Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Drama

4  

Debdutta Banerjee

Drama

সবুজ অভিযান

সবুজ অভিযান

6 mins
2.2K


ঈশানের মনে ভারি দুঃখ। কারণ ওদের স্কুল থেকে প্রতিবার অরণ‍্য সপ্তাহে প্রত্যেককে দুটো করে গাছ দেয় লাগানোর জন‍্য। ওদের যে গাছ লাগানোর জায়গা নেই কোথাও। ঈশান তো ফ্ল্যাটে থাকে, পাঁচটা বড় টাওয়ার নিয়ে ওদের ক‍্যাম্পাস। ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা নীল সুইমিং পুল। তার চারপাশে কয়েকটা পাম-ট্রি রয়েছে। কংক্রিটের ফাঁকে ফাঁকে চৌকো খোপে মাটির মধ‍্যে কয়েকটা পাতাবাহার আর ফুলের গাছ থাকলেও বড় গাছ নেই। মাটিও নেই যে ওরা গাছ লাগাবে। ঈশানের গত দু’বছরের স্কুল থেকে পাওয়া গাছ ব‍্যালকনিতে থেকে থেকেই মরে গিয়েছিল। গতবার বাবা ক‍্যাম্পাসের সেক্রেটারি কল্লোলকাকুকে বলতে গিয়েছিল গেটের ধারে টাইলস তুলে মাটি বার করে যদি গাছ লাগানোর একটা জায়গা করা যেত তবে সব বাচ্চারাই কিছু গাছ লাগাতে পারত। 


কিন্তু কল্লোলকাকু শুনেই আঁতকে উঠেছিল। বলেছিল বড় গাছ লাগালে তার শিকড় চলে যায় বহু গভীরে। আর বড় বড় বিল্ডিংয়ের ভিত নাড়িয়ে দেবে ঐ শিকড়। চারপাশে সব বহুতল। ফাটল ধরবে বাড়িগুলোয়। তাই তো বড় গাছ লাগানো হয় না ওখানে। অরণ্য সপ্তাহে কয়েকটা ছোটো ফুলের গাছ লাগানো হয় প্রতিবার।


ঈশান ভাবে বড়রা কি বোঝে না গাছ আমাদের বন্ধু! এই যে মিস বলে গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়, বৃষ্টিকে ডেকে আনে এসব তো সবাই জানে। তাও সবাই গাছ কেটে ফেলে কেন? ছোটোবেলায় যখন ওরা বাঙুরে ভাড়া থাকত, ঐ বড় রাস্তাটার ওপর কত বড় বড় গাছ ছিল। খালের ধার দিয়ে বাবা যখন ওকে নিয়ে বিগবাজারে যেত ছোট্ট ঈশান অবাক হয়ে বড় বড় গাছগুলোকে দেখত। পুরো রাস্তাটা ছিল ছায়ায় ঢাকা। ওর মনে হত ঐ গভীর অরণ‍্যেই বোধহয় আছে লিটল রেড রাইডিং হুড। অথবা ঐ অরণ‍্যের ভেতর রয়েছে স্নো হোয়াইট। ও যখন ক্লাস টু-তে পড়ে, তখন স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখত একটা একটা করে সব গাছ কাটা হচ্ছে। বাবা বলেছিল গাড়ির সংখ‍্যা এত বেড়ে গেছে তাই রাস্তা চওড়া হবে বলে ওরা গাছ কাটছে। রোদে খুব কষ্ট হ’ত তখন গাড়িতে বসে থাকতে। এখন ঈশান ক্লাস সেভেনে পড়ে, কিন্তু ঐ ভি. আই. পি. রোড চওড়া হলেও আর গাছ লাগায়নি কেউ। বাহারি কিছু ছোট গাছ লাগিয়ে পার্ক বানানো হয়েছে অবশ‍্য। 


ঈশানদের স্কুল থেকে এবার প্রসেশন হবে শহরের রাস্তায়। সবাইকে দু’টো করে চারাগাছ দেবে ওরা। কিছু লোক নিশ্চয়ই লাগাবে সেই গাছ। 


কিন্তু ঈশান ভাবে ক’টা লোক লাগাবে? ওর বন্ধু অর্ক, কুনাল, নীলাভ এরা বাড়িতে থাকে বলে গাছ লাগিয়েছিল। বাকিদের গাছ লাগানোর জায়গা ছিল না। সবার গাছ মরে গিয়েছিল। 


ঈশানের ছোট মামা থাকে কেষ্টপুরে। মামার ছাদ জুড়ে বনসাইয়ের বাগান। বড় বড় গাছকে ইঞ্জেকশন আর ওষুধ দিয়ে মামা ছোটো ছোটো টবে ধরে রেখেছে। ছোট্ট বট গাছের ঝুরি নেমেছে কোথাও, কোনও গাছ ঐ টবেই ফল দিচ্ছে।

 কিন্তু ঐ গাছগুলো দেখলে ঈশানের খুব মন খারাপ করে। ওদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে এভাবে আটকে ফেললে ওদের বুঝি কষ্ট হয় না!! ঈশান জানে গাছদের প্রাণ আছে। ওরা কথা বলতে পারে না বলে মামা ওদের উপর এমন অত‍্যাচার চালাতে পারে! মামাবাড়ি গেলেও ঈশান এখন আর ছাদে ওঠে না। ওর মনে হয় গাছগুলো কাঁদছে। শুধু ও-ই শুনতে পায় গাছগুলোর কান্না।


ঠাম্মার বাড়ি মেদিনীপুর যেতে ঈশান ভালোবাসে। ঠাম্মার বাড়ি গ্ৰামে। চারদিকে কত গাছ। সবুজ, সবুজ আর সবুজ চারপাশ। পুকুরের জলটাও সবুজ। প্রাণ ভরে শ্বাস নেয় ঈশান ওখানে গেলে। কত রকমের ফল হয় ঠাম্মার বাড়িতে। বাঁশঝাড়ের মধ‍্যে দিয়ে যখন হাওয়া যায় শনশন আওয়াজ হয়। সন্ধেবেলায় ঠাম্মার ঘরে বসে ঐ অন্ধকার বাঁশঝাড়ের গান শুনতে শুনতে ও নারকেলকোরা দিয়ে গরম মুড়ি খায় আর ঠাম্মার মুখে গল্প শোনে। আগে ঠাম্মা ওকে রূপকথার গল্প বলত। এখন বলে স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের গল্প। ক্ষুদিরাম বসু থেকে মাতঙ্গিনী হাজরা, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর সবাই জন্মেছিলেন ঐ মেদিনীপুরের মাটিতে। ওঁদের গল্প ঠাম্মার মুখে শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে ঈশানের। 


সেদিন স্কুলে গিয়ে ঈশান দেখল প্রচুর চারাগাছ এসেছে নার্সারি থেকে। দু’দিন পর শনিবার ওদের প্রসেশন বার হ’বে অরণ‍্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে। আরও গাছ আসবে মিস বলেছিলেন। ঈশানের মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। এই কয়েক হাজার গাছের ভেতর কয়েক’শ গাছও যদি বাঁচানো যেত!! স্কুলেও আর গাছ লাগানোর জায়গা নেই। রাস্তার লোকেদের কিছু গাছ দেওয়া হবে মিস বলেছেন। মামাবাড়ির বনসাই গাছগুলোর মত এই চারা গাছগুলোর কান্নাও শুনতে পাচ্ছিল ঈশান। ওরা যে বাঁচতে চাইছিল। একরাশ মন খারাপ নিয়ে ও বাড়ি ফেরে। 


কিন্তু বাড়ি ঢুকেই দেখে ঠাম্মা এসেছে গ্ৰাম থেকে। আনন্দ হলেও ওর মুখ দেখে ঠাম্মা বলে, -''দাদানের মুখ এত কালো কেন? স্কুলে কিছু হয়েছে?''


ঠাম্মাকে জড়িয়ে ধরে ঈশান। খুলে বলে ওর দুঃখের কথা। ওর যে গাছ লাগানোর উপায় নেই। 


হাত পা ধুয়ে খেয়ে নিয়ে ও বারান্দায় এসে বসে ঠাম্মার কাছে গল্পের আশায়।


ঠাম্মা বলে, -''আজ তোমায় একটা সত‍্যি গল্প বলব দাদান। তুমি যে গাছ ভালোবাসো তেমনি গাছ ভালোবাসত অনেকেই। আমাদের গ্ৰামের এক মাস্টারমশাই ছিলেন। ফাঁকা জায়গা দেখলেই গাছ লাগাতেন। লোকে ওঁকে গাছ-পাগল বলত। সরকার থেকে উনি পুরস্কার পেয়েছিলেন সবুজ অভিযানের জন‍্য। তবে শহরে সত‍্যিই জায়গার অভাব। 


কর্নাটকের একটা রুক্ষ প্রান্তিক গ্ৰামে এক চাষি থাকত বৌ নিয়ে। ওদের কোনো সন্তান ছিল না। এই নিয়ে গ্ৰামের সবাই ওদের হেয় করত। ঐ গ্ৰাম থেকে শহরে যাওয়ার পথটা ছিল রুক্ষ, বড় গাছ ছিল না তেমন। গরমের সময় ঐ পথ দিয়ে শহরে যেতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যেত। চাষির বৌ কী করেছিল, বেশ কিছু চারা গাছ নিয়ে ঐ পথের ধারে ধারে লাগিয়ে দিয়েছিল। রোজ বহুদূর থেকে জল বয়ে এনে গাছেদের পরিচর্যা করত ঐ বৌটি। লোকে ওদের পাগল বলতে শুরু করল। তবুও ওরা গাছের পেছনে পড়ে থাকল। বেশ কিছুদিনের চেষ্টায় কিছু গাছ বেঁচে গেল। বড় হয়ে উঠল তরতরিয়ে। ওরা আরও গাছ লাগালো। সব কাজ ছেড়ে ওরা এক সবুজের নেশায় মেতে উঠেছিল। কয়েক বছরের ভেতর পুরো পথটা ওরা গাছে ভরিয়ে দিল। সেই সব গাছ বড় হয়ে ছায়া দিল। পাখিরা এল বাসা বাঁধতে। যে সব লোক আগে ওদের নিয়ে হাসত তারাই এবার ধন‍্য ধন‍্য করে উঠল। ঐ চাষি পরিবার সন্তানস্নেহে গাছগুলোকে বড় করেছিল। পরে ওদের নামেই ঐ সড়কের নাম হয়েছিল।''


ঠাম্মা থামতেই লাফিয়ে ওঠে ঈশান, চোখ বড় বড় করে বলে, -''এটা তো থিমক্কার গল্প। আমি পড়েছি ক্লাস থ্রি তে। এটা কি সত‍্যি হয়েছিল ?''


-''হ‍্যাঁ দাদান, এটা সত‍্যি ঘটনা। গাছ লাগানোর জায়গা তোমায় খুঁজে নিতে হবে। একটা বড় গাছ যদি বাঁচে কত উপকার বলো তো?''


পরদিন স্কুল যাওয়ার পথেই ঈশান খুঁজে নিয়েছিল গাছ লাগানোর জায়গা। অ্যাসেম্বলির পর ও নিজেই প্রিন্সিপালের কাছে যায়, খুলে বলে ওর পরিকল্পনা। থিমক্কার কথাও বলে। প্রিন্সিপাল অবাক হয়ে দেখছিলেন বারো বছরের ছেলেটাকে। ওকে ক্লাসে যেতে বলে কয়েকটা দরকারী ফোন করেন উনি।


পরের দিন অরণ‍্য সপ্তাহের প্রোগ্ৰাম। সবাই সবুজ পোশাক পরে স্কুলে এসেছে। ওদের এবারের স্লোগান, "গো গ্ৰিন’'। 

প্রসেশনের শুরুতে দাঁড়িয়ে প্রিন্সিপাল বললেন, - ''আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে ছোট্ট একটা বদল এসেছে। আমরা শহরের রাস্তার বদলে নিউটাউনের ফাঁকা রাস্তায় যাবো এখন। গাছ বিলি করার বদলে রাস্তার ধারে ধারে নিজেরাই গাছ লাগাবো। আমাদের স্কুলের বাইরে রাস্তার ধারে গাছ লাগিয়ে শুরু হবে আমাদের এই সবুজ অভিযান। আর শুরু হবে ক্লাস সেভেনের ঈশান চক্রবর্তীর হাত দিয়ে। কারণ এই সুন্দর প্রস্তাবটা এনেছে ও। আমি সব সরকারি পারমিশন নিয়েছি। এ বছর কাউকে গাছ দেবো না স্কুল থেকে। সব গাছ নিজেরাই লাগাবো আজ। আর মাঝে মাঝে একেকটা ক্লাসের দায়িত্ব থাকবে এইসব গাছের পরিচর্যা করা। সোসাল ওয়ার্কের ভেতর থাকবে সেটা। গাছ শুধু লাগানো নয়, বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের।''


তুমুল হাততালির ভেতর ঈশানকে নিয়ে প্রসেশন এগিয়ে গেল বাইরের বড় রাস্তায়। নিউটাউনের ধু ধু প্রান্তরে ওদের স্কুল। রাস্তার দু’ধারে নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে স্কুলের সব বাচ্চারা তখন ব‍্যস্ত গাছ লাগাতে। একঝাঁক সবুজ পোশাক পরা নানা বয়সী বাচ্চারা মনের সুখে পৃথিবীকে সাজিয়ে তুলছে সবুজ রঙে। 


পরের দিনের কাগজে প্রথম পাতায় ছিল এই সবুজ অভিযানের ছবি। আর ছিল বড় বড় করে ঈশানের নাম, এমন একটা সুন্দর উদ‍্যোগের জন‍্য। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama