Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Mousumi Chatterjee

Romance Others

2  

Mousumi Chatterjee

Romance Others

আবার আসব ফিরে-৩

আবার আসব ফিরে-৩

13 mins
9.4K


ওরা দেখে চমকে যায় সত্যি বাড়ীর রঙ সাদা , যেমনটা জুঁই বলেছিল , সামনে সেই এক চিলতে বাগান ।

জুঁই গিয়ে দরজায় কলিংবেল বাজাতে - একজন বছর ষাটোর্ধ মহিলা এসে দরজা খোলেন এবং ওদের দেখে একটু অবাক হয়েই জানতে চান ওরা কে, কোথা থেকে এসেছেন , কি ব্যাপার?

জুঁই আবেগের বশে মা বলে ডেকে উঠতে যাচ্ছিল , পিছন থেকে ওর মা, ওকে চেপে দিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে বলেন,''- নমস্কার দিদি , আমরা বর্ধমান থেকে এসেছি বিশেষ একটা কাজে, তা আপনার সাথে কি আমরা একটু কথা বলতে পারি ?''

''হ্যাঁ হ্যাঁ , নিশ্চয়ই আসুন ভেতরে আসুন । '' বলেই উনি ওদের ভেতরে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসালেন।

জুঁই দেখতে পেল ওর আগের জন্মের ছবি বিশাল বড়ো করে ফুলের মালা দিয়ে টাঙিয়ে রাখা ।

জুঁইয়ের মা, বাবা ও ছবিটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল ।

ওদের ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন,'' - ও আমাদের একমাত্র মেয়ে মোহিনী, আজ থেকে বছর আঠারো আগেই ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ভাই , বলতে বলতেই উনি কেঁদে ফেললেন ।''

''আপনি কি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন ? ''বলে ওঠে জুঁইয়ের বাবা ।

''পুনর্জন্ম নিয়ে শুনেছি বটে , তবে তা সিনেমায়, বা গল্পে পড়া , সুতরাং এ নিয়ে কি বলি বলুন দেখি ?''

ওদিকে জুঁই ছটফট করেই চলেছে কতক্ষনে সে তার আগের জন্মের মাকে একটু বুকে জড়িয়ে ধরবে, বাবাকেও তো দেখতে পাচ্ছে না।

''ধরুন আপনাদের মোহিনী যদি আপনাদের কাছে ফিরে আসে।''

''কি যে বলেন , সেই সৌভাগ্য করে কি এসেছি আমরা ?''

শুনে জুঁইয়ের বাবা বলেন,'' - বলা তো যায় না, সম্ভব তো হতেও পারে বলুন ।''

জুঁইয়ের বাবা বলতে থাকেন - ''ভগবান হয়তো আপনাদের দুঃখ চোখে দেখতে পাচ্ছেন না, তাই যদি মোহিনীকে আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে চায়। নেবেন আপনারা মোহিনীকে কাছে টেনে ?''

''আজ এই আঠারোটা বছর পর এসব বলে কোনো লাভ আছে কি বলুন? কেন আমাকে এসব কথা বলে মনে কষ্ট দিচ্ছেন আপনি ?সত্যিই করে বলুন তো কি চান আপনারা ?''

''আপনি আমায় ভুল বুঝছেন, আমরা এখানে কিছু চাইতে আসিনি। আমার মনে হয় আমাদের সম্বন্ধে আপনাকে খুলে বলি, তবে আশা করি বুঝবেন , এখানে কেন এসেছি । আমি সুনন্দ রায়, ও আমার স্ত্রী সোমা রায়, আর এই আমাদের একমাত্র মেয়ে জুঁই রায়। ও উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে , ছোট্ট থেকেই আঁকায়, গানে ও রান্নায় পারদর্শী । কিন্তু অদ্ভুত কি বলুন তো,এগুলো ওকে আমরা শেখাইনি। এগুলোতে ও নিজে থেকেই রপ্ত। আমরা সেই বর্ধমানে থাকি । আমি সামান্য একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি ।'' বলেই এবারে সে জুঁইয়ের এই ক বছরে যা যা ঘটেছে তা বিস্তারিত শোনায় ওনাকে।

নন্দাদেবী তো শুনে পুরো থ। কি বলবেন মুখে ভাষা পাচ্ছেন না, শুধু চেয়ে আছেন জুঁইয়ের মুখের দিকে ।

তাই দেখে জুঁইয়ের মা বলে ওঠে,'' - আমার মনে হয় এবারে জুঁইয়ের মুখেই আপনি সব শুনুন।''

এতক্ষণে জুঁই বলার সুযোগ পাওয়াতে আবেগে ওর চোখে জল এসে যায়।নন্দাদেবীর কাছে এগিয়ে এসে বলে,'' - মা, মাগো আমিই তোমাদের সেই মোহিনী গো, বলেই সে আগের জন্মের সমস্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা বিস্তারিত বলতে থাকে । এমনকি এই বাড়ীতে তাদের কটা ঘর, ওর ঘর কোনদিকে, নন্দাদেবীরা কোনদিকের ঘরে শোয়, কোনদিকে ঠাকুর ঘর, রান্নাঘর সমস্ত কিছু বলে ফেলে । এবারে সে জানতে চায় অনেকক্ষণ তো এসেছি তবু বাবা কই , বাবা কি বাড়ী নেই ?''

নন্দাদেবী কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,'' আছে তো সেই পুজোর ঘরে । তুই চলে যাওয়ার পর থেকেই শোকে শোকে মানুষটা কেমন হয়ে গেছে রে। দিনের বেশীর ভাগ সময়েই উনি ওই ঠাকুর ঘরেই পড়ে থাকেন । '' বলেই উনি ঠাকুরঘরের দিকে এগিয়ে যান, ও স্বামীকে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন । -'' ওগো শুনছো, দেখো দেখো কে এসেছে , আমাদের রাধামাধব যে অশেষ কৃপা করেছেন । তুমি তাড়াতাড়ি এসো গো একবার টি।'' বলেই জুঁই কে বুকে ধরে কাঁদতে লাগলেন । তার আজ এই আনন্দাশ্রু আর থামতে চায় না। মা মেয়ের এই মিলনে জুঁইয়ের বাবা মায়ের ও চোখে জল এসে যায় ।

স্ত্রীর চেঁচামেচিতে মৃনালবাবু বেরিয়ে আসেন ঠাকুরঘর থেকে ।ওদের দেখে অবাক হয়ে বলেন,'' কি হলো কে এসেছে ? আর তুমি এইভাবে কাঁদছ কেন ?''

''এই দেখো গো, এই দেখো '' বলেই চোখের জল মুছতে মুছতে জুঁইয়ের হাত টা ধরে টেনে স্বামীর কাছে নিয়ে যান।

মৃনালবাবু হতবাক হয়ে যান। বলেন,'' - কে ও ?''

''ওগো ও যে আমাদের মোহিনী গো, ও ফিরে এসেছে গো আমাদের কাছে।'' বলেই আবেগে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন নন্দাদেবী।

''কি বলছ তুমি নন্দা, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ?''

এবারে জুঁই মৃনালবাবুর কাছে এগিয়ে এসে বলেন,'' - তুমি এইভাবে বলো না বাবা, মা তো ঠিকই বলছে। বাবা আমার সেই মেলা থেকে কিনে আনা শিব ঠাকুর এখনও আসনে রাখা আছে ? আর, আমি যে সেই বাড়ীর পিছনে একটা শিউলি আর জবা গাছ পুঁতেছিলাম, ওগুলো এখনও বেঁচে আছে তো? মনে পড়ে বাবা, বিয়ের বেনারসী কেনার সময় কত্তো হয়রানি হতে হয়েছিল আমার জন্যে , মনে মনে খুব রেগে গিয়েছিলে সেদিন ।মুখে কিছু বলোনি, সেই শাড়ি টা গুছিয়ে রেখে দিয়েছ তো?''

মৃনালবাবু যত শুনছেন তত থ হয়ে যাচ্ছেন!

বলেন,'' - তোমার নাম কি? কোথা থেকে আসছ তুমি ?''

এবারে জুঁইয়ের বাবা আর চুপ করে বসে থাকতে পারলেন না, তিনি উঠে এসে নিজেদের পরিচয় দিয়ে পুনরায় সমস্ত কথা খুলে বলেন মৃনালবাবু কে।

মৃনালবাবু মুখের ভাষা হারিয়েছেন, কি বলবেন বুঝে পেলেন না। তার দুচোখ দিয়ে নীরবে জলের ধারা বয়ে চলেছে ।

জুঁই মৃনালবাবুকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,'' - এই আঠারোটা বছর তোমরা অনেক কেঁদেছো আমার জন্যে , আর কেঁদো না বাবা । এই তো আমি তোমাদের কাছে ফিরে এলাম। আমাকে যে আরও একটা মানুষের চোখের জল মোছাতে হবে । তোমরা নিয়ে যাবেনা আমায় তার কাছে?বলো না, কি গো? সেও যে খুব কষ্ট পাচ্ছে।''

নন্দাদেবী বলেন ,'' তুই কি মানসের কথা বলছিস মা?''

''হ্যাঁ গো, আর কার কথা বলব, সে ছাড়া আর আছে কে আমার ।''

''সে ও তো করুন অবস্থা তার । তুই চলে যাওয়ার পর নিজেকে দুটো বছর ঘরে আটকে রাখল। তারপরে যখন বেরোল তখন তো ছেলেটা প্রায় উন্মাদ । ও যে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় রে। ও জানে ওর মোহিনী ওর কাছে একদিন ঠিক ফিরে আসবে । তোরা যেখানে যেখানে যেতিস ঘুরতে, ও সেখানে সেখানেই সারাটা দিন ঘুরে বেড়ায় । আর সবাই কে ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করে - 'তোমরা কি আমার মোহিনী কে দেখেছ গো?' আর ছেলের এই অবস্থা সহ্য করতে না পেরে ওর বাবা আজ বিছানাশয্যা , ওর বড়দা এখন ওদের ব্যবসা সামলায়, মায়ের ও মানসিক অবস্থা তেমনি খারাপ ।''

জুঁই শুনেই কাঁদতে থাকে আর ওর বর্তমানের মা,বাবা কে বলে,'' দেখেছ তোমরা , আমি বলেছিলামনা ও আমার জন্যে ঠিক পথ চেয়ে বসে আছে । আমি যে ওকে কথা দিয়েছিলাম , তাই তো ও বসে আছে আমার জন্যে ।''

নন্দাদেবী এগিয়ে গিয়ে সোমাদেবীর হাত দুটো ধরে বলেন,'' - ভাই তুমি যে আমাদের কি উপকার করলে , এই ঋণ আমরা কোনদিনও শোধ করতে পারব না।''

''ছিঃ ছিঃ এইভাবে বলবেন না দিদি , তবে হ্যাঁ পেটে ধরেছি তো, এত বড় করলাম , শুধু দেখবেন, আমাদের যেন আপনারা ভুলে যাবেন না।'' বলেই কেঁদে ফেলেন উনি ।

''এমন কথা মুখে ও এনো না ভাই । আমরা অমন মানুষ নই। ও যে আমাদের সকলের মেয়ে । এ যে ভগবানের অশেষ আশির্বাদ । ওদের এই ভালবাসা বড়ই দুর্মূল্য, বড়ই দুষ্প্রাপ্য। খুব কম মানুষই জীবনে এমন স্বর্গীয় ভালবাসা পায় বলো। দেখছ না আজ ভগবান ও ওদের এই ভালবাসার কাছে হার মেনেছে।তবে না মোহিনী কে ফিরিয়ে দিয়েছে জুঁইয়ের রূপে ।''

চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন 'একদম ঠিক বলেছেন দিদি ।''

ওদিকে ততক্ষণে জুঁই উতলা হয়ে উঠেছে মানসের কাছে যাবে বলে। ''ও মা চলো না তোমরা, আর নয়তো তোমরা থাকো, আমি চলে যাই ওর কাছে ।''

শুনেই তড়াক করে লাফিয়ে ওঠেন মৃনালবাবু। চোখ মুছে বলেন,'' - না না , তোকে আর আমরা চোখ- ছাড়া করব না। ওগো আর দেরী করছ কেন তোমরা ?কথা বলার সময় অনেক পাবে । চলো আমরা বেরিয়ে পড়ি । বলি হ্যাঁ রে মা, মানসের বাড়ীতে এই সুখবর টা দেব না?''

''না না বাবা, সে পরে দেবে , আগে ওর কাছে যাই চলো।মন বলছে ও  হয়তো পাটুলির ঝিলের ধারেই ওই কৃষ্ণচূড়া গাছের ওখানেই আছে।''বলেই ওরা সবাই মিলে রওনা দেয়। মিনিট কুড়ির রাস্তা ওদের বাড়ী থেকে । যেতে যেতে সবাই কে বলে,'' - তোমরা কিন্তু আমার সাথে ওর কাছে যাবে না। আমি একাই যাব ওর কাছে ।'' গিয়ে দেখে জুঁই যা ভেবেছিল ঠিক তাই , মানস ওর ছবি টা বুকে আগলে বসে বসে আপন মনে ওরই ছবির সাথে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে ।

এই দেখে নন্দাদেবী বলে ওঠেন ,''- যদি ও বুঝতে না পারে যে তুইই ওর মোহিনী !''

''মা চিন্তা কোরোনা, ভগবান এতটা নির্দয় ও হবেন না, এতখানি যখন করেছেন , আশা রাখি আমি সেই বিশ্বাস টা ওর মনে আনাতে পারব,'' বলেই এগিয়ে যায় মানসের কাছে ।

ওকে দেখে ওর আরও কান্না পেয়ে গেল । কি সুন্দর রূপ ছিল ওর , আর আজ তার একি কদাকার রূপ হয়েছে আমার জন্যে । কতদিন স্নান করেনি, একগাল রুক্ষ দাড়ি , চুলগুলো ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া হয়ে কাঁধ পর্যন্ত চলে গেছে ।

চুল ও যে বহুকাল কাটা হয়নি দেখে বোঝাই যাচ্ছে । অত সুন্দর সোনার বরণ গাঁয়ের রঙ এখন পুরো তামাটে হয়ে গেছে । চোখ দুটো কোটরে ঢুকে গেছে । হায় ভগবান! আমার মানসের এই হাল করেছ তুমি ? চোখের জল কিছুতেই আজ আর ধরে রাখতে পারছেনা, তার জামা- প্যান্ট ও ধুলোয় মাখামাখি।

মানসের হঠাৎ চোখে পড়ে জুঁইয়ের দিকে বলে,'' এই কে রে তুই ? আমাকে কি দেখছিস ? দেবো না এটা, যা ভাগ এখান থেকে ''।

জুঁই চুপটি করে দাঁড়িয়েই থাকে । কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না।

''কি হল সেই দাঁড়িয়ে আছিস ? বললাম না চলে যেতে । দেখছিস আমি কথা বলছি আমার মোহিনীর সাথে একটু , খামোকা বিরক্ত করা। তুই যাবি এখান থেকে?'' বলেই পাশে পড়ে থাকা একটা ইঁট তুলে নিয়ে মারতে যায় জুঁইকে।

তৎক্ষনাৎ জুঁই বলে ওঠে ,'' জানি তো তুই মোহিনীর সাথেই কথা বলছিস।''

''তুই চিনিস আমাকে ?''

জুঁই বলে,'' - হ্যাঁ চিনি তো, তুই তো মানস, আর ওই ছবিটা মোহিনীর,ওর জন্যেই তো বসে আছিস। কি ঠিক বলেছি তো ?''

শুনেই মানস উত্তেজিত হয়ে পড়ল।'' তুই মোহিনীকেও চিনিস? ওকে তুই দেখেছিস রে?

সেই যে বলে গেল আমার কাছে আবার আসবে ,আজও এলো না জানিস । আমি কতদিন ওর পথ চেয়ে বসে আছি ।''

''চিনি তো মোহিনী কে।''

''ও কোথায় তাহলে ?ও কি আসবেনা আমার কাছে ? আমাকে ভুলে গেছে ?বল না, এই , এই মেয়েটা চুপ করে আছিস কেন ?''

কথা বলবে কি তখন ওর বুকের ভিতরে যেন তোলপাড় চলছে , গলার কাছে যেন কান্নাটা দলা পাকিয়ে আছে, তবুও মুখে বলল,''- আসবে তো মোহিনী, তবে তোকে যে আমার সাথে যেতে হবে । আমি যা যা বলব তাই শুনতে হবে। তবেই তুই দেখবি তোর মোহিনী কে তুই ফিরে পাবি। কি যাবি তো আমার সাথে ?''

মানস কি যেন একটা ভাবতে লাগল ।

জুঁই আবার বলে,''- কি হলো রে, কি এত ভাবছিস?ও বুঝেছি, যাবি না তাহলে আমার সাথে , বেশ আমি তাহলে চললাম রে,পরে কিন্তু আমাকে আর খুঁজলেও পাবি না, এই বলে গেলাম।'' ইচ্ছে করেই জুঁই খানিকটা এগিয়ে যায় (মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করতে থাকে যেন মানস একবার ওর সাথে যায় )।

মানস ওকে চলে যেতে দেখে বলে,'' ওই, ওই মেয়েটা শোন আমি তোর সাথে যাব রে, কিন্তু সত্যিই করে বল আমার মোহিনীকে তুই আমার কাছে এনে দিবি তো?'' ( চিৎকার করে বলে কথাগুলো )

জুঁই পিছন ফিরে চায় । বলে ওঠে,'' - সত্যি, সত্যি, সত্যি, এই তিন সত্যি বলছি রে, আজই তুই তোর মোহিনীকে ফিরে পাবি। চলে আয় তাহলে, দাঁড়িয়ে থাকলে হবে ?''

''হ্যাঁ হ্যাঁ যাব, বল কোথায় যেতে হবে ?''

''বেশ আয় আমার সাথে'' বলে ওকে নিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দেয় ।

ওদের দুজনকে আসতে দেখে বাড়ীর সবাই তড়িঘড়ি করে আগেই এগিয়ে যায় ।

বাড়ীতে ঢুকতে গিয়ে বলে মানস বলে,'' এটা তো মোহিনীর বাড়ী।ও তো এখানে নেই রে, আমি কতবার এসে খুঁজে গেছি ।''

''তোকে আমি তো কথা দিয়েছি , আমার উপর বিশ্বাসটা রাখ। যা যা বলব , চুপটি করে সব করবি, যদি মোহিনীকে পেতে চাস''। (আলতো করে ধমকে ওঠে )

মানস ভয়ে আর কিছু বলে না, পাছে মোহিনীকে যদি না পা়য়।

ওকে উষ্ণ গরম জলে স্নান করানো হয়। তারপর ও নিজের হাতে খাইয়ে দেয় । তারপরে ওকে মোহিনীর শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বলে,'' - আমি তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি, তুই একটু ঘুমিয়ে নে।''

মানস বাচ্চাদের মতন বায়না করে ওঠে , বলে - ''না না ওটি হচ্ছে না। তুই খুব চালাক আছিস, আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তুই অমনি চলে যাবি আর আমার মোহিনীকে ফিরিয়ে দিবি না। না না না একদম তা হবে না। এই আমি এখানে বসলাম ,আগে আমার মোহিনীকে এনে দে, ওর কোলে মাথা রেখে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাব। জানিস কতদিন ওর জন্যে আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি ।''

ওদিকে মৃণালবাবু মানসের বাড়ী গিয়ে সব কথা খুলে বলাতে, মানসের মা ছুটে চলে আসেন ওনার সাথে । সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে কি হয়,আর সকলেই মনে মনে ঠাকুর ডাকতে থাকে ।

''কি হল রে,চুপ করে তখন থেকে কি হাঁ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিস, আমার মোহিনী কোথায় এনে দে তাকে ।''

জুঁই মানসের আরও কাছে এগিয়ে এসে বলে,''- দেখব না বল, কতবছর তোকে দেখিনি বল তো? আঠারোটা বছর তোকে ছাড়া ছিলাম আমি , ভাব একবার বুদ্ধু।'' বলেই সেই আগের মতই ওর মাথাটা আস্তে করে হাত দিয়ে ঠেলে দেয় । তারপর হাসতে হাসতে বলে,'' - কিরে তুই এবারে যে আমায় হাঁ করে দেখছিস। তোকে তখন কথা দিয়েছিলাম ,তাই তো আবার ফিরে এলাম তোর কাছে । এই দেখ তোর প্রিয় রঙ হলুদ ,মনে আছে তোর ?তাই তো আমি এই হলুদ রঙের চুড়িদার পড়ে এসেছি । আর মনে আছে তুই আমার হাতে পায়েস খেতে খুব ভালবাসতিস,আজ তাই আমি নিজের হাতে পায়েস করে এনেছি রে,'' বলে টেবিলে রাখা পায়েস নিয়ে ওকে খাইয়ে দেয় ।

অনেকক্ষণ পর মানস বলে ওঠে,'' না,না তুই আমার মোহিনী কি করে হবি? আমার মোহিনী তো ওরকম দেখতে'' বলেই - ঘরের দেওয়ালে টাঙানো মোহিনীর ছবিটা দেখাল।

জুঁই ও হার মানার নয়, সে এক এক করে তাদের পুরানো স্মৃতির সমস্ত কথা মানসকে শোনাতে থাকল। এমনকি যেদিন এই বাড়ীর ছাদেই মানস যখন প্রথম ওকে ভালবাসার কথা জানায় আর সেই প্রথম চুম্বন করে তাও বলে । হঠাৎ করে মানসকে জড়িয়ে ধরে বলে,'' - মনে করে দেখ সেদিন তুই আমাকে এইভাবেই শক্ত করে তোর বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরেছিলিস, আর বলেছিলিস তোকে আমি এইভাবে ধরে রাখব, কোথাও যেতে দেব না। আমি যদি তোর মোহিনী না হই তাহলে এতসব কথা জানব কি করে রে সোনা। আমার যে পুনর্জন্ম হয়েছে রে বুদ্ধু। তাই তো ভগবান আমাকে জুঁইয়ের রূপে তোর কাছে পাঠিয়েছে রে। এবারে তো মোহিনীকে বুকে জড়িয়ে ধর সোনা সেই আগের মতন , আমি যে আর পারছি না,''বলেই ওর বুকে সেই আগের মতন করে দুমদুম করে মারতে লাগল অভিমান করে ।

মানসের কি যেন একটা হল- জুঁইয়ের মুখটা দুহাতে চেপে নিজের মুখের কাছাকাছি নিয়ে এলো। নিজের ঠোঁট দুটো জুঁইয়ের ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেল । জুঁই লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। ওর ঠোঁটটা থরথর করে কাঁপতে লাগল । মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল । বুকের ভেতরে যেন ঝড় উঠেছে । সারাটা শরীর ওর কাঁপতে থাকল।

জুঁইকে এইভাবে দেখেই উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল মানস, বলতে লাগল ''হ্যাঁ হ্যাঁ তুইই আমার মোহিনী।'' ওকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,'' - বল আর কোনও দিন আমায় ফেলে যাবি না।''

জুঁই হেসে বলে,'' এই আমি তোকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি আর কখনও তোকে ছেড়ে যাব না দেখিস।'' বলেই ওর কপালে একটা আলতো করে চুম্বন দিল।

জুঁইকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে মানস হৈহৈ করতে থাকল। ওর ইচ্ছে করছিল সারা পৃথিবীর মানুষকে জানায় ওর মোহিনী ফিরে এসেছে ।

জুঁই বলে,'' চল বাইরে সবাই আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ,ওদের গিয়ে বলি।''

বাইরে এসে মাকে দেখে চমকে যায় মানস। বলে,''- মা তুমি ও এসে গেছো,বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কেঁদেই ফেলে । আর বলতে থাকে,'' - ওমা দেখো তোমাদের আমি বলতাম না,,মোহিনী ঠিক ফিরে আসবে একদিন , দেখো সে ফিরে এসেছে।'' বলেই জুঁইকে ডেকে দেখায়।

জুঁই ওর মাকে প্রনাম করে বলে,'' - মনিমা তোমার এই ধেড়ে ছেলেটা এখনও বাচ্চাদের মতন কাঁদে ?''

ওর কথা শুনে সকলেই মৃদু হেসে ওঠে ।

মানসের মা বললেন,'' - আমি চাই মানস আর মোহিনী একবার আমাদের বাড়ী এখনই চলুক। ওর বাবাকে ও তো এই খুশির খবর টা দিতে হবে । মানুষটা আজ কতদিন বিছানাশয্যা, ওদের দেখে দুচোখ জুড়াক। যদি এই খুশির খবরে ওনারও আরোগ্যলাভ হয়। ওর দাদা ও শুনে বাড়ী ফিরে এসেছে । সেও উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে । আর একটা কথা বলি, আমি চাই এই দুদিনের মধ্যেই ওদের চার হাত এক করে দিতে।''

নন্দাদেবী বলে ওঠেন,'' - আমাদের কোনও আপত্তি নেই, গয়না-গাঁটি সবই রেডি শুধু শাড়িগুলো যা কিনতে হবে । সে নিয়েও ভাবতে হবে না দিদি ।''

জুঁই বলে ওঠে,'' মা আমি চাই আমার জন্যে যেই বেনারসীটা কেনা হয়েছিল , সেটাই পরব।''

''কিন্তু সে তো কতবছর আগেকার ,অত ভালো থাকে কখনও ?কি দরকার নতুন কিনব।''

''না না, আমি ওটাই পরতে চাই'' বলে বাচ্চাদের মতো বায়না করতে থাকে ।

তাই দেখে সবাই হেসে ফেলে ।

সোমাদেবী বলে ওঠেন,'' আচ্ছা ওর যখন তাই ইচ্ছে দিদি তাই হোক ।''

বাড়ীতে যেন একটা মহোৎসব লেগে গেল ।

মানস , মোহিনীকে সঙ্গে করে ওরা সবাই মানসদের বাড়ী যায় ।

মোহিনীর এই পুনর্জন্মে সবার চোখেই বিস্ময়ের সাথে একরাশ আনন্দ । যা ওদের কল্পনার ও বাইরে ।

মানসের বাবা ও খুব খুশি । খুশিতে ওনার ও চোখে জল এসে যায় । আস্তে আস্তে দুজনকে আশির্বাদ করেন ।

এরপরে জুঁইরা বাড়ী ফিরে আসে । হাতে একদমই সময় নেই এই দুদিনের মধ্যে বিয়ে দেওয়া মুখের কথা! তবুও ওরা সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন।

ওদিকে মানসের চুল, দাড়ি কাটিয়ে তাকে আগের রূপে মোটামুটি ফিরিয়ে আনা হল।

খুব ধুমধাম করে প্রচুর লোকজনদের আমন্ত্রিত করে মানস-মোহিনীর চারহাত অবশেষে এক করা হল। তাদের এতকালের স্বপ্ন পূরণ হল।

মোহিনীকে তার দুই বাবা, মায়েরা মনের সুখে সোনায় মুড়ে দিয়েছেন । অপরূপ সুন্দর লাগছে জুঁইরূপি মোহিনীকে।

মোহিনীকে দেখে মানস ও আজ চোখ ফেরাতে পারছে না।

বিয়ে বাড়ীতে বিসমিল্লা খাঁর মিষ্টি সানাইের সুর ভেসে বেড়াচ্ছে,আর ওদিকে বিয়ের মন্ত্র শোনা যাচ্ছে -

" যদিদং হৃদয়ং তব,

তদিদং হৃদয়ং মম"।

সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance