Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Bhaswati Ghosh

Drama

2.5  

Bhaswati Ghosh

Drama

আবার আসিব ফিরে[প্রথম পর্ব]

আবার আসিব ফিরে[প্রথম পর্ব]

4 mins
2.1K


 ভোর চারটে।প্রায় পাঁচ বছর বাদেআবার কলকাতার মাটি ছুঁয়েছে মনার নির্ধারিত

 ফ্লাইট।

আনন্দের অনুভূতি কি কিছু হচ্ছে "কই নাতো ।"-নিজের মনের প্রশ্নের নিজেই জবাব দেয় মনা ফ্লাইট ল্যান্ড করবার আগে সিটবেল্ট বাঁধার নির্ধারিত ঘোষণা শুনতে পায় এয়ার হোস্টেসের ধাতব পেলব কন্ঠে।

চেকিং পেরিয়ে মনা যখন এক্সিট গেটে এসে দাঁড়ায় কাঁটায় কাঁটায় হাতের ঘড়িতে

সময় পৌনে পাঁচটা।হাতের সেল ফোন 'এমার্জেন্সি ওনলি' হয়ে আছে।যদিও ফোন কারো আসার আশা করে না মনা।মনা জানে কলকাতার রাজ পথে চোখ রেখে কেউ তার ফেরবার

অপেক্ষায় দিন গুনে নেই।বাবা মাকে জানানোই আছে চারটেয় ফ্লাইট।সুতরাং

চিরপরিচিত গাড়ি কাকু কে পাঠিয়ে তারা তাদের কর্তব্য পালন করবে, মনা

নিশ্চিত।গেট থেকে বেরিয়েই একটু দূরেই দেখলো দাঁড়িয়ে আছে সুবল জেঠু।ওহ্ ভুল

হল সুবল আংকেল।এটাই তো তাকে শেখানো হয়েছিল ছোট বেলা থেকে।তবু বার বার কেন

 যে ভুল হয়ে যায় এখনো!একটু কি বেশি কুঁজো হয়ে গেছে আংকেল?চুলগুলোও পুরো সাদা হয়ে গেছে।মনা কে দেখে হাত নাড়ে।মনার ঠোঁটটা অনেক দিন বাদে যেন কৃত্রিম হাসি ছাড়াও হেসে উঠলো।আচ্ছা এখন কি মনার ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরা উচিত সুবল জেঠুকে না পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা উচিত?

ধুর্ কিযে ভাবছে খ্যাতনামা আর্টিস্ট মনা চৌধুরি!

"ভাল আছো আংকেল?"-হালকা হেসে জিজ্ঞাসা করে মনা।অবাক দৃষ্টি মেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সুবল আংকেল।-"কি সুন্দর হয়েছো ছোট দিদিমণি, না -না ছোট মেম সাহেব।"

"দিদি মণি নয়, যত সব ওল্ড ব্লাডি ফুল৷ মেমসাহেব বলবে। ওকে?"

"ওকে মেমসাহেব?"

"আর মনাকে ছোট মেমসাহেব বলবে মনে থাকে যেন৷"

চোদ্দ বছরের সুবল ডাইভার এই প্রথম চৌধুরি বাড়িতে নিজেকে ডাইভার বলে বুঝতে পারলো।চোখের কোনে জলটা ছোট্ট মনার কিন্তু চোখ এড়ালো না।

"ছোট মেমসাহেব গাড়িতে উঠুন।"

"ও হ্যাঁ হ্যাঁ "-ছোট্ট বয়সের একটা অতীত হঠাৎই ভেসে উঠেছিল মনার মনে।অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসে মনা।

গাড়িতে উঠে জানালাগুলো বন্ধ করে এসি টা অন করে দেয় মনা।এইটুকু আসতেই সারা

শরীর ঘামে ভিজে জবজব করছে। সেই গরম,সেই দূষণ।এই কারনেই বিরক্ত লাগে কলকাতা

মনার।মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে মনা চোখ বুজে অতীতে ডুব দেয়৷ পাঁচ বছর আগে যেদিন প্রথমইংল্যান্ডে যাবার সিদ্ধার্থ নেয় মনা সেই দিনটাতে।"তুই কি সত্যিই মনা ইংল্যান্ডের অফারটা আক্সেপ্ট করছিস?"

 "হুম"

 "আর আমি,তোর বাবা কার কাছে থাকবো?বিশেষ করে তোর বাবার এই এক সপ্তাহ আগে এত বড় এটাক্ হল?"আমি কি কলকাতার বাড়িটা সাথে করে নিয়ে যাব?না সব নারসিং হোম হসপিটাল গুলোনিয়ে যাচ্ছি?দরকার হলে একটা ভালো ওল্ড এজ হোমের ব্যবস্থা করে দেব ।এত ভালো অফার ছাড়া অসম্ভব"-কথাগুলো শেষ করেই মনা হাতের চাবিটা ঘোরাতে ঘোরাতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল।পেছনে না তাকালেও ও বুঝতে পারলো একটা বিস্মিত জ্বলন্ত

আহত চোখ ওকে বিদ্ধ করছে।কিন্তু মনা আজ নিরুপায়৷ মামমাম মনাকে তো তুমি শুধু একা বাঁচতে শিখিয়েছো।একদম একা- একদম একা।শুধু গো মনা গো।থামতে তো শেখাও নি।খুব ইচ্ছে করে মনার মিসেস চৌধুরীর সামনে চিত্‍কার করে বলতে-"মিসেস চৌধুরি আজ তোমার চোখ কুঁচকে যাচ্ছে ওল্ড এজ হোমের কথা শুনে, কই সেদিন তো তোমার এতটুকু খারাপ লাগেনি, নিরপরাধী ঠাম্মাকে যেদিন বানপ্রস্থে পাঠালে?"তার অপরাধ ছিল ইংলিশ মিডিয়ামের মনা কে ইংলিশ রাইম,স্টোরি না শিখিয়ে বাংলা ছড়া,উপেন্দ্রকিশোর,সুকুমার শোনাতো।

মামমাম একটা রোবট তৈরি করার এত দিন পরে তার থেকে তুমি মানুষের বিহেভ আশা

করছো!আজ তো মাম্ মনা তোমার মনের মতই হয়েছে। স্বার্থপর,কেরিয়ারিস্টিক।আজ

মনা আর জোত্‍স্না গায়ে মাখে না,ঝরা পাতার উপর দিয়ে হাঁটে না।একদিন টিফিনের ভাগ বন্ধুকে দিয়ে তোমার হাতে চড় খেয়ে ছিল মনা।বিজ্ঞানে দুনম্বর কম পেয়ে যে বছর ফার্স্ট হতে পারে নি মনা সারা দিন তার খাওয়া জোটেনি।আজ কিন্তু আর সেই মনা নেই মাম৷  আজ সবার থেকে উপরে, মনা একদম উপরে।আজ আর কেউ ছুঁতে পারবে না মনাকে মামমাম।মনা তো ছুটতে শিখে গেছে ৷এখন তো আর থামতে জানে না ।আজ আর মনার কাছে ভালবাসা,দায়িত্ব,কর্তব্য এইসব ঠুনকো জিনিস আশা করো না মামমাম।"

"নেমে আস ছোট মেমসাহেব।"

সুবল আংকেল এর ডাকে ঘোর ভাঙে মনার।গাড়ি থেকে নেমে আসে মনা।বাড়িটার দিকে

একবার তাকায়। যেদিন ও গিয়েছিল সারা বাড়িটা অন্ধকারে ঢাকা ছিল।কেউ এসে দাঁড়ায় নি ওকে যাবার পথে শুভকামনা জানাতে।আজও কেউ নেই বাড়ির দুয়ারে ওর অপেক্ষায়।

কলিং বেল টেপে। মনার মা এসে দরজা খুলে সরে দাঁড়ায়।মনার পেছনে পেছনে সুবল আংকেল লাগেজ নিয়ে ঢোকে।মনা ধাতব গলায় জিজ্ঞেস করে -"আমার ঘরটা খোলা আছে তো?"নিজের ঘরে গিয়ে এসিটা অন করে ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয় মনা।সারা

ঘরটা ঠিক যাবার দিনের মত এক্ই রয়েছে। সেই এক্ই ভাবে প্রসাধনের শেষ হওয়া খালি

টিউবগুলো ড্রেসিং টেবিলে ছড়ানো। নষ্ট হওয়া ছবি গুলো সারা ঘর জুড়ে ছড়ানো।সারা দেওয়াল জুড়ে পুরস্কার পাওয়া ছবিগুলো এক্ই ভাবে রয়েছে।তবে ধুলো ঝাড়া হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল হতেই ফেসবুকটা অন করে মনা। ইস কবির তিনটে মেসেজ। তিনটে মেসেজেই খোঁজ নিয়েছে মনা পৌঁচেছে কিনা। এই একমাত্র আপন জন মনে হয় যার শাসনের অপেক্ষায় মনা প্রতিটা ক্ষণ থাকে।কবি,মনার কবি।কবে প্রথম আলাপ, দিনটা আজ আর মনে করতে পারে না মনা। বিদেশে গিয়ে যান্ত্রিক ব্যস্ততার মধ্যে শুধু তার একটাই আপন অভ্যাসকে বজায় রাখতে পেরেছিল, ফেসবুকের গল্পের সাইট গুলাতে ঢুঁ মারা।বাংলা লিখতে মনা পারে না।যতদিন ঠাম্মা এবাড়িতে ছিল ততদিনে মনা শুধু বাংলা পড়তে পারার গন্ডিটুকু টপকেছিল।কিন্তু ঐ টুকু ভালবাসাই মনের গোপন কুঠুরিতে যত্ন করে তুলে রেখেছিল।তাই শেলী,কিটস,শেক্সপিয়ারের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ,বিভুতিভুষণ,সুনীল,সমরেশ বসু,তারাশঙ্কর,মাণিকের বইও মনার বুকশেল্ফ দখল করতে থাকে।ফলে ফেসবুকের বাংলা সাহিত্যর গ্রুপ গুলো টানে মনাকে।কবি একটা গ্রুপের নিয়মিত লেখক।কবি নামটা মনার দেওয়া। ফেসবুকে অচেনার খোঁজে আর ডিপি জুড়ে একমুঠো শিউলি।শিউলি মনার বড় প্রিয় ফুল যদিও তার সুবাস কবেই যে হারিয়ে গেছে মনার জীবন থেকে নিজেও জানে না।(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama