Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sutanu Sinha

Drama

1.0  

Sutanu Sinha

Drama

হঠাৎ দেখা

হঠাৎ দেখা

16 mins
18.1K


অফিসে এসে নিজের মোবাইল এর দিকে দেখে মন টা খারাপ হয়েগেলো সুজয়এর । সেই লেট , যদিও আজ কিছু করার ছিল না , কাল সারারাত যা গেলো হঠাৎ করে মা এর এমন শরীর খারাপ করলো ছুটতে হলো পিয়ালেস হাসপাতাল । তখন রাত প্রায় ২টো । একটু ভয়ও পেয়ে গেছিলাম , তবে খুব তাড়াতাড়ি দ্রুত ট্রিটমেন্ট হওয়ায় বিশেষ কিছু অসুবিধা হয়নি ।যদিও অফিস এ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম দেরি হচ্চে তাও দেরি করে অফিস আসা টা সুজয়র একদম পছন্দ নয় ।সবে সবে অফিস এ একটু নাম ডাক হছে তার । সবাই মোটামুটি এক ডাকে চেনে সুজয় কর্মকার কে , সে অফিস এর পিওন থেকে বড়সাহেব অব্দি । এই পরিচিতি পেতে কম পরিশ্রম করতে হয়নি সুজয়কে । যদিও সবাই বলে সরকারি অফিস এতো কাজ করার দরকার পড়েনা , কিন্তু সুজয়এর কখনো কাজে ফাঁকি দিয়ে কিছু পাবার ইচ্ছা ছিল না । চাকরি এর লেটার টা হাতে পেয়েছিল ঠিক পুজোর আগে , বাড়িরপুজোর প্রতি বছর এর আনন্দ এর সাথে এটা ও যোগ হয়ে গেছিলো । সুযোগ ছিল বলেই বাড়ির সবাই কে বিজয়া এর সাথে চাকরি পাবার মিষ্টি ও মা বাবা খায়িয়ে দিয়েছিলো । বাড়ির সবাই সেদিন শুধু একটাই কথা বারবার বলছিল সরকারি চাকরি মানে আর চিন্তা করার দরকার নেই কাজ না করেই রোজগার হয়ে যাবে । হয়তো তারা ঠিক কথাই বলছিলো , কারণ আমার অফিস এর বাকি কর্মচারি রা এরকম এ প্রায় ।যাইহোক সেদিন এই কথা টা বার বার শুনে আমি মনে মনে ঠিক এ করে নিয়েছিলাম আমি একটু অন্য রকম কিছু করবো । চেষ্টা করেছি জানি অকারণে অনেকে ই আমাকে নিয়ে মজা করে , বা নিজেদের অতিরিক্ত কাজ আমার উপর দিয়ে দেয় ,কিন্তু কেন জানিনা এগুলো করতেই আমার বেশি ভালো লাগতো । এখনো অব্দি কাউকে না বলতে হয়নি এটাই আমার সৌভাগ্য ।

যাই হোক আজ অফিস আসতেই পিওন এসে বলে গেলো আমাকে বড় সাহেব তার কেবিন এ ডেকেছে । তাই যা হোক করে হাত মুখ ধুয়ে বড় সাহেব এর কেবিন এ গেলাম । কেবিন এ গিয়ে দেখলাম সাহেব ফোন এ ব্যাস্ত, আমাকে বসতে বলে ফোন টা তাড়াতাড়ি শেষ করার দিকে মন দিলেন । আমি এর মধ্যে ভাবতে লাগলাম সাহেব কি কারণ এ ডাকতে পারেন । কাল আমাকে কিছু ফাইল মেলাতে দিয়েছিলো ,আমি তো সেটা করে দিয়েছিলাম ,কিছু কি ভুল হলো তাতে । যাই হোক কিছুক্ষণ পরে সাহেব ফোন শেষ করে বললেন, "কার সাথে কথা বলছিলাম যেন সুজয় ?" । আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম । উনি হেসে উঠলেন , বললেন "আমাদের CM, মুখ্যমন্ত্রী "। এবার সত্যি আমার অবাক হবার পালা ছিল, সাহেব এর সাথে মুখমন্ত্রী কথা হয় জানতাম , কিন্তু আমার সামনে এ ভাবে কথা বলবেন ভাবতেই পারিনি । সাহেব নিজেই নীরবতা ভাঙলেন । "মুখ্যমন্ত্রী এক জন efficient কর্মচারী খুঁজছেন সুজয় স্বাস্থ্য দপ্তর এর জন্য , আমি তোমার নাম বলে দিয়েছি ।কি ঠিক করেছি তো ? চন্দ্রিমা দি তোমাকে কল করতে পারে সরাসরি " । ধন্যবাদ জানিয়ে সাহেব ঘর থাকে সবে বেরিয়েছি, আর নবান্ন এর বিশাল বিল্ডিং নিচে টা দেখার চেষ্টা করছি হঠাৎ মনে হলো নিচে এক জন খুব চেনা জানা কেউ দাঁড়িয়ে আছে । আর একটু কাছে আস্তে বুঝতে পারলাম এটা আমাদের কলেজ এর সুদর্শন না ? দ্রুত মোবাইল বার করে নম্বর টা সার্চ করে ফোন লাগালাম । কিন্ত যা হয় এত দিনের এর পুরনো নম্বর যথারিতি যথাস্থানে লাগলো না । সুদর্শন ও ভিতরে ঢুকে গেলো । আর এই এতো বড় নবান্নে কোথায় যে ও যাবে সেটা বোঝা অসম্ভব । তাই আশা ছেড়ে দিলাম আবার দেখা হবার ।

নীচে দ্বিতীয় তলায় নেমে নিজের সিট এ এসে বসলাম । সকাল সকাল খবর টা ভালো পাওয়া গেলো । স্বাস্থ দপ্তরে এ যাওয়া মানে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সরাসরি মিটিং করার সুযোগ পেতে পারি । দুঃখের মধ্যে একটাই এবার আমাকে সল্টলেকে যেতে হবে । শুনেছি সল্টলেকে যাতায়াত সাউথ কলকাতা থেকে নাকি বেশ ঝামেলার । যাই হোক এতো শত ভেবে এখন কোনো লাভ নেই । আগে তো অফিসিয়াল লেটার আসুক । সরকারি কোনো কাজ এ খুব তাড়াতাড়ি হয়না ।যদিনা মুখোমন্তীর সত্যিই খুব তাড়া থাকে ।

বসে বসে এসব হাবি জাবি ভাবছি হঠাৎ নিতাই এসে বললো একটি লোক আমার সাথে দেখা করতে চাই । নিতাই আমার পার্সোনাল সেক্রেটারী । মাঝে মাঝে ভাবলে ভীষণ অবাক লাগে আমার ও এক জন PA আছে । প্রথম যে দিন নিতাই কে সাহেব আমার PA করলো , আমি বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম । কারণ নিজেকে তখন ও বড় কেউকেটা ভাবতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছিলো । কিন্ত পরে বুঝলাম ভীষণ কাজে আসে । অনেক ফালতু কাজ নিতাই এ নিজে ম্যানেজ করে নেই । আমার কাছে আসে না । তাই ও যখন চিরকুট নিয়েআমার কাছে এসেছে , তার মানে কাটাতে পারিনি । আমি বললাম "কে এলো এখন? এতো গুলো ফাইল পরে আছে নিতাই , সব ক্লিয়ারকরতে হবে আজ কের মধ্যে , বড়সাহেব র হুকুম । " , নিতাই বললো "তাহলে বলুন স্যার কি করবো ?", আমি বললাম "কতক্ষন সময় চাইছে ? ", নিতাই বললো, "বেশিক্ষন লাগবে না তো বলছে ।", নিতাই এর কাছে নাম এর চিরকুট টা নিয়ে চোখ বোলাতে বোলাতে বললাম "কোনোভাবে তুমি কি ম্যানেজ করে নিতে পারবে ?"। জানি ম্যানেজ করতে পারলে ও আমার কাছে আনতো না , তাও বললাম , যদি কোনোভাবে এই মুহূর্তে মিট করাটা কাটানো যাই ।নিতাই শান্ত গলায় জানালো , "সে তো বললো আপনাকে পার্সোনালী চেনে " | একটু অদ্ভভুত লাগলো আমার । এতো সকাল এ কে আবার এলো যে আমাকে চেনে । চিরকুট টা দেখার পর আমার একটু অবাক হবার এ পালা ছিল , বড়বড় করে লেখা সুদর্শন বড়াল ।হঠাৎ সুদর্শন কে নিয়ে সব কিছু স্মৃতি মনে এসে গেলো । সেই কলেজ লাইফ যা আজ থেকে ১০ বছর আগে ফেলে এসেছি । সুদর্শন আমাদের কলেজ এর এক জন ভীষণ পপুলার ছেলে ছিল । ও এক দিন কলেজ না আসলে ও আমাদের সব আলোচনা আর মজা ওকে নিয়েএ চলত । যদিও নাম সুদর্শন হলে দেখতে খুব একটা ভালো ছিল না । হাঁটুনি কথাবার্তা সব কিছু তেই ছেলেদের থাকে মেয়েদের আধিক্য বেশি ছিল । হয়তো সেই জন্য ওর সাথে ছেলেরা আর মেয়েরা দুই দল এ খুব স্বাভাবিক ভাবে মেলামেশা করতে পারতো । চেহারা আর আচরণ এ মেয়েলি ভাব থাকলে ও স্বভাব কিছুটা ডাকাবুকো এ ছিল সুদর্শন । আর সেটাই ওর পপুলারিটি প্রধান কারণ ছিল । প্রতিদিন ক্যান্টিন এ যে কোনো ব্যাপার এ আলোচনা হলে আমরা প্রথম এই ভাবে নিতাম সুদর্শন এই পরিস্তিতিতে কি কাণ্ড করতো । ওর অদ্ভুত আচরণ এর অলীক কল্পনা করেই আমরা ভীষণ খুশি হতাম । সে গার্লফ্রেইন্ড এর হাতে থাপ্পর খাওয়া আবার তাকেই নিয়ে নৌকাবিহার এ যাওয়া , বা কলেজ টিচার কে চোর চোর বলে তাড়া করা আবার সেই টিচার এর বাড়িতে গিয়ে বিরিয়ানি সাঁটিয়ে আসা , এসব বোধহয় ওর পক্ষেই সম্ভব । যাই হোক এহেন সুদর্শন আমার সাথে দেখা করতে এসেছে ভেবে বেশ আনন্দ লাগলো । নিতাই কে বললাম এখুনি পাঠিয়ে দে আর ২ তো কোল্ডড্রিঙ্কস এনে দে ।

মনে মনে ভাবছিলাম কলেজ এর অনেক এর এ কোনো খবর নেয়া হয় না । তারা কি করছে , বিয়েসাদি করলো কিনা কিছুই জানিনা । যেমন সুদর্শন এর ও কিছুই জানা নেই । এমন মোমেন্টেই সুদর্শন এর প্রবেশ ঘটলো । কি রে সুজয় চিনতে পারছিস ? , উত্তর দেবার আগে ভালো করে খুঁটিয়ে দেখছিলাম ওকে । আগের থেকে চেহারাটা একটু মোটা হয়েছে ,ভুরি ও হয়েছে অল্প , গালে অনেক দিনের না কাটা দাড়ি ,চোখ এ চশমা । কিন্তু কথা বলার ধরন , আর আচরণ এক এ রকম থেকে গেছে । তাই চিনতে কোনো অসুবিধায় হলো না । বললাম আই বস । তোকে চিনতে পারবো না । তোকে ভুলে যাওয়া মাত্র ১০ বছর এ তো সম্ভব নয় ,কি বলিস? হুম তাহলে বলছিস আর ১০ টা বছর পরে দেখা হলে ভুলে যাতে পারতিস , সুদর্শন এর রসালো উত্তর । দু জন এই খুব জোরে হেসে উঠলাম । আমার কেবিন টা অনেক দিন পর সেই সত্যি কারের হাসির রোল শুনতে পেলো । আমি বললাম , যাই হোক তোর জন্য শুধু কোল্ডড্রিঙ্কস এর অর্ডার দিলাম , আর কিছু খাবি নাকি ? এটা কিন্তু সরকারি জায়গা ,এখানে ২ টাকার লুচি আলুর দম টা কিন্তু খেয়ে দেখতে পারিস ভাই । কারোর ঝেড়ে খাবার ব্যাপার এ সুদর্শন বরাবর ই সিদ্ধহস্ত । এক কথাই রাজি হয়ে গেলো । বললাম চল তাহলে ক্যান্টিন এ যাই , ওখানে বসে তোর সাথে গল্প করবো । একটা ছোট ফোন করে নিতাই কে কোল্ড ড্রিঙ্কস দিতে মানা করে দিলাম । তারপর দু জন এ উঠে পড়লাম ।

২ তো কোল্ড ড্রিঙ্কস আর লুচি আলুর দম এর অর্ডার করে চেয়ারএসে বসলাম । এখন ক্যান্টিন টা একেবারেই ফাঁকা । তাই দু জন এ একটু ভালো করেই কথা বলা যাবে । জিজ্ঞেস করলাম বল কেমন আছিস ? কি করছিস এখন ? এসব কমন প্রশ্ন । উত্তর এলো আমি বিন্দাস আছি । আর কাজ কি করছি আমি নিজে ও জানিনা , বলতে পারিস ভব ঘুরে । বুঝলাম সুদর্শন সেই আগের মতোই আছে , আস পাশের আলোচনায় বেশি যেতে চাইনা , সরাসরি আসল আলোচনায় আস্তে চাই । এর পর ও নিজের কথা বলতে শুরু করলো :

ওর সব কথা শুনে যা বুঝলাম তা অনেকটা এরকম :

ও কিছুটা হলে ও সমাজ সচেতনতার কাজ করছে । ছোট খাটো কিছু রাজনীতির লোকের সাথে মুখ আলাপ ও হয়েছেএই সূত্রে । তাদের এ কারোর কাছে ও জানতে পেরেছে আমি নবান্নে বসি । এবং রাজ্যের বড়বড় কিছু নেতার সাথে আমার ভালোই দহরম মহরম আছে । ও একটা ছোট খাটো হাসপাতাল খুলতে চাই গরিব মানুষের জন্য আমাকে তার একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে ।

সব বুঝলাম সুদর্শন কিন্তু আমি রয়েছি খাদ্য দপ্তর এ , আর তুই যা চাইছিস সেটা তো স্বাস্থ দপ্তর এর কাজ ।

আর গান গাস না , তুই সামনের মাস থেকে যে স্বাস্থ দপ্তর এ বসবি সেটা আমি জানি ।

শুনে সত্যি চমকে গেলাম । বললাম তুই জানলি কি করে? আমি এ তো খবর তা আজ কে পেলাম ।

বললাম না আমার কাজের সূত্রে কিছু কিছু রাজনীতিক দের সাথে আলাপ আছে । ধরে নে তাদের এ কেউ বলেছে । তুমি কম নাম কেন নি এই ক দিন এ । অনেক এই তো দেখলাম তোর নাম এক ডাকেই চেনে ।

ভয় এর সাথে কিছু টা গর্ব ও হলো না তা বলবো না । তবে রাজনীতির আন্দলে বেশি পরিচিতি ভালো নয় এটা ছোটবেলার থেকে বাবার মুখে শুনে এসেছি । জানিনা এর আসল খারাপ ফল কি ।

লুচি আলুর দম এসে গেলে সুদর্শন আর একটা ও কথা না বলে খেতে শুরু করে দিলো, সেই কলেজ এর মতোই । বললাম সুদর্শন তুই সেই আগের মতোই রয়েগেলি বল ? ও বললো কেন? আমি বললাম, আরে আমার লুচি টা এখনো আসেনি রে ছাগল । শুনে সুদর্শন এর নিরলস উত্তর , ও আসেনি? ঠিক আছে এলে শুরু করে দিস । যাই হোক লুচি আলুর দম শেষ করে কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে খেতে কথা বলার ইচ্ছা দেখালো সুদর্শন । বললো বিয়ে তো করেছিস শুনলাম , একটা ছেলে হয়েছে নাকি তোর?

আমি বললাম , ভাই আমার সব খবর এ তো দেখছি তোর কাছে আছে , আর কি কি জানিস বল ?

আরে না না , জানিস এ তো কারোর কাছে যাবার আগে তার যতটা পারা যাই ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিয়ে যাওয়া আমার স্বভাব । যাই হোক বল বৌদি কি করে? শুনেছি বৌদি ও নাকি কোনো হাসপাতাল এর সাথে যুক্ত ?

বললাম হ্যাঁ সরকারি নার্স । তা তুই কি বিয়ে করলি? সুদর্শন জানালো না সেটা নাকি এখনো করে উঠতে পারেনি । এখন তার একটাই স্বপ্ন হাসপাতাল বানানো ।

যাই হোক আমি বললাম আমি যতটা করতে পারবো নিশ্চই করবো । এরপর হঠাৎ এ জিজ্ঞেস করলো তোর কি গাড়ি আছে ? আমি বললাম আছে মানে আমার নয় অফিস থেকে পিকআপ ড্রপ দেয় ।

সেটা ঠিক সরকারি চাকুরে রা আর গাড়ি কবে কিনলো। .. যাই হোক আজ কটাই বেরোবি? বলছি তাড়াতাড়ি হবে কি ? এই ধর ৫ টা ?

ভাই ৫ টা তাড়াতাড়ি নয় , সুতরাং সম্ভব । বাট প্ল্যান কি ?

প্ল্যান সে রকম কিছু নয় ,দু জন এ এক সাথে কোনো বার এ যাওয়া যেত আর কি । অনেকদিন এ কোনো যুৎসই সঙ্গী পাচ্ছিলাম না ।

বার এ যাতে পারি ভাই , কারণ আজ আমি ঘরে ফেরার সে রকম তারা নেই । বাট ড্রিংক করবো না ।

সে কি রে ভূত এর মুখে রাম রাম । কি ফ্যামিলি কমিটমেন্ট ?

সে রকম এ ভাবতে পারিস । তবে বার এ না গেলেও তোকে এক টা দারুন বিরিয়ানি খাওয়াতে পারি । তারপর এক সাথে বাড়ি ফিরবো লোকাল ট্রেন এ , সেই কলেজ লাইফ এর মত ।

আইডিয়া টা খারাপ নয় ,বাট লোকাল ট্রেন এর ভিড় নিতে পারবি তো ? অফিস গাড়িতে রেগুলার যাতায়াত যার ।

আরে না পারলে তুই আছিস তো সামলে দিবি ।

চাল প্ল্যান একসেপ্টেড , তাহলে ৫ টাই মিট করছি ।

দু জন হাত মিলিয়ে ,যে যার কাজে চলে গেলাম । প্ল্যান টা ২ জন এ ভারী অদ্ভুত করেছিলাম সেটা ২ জন এই বুঝতে পেরেছিলাম । কিন্তু কেন জানিনা এতো দিন পর পুরোনো বন্ধু কে পেয়ে ,পাগলামো মারতেই বেশি ইচ্ছা করছিলো ।

যাই হোক অফিস এর ব্যাস্ততায় সব এ ভুলে গেছিলাম , কে সুদর্শন কি কথা দিয়েছি সব ই । ব্যাস্ততার মধ্যে লাঞ্চ তা ও আজ স্কিপ হয়েগেলো ।

সম্বিৎ ফিরলো ঠিক ৫টার সময় সুদর্শন এর ফোন এ । বললাম বস একটু দাঁড়া ১৫মিনিটস এর মধ্যে সব মিটিয়ে বেরোচ্ছি । বেরোতে বেরোতে ৫:৩০ সেই হয়েই গেলো । সুদর্শন রেগে ফায়ার ,আমাকে এই মারে তো সেই মারে । বলে বড় অফিসার হয়ে গিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখলি ? লজ্জা করে না । যাহোক করে ওকে শান্ত করে , অফিস গাড়ি টা নিয়ে নিলাম । সুদর্শন কে নিয়ে চলে এলাম ব্যারাকপুরে দাদা বৌদি বিরিয়ানি রেস্টুরেন্ট এ । সুদর্শন আবার খেপে ফায়ার ,বলে অত রেস্টুরেন্ট কাছাকাছি থাকতে ব্যারাকপুরে । অনেক কষ্টে কলেজ এর সেন্টিমেন্ট দিয়েওকে সামলানো গেলো । আসলে এই রেস্টুরেন্ট টা আমাদের কলেজ লাইফ এর একেবারেই unaffordable রেস্টুরেন্ট এর মধ্যে একটা ছিল । আর আজ যখন সেটা affordabel হলো , এদিকে আর আসায় হয়না ।তাই সুদর্শন কে পেয়ে আজ আর লোভ সামলাতে পারলাম না । সুদর্শন ও দেখলাম প্রথমে চিল্লা মেল্লি করলে ও , পরে রাজি হয়েগেলো , আসলে কারোর ঝেড়ে খাবার সুযোগ পেলে ও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা সেটা আমি জানতাম । তাই টপ টা দিয়েদিলাম, "চিন্তা করছিস কেন আমি এ খাওয়াবো ,তোকে কিছু খরচ করতে হবেনা" ।

তাতে ওর উত্তর টা একটু বাঁকা এলো বটে , বাট মেনে নিলাম ।

যাই হোক দু জন এ প্রচুর বিরিয়ানি খেয়ে,ভীষণ নস্টালজিক হয়ে ,পুরো দিন এনজয় করে যখন ফেরার কথা ভাবছি , তখন অলমোস্ট ৮:৩০ ঘড়িতে ,দু জন কে বেশ অনেক টা দূর যাতে হবে , আমি সাউথ কলকাতা , সুদর্শন সেন্টার । আর আমাদের ইচ্ছা মতো পাগলামোর জায়গা টা ও অজান্তেই দারুন হয়ে গেছিলো । কারণ এখন বারাকপুর থেকে ফেরার জন্য ট্রেন ছাড়া আর কোনো অপসন নেই ।

দু জন এ ভীষণ খুশি মনে লোকাল ট্রেন এ উঠলাম । উঠে আরও পাগলামো শুরু করলাম । আমার ইচ্ছা ছিল বেলঘরিয়া স্টেশন থেকে গেট এর কাছে দাঁড়িয়ে যাবো , ঠিক কলেজ লাইফ এর মত । কিন্তু আমার এই ইচ্ছা যে এতো বড় একটা কান্ড ঘটাবে টা আমি স্বপ্নে ও ভাবতে পারিনি ।

কথা মতো আগারপাড়া ক্রস করতেই আমরা ২ জন গেট এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ।বেশ মজা পাচ্ছিলাম , কিন্তু যতই হোক একটু অভ্যাস না থাকার কারণ এ একটু অসুবিধা হচ্ছিলো ২ জন এর এ । দমদম স্টেশন হঠাৎ কেন জানিনা প্রচুর লোক উঠলো । তাদের মধ্যে মেয়েদের একটা খুব বড় গ্রূপ ছিল । আমরা ২ জন চাপ এ বেশ কিছুটা পিছিয়েএসেছিলাম । সুদর্শন আর আমার মাঝে ও এর ২ -৩ জন ঠুকে গেছিলো । হঠাৎ একটা খুব জোর চিৎকার এ আমি ভয় পেয়ে গেলাম । কোনো এক টি মেয়ে ভীষণ জোর চিৎকার করে কাউকে থাপ্পড় মারলো মনে হলো । আমাকে এরপর অবাক করে দিলো যখন দেখলাম সেই থাপ্পড় আর কেউ নয় ,আমার বনধু সুদর্শন বড়ালই ই খেয়েছে ।বেশ টেনশন এর ২ গুন্ বেড়ে গেলো ।কারণ আমি সুদর্শন কে যত দূর চিনি ও মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করতেই পারেনা , আর যেটা সব থেকে ভয়ের থাপ্পড় খেলে তার মারাত্মক প্রতিশোধ নেবার পুরোনো প্রচুর রেকর্ড আছে সুদর্শন এর । ভয়ে আমি এটাই বুঝতে পারছিলাম না সুদর্শন এর হয়ে কথা বলবো না চুপ থাকবো । এর মধ্যেই সুদর্শন বেশ বড়সর ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে মেয়েটির সাথে । বলছে ও কিছুই করেনি মেয়েটি ওকে কেন থাপ্পড় মারলো ? তাকে ক্ষমা চাইতে হবে । মেয়ে টি ও ছাড়বার পাত্রী নয় ।সে শুধু বলে যাচ্ছেন আপনি ই করেছেন আমি দেখেছি । এরকম পরিস্থিতে আমি কি করবো বুঝতে না পেরে সুদর্শন কে বললাম ভাই ছেড়ে দে এদিকে চলে আই । আমার কথা সোনার ছেলে সুদর্শন নয় ।সে আরো রেগে যাতে লাগলো । কিন্তু যা হয় ভিড় ট্রেন বা বাস এ সাধারণত মেয়েরা ই সাপোর্ট বেশি পাই । তাই হঠাৎ দেখলাম বেশ কিছু লোক মেয়ে টাকে সাপোর্ট করে এগিয়ে এলো । আর তাদের কে এগিয়ে আস্তে দেখে ভয় পেয়ে ই হোক বা নিজের অন্য কিছু ভেবে সুদর্শন হঠাৎ আমার কথা শুনে দরজার কাছেই এগিয়ে এলো । আমি মনে মনে শুধু ভাবছি কখন উল্টাডাঙ্গা স্টেশন টা আসবে, আর দু জন এ নেবে যাবো । তারপর তো কেউ কাউকে চেনে না তাই এই অসস্মান কখনো সামনে হবে না । হঠাৎ দেখলাম সুদর্শন একটা সিগারেটে ধরিয়েছে ,আর খুব জোরে জোরে দম নিতে নিতে সেটা টানছে । টেনশন এবারে বেড়ে গেলো মেয়ে টা দেখি গেট এর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে , হয়তো উল্টোডাঙা তেই নামবে । আমি আস্তে করে সুদর্শন এর গায়ে হাত দিয়েওকে শান্ত হতে বললাম । আস্তে আস্তে বললাম এটা আর কলেজ লাইফ নয় । কিছু উল্টোপাল্টা করবি না । শান্ত থাক, আমি জানি তুই কিছু করিস নি । এই শেষ কথা টা শুনে ও আমার দিকে এক বার তাকালো চোখ বড়বড় করে , আর তারপর যা করলো তা আমি সারাজীবন ভুলতে পারবো না ।

মেয়েটা তখন গেট এর সামনেই চলে এসেছিলো উল্টাডাঙ্গা নামবে বলে , উল্টাডাঙ্গা স্টেশন তা এমনিতেই অনেক টা বড় ।স্টেশন টা অনেক আগেই শুরু হয়েযাই , তখন জাস্ট স্টেশন টা শুরু হয়েছে,হঠাৎ দেখলাম সুদর্শন পিছন ফিরলো , আর একটা বিশাল আওয়াজ করে উঠলো মেয়েটা , সাথে সাথে সুদর্শন ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিলো স্টেশন এর উপর । আমি কোনো কিছু না ভেবে ঝাঁপ দিলাম ট্রেন থেকে, স্টেশন এর উপর পরে একটু লাগলো বটে , কিনতু সে সব ভাবার সময় আর ছিল না । দম বন্ধ করে সুদর্শন এর পিছনে ছুট লাগলাম , পিছন থেকে আওয়াজ আসছিলো ধর ওদের কে ধর , ইসসস মেয়েটার কি সর্বনাশ করলো । কয়েকজন লোক পিছু নিয়েছিল বোধহয়, কিনতু এরকম চোখ মুখ বুজে ছুটেছি , মনে হয়না কারোর পক্ষে ধরা সম্ভব ছিল । উল্টাডাঙ্গা ব্রিজ এর কাছে এসে বিশাল বড় জিভ বার করে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন নিজেকে কিছুটা সিকিউর ফীল করলাম তখন চোখ বুজিয়ে ভাবতে লাগলাম সুদর্শন কি করেছিল । সুদর্শন হঠাৎ পিছনে ফিরে মেয়ে টার সালোয়ারএর সামনে টা টেনে ধরে জ্বলন্ত সিগারেট মেয়েটির বুকের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো ।তারপর ট্রেন থেকে লাফিয়ে দৌড় লাগিয়েছিল। এর পর কি হয়েছে সত্যি আমি জানিনা কারণ আমি নিজে ও চোখ বন্ধ করেই দৌড় লাগিয়েছিলাম ।হঠাৎ দেখলাম পিছন ফিরে সিগারেটে খেতে খেতে সুদর্শন এগিয়ে আসছে আমার দিকে । বললো কি রে এক কালের বড় ক্রিকেটার, এটুখুনি দৌড়েই জিভ বেরিয়ে গেলো? আমি সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করছিলাম এতো বড় ঘটনা ঘটানোর পর সুদর্শন কে এরকম নিরুত্তাপ থাকতে দেখে । বললো আমার ওলা তে যাবার সামর্থ নেই বস , এখন থেকে আমি বাস এ উঠলাম , তুই একটা ওলা বুক কর তোকে তুলে দিয়ে চলে যাই । অনেক্ষন পর কথা বললাম তুই আগে বাস এ ওঠ , তোকে একা রেখে যেতে আমি ভরসা পাচ্ছি না । কথা মতো দু জন এ বাস লাইন এ গিয়ে দাঁড়ালাম,মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছিল ,তার মধ্যে একটা প্রশ্ন করেই ফেললাম সুদর্শন কে , ভাই মেয়েটাকে কি কোনোভাবে তুই চিন্তিস ? ও জবাব দিলো না, একটা সেই অদ্ভুত সংকেত মেশানো ফিচেল হাসি হেসে সুদর্শন চলে গেলো । ইঙ্গিত দিয়ে গেলো যেন একটু ভাব সবটাই বুঝতে পারবি ।

চলে গেলো সুদর্শন, এরকম একটা অদ্ভুত দিন উপহার দিয়ে । ওলা বুক করার ৫ মিনিট এর মধ্যেই চলে এলো । AC গাড়িতে বসে চোখ বুজিয়ে পুরো ঘটনা তা ভাবতে শুরু করলাম। অনেকগুলো প্রশ্ন মনে এলো যার কোনো উত্তর আমার কাছে ছিল না , তবে সুদর্শন এর এই ইঙ্গিত বাহি হাসির উত্তর বোধহয় কিছুটা ধরতে পারলাম ।

প্রশ্ন ১ : আমি এতক্ষন সুদর্শন এর সাথে ছিলাম , কিন্তু ওর কন্টাক্ট নম্বর বা ইমেইল কিছুই নেয়া হয়নি।ও নিজে আমার কাছে হেল্প চাইতে এলো কিন্তু কোনো কন্টাক্ট ডিটেলস এ শেয়ার করলো না, সেটা ও ভারী অদ্ভুত ।

প্রশ্ন ২: যে মেয়ে টির সাথে সুদর্শন র ঝামেলা হলো , মেয়েটিকে কোথাও যেন দেখেছি , যতদূর মনে পরে এরকম ই দেখতে যেন কোনো মেয়েছিল আমাদের জুনিয়র ব্যাচ এ , যতদূর মনে পরে সুদর্শন আমার হাত দিয়ে কলেজের এই জুনিয়র মেয়েটি কেই একটা চিঠি পাঠিয়েছিল ,মেয়েটা তখন আমাকে যা তা বলেছিলো, আমি খুব রাগ করেছিলাম সুদর্শন এর উপর । সেই মেয়েটার সাথে এই মেয়ে টার মুখে যেন মিল খুঁজে পাচ্ছি ।

প্রশ্ন ৩: সুদর্শন ট্রেন এ যে সিগারেট খাচ্ছিলো আর বাস এ ওঠার আগে যে সিগারেটে খাচ্ছিলো , দুটোর ধোঁয়ার মধ্যে কিছু একটা ডিফারেন্স ছিল । যেটা সিগারেটে অনভিজ্ঞাতার জন্য আমি হয়তো ঠিক ধরতে পারিনি ।

প্রশ্ন ৪: সুদর্শন এর লাস্ট হাসি , যা যেন অনেক কিছুই বলছিলো আমাকে ।

যাই হোক এসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোন টা বাজে উঠলো , রণিতা র ফোন । এতো দেরি হছে কেন জিজ্ঞেস করছিলো, বললাম পুরোনো বন্ধু সাথে দেখা হয়েছিল ,তাই দেরি হয়েগেলো ।

ফোন টা রেখে একটু চোখ টা বুজিয়ে আজ পুরো দিন টার কথা এক বার ভাবছিলাম । সত্যি ই আজকের এই হঠাৎ দেখা যেন আমাকে পুরোপুরি নিয়ে চলে গেছিলো সেই ১০ বছর পিছনে । যেখানে না ছিল সম্মান এর ভয় ,না ছিল বাড়ির অজস্র চিন্তা ভাবনা । শুধু ছিল নিরলস আনন্দ । তখন ভুল ভাল উৎপটাং কাজ করতে ২ বার ভাবতাম না, ট্রেন এ বাস উঠে বাড়ি ফেরার থেকে ভাবনায় কাজ করতো বন্ধু দের সাথে মজা করতে করতে ফেরা , আর সে টাই সবসময় বেশি প্রায়োরিটি পেত ।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মা এর ফোন চলে এলো , দরকার মতো কথা বলে ফোন রাখার পর বাড়ির কথা মনে পরে গেলো । ফিরে এলাম আজ কের জীবন এ , যেখানে আছে মা এর শরীর খারাপ , বাবার রাগ , বউ এর খুনসুটি , ছেলের দুষ্টমি , আর অজস্র রেসপনসিবিলিটি । সেই সাধারণ জীবন এর নিরলস আনন্দে আবার ভেসে গেলাম । শুধু মনে থেকে গেলো এই হঠাৎ দেখার স্মৃতি , জানিনা আর তোর সাথে কখনো দেখা হবে কিনা, কিন্তু ছাপোষা এই জীবন এ হঠাৎ ১০ বছর আগের বেপরোয়া স্বাদ এনে দেবার জন্য একটা ছোট্ট ধন্যবাদ ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama