Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Debdutta Banerjee

Drama

3  

Debdutta Banerjee

Drama

বন্ধু চল

বন্ধু চল

7 mins
1.2K


খান্ডালার এই রিসর্টটা ভীষণ লাকি রোহনের জন‍্য। যে কয়টা বিজনেস ডিল এখানে এসে করেছে সব কটাই দারুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে ওকে। এবারের ডিলটা ছিল মাধবনের সঙ্গে। সামনের সপ্তাহে যে টেন্ডারটা খোলা হবে তার লোয়েষ্ট কোটটা ফাইনাল করতেই এসেছিল রোহন। এবারের লোয়েষ্ট কোট নাকি গুপ্তাদের এমন একটা কথা বাতাসে ভাসছিল। মনিষ গুপ্তা, ওর হাত ধরেই গুপ্তা এন্ড সন্সের জন্ম। তার থেকে লোয়েষ্ট কোটটা ছিনিয়ে নিতে হবে।


রোহনের স্কুলের বন্ধু ছিল মণীষ। পুণেতে একসাথে কেটেছে ছোটবেলা। ও মণীষ আর বিনু, ছবির মত সুন্দর সেই ছোটবেলা। 

মাধবন কে নিয়েই এই রিসর্টে ঢোকার মুখেই প্রথম বড় ধাক্কাটা খেয়েছিল রোহন। ওদের অর্ডার নিতে ওয়েটারের পোশাকে এসে দাঁড়িয়েছিল যে যুবক তাকে দেখে চমকে উঠেছিল রোহন। এত বছর পর এ ভাবে বিনুকে দেখবে কখনো কল্পনাই করেনি ও। বিনুর বাবা মারা গেছিল ওরা যখন ক্লাস টুয়েলভে পড়ে। মামাবাড়ি চলে গেছিল বিনু। তারপর আর সে ভাবে যোগাযোগ ছিল না। কলেজের পর মণীষের সাথে যোগাযোগটাও ছিন্ন হয়েছিল। আর আজ কাজের জগতে এই মুহুর্তে মণীষ ওর সব চেয়ে বড় প্রতিদ্বন্ধী। 

বিনু কিন্তু ওকে দেখেও চমকায়নি। এতবড় রিসর্টের ওয়েটার সম্পুর্ন পেশাগত দক্ষতা দেখিয়ে মার্জিত ভাবে ওদের অর্ডার নিয়েছিল। একটা কাঁঁটা তখন থেকেই খচখচ করছিল রোহনের বুকের কাছে। মাধবনের সাথে ওকে দেখে বিনু কি কিছু আঁচ করল!! কথাটা কি কোনো ভাবে মণীষের কানে যেতে পারে ? আজ মাধবনকে খুশি করার জন‍্য রোহন নিজের সুন্দরী পার্সোনাল আ্যসিস্টেন তোরণকে সঙ্গে এনেছে, যদিও তোরণ অপেক্ষা করছে কটেজ নম্বর ১০৮ এ। এত বড় রিসর্টে একজন সামান‍্য ওয়েটার রুম নম্বর ১০৮ এর খবর নাও রাখতে পারে। তবুও আজ মাধবনের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার খেই হারিয়ে ফেলছিল রোহন। বাইরে তখন বর্ষার বাধ ভাঙা বৃষ্টি, খান্ডালার পাথুরে প্রকৃতির মাঝে সৃষ্টি নতুন নতুন ঝর্ণার জল প্রকৃতিকে ধুইয়ে দিচ্ছে।সবুজ গাছপালা আরো সতেজ হয়ে উঠেছে সেই সিক্ততায়। রোহনের মন ছুটে যায় ছেলেবেলায়।

-''মিঃ রোহন প্রকাশ, আপনি আজ খুব অন‍্যমনস্ক মনে হয়। আর কি কিছু বলতে চান আমাকে ?'' বিশুদ্ধ ইংরেজিতে কেটে কেটে শব্দ কটা রোহনের দিকে ছুড়ে দেন এম এম ইন্ডাস্ট্রিজের সিইও মাধবন। চোখে তার একটা হাল্কা কৌতুকের ছোঁওয়া। 


কিন্তু আজ বিনুকে দেখার পর থেকে রোহনের সব কিছু কেমন গুলিয়ে গেছে। কিছুতেই সহজ কথা কটা গুছিয়ে বলতে পারে না ও। কেমন যেন বোকা হয়ে যায়। বার বার মনে পড়ছে ক্লাস টেনে পরীক্ষার আগে যখন মা মারা যায়, বাবা ওকে একা রেখে কাজের জায়গায় ফিরে যায়, তখন এই মণীষের মা ওকে দুবেলা নিজের বাড়িতে জোর করে খাইয়ে দিত। এক থালায় ভাত খেয়েছে ওরা তিন বন্ধু কতদিন। মণীষের জামা পরে ও কলেজ করেছে একসময়। তারপর কি যে হল ....কর্পোরেট জগতে ঢুকে মানুষ বোধহয় আর মানুষ থাকে না। রোহন মনে করার চেষ্টা করে কবে ও শেষ মণীষের সঙ্গে কথা বলেছিল !! পাঁচ বছর আগে ? না সাত বছর বোধহয়। অনিকেত ইন্ডাস্ট্রিজের চাকরির ইন্টারভিউটা দু জনে এক সঙ্গে দিতে গেছিল। ঐ বোধহয় শেষ দেখা। মণীষের চাকরিটা হয়েছে শুনে খুশি হলেও মনে একটা খটকা লেগেছিল। ওর আ্যকাডেমিক রেজাল্ট মণীষের থেকে অন্তত একটু হলেও ওপরের দিকে ছিল। পরে শুনেছিল মনিষের এক মেসো ছিলেন ঐ কোম্পানিতে। 

সেই শুরু, পরের বছর গ্লোবালে কাজটা পেয়েছিল ও। আর যেদিন শুনেছিল গ্লোবাল অনিকেত ইন্ডাস্ট্রিকে টেকওভার করতে চলেছে, একটা আনন্দের রেশ বয়ে গেছিল সারাটা শরীরে। এরপর ছাটাইএর লিষ্টে মণীষের নামটা দেখে একটা চরম তৃপ্তি পেয়েছিল। মণীষের যা রেজাল্ট আর এক্সপিরিয়েন্স এই বাজারে ওর চাকরি পাওয়া যে বেশ কঠিন বুঝে মনে মনে হেসেছিল। চার বছর আগে ওদের কোম্পানিতে যখন কিছু লোক নেওয়া হচ্ছিল তিনজন সিলেক্টেড কেন্ডিডেটের বায়োডাটায় চোখ বোলাতে গিয়ে বেশ চমকে উঠেছিল। প্রথম নামটাই মণীষ গুপ্তা। একটা লাল গোল দাগ এঁঁকে ফাইলটা সিনিয়ারের ঘরে পাঠিয়েছিল ও। 

মিঃ বাজোরিয়ার ফোনটা এসেছিল দুপুরেই। ওঁর প্রশ্নের উত্তরে রোহন শুধু বলেছিল -''আই নো টা গাই ।'' বুদ্ধিমান মিঃ বাজোরিয়া আর প্রশ্ন করেননি। 


এর তিন মাস পর নিজের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিদেশী গাড়িতে বসে অফিস যাওয়ার পথে মগরপট্টার ব‍্যস্ত সিগন‍্যালে দেখেছিল মণীষকে বাসের জন‍্য ওয়েট করতে। আরেকবার একটা শপিং মলে ওকে দেখেছিল কোন ফুড সাপ্লাই চেনের হয়ে কাজ করতে। আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বেরিয়ে এসেছিল সেদিন রোহন। 


গত বছর প্রথম শুনেছিল গুপ্তা এন্ড সন্সের নাম, ছোট্ট কোম্পানি, প্রোপাইটার মণীষ গুপ্তা। ছোট ছোট দু টো টেন্ডার ছিনিয়ে নেওয়ার সুবাদে চোখে পড়েছিল। মিঃ বাজোরিয়া সেদিন টেন্ডার হাতছাড়া হওয়ার জন‍্য খুব নোংরা ভাষায় অপমান করেছিল রোহনকে। এতো মোটা মায়নার চাকরি বলেই সবটা হজম করেছিল রোহন। এবার এতবড় কোম্পানির টেন্ডার ভরেছে ঐ পুঁচকে সেদিনের কোম্পানি শুনেই বাজোরিয়া বলেছিল আর যেন কোন ভুল না হয়। খুব তাড়াতাড়ি নাকি মার্কেটে গুড উইল তৈরি করেছে গুপ্তা এন্ড সন্স। 


মাধবনের সাথে এর আগেও কাজ করেছে রোহন। টাকা নয় ওকে তুষ্ট করার উপায় জানে রোহন। আর এত টাকা মায়না দিয়ে সুন্দরী তোরণকে তো এজন‍্যই রাখা হয়েছে অফিসে। তোরণের কাছে মাধবনের থেকে কোটেশনটা বার করা খুব সহজ কাজ। মাঝ রাতের পর কয়েকটা নম্বর শুধু তোরণ পাঠিয়ে দেবে রোহনের হোয়াটসআ্যপে। তারপর ট‍্যান্ডার খোলার দিন হবে আসল ম‍্যাজিক। 

রিসর্টের ১০৮ নং ঘরে মাধবন চলে গেছে অনেক্ষণ। চতুর্থ রঙিন গ্লাসটায় চুমুক দিতে দিতে রোহন ফিরে যায় পুনেতে। বাড়ির পিছনে এমন বর্ষায় তৈরি হত ছোট্ট ঝোরা। টলটলে জলে খেলে বেড়াত ওরা তিনজন। সারাক্ষণ জলে ভিজে চোখ লাল হয়ে জ্বর আসত মাঝেমধ‍্যে। তবুও ঐ ছিল ওদের আনন্দ। কখনো সাইকেল নিয়ে চলে যেত দূরের পাহাড়ের ধারে। ঝর্ণার জলে ভিজে গরম ভুট্টায় কামড় দিয়ে কত বিকেল কেটে যেত। 

ওয়েটার এসে জানায় রেষ্টুরেন্ট বন্ধ হবে। ওকে কি ঘরে পৌঁছে দেবে। ঢুলুঢুলু চোখ খুলে রোহন দেখে বিনু, ওর বন্ধু। ওদের ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছেলে আজ এই রিসর্টের ওয়েটার, বাবা মারা যাওয়ায় ওর আজ এই অবস্থা। সে দিন যদি মা মরা ছেলেটাকে মণীষের মা জড়িয়ে না ধরত ওর ও হয়তো এই হাল হতো। বাবা তো তখন গুজরাটে কাজ করত। ও একা পুনেতে...। সব কেমন গুলিয়ে যায়, বিনুর কাধে ভর দিয়ে নিজের রুমে যেতে যেতে রোহন বলে -''তুই বিনু না !! আজ এখানে কেনো? ''

-''আপনার ভুল হচ্ছে সার। আমি এখানকার একজন সাধারণ কর্মচারী। ''

নেশাতুর চোখে তাকায় রোহন। বিনুর কপালে কাটা দাগটা জ্বলজ্বল করছে। ক্লাস এইটে থাকতে রোহনের সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ফেটে গেছিল অনেকটা। ঘরে ঢুকে ওকে বিছানায় শুইয়ে বিনু এসিটা ফুল করে দেয়। জড়ানো গলায় রোহন বলে -''একটু বস না বিনু, কত দিন গল্প করি না আমরা। ''

বেরিয়ে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় ওয়েটার, যার বুকে পেতলের ফলকে জ্বলজ্বল করছে একটা নাম, 'বিনয় কিরণ'।

-''বিনু.... ,আজ একটু থাক আমার কাছে। ''

ঘুরে দাঁড়ায় বিনয়। বলে -''সার, হোটেলের গেষ্টদের সাথে আমাদের কথাবার্তা ঐ অর্ডার নেওয়া ও সারভিস দেওয়ায় সীমাবদ্ধ। আজ এত রাত হয়েছে বলে আপনাকে ঘরে দিয়ে গেলাম। গুড নাইট সার। ''


-'' প্লিইইজ.... বিনয়, যাস না। একটু থাক আমার কাছে। ''

কি ভেবে ফিরে আসে বিনয়। 

-''কতদিন পর দেখা হল রে। কোথায় ছিলিস তুই?'' রোহন উঠে বসতে চায়। বিনয় কে চুপ করে থাকতে দেখে বলে -'' আমার সাথে কথা বললে তোর চাকরির ক্ষতি হবে, নারে? '' 

-'' আমার সাথে কথা বলে কি করবি !! '' 

-''কতদিন পর দেখা বল তো ?''

-''দেখা করতে চাইলে আগেও পারতিস। তোদের আসেপাশেই ছিলাম। বাদ দে । '' একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে বিনয়ের মুখে। 

-''হঠাৎ করে তোকে দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ল আজ। '' জড়ানো গলায় বলে রোহন।

-''মনে পড়ল !! কি লাভ মনে করে ? যে উচ্চতায় তুই থাকিস ওখান থেকে বোধহয় মাটির পৃথিবী দেখা যায় না। আমরা আছি মাটির কাছাকাছি। ''

-'' কারো সাথে যোগাযোগ আছে তোর, বন্ধুদের সাথে .....''

-''কি লাভ শুনে? তুই তো পুনেতে থেকেও বদলে গেছিস কত। যাক, চিনতে পারলি। আজই এই রিসর্টে আমার শেষ দিন। চাকরিটা ছেড়ে দিলাম আজ। স্বাধীন ব‍্যবসা করব বুঝলি। শুভ রাত্রি। ''

-''ব‍্যবসা !! ব‍্যবসার ক‍্যাপিটেল আছে তোর ? ব‍্যবসা করবি মানে ?''

-''ব‍্যবসা করতে ক‍্যাপিটেল নয়, মনের জোর আর সৎ সাহস লাগে রে। ঐ দুটোই আমার আছে। মণীষকে দেখে শিখেছি। ও সাহায‍্য করেছে বুঝলি। আসছি রে। একটা ছোট রিসর্ট খুলছি নিজের, লোনাওয়ালায়। আসিস কখনো। যদিও তোদের স্ট‍্যাণ্ডার্ডের মত নয়। খুব ছোট। " একটা কার্ড বার করে টেবিলে রাখে বিনয়। বেরিয়ে যায় দরজাটা টেনে।

ঘুমটা হঠাৎ করে পালিয়ে যায় যেন। নেশাটাও ছুটে গেছে। বারান্দায় এসে দাঁড়ায় রোহন। একটা ছোট্ট ঝর্ণা লাফিয়ে লাফিয়ে নিজের খেয়ালে নামছে নিচের দিকে। ইচ্ছা মত দিক বদল করে এই ঝর্ণাগুলো, স্বাধীন। কিন্তু মোটা মায়না আর প‍্যাকসের লোভে রোহন আটকে গেছে। এ মাকড়সার জাল থেকে যত বেরিয়ে আসতে চায় আরো জড়িয়ে যায় যেন। 


বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দেয় রোহনকে। বহুদিন পর বৃষ্টির ছোঁওয়া খুব ভালো লাগে। চোখ বুজে জলের স্নিগ্ধ পরশ কে ভেতর থেকে অনুভব করতে চায় রোহন। নেমে পড়ে বৃষ্টিস্নাত লনের সবুজ ঘাসে। মন প্রাণ জুড়িয়ে যায় ধীরে ধীরে।


সুন্দর ঝকঝকে সকাল, একটা মন ভালো করা দিন। চেক আউট করে গাড়িতে উঠে ফোন অন করতেই তোরণের মেসেজটা ঢোকে। ও ফিরে গেছে মাধবনের সঙ্গেই। এসেছে ওর পাঠানো ম‍্যাজিক নম্বর। আবার আরেকটা প্রমোশনের পাসওয়ার্ড। একটা মালয়েশিয়া ট্রিপ, তোরণের মতই নতুন কোনো সুন্দরী সঙ্গী। চোখের সামনে নেচে ওঠে সবটা। কোনো মণীষ গুপ্তা জানতে পারবে না কি ম‍্যাজিক হলো!!

বাইরের দিকে তাকিয়ে রোহন দেখে বেশ কয়েকটা নতুন ঝর্ণা জন্মেছে কালকের বৃষ্টিতে। বৃষ্টির জলে আসেপাশের গাছপালা গুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তোরণের মেসেজটা মুছে ফোনটা সুইচ অফ করে দেয় রোহন। খুব হাল্কা লাগে আজ। নিজেকেও ওই গাছদের মত সতেজ মনে হয়। 

পরের বাঁকেই দেখে একটা বাসের শেডে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিনু। গাড়িটা থামিয়ে দরজাটা খুলে ওকে উঠে আসতে বলে রোহন। বিনু ইতস্তত করে। ছোটবেলার মত একটা চেনা খিস্তি করে ওকে উঠতে বাধ‍্য করে রোহন। বলে -''চল, তোর রিসর্ট দেখতে যাবো আজ। ''

অবাক হয়ে তাকায় বিনয়। 

-''মনিষের ফোন নম্বর আছে তো, ওকেও ডেকে নেই চল। 

বেশ মস্তি হবে বহুদিন পর। ''

বিনয় বলে -''তোর নেশা এখনো কাটেনি মনে হয়।''

-''নেশা কেটেছে বলেই বলছি। আজ থেকে আমিও স্বাধীন। বাজরিয়াকে একটা গুছিয়ে মেল করতে হবে শুধু। আর কারো চাকর নই আমি। মনিষ আমি আর তুই আবার বৃষ্টিতে ভিজবো, ঝর্ণায় স্নান করবো, ফিরে যাবো সেই ছোট বেলায়। তোরা সাহস করে ব‍্যবসা করছিস যখন আমিও পারবো।" 

মনিষের নম্বরটা ডায়েল করে বিনু। ওর মুখেও হাসি ফুটে ওঠে ধীরে ধীরে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama