Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Aayan Das

Drama

3  

Aayan Das

Drama

প্রথম বৃষ্টি

প্রথম বৃষ্টি

4 mins
9.9K


ছেলেটিকে দেখতে অনেকটা অল্প বয়সের আমীর খানের মত।বয়স তেইশ চব্বিশ,ধবধবে ফর্সা রঙ,গালে হাল্কা দাড়ি,চোখে স্টিল ফ্রেমের চশমা।সে একটা নীল রঙের জিন্স আর সাদা ফুলশার্ট পরে থাকে বেশির ভাগ দিন,পিঠে একটা রুকস্যাক নিয়ে একলাফে ট্রেনে উঠে জানলার ধারের সিটটা দখল করে।কল্যানী শিল্পাঞ্চল স্টেশনটা তখন ভরতি হয়ে থাকে 'স্প্রিংডেল' স্কুলের ছুটি হয়ে যাওয়া বাচ্চাদের আর তাদের মায়েদের ভিড়ে।

ছেলেটি যে কম্পার্টমেন্ট এ লাফিয়ে উঠে জানলার সিটটা দখল করে,তিনচার জন মা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে ঠিক সেই কম্পার্টমেন্টেই ওঠে।ছেলেটিকে এবার কিছুক্ষন বাচ্চাগুলোর অত্যাচার সহ্য করতে হয়।বাচ্চাগুলোর ঐ জানলার সিটটার উপরই যত লোভ।ছেলেটি অতিষ্ঠ হয়ে উঠে দাঁড়ায়।তিনটি বাচ্চা এবার মারামারি করে বসে পড়ে।মায়েরা বকাবকি করলে ছেলেটিই বলে,''-আরে ঠিক আছে, ঠিক আছে,বাচ্চা তো।দুটি স্টেশন পর ট্রেন যখন হালিশহর এ থামে,মায়েরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে সদলবলে নেমে যায়।বাচ্চারা ট্রেন থেকে নেমে ছেলেটির দিকে হাত নাড়ে।

অদিতি র সকাল শুরু হয় সাড়ে পাঁচটায়।উঠেই পাপানের জন্য টিফিন তৈরি করতে করতেই পাপান কে ঘুম থেকে টেনে তোলে।রাজা এইসময় বেহুঁশ হয়ে ঘুমায়।তার ঘুম না ভাঙিয়ে ছেলেকে ঝড়ের বেগে রেডি করে এবং নিজে রেডি হয়ে ,বাড়ির সবার জন্য চা বানিয়ে -ঠিক সাড়ে ছটায় স্টেশনের দিকে রওনা দেয়।পাপানকে স্কুলে ঢুকিয়ে সে মায়েদের জটলায় ভিড়ে যায়।সেখানে বর, শ্বশুরবাড়ি এবং স্কুলের টিচারদের একপ্রস্থ নিন্দেমন্দ করতে করতে মোড়ের দোকান থেকে ব্রেকফাস্ট টা সেরে নেয়।তারপর দশটায় স্কুল ছুটির পর আবার পাপানকে নিয়ে টানতে টানতে ট্রেনে ওঠা,ট্রেনেই টিফিন খাওয়ানো এবং খাতাগুলো একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া।বাড়িতে ফিরে ছেলেকে স্নান করানো,খাওয়ানো,শ্বশুর কে খেতে দেওয়া,দুপুরে একবার ফেসবুকে চোখ বোলানো,হাল্কা একচিলতে ঘুম,সন্ধ্যেবেলায় ছেলেকে পড়াতে বসানো,তারই মধ্যে রাতের রান্না, রাজা ফিরে আসে আটটায়,তাকে চা মুড়ি,রাত নটায় শ্বশুরকে খেতে দেওয়া,দশটা বাজলেই রাজা খেতে চায়,তখন একসঙ্গে সবাইমিলে খেয়ে নেয়,তারপর রাজা ল্যাপটপ নিয়ে বসে,অদিতি ছেলেকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।যেদিন রাজার ইচ্ছে হয় সেদিন রাজা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে,তারপর ..পাঁচ মিনিটের ভালবাসা!তারপর আবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠা।নিস্তরঙ্গ কেটে যায় একএকটা দিন।অদিতির মাঝে মাঝে মনে হয় হিষ্ট্রি তে এম.এ করাটা তার রান্নাঘরেই কাজে লেগে গেল।

তখন ভর দুপুর।সবে একটু তন্দ্রা মত এসেছে।এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠল।একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।অদিতি ঘুম জড়ানো গলায় বলল-

''হ্যালো''

''হ্যালো,আমি বলছি,আমি.. শুভজিৎ''

''কে শুভজিৎ?''

''আরে আমি,ট্রেন এ দেখা হয়,..সকালে,..''

''ওঃ আপনি!কি ব্যাপার বলুন তো?আমার ফোন নাম্বার পেলেন কিভাবে?''

''আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল।যদি কাল ওকে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে একবার স্টেশনে আসেন..''

''কি কথা?''

''মানে,সব কথা তো আর ফোনে বলা যায়না..''

এবার অদিতি র কান মাথা কেমন ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে।সে বেশ ধমকের সুরে বলে-

''কী এমন কথা বলবেন যা ফোনে বলা যাবেনা?যা বলার ফোনেই বলুন।''

''না,..মানে''

''মানে-আপনার সাহসটা বড্ড বেশি।এইভাবে আর ফোন করবেননা৷''

''হ্যালো,শুনুন,কাটবেননা..''

অদিতি ফোনটা কেটে দেয়।

রাজা বাড়ি ফেরার পর ল্যাপটপে মগ্ন হয়ে যায়।পরেরদিন ই তার প্রেজেন্টেশন।সে বুঁদ হয়ে থাকে তার কাজে।

''কাল কিন্তু সাতটায় বেরিয়ে যাব।''

''এবার বন্ধ করোনা!সারাদিন শুধু কাজ, কাজ!''

''কাল প্রেজেন্টেশনে ভুলভাল করলে সাঙ্গেনারিয়া আমাকে কাঁচা খেয়ে ফেলবে।তুমি শুয়ে পড়ো।আমার আরো আধঘন্টা লাগবে।''

''আজ একটা ব্যাপার হয়েছে..''

''হুম্।'' রাজার চোখ ল্যাপটপের পর্দায় আর আঙুলগুলো কিবোর্ডে।

''আজ একটা ফোন এসেছিল''

''হুম্..''

''একটা ছেলে,আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়-''

সব শুনে রাজা হাসতে হাসতে বলল,''-বেচারা শেষকালে তোমার প্রেমেই পড়ল?যদি জানতো যে তুমি কি মাল...''

সে রাতে কিছুতেই ঘুম এলোনা অদিতি র।সে ভেবেছিল রাজা ভয়ঙ্কর রেগে যাবে,হয়তো খানিকটা ভয়ও পেয়ে যাবে,হয়তো তক্ষুনি ছেলেটাকে ফোন করে যাচ্ছেতাই গালাগাল দেবে,তার বদলে কী ভয়ঙ্কর নির্লিপ্তি!সারাটা দিন সংসারের ঘানি টানতে টানতে সে কি রাজার কাছে এতটাই গুরুত্বহীন হয়ে গেল!

গরমের ছুটির যদিও ঢের দেরি কিন্তু টেম্পারেচার উঠে যাচ্ছে বেয়াল্লিশ-তেতাল্লিশ।সরকার থেকে আচমকা অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হল।অদিতির যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো।

সমস্ত পৃথিবীটা যেন পিঙ্গল হয়ে পড়েছে।বাইরে রোদের দিকে তাকালে ঝলসে যাচ্ছে চোখ।এক তীব্র দহনে সমস্ত শরীর যেন পুড়ে যেতে থাকে।সকাল এগারোটা বাজতেই সমস্ত জানলা বন্ধ করে দিতে হয়।এরকমই একদিন আবার মোবাইল টা বেজে উঠলো।

''হ্যালো..আমি শুভজিৎ''

''আবার!''

''প্লিজ ফোনটা কাটবেন না।প্লিজ,আমি খারাপ ছেলে নই,আমি কিছুতেই আপনাকে ভুলতে পারছি না৷আমি,মানে অনেকদিন ধরেই তো আপনাকে দেখছি,আপনার মধ্যে এমন কিছু একটা আছে যেটা অন্য কারো মধ্যে নেই৷আপনি একদম অন্যরকম৷আপনার তাকানো,কথা বলার স্টাইল,আপনার হাসি,কি বলব!আপনার বাচ্চাকে বকা দেওয়ার ভঙ্গীটাও আমার ভাল লাগে৷আমি বোধহয়,আমি বোধহয় আপনাকে ঠিক বোঝাতে পারছিনা..৷''

অদিতির মনে হয় তার পায়ের তলার মাটিটা প্রবল ভাবে কাঁপছে,সমস্ত পৃথিবীটা দুলছে,যেন দশ রিখটার স্কেলের কোনো ভূমিকম্প।

'প্লিইজ..একবার শুধু একটু দেখা করব,দশ মিনিট,একটু কথা বলব দুজনে,আমি খারাপ নই৷প্লিইজ..প্লিইজ''

বাথরুমের আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো অদিতি।বহুদিন পর সে যেন নিজেকে ভাল করে দেখলো।গায়ের রঙটা আগের থেকে কালো হয়ে গেছে।মুখের সেই ঔজ্জ্বল্যটা হারিয়ে গেছে।মাথার চুলে বেশ কয়েকটা রুপোলি ঝিলিক। চোখের তলায় কালি পড়ে গেছে,গালে ব্রণ হয়েছে।সে আগের থেকে পৃথুলা হয়েছে,শরীরে থাবা বসিয়েছে বয়স।

'আপনার মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা আর কারো মধ্যে নেই'...

একটা আলগা শিহরণ অদিতির কপাল থেকে শুরু হয়ে স্তনবৃন্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল।

সে স্নান সেরে যখন চুল আঁচড়াচ্ছে তখন ওদের কাজের মেয়েটা চিৎকার করে উঠে বলল,''-বৌদিইই ছাদে এসো,দেখে যাও কি অবস্থা!''

অদিতি দৌড়ে ছাদে উঠে এলো।দেখলো সূর্যের অত্যাচারকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে উদ্দাম বাতাস বইছে গাছেদের মাথায় মাথায়।সমস্ত শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছে এক অদ্ভুত শীতলতায়।সারা আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে জলভরা কাজল কালো মেঘ।একটু পরেই তৃষ্ণার্ত ঊষর পৃথিবীর বুকে প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ল তুমুল বৃষ্টি।শুরু হল ওদের ভালবাসাবাসি।

''প্লিইইজ একবার..শুধু একবার দেখা করব.....প্লিইইজ..প্লিইইজ..প্লিইইজ''

অদিতি স্নান করে ফেলেছে৷হঠাৎ ওর মনে হল-ধুর!সবকিছুই কি অত নিয়ম মেনে হয় নাকি!বছরের প্রথম বৃষ্টি-সে বড় মধুর,সে বড় অন্যরকম।তাকে সম্মান জানাতে হয়,তাকে উদযাপন করতে হয়।

এক অপূর্ব উচ্ছাসে অদিতি পাগলের মত সেই বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল.....ভিজতে লাগল..ভিজতে লাগল॥

#positiveindia


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama