা। চারিদিকে আলোর রোশনাই,বক্সের আওয়াজে কান পাতা দায়,রাস্তায় জনসমুদ্র কিন্তু প্রাণটাই যেন নেই। ভাবে মনে,কি জানি,আজ ওদের কি অবস্থা! রাস্তায় বেরলে কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় লাইন দিয়ে ঢাক নিয়ে সব বসে থাকে,কি জানি সবাই কাজ পায় কিনা!

   মনে পড়ে, নবমীর রাতে ঢাকীদের সে কি নাচ। এত অনটনে বাঁচে তবু উৎসবে মাতে। সে ছেড়ে কারো বাড়ী ফিরতে ইচ্ছে করত না,বাড়ী ফেরার সময় মনটা খুব খারাপ হয়ে যেত,আবার একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract