Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Suravi Roy

fantacy Tragedy

4.8  

Suravi Roy

fantacy Tragedy

অশরীরী মায়ের মাতৃস্নেহ

অশরীরী মায়ের মাতৃস্নেহ

32 mins
6.5K


     পরী আজকাল রাতে ওর একার রুমে ঠিকঠাক ঘুমাতে পারে না, শুধু মনে হয় কেউ যেন সবসময়ই ওর ঘরের মধ্যে বিচরণ করছে, কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ পাই রাতে ঘুমানোর সময়, সেই সময় ঘরের লাইট অন্ করলে কাউকে দেখতে পাই না শুধু অনুভব করা যায়। এতে খুব ভয় করে ওর কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারে না।.. 

         

      না না এ কোনো রূপকথার গল্পের পরী নয়, আবার কোন আঠেরো বছরের যুবতীও নয়। এ হল একটা বছর পাঁচকের ছোট্ট দুষ্টুমিষ্টি মেয়ে পরিনীতা রায়চৌধুরী। বাড়ির সবাই ওকে পরী নামেই ডাকে। শুধু যে নাম পরী তা নয় , ওই বছর পাঁচেকের ছোট্ট মেয়ে রূপ সৌন্দর্যে অতুলনীয়,কোন রূপকথার গল্পের পরীর থেকে কম নয়। যেন মনে হয় কোনো স্বর্গের অপ্সরী জন্ম নিয়েছে। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ, টিকালো নাক, টানা টানা বড়ো বড়ো চোখ আর মুখে সুন্দর মায়াবী মিষ্টি হাসি। একটু হাসলেই যেন খুব আদর কর      

 কিন্তু পরিনীতার ঠাকুমা মৃনালিনী দেবী, পরিনীতার জন্মানোর পর ওকে দেখে একটুও খুশি হননি। কারণ তাঁর একমাত্র ছেলে-বৌমা, পবন আর নীলিমার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়েছে বলে, তিনি একটা নাতি পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু যায় ই হোক অন্যদিকে মৃনালিনী দেবীর মনে একটু খটকা লেগেছিল, পরিনীতার জন্মের পর ওকে দেখে। তিনি ভেবেছিলেন এতো ফর্সা সুন্দরী মেয়ে ওদের বাড়িতে কীভাবে জন্মানো সম্ভব? কারণ ওনাদের বাড়ির প্রত্যেকের গায়ের রঙ এমনকি পরিনীতার বাবা পবনেরও গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ আর মা নীলিমা ফর্সা হলেও এতোটা ফর্সা নয়। কিন্ত তার ভাবনাই ছেদ্ পড়ে, নবজাতক শিশু পরিনীতাকে দেখতে আসা কিছু প্রতিবেশীর কথায়তারা এতো সুন্দরী বাচ্চা পরিনীতার প্রশংসা করেন। এইসব দেখে মৃনালিনী দেবীর মন গলে যায় নাতনীর প্রতি। তিনি ধীরে ধীরে পরীকে ভালোবাসতে শুরু করেন। এবং তিনিই তাঁর ছেলে-বৌমার নাম মিলিয়ে অপ্সরী নাতনীর নাম রাখেন "পরিনীতা"। এই ছোট্টো পরী ধীরে ধীরে বাড়ীর সবার প্রাণ হয়ে ওঠে। পরীর জন্মের পর থেকেই রায়চৌধুরী বাড়ি আর্থিক দিক দিয়ে বিরাট উন্নতি করতে থাকে, পবনের চাকরিতে প্রমোশন হয়। এই জন্য পরীর প্রতি ওর বাবার ভালোবাসা আর বেড়ে যায়, পবন সবসময়ই পরীকে "আমার পরীরানী" বলেই ডাকত। মা-বাবা, ঠাকুমা এবং বাড়ির অন্য সকলের আদরে পরীর শিশু জীবন আনন্দেই কাটতে থাকে।.........এমনি করেই পরী যখন তিন বছরের তখন ওর ভাই ঋতমের জন্ম হয় আর ওর খুশিময় জীবনে ছেদ্ পরে। ঋতমের জন্মের পর থেকেই আদরের পরী সবার এমনকি ওর মা-বাবারও চক্ষুশূল হয়ে উঠতে থাকে দিসবার মুখে শুধু ঋতম আর ঋতম। ওই তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে পরিনীতার ওপর কোনো নজরই নেই কারুর।অযত্নে পরীর সুন্দরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল আর ও ক্রমেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছিল। সবাই দেখেও না দেখার ভান করত পরীকে। শুধু টাইমটা মেনেই খাবারটা খাইয়ে দেয় পরিনীতাকে আর সবসময়ই পরিনীতা উদ্দেশ্য করে বলে, " কেন যে এই মেয়েটা জন্মেছিল কে জানে?? ফেলে দিতেও পারি না যে মেয়েটা একদিন মা-বাবার মাঝখানে ঘুমাতো সেই মেয়েটাই তিন বছর বয়স থেকে পাশের ঘরে একা ঘুমাই। প্রথম প্রথম একা ঘুম আসতো না পরীর , ভয় পেয়ে ছুটে যেত মা-বাবার কাছে। আর ওই সময়ে ওর মা-বাবা ঋতমের কথা ভেবে একপ্রকার বিরক্ত হয়ে পরীকে ওর ঘরে জোর করে দিয়ে এসে , ওর ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে আসতো যাতে পরী যেন বাইরে আসতে না পারে.....একসময়ে ছোট্ট পরী ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে এই ভাবেই কেটে গেছে দুটো বছর। এখন আর পরী একা ঘরে শুতে কাঁদে না। এই পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটা যেন এই দু-বছরেই মানসিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে গেছে। এখন সে অনেক কিছুই বুঝতে পেরেছে। এখন পরী আর ওর মা-বাবার কাছে যাওয়ার জন্য কাঁদে না। কিন্ত ওর খুব কষ্ট হয়, যখন দেখে বাবা ওর ভাই ঋতমের জন্য নতুন খেলনা এনে দিচ্ছে, আর মা ঋতমকে আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে। আর ঠাকুমা ঋতমকে কত সুন্দর সুন্দর গল্প বল আবার যখন খুব ঝড়বৃষ্টি হয়, বিদ্যুতের চমকানি আর বাজের শব্দে ভয়ে মাকে এখনও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে পরীর কিন্তু কি আর করবে মাতো তাকে আর ভালোবাসে না। এই ভেবে ভয়ে পাশবালিশটাকে আঁকড়ে ধরে কিন্তু আবার পরী এটা দেখেও আশ্চর্য হয়ে যায় যে, বাড়িতে যখন কোন আত্মীয় বা প্রতিবেশী আসে তখন মা-বাবা আর ঠাকুমা ওকে এতো ভালোবাসে যেন মনে হয় পরী ছাড়া বাড়ির কেউই বাঁচবে না। আর যখনই আত্মীয়রা বাড়ি থেকে চলে যায়, আবার তখন থেকেই পরী মানে পরিনীতার পুরোনো জীবন   পরী প্রতিদিন রাতে শুয়ে শুয়ে কাঁদে আর বলে," আমার মা আর ভাই -এর মা যদি আলাদা হতো তাহলে আমার মা আমাকে খুবই আদর করত। আর বাবা আমার জন্য অনেক খেলনা এনে দিত, আর ঠাকুমাও অনেক গল্প শোনাত ।" এই সব ভাবতে ভাবতে ছোট্ট পরিনীতা একসময়ে ঘুমিয়ে পড়তো। এই ভাবেই চলছিল ওর জীব এরমধ্যে একদিন পরী শুয়েছিল ওর বিছানায়, তখন রাত 2.00 am. কিন্তু ওর একদম ঘুম আসছিল না। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। হঠাৎই পরীর মনে হল কেউ ওর ঘরের দরজাটা খুলে ঘরের মধ্যে এল। ও ভাবল ওর মা, তাই ও উঠে ডাকল,"মা....!" কিন্তু কোন উত্তর পেল না। ওর একটু ভয় লাগল। সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের লাইটটা অন্ করে দেখল ঘরের মধ্যে কেউ নেই, ঘরের দরজাটা বন্ধই আছে। ভয়ে গা টা ছমছম করে উঠল পরকিন্তু কাউকে কিছু বলার নেই, বলতে গেলেই তো কেউ না কেউ বলবে ও নাটক করছে, আর বলেই ওকে নিয়ে এসে ঘরে আটকে রেখে যাবে    তাই কি আর করবে, লাইটটা অফ্ করে চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ল। এখন প্রায় রাতেই ওই একই ঘটনা ঘটছে আর এখন আর পরীর আগের মতো ভয় লাগে না। ও অনুভব করতে পারে ঘরে কেউ একটা বিচরণ করছে। রাতে বছর পাঁচকের পরীর ঘুমই আসে না। শুধু অপেক্ষা করে থাকে, যে ওর ঘরে অদৃশ্য হয়ে বিচরণ করছে, তাকে একবার চোখে দেখার জন্য।......... এমনি করে রাতে জেগে অপেক্ষা করতে করতে এক মাস পার হয়ে যায়, কিন্তু ঘরের মধ্যে অদৃশ্য বিচরণকারীর দেখা পাই না পরী। কিন্তু শুধু অনুভব করতে পারে কেউ একজন আছে এই ঘরে      হঠাৎই একদিন সন্ধ্যাবেলা পরী ওর ঘরে ঢুকতে গিয়ে ভয় পেয়ে, চিৎকার করে ওর মা-বাবার ঘরে ছুটে যায়, মা কে সব কিছু বলার জন্য। নীলিমাও ঘরেই ছিল, পরীর এতো জোরে চিৎকার ওর মা নীলিমা একটু ভয় পেয়ে গেল এবং পরীকে জিজ্ঞাসা করল," কী রে পরী??? কি হল তোর? এতো চ্যাচাচ্ছিস পরীর ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে, ওর মুখে কথাও বের হচ্ছে না ।তাও পরী বলতে চেষ্টা করল," মা... আমার ঘরে..........." পরীর কথার মধ্যেই মায়ের পাশে শুয়ে থাকা ঋতম কাঁদতে শুরু করল। আর ঋতমের কান্না শুনতে পেয়ে বাইরে থেকে পরীর বাবা পবনে দৌড়ে ঘরে ঢুকল আর ঘরে পরীকে দেখে তার মাথায় আগুন জ্বলে গেল। এবং চিৎকার করে বলল," এই শয়তান মেয়েটা এখানে কি করছে? এর জন্য আমার ছেলেটা কাঁদতে লাগল... এই মেয়েটাই আমার ছেলেটাকে একটু সুস্থ থাকতে দেবে না.....! তোকে এই ঘরে কে ঢুকতে বলেছে পরী???....তোকে বলেছি না, তুই তোর ঘর থেকে বাইরে বেরবি না। আর খবরদার যদি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এই ঘরে আর কখনোও ঢুকেছিস! তাহলে তোকে আমি মেরকথাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে পবন , ওই পাঁচ বছরের ছোট্ট পরীকে অতিরিক্ত মারতে শুরু করল এবং ওকে জোর করে এক প্রকার মাটিতে ঘষতে ঘষতে এই ঘর থেকে বের করে পরীর ঘরের দিকে নিয়ে যেতে থাকল। ................আর পরী চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, " বাবা....! আমকে ছেড়ে দাও.....আমাকে মেরো না.....আমি আর ওই ঘরে যাব না....আমকে আর আমার ঘরে আটকে রেখে দিও না বাবা .....আমার ভয় লাগে........মা।।....."

কিন্তু এই পরী এই করুন অবস্থা দেখে নীলিমার মনে একটু কষ্টও হল না। নীলিমা একটা কথাও বলল না এইসব দেখে। শুধু ঋতমকে আদর করে ঘুম পাড়াতে শুরু করল। আর পরীর অবস্থা দেখে মৃনালিনী দেবী মনে মনে হাসলেন আর বারবার বলতে থাকলেন," ঠিক হয়েছে। বদমাশ মেয়ে! তোর এই রকমই হওয়া উচিত পবন, ছোট্ট পরিনীতা কে ঘরে নিয়ে গিয়ে, বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এল। বাইরে এসে পবন একটা গভীর নিশ্বাস ফেলে, নিজের ঘরে চলে গেল।  বন্ধী হয়ে পরী কাঁদতে কাঁদতে দেখল, ঘরে কেউ নেই । এই দেখে সে বিছানায় শুয়ে পড়ল এবং বাবার মারের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কাঁদতে থাকল। রাতের খাবারটাও আজ তাকে কেউ দেয়নি। এটাই নাকি ওর মা-বাবার ঘরে যাওয়ার শাস্তি। ক্ষিদের-তেষ্টায় কাতর হয়ে কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল এই বছর পাঁচেকের ছোট্ট পরিনীতা।

     হঠাৎই মাথায় একটা ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে পরীর ঘুম ভেঙে গেল, তখন ঘড়িতে রাত 2 টো। পরী জেগে উঠে যা দেখল, তাতে ও ভয়ে চিৎকারও করতে পারল না.....অনেক কষ্টে জিজ্ঞাসা করল," তুমি কে.....??..   

         পরীর কথার উত্তরে সে কিছুই বলল না, আবার পরী কিছুটা ঢোক গিলে,জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কে??....." এবার সে উত্তর দিল, "আমি নীহারিকা। তোর মা....। কথাটা শুনে পরিনীতা চমকে উঠল এবং তাড়াতাড়ি ঘরের লাইটটা অন্ করে যা দেখল, তাতে পরীর চোখ যেন ঝলসে গেল ,,বড়ো বড়ো চোখ করে সেদিকে তাকিয়ে রইল। দেখল একটা অপরূপ সুন্দরী মেয়ে ওর বিছানায় বসে আছে । ঠিক যেন ছবির বইয়ে দেখা রাজকুমারীর মতো। রাজকুমারীদের মতো সাজশয্যা, গোটা শরীর স্বর্ণ অলংকৃত। এবং তার শরীর থেকে নানা রঙের আলোক বর্ণালী বেরিয়ে এসে পরীর ঘরটাকে আলোকিত করে দিয়েছে।...      পরীর এই রকম অবস্থা দেখে নীহারিকা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং বলল," আমিই তোর মা, আমার কাছে আই.....।" কিন্তু পরী চুপ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল। এই দেখে নীহারিকা ওর কাছে গিয়ে আদর করে কোলে তুলে নিল। এবং বলল," ওরা তোকে খেতে দেয়নি তাই না? তোর ক্ষিদে পেয়েছে??...." এতো দিন পর পরীকে কেউ মাতৃস্নেহে কোলে তুলে নিল আর এতে পরী মনে মনে অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করতে এবার পরী মুখ খুলল এবং বলল," আমাকে ওরা খুব মেরেছে..... কিছু খেতেও দেয়নি....আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে....."তুই কি খাবি বল আমাকে, আমি তাই ই এনে দেব......" নীহারিকা বলল।

"তুমি যা ই দেবে আমি তাই ই লক্ষ্মীসোনার মতো খেয়ে নেব..." পরী করুন স্বরে বলল। কথাগুলো শুনে নীহারিকার চোখে জল এসে গেল এবং নীজের শক্তির প্রয়োগ করে অনেক খাবার দিয়ে পরিনীতার ঘর পরিপূর্ণ করে দিল। এইসব দেখে পরীর অবাক হয়ে গেল। এবং পরী একদৃষ্টে চেয়ে রইল ওই খাবারগুলোর দিয়ে। এই দেখে নীহারিকা একটু হাসল, এবং তার নিজের হাতে, যত্ন সহকারে পরীকে খাবার গুলো খাওয়াতে শুরু করল। আর আবার এতো দিন পর পরিনীতা মায়ের আদরের স্পর্শ অনুভব করতে লাগল। খাওয়া শেষ হলে, নীহারিকা পরীকে বলল," তোর যা দরকার তুই আমাকে বলবি। আমিই তোকে সব কিছু এনে দেব। ওদের কারুর কাছে আর কিছুই চাইবি না।"....

  পরী বলল ," আচ্ছা।....কিন্তু তুমি কে হও আমার? আমি তোমাকে কি বলে ডাকব??"...

নীহারিকা হেসে বলল, " আরে বললাম না....!আমি তোর মা হই পরী, তুই আমাকে মা বলেই ডাকবি।".....

 " তুমি কি করে আমার মা হবে? ওই ঘরে শুয়ে আছে, নীলিমা রায়চৌধুরী। ও ই তো আমার মা।..."   পরীর কথা শুনে নীহারিকা বলল," আমি জানি নীলিমা তোকে জন্ম দিয়েছে কিন্তু আমিই তোর আসল মা।। তুই যেদিন বড়ো হবি, সব বুঝতে শিখবি সেদিন তোকে সব বলব। আর একটা কথা তুই কোন দিনই আমার কথা কাউকে বলবি না।".

   পরী বলল," আচ্ছা ঠিকাছে, তুমি আমার মা। আর আমি তোমার কথা কাউকে বলব না।"

    নীহারিকা পরীকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল। আর পরীও নীহারিকার মাতৃস্নেহে ঘুমিয়ে পড়ল।..................          এর পর থেকে পরিনীতার জীবনে মায়ের অভাব পূরণ হতে লাগল অশরীরী মা নীহারিকার মাতৃস্নেহে । পরী আর তার মা-বাবার কাছে যাওয়ার জন্য জেদ্ করে না। সব সময়ই নিজের ঘরেই থাকে। শুধু খাবার সময় খাবার খেতে ঘরের বাইরে বের হয় আর খাওয়া শেষ হলে ঘরের মধ্যে চলে আসে। নীহারিকাও পরীকে খুব ভালোবাসে। স্নান করিয়ে দেয়, চুল আঁচড়ে দেয়, পরী যখন যা চাই তাই ই এনে দেয়।..........পরীও নীহারিকার কথা কাউকে জানালো  অন্যদিকে পরীর পরিবারের লোকজন পরীর এই রকম ব্যাবহারে একটু অবাক হলেও খুশি ছিল। কারন পরী আর তাদের জ্বালাতন করত না। তাদের ঘরেও আসত না।..... 

 একদিন পবন তার মা মৃনালিনী দেবীর সাথে কথা বললেন পরীকে স্কুলে ভর্তি করার ব্যাপারে। কিন্তু কারুরই এই ব্যাপারে কোনো মত ছিল না। কিন্ত বাইরে লোকের সামনে তারা পরিনীতাকে খুব ভালোবাসত, তাই মেয়েকে স্কুলে ভর্তি না করলে বাইরের লোক কি বলবে এই ভেবে একপ্রকার বাধ্য হয়েই পবন পরীকে স্কুলে ভর্তি করল। শুরু হল পরিনীতার স্কুল জীবন।.......পরী আস্তে আস্তে বড়ো হতে লাগল। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে পরী পড়াশুনায় ভাল হতে লাগল। স্কুলেও ফাস্ট গার্ল নামে পরিচিত হয়ে গেল পরিনীতা রায়চৌধুরী। কিন্তু এতে পরীর বাড়ির লোকজন একটুও খুশি হল না। কারণ পরীর ভাই ঋতম একদমই পড়াশুনায় ভালো ছিল না। তাই বাড়ির লোকজন, ছেলের থেকে মেয়ে পড়াশুনায় ভাল , এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না আবার তারা এটা ভেবেও অবাক ছিল যে, ঋতমকে দশটা টিউশন পড়তে দিয়েও সে পরীক্ষা ফেল করত বছর বছর। আর পরীকে একটাও টিউশন না দিয়েও পরী প্রত্যেক বছর ক্লাসে ফার্স্ট হত। আর এই সব পরীর বাবা পবন ও ঠাকুমা মৃনালিনী দেবীর সহ্য হল না। তারা প্ল্যান করে পরীকে দিয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ করানো শুরু করল, যাতে ও পড়াশুনার জন্য একটুও সময় না পাই। কিন্তু পরী খুব কষ্ট হতে শুরু হল। কারণ পরীও খুব ভালো করেই জানত যে তার স্কুলে ভালো রেজাল্ট কোনো ম্যাজিক নয় এটা একমাত্র ওর কঠোর পড়াশুনার ফল। তাই ও জানত বাড়ির কাজ করলে ওর পড়াশুনা শেষ হয়ে যাবে। পরী কাঁদতে শুরু করল, এই সময় নীহারিকা এল এবং পরীকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করল। পরীও নীহারিকাকে সব কিছু জানাল। সব কথা শুনে আগুনের মতো জ্বলতে লাগল নীহারিকা এবং বলল " ওদের সামনে আমি তুই সেজে কাজ করব আর তুই এই ঘরে পড়া করবি। " পরীও খুব খুশি হল এই কথাগুলো শুনে এবং পরক্ষণেই নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরল। আগুনের মতো জ্বলতে থাকা নীহারিকা এক নিমিষেই জল হয়ে গেল মেয়ের সাথে ওদের কথা মতোই কাজ চলতে লাগল। এবং পরীর পড়াশুনার কোন ক্ষতি হল না। এর মধ্যেই পরিনীতা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল এবং একই সঙ্গে ঋতম দিল মাধ্যমিক পরীক্ষা। সবাই জানত পরীতো সারাদিন বাড়ির কাজ করত, পড়াশুনার জন্য সময় পেত না তাই সে উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করবে। কিন্তু ফল হল ঠিক উল্টো । আগে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হল, পরিনীতা 98% নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করল। পরী আর ওর অশরীরী মা নীহারিকা খুবই খুশি হল। কিন্ত বাড়ির সবাই পরিনীতার উপর ক্ষেপে গেল। পরীকে জোর করেই নিয়ে গিয়ে ঘরে বন্ধ করে দিল ওর বাবা পবন, ঠিক যেমন বারো বছর আগে এর ঠিক দুই দিন পর মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হল, আর ঋতম সব চেয়ে কম নম্বর পেয়ে ফেল করল। বাড়ির সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। আর পবন ঋতমের ফেলের জন্য সতেরো বছরের পরিনীতাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসে অসম্ভব ভাবে মারতে শুরু করল। আর পরিনীতার অবস্থা করুণ হয়ে উঠল। ও চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।.....ঋতম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে লাগলো ...... কেউ আটকানো তো দুরের কথা, মা নীলিমা, ঠাকুমা মৃনালিনী দেবীও পরিনীতাকে পুড়িয়ে মারতে কেরোসিন তেল আর দেশলাই নিয়ে এল। এই সব দেখে নীহারিকা রাগে আগুনের মতো জ্বলতে লাগলো, এবং দেখতে দেখতে বাড়ির সিলিং- এর কাঁচের ঝাড়বাতিটা হঠাৎই মৃনালিনী দেবীর উপর ভেঙে পড়ল। মৃনালিনী দেবীর রক্তের সারা বাড়িতে রক্তের নদী বইতে লাগলো। এই আকস্মিক ঘটনায় সবাই চমকে গেল। পবন আর নীলিমা পরিনীতাকে ফেলে মৃনালিনী দেবীকে ওই অবস্থায় নিয়ে হসপিটাল ছুটল। ঋতম ওদের সাথেই গেল। আর পরিনীতাও হতবাক হয়ে নীহারিকার দিকে তাকিয়ে রইল । নীহারিকা পরিনীতাকে কোলে করে তুলে ওর নীহারিকা, পরিনীতাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে অতিযত্নে মাতৃস্নেহ ওর শুশ্রূষা করতে লাগল। কারন অতিরিক্ত মারের ফলে পরিনীতার অবস্থা করুণ হয়ে উঠেছিল। বার বার পরী যন্ত্রণায় কেঁদে উঠছিল। কিছুক্ষণ পর পরী একটু সুস্থ হল। এবার সে নীহারিকাকে বলল," তুমি, ঠাকুমার সঙ্গে এরকম কেন করলে মা??... পরীর এই রকম কথাই নীহারিকা চিৎকার করে উঠলো এবং বলল," ওই শয়তান! মৃনালিনী, তোর ঠাকুমা, তোকে পুড়িয়ে শেষ করতে চেয়েছিল, তাই আমি ওকেই শেষ করে দিলাম। ..ও আমার মেয়েকে কষ্ট দেবে আর আমি ওকে ছেড়ে দেব? তুই ভাবলি কী করে পরী?...." কথাগুলো বলে নীহারিকা গজগজ করতে শুরু করল। ....... পরিনীতা জানত যে নীহারিকা কোন মানুষ নয়, ও হল মানুষ রূপী শক্তিশালী একজন অশরীরী। কিন্তু নীহারিকা যে এতো ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা পরিনীতার কাছে ধারনার বাইরে ছিল এবার শান্ত ভাবেই সে নীহারিকাকে জিজ্ঞাসা করল," মা। তুমি ছোটবেলায় বলতে, তুমিই নাকি আমার নিজের মা।....কিন্তু ....."             

 নীহারিকা মেয়ের কথায় একটু হেসে বলল,"" নীলিমা তোকে জন্ম দিয়েছে.....তাহলে আমি কী করে তোর নিজের মা হলাম? এটাই তো বলতে চাইছিস তুই? তাহলে শোন,..আজ তোকে আমি সবকিছুই বলল......................নীলিমাই তোর জন্মদাত্রী মা.. তোর জন্মের প্রায় পাঁচ বছর আগে নীলিমা আর পবনের বিয়ে হয়ে ছিল। কিন্তু বিয়ের তিন বছর পরও ওদের কোন বাচ্চা জন্মায় নি। ওদের আর্থিক অবস্থা একবারেই ভালো ছিল না ওই সময়। তবুও ওরা সবরকম চিকিৎসা করাচ্ছিল শুধু মাত্র একটি সন্তান পাওয়ার জন্য। সেই সময়ে কেউ একজন ওদের বলে যে, গঙ্গা নদীর যেখানে উৎপত্তি স্থল সেখানে একটা অনেক বড়ো শিব মন্দির আছে। ওখানে গিয়ে পুজো দিলে ,নীলিমার সন্তান হতে পারে। এই কথা শুনে পবন আর নীলিমা ওখানে যেতে আর এক দিনও দেরি করেনি। ওরা যখন পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরছিল তখন ওরা এক তপস্বিনী মাতাকে দেখতে পেয়ে তার কাছে যায়। এবং ওরা একটা সন্তান চেয়ে তার কাছে পার্থনা করে। কিন্তু ওই তপস্বিনী জানান যে তাদের সন্তান জন্মানো সম্ভব নয়। কিন্তু একটা উপায় আছে, যদি কোন নারীর গর্ভে বড়ো হতে থাকা তিন মাসের ভ্রুনকে যদি নীলিমার গর্ভে রোপন করা হয়। তবেই সেই সন্তান জন্মানোর পরই, নীলিমা যতবার ইচ্ছা ততবারই মা হতে পারবে। কিন্তু প্রথম সন্তানকে ওই ভাবেই জন্ম দিতে হবে। এর পর পবন আর নীলিমা ওই তপস্বিনীর কাছ থেকে কিন্তু পবন ভাবে তপস্বিনী যেটা বলল তাতে কোটি টাকা খরচ হবে, যেটা কোনো দিনই পবন আর নীলিমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর কোন মেয়েই বা নিজের সন্তান তাদেরকে দেবে?. .এই ভেবে নীলিমা পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করে, আর পবনও ওকে সান্ত্বনা দেবার জন্য ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না।...........

 সেই সময় আমিও ওই মন্দিরের কাছেই থাকতাম। নীলিমাকে ওই ভাবে কাঁদতে দেখে আমার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আমি ছিলাম এক অশরীরী। তাই ওরা আমাকে কেউ দেখতে পাবে না। কিন্ত সেই সময় আমিও ছিলাম তিন মাসের অন্তঃস্বত্তা। তাই নিজের কথা না ভেবে নীলিমার কথায় ভাবলাম। আমার গর্ভের তিন মাসের ভ্রুনকে, নীলিমার অজান্তেই, নীলিমার শরীরে দিয়ে দিলাম। নিজের সন্তানকে ছাড়তে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু ভাবলাম একজন অশরীরীর সন্তান হয়ে জন্মানোর থেকে এই মানুষ মায়ের সন্তান হয়ে জন্মানো ভালো। তাই একটু খুশিও হয়েছিলাম। তখন কি জানতাম এরা এতো শয়তান ।এর পরেই নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পবন ওকে হসপিটাল নিয়ে গিয়ে জানতে পারে নীলিমা অন্তঃস্বত্তা। ওদের আনন্দের সীমা থাকে না। খুব খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তার পর তোর জন্ম হয়। ওদের আর তোর ঠাকুমার মুখ বিষন্ন হয়ে যায় মেয়ে জন্মেছে দেখে। কিন্তু তুই অপরূপা সুন্দরী তাই ওরা তোকে ভালোবাসতে শুরু করে। তোর জন্মের দিনই তোর বাবা পবনের চাকরিতে উচ্চ পোস্টে প্রমোশন হয়। তোর জন্মের পর থেকেই তোর পরিবার কোটিপতি হয়েআমিও তোর পাশেই সব সময়ই ছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম না যে একটা ছেলে জন্মানোর পর ওরা তোর সাথে এই রকম ব্যাবহার করবে। তাহলে আমি কোনো দিনই তোকে নীলিমার কোলে তুলে দিতাম না। নীলিমার মতো মেয়ে আর পবনের মতো ছেলে কোনো সন্তানের মা-বাবা হওয়ার থেকে ওদের নিঃসন্তান থাকায় উচিত ছিল।..        

 কিন্তু তুই এতো সুন্দরী দেখে তোর ঠাকুমা মৃনালিনীরও সন্দেহ হয়েছিল । .....কিন্তু কোন কারন খুজে পায়নি মৃনালিনী  এর কারণ আজ আমি তোকে বলছি পরী, তুই এতো সুন্দরী কারণ তুই আমার মেয়ে। আর আমি হলাম স্বর্গের এক অপ্সরীর কন্যা।.....     আমি আমার মাকে অপ্সরীদের জীবনযাপন করতে দেখতাম, যা আমার ভালো লাগতো না। আমি পৃথিবীর মানুষের মতো জীবন চাইতাম। যা সম্ভব ছিল না। আমি অনেক তপস্যা করে অনেক শক্তি লাভ করি এবং পৃথিবীর মানুষ হয়ে জন্মানোর অনুমতি পাই। আর তারপর আমি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মায়। সব কিছু ভালোই ছিল।আমার বিয়েও দেওয়া এক নামী বিজনেস ম্যানের সঙ্গে। আমার শশুরবাড়ির লোকজন সমাজের নামী ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত হলেও, তারা ছিল ভিতরে এক একটা নরকের কীট। আমি অন্তঃস্বত্তা হলাম, আমি খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু ওরা ছেলে চেয়ে ছিল। আমাকে জোর করে নার্সিংহোমে নিয়ে গেল, ডাক্তারকে অনেক টাকা দিয়ে আমার গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ পরীক্ষা করানো হল। জানা গেল আমার গর্ভে কন্যা সন্তান আছে। দু দিন পর গর্ভপাত করানোর দিন ঠিক হল। নির্দিষ্ট দিনের আগের দিন রাত্রে আমি শুধু মাত্র তোকে বাঁচানোর জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেলাম। ......

কিন্তু এই নোংরা সমাজে একা মেয়ে রাস্তায় থাকা যে কতটা বিপজ্জনক ও মারাত্মক হতে পারে সেটাও বুঝতে পারছিলাম। একদিন কতকগুলি বদমাশ লোক আমার পিছু ধাওয়া করতে শুরু করে। একজন সাধারণ মেয়ে যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা এই বদমাশ লোকগুলোর ধারণাও ছিল না। আমি সেদিন নিজেকে আর তোকে বাঁচানোর জন্য উন্মাদ্ ভয়ংকর নারী হয়ে উঠি। শুধু মাত্র নিজের হাতের কাছে পাওয়া একটা সেফটিপিন দিয়ে ওই বদমাশ লোকগুলোকে একের পর এক শেষ করতে থাকি।  তার পরেই আমি ওই শিব মন্দিরের কাছে চলে এসে থাকতে শুরু করি। কিন্তু ক্ষিদের জ্বালা আর কদিন সহ্য করে তোকে বাঁচাতে পারতাম ?...আর কোনো উপায় না দেখে তোকে গর্ভে নিয়েই এই গঙ্গার জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করি। কিন্তু মানুষ রূপে জন্মালেও আমার শরীরে ছিল ,আমার অর্জিত দৈব শক্তি । তাই এর ফলেই গর্ভে তোর মৃত্যু হয়নি, তুই অশরীরী সন্তান রূপেই আমার গর্ভে ছিলি । আর তোকে নীলিমার গর্ভে রোপন করার পর থেকেই আমি অশরীরী। আর তুই আমার মানুষ রূপী সন্তান।.....   এতোক্ষণ পরিনীতা চুপ করে নীহারিকার কথা শুনছিল। এবার ওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। আর নীহারিকা পরীর চোখের মুছিয়ে দিতে গিয়ে, ঘরের বাইরে থেকে চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ শোনা গেল । পরী বুঝল হসপিটাল থেকে ওর মা-বাবা ফিরে এসেছে। আর বাইরে থেকে ওদের চিৎকারে এই টুকুই বোঝা গেল যে ওর ঠাকুমা মৃনালিনী দেবীর ওই কাঁচের ঝাড়বাতিটার আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত্যু এবার পরী, নীহারিকার দিকে তাকালো, আর নীহারিকাও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, " তোর উপর যে আঘাত করবে তার এই অবস্থাই হবে। আর তুই এই বাড়ির সৌভাগ্য । তোর জন্যই এরা আজ কোটিপতি। তুই যেদিন এই বাড়ি থেকে চলে যাবি , সেদিন ওরা নিঃস হয়ে ভিখারিতে পরিনত হবে।....কিন্তু এটা ওরা কেউ জানে না। আর যেদিন জানতে পারবে সেদিন ওরা আর তোকে ফিরে পাবে না।..    এরপর পবন রাগে পাগলের মতো চিৎকার করে পরীর ঘরের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে পরীকে ডাকতে লাগল। পরী দরজা খুলল, আর এর পর যা ঘটল, তা আর চোখে দেখা না,,, পবন পরীকে ধাক্কা মেরে ঘরের বাইরে ফেলে দিল, আর নিজের কোমর থেকে বেল্ট খুলে পরীকে মারতে শুরু করল আর বলতে থাকল," তুই আমার মা কে মেরে ফেললি! তোর জন্যেই মরল। আমি তোকে আমি আজ মেরেই ফেলব ।" বলে হঠাৎই পবন একটা জ্বলন্ত শিক্ নিয়ে এল পরীকে মারবে বলে। এই দেখে পরী ভয়ে কুঁকড়ে গেল। কিন্তু নীলিমা বা ঋতম কেউ ই পবনে আটকালো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে লাগলো আর ঋতম তো জ্বলন্ত শিক্ টা বাবা পবনের দিকে আরো এগিয়ে দিল। পবন এবার পরিনীতাকে শিক্ দিয়ে মারতে উদ্যত হল.  এতক্ষণ নীহারিকা সবকিছু দেখেও চুপ ছিল। কিন্তু পরিনীতার অবস্থা দেখে এবার নীহারিকা ক্ষেপে উঠল। এতক্ষণ সবার সামনে থেকেও অদৃশ্য হয়ে ছিল নীহারিকা কিন্তু এবার সবার সামনে এসে দাঁড়ালো দৃশ্যমান হয়ে কিন্তু নিজের জমকালো রাজপোশাকে নয়, একটি সাধারণ গৃহবধূর পোশাকে। রাগে চিৎকার করে পরিনীতাকে মারতে উদ্যত পবনকে বলল, " দাঁড়ান! পরীর গায়ে আর একবারও হাত দিলে কিন্তু আপনার পক্ষে ভালো হবে না।........." হঠাৎই এমন কথা শুনে পবনসহ নীলিমা ও ঋতম চমকে ঘুরে তাকালো নীহারিকার দিকে, একটু থতমত খেয়ে পবন জিজ্ঞাসা করল," আপনি কে??....আর আমি আমার মেয়ের সাথে কেমন ব্যবহার করব, সেটা আপনি বল এবার নীহারিকা একটু শান্ত হয়ে বলল," আমি নীহারিকা, একজন গৃহবধূ। ....আর অবশ্যই আপনি আপনার মেয়ের সাথে আপনার ইচ্ছা মতো ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু এই রকম নৃশংস ব্যবহার করতে পারেন না।.....  পবন এবার নীহারিকার ওপর রেগে গিয়ে বলল," ওই শয়তানী কে আমি একবারে সহ্য করতে পারি না।...ওর জন্যই আমাদের ছেলের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওর নিজে পরীক্ষায় পাশ করল আর ওর জন্যই ঋতম পরীক্ষায় ফেল করল।.......আর আজকে তো আমার মাকে ই মেরে ফেলল ওই পরিনীতা।......আজ আমি ওকে মেরেই ফেলব।.পবন গজগজ করতে লাগল।

নীহারিকা বলল," সত্যিই কি তাই! ! আপনারা তো পরীর সাথে ঋতমকে কথা পর্যন্ত বলতে দেন না, তাহলে পরীর জন্য ঋতম কি করে ফেল করবে??...

 আর আপনারাতো, ঋতম কোনো দোষ করলেও পরীকে মারধোর করতেন। কেন? ?? কারন, পরী মেয়ে তাই দোষ না করেও সব দোষ ওর, আর ঋতম হাজারের বেশি দোষ করেও ও নির্দোষ। ঋতম ছেলেতো তাই ও ধোয়া তুলসী পাতা, এটা আপনারা আর আপনাদের মতো আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মা-বাবাই মনে করেন।.....  কোন দিনও কি খোঁজ নিয়ে জানতে চেয়েছেন যে, ছেলেটাকে এতো টিউশন পড়তে দিয়েও কেন ও বছর বছর ফেল করে? আবার ছেলেটা সত্যিই ঠিকঠাক টিউশন পড়তে যায় কিনা? .........কিন্তু না!! .......আপনাদের এই সব জানার কোনো প্রয়োজনই নেই , কারণ ঋতম ছেলেতো তাই ও তো কোনো দোষই করতে পারে না। ভাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর সেই দোষটাও ওই ঘরে থাকা বোন পরীর। ও মেয়ে তাই সব দোষ ওরই। ও মেয়ে তাই আপনারা সব সময়ই অকারণে পরীকে মারধোর করেছেন। মানসিক অত্যাচার করেছেন আপআর আজ আপনার মায়ের মৃত্যুর জন্য পরিনীতা নয়, আপনারা আর আপনার মা নিজে দায়ী। একটা নির্দোষ কুমারী মেয়ের উপর এই ভাবে অত্যাচার সয়ং ভগবানও সহ্য করেন না। তাই তিনি শাস্তি দিলেন, যার ফলসরূপ আপনার মা মৃনালিনী দেবীর আকস্মিক মৃত্যু।।.. আর নীলিমা দেবী আপনি? আপনিও তো একজন মেয়ে, একজন মা হয়ে নিজের মেয়ের ওপর হওয়া অত্যাচার দেখেছেন ?? আর নিজেও সমান ভাবে মানসিক ভাবে অত্যাচার করে যাচ্ছেন মেয়ে পরিনীতার ওপর। ছিঃ!!!!....আপনি মা নামের কলঙ্ক। নিঃসন্তান থাকায় আপনাদের উচিত ছিল।........পরিনীতাকে যখন আপনারা সহ্য করতে পারেন না ,তাহলে কেন বাড়িতে রেখে অত্যাচার করছেন??? ......কোনো নিঃসন্তান মায়ের হাতে ওই ছোট্ট পরিনীতাকে তুলে দিলেই তো আপনাদের ফেলে দেওয়া মেয়ে, কোনো নিঃসন্তান মায়ের কোল আলো করত, সেই মা সন্তান সুখ পেত।...........     এতক্ষণ সবাই নীহারিকার বলা কথাগুলো শুনছিল, পরিনীতাও অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল নীহারিকার এই রূপের দিকে। এবার পবন বলল," কে নেবে এই সতেরো বছরের মেয়েকে। একপ্রকার বিয়ে দিয়েই বিদায় করতে হবে পরিনীতাকে। এবার নীহারিকা রাগে গর্জে উঠল, বলল," মেয়ে বলে কি ফেলনা নাকি ???...যে বিয়ে তাকে তাড়াতাড়ি বিদায় করতে হবে?? .....যদি আপনি এখনই ঋতমকে বিয়ে দিয়ে কারুর বাড়ির ঘরজামাই আর শশুরবাড়ির কাজের লোক বানিয়ে বিদায় করতে পারেন তাহলে আপনি পরিনীতাকেও বিয়ে দিয়ে বিদায় করুন। কারন পরিনীতাও তো ওর শশুরবাড়ির রাঁধুনি, কাজের লোক আর অত্যাচার সহ্য করার যন্ত্র হিসেবেছেলে মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, ছেলে-মেয়ে সব সময়ই সমতুল্য। আর মেয়েরা তো এই পৃথিবীর বুকে প্রাণের মূল সৃষ্টিকর্তী। এদের ঘৃণা না করে, শ্রদ্ধা করা উচিত। এই মেয়েরা পৃথিবীতে না থাকলে , আপনাদের আদরের ছেলেরাও জন্মাত না। .আপনি মেয়েকে ঘৃণা করছেন! আপনিও কিন্তু একটা মেয়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন।....মিঃ পবন রায়চৌধুরী, আমি পরিনীতাকে আমার মেয়ে হিসেবে নিয়ে যেতে চাই  পবন বলল," আপনি ওকে এখনি নিয়ে যান।" নীলিমা আর ঋতমও কিছু বলল না। মুখ ফিরিয়ে নিল পরিনীতার দিক থেকে।.....   এবার পরিনীতা উঠে এসে নীহারিকার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল," আমি তোমার সাথে যাব মা । আমাকে তুমি নিয়ে চলনীহারিকা পরীকে নিয়ে জয়ের হাসি হেসে পবনের রাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল।....আর পিছন ফিরে পরিনীতা, পবন আর নীলিমা কে উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল," আমার ওপর অত্যাচারের শাস্তি তোমরাও পাবে। শেষ বয়েসে মুখে জল দেওয়ার মতোও কাউকে পাবে না। একজন নির্দোষ বালিকার উপর অত্যাচারের জন্য ভগবানও তোমাদের ক্ষমা করবেন না। কথাটা ভালো করে মনে রাখো।....."        নীহারিকা, পরিনীতাকে নিয়ে চলে গেল কিন্তু কোথাই গেল? কেউ জানলো না.....বা কেউ একবারও জানার চেষ্টাও করল না। মেয়েটাকে কে, কেন, কোথায় নিয়ে গেল, সেটা জানার প্রয়োজন মনে করল না পরীর পরিবারের লোকজন।..........

   

   পরিনীতার চলে যাওয়ার পর, ঋতম হঠাৎই ওর বাবা পবনকে বলল," ওহ্! বাঁচা গেল। ওই পরী ডাইনিটা বাড়ি থেকে দূর হল। এবার আমরা সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব। তাই না বাবা?" পবন ছেলের কথায় একটু হাসল। ঋতম ওর ঘরে চলে গেল। নিজের দিদির নামে খারাপ কথা বলতে একটু কিছু মনে হল না ঋতমের। কারন ঋতমের মা-বাবা তো কোনো দিনই ঋতমকে, মেয়েদের সম্মান করতে শেখাই নি।...       

               এবার পবন দরজার দিকে তাকিয়ে নীলিমাকে বলল, " পাপটা বাড়ি থেকে বিদায় হল। আমাকে টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে হল     নীলিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল," ঠিকই বলেছো। মেয়েটা পাপী রাক্ষসী ছিল, শাশুড়িটাকে না খেয়ে গেল না!  পরিনীতার বাড়ি থেকে চলে যাওয়াতে কারুর এতটুকু আফসোস অবধি ছিল না, বরং ওরা হাফ ছেড়ে বেঁচে ছিল।.......মৃনালিনী দেবীর মৃত্যুর পর তাঁর ক্রিয়াকর্ম করে, শোক কাটিয়ে উঠতে প্রায় একবছর কেটে গে        এরপর আরও দুটো বছর কেটে গেছে। পরীর কথা সবাই প্রায় ভুলেই গেছে। ........... কিন্তু ঋতমের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই দুই বছরে দুই বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেনি।....           তবুও পবন আর নীলিমা ছেলেকে কিছুই বলত না। ওরা জানতো ছেলে রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে, পার্টি করে মদ্ খেয়ে বাড়ি ফিরত। তাও পবন আর নীলিমা ওদের আদরের ছেলে ঋতমকে কিছু বলত না।..........       এছাড়া পবনতো একবার চেষ্টা করেছিল ঋতমের স্কুল কর্তৃপক্ষ কে ঘুষ খাইয়ে মাধ্যমিকে পাশ করিয়ে দেবার। বরং হয়েছিল ঠিক উল্টো, স্কুল কর্তৃপক্ষ ঋতমকে পাশ করানোতো দুরের কথা, পবনকে, ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করানোর ভয় দেখিয়ে অপমান করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিল। এবং ঋতমকে স্কুল থেকে বহিষ্কারও করা হল। পবন রেগে আগুন হয়ে অপমান খেয়ে বাড়    নীলিমা কি হয়েছে জানতে চাওয়াই পবন কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা ঋতমের ঘরে চলে গেল, ঋতমকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসে অসম্ভব ভাবে মারতে শুরু করল। ঋতম হতভম্ব হয়ে মার খেতে লাগনীলিমা কি হল বুঝতে পারল না, পবন কোনো দিনই ঋতমকে মারেনি....., পবনকে আটকাতে গেল কিন্তু পবন রাগে নীলিমা কেও ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। ...............

   ঋতমকে ক্রমাগত মারতে থাকল। কিন্তু হঠাৎই একটা ফোন এল পবনের, পবন একটু থামল। পবন ফোনটা রিসিভ করে, ফোনের ওপাশ থেকে যা শুনলো তাতে পবনের মাথায় যেন বাজ পড়ল। ফোনটা রেখে দিয়ে, মাটিতে ধপ্ করে বসে পড়ল নীলিমা আর ঋতম পবনের অবস্থা দেখে কিছুটা চমকে গেল। নীলিমা তাড়াতাড়ি জল নিয়ে এল পবনের জন্য কিন্তু, পবন জলের গ্লাসটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো এবং করুন স্বরে বলল," নীলিমা! অফিস থেকে ফোন করেছিল। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেল। .......... আমার কম্পানির সবচেয়ে বেশি দামী প্রোজেক্ট মার্কেটে লস্ করেছে। ..........আমার প্রচুর টাকা লস্ হয়ে গেছে।....... এখন আমি কী করব?.....!!! আমাকে এখনি অফিসে যেতে হবে।......"  কথাটা শেষ করেই পবন দৌড়ে, গাড়ি নিয়ে অফিসে বেরি কথাগুলো শুনে নীলিমার মাথা ঘুরে পড়ে গেল। আর ঋতম নীলিমার মুখে জল দিতে লাগল জ্ঞান ফেরানোর জন্য।শুরু হল বাড়ির লক্ষ্মী নির্দোষ কন্যা পরিনীতাকে কষ্ট দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার শাস্তি।.......

  নীলিমার যখন জ্ঞান ফিরল, তখন ও চোখ মেলে দেখল ঋতম হাতে ফোনটা নিয়ে ক্রমাগত কেঁদেই চলেছে। নীলিমা জিজ্ঞাসা করল," কি হয়েছে ঋতম? কাঁদছিস কেন? ?....     ঋতম মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল," মা-আ-আ! হসপিটাল থেকে ফোন করে ছিল।.........বাবা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হবার সময়, বাবার গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে,.....বাবা হসপিটালে....    

   কথাটা শুনে নীলিমার মনে হল চারিদিকে যেন অন্ধকার নেমে এল। কিছু ক্যাশ টাকা আর এটিএম কার্ডটা নিয়ে, ঋতমকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল।...  নীলিমা হসপিটালে গিয়ে যা শুনলো তাতে ও একবারে ভেঙে পড়ল। ডাক্তারবাবু জানালেন, এখনি পবনের একটা বড়ো অপারেশন করতে হবে, অ্যাক্সিডেন্ট এর ফলে ওর শরীরে প্রচুর ইন্টারন্যাল ব্লিডিং হয়েছে।...   খরচ কত পরবে নীলিমা জানতে চাওয়াই, ডাক্তারবাবু জানান, প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হবে।এই কথা শুনে যেন নীলিমার মাথায় বাজ পড়ে, একে তো কম্পানিতে অনেক টাকা লস্ হয়েছে, এর পর ব্যাঙ্কে তিন লাখ টাকা তোলার পর আর লাখ খানেক টাকা পড়ে থাকবে।....

 এর পর কিছু না ভেবেই সোজা চলে যায় এটিএম এ, সেখান থেকে টাকা তুলে আর নিজের একটা সোনার হার স্বর্ণকারের দোকানে বিক্রি করে, হসপিটালে তিন লাখ টাকা জমা দেয় নীলিমা । শুরু হয় পবনের জীবন-মরনের লড়াই--অপারেশান প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে অপারেশন চলার পর, অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এলেননীলিমা ডাক্তারবাবুকে তাড়াতাড়ি পবনের অবস্থা জানতে চাওয়াই, ডাক্তারবাবু বললেন ,পবনের জ্ঞান ফেরার আগে পর্যন্ত ওর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়      

 নীলিমা চুপ করে বসে চোখের জল ফেলছিল। তখন ওর খেয়াল হল ঋতম ওর পাশে নেই। " কোথায় গেল ছেলেটা?..এখানেই তো ছিল।.... বাড়ি চলে গেল নাকি?...."   নীলিমা পাগলের মতো   হসপিটালের এদিকে ওদিকে ঋতমকে খুঁজতে লাগল। কোথাও দেখতে পেল না ঋতমকে। হসপিটাল থেকে বাইরে বেরিয়ে খুঁজতে লাগল। কিছুটা এগিয়ে যা দেখল, তা দেখে ওই অবস্থাতেই নীলিমার মাথা আগুন হয়ে গেল, দেখলো.....ঋতম ওর কথাগুলো মাতাল বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে হাসাহাসি করছে আর সমান ভাবে মদ্ আর মাংস খাচ্ছে আর রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা মা-বোনের বয়সি মেয়ে গুলো কে দেখে বিশেষত ঋতম নোংরা নোংরা কমেন্টস্ করছে এই সময় নীলিমা রাগে তেড়ে এল ঋতমের দিকে। এসেই সপাটে একটা চড় মারল ঋতমের গালে। ঋতম তো পুরোপুরিই অবাক ওর মায়ের এই রকম ব্যাবহারে। কারণ কোনো দিনই নীলিমা তার আদরের ছেলে গায়ে হাত তোলেনি। আর ঋতম কোনো দোষ করলেও পরীকে মারধোর করএই প্রথম বার নীলিমা ঋতমকে মারল। এবং চিৎকার করে বলল," জানোয়ার ছেলে! !!......তোর বাপ্ হসপিটালে জীবন-মরনের লড়াই করছে আর তুই এখানে মদ্ খেয়ে আনন্দে নোংরামো করছিস??..... আজ তোকে আমি কী করি দেখ্ ।এই বলে নীলিমা ঋতমের চুলের মুটি ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে বাড়িতে তালা দিয়ে আবার নীলিমা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা ঋতম " মা.....মা .... দরজা খোলো...বলে চিৎকার করতে থাকল।" .......

আবার ঠিক একই ঘটনা ঘটল যেমন ঠিক সেই তিন বছরের ছোট্ট পরীর সাথে ঘটেছিল।......

নীলিমা ক্লান্ত অবস্থাই হসপিটালে পৌঁছালো। ...হসপিটালে ঢুকতে গিয়েই এক নার্সের খুব জোরে ধাক্কা খেল নীলিমা।.. তাড়াতাড়ি "সরি" বলতে গিয়ে নার্স টাকে একটু চেনা চেনা লাগলো।হঠাৎই নার্সটা একটু হেসে বলল," আরে! মিসেস রায়চৌধুরী, আপনি এখানে?.. কেমন আছেন?.. আপনার মেয়ে কেমন আছে??.....নীলিমা একটু হতভম্ব হয়ে গেল নার্সের কথায়। বলল," আপনি কি বলছেন??....আমার মেয়ে?....    এবার নার্সটা বলল," আরে ম্যাডাম! আপনার মেয়ে পরিনীতা রায়চৌধুরী, আজকের দিনেই তো ওর এই হসপিটালেই জন্ম হয়েছিল। আর আপনি দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রথম মা বলে ডাকার একজনকে পেয়েছিলেন।....কথাগুলো শুনে, নীলিমা আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগের অতীতে ফিরে গেল....ঠিক আগের দিনটাই....। ওদের সব থেকে খুশির দিন ছিল এই আজকের দিনটা। ওর কোল আলো করে এসেছিল....রাজকুমারীর মতো ছোট্ট পরী। সত্যিই তো সেইদিন ওই বাচ্চা পুতুলটাকে দেখে খুশিতে নীলিমার চোখে জল এসে গেছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনেক কষ্টের পর মা হওয়ার আনন্দ পেয়েছিল ঠিক আজকের দিনেই তো। .পরীর জন্মদিন ......আর আজকের দিনেই ওর বাবার এই অবস্থা।............ গোটা পরিবারের এই অবস্থা। আর সেই আজকের দিনেই.....পরী আমাদের সঙ্গে নেই........."

 ভাবনায় ছেদ পড়ল অন্য একটি নার্সের ডাকে, ...বললেন," ম্যাডাম! আপনার স্বামী মিঃ পবন রায়চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে। উনি ভালো আছেন । আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন । নার্স চলে গেল। সেই সঙ্গে নীলিমাও ছুটে গেল ওয়ার্ডের দিকে।.........

  

   পবন ভালো আছে দেখে নীলিমা খুশি হল। পবন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু নীলিমা ওকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল," তুমি আগে সুস্থ হয়ে ওঠো, তার পর অফিসের কথা। আর তোমার অফিস থেকে ফোন করেছিল, আমি ওদের বলে-বুঝিয়ে দিয়েছি যে তুমি সুস্থ হয়ে ওদের সব টাকা শোধ করে দেবে।" বলতে বলতে নীলিমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। ...   অন্যদিকে ঋতম ঘরে বন্দি হয়ে ছিল, অনেক ডেকেও কেউ দরজা খুললো না দেখে ও নিজের ঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে বেরিয়ে বাইরে পালাল।

নীলিমাও জানতে পারলো না।

 তিনদিন পর পবনকে নিয়ে নীলিমা বাড়ি ফিরল। নীলিমা ভেবেছিল ঋতম ঘরেই থাকবে আর তিন দিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকার ফলে হয়তো ওর মাথাটা ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু যখন নীলিমা ঋতমের ঘরের দরজাটা খুলল তখন ঘরে ঋতমকে না দেখে আর ঘরের জানালার কাঁচ ভাঙ্গা দেখে নীলিমার মাথায় রাগ উঠে গেল। পবনকে, নীলিমা ঋতমের ব্যাপারে সব কিছু বলল।......... তার পর ঋতমের খোঁজ করতে নীলিমা বাইরে বেরিয়ে গেল। অনেক খোঁজ করেও ঋতমের কোনো খোঁজ পেল না।   হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছিল নীলিমা.....এমন সময় সেই দিনের একঠা মাতাল বন্ধু নীলিমার সামনে পড়ল, নীলিমা ওকে ঋতমের কথা বলতেই ও বলল ঋতম আগের তিন রাত বেশ্যালয়ে ছিল আর এখনোও ওখানে পড়ে কথাটা শুনে নীলিমা ক্ষেপে উঠল।....... সোজা চলে গেল বেশ্যালয়ের দিকে। ওখানে গিয়ে ঋতমকে মাতলামো করতে দেখে,... নীলিমা ওকে মারতে শুরু করল,..... মারতে মারতে বাড়ির দিকে নিয়ে চলল........ঋতম কোনো দিনই ওর মায়ের এই রকম রূপ দেখে   ঋতম কে বাড়ি নিয়ে এল নীলিমা। বাড়িতে এসে দেখল পবনের অফিসের লোকজন বাড়ি এসে হাজির হয়েছে। পবনের অবস্থা শোচনীয় লোকজনের চেঁচামেচিতে আর টেনশনে।নীলিমা ওদের সামনে গিয়ে চেঁচিয়ে বলল," আপনারা আপনাদের টাকা দশ দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। এখন আপনারা যান। ওকে রেস্ট করতে দিন।" লোকেরা সবাই চলে গেল।

এবার পবন, নীলিমাকে জিজ্ঞাসা করল,"তুমিতো ওদের বলে দিলে দশ দিন পর টাকা দেবে। কিন্তু কিকরে?... টাকা দিতে গেলে আমাদের এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে হবে। আর আমাদের আবার পুরনো বাড়িতে থাকতে হবে...."     নীলিমার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল কারন পরীর জন্মের একমাসের মধ্যেই ওদের এতো উন্নতি হয়েছিল যে ওরা এ বাড়িটা কিনেছিল।

  ও বলল," তুমি বাড়িটা বিক্রি করে ওদের টাকা দিয়ে দাও।.......যার জন্য এই বাড়িটা কিনেছিলাম সেই ই তো এই বাড়ি থেকে চলে গেছে তখন কি আর এই বাড়িটা আমাদের থাকবে!!..   পবন, নীলিমার কথায় কিছু একটা ভেবে উঠে গেল। আর নীলিমার চোখ থেকে একফোটা জল গড়িয়ে পড়ল আর সেই ছোট্ট পরীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল।........... এরপর আবার প্রায় তিন বছর কেটে গেছে। কোম্পানির টাকা শোধ করতে নতুন বাড়িটা বিক্রি করে পবনরা সবাই এখন ওদের পুরোনো বাড়িটাতে থাকে। পবনের ওই বড়ো চাকরীটাও ওই সময়ে চলে গেছে টাকা লস্ হওয়ার  এখন পবন সংসার চালাতে একটা ছোট অফিসে খুব কম মাইনের চাকরী করে। পরীর জন্মের পর ওরা হাই সোসাইটির বড়োলোকে পরিনত হয়েছিল, আজ পরী চলে যাবার পর ওরা ধীরে ধীরে ওই হাই সোসাইটির কাছে, মিডিল ক্লাস আর লোয়ার ক্লাসে পরিনত হয়েছে। এটা পবন আর নীলিমা সবই বুঝতে পারল    

ওদের পরিচিত লোকজনের কাছে আজ ওরা ভিখারিতে পরিনত হয়েছে। কেউ কেউ তো আবার ওদের বাড়ির সামনে দু-দশ টাকা ফেলেও দিয়ে যায় ভিখারি মনে করে নীলিমা মাঝে মাঝে পরীর উপর অত্যাচারের কথা মনে করে কষ্ট পাই, চোখের জল ফেলে। ঋতম একটা শয়তান তৈরী হয়ে গেছে, শুধু টাকা নেওয়ার জন্য বাড়ি আসে....আর সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকে.....রাতেও বাড়ি আসেনীলিমা আর পবন ওকে শাসন করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর কিছুই বলে নাআর এখনতো কিছু বললেই মা-বাবাকেও তেড়ে মারতে আসে। এই ভাবেই চলছিল ওদের দিনগুলো।    

     একদিন পবন আর নীলিমা বসে কথা বলছিল। এমন সময়ে হঠাৎই পবন বলেই ফেলল," পরিনীতা আমাদের বাড়ির লক্ষ্মী ছিল। ও কোনো দোষ করেনি। আমারই ওকে মেয়ে বলে ঘৃণা করতাম। ঋতমের দোষের শাস্তি আমরা পরীকে দিতাম। কিছুই তো চাইতো না ও আমাদের কাছে। শুধু রাত্রে তোমার কোলে ঘুমাতে চাইতো......একা ঘরে শুতে ভয় পেত। তাও আমরা ওকে বিনা দোষে নৃশংস ভাবে মারতাম। ..   ঋতম জন্মানোর পর মা ই পরীর বিরুদ্ধে আমাকে ভুল বুঝাতো। পরীকে ঘৃণা করতে শেখাতো। মা নিজেও পরীকে মারধোর করেছেন।.....আর সেই পরীই বাড়ি সব কাজ করেও পড়াশুনা করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে...... আমাদের নামগুলোও উজ্জ্বল করত...। আর আমরা, ও মেয়ে হয়ে রেজাল্ট ভালো করত আর ঋতম ছেলে হয়ে রেজাল্ট খারাপ করত তাই আমরা ওকে মারতাম।....আর তুমি! নীলিমা । তুমি মা হয়ে সব অত্যাচার দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিতে। ছিঃ!!!!!!.কথাগুলো বলতে বলতে পবনের চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। এবার নীলিমাও কেঁদে উঠল এবং বলল,"পরী একজন দেবী ছিল। যখনই কেউ ওকে মেরে ফেলার চেষ্টা করত আর তখনই তার চরম ক্ষতি হতো....যেমন তোমার মায়ের হল.....পরীকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন উনি.. আর তখনিই উনিই ঝাড়বাতি পড়ে মারা গেলেন। এতে পরীর তো কোনো দোষ ছিল না। তোমার মা তার নিজের পাপে মরেছেন, একজন নির্দোষ বালিকার উপর অত্যাচারের......আর সেদিন তুমি যখন পরীকে মেরে ফেলতে চাইলে আর ওই মহিলা কোথাই থেকে এসে আবির্ভাব হয়ে, পরীকে নিজের মেয়ে বলে নিয়ে চলে গেলেন"আমি জানি না নীলিমা!! কে ছিল ওই মহিলা!! উনি আমাদের বুঝিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নি। তাই অত্যাচার থেকে বাঁচাতে আমাদের মেয়েটাকে কোথাই নিয়ে চলে গেলেন জানি না!!!! "  এই কথাটা বলে পবনের ছোট বেলার পরীর মুখটা মনে পড়ে গেল আর পবন পাগলের মতো চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।....... পবন আর নীলিমা দুজনেই পরীর কথা ভেবে কাঁদছিল। এমন সময়ে ঋতমের এক বন্ধু এসে জানালো কয়েকজন পুলিশ ঋতমকে ধরে থানায় নিয়ে গেছে। শোনামাত্রই দুই জনেই ছুটলো থানায়।  কিন্তু গিয়ে যা শুনলো তাতে যেন ওদের মাথায় বাজ পড়ল। পুলিশ জানালো, প্রতি দিন রাতে ঋতম রাস্তা যাতায়াত করা একটি মেয়েকে খারাপ মন্তব্য করে, কিন্তু কাল তা অতিরিক্ত আকার ধারণ করে। তাই মেয়েটি ঋতমের শাস্তি চেয়ে থানায় এফ.আই.আর করে।.........আর ঋতম বারবার বলছে সে নাকি কিছুই     কথাগুলো শুনে পবন কিছু বলার আগেই নীলিমা চিৎকার করে বলে....," হ্যা। আমি নিশ্চিত্ । ঋতমই দোষী । ঋতম ওই মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে......। আমি বলছি , আপনারা ওকে কোর্টে তুলুন। ওকে শাস্তি দিন। এতদিন আমি মা হয়েও যা করতে পারিনি, আজ আমি তাই করবো, আমিই ঋতমের বিরুদ্ধে কোর্টে বলল।....." কথাগুলো বলতে বলতে নীলিমা কেঁদে ফেলল। পবন ওকে শান্তনা দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেল।  এর কয়েক মাস পর ঋতমের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটা কেস্ পাওয়া যায়। কোর্টের রায়ে, ঋতম রায়চৌধুরীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়।.এরপর নীলিমা আর পবন একেবারেই ভেঙে পড়ে।

ওরা পরিনীতার অনেক খোঁজ করেও পাইনি।.....

  একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পবন বাইরে বসে চা খাচ্ছিল। তখন পবনের এক পুরোনো বন্ধু এসে বলে পরিনীতার খোঁজ পাওয়া গেছে। কথাটা শুনে নীলিমা বাইরে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল," কোথাই আছে আমাদের পরী???????...." ওই বন্ধুটি জানাল, পরিনীতাকে নাকি টিভিতে দেখাচ্ছে। কথাটা শুনেই ওরা তাড়াতাড়ি টিভিটা অন্ করল এবং ওরাও দেখতে পেল। কিন্তু ওদের সেই ছোট্ট মেয়ে পরীকে নয়...., একজন সায়েন্টিস্ট, একজন সফল অ্যাস্ট্রোনট পরিনীতা রায়চৌধুরী কে......, যে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত হচ্ছে।.....এই দেখে পবনের বুকটা গর্বে ভরে গেল, নীলিমার চোখে আনন্দের কান্না উপচে পড়ল।

  পরের দিনই ওরা চলল দিল্লি..... ওদের আদরের মেয়ে পরীকে আনতে।........ কিন্তু ওরা গিয়ে যা ঘটলো তাতে ওদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল.....পায়ের তলার মাটি সরে গেল।.       

     প্রথমত, ওদের ভিখারিদের মতো পোশাক দেখে সায়েন্স ইনস্টিটিউট এ ঢুকতেই দেওয়া হল না।     দ্বিতীয়ত, ওরা যখন সিকিউরিটি গার্ড কে, নিজেদের পরিচয় হিসেবে...বিখ্যাত অ্যাস্ট্রোনট পরিনীতার মা-বাবা বলল। তখনতো সব লোকের মধ্যেই এমন এক প্রচন্ড ব্যাঙ্গাত্মক হাসির রোল উঠল যে, নীলিমা আর পবন লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পেল না।..

ওরা এরপর আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়িয়ে থাকেনি। কান্নায় চোখ মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল।...এই সময়ে রিসেপশন্ এর একজন লোক ওদের দুজনের ওই রকম অবস্থা দেখেন, ওনার একটু করুনা হয়। উনি ওদের কাছে এসে, ওদের আসার কারণ জানতে চান। তখন পবন লজ্জিত ভাবে জিজ্ঞাসা করে," স্যার, আমরা শুধুমাত্র একবার পরিনীতা রায়চৌধুরীর সাথে দেখা করতে চাই। প্লিজ স্যার।.... কথাটা শুনে ওই লোকটা একটু হেসে বললেন," আপনারা কি বলছেন!!! মিস রায়চৌধুরী একজন বিজ্ঞানী, একজন সফল অ্যাস্ট্রোনট। উনি আপনাদের সাথে দেখা করবেন?!!!! হা..হা..হা......।কিন্তু আপনারা যখন এতো করে বলছেন,,,তখন আমি একবার চেষ্টা করতাম ম্যাডামের সাথে আপনাদের দেখা করাবার কিন্তু,, ......তা আর সম্ভব নয়।"

পবন আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল," কিন্তু কেন????..."ওই লোকটি বললেন," ম্যাডাম অর্থাৎ মিস পরিনীতা রায়চৌধুরী কাল অনুষ্ঠানের পর নিজের ইচ্ছায়, নিজের স্পেসশিপ নিয়ে মহাকাশ ভ্রমণে বেরিয়ে গেছেন। তিনি কবে ফিরবেন? বা আদৌ কোনো দিন ফিরবেন কিনা কেউ জানে না।...আচ্ছা, এবার আপনারা আসুন।" কথাগুলো বলে লোকটি চলে গেলেন। 

লোকটার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীলিমা আর পবনের চোখের সামনে খুশির স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। অনেক হতাশা আর দুঃখ নিয়ে ওরা বাড়ি দিকে রওনা দিল বাড়ি ফিরে আসার নীলিমার হঠাৎই পরীর জন্মের আগের কথা মনে পড়লো, মনে পড়ে গেল সেই গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থলের কাছে শিব মন্দির আর মন্দিরের কাছে থাকা সেই তপস্বিনী মাতার বলা কথাগুলো।.....সঙ্গে সঙ্গে ও পবনকে সব কথাগুলো বলল এবং আরো বলল," সেই তপস্বিনী মাতার কাছে যাব.....জানতে চাইবো আমার প্রথম সন্তান পরীর কথা।...." পবনও নীলিমার কথায় সায় পরের দিনই ওরা ওই তপস্বিনী মাতার কাছে গেল তার কাছে জানতে চাইলো পরিনীতার ব্যাপারে সব কথা। তপস্বিনী মাতা ওদের পরীর জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে সব কিছু বলল এবং আরো বলল," তোদের আমি আগেই বলেছিলাম প্রথম সন্তানের যত্ন করতে ওই তোদের ভাগ্য লক্ষ্মী। ওর পরে জন্মানো সব সন্তানই ভালো হবে তাও তোর ওই প্রথম সন্তানের জন্য। কিন্তু তোরা এই রকম কদর্য ব্যবহার করলি ওই ছোট্ট রাজকুমারীটার সঙ্গে? ছিঃ!!.......কিন্তু সত্যিই নীহারিকা একজন সত্যিকারের মা,,,সে শুধুমাত্র ওই মেয়েটাকে বাঁচাতে শশুরবাড়ি ছেড়ে ছিল। কতকগুলি শয়তানের সঙ্গে একা লড়াই করে বাঁচিয়ে রেখেছিল ওর সন্তানকে। ও তোদের মতো কন্যা সন্তানকে ঘৃণা করেনি....কন্যা সন্তানের মা হিসাবে নীহারিকা নিজেকে গর্বিত মনে করত।.....আর শুধুমাত্র তোকে কাঁদতে দেখে, নিজের ওই সন্তানকেই নিজের শক্তি বলে তোর গর্ভে প্রবেশ করিয়েছিল। আর ওই বাচ্চা জন্মানোর পর তোর আবার সন্তান জন্মায়, আর তার সাথে তুই এই রকম করলি?......তোদের সাথে যা হয়েছে তা ঠিকইআর তোদের বাড়িতে গিয়ে নীহারিকা ওর মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে আর মানুষের মতো মানুষ করে তুলেছে। আর হ্যা। ওই নীহারিকা কোনো মানুষ নয় ও একজন অশরীরী মা।.....ওই অশরীরী মায়ের মাতৃস্নেহে পরিনীতা আজ একজন সফল অ্যাস্ট্রোনট। আর তোরা তোদের ছেলেকে, কোনো মেয়ের সম্মান করতে শেখাস নি,,,একটা অপদার্থ জানোয়ার তৈরীআর তোরা কোনো দিনই পরিনীতাকে ফিরে পাবি না। ও মহাকাশে ওর মা নীহারিকার সাথেই মিলিত হয়েছে। ...

তোরা বাড়ি ফিরে গিয়ে সেই আগের মতো কষ্টের জীবন কাটাবি। যাঃ!!! চলে যা তোরা।"কথাগুলো শুনে নীলিমা আর পবন মনের দুঃখে বাড়ি ফিরে আসে। নীলিমা শুধু পবনকে একবার বলল ,"একজন অশরীরী মা তার মাতৃস্নেহ পরী বড়ো করল আর আমি একজন মানুষ মা হয়েও নিজের মেয়েকে মাতৃস্নেহ দিতে পারলাম না!..              


Rate this content
Log in