Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Bhaswati Ghosh

Inspirational

3  

Bhaswati Ghosh

Inspirational

স্বর্গের উদ্যান

স্বর্গের উদ্যান

5 mins
10.3K


"ও মাই গড এই রকম আধাপাগলা অনাসৃষ্টি মেয়ে তুমি আমায় দিলে প্রভু

শেষপর্যন্ত?কোনো কিছুতেই কি ওর বিশ্বাস নেই?"-মেরির মায়ের আক্ষেপ।মেরিরা

একজন ধর্মপ্রাণ আর্মেনিয়ান পরিবার।সম্ভ্রান্ত এলাকার মধ্যে একটি

সম্ভ্রান্ত পরিবার।আজ 24শে ডিসেম্বর ।রাত বারোটা বাজলেই শুরু হবে প্রতি

গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা 25শে ডিসেম্বরের।পঁচিশে ডিসেম্বরের উপলক্ষ্যে

প্রত্যেক পরিবারের বাচ্ছারা তাদের মোজা ঝুলিয়ে রেখেছে খাটের বাটানে।একটু

বাদেই সান্তাক্লজ এসেই ভরিয়ে দেবে তাতে উপহার।এ তাদের চিরন্তন

রীতি,সামাজিক সংস্কার।সান্তা হলেন স্বয়ং যিশু।এই নিয়ে প্রচলিত আছে এক

সুন্দর গল্প।কোনো একদিন যিশুই সান্তা সেজে হীমশিতল রাতে আশ্রয় পেয়েছিল

দরিদ্র এক পরিবারে।দরিদ্র সেই পরিবার নিজেদের দারিদ্র্যতা উপেক্ষা করে হাসি

মুখে তুলে দিয়েছিল নিজেদের জন্যে রক্ষিত খাবার।পরম প্রভু চিরদয়াবান

সান্তারূপী জিসাস্ তাই সেই রাতে ভরিয়ে দিয়েছিল উপহারের ডালি,কোনো এক

দরিদ্র পরিবারের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে।প্রভুর সেই দয়া পাবার আকাঙ্খা

সকলেরই।তারই প্রতীকি শিশুদের মোজার মধ্যে উপহার দেওয়ার রীতি।

অথচ অনাসৃষ্টি এই মেয়ে মেরি সব কিছুকেই অস্বীকার করে!কিন্তু তার দুই বোন

কি শান্ত, কি বিশ্বাসী, পরম প্রভু জিসাসের প্রতি।এই মেয়ে বলে কিনা সান্তা ও

নিজেই।প্রতিটা মানুষই নাকি সান্তা।শুনেই মেরির মায়ের গা ছমছম করে।আর মেরি

মিটমিট অবোধ্য হাসিতে ভরিয়ে তোলে তার মুখ।মেরি ভেবে পায়না কেন কেউ এই সহজ

কথাটা বোঝে না!ফাদার তো বলেন,' জিসাসের বাস আমাদের হৃদয়ে।সকলের মধ্যেই রয়েছে ইশ্বরের অস্তিত্ব'।

মেরির দুই বোন রাত বারোটা বাজার কিছু আগেই হাত ভরা উপহার নিয়ে মা বাবার

সাথে চলে গেছে বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনায় গির্জায়।মেরিকে তারা ডাকে

নি।মেরির নাকি প্রার্থনার জন্যে নির্দিষ্ট বাঁধা সময় ভাল লাগে না।যখন ওর

মনের ইচ্ছা ওকে তাড়িয়ে বেড়ায় তখনি ও ছুটে যায় প্রভু জিসাসের কাছে।আজ তাই

গুড'নাইট্ করার আগেই ও বলে রেখেছিল ওকে যেন কেউ না ডাকে আজকের প্রার্থনায়, ও

যোগ দেবে না।মেরির মা বাবা এমন অনাসৃষ্টি কথায় ভয়ে শিউরে উঠে বার বার

ক্রশ আঁকে বুকের মাঝে আর ক্ষমা চায় পরম প্রভু জিসাসের পায়ে।বিড়বিড়

করেন-"এমন ক্ষ্যাপা মেয়ের এই স্পর্ধা কে ক্ষমার চোখে দেখো হে চির

ক্ষমাশীল পরম প্রভু জিসাস।কোন পাপ যেন ওকে স্পর্শ না করে।''

মেরি জানে প্রার্থনা শেষে কমিউনিটি হলে মিলিত হবে সকল অভিজাত পরিবার।কাটা

হবে বিশাল ভাবে নির্মিত কেক।তারপরে শুরু হবে নাইট পার্টি।ভরে উঠবে হলের

প্রতিটা কোণ আলোর রোশনাইয়ে।বেলজিয়াম কাঁচের গ্লাসে ভরে উঠবে সোনালী

ককটেল,রঙীন মকটেল,অজস্র স্ন্যাক্স আর খাবারের প্লেট হাতে হাতে ঘুরবে, যার

কিছুটা খাবার একটু পরেই স্থান হবে ডাস্টবিনে।

মেরি পায়ে পায়ে উঠে যায় জিসাসের মূর্তির সামনে।দুহাতে ক্রশ আঁকে বুকের

মাঝে।বিড়বিড় করে তার ঠোঁট নড়ে প্রার্থনায়।কোর্ট আর ক্যাপটা চাপিয়ে নেয়

পোশাকের উপরে।আর খাটের নিচে থেকে যত্নে রক্ষিত ঝোলাটি ঝুলিয়ে নেয়

কাঁধে।পেছনের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে মেরি।একটা হিমশীতল বাতাস এসে ঝাপটা

মারে মেরির চোখে মুখে।পোশাকের আড়ালেও কাঁপন ধরায় হাড়ের পাঁজরে।পথের

বাঁকটা পেরোতেই লাম্পপোস্টের আলোর নীচে দেখতে পায় মেরি দীর্ঘদেহী সাদা

পোশাক পরিহিত শান্ত করুণাঘন দয়ার প্রতিমূর্তি ফাদারকে।মেরি এসে দাঁড়ালেই

ফাদার বলে ওঠেন, -"এমন একদিনে বহু কষ্ট স্বীকার করে পরমপ্রভু জিসাসের জন্ম

দিয়েছিলেন মাতা মেরি।আজ অনাথের মাতা মেরি চলেছেন তাঁর সন্তানদের উষ্ণতা

দিতে।"

মেরি কিছু বলে না শুধু লজ্জায় তার গোলাপি গালটা আর একটু লাল হয়ে ওঠে।

দুটো অসম বয়েসি বন্ধু নিজেদের মনে কথা বলতে বলতে হারিয়ে যায় পাহাড়ের

বাঁকে।শুধু গির্জার বুক থেকে ভেসে আসছে অদ্ভুত এক মিষ্টি ঘন্টাধ্বনি।বড়ো

গির্জাটা পেরোতেই তাদের পিছনে চলতে থাকে আর এক প্রতিমূর্তি।সৌম্য,উজ্বল,দীর্ঘদেহী,আর যাঁর সারা দেহ ক্ষতচিহৃ দ্বারা বেষ্টিত।

মেরি আর ফাদার গিয়ে দাঁড়ায় এক দুয়ারে।টোকা দেয় ঘরের দরজায়।বেরিয়ে আসে

দুটো বছর দশেকের শিশু একজন ছেলে একজন মেয়ে, আর শীর্ণকায় দুটি নর-নারী অর্থাত্‍, শিশুদুটির হতভাগ্য ক্ষীণজীবী পিতা মাতা।এইভাবে দশবারোটি ঘরে টোকা পড়ে।শীতে প্রায় জড়ো সড়ো,ক্ষুধার্ত,অথচ তাদের পরম প্রিয় প্রভুর প্রতি চরম নিষ্ঠাবান কয়েকটি অবাঞ্ছিত মানুষ আর তাদের ঔরসে জন্ম নেওয়া দশবারোটি শিশু এসে জড়ো হয় ঘোড়া রাখার আস্তাবলে।ঘোড়াগুলোও তাদের মালিকের মতই জীর্ণ,ক্লিষ্ট।এই ঘোড়াগুলোই এই পরিবারগুলোর অন্ন সংস্থানের উপজীব্য।তাই অল্প আহারে সন্তুষ্ট করতে বাধ্য হলেও ওদের প্রতি ভালবাসার

কোন কার্পণ্য থাকে না অসহায় মানুষগুলির।ওদের পায়ের শব্দে চঞ্চল হয়ে ওঠে ঘোড়াগুলি।প্রতিটা পরিবারের শিশু তাদের নির্দিষ্ট ঘোড়াগুলোর গায়ে পরম মমতায় বুলিয়ে দেয় করুণার হাত।বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির ক্ষতগুলোয় পড়ে শান্তির প্রলেপ।এতক্ষণ গির্জার মধ্যে হাজার হাজার স্বার্থপর প্রার্থনা বড় বেশি রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে প্রতিটা ক্ষত থেকে আবার।ঘোড়াগুলো আদর খেয়ে স্থির হয়।মেরি তার ঝোলা থেকে বার করে তার পুরানো গরম পোশাকগুলো।নতুন কেনার সামর্থ্য তার কোথায়?সে যে এখনো শিশু।তবু ফাদার আর সে মিলে জোগাড় করেছে চেয়েচিন্তে এই গরম পোশাকগুলো ।আর কয়েকটা তার নিজের মায়ের চোখ বাঁচিয়ে লুকিয়ে রাখা।ফাদার হলেন সন্ন্যাসী।আর্থিক জোর তার নেই তবু সামান্য যা

পাওনা গির্জার থেকে তার বিনিময়ে কিনে এনেছেন উষ্ণ পানীয়।মেরি তার জমানো

টাকায় কিনেছে কিছু কেক।মেরি তার মায়ের থেকে গির্জায় দেবার জন্যে ক্যান্ডেল'স্টিক কিনবে বলে টাকাগুলো সংগ্রহ করে।সেগুলিই যত্নে সঞ্চয় করে রাখে তার গোপন বাক্সে।

এই অসহায় মানুষগুলো এতদিন শুনে এসেছেন সান্তার কথা।আশাভরে ঝুলিয়ে রেখেছে

বাচ্ছারা ছেঁড়া মোজা।তবু উপহারের ডালিতে ভরাতে পারেনি ছেঁড়া মোজা তাদের অসহায় পিতা মাতা।অথছ নিরবিচ্ছিন্ন অপেক্ষায় থেকেছে তারা নিশ্চই একদিন আসবেন তিনি।তাদের সাথে তাদের এই জীর্ণ কুটিরে পরম প্রভু জিসাসের সামনে প্রার্থনায় চোখের জলে ভিজিয়েছে প্রভুর পবিত্র পায়ের পাতা তাদের হতভাগ্য পিতা মাতা।এতদিনের অপেক্ষা তাদের বুঝি আজ অবসান হল।

সকলকে সান্তা অলক্ষ্যে দিয়ে যায় তার উপহার কিন্তু, আজ যে সান্তা তাদের

চোখের সামনে মেরি আর ফাদারের বেশে।হ্যাঁ এরাই তো তাদের সান্তা।ফাদারের সাথে প্রার্থনা শুরু করে অসহায় মানুষগুলো।এ প্রার্থনায় হাজার হাজার চাওয়া নেই শুধু অসহায় মানুষগুলোর তাদের পরম প্রভুর পায়ে একটু খাওয়া পরার সংস্থানের প্রার্থনা।বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দীর্ঘদেহী উজ্জ্বল মানুষটির বুকে ঝলমলে আলোর মাঝে হাজার চাওয়া পাওয়ার প্রার্থনা ঘটিয়েছে হাজার

রক্তক্ষরণ।কিন্তু এই আস্তাবলের ক্ষীণ আলোর প্রার্থনা ফিরিয়ে দিচ্ছে তাঁকে মাতা মেরির আদর,ভালবাসা আর শান্তির প্রলেপ।ভক্তের ভালবাসাই তো প্রভুর ক্ষতের একমাত্র প্রলেপ।

প্রার্থনা শেষে মেরি সকলের হাতে তুলে দেয় কেক।উষ্ণ পানীয় ঢেলে দেন ফাদার প্রত্যেকের জন্যে নির্দিষ্ট গ্লাসে।এতটুকু খাবারের বিনিময়ে উজ্বল হয়ে ওঠা মুখগুলো সারা ঘরে ছড়িয়ে দেয় ক্যান্ডেল'স্টিকের দীপ্তি।প্রত্যেক পরিবার নিজেরা তাদের স্বল্পভাগ থেকেই তাদের নিজেদের প্রিয় ঘোড়াগুলির মুখে আগে তুলে দেয় কেক। এরই মাঝে হঠাত্‍ মেরির চোখে পড়ে আস্তাবলের বাইরে পড়ে থাকা অসহায় চরম শীতে ছিন্নবস্ত্র পরিহিত মৃতপ্রায় বৃদ্ধটিকে।সকলে যত্ন করে

তুলে আনে তাঁকে ঘরের মধ্যে।মেরি তার ঝোলাতে আশ্চর্য্যজনক ভাবে পেয়ে যায়

অবশিষ্ট আর একটি গরম পোশাক।সকলে তাদের নিজস্ব ভাগ থেকে কিছু কিছু করে তার

মুখে খাবার তুলে দেয়।উষ্ণ পানীয় মায়ের মমতায় মেরি ধীরে ধীরে ঢেলে দেয়

কম্পমান ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে।দূরের গির্জা থেকে ভেসে আসে মিষ্টি ঘন্টাধ্বনি।অদ্ভুত এক পাহাড়ি ফুলের মিষ্টি সুবাসে আমোদিত হয়ে ওঠে আস্তাবলের বাতাস।ফাদারের চোখ ভরে ওঠে এক আনন্দাশ্রুতে।বহুকাল থেকে দেখে আসা বেথেলহেমের আস্তাবলে মাতা মেরির কোলে শুয়ে থাকা পরম প্রভু জিসাস এর জন্মের সেই মুহূর্ত আজ আবার ফিরে এল পাহাড়ের কোলে অখ্যাত এই ছোট্ট জনপদে।ফাদারের মাধুর্যপূূর্ণ গমগমে গলার প্রার্থনা সঙ্গীতে ভরে ওঠে ঘর।বহুকাল পরে স্বর্গের উদ্যান পৃথিবীর বুকে রচিত হয়।যে উদ্যানে পরম প্রভু জিসাস তাঁর মাতা মেরির কোলে গরম ওমে পান স্বর্গের উষ্ণতা।

#positiveindia


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational