Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Banabithi Patra

Inspirational

4  

Banabithi Patra

Inspirational

গর্ব

গর্ব

3 mins
1.7K


#বাঙ্গালী_একুশে_আজকের_পৃথিবী

#গর্ব (গল্প)

#বনবীথি_পাত্র

.

নয়নকে একঝলক দেখেই চোখ ফিরিয়ে নেয় ঋতব্রত। ওর ভেতর ভেতর কি যে টেনশন হচ্ছে, সে শুধু ঋতব্রত নিজেই টের পাচ্ছে। সাহেবের কি যে হুকুম, পার্টিতে সবাইকে নিজের স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসতে হবে। স্ত্রী যদি স্ত্রীর মতো হয় তো সাথে নিয়ে যাওয়া চলে, নয়নকে কিভাবে পরিচয় করাবে সবার সাথে। নামটারও কি ছিরি, নয়নতারা। ফুলের নামেই নাম যদি রাখবে, ভালো ফুলের কি অভাব পড়েছিল? পারমিতার ওপর রাগ করে তখন কেন যে মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়েটা করতে গিয়েছিল, প্রতি মুহূর্তে এখন পস্তাচ্ছে ঋতব্রত। ঋতব্রতর স্ট্যাটাসে সম্পূর্ণ বেমানান নয়ন। গ্রামের বাড়ি থেকে বিয়ে হয়েছিল বলে অফিসের কেউই যেতে পারেনি বিয়েতে, তাতে অবশ্য খুশিই হয়েছিল ঋতব্রত। বিয়ের পর তিনমাস বেশ গ্রামের বাড়িতেই রেখেছিল, মায়ের চাপে বাধ্য হয়ে গত মাসে সাথে করে আনতে হয়েছে নয়নকে। অফিসের সবাই একটা পার্টির জন্য ধরেছে, কোনরকমে এড়িয়ে যাচ্ছে ঋতব্রত।

প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথাবার্তা হয়না দুজনের মধ্যে। কি কথাই বা বলবে ঐ মেয়েটার সাথে। সারাদিন তো ঘর গোছাতে আর রান্না করতেই ব্যস্ত। নিজেকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করার কোন চেষ্টাও নেই। আজকে দেখতে বেশ লাগছে ওকে। কিন্তু এইসব পার্টিতে এমন সাজে তো কেউ যায়না। তবে সেকথা ওকে বলে কি হবে! শাড়ি ছাড়া অন্য কোন পোষাক ও কি পরতে জানে। ঘোষদা বলছিল, সাহেবের কোন্ এক বিশেষ বন্ধুও নাকি আসবেন বাইরে থেকে। সবার সামনে কি অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে সেটা ভেবেই ঋতব্রতর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।

সাহেব তখনও আসেননি তাঁর বন্ধুকে নিয়ে, বাকি প্রায় সবাই এসে পড়েছে। সবার ওয়েস্টার্ন লুকের পাশে কি ভীষণ সাদামাটা লাগছে নয়নকে, একেবারে বেমানান।

হাসি-ইয়ার্কি-হৈচৈ মুহূর্তে থেমে যায় সাহেব আসার সাথে সাথে। ও বাবা, সাহেবের বন্ধু তো শুনেছিলাম বাইরে থেকে আসবেন। কিন্তু এ তো দেখছি, ধুতি-পাঞ্জাবি পরা খাঁটি বাঙালি একেবারে। আজ যে কিসের পার্টি তাও তো কিছু বলেননি সাহেব, কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।

সাহেব বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। বহুবছর বিদেশে ছিলেন, সদ্য দেশে ফিরেছেন।

হাতজোড় করে ভাঙাভাঙা বাংলাতে বলেন, শুভসন্ধ্যা। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত।

সবাই বেশ অস্বস্তিতে। সাহেব আগে বলতে পারতেন, আজ ওনার বন্ধুর বার্থডে। তাহলে কিছু গিফ্ট হাতে করে আসা যেত।

আমাদের মধ্যে মল্লিকদা বেশ বলিয়েকইয়ে মানুষ। উনিই সাহেবের বন্ধুর দিকে হ্যাণ্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন; সরি স্যার, উই ডোণ্ট নো টুডে ইয়োরস্ বার্থডে। হ্যাপি বার্থডে স্যার।

সাহেবের বন্ধু হ্যাণ্ডশেকের বদলে হাতজোড় করে নমস্কার করেন মল্লিকদাকে। তারপর হো হো করে হেসে ওঠেন। আবার আধভাঙা বাংলাতেই বলে, কে বললো আজ আমার জন্মদিন। আজ তো আমাদের মাতৃভাষার জন্মদিন। আমার তো এই শহরে চেনাজানা তেমন কেউ নেই, তাই সন্ধ্যেটা কাটাতে চেয়েছিলাম আপনাদের সবার সাথে। কিন্তু আপনারা তো দেখছি সবাই আপনাদের সাহেবের মতো নিজেদের ভাষা-পোশাক সব ভুলে বিদেশী সভ্যতাতে আঁকড়ে ধরেছেন। নিজের দেশে থেকে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি ভুলে গেলেন! আচ্ছা বলুন তো আজ কি দিন?

সবাই সবার মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে, আজকের দিনটা বিশেষ কি কেউ মনে করতে পারছে না। সাহেব নিজেও বেশ অপ্রস্তুত। আজ তো ভাষাদিবস, পিছন থেকে মৃদুস্বরে উত্তর দেয় নয়ন।

যাক্ আপনাদের মধ্যে একজন হলেও দিনটা মনে রেখেছেন দেখছি। নয়নের সাথে পরিচয় করছেন সাহেবের বন্ধু।

নয়নতারা নামটা শুনে ওনার ভীষণ পছন্দ হয়। নয়নতারা মানে চোখের তারা। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, সবার কাছে আপনি নয়নের তারা হয়ে উঠুন।

এবার আপনাকে কিন্তু আজকের দিনটা সম্বন্ধে দু-চার কথা বলতেই হবে।

ঋতব্রত ঘামতে শুরু করেছে ততক্ষণে। আজ ভাষাদিবস বলতে পারলেও, দিনটার গুরুত্ব কি বলতে পারবে নয়ন?

নয়ন ততক্ষণে বলতে শুরু করেছে। আমি নিজের লেখা কয়েকটা লাইনেই বলি তাহলে?

আপনি লেখেন? বিস্মিত সাহেবের বন্ধু। তার থেকেও বেশি অবাক ঋতব্রত।

অবশ্যই বলুন, আপনি নিজের মতো করেই বলুন।

#আজ_একুশে

বাংলা আমার মায়ের ভাষা

আপন নাড়ীর টান ,

একুশ মানে ছেলের লড়াই

রাখতে মায়ের মান ।

একুশ মানে সংগ্রাম আর

রক্তে রাঙা পথ ,

একুশ মানে বাংলা ভাষার

আপন বিজয় রথ ।

একুশ মানে বাংলা প্রাণে

মায়ের জন্মদিন ,

বাংলা মোদের মাতৃভাষা

যায় না শোধা ঋণ ।

বাংলা আমার রক্তে মিশে

আপন হৃদয় পরে ,

সারাজীবন মাগো তোমায়

রাখবো বুকে ধরে ।

নয়নের বলা শেষ হতেই সারা ঘর জুড়ে হাততালি।

আচ্ছা নয়নতারা দেবী আপনি নিজে তো বাঙালি পোশাক পরেছেন, আপনার কর্তাটিকেও তো বাঙালি সাজে সাজাতে পারতেন; হাসতে হাসতে বললেন সাহেবের বন্ধু।

পরের বছর দুজনেই বাঙালি সাজে আসব, হালকা হেসে উত্তর দেয় নয়ন।

ঋতব্রত নিজের হাতটা কখন যে নয়নের কাঁধে রেখেছে, নিজেই বুঝতে পারেনি। গ্রামের বোকা বোকা সাধারণ বৌটাকে আজ ভীষণ ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে ঋতব্রতর.....



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational