Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Tandra Majumder Nath

Fantasy

2.0  

Tandra Majumder Nath

Fantasy

ব্যাঙ রাজকুমার ও রাজকুমারী

ব্যাঙ রাজকুমার ও রাজকুমারী

12 mins
7.1K


-বাবলু, এই বাবলু ঘুমো বলছি।

-না মা ঘুম আসছে না। মোবাইলে এই গেম টা খেলি?

ছোট্ট বাবলু সে তার মা কে জানায়।

-না একদম না। দাও মোবাইল টা বলেই বাবলুর মা মোবাইলটা কেড়ে নেয়।

-তবে আমায় গল্প বলতে হবে। তবেই ঘুমাবো নাহলে ঘুমাবো না।

-আমি গল্প টল্প জানি না। ঘুমোতে বলেছি না।

বাবলু আর তার মায়ের কথা শুনে ঘরে প্রবেশ করলেন বাবলুর ঠাকুমা।

-কি হয়েছে বৌমা? বাবলু কে বকছো কেনো?

-কি করবো মা বলুন তো এই ছেলেকে নিয়ে? সারাক্ষণ শুধু মোবাইলে গেম খেলা। ঘুমোতে বললেই বিরক্ত করে।

-কি দাদুভাই ঘুম আসছে না?

-না, তুমি গল্প বলতে জানো?

-হ্যাঁ জানিতো।

-সত্যি..!

তবে, বলো আমাকে তাহলে ঘুমাবো

-আচ্ছা বলছি,তার আগে ভালো ছেলের মতো শুয়ে পড়ো।

-কি মজা কি মজা ঠাম্মু গল্প বলবে।

বাবলুর ঠাকুমা বাবলুর কপালে হাত বুলোতে বুলোতে গল্প শুরু করলেন।

গল্পের নাম হলো, ব্যাঙ রাজকুমার ও রাজকন্যা


অনেক দিন আগে কল্পতরু নামে এক দেশ ছিলো। সেই দেশের প্রজাদের কারো কোন দুঃখ কষ্ট ছিলো না।চারিদিকে সুন্দর বন আর পাহাড় পর্বতে ঘেরা, আছে এক সারাবছর জলে ভরা নদী, মাছ ভরা পুকুর, নানা ধরণের ফুল ফলের গাছ।আর সেই দেশের রাজা ছিলেন মহারাজা আদিত্য নারায়ণ। তিনি যেমন ভালো মানুষের জন্য দেবতা ছিলেন তেমনই খারাপ মানুষের জন্য তিনি ছিলেন ভয়ঙ্কর। সেজন্যই সে দেশে কোনদিন চুরি হোত না, কেউ কারো ক্ষতি করতো না। সে দেশের সমস্ত মানুষ তাকে খুবই শ্রদ্ধা করতো ও ভালোবাসতো। মহারাজা যেমন ছোটদের আদর ও স্নেহ করতেন ঠিক তেমনি বড়দেরও সন্মান করতেন। মহারাজা আদিত্য নারায়ণের রাজত্বে কেউ কোন ভাবেই কষ্টে দিনযাপন করেননা।যখনই মানুষ বিপদে পড়েন তখনই তিনি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।মহারাজার তিন রাণী ছিলো।বড় রাণীর নাম ছিলো পদ্মাবতী, মেজোরাণীর নাম ছিলো কলাবতী, আর ছোট রাণীর নাম ছিলো লীলাবতী।

বড় রাণী পদ্মাবতীর ছিলো দুই ছেলে। তাদের নাম পুন্ডরীক আর কোকনদ। আর ছোট রাণী লীলাবতীরও ছিলো দুই ছেলে অক্ষয় ও অঙ্গার।কিন্তু রাজার বড় দুঃখ ছিলো যে তার কোন কন্যা সন্তান ছিলো না। তিনি মেজো রাণী কে বিয়ে করেছিলেন কন্যা সন্তানের জন্য। কিন্তু মেজো রাণীর কোন সন্তান না হওয়ায় তিনি ছোট রাণী লীলাবতী কে বিবাহ করেন।

কিন্তু ছোট রাণিরও দুই ছেলে হয়।

রাজা সবসময় আক্ষেপ করেন তার যদি একটি মেয়ে থাকতো তাকে তিনি নয়নের মণি করে রাখতো।

একদিন রাজা শিকার করতে বনে যান, তখন তিনি বনে ঘোড়া ছুটিয়ে চলতে চলতে একটি ছোট্ট হরিণ শাবককে দেখতে পান। তিনি ওই হরিণ শাবকটিকে তির ধনুক দিয়ে মারবে বলে সেই হরিণ শাবকটির পেছনে ছুটতে থাকেন, কিন্তু তিনি কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলেন ওই শাবকটিকে একটি বাঘও তাড়া করেছে।

বাঘের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য হরিণ শাবকটি আপ্রাণ চেষ্টা করছে। রাজার এই দৃশ্য দেখে খুবই খারাপ লাগে। তখন তিনি করলেন কি ওই তির ধনুক দিয়ে হরিণ শাবকটি কে না মেরে বাঘের গায়ে মারলেন আর তক্ষুনি বাঘটি আর্তনাদ করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। প্রাণে বাঁচতেই ওই হরিণ শাবকটি তার মায়ের কাছে চলে যায়, আর সেই রাজার প্রাণ বাঁচানোর গল্পও তার মায়ের কাছে করে। তখন ওই হরিণ শাবকটির মা রাজার কাছে ছুটতে ছুটতে আসে, আর মহারাজাকে বনে দেখতে পেয়ে মহারাজের উদ্দেশ্যে বলে,

-মহারাজ, আপনি আমার প্রণাম গ্রহণ করুন।আমি হলাম এই হরিণ রাজ্যের রাণী।

আপনি হলেন এই দেশের মহারাজ। আপনাকে আমার এই হরিণ রাজ্যে স্বাগত।

মহারাজ হরিণিটিকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কি সুন্দর দেখতে সেই হরিণিটি। সত্যিই রাণীর মতই। আর কোন হরিণ যে এভাবে কথা বলতে পারে তা দেখে তিনি সত্যিই অবাক হয়ে যান।

-ওহ,এটা হরিণ রাজ্য? ক্ষমা করবেন মহারাণী আমি আসলে জানতাম না এটা আপনার রাজ্য। নইলে আমি আপনার অনুমতি ছাড়া এই রাজ্যে প্রবেশ করতাম না।

মহারাজা হাত জোড় করে বিনম্র ভাবে বলেন।

-আরে, না না মহারাজ এ কি বলছেন।

আমার রাজ্য তো শুধু এই এতো বড় বনের কিছুটা জায়গা। আর এই বন যেই দেশে সেই দেশের অধিপতি হলেন আপনি। আর আপনি এই দেশের যে কোন জায়গায় অবাধে যেতে পারেন।

-না, তবুও অন্য কারো রাজত্বে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা উচিত নয়। তার জন্য সত্যিই আমি দুঃখিত। আপনিও আমার নমস্কার গ্রহণ করুন, কারন আপনি হলেন হরিণ রাজ্যের মহারাণী।

-না মহারাজ, আপনি ভুল করে এই রাজ্যে প্রবেশ না করলে আমি যে আমার কন্যা কে আজ চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলতাম।

দুঃখ প্রকাশ সেই হরিণ রাণী বলে ওঠে।

-কেনো কি হয়েছে আপনার কন্যার?

-মহারাজ, আপনিই সেই মানুষ যিনি আমার কন্যাকে কিছুক্ষণ আগে ওই হিংস্র বাঘের হাত থেকে দেবদূতের মতো প্রাণে বাঁচিয়েছেন। তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মহারাজ বুঝতে পারলেন তিনি যেই শাবকটিকে কিছুক্ষণ আগে বাঁচিয়েছেন এটি সেই শাবকটিরই মা।

-এ কি করছেন মহারাণী?এ তো আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য মহারাণী। এই রাজ্যের সমস্ত প্রজা পশু পাখি সবার দায়িত্ব যে আমার ঘাড়ে।

-আপনি সত্যিই বড় ভালো মানুষ মহারাজ।ভগবান আপনার সব আশা পূরণ করুন।

-আর কবে পূরণ করবে ভগবান আমার মনের আশা জানি না।

মাথা নত করে দুঃখ প্রকাশ করে বলে ওঠেন মহারাজ।

-কেনো কি আপনার মনের আকাঙ্খা? মহারাজা? বলুন আমাকে, যদি আপনার কোন উপকারে আসতে পারি।

-আমার যে শুধু ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা আমার যেন একটা কন্যা সন্তান হয়। আমি তাকে আমার বুকে আগলে রাখবো।যাকে নাচে, গানে, বুদ্ধিতে, সব দিক থেকেই পারদর্শী করে তুলবো। কিন্তু........ হে ভগবান.......

একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন মহারাজ।

-আপনার এই ইচ্ছা নিশ্চই পূরণ হবে মহারাজ।

হরিণীর কথা মহারাজ অবাক হয়ে যান।

-কিন্তু কিভাবে?

-এই বনেই পুষ্পরাগ নামে একধরণের ফুল আছে। সেই ফুল অনেক বড় হয়, তার রঙ হয় টকটকে কমলা, এই ফুল একটি গাছে একটিই ফোটে। আর এই পুষ্পরাগ ফুলের এতো সুগন্ধ যে তার চার পাশটা সেই সুগন্ধেই ম..ম.. করে। সেই ফুলের মধু যদি আপনি আপনার রাণীকে খাওয়াতে পারেন তবেই নিশ্চই আপনার রাণীর কন্যা সন্তান হবে।

-কি বলছেন, এটাও কি হতে পারে?

অবাক হয়ে মহারাজ বলে ওঠেন।

-হ্যাঁ মহারাজ আমি জানি। আমি এই হরিণ রাজ্যের রাণী তাই আমি এই বনের প্রত্যেকটি ফুল ফল গাছ পাতা সব কিছুর গুনাগুণ জানি।

-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মহারাণী।

আমি আজই এক্ষুণি যাব সেই পুষ্পরাগ ফুল আনতে।

-নিশ্চই যাবেন, কিন্তু মহারাজ সাবধান। সেখানে গেলে হয়তো আপনি জীবিত নাও ফিরে আসতে পারেন।

ভীতস্বরে বলে ওঠে হরিণী টি।

-কিন্তু কেনো, কি আছে সেখানে?

হরিণীটি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলে ওঠে,

-মহারাজ, এই পুষ্পরাগ ফুল কিন্তু আপনি একবারই তুলতে পারবেন। এর পর যদি কোনদিন প্রয়োজন পরে সেই ফুলের তবে কিন্তু আপনি আর পারবেন না। আর সেখানে যাওয়া যে খুবই সহজ নয়।

-কেনো?

মহারাজ অবাক হয়ে যান।

-তবে শুনুন মহারাজ, এই পুষ্পরাগ ফুল হোলো এমন একটি ফুল, যেই ফুলের মধু খেলে যে কোন রোগ নিমেষেই সেড়ে যায়। কুৎসিত কন্যা রূপবতী হয়ে যায়। গরীবের ঘর ধন সম্পদে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মনের সব আকাঙ্খা পূরণ হয়ে যায় এই ফুলের মধু খেলে।

এত্তস ওই পুষ্পরাগ ফুলের গুণাগুণ জেনে মহারাজ খুবই হয়ে যান।

-এত্ত সব গুণ? সেই ফুলের...

-হ্যাঁ মহারাজ, আর এই ফুল তারাই তুলতে পারবে যারা জীবনে কোনদিন অন্যায় করেনি, কারো কোন ক্ষতি করেনি। সব সময় সবার ভালো করে এসেছেন। শুধু মাত্র এমন মানুষই তুলতে পারবে।

-আমি যাব। সেই ফুল নিয়ে আসবো। আমি কন্যা সন্তান লাভের জন্য যা করতে হত আমি তাই করবো।

-কিন্তু আমি কি পারবো সেই ফুল তুলতে?

-নিশ্চই মহারাজ, যে এই ফুল তোলার যোগ্য, শুধু মাত্র সেই এই ফুল দেখতে পারবে আর যে যোগ্য নয় সে দেখতে পাবে না।

-কি বলছেন মহারাণী...?

-হ্যাঁ মহারাজ, শুধুমাত্র প্রকৃত ভালো মানুষই এই ফুল নিজের চোখে দেখতে পারবে।

-আর যদি কোন খারাপ লোক সেখানে যায় তবে?

-তবে তার মৃত্যু অনিবার্য, আর ভালো মানুষও যদি একবারের বেশী দুবার সেখানে যায় তবেও তার মৃত্যু অনিবার্য।

-কেনো কি আছে এমন সেখানে....?

কৌতূহল ও উদবেগ নিয়ে প্রশ্ন করেন মহারাজ।

-মহারাজ সেখানে সেই পুষ্পরাগ ফুল গাছ কে ঘিরে আছে এক বিশালাকার সাপ। যে দূর থেকে দেখেই বুঝে যায় কোন মানুষ খারাপ আর কোন মানুষ ভালো।

যদি কোন খারাপ মানুষ সেখানে যায় তবে তাকে গোগ্রাসে গিলে ফেলে।

-কি......? কি সাংঘাতিক..।

-হ্যাঁ, মহারাজ আর সেই গাছের চারিদিকে আছে অসংখ্য কাঁটা, যা শরীর কে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়।

-আমি তবুও যাব সেখানে। যে করেই হোক আমি সেই ফুলের মধু সংগ্রহ করবো।

আপনি আমাকে পুষ্পরাগ ফুলের পথ বলে দিন।

-ঠিক আছে মহারাজ, আপনি এই উত্তর দিকের পথ ধরে সোজা চলে যান, কিছুদূর গিয়ে একটি সরোবর পড়বে তার তীর ধরে কিছুদূর গিয়েই দেখবেন, বেগুনী রঙের পাতাওয়ালা অনেক গাছ। সেখানে পৌছলেই আপনি সেই পুষ্পরাগ ফুলের সুগন্ধ পাবেন। তারপর হয়তো আপনাকে অনেক বাধার সন্মুখীন হতে হতে পারে। কারণ আজ পর্যন্ত যেই সেখানে গিয়েছে কেউ বেঁচে ফিরতে পারেননি,

-আমি তবুও সেখানে যাব, নমস্কার।

হরিণীটিও নমস্কার জানিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

এবার মহারাজ আদিত্য নারায়ণ ঘোড়া ছুটিয়ে যেতে থাকে সেই হরিণীর নির্দেশ করা পথ দিয়ে।

অনেকক্ষণ চলার পর তিনি একটি সরোবর দেখতে পান। সেই সরোবরের তীর দিয়ে কিছুদূর চলার পর মহারাজ দেখতে পান বেগুনি পাতাওয়ালা অনেক গাছ। কিছুদূর যেতেই তিনি অনুভব করেন সুন্দর এক সুবাস। এই বুঝি সেই পুষ্পরাগ ফুলের সুগন্ধ।

তিনি ঘোড়াটিকে একটি গাছের পাশে দাড় করিয়ে তিনি বেগুনী পাতাওয়ালা গাছের বনের ভেতরে প্রবেশ করেন।

কিন্তু একি,

প্রত্যেকটি গাছেই এ যে বড় বড় কাঁটা, কিন্তু কি আশ্চর্য কোন কাঁটাই রাজার শরীর ছুতে পারলো না। সেই সমস্ত কাঁটাওয়ালা বন ভেদ করে সেই পুষ্পরাগ ফুলের সুবাস অনুভব করে যেতে থাকে। মহারজ আরো বনের গভীরে প্রবেশ করতে থাকেন। তারপর একসময় তিনি কিছুটা দূর থেকেই লক্ষ্য করেন পুষ্পরাগ ফুল। সে কি বিশালাকার ফুল, টকটকে কমলা রঙের সে ফুল। কিন্তু সেই ফুল গাছের দিকে পা বাড়াতেই মহারাজ কিছুর সাথে হোচট খেয়ে পড়ে যান।

মহারাজ নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাড়ান।

-আপনার এতো বড়ো সাহস আপনি আমাকে ডিঙিয়ে যাবেন পুষ্পরাগ ফুল আনতে?

নেপথ্যে একটি গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পান মহারাজ।

কিন্তু চারিদিকে তাকিয়েও তিনি কেউ কেই দেখতে পান না।

আবার তিনি পেছন ফিরে হাটতেই সেই গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনতে পান।

-কি হোলো? আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছেন যে।

এবারে মহারাজ চারিদিকে তাকিয়ে কিছুই দেখতে না পেয়ে নীচে তাকান।

তখন তিনি লক্ষ্য করেন যে,

একটি বেগুনী রঙের ব্যাঙ। ব্যাঙটি খুব ছোট নয় বেশ বড়োই। তবুও কেনো যে মহারাজের চোখে পড়েনি মহারাজ বুঝতে পারেন না। হয়তো বেগুনী রঙের গাছের পাতা গুলো নীচে পড়ায় তার রঙের সাথে মিশে যাওয়ায় বুঝতে পারেননি।

-হ্যাঁ, আমি। ব্যাঙ রাজকুমার। আমি এই ব্যাঙ রাজ্যের রাজকুমার।

মহারাজ একটি ব্যাঙকে কথা বলতে দেখে সত্যিই হতভম্ব হয়ে যান। ব্যাঙও কথা বলতে পারে এও তার জানা ছিলো না।

-ওহ, দুঃখিত রাজকুমার। আমি আপনার অনুমতি না নিয়েই আপনার রাজ্যে ঢুকে পড়েছি। আসলে.....

-বুঝেছি বুঝেছি, আপনি পুষ্পরাগ ফুলের সন্ধানে এসেছেন।

-হ্যাঁ রাজকুমার ঠিক ধরেছেন।

-কিন্তু আপনি কে?

-আজ্ঞে, রাজকুমার আমি এই দেশের রাজা আদিত্য নারায়ণ.....

-ওহ, মহারাজ আপনি......?

ব্যাঙটি উচ্চস্বরে বলে ওঠেন।, ক্ষমা করে দিন মহারাজ আমি যদি আপনার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করে থাকি।

কি সৌভাগ্য আমার আপনি আমার রাজ্যে এসেছেন।

-না না ঠিক আছে। আমি দুঃখিত আমি আপনার অনুমতি না নিয়েই আপনার রাজ্যে প্রবেশ করেছি।

-ছিঃ ছিঃ কি বলছেন মহারাজ বলুন আমি আপনার জন্য কি করতে পারি।

মহারাজ বিনম্র ভাবে জানায় যে,

আমার যে পুষ্পরাগ ফুলের ভীষণ দরকার।

এবং মহারাজ তার এই ফুলের প্রয়োজনের কারণও জানায় সেই ব্যাঙ রাজকুমারকে।

সব শুনে ব্যাঙ রাজকুমার বলে,

-সবই বুঝলাম মহারাজ,কিন্তু......

-কিন্তু কি রাজ কুমার...?

-ওই পুষ্পরাগ ফুল পেতে হলে যে আপনাকে একটি শর্ত পালন করতে হবে।

-কি শর্ত...?

-ওই ফুল পেতে হলে, আপনাকে আপনার সব থেকে প্রিয় জিনিসটি আমায় দিতে হবে।

-কি...? কি বলছো রাজকুমার?

-হ্যাঁ, মহারাজ আপনি যদি ওই পুষ্পরাগ ফুল পেতে চান তবে আপনাকে আপনার সবথেকে প্রিয় জিনিস আমাকে দিতে হবে।

-কি চাই বলো, আমি সব দিতে রাজি।

আমার অর্ধেক সাম্রাজ্য তোমায় দিয়ে দেবো।

-কিন্তু তা দিয়ে আমি কি করবো?

-তবে একশত ঘোড়া আর একশত হাতি দিয়ে দেবো।

-এসবের কোন কাজ নেই আমার।

-তবে একশত কামধেনু দিয়ে দেবো।

-সেটার কোন দাম নেই আমার কাছে।

-তবে তোমায় ধন সম্পত্তি দিয়ে ভড়িয়ে দেবো।

-মহারাজ এসবই আমার কাছে মূল্যহীন।

-তবে কি চাই?

-মহারাজ, আপনার সব থেকে প্রিয় জিনিস টি চাই। এগুলো আপনার প্রিয় নয়। আপনার প্রিয় জিনিস হলে সেটা আপনি এতো সহজে দিয়ে দিতেন না। এমন কিছু দিতে হবে যা আপনি সহজেই দিতে চাইবেন না।

-কি এমন জিনিস?

-আপনি যে কারণে এতোদূর এতো কষ্ট পেড়িয়ে এখানে এসেছেন।আপনার কন্যা ।

মহারাজ অবাক হয়ে বলে ওঠেন,

-আমার কন্যা....? সে তো জন্মায়নি।

-তা ঠিক, কিন্তু আপনি যদি আপনার কন্যার জন্ম হবার পরে বিবাহ যোগ্যা হবার পর তার সাথে আমার বিবাহ দিতে হবে। এই হোলো আমার শর্ত।

মহারাজ ব্যাঙ রাজকুমারের শর্ত শুনে ভীষণ রেগে গেলেন এবং উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন,

কক্ষনো না, আমি আমার কন্যার বিবাহ তোমার সাথে কক্ষনো দেবো না। তার বিবাহ যোগ্য পাত্রেই হবে।

-তবে আর কি মহারাজ। এই ফুল আপনি এখান থেকে নিয়েও যেতে পারবেন না। ওই বিশালাকার মাংস খেকো সাপ আপনাকে গিলে ফেলবে।

-সে যাই হোক আমি একাই ওই সাপ কে ধরাশায়ী করে পুষ্পরাগ ফুল উদ্ধার করবো।

কারো সহোযোগিতার দরকার নেই, বলেই মহারাজ নিজের তরোয়াল টা বেড় করে সেই ফুলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ান।

ফুলের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই সেই বিশালাকার বড় সাপ টি মহারাজার দিকে ধেয়ে আসে, বড় বড় লাল চোখ, বড় বড় দাঁত সেই সাপের।

মহারাজ আর সেই সাপের অনেকক্ষণ ধরে যুদ্ধ চলে, কিন্তু মহারাজের ওই তরোয়াল সাপকে কিছুতেই ধরাশায়ী করতে পারে না। মহারাজ যখন আর পারছিলেন না তখন সাপটি বিশাল হা করে মহারাজ কে গেলার জন্য ধেয়ে আসতে থাকে,

তখন ওই ব্যাঙ রাজকুমার চিৎকার করে বলতে থাকে বলুন, আপনি আমার শর্তে রাজি কি না, বলুন, তবে আমি আপনাকে বাঁচাতে পারবো।

মহারাজ আর কোন উপায় না দেখে বলে ওঠেন,

হ্যাঁ আমি তোমার শর্তে রাজি। তোমার সাথেই আমার বিবাহ যোগ্যা কন্যার বিবাহ হবে।

আমাকে বাঁচাও।

তক্ষুনি সেই ব্যাঙ রাজকুমার নিমেষের মধ্যেই বিশাল বড় হয়ে যায়, তখন সেই সাপ মহারাজ কে ছেড়ে সেই ব্যাঙের দিকে নজর পড়ে আর তক্ষুনি ব্যাঙ রাজকুমার চিৎকার করে বলে ওঠে,

মহারাজ ওই বিশাল সাপটি যখনি আমার দিকে ধেয়ে আসবে তখনি আপনি আপনার তরোয়াল দিয়ে ওই পুষ্পরাগ ফুলটি কেটে নিয়ে চলে যান। তারপর যখন আপনার কন্যা বিবাহ যোগ্যা হয়ে যাবে তখন আপনি ঠিক সামনের সরোবরের তীরে পালকি পাঠিয়ে দেবেন। আমি হাজির হয়ে যাব আপনার রাজবাড়িতে।

ব্যাঙ রাজকুমার লাফাতে লাফাতে চলে যায় আর তার দিকে ধেয়ে যায় সেই সাপটি।

তারপর সুযোগ বুঝে মহারাজও সেই পুষ্পরাগ ফুল সংগ্রহ করে নেন।

এরপর তিনি সেই ফুল নিয়ে দেন মেজোরানী কে।

মেজোরাণী সেই ফুলের মধু খাওয়ার পর সত্যি সত্যি কয়েক মাস পর এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

কল্পতরু দেশের একমাত্র রাজকুমারী। যার নাম রাখা হয় শ্রুতিলেখা।

রাজকুমারী শ্রুতিলেখা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছিলো। রাজকুমারী কে পেয়ে তিন রাণীও খুশি, মহারাজাও খুশি, চার রাজকুমারও খুশী তাদের ছোট বোন কে পেয়ে। আর প্রজারাও খুশি কারণ মহারাজার জীবনের বড় আশা যে পূরণ হয়েছে তাই।

রাজকুমারী শ্রুতিলেখা যেমন রূপবতী তেমনই গুণবতীও বটে। লম্বা ও মেঘ বরণ কেশ,গোলাপি ঠোঁট, পটলচেরা চোখ, দুধে আলতা গায়ের রঙ, হাসলে যেন মুক্তো ঝরে, শ্রুতিলেখা গাইতে জানে , নাচতে জানে, বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে পারে।

শ্রুতিলেখা যতই বড় হয়ে উঠছিলো ততোই চিন্তার ভাজ পড়ছিল রাজার কপালে। তিনি মনে মনে অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। কারণ তিনি যে মোটেই চাননা তার একমাত্র কন্যার বিবাহ এক ব্যাঙের সাথে দিতে।

নানান জায়গার থেকে সব রাজা,মন্ত্রী,রাজকুমার আসছে শ্রুতিলেখাকে বিবাহের জন্য। কিন্তু মহারাজ কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না।

সবাই কে এই বলে বোঝান যে, শ্রুতিলেখার বিবাহ যোগ্য পাত্রেই দেওয়া হবে।

মহারাণীরাও বুঝতে পারে না মহারাজ কেনো এতো ভালো ভালো সম্বন্ধতেও রাজি হচ্ছেন না। কারণ রাণী রা তো এসব ব্যপার জানতেন না।

এরকম অনেক অনেক সুযোগ্য পাত্রদের মহারাজ ফিরিয়ে দিয়েছেন।

এরপর সত্যি সত্যিই একদিন শ্রুতিলেখা বিবাহ্যোগ্যা হয়ে ওঠেন। মহারাজ মহারাণীদের রাজকুমারদের ও সমস্ত প্রজাদের জানিয়ে দেন যে, তিনি শ্রুতিলেখার জন্য যোগ্য পাত্রের সন্ধান পেয়ে গেছেন।

তাকে সরোবর তীরে পালকি পাঠানো হয়েছে, সেই হবে আমার একমাত্র রাজকন্যার জীবনসঙ্গী।

শ্রুতিলেখার মতো এতো সুন্দর গুনবতী রূপবতী রাজকন্যার জীবন সঙ্গী কে দেখবার জন্য সবাই রাজবাড়ীর ফটকে অপেক্ষা করে, মহারাণীরাও বরণডালা নিয়ে অপেক্ষা করছে তাদের রাজ্যের একমাত্র জামাই কে বরণ করার জন্য।

কিন্তু মহারাজা এদিকে চিন্তা করতে করতে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন প্রায়।

বেয়ারারা পালকি নিয়ে এসে রাজবাড়ীর ফটকের সামনে এসে নামায়। সবাই উৎসুক নজরে তাকিয়ে থাকে পালকির দিকে।

তারপর কিছুক্ষণ পর একটা ব্যাঙ পালকি থেকে লাফ দিতেই সবাই চিৎকার করে ওঠে।

মহারাণীরা বলে ওঠেন,

-এ কি রাজকুমার কোথায়?

এ যে একটা ব্যাঙ।

ব্যাঙ রাজকুমার বলে ওঠে,

-আমি আপনাদের জামাই, আপনারা বরণ করুন।

সবাই কেমন ছিঃ ছিঃ করছিলো। মহারাজের এ কেমন বিচার, একমাত্র রাজকন্যার জন্য আর পাত্র পাওয়া গেলো না, শেষে এক ব্যাঙ....!

মহারাজা বুঝতে পারছিলেন কেউ এটা মেনে নেবে না, আর তিনিও কথার খেলাপ করতে পারবেন না।

শেষে তিনি সক্কল কে জানিয়ে দিলেন,

কেউ যেন আর শ্রুতিলেখার জীবন সঙ্গীর বিষয়ে কথা না বলে। ব্যাঙ নয় সেও একটি রাজকুমার। আর এই রাজ্যের জামাই।

মহারাজা আজ পর্যন্ত কোন ভুল কাজ করেননি আর সবাই মহারাজ কে মান্য করে তাই আর কেউ কোন টু শব্দটি করেনি।

ছাদনাতলায় যথারীতি শ্রুতিলেখা সুন্দর সেজে গিয়ে বসে। আর ব্যাঙ রাজকুমারও লাফ দিয়ে গিয়ে বসে।

তাদের বিয়ে হয় ধুমধাম করে। পুরোহিত মশায় যখন বললেন, আজ থেকে রাজকন্যা শ্রুতিলেখা ও ব্যাঙ রাজকুমার স্বামী ও স্ত্রী।

তক্ষুনি এক আলোর ঝলকানিতে চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠলো। রঙ বেরঙের আলোয় চারিদিক ভরে উঠলো। আলো নিভতেই সবাই দেখতে পেলো শ্রুতিলেখার পাশে সেই ব্যাঙটি আর নেই। শ্রুতিলেখার সাথে গাটছড়া বেধে বসে আছে এক অপরূপ সুন্দর রাজকুমার।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।

এবারে ব্যাঙ রাজকুমার সবার কৌতূহল মেটাতে বলে ওঠে,

নমস্কার, আমি আসলে পবিত্রগড়ের রাজা শারদ্বতের একমাত্র পুত্র সৌপায়ন। আমি ব্যাঙ নই, আমি এক মায়াবী ডাইনির অভিশাপে ব্যাঙ হয়েছিলাম। সে বলেছিল যদি কখনো কোন রূপবতী গুণবতী রাজকন্যার সাথে আমার বিবাহ হয় তবেই আমার অভিশাপ মুক্ত। আর আজ সেই শাপমোচন হোলো।

এই দেখে তো মহারাজ বেজায় খুশি।।

সক্কলে খুবই খুশি হয়।

তারপর.....?.

তারপর সৌপায়ন শ্রুতিলেখা কে নিয়ে আর নানান উপহার নিয়ে তার রাজ্য পবিত্রগড়ে চলে যায় ও সুখে শান্তিতে থাকতে শুরু করে।।

-দাদুভাই, কেমন লাগলো গল্প টা।

বাবলু কোন উত্তর করেনা।

বাবলু উত্তর দেবে কি সে তো তখন ঘুমে কাঁদা।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy