Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sheli Bhattacherjee

Drama

2.5  

Sheli Bhattacherjee

Drama

নিয়ম বহির্ভূত

নিয়ম বহির্ভূত

9 mins
2.2K


রাতে ঘুমই আসছে না আজ বর্ণার। এতোবছর এতোগুলো কেস লড়েছে ও, কত কেসের কালি মুছে সাদা করেছে, আবার কত আপাত দৃষ্টির সাদা কেসকে তার প্রকৃত কালিমার রূপে প্রকাশ করেছে, কিন্তু কখনো এতোটা অস্থিরতা অনুভব করেনি। কোথাও যেন এই কেসটার সাথে ওর জীবনটা অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। আর কাল হল গিয়ে এই কেসের ফাইনাল শুনানির দিন। গত দেড়বছরে কেসটার বিভিন্ন যুক্তিতর্কের প্যাঁচে নিজের অজান্তেই নিজের অস্তিত্বকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছিল ও।


অত:পর ভেতরের অস্থিরতাগুলোকে অবজ্ঞা করে বিছানা থেকে উঠে বসে ঢকঢক করে কিছুটা জল খেল বর্ণা। দেওয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। আবার বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকল সে। এমনসময় হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল প্রায় আঠেরো মাস আগের রাতটার কথা। অতঃপর কেসের শুরুর সেই সময়টার চিত্র ধীরে ধীরে নতুন করে জেগে উঠতে লাগল ওর স্মৃতিপটে। সেদিন এক বন্ধুর বাড়িতে খ্রীসমাস পার্টি মানিয়ে ফিরতে বেশ লেট হয়ে গিয়েছিল ওর। বাড়িতে ফিরে গাড়িটা গ্যারেজ করতে গিয়েই চমকে ওঠেছিল ও। হঠাৎই ওর গাড়ির ডিকি থেকে একটা অল্পবয়সী মেয়ে বেড়িয়ে এসে দুহাত জোর করে কাঁদতে লাগল ওর সামনে। বর্ণাতো অতো রাতে প্রায় ভূত দেখার মতো চমকে উঠল তখন। কিছুটা অবাক হয়ে, আর কিছুটা বিরক্তির সাথেই জিজ্ঞেস করল ও 

--কে আপনি? আমার গাড়িতে উঠলেন কী করে?


মেয়েটা তখন আচমকা মাটিতে নিচু হয়ে বসে পড়ে দুহাত দিয়ে বর্ণার পাদুটো জাপটে জড়িয়ে ধরে। ওর কান্নার রোল উঠতে থাকে তীব্রতরবভাবে। বর্ণা কোনোরকমে নিজের পাদুটো ছাড়িয়ে ওকে ধরে দাঁড় করায়। আর বিরক্তিসহ জিজ্ঞেস করে 

--আহা, কী কিরছেনটা কী, কী হয়েছে সেটা তো বলবেন!

এবার কান্নাভেজা গলায় মুখ খোলে মেয়েটি।

-- আমার নাম রুবি। আমি একটা চরম অসহায় মেয়ে দিদি। আপনি আমায় বাঁচান।

এটুকু শুনে বর্ণার মেয়েটাকে ইজ্জত বাঁচাতে আসা কোনো অসহায়া বলেই মনে হয় প্রথমে। কিন্তু মেয়েটির তারপরের কথাগুলো শুনে শক্ত কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বর্ণা। মেয়েটি বলতে থাকে

--বিশ্বাস করুন আমি আমার স্বামীকে খুন করিনি। কী করে যে কী হয়েছে, তাও জানিনা। কিন্তু পুলিশ আমাকেই সন্দেহ করছে। আর শুধু পুলিশ কেন, পাড়াপড়শি আত্মীয়স্বজন সবাই তাই মনে করছে। কেউ কেউ আমার চরিত্রে কালি ছড়াচ্ছে।

কথাগুলো শুনে বর্ণার বুকটা ধরাস করে ওঠে। একটা খুনি এতো রাতে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এ বাড়িতেওতো আর কেউ থাকে না। ও একাই থাকে। এখন যদি ওর উপর কিছু করে টরে বসে মেয়েটা। এতোদিন কোর্টে বেশ কিছু খুনি দেখেছে বটে বর্ণা, কিন্তু নিজে কখনো খুনখারাপির কেস নেয়নি। আজ ওর কপালে এ কোন খুনি জুটল কে জানে। মেয়েটা বলতেই থাকে 

-- আপনার কথা আমাকে একজন বলেছেন বলেই ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম, আপনার সঙ্গে দেখা করব বলে। সে আমার এক বন্ধুর পরিচিত। আপনারও পরিচিত। কিন্তু তার নাম আপনাকে বলতে বারন করেছেন তিনি। বলেছেন, আপনিই নাকি এ অবস্থায় আমায় সঠিক সাহায্য করতে পারবেন। আমায় বুঝবেন। তাইতো সেখান থেকেই আপনার গাড়িতে ...

কে আবার বর্ণার নাম করে এই মেয়েটাকে এসব বলল, আর এই খুনের কেসে এমন কী আছে যে এই আইনের যুদ্ধটা বর্ণাই লড়তে পারবে। ভেবে অবাক লাগে বর্ণার। এদিকে কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটা প্রায় অজ্ঞান হয়ে যায়। কিছু উপায়ন্তর না দেখে বর্ণা ওকে একরকম বাধ্য হয়েই ঘরে নিয়ে তোলে তখন। কেন জানি বর্ণারও সেদিন মেয়েটাকে দেখে কোনোভাবে খুনি বলে মনে হয় নি। হাজার হোক উকিলের তো একটা অভিজ্ঞ নজর আছে। তারপর তো সেই মেয়ে দুদিন টানা ধুম জ্বরে ভুল বকতে থাকল 'আমি কিচ্ছু করিনি'। বর্ণা তার সেবাও করল। তারপর আস্তে আস্তে রুবি একটু সেরে ওঠার সাথেই বর্ণা জানল কেসটার ইতিহাস।


রুবির বাড়ি ছিল অশোকনগরের এক মফস্বল এলাকায়। দিন পনেরো আগে বাড়ি থেকে পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়ে হয় ওর। পাত্রটির নাম সায়ক দাস। পেশায় হাইস্কুল টিচার। তাকেই দুদিন আগে সকালে বারাসাতের একটি নির্জন এলাকার পুকুর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তারও আগের দুদিন ধরে সায়ক নিখোঁজ ছিল। ব্যাপারখানা যে এমনি জলে ডুবে মৃত্যু নয়, পরিকপ্লিত খুন ... তার কারন, সায়কের মাথার পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুতর আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। যদিও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে আঘাতের পরে জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছিল সায়কের। এই খুনের নেপথ্যে প্রথমেই উঠে আসে রুবির নাম। তার কারন ওর নাকি এই বিয়েতে ঘোরতর আপত্তি ছিল শুরু থেকেই। আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীদের মতে, বিয়ের পরেও ওদের স্বামীস্ত্রীয়ের মধ্যে একেবারেই কোনো নিয়মমাফিক মাখোমাখো সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। আর পুলিশ জানায় মৃত্যুর দিনে ওর মোবাইল থেকে সায়কের ফোনে ওই জায়গায় আসার জন্য ম্যাসেজ গিয়েছিল। এমনকি ওর ফোন লোকেশনও ওই জায়গাটাই শো করেছিল সেদিন। রুবি প্রথমে নিজেকে নির্দোষী প্রমাণ করতে বলে ও পড়াশুনোতে ভালো ছিল। তাই ওর ইচ্ছা ছিল আরো পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ও মোটেই বিয়ের পিড়িতে বসতে রাজি ছিল না। যেখানে ওর কলেজ ফাইনাল ছিল সামনেই। আর সায়কের মোবাইলে ম্যাসেজ ও পাঠায়নি। তবে ওই লোকেশনে ও দুপুরের দিকে একবার গিয়েছিল ওর কলেজ বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য। বারসাত গর্ভমেন্ট কলেজ থেকে মিনিট বারোর হাঁটাপথে ছিল জায়গাটা। এই জায়গাটাতে ও আগেও বন্ধুদের সাথে এসেছিল। সেখানেই কেউ ওর ফোন ব্যবহার করে হয়তো ওর স্বামীকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল। কেসটার সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মুখে ভিন্ন ভিন্ন মতামত ও ইনফরমেশন জানার পর বর্ণার মনে হয়েছিল, রুবির হয়তো কোনো প্রেমিক ছিল। তার সাথে দেখা করতেই ও ওখানে গিয়েছিল সেদিন। যেটা ও বন্ধু বলে চেপে যাচ্ছে। হয়তো এসব ব্যাপার বাড়ির লোকও টের পেয়ে গিয়েছিল। আর রুবির পছন্দ করা ছেলেটিকে বাড়ির লোকের অপছন্দ ছিল বলেই চটজলদি ওর বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু মোবাইলের ম্যাসেজ সেন্ডিং ব্যাপারের খটকাটা বারবার বর্ণার মাথায় সন্দেহ দাঁড় করাচ্ছিল রুবির প্রতি। তবে কি রুবির প্রেমিক পাঠিয়েছিল সেটা? রুবিরও কি প্রচ্ছন্ন মদত ছিল তাতে?


তবে বর্ণা আইনের রক্ষক। আইনবিরোধী কোনোকাজকেই সে সমর্থন করেনি শুরুর থেকে। তাই রুবি ওর বাড়িতে আসার পরেরদিনই সে স্থানীয় থানায় জানিয়ে এসেছিল রুবির কথা। তারপর শুরু হয়েছিল কেস, থানা পুলিশ, তদন্ত, বুদ্ধি আর যুক্তির প্যাঁচ। সেসময় রুবি কখনো জেল কাস্টেডিতে, আর কখনো ছাড়া পেলে বর্ণার কাছে এসে থাকতো। বর্ণাও আপত্তি করত না। ও বুঝত রুবি কোথাও একটা ওকে ভীষণ বিশ্বাস করে, ভরসা করে। তাছাড়া এই কেসের মধ্যে প্রবেশ করে ততদিনে বর্ণা সমাজের বুকে গড়ে ওঠা আরেক নিয়ম বহির্ভূত ভালোবাসার হদিশ পেয়ে গিয়েছিল। জানতে পেরেছিল, বর্ণার বিয়ে না করার পেছনে ছিল এক অসামাজিক কারন। যে কারনের সূত্র ছিল ওর প্রেমিকা অরুণার সাথে ওর প্রণয়। ছোটো থেকেই এক স্কুল, এক কলেজে পড়ার সুবাদে ওদের এই নিয়ম বহির্ভূত ভালোবাসাটা পাগলের মতো তার ঘনত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল। রুবির বাড়ির লোকেরা যখন তা প্রথম টের পেয়েছিল, তখন ওরা কলেজ শেষের পথে। আর সেদিন থেকেই রুবিকে ঘরে বন্দী করে রেখে পনেরো দিনের মধ্যে পাত্র ঠিক করে ওরা রুবির বিয়ে দিয়ে দেয়। পরে রুবি জানায়, আমি সায়কের সাথে বিয়ের আগে একবার দেখা করার সুযোগ পেলেই আমার সবটা খুলে বলতাম। তাতে সে আমায় যা বোঝার বুঝতো। অন্তত এ বিয়েটা তো করত না। 


সমাজের বুকে আরেকটা কালিমালিপ্ত অসামাজিক প্রেমের আবিষ্কার বর্ণাকে সেদিন অজান্তেই টেনেহিচড়ে নিয়ে গিয়েছিল আট বছর পেছনে। সেই এক যুদ্ধ। সমাজের হাতে নিয়মস্রোতের ঢাল তরোয়াল আর বিপরীতপক্ষে দুটো মানুষের হৃদয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রেমের ফল্গুধারার অসহায়তা। এক্ষেত্রেও আবার সামাজিক চিরাচরিত নিয়মের শক্তিশালী জয় হল। কিন্তু এই যুদ্ধটা কি কারো আদৌ ইচ্ছাকৃত? নাকি এই যুদ্ধটা শুধু রুবির বা অরুণার? কেসটার সাথে নিজেকে তাল মেলাতে গিয়ে অতীতের খাদে অজান্তেই ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকে বর্ণা। একদিন যখন ও নিজের যুক্তিগুলোকে দাঁড় করাতে গিয়ে একের পর এক জার্নাল ঘাটতো, সায়েন্সের ম্যাগাজিন পড়ত। তখন কতকিছু জেনেছিল সে এই 'লেসবো' শব্দটাকে ঘিরে। খ্রীস্টপূর্ব ছয় শতকের গ্রীসে লেসবো নামে এক দ্বীপ ছিল। সেই দ্বীপের নারীদের সৌন্দর্য নিয়ে স্যাপো নামক এক কবি কাব্য রচনা করেছিলেন। এই 'লেসবো' থেকেই লেসবিয়ান শব্দের উৎপত্তি হয়েছিল। যা সমকামীতার একটি ভাগ। যেখানে প্রনয়কারী উভয়েই হয় নারী। অপরভাগে সমকামীতায় লিপ্ত পুরুষদের বলা হয় গে। বর্ণা জানতে পারে, এগুলো মানব সমাজের কোনো নতুন অধ্যায়যুক্ত পর্ব নয়। বরং প্রাচীন গ্রীসের বিবিধ বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, এমনকি বহু রোমান নায়কদেরকেও সমকামীতার প্রতি আগ্রহী দেখা গিয়েছিল। ইতিহাস তার সাক্ষী আছে। আর তাছাড়াও ভারত সহ সারা বিশ্বব্যাপী বিবিধ সংস্কৃতি ও শিল্পকলায় এর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। বহুক্ষেত্রে এই সমকামীতা আবার পারিপার্শ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতেও জন্ম নিত শরীর আর মনের মিলিত চাহিদায়। এসব তথ্য ঘাটতে গিয়ে অবাক হয়ে তখন জেনেছিল বর্ণা, অতীত ভারতের ছোটো ছোটো বিধবা মেয়েদের মধ্যে গড়ে ওঠা সেই সমকামীতার কাহিনীগুলোকে। জীব বিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিল তার বায়োলজিকাল এক্সুবগালেন্স বইতে জানিয়েছেন যে হোমো সেক্সুয়ালিটি বা সমকামীতা জীব জগতে প্রায় পাঁচশোরও বেশি প্রজাতিতে আছে। এই বিষয়ে মানুষের ক্ষেত্রে যদিও কোনো স্পেসিফিক জিনতত্ত্ব প্রমাণিত হয়ে ওঠে নি। তবে কি এই তথাকথিত অসামাজিক অনুভূতির জন্ম শুধুমাত্র হৃদয়কেন্দ্রিক? যেমন হেটেরোজেনিক সামাজিক ভালোবাসার বীজ হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয়, আর তারপর সেই চাহিদার বৃক্ষ মন ছাড়িয়ে বায়োলজিকাল নিয়মে শরীরে ডালপালা ছড়ায়, এই সম্পর্কও কি সেরকমই কিছু?


সঠিক উত্তর সেদিনও অজানা ছিল বর্ণার। আজও অজানা। কোথাও যেন রুবির হৃদয় আরশিতে ওর মধ্যে গড়ে ওঠা সেদিনের সেই সমাজকথিত নিষ্ফল ভালোবাসার প্রতিবিম্বের চিত্র দেখতে পায় ও। এ ভালোবাসা সমাজের চোখে বন্ধ্যা। কালিমাময়। সৃষ্টির প্রতিকূলে বয়ে চলা এক অসভ্য স্রোতমাত্র। কিন্তু সমাজের চিরাচরিত চিন্তার কালি যে স্বচ্ছতার ভাবনাকে অস্বচ্ছ করে তোলে। বাস্তবে যে বা যারা এই অনুভূতির শিকার হয়, তাদের যে ইচ্ছাধীন নয় সেটা। স্বতঃস্ফূর্ত এই আবেগের জোয়ারে ভাসতে গিয়ে যখন তারা নিজেরা টের পায় যে, তারা সমাজের নিয়ম বহির্ভূত ভালোবাসার মধ্যে প্রবেশ করে ফেলেছে, তখন একটা রোখ চেপে যায় তাকে জয়ী করার জন্য। মনে হয়, যে খুশি যেমন খুশি চরিত্রে কালি ছড়াক, তবু এটাই জীনের ভালো থাকার ঠিকানা। যেমনটি স্বাভাবিক প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রে হয় আর কী! তারা যেমন তাদের ভালোবাসাকে সফল করার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে ভয় পায় না। তেমনই একটা রোখ জন্ম নিয়েছিল রুবির প্রেমিকা অরুণার মধ্যেও। সেই রোখের বশেই ও খুন করে ফেলেছিল সেদিন সায়ককে। যখন সেদিন সকালে রুবি ওর সাথে দেখা করে ওদের সম্পর্কের বাস্তবায়নের পক্ষে নেতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিল, তখন রুবির ফোনটার থেকেই ও ম্যাসেজ করেছিল বর্ণার বর সায়ককে। রুবিকে বলেছিল, ওরা দুজনে মিলে সায়ককে বুঝিয়ে বলবে।তারপর দুজনে পালিয়ে যাবে এই সমাজ থেকে অনেক দূরে। কিন্তু রুবি তাতে সায় দেয়নি। ওর শাশুড়ি সেদিন ওকে আর বেরোতেও দেয় নি। তাছাড়া ওর সাহসেও কুলায়নি দুবাড়ির এতোগুলো লোকের সাথে পুরো সমাজের বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়াতে। সে পরিস্থিতিতে অরুণাই করেছিল বাকি কাজটা। 


গোটা ব্যাপারটা প্রমাণ হতে প্রায় দেড় বছর লেগে যায়। শুরুর দিকে রুবিও অনেক সত্য চেপে রেখেছিল। হয়তো ও বুঝতে পেরেছিল আসল খুনি কে। কিন্তু সত্য আর কতদিন চাপা থাকত, বেরিয়েই পরেছিল এই ওই সূত্র ধরে। আর প্রমাণগুলো সামনে আসতেই অরুণারও নিজেকে শেষ করে দিয়েছিল। রুবি খুব ভেঙে পরেছিল তাতে। 


 আগামীকাল কোর্টে রুবির নির্দোষিতা পাকাপাকিভাবে প্রমাণ হওয়ার দিন। আর পুরো কেসটাতে বর্ণা না থাকলে, হয়তো সত্যি মেয়েটা আজ গারদের পেছনেই থাকতো। সমাজে নিয়ম বহির্ভূত ভালোবাসার বিচারে যে সবাই ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এসব ভাবতে গিয়েই বর্ণার মনে পড়ে যায় রুবির মুখে শোনা সেই মানুষটার কথা, যে রুবির কেসটার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য স্পেসিফিকালি বর্ণার কাছেই আসতে বলেছিল রুবিকে। কে সে? রুবিতো এখনো তার নামই বলেনি বর্ণাকে। তবে কি প্রসূন? সেরাতে এসব ভাবনার মধ্যেই ঘুমের অতলে ডুবে যায় বর্ণা।


পরেরদিন কেস জিতে কোর্টের রুম থেকে হাসিমুখে বেরোনোর পথে একটা অভিনন্দনের পরিচিত হাত এগিয়ে আসে বর্ণার দিকে। ততক্ষণে রুবি বর্ণাকে বলে দিয়েছিল সেই ব্যাক্তির নাম। হ্যাঁ, সেই ব্যক্তি রুবির এডভোকেট বন্ধু প্রসূনই। যে বর্ণাকে তিনবছর আগে প্রোপোস করেছিল। আর বর্ণা অস্বীকার করেছিল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে। কিন্তু বর্ণার প্রেমিকা স্বর্ণালীর গত বছর আচমকা মৃত্যু হওয়াতে যখন বর্ণা প্রায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। তখন বুদ্ধিমান প্রসূন বুঝতে পেরেছিল বর্ণার রিফিউসের আসল কারনটা কী ছিল। আর তখন এক খুব ভালো বন্ধুর মতো বর্ণার পাশে থেকে ওকে মানসিকভাবে সুস্থ করে তুলেছিল প্রসূন। বর্ণা অনুভব করল, যেকোনো প্রকৃত ভালোবাসাই বড্ড খাঁটি আর একরোখা হয়। তার ভীতটা নড়ে গেলে, কেউ ভবিতব্যকে মেনে সাধারণের ভিড়ে মিশেও অসাধারণ হয়ে থাকে, আবার কিছু সাধারণ মানুষের হাতেও অসাধারণ অপরাধ হয়ে যায়। আর তার পরিণামে সমাজের নিয়ম অনিয়মের বেড়াজালের মধ্যে চিড়েচ্যাপটা হয়ে যায় কিছু হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত স্পন্দন।

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama