Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Suravi Roy

Action Crime Thriller

5.0  

Suravi Roy

Action Crime Thriller

বল লাইটিং ও মানুষ রূপী দানব

বল লাইটিং ও মানুষ রূপী দানব

49 mins
2.8K


কাল থেকে মুডটা একদম অফ্ হয়ে আছে আমার। কিছুই ভালো লাগছে না। মা-বাবার উপর রাগ করে দরজা বন্ধ করে নিজের রুম বসে আছি।  


    আমি উল্কাগ্নী রায়। যার অর্থ হল উল্কার আগুন। আসলে আমার এই অদ্ভুত নামটা রেখেছিলেন লন্ডনের একটা নামী প্রাইভেট নার্সিংহোমে কর্মরতা একজন বাঙালী নার্স, যেখানে আমার জন্ম হয়েছিল। মায়ের কাছে শুনেছি আমার জন্মের দিন প্রচন্ড বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হচ্ছিলো। সেই সময় আমার মতো আরো কয়েকটা সদ্যোজাত শিশু ওই নার্সিংহোমের চাইল্ড ওয়ার্ডের ছোট্ট ছোট্ট দোলনাগুলোয় ঘুমাচ্ছিল বা হাত-পা ছুঁড়ে খেলছিল।


    এই সময়ে একজন নার্স চাইল্ড ওয়ার্ডে ঢুকেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পান, ওই রকম প্রচন্ড বর্ষনের মধ্যে দিয়ে একটা ভয়ানক বিশালাকার আগুনের গোলা বাইরে থেকে নার্সিংহোমের চাইল্ড ওয়ার্ডের দিকে ধেয়ে আসছে। তিনি ভয়ে চিৎকার করে ওঠেন এবং তার ঠিক সামনে থাকা একটি বাচ্চাকে কোলে তুলে নিয়ে, অন্তত একজন বাচ্চাকে বাচাঁনোর জন্য চাইল্ড ওয়ার্ডের বাইরের দিকে ছুটে যান....ঠিক তখনই ঘটে প্রবল বিস্ফোরণ শুরু হয় ওই অগ্নি বলের ধ্বংসলীলা।মুহূর্তের মধ্যে প্রায় সমগ্র নার্সিংহোম পুড়ে ছাই হয়ে গেছিলো ....সেই সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছিলো। কিন্তু অতো বড়ো নার্সিংহোমের প্রায় শেষ প্রান্তে মাদার ওয়ার্ডের কিছুটা অংশের কিছু ওই ধ্বংসাত্মক আগুনের হাত থেকে রক্ষা পায় ফলে পরম সৌভাগ্য ক্রমে ওই ওয়ার্ডে থাকা কিছু সদ্যোজাতের মা বেঁচে যায়।

    

    পরে জানা গেছিলো, ওটা কোনো বিস্ফোরণ ছিল না। ওটা ছিল এক ভয়ংকর রকমের বজ্রপাত। যেটা 'ফায়ার বল লাইটিং' নামে পরিচিত। এটা সাধারণ বজ্রপাতের থেকে একেবারে আলাদা। এটি সাধারণত ঘটে না বললেই চলে, কিন্তু যখন ঘটে তখন লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে সব কিছু পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। আবার এমনও শোনা গিয়েছে যে, এই লাইটিং বল যার পাশ দিয়ে গেছে সেই মানুষটি অন্ধ হয়ে গেছে বা কানে শোনার বা কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছে। এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে এই 'বল লাইটিং' নামক বজ্রপাতের। খুব একটা ঘটেনা বলেই বেশির ভাগ মানুষ এই রকম একটা ভয়ংকর বজ্রপাত সম্পর্কে অজ্ঞাত।


    যাইহোক, ওই রকম একটা অগ্নিকান্ডের পর উদ্ধারকারীরা ওই কয়েকজন আহত মা দের আর কিছু ডাক্তার ছাড়া আর কিছুই উদ্ধার করতে পারেন নি। চাইল্ড ওয়ার্ডের প্রত্যেকটা বাচ্চা পুড়ে ছাই হয়ে গেছিলো। আর যে মা গুলো বেঁচে ছিল তারা বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল এদের মধ্যে আমার মা ও ছিল।


    কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওই নার্সকে গুরুতর জখম অবস্থাই পাওয়া যায় যার কোলে ছিল সেই ছোট্ট বাচ্চাটি, অর্থাৎ ছোট্ট আমি। অদ্ভুত ঘটনাটি হল যে ওই অগ্নি কান্ডে আমার একচুলও ক্ষতি হয়নি।আমাকে পেয়ে মা একটু শান্ত হয়। কিন্তু চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক জনকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হয়।


    হসপিটালে চিকিৎসা চলাকালীন ওই নার্সই ওই সমস্ত ঘটনার সঠিক বর্ণনা দেন। তিনি নিজের প্রাণের বিনিময়ে অন্তত একটা বাচ্চাকে অর্থাৎ আমাকে বাঁচাতে পারার জন্য খুশি ছিলেন। গুরুতর জখম হওয়ার জন্য তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার আগে আমার মাকে বলে যান আমার নাম "উল্কাগ্নী" রাখার জন্য। কিন্তু কেন যে তিনি এই অদ্ভুত নামটা রেখেছিলেন? তিনি কি আমার সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছিলেন ?


তাঁর মৃত্যুর সাথে সব কিছু অজানাই থেকে যায়। তিনি আমাকে বাঁচিয়েছিলেন, তাই আমার মা-বাবা ওনার কথা অনুযায়ী আমার ওই নামটাই রাখে।


     আমার মা বাবা বাঙালি হলেও তারা চাকরি সূত্রে লন্ডনেই থাকতেন। তাই ওখানেই আমার জন্ম হয়। আমি ওখানেই বড়ো হয়েছি। আমার মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত ওখানেই কেটেছে। কিন্তু কেন জানি না এর পরেই আমার মা-বাবা আমাকে নিয়ে ইন্ডিয়া ফিরে আসে। ওই বল লাইটিং এর ভয়াবহ দৃশ্য মায়ের মনে গেঁথে গিয়েছিল এবং আমাকেও কোনো দিনই একা ছাড়তো না। তাই হয়তো হঠাৎই ইন্ডিয়া ফিরে আসার ডিসিশন নেয় এবং আমরা কলকাতায় থাকতে শুরু করি।


         কলকাতায় থাকতে শুরু করলাম ঠিকই কিন্তু আমার অসম্ভব বিরক্ত লাগতো ওই লন্ডন ছেড়ে এসে কলকাতায় থাকতে। লন্ডনে জন্ম, বিদেশি আদব কায়দাই বড়ো হয়েছি। কিছুতেই এই কলকাতার বাঙালী পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। লন্ডনের স্কুলের বন্ধুরা আমার ফ্যামিলি মেম্বারের মতো হয়ে গেছিলো। ওদের ছেড়ে এসে আবার নতুন বন্ধুদের সাথে মেশা আনকম্ফরটেবল মনে হতো। অন্যদিকে ওখানের বন্ধুদের ভাবনা চিন্তা আর এখানকার বন্ধুদের ভাবনা চিন্তার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এই দুই-এর মধ্যে আমি যেন কোথাও হারিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কি আর করবো আমাকে এখানেই থাকতে হবে তাই অনেক চেষ্টা করতে লাগলাম সবকিছুকে মানিয়ে নেওয়ার। সবকিছু ঠিকঠাক হতে প্রায় একবছর সময় লেগেছিল।


    আজ প্রায় চার বছর হতে চলল।


আমরা কলকাতায় আছি। দুই দিন আগে আমার কলেজের ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কাল রাতে আমার লন্ডনের স্কুল ফ্রেন্ডরা ফোন করেছিল। আমরা সবাই মিলে অর্থাৎ আমরা মোট আটজন বন্ধু সমগ্র লন্ডনের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখবো। কিন্তু এর জন্য আমাকে একা লন্ডন যেতে হবে। কিন্তু মা-বাবা আমাকে লন্ডন যেতে দিতে চাই না। প্রথম থেকে আমার সব ইচ্ছা আবদারই মা-বাবা পূরণ করেছে। কিন্তু গত তিন বছরে কোনো দিনই আমাকে লন্ডন যাওয়ার অনুমতি দেন নি।


    কিন্তু এখন আমি বড়ো হয়ে গেছি। তাই আমি সকাল থেকে কিছু না খেয়ে, মা-বাবার উপর রাগ করে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছি। জানি না আমি লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি পাব কিনা। কিন্তু আমিও ঠিক করেছি , মা বাবা যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত এই একভাবেই বসে থাকবো।


   শেষ পর্যন্ত মা-বাবা অনুমতি দিল লন্ডন যাওয়ার। আমিও খুশি মনে অনশন্ ভেঙে নীচে খেতে নেমে এলাম। এরপর বন্ধুদের ফোন করে জানিয়ে দিলাম, আমি লন্ডন আসছি। পরের দিনই সকালে লন্ডনের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। কিন্তু যাওয়ার আগে মা-বাবা আমাকে ভালো করে বলে দিল যে, বৃষ্টি হলে আমি যেন কোন ভাবেই বাইরে না বেরোই। আমি মা-বাবা কে বুঝিয়ে বেরিয়ে এলাম।


    লন্ডনে পৌঁছে মা-বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমি ঠিকমত পৌঁছে গেছি।


এই তিন বছর পর বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ায় খুব ভালো লাগলো। আমি মনে মনে একটু দুঃখ পেলাম কারণ মা-বাবাকে মিথ্যা কথা বলে লন্ডনে এসেছি। কারণ আমি মোটেও বন্ধুদের সাথে লন্ডনে ঘুরে আড্ডা দিতে আসিনি। আমরা আটজন বন্ধু মিলে, প্রত্যেকে নিজের জীবন বাজি রেখে মেক্সিকোর ঘন জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে যাচ্ছি। কারণ, আমরা আটজন বন্ধু ছাড়া আর কারুর বাড়ির কেউই জানে না যে আমরা গত পাঁচ বছর ধরে একটা রিসার্চ গ্রুপ তৈরী করেছি। এতো বছর ধরে অনেক তথ্য সংগ্রহ করে এই সিক্রেট অভিযানের ডিসিশন নিয়েছি। হয়তো এটাই আমাদের প্রথম ও সর্বশেষ অভিযান। তাই বাড়িতে জানালে আমরা কেউই মেক্সিকোর জঙ্গলে যাওয়ার অনুমতি পেতাম না।


 আমার সব বন্ধুরা চলে এসেছে। ওদের নামগুলো হল, এঞ্জেলা, ইসাবেলা, এডওয়ার্ড, জন্,এলিস,জেনি,আর স্মিথ।এদের মধ্যে এঞ্জেলা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি ফিজিক্স আর এঞ্জেলা বোটানি অনার্স।আর ইসাবেলা কেমিস্ট্রি, এলিস আর জেনি ম্যাথ অনার্স। আর এডওয়ার্ড জু-লজি অনার্স আর সঙ্গে একটা ডিটেকটিভ এজেন্সির সাথেও যুক্ত।আর জন্ আর স্মিথ ল-কলেজে পরে।তবে আমরা সবাই মিলে একটা সিক্রেট ব্যায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি চালাচ্ছি।


আমরা কাল সকালেই মেক্সিকোর উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করবো।আমাদের অভিযান দশ দিনের।খুব বেশী হলে আরো দশ দিন হতে পারে।কিন্তু আমরা সবাই নিজেদের দায়িত্বে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অভিযানে যাচ্ছি।আমরা সঠিক ভাবে জানিনা,আদৌ আমরা ওই ভয়ানক অঞ্চল থেকে বেঁচে বেরিয়ে আসতে পারবো কিনা। তবুও আমরা যাব।


    তাই আমরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের বাড়িতে সবকিছু জানিয়ে একটা চিঠি লিখে যাচ্ছি।যদি আমরা পঁচিশ দিনের মধ্যে না ফিরে আসি তাহলে, আমাদের আর কোনো খোঁজ না করা হয়। আমরা এমন ভাবে চিঠিটা পোস্ট করলাম যাতে আমরা মেক্সিকো পৌঁছানোর পাঁচ দিন পর যেন চিঠিটা প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছায়। আমরা আটজন নিজেদের দরকারী জিনিসপত্র নিয়ে সাহসের সঙ্গে আমাদের অভিযানের সফলতার কথা ভেবে মেক্সিকো উদ্দেশ্য যাত্রা করলাম।


  আমরা প্রায় তিন দিন পর যখন মেক্সিকো পৌঁছলাম তখন প্রায় রাত হয়ে গেছে। তাই আমরা আটজনেই কোনো হোটেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম কারণ, এক, আমরা সবাই এতটা জার্নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আর দুই, একবারে অচেনা ,আবার এই রকম একটা ভয়ংকর যায়গায় কোনো কিছু সম্পর্কে খোঁজ খবর না নিয়ে এই রাত্রের অন্ধকারে কোনো অভিযানে বেরোনো ঠিক হবে না, যে কোনো বিপদ ঘটতে পারে।


       আমরা একটা হোটেলে তিনটে রুম বুক করলাম। একটাই আমি আর এঞ্জেলা।এবং আরো দুটো রুমের একটাই ইসাবেলা, জেনি আর এলিস। অন্যটাই, এডওয়ার্ড, জন্ আর স্মিথ।আমরা প্রথমে প্রত্যেকে নিজেদের রুমে চলে গেলাম ফ্রেস হওয়ার জন্য।একঘন্টার মধ্যে আমরা সবাই হোটেলের ক্যান্টিনে এসে একসাথে ডিনার করলাম, এবং সঙ্গে ওই হোটেলের ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্মীদের কাছ থেকে মেক্সিকোর জঙ্গল সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম,কিন্তু আমাদের মেক্সিকোর জঙ্গলে অভিযানের কথা ওদের কাছে অজানা রাখা-ই শ্রেয় বলে মনে হল।ডিনার কমপ্লিট করে,আমরা নিজেদের মধ্যে ঠিক করলাম যে,আমরা আগামীকাল সকাল ন’টাই জঙ্গলের উদ্দেশ্য রওনা দেব।এবং সঙ্গে কি কি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেব সেই গুলোও ঠিক করে নিলাম।এর পর একে অপরকে "গুড্ নাইট্" জানিয়ে নিজের নিজের রুমে এলাম। ঘুমানোর আগে বাড়িতে ফোন করে মা-বাবার সাথে কথা বললাম।আমি ঠিক আছি শুনে মা-বাবা দুজনেই খুশি হল।

এরপর ফোন রেখে, আগামী অভিযানের ভাবনায়,মনে সুন্দর, রহস্যময়, ভয়যুক্ত ও রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ক্লান্ত ছিলাম, তাই তাড়াতাড়িই ঘুম এসে গেল।


পরদিন সকালে উঠে,জঙ্গল অভিযানে যাওয়ার জন্য সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে, বেরনোর প্রস্তুতি নিলাম। আমরা আট বন্ধু পরস্পর পরস্পরকে 'গুড্ লাক্ ' বলে, ওই হোটেল থেকে আরো কিছু তথ্য, জঙ্গলের ম্যাপ ও কিছু ছবি নিয়ে মেক্সিকোর জঙ্গলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।


   আমরা জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করে, অনেকটা পথ অতিক্রম করে গেছি। কিন্তু এখনও আমরা কোনো রহস্যজনক ঘটনার সম্মুখীন হইনি।

পাঁচ দিন হতে চলল। আমরা জঙ্গলের মধ্যেই বিচরণ করছি। শুধুমাত্র কয়েক প্রকার কীটপতঙ্গ আর কিছু বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ছাড়া আর কিছুই আমাদের চোখে পড়ে নি।


বারবার মনে হতাশা উঁকি দিচ্ছিল।

হঠাৎই আমাদের মধ্যে থেকে জেনি তো বলেই ফেলল," আমার মনে হচ্ছে না যে আমাদের উদ্দেশ্য সার্থক হবে। কয়েকদিন তো হয়েই গেল"

 ওর এই রকম কথা শুনে আমি অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখি জন্ আর স্মিথেরও এক অবস্থা, ওরা হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে।


  অন্যদিকে,দেখি এডওয়ার্ড নিজের চোখ দুটোকে ছোট করে,বেশ মনোযোগ দিয়ে এদিক ওদিক কিছু খুঁজে চলেছে।ও এদের কথা কিছুই শোনে নি। ওকে দেখে বেশ বোঝাই যাচ্ছে ও একটুও হতাশ হয় নি।


 ওকে এতো উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে দেখে,আমার মনে যে একটু হতাশার উদয় হয়েছিল,সেটুকুও মরে গেল।মনে আবার উৎসাহ ফিরে এল।একটু মিষ্টি হেসে, জেনিকে বললাম,"এই টুকুতেই হতাশ হলে চলবে না।এতো সহজে হার মানতে আমরা আসিনি জেনি, নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রেখে এই মেক্সিকোর ভয়ঙ্কর জঙ্গলে পা রেখেছি। আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে রহস্যের সন্ধানে।" ওরাও আমার সাথে একমত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল।


   আমিও মনে মনে ঠিক করলাম,'এতো সহজে হার মানবো না।হতাশা আমার জীবনে আর আসবে না।জীবনের শেষ প্রাণ বিন্দু পর্যন্ত সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে যাব। নিজের লক্ষ্যকে , উদ্দেশ্যকে সার্থক করার জন্য।'


  জঙ্গলে অজানার সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে প্রায় সন্ধ্যা হতে চলল। হঠাৎই একটা অস্বাভাবিক রকম শব্দ হতে লাগল।গত কয়েকদিনে তেমন রহস্যজনক কিছু ঘটেনি তাই হঠাৎ এমন শব্দে গা-টা ছমছম করে উঠল। শব্দটা একটু ভালোভাবে শোনার চেষ্টা করলাম, শুকনো পাতার ওপর দিয়ে চললে যে রকম একটা মরমর শব্দ হয়,অনেকটা সেই রকম হলেও,শব্দটা কেমন যেন একটা অন্য রকম অনুভূতি সম্পন্ন।শব্দটা শুনেই আমরা একটু থমকে গেলাম এবং হঠাৎই এই রকম শব্দে একটু ভয়ও পেলাম।


 স্মিথ একটু ভ্রু কুঁচকে ভয় জড়ানো কন্ঠে বলল,"এই কি রে! এটা কিসের শব্দ? কোনো জংলী জানোয়ার নয় তো?"

জানি না বাকিরা কি ভাবছিল, কিন্তু স্মিথের কথা শুনে প্রায় সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল।ওদের এই অবস্থা দেখে, আমি বললাম,"অদেখা কিছুকে ভয়ংকর কিছু একটা ভাবছিস কেন? আগে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা কর।আমার কিন্তু মনে হচ্ছে ওটা কোনো জংলী জানোয়ার নয়। কারণ,শব্দটা একটু ভালোভাবে শোনার চেষ্টা কর,মনে হচ্ছে কেউ ওই শুকনো পাতাগুলোকে জোর করে ঘষে মাড়িয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোনো জানোয়ার হলে এভাবে চলত না।"


শব্দটা ভালোভাবে বুঝে এডওয়ার্ড বলল,"ইউ আর রাইট, উল্কাগ্নী।আর এই রকম ভাবে একমাত্র কোনো সাপ চলাচল করতে পারে, কিন্তু কোনো সাপ চলাচল করলেও তো এই রকম বিভৎস শব্দ হত না।" এডওয়ার্ডের কথা শুনেই জন্-এর মাথার পোকাগুলো মুহুর্তের মধ্যে কিলবিল করে উঠল,একটু উত্তেজিত হয়েই জন্ বলল,"কোনো প্রকান্ড আকারের সাপ! মানে অ্যানাকন্ডা নয় তো!"


আমি ওর কথায় বাধা দিয়ে বললাম," না, অ্যানাকন্ডা হতে পারে না।"

আমার কথা শেষ না হতেই এলিস উচ্চস্বরে বলে উঠল,"কেন!! কেন হতে পারে না অ্যানাকন্ডা? হয়তো ওটা কোনো প্রকান্ড অ্যানাকন্ডা, আমাদের খাবে বলে চুপচাপ এগিয়ে আসছে।"


 এই হল এলিসের সব থেকে বড়ো দোষ। যখন কেউ সাহসের সঙ্গে, নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে,কোনো প্রবলেম সল্ভ করার চেষ্টা করবে আর ঠিক তখনই এই এলিস এমন একটা নেগেটিভ কথা বলবে যে,সবার হাত-পা গুটিয়ে, ভয়ে, সব বুদ্ধি লোপ পাবে।এই জন্যই মাঝে মাঝে মনে হয়, কোনো প্রবলেম হলে আগে যেন এলিসের মুখটা আঁঠা দিয়ে বন্ধ করে দিই।অন্তত ওর হঠাৎ হঠাৎ নেগেটিভ কথার জন্য কারুর বুদ্ধি লোপ পাবে না।


 যাইহোক,ওর এই রকম কথা শুনে আমার মেজাজটা গেলো বিগড়ে।ওকে একটু ধমক দিয়ে বললাম,"এলিস,তোকে অনেকবারই কোনো রকম নেগেটিভ কথা বলতে নিষেধ করেছি।তাও তুই শুনলি না,আমার কথাটা সম্পূর্ণ না হতেই একটা যা তা কথা বলে ফেললি।"

"আর তোরা সবাই শোন,ওটা অন্য যাই হোক অ্যানাকন্ডা নয়। শব্দটা শুনে মনে হচ্ছে,আমাদের আশেপাশে কোথাও থেকে আসছে।আর ওটা যদি অ্যানাকন্ডা হতো, তাহলে ওই শব্দটার থেকে অ্যানাকন্ডার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দটা গর্জনের মতো শোনা যেত।"


 কথা বলতে বলতে মনে হল,ওই শব্দটা আমাদের অনেক কাছেই এসে পড়েছে, আর একটু হলেই আমাদের ধরে ফেলবে...

আমরা ওই অন্ধকার জড়ানো ভয়ানক পরিবেশে,হঠাৎই হতভম্ব হয়ে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম,গায়ের লোমগুলো সব খাড়া হয়ে উঠল, মনে হল যেন সব বুদ্ধি লোপ পেতে শুরু করেছে।


     আমি আর কোনো উপায় না দেখে, বাকি সবার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললাম,"ওটা অ্যানাকন্ডা না হোক,ওর থেকেও আরো কোনো ভয়ংকর প্রাণী হতে পারে।তাই এখন ওই অজানা,অদেখা প্রাণীটার থেকে পালিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচানো উচিত।" তাই আমরা অপরিকল্পিত ভাবে,ওই শব্দটা যেদিক থেকে আসছিল তার বিপরীতে ওই আলো অন্ধকার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম।


     "আ....র পারছি....না...." বলে এবার থামলাম।শব্দটা আর শোনা যাচ্ছে না।

কতক্ষণ ধরে দৌড়াচ্ছি মনে করতে পারছি না।অসম্ভব ভাবে হাঁপিয়ে উঠেছি। কারুর মুখ দিয়ে স্পষ্ট ভাবে কথা বের হচ্ছে না।আমাদের মধ্যে দুই-এক জনের মুখ দিয়ে লালা ঝরতে শুরু করছে অক্সিজেনের অভাবে।প্রচন্ড হাঁপাচ্ছে ওরা। আর আমার তো চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। চোখে সব কিছু ঘোলাটে দেখছি। এর মধ্যেই হঠাৎই এঞ্জেলা মাথা ঘুরে পড়ে গেল।আমি ওর পাশেই ছিলাম, কোনো রকমে ওর মাথাটা মাটিতে পড়ার আগেই ধরে ফেললাম।


 অন্যদিকে এডওয়ার্ড কোনো ডিটেকটিভ এজেন্সির সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে, ওর দৌড়াদৌড়ি করার অভ্যাস আছে, কিন্তু এতোটা দৌড়ের পর কিছুটা হাঁপিয়ে উঠলেও,মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল।তাই ও তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বের করে,এঞ্জেলার চোখে ও মাথায় জল দিতে লাগল।কিছুক্ষণের মধ্যেই এঞ্জেলা চোখ মেলে তাকালো।এর পর আমরা সবাই জল খেয়ে শান্ত হলাম।


অনেক রাত হয়ে গেছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত এগারোটা।আমরা সবাই খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে গেছি।এবার একটু বিশ্রাম নিতে হবে।কিন্তু বিশ্রাম নেয়ার জায়গা কোথায়?এই গভীর ভয়ানক জঙ্গলের মধ্যে বিশ্রাম নেওয়াও বিপদজনক হতে পারে।আর এই ভয়ানক রহস্যজনক শব্দটার পর নীচে কোথাও বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। কিন্তু কি করবো?ভেবে পাচ্ছি না।এদিক-ওদিক তাকাতেই দেখলাম কিছুটা দুরেই একটা বিশালাকার গাছ।যার ওপর দশজন মানুষ খুব সহজেই বিশ্রাম নিতে পারে।কিন্তু গাছটা যে কি গাছ,অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।


 এঞ্জেলা বোটানি অনার্স পড়ছে তাই ও গাছের সম্পর্কে বেশি বোঝে।ওকে বললাম,"এঞ্জেলা,এই বিশালাকার গাছটাকে একটু পর্যবেক্ষণ করে দেখ,এর উপর বিশ্রাম নেওয়া ঠিক হবে কিনা?"


এঞ্জেলা পর্যবেক্ষণ করে বলল,"গাছটা কি গাছ সেটা বোঝা যাচ্ছে না।কিন্ত আমি যে টুকু জানি তাতে মনে হচ্ছে এটা বট গাছের কোনো প্রজাতির গাছ।আর গাছটাতে বিশ্রাম নেওয়া যেতেই পারে,তেমন কোনও অসুবিধা হবে না।" 


 এঞ্জেলার কথা শেষ হতে না হতেই,জন্ আর স্মিথ লাফিয়ে গাছে উঠে পড়ল। ওদের ওই কান্ড দেখে এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও আমরা বাকিরা সবাই হেসে উঠলাম।এবার আমাদেরও গাছে উঠতে হবে।আমরা এগিয়ে গেলাম গাছটার দিকে এবং একে একে গাছটাতে উঠতে শুরু করলাম,প্রথমে এলিস আর জেনি তার পর এঞ্জেলা,ইসাবেলা আর আমি এর পর এডওয়ার্ড।গাছের উপরে উঠে আমরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের জন্য বিশ্রাম নেওয়ার মতো জায়গা করে নিলাম এবং সঙ্গে নিয়ে আসা কিছু খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।


 ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। হঠাৎই "ধপ্ " করে একটা শব্দে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ খুলেই দেখি ইসাবেলা ঘুমন্ত অবস্থাই ওই বড়ো গাছটা থেকে নীচে পড়ে,চোখ দুটোকে গোলগোল করে হতভম্ব হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।হয়তো ভাবছে আমি নীচে শুয়ে আছি কেন?ওর ওই রকম অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছিল।আবার ভয়ও হল,এই অন্ধকারে নীচে বসে থাকলে ইসাবেলার কোনো বিপদ হতে পারে।কিন্তু ওর যা অবস্থা তাতে ও আর নিজে নিজে গাছে উঠতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।তাই আমি অন্যদের ডাকলাম এবং বললাম কেউ একজন নিচে নেমে ওকে নিয়ে আসার জন্য।কিন্তু ওরা ইসাবেলার গাছ থেকে পড়ে যাওয়া দেখে সবাই জোরে জোরে হাসতে লাগল।কিন্তু কেউই ওই অন্ধকারের মধ্যে নিচে নামতে চাইল না। অবশেষে আমি আর এডওয়ার্ড নিচে নামার সিদ্ধান্ত নিলাম।লাইটটা অন্ করে ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলাম।


অতো উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে ইসাবেলার পায়ে একটু চোট্ লেগেছে। ও একদমই উঠে দাঁড়াতে পারছে না। আমি ভাবলাম এই অবস্থাই ওকে গাছে তুলবো কি করে? আবার নীচে থাকাও বিপজ্জনক। ওই অবস্থাতেই আমি আর এডওয়ার্ড ওকে টেনে তুলে, প্রায় কোলে তুলে গাছটার একবারে গোঁড়াটাই নিয়ে গেলাম। কিন্তু ওকে তুলবো কি করে? যে ভাবেই হোক ওকে গাছটাই তুলতে হবে। টানাটানি করে ইসাবেলাকে গাছে তোলার চেষ্টা করতে লাগলাম।


  কিন্তু হঠাৎই সেই শব্দটা হতে শুরু করল। হ্যা, ঠিক সেই ভয়ংকর শব্দটা, যেটা শুনে আমরা পাগলের মতো দৌড়ে ছিলাম।ওই শব্দটা কানে আসতেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে, সব বুদ্ধি লোপ পেতে শুরু করল।


     ওই অবস্থাতেই মনে হল যেন ওই অন্ধকারের মধ্যে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।কি করব এখন? কোনো কিছুই মাথায় আসছে না। তবুও ইসাবেলাকে কোনো রকমে ঠেলে গাছে তোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু ওই অবস্থাতে ইসাবেলাতো গাছে উঠতেই পারল না অন্যদিকে এঞ্জেলা , ইসাবেলাকে গাছের উপর থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেই গাছ থেকে পড়ে গেল।এবার পালানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু ইসাবেলাকে এই ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে যায় কিকরে?


হঠাৎই এডওয়ার্ড বলল, "ইসাবেলা কে ওই গর্তটার মধ্যে ঢুকিয়ে দে। ওখানে ওকে কেউ দেখতে পাবে না।"

  ওর ওই রকম একটা কথা শুনে আমি চমকে উঠে ওর কথা মতো ওই বড়ো গাছটার নিচের দিকে তাকালাম। দেখি, গাছের গোড়া আর মাটির কিছুটা অংশের মধ্যে বেশ বড়ো একটা গর্ত আছে। যদিও এই অন্ধকারের মধ্যে তেমন একটা কিছু বোঝা যাচ্ছে না, তবুও ওটার মধ্যে কেউ একজন অনায়াসে লুকিয়ে থাকতে পারে।


কিন্তু গর্তটা কিসের? কোনো বড়ো বিষধর সাপের নয় তো? আমি এই সব ভাবছি আর এর মধ্যেই এডওয়ার্ড ওই গর্তটা পরিষ্কার করে লুকিয়ে থাকার উপযুক্ত করতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আমি আর কিছু বললাম না, এই অবস্থাই ইসাবেলার প্রাণ বাঁচানোটা বেশি জরুরি। তাই আমি আর এঞ্জেলা আর কিছু না ভেবে এডওয়ার্ডকে ওর কাজে সাহায্য করতে লাগলাম। এরপর ইসাবেলাকে ওর মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম এবং সামনেটা কয়েকটা ঝোপ- জঙ্গল দিয়ে আড়াল করে দিলাম, যাতে কেউ ওকে না দেখতে পায়। কিন্তু এই সবের মধ্যেই ওই ভয়ংকর শব্দটা যে আমাদের ঠিক পিছনেই এসে পড়েছে , খেয়ালই করিনি।


  হঠাৎই গাছের উপর থেকে জেনির বিকৃত চিৎকারে আমি, এঞ্জেলা আর এডওয়ার্ড চমকে, পিছন ফিরে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে আমাদের মনে হল, পায়ের নিচের মাটি ফুঁড়ে ভিতরে ঢুকে পড়ি বা আকাশ ফুঁড়ে ওপরে উড়ে যায়। " সামনে ওই ভয়ংকর প্রাণী গুলো প্রায় কুড়ি-পঁচিশ জন। ওরা আট থেকে দশ ফুট লম্বা, অনেকটা মানুষের মতো দেখতে, তাদের সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে কিংবা কোথাও রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছে। শরীরের বেশ কিছু অংশ রক্ত শুন্য ফ্যাকাশে সাদা। ওদের মধ্যে কারুর শরীরের মাংস পচে খসে পড়ছে এবং কঙ্কালের হাড় দেখা যাচ্ছে। আবার কারো মাথার খুলির অর্ধেক অংশ নেই , সেখান থেকে ব্রেন রক্তাক্ত অংশ ঝুলে আছে। ওদের মধ্যে কারো চোখ লাল রক্ত বর্ণ আবার কারো সাদা ফ্যাকাশে।


কিন্তু সবার মুখ থেকে যেন একটা অদ্ভুত অংশ বেরিয়ে এসেছে। ঠিক যেন অক্টোপাসের আটটা পা আর ওই পা গুলো কাঁটা ও গুটি যুক্ত , ঠিক যেন তারা মাছের শরীর বেরিয়ে এসেছে ওই আট ফুটের অর্ধ মৃত মানব- অর্ধ রাক্ষস গুলোর মুখ থেকে। সব মিলিয়ে যেন এক ভয়ংকর প্রাণী।"


মুহুর্তের জন্য,চোখের সামনে ওই রকম ভয়ংকর প্রাণী দেখে চিৎকার করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম,হঠাৎই ওই প্রাণীগুলোর এগিয়ে আসার শব্দে হুশ ফিরল আর কোনো উপাই না দেখে আমরা তিনজনে,অন্ধকারে জঙ্গলের মধ্যে, প্রাণপণে ছুটতে শুরু করলাম।আর বাকি বন্ধুদের উদ্দেশ্য চিৎকার করে বললাম,"বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।হার না মেনে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাস।পৃথিবীটা গোল,দেখা আমাদের নিশ্চয় হবে।"।আমাদের চিৎকার শুনে ওই ভয়ংকর প্রাণী গুলো আমাদের পিছনে পিছনে আসতে শুরু করল।


আমরা প্রাণপণে ছুটে চলেছি অন্ধকারকে ঠেলে, সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আর পিছন ফিরে তাকানোর সাহস নেই। ওই সেই ভয়ংকর শব্দটা যেন আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।


 " আ-আ-আ--আ...." দুম্।মনে হল একটা বড়ো চেহারার প্রাণীর সঙ্গে ধাক্কা লাগল। ওই অন্ধকারের মধ্যে ছিটকে পড়লাম পাথরের উপর,খুব জোরে মাথায় আঘাত লাগলো। 


এইসব আতঙ্কের মধ্যে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার হাতের সাথে ফিতে দিয়ে একটা টর্চ লাগানো আছে।আমি পাথরের উপর পড়ার সাথে সাথে,টর্চটা হাত থেকে ছিটকে পড়ে অন্ হয়ে গেল। আর ওই টর্চের আলোতে দেখলাম এক ভয়ংকর দৃশ্য।দেখি,একটা বিশালাকার পাইথন সাপ ওই মানুষ আকৃতির প্রাণী গুলোকে একটার পর একটা কামড়ে গিলে নিচ্ছে।আর প্রাণীগুলো আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠছে।


কিন্তু, এঞ্জেলা আর এডওয়ার্ড কোথাই গেল? আমি আর তাকাতে পারলাম না , চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে এলো। এরপর কি হল আমার আর মনে নেই।


হঠাৎই একটা বন্দুকের গুলির শব্দে আমার জ্ঞান ফিরে এল।সকাল হয়ে গেছে, রোদের তাপ তিব্র হয়েছে।আমি ধীরে ধীরে চোখ খোলার চেষ্টা করলাম,কিন্তু ঠিক ভাবে তাকাতে পারছি না। মাথাটায় অসহ্য যন্ত্রণা করছে। ধীরে ধীরে উঠে বসলাম, মাথার আঘাত লাগা জায়গাটাই হাত দিয়ে বুঝলাম,মাথা ফেটে রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গেছে।হঠাৎই এঞ্জেলা আর এডওয়ার্ড এর কথা মনে পরল।ওরা কোথায়? কাল রাতের পাইথনটা ওদের ও.......

না!! আর ভাবতে পারছি না।


কিন্তু এই গভীর জঙ্গলের মধ্যে গুলিটা কে চালালো?আর আমাদের মধ্যে একমাত্র এডওয়ার্ডের কাছেই বন্দুক আছে। তাহলে কি এডওয়ার্ড?আর কিছু না ভেবে উঠে দাঁড়ালাম আর সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু একি? এই গভীর ভয়ানক জঙ্গলে এতো সুন্দর একটা ঝরণা!আর কি স্বচ্ছ এর জল।আর ঝরণার জলটা ওপরের সুউচ্চ একটা পাথরের ঢাল বেয়ে, নীচে মাটির একটা গর্তের মধ্যে প্রবেশ করছে। আর কিছু না ভেবে আমি জলের ধারে এগিয়ে গেলাম। এবং জলে নেমে মাথাটাই জল দিলাম। হাত মুখটা ধুয়ে জল থেকে উঠে আসতেই দেখলাম,একজন ছেলে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে।আমি তাকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলাম। আরে, এটাতো এডওয়ার্ড নয়।এটা কে? আমি এই সবই ভাবছি আর এর মধ্যেই ছেলেটি আমার দিকেই এগিয়ে এল এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করল," তুমি কে? আর এই জঙ্গলে কি করছ?

আমি বললাম," আমার নাম উল্কাগ্নী।আমি আর আমার সাত জন ফ্রেন্ডস্ মিলে এই মেক্সিকোর জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি কে? আর আপনি এখানে কিভাবে??"


আমার কথার উত্তরে ওই ছেলেটি বলল," আমি অ্যালবার্ট। আমি, এই মেক্সিকোর জঙ্গলের ফরেস্ট অফিসার মিঃ উইলসনের একমাত্র ছেলে কার্ল-এর বন্ধু। কলেজের ছুটিতে আমিও বন্ধুর সাথে অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে এসেছি। কিন্তু এখানে যেসব বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাতে বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারবো কিনা সেটাই সন্দেহ । কিন্তু তুমি এখানে একা? তোমার বন্ধুরা কোথায়? "


এবার আমি বললাম," কাল রাতে কিছু মানুষের মতো দেখতে ভয়ংকর প্রাণীর হাত থেকে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে আমরা আটজন বন্ধু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। কিন্তু কাল এখানে এসে পৌঁছানো পর্যন্ত আমার সাথে আরো দুজন বন্ধু ছিল। কিন্তু এখন তাদের দুজনের কাউকেই আমি আর দেখতে পাচ্ছি না। প্লিজ, আমাকে সাহায্য করো ওদের সবাইকে খোঁজার জন্য।"


ওই ছেলেটি অর্থাৎ অ্যালবার্ট বলল," হ্যা, নিশ্চয় সাহায্য করবো। কিন্তু আপাতত এখান থেকে চলো, না হলে আমরা দুজনেই এখান থেকে বেঁচে বেরিয়ে যেতে পারবো না।"


আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম, কারন,এই অবস্থায় অ্যালবার্টের সাথে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপাই নেই।ছেলেটি সব কথা সত্য বলছে তারই বা কি প্রমান আছে! কিন্তু এই ভয়ংকর প্রাণী গুলোর থেকে ওই অচেনা-অজানা ছেলে অ্যালবার্টের সঙ্গে যাওয়ায় ভালো।

আমিও আর কিছু না বলে, চুপচাপ অ্যালবার্টের সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলাম।


  কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম, ফরেস্ট অফিসারের জিপ গাড়ি।তার মানে অ্যালবার্ট সব কথায় সত্যি বলেছে।আমরা এগিয়ে গেলাম জিপগাড়ির দিকে।কিন্তু হঠাৎই সশব্দে বন্দুকের গুলি চলল সঙ্গে এক ভয়ানক তিব্র চিৎকার,আমি চমকে পিছনে ফিরে তাকালাম এবং চিৎকার করে দুপা পিছিয়ে এলাম।সেই আট ফুটের মানুষ আকৃতির ভয়ংকর প্রাণী, গুলি খেয়ে ছটফট করতে করতে আমার একবারে পায়ের কাছে এসে পড়ল। 


সাথে সাথেই অ্যালবার্ট বলল," এদেরকে বলা হয় 'মানুষ রূপী দানব'।এদের রক্তে বিষ আছে,এমন বিষ যা একটা নর্মাল আকৃতির মানুষকে আট থেকে দশ ফুট উচ্চতার মানুষে পরিণত করে এবং সেই বৃহদাকৃতির মানুষটির শরীরের সমস্ত নার্ভাস সিস্টেম বন্ধ হয়ে,গোটা শরীর প্যারালাইসড্ হয়ে যায়। শুধুমাত্র পায়ের পাতা ও ব্রেনের কিছু অংশ জীবিত থাকে। কিন্তু ওই ব্রেনের ই কিছু অংশ বিকৃত হয়ে, মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসে অক্টোপাসের পায়ের ন্যায় আকৃতি গঠন করে।এবং সেটা রক্ত শোষকের মতো কাজ করে। কাছাকাছি কোনো মানুষ থাকলে ওই অংশটি সেই মানুষের রক্তের তাপ অনুভব করে নেয় এবং সেই দিকে অগ্রসর হতে থাকে হিংস্র রক্ত শোষকের মতো।এবং ওই মানুষ রূপী দানব যাকে কামড়ায় তার ওই রক্ত শোষক অংশের দ্বারা,সেই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষটির শরীরের রক্তে ওই বিষ মিশে যায় এবং দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে ওই স্বাভাবিক মানুষটিও ওই মানুষ রূপী দানবে পরিনত হয়ে রক্তের সন্ধানে চলতে থাকে ওই অর্ধ জীবিত পায়ের পাতার দ্বারা।"


--এই কথাগুলো শুনে আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেল মনে হল।কিন্তু আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,"একজন নর্মাল মানুষ কীভাবে এমন দানবে পরিনত হতে পারে?এমন একটা বিষ মানুষের শরীরে মিশে গেল কীভাবে? আর এদের কে শেষ করার উপাই কী?"

"একজন বিজ্ঞানীর কাছে সবকিছুই সম্ভব।" আমার কথার উত্তরে অন্য দিক থেকে কেউ একজন বলল। সেটা কে দেখার জন্য আমি এদিক ওদিক তাকাতেই,অফিসারদের মতো পোশাক পরা একজন আমার দিকেই এগিয়ে এল। আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম তখনই অ্যালবার্ট বলল," ইনিই উইলসন আঙ্কেল। এই জঙ্গলের ফরেস্ট অফিসার। যিনি এইমাত্র গুলি করে ওই মানুষ রূপী দানবটাকে মারলেন।" 

এরপর অ্যালবার্ট, মিঃ উইলসনকে আমার ব্যাপারে সব কিছু বলল।


অ্যালবার্টের কথায় মিঃ উইলসন, আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন এবং বলতে শুরু করলেন," একজন বিজ্ঞানীর কাছে তো সবই সম্ভব। ঠিক সেই রকমই এই মানুষ রূপী দানব গুলোও এক রিসার্চার বিজ্ঞানীর ভয়ংকর আবিষ্কার। যেগুলো এখন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে ডক্টর রিচার্ড নামে এক বিজ্ঞানী, পাইথন সাপের কোশ নিয়ে গবেষণা করছিলেন, ঠিক তখনই তিনি এই কোশ থেকে একপ্রকার প্লাজমা লিকুইড তৈরী করেন। যেটা মানুষের রক্তে মিশে আজকের এই মানুষ রূপী দানব তৈরী হয়েছে। কিন্তু ওই বিজ্ঞানী তখন জানতেন না যে , তাঁর এই আবিষ্কার মানুষকে দানবে পরিনত করবে। তিনি শুধু এইটুকুই জানতেন যে ওই প্লাজমা লিকুইড মানুষের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটাবে। তাই তিনি আর কিছু না ভেবে ওই লিকুইডটিকে পরীক্ষা করার জন্য নিজেই নিজের শরীরকে ইনজেক্ট করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে পরিবর্তন। ওই বিজ্ঞানী দানবে পরিনত হন এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর, মানুষের রক্তের প্রতি লালসা বেড়ে ওঠে। তিনি তখনিই তার কাছেই থাকা একজন সহকারী বিজ্ঞানীর রক্ত শুষে নেন তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অক্টোপাসের মতো ওই শোষকের সাহায্যে। ঠিক কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই সহকারী বিজ্ঞানীও মানুষ রূপী দানবে পরিনত হয়ে যান। ঠিক সেই সময়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরও একজন সহকারী বিজ্ঞানী, যিনি ছিলেন ওই সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি সেই মুহূর্তেই নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান এবং এই সব কিছুর বর্ণনা দিয়ে প্রধান বিজ্ঞানী মহলে খবর দেন। সেখান থেকে কিছু সিকিউরিটি অফিসারদের পাঠানো হয় ওই মানুষ রূপী দানবদের ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু অফিসারও মানুষ রূপী দানবে পরিনত হয়। শেষ পর্যন্ত ওদের ধ্বংস করার কোনো উপাই না দেখে, অন্যান্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শে ওই সমস্ত ল্যাবরেটরিসহ ওই মানুষ রূপী দানব গুলোকে পুড়িয়ে মারা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ল্যাবরেটরির সাথে ওই প্লাজমা লিকুইডটা পুড়ে শেষ হয়ে যাইনি। কারণ অন্য একজন লোভী বিজ্ঞানী, ওই লিকুইডটিকে নিজের কাজে লাগানোর জন্য চুরি করে নিয়ে যায়, তার নাম হল ডক্টর পেল্ । যিনি এই মেক্সিকোর জঙ্গলের মধ্যে ওই প্লাজমা লিকুইড নিয়ে গবেষণা করে ওই লিকুইডটিকে আরো ক্ষতরনাক করে তোলে, ঠিক মানুষ মারার যন্ত্রের মতো । আর তার পরই এই জঙ্গলে বেড়াতে বা অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে আসা বিভিন্ন লোককে কিডন্যাপ করে, তাদের শরীরে ওই বিষাক্ত প্লাজমা লিকুইড ইনজেক্ট করে তাদের ওই ভয়ংকর মানুষ রূপী দানবে পরিনত করে এই জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবং ওরা জঙ্গলে ঘুরে আরো অন্য মানুষের রক্ত চুষে তাদের এই বিষে ইনফেক্ট করে। এমনি করেই চলতে থাকে মানুষ মেরে দানব তৈরীর পক্রিয়া।"


এই কথাগুলো শুনে আমি ভাবলাম," কি করে একজন বিজ্ঞানী এমন কাজ করতে পারে? বিজ্ঞানীরাতো মানুষকে বাঁচানোর জন্য কিংবা মানব সভ্যতার উন্নতির জন্য নতুন নতুন আবিষ্কারে মত্ত হয়ে থাকেন। আর এই ডক্টর পেল্!! ওকে তো আমার একজন বিজ্ঞানী ভাবতেও ঘৃণা বোধ হচ্ছে। উনি কি মানুষ না কোনো জানোয়ার? না, ওনাকে জানোয়ার বললেও , জানোয়ারকে অপমান করা হবে।" 


আমি আবার বলি," তাহলে মিঃ উইলসন, আপনারা যখন এতো কিছুই জানেন তাহলে ডক্টর পেল-কে এরেস্ট করছেন না কেন? ওনাকে এরেস্ট করতে যত দেরি হবে ততই বিপদ আরো বাড়বে। কারণ, ওনার তৈরী মানুষ রূপী দানব গুলোও সংখ্যায় বাড়তে থাকবে এবং হয়তো কিছু সময় পর এরা এই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বসতি এলাকার মানুষদের মারতে শুরু করবে।"


আমার কথা শুনে মিঃ উইলসন বললেন," হ্যা, ঠিক সেই জন্যই আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আমি সত্যিই নিরুপায়, আমরা ডক্টর পেল্ কে ধরতে সক্ষম হয়েও তাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। তার তৈরী মানুষ রূপী দানবই তাকে মেরে আর এক মানুষ রূপী দানবে পরিনত করেছিল। আর ওর হাত থেকে আমরা নিজেদের বাঁচাতে ওই বিজ্ঞানী মানুষ রূপী দানবকে গুলি করতে বাধ্য হই। কিন্ত ডক্টর পেল্ আগে থেকেই ধারণা করেছিলেন যে, পুলিশ তাকে এরেস্ট করতে আসবে। তাই তার আগেই ওই বিজ্ঞানী, ডক্টর পেল্ নিজের ভয়ংকর প্ল্যান সাকসেসফুল করে ফেলেছিল। নিজের তৈরী মানুষ রূপী দানবের সংখ্যা দিনের পর দিন একশো গুন হারে বৃদ্ধি করেছিল। এবং তাদের নিজের তৈরি এক সংরক্ষণাগারে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়েছিল।এবং তিনি আমাদের অজান্তেই ওই সংরক্ষণাগারের মেন্ গেট্ -এর কোড লক্ নিজের শরীরের সাথে যুক্ত করে রেখে ছিলেন। ঠিক এমন ভাবে, যাতে তিনি যদি এরেস্ট হন বা মারা যান তাহলে, সেই দিন-সময় থেকে সাতদিন ছ-ঘন্টা ত্রিশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড পর ওই লক্ অটোমেটিক খুলে যাবে এবং প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশী রক্ত পিপাসু মানুষ রূপী দানব এই পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে পড়ে, এই পৃথিবীকে প্রাণ শুন্য দানবে পরিনত করবে। তখন আমাদের আর কিছু করার থাকবে না। আর এই সত্যটা, তিনি দানবে পরিনত হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বলেন এবং তিনি এক নিষ্ঠুর হাসি হাসতে হাসতে দানবে পরিনত হন।"


ওনার কথা শেষ হতেই অ্যালবার্ট বলে ওঠে," আমাদের হাতে আর পাঁচ দিন ছঘন্টা ত্রিশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড আছে ওই সংরক্ষণাগার খুঁজে বের করে ওই মানুষ রূপী দানবদের শেষ করার জন্য।"


ওদের কাছে সব কিছু শুনে আমি বললাম,"কিন্তু এতোগুলো দানবকে একসাথে কিভাবে শেষ করবে?"

অ্যালবার্ট বলল,"আমাদের কাছে সেই ব্যাবস্থা আছে।ওই ল্যাবরেটরিটা খুজে পেলেই আমরা তার চারিদিকে ডিনামাইট লাগিয়ে দিয়ে সমস্ত ল্যাবরেটরিসহ ওই মানুষ রূপী দানব গুলোকে পুড়িয়ে শেষ করে দেব।" 


এটা শুনে আমার একটু হলেও হাসি পেল কিন্তু আমি হাসিটা সংবরণ করে বললাম," আপনারা কি ওই বিজ্ঞানীকে এতোই বোকা ভেবেছেন? উনি এই রকম দানব বানিয়েছেন এবং ওদের জন্য সবার অগোচরে এক আধুনিক মডেলের অর্থাৎ নিজের শরীরের সাথে কোড লক্ যুক্ত এমন সিকিওর ল্যাবরেটরি বানিয়েছেন। সেটা কি ওই ডিনামাইটের আগুনে শেষ হতে পারে কি??একটু ভেবে দেখুন।তিনি হয়তো এই সব থেকে ল্যাবরেটরি সুরক্ষিত করার জন্য কিছু আধুনিক সিকিউরিটি ব্যাবস্থা করে রেখে গেছেন।"


আমার এই রকম কথা শুনে মিঃ উইলসন কিছু একটা ভাবলেন এবং একটু হতাশার সুরে বললেন," তুমি একদম ঠিক কথা বলেছ উল্কাগ্নী।কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপাই নেই,আমাদের চেষ্টা করে যে ভাবেই হোক ওই দানব গুলোকে মেরে পৃথিবীর মানুষদের বাঁচাতে হবে।আর শোনো আমার ছেলে কার্ল অন্য একটি গাড়িতে কিছু অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে দানবের খোঁজে আগেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেছে। সম্ভবত ও তোমার বন্ধুদের পেয়ে থাকবে।

কিন্তু তার আগে তোমাকে কোনো সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে দিতে হবে, নাহলে..."


আমি ওনার কথায় বাধা দিয়ে, জোড় দিয়েই বললাম," না। আমি আপনাদের সঙ্গেই যাবো।এই পৃথিবী আমারও,তাই একে রক্ষা করার দায়িত্ব আমারও আছে। ওই দানবদের আমি শেষ করবো।।আর আমার সব ফ্রেন্ডদেরও বাঁচাতে হবে, ওরাও হয়তো কোনো না কোনো বিপদে পড়েছে।আর আমাদের হাতে সময়ও অনেক কম আছে।"


হঠাৎই এমন কথাই ওনারা আর কিছুই বললেন না।শুধুমাত্র মাথা নড়িয়ে ওদের সঙ্গে যাওয়ার সম্মতি দিলেন।আমিও ওদের দুজনের সাথেই জিপগাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম।এবং সঙ্গেই আরো চার-পাঁচ জন সহকারী অফিসার জিপ্-এ উঠে বসলেন,ওনারা বন্দুক নিয়ে মিঃ উইলসনের আশেপাশেই ছিলেন। আমরা জিপে উঠলাম। জিপ্ স্টার্ট নিয়ে চলতে শুরু করলো।


 কিছুটা যেতেই দেখলাম একটা গাড়ি দাড়িয়ে আছে, ও ওটাই হয়তো কার্ল এর গাড়ি যেটার কথা মিঃ উইলসন বলছিলেন। ওই গাড়িটার কাছে আমাদের জিপটাও থামল।আমি জানালার ধারের সিটে বসেছিলাম,জানালার কাঁচটা খোলা ছিল। হঠাৎই একটা মানুষ রূপী দানব নিজের অক্টোপাসের মতো মুখটা গাড়ির জানালার কাছে এসে আমার রক্ত খাওয়ার চেষ্টা করল,এমন অবস্থায় আমি কোনো কিছু না ভেবে,জানালার ভিতর থেকেই বেশ জোরে হাতের একটা ঘুসি মারলাম ওই অক্টোপাস মুখো দানবের মুখে।হঠাৎই এমন একটা ঘুসি খেয়ে দানবটা একটা বিকট চিৎকার করে কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ল আর ওই অক্টোপাসের মতো অংশগুলো কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ল।সাথে সাথেই আমিও গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে পরলাম এবং এক ঝটকায় অ্যালবার্টের হাত থেকে বন্দুকটা কেড়ে নিয়ে,ঝিমিয়ে পড়া দানবটার অক্টোপাসের মতো মুখের মাঝখানে একটা গুলি করলাম,আর ওই অংশটি থেকে গলগল করে কালো রঙের আলকাতরার মতো রক্ত বেরিয়ে এল এবং ওই দানবটা চিৎকার করতে করতে মরে গেল।ওই চিৎকারে আরো কয়েকটা দানব এগিয়ে আসতে লাগলো, ঠিক সেই ভয়ংকর শব্দটা করতে করতে। আমি আর কিছু না শুনে না ভেবে একটার পর একটা দানবের মুখে গুলি চালালাম।একটার পর একটা দানব মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, মাটিতে কালো রক্তের বন্যা বইতে শুরু করল। না, কাছাকাছি আর কোনো দানবকে দেখতে পাচ্ছি না। আমি এবার একটু শান্ত হলাম, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।


" বাঃ! তুমিতো ভালোই বন্দুক চালাতে পারো।"পিছন থেকে কেউ একজন বলল। আমি চমকে ঘুরে তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে একহাতে বন্দুক নিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকেই।আমি কিছু বলার আগেই অ্যালবার্ট বলল,"এটা কার্ল, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।"আমি কার্ল এর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।কিন্তু একি কার্ল কাঁধে করে কাকে নিয়ে আসছে?আরে ওটাতো একটা মেয়ে, কিন্তু ওই কমলা-লাল ড্রেসটাতো খুব চেনা চেনা লাগছে। আরে,ওটাতো এঞ্জেলা পড়েছিল।তাহলে ওটা কি এঞ্জেলা?


 আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল অ্যালবার্টের কথায়। অ্যালবার্ট কার্ল এর উদ্দেশ্যে বলল,"এটা কে? কোথাই পেলি এই মেয়েটাকে?" 

কার্ল মেয়েটাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে মাটিতে শুয়ে দিল।এবং বলল,"আমরা যখন জঙ্গলের ভিতরের দিকে ওই ল্যাবরেটরিটার খোঁজ করছিলাম তখন দেখি একটা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর ওর পিছু পিছু দুটো দানব চলছে ওর রক্তের লোভে। এর মধ্যেই মেয়েটি আর দৌড়াতে না পেরে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।ঠিক সেই সময়েই আমি ওই দানব দুটোকে গুলি করে মেরে ফেলি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটির জ্ঞান ফেরেনি।তাই ওকে এখানেই নিয়ে এলাম।" 


কার্ল এর কথা শেষ না হতেই আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠি," আরে!এটাতো এঞ্জেলা।আমার বন্ধু। কাল রাতে আমরা এক সাথেই দৌড়ে ছিলাম,আমার জ্ঞান হারানোর আগে পর্যন্ত ও আমার সাথেই ছিল।ও হয়তো আতঙ্কে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। 


অ্যালবার্ট প্লিজ,আমাকে জলের বোতলটা দাও। ওর এখুনি জ্ঞান ফেরাতে হবে না হলে,আতঙ্কে ঘোরের মধ্যে এঞ্জেলার মৃত্যু ঘটতে পারে।"আমার এই রকম একটা কথা শুনে অ্যালবার্ট তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে জলের বোতলটা বের করে দিল। আর আমি বোতলটা থেকে জল নিয়ে এঞ্জেলার মুখে-চোখে জোরে জোরে জলের ছিটে দিতে লাগলাম। 


প্রায় দশ মিনিট পর এঞ্জেলা চোখ মেলে তাকালো এবং ধীরে ধীরে উঠে বসল।আমাকে সামনে দেখেই আমার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল এবং বলল," তুই বেঁচে আছিস উল্কাগ্নী?আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না।"


আমি বললাম," আমি ঠিক আছি।তুই একটু জল খা এবং একটু সুস্থ হো।আর এডওয়ার্ড?ওতো তোর সাথেই ছিল।ও কোথাই?"

এবার এঞ্জেলা বলল,"হ্যা,আমরা কাল রাতের পর তোকে না দেখতে পেয়ে, তোকে খুজতে শুরু করি।তার পর ওই মানুষের মতো দেখতে ভয়ংকর প্রাণী গুলো আমাদের পিছনে তাড়া করে। আমরা প্রচন্ড ভয় পেয়ে আর আমি এই দিকে চলে আসি আর এডওয়ার্ড ওই কালকের বড়ো গাছটার দিকে চলে যায়। তারপর কি হলো আর আমি কিছুই জানিনা।"


এরপর আমি এঞ্জেলাকে,ওই প্রাণীগুলো কীভাবে মানুষ থেকে দানবে পরিনত হয়েছে সেই ব্যাপারটা বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলি আর ও আমাদের সাথে যেতে রাজি হয়ে যায়।আমরা সবাই মিলে বিচার বিবেচনা করে,ঠিক করি যে আগে আমরা কাল রাতের ওই বড়ো গাছটার কাছে গিয়ে বাকি বন্ধুদের খোঁজ করবো এবং ওদের বাঁচিয়ে নিয়ে ল্যাবরেটরি খোঁজ করে সেটাকে শেষ করবো।অন্যদিকে,আমার বন্দুক চালানোর ধরন দেখে মিঃ উইলসন আমাকেও একটা বন্দুক দেন যাতে,সামনে আসা একসাথে অনেকগুলো দানবকে মারতে পারি।

এবার আমরা অর্থাৎ আমি,এঞ্জেলা, অ্যালবার্ট আর কার্ল সহ কিছু সহকারী অফিসার,কার্ল এর গাড়িটায় উঠি আর মিঃ উইলসন এবং বাকি অফিসারেরা জিপ্ এ উঠে পড়ে।দুটো গাড়ি একসাথে স্টার্ট নিয়ে চলতে শুরু করে আগে জিপ্ আর পিছনে আমাদের গাড়ি।


কিছুটা সময় এই ভাবেই চলছিল,হঠাৎই সেই ভয়ংকর শব্দটা আসতে শুরু করল।যতই এগিয়ে যাচ্ছি ততই শব্দটা ভয়ংকর থেকে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছে।আমরা প্রত্যেকেই সতর্ক হয়ে গেলাম।কিন্তু আমদের গাড়ির সামনের মিঃ উইলসনের জিপ্ টা হঠাৎই থেমে গেল।এতে আমরা কিছুটা চমকে গেলাম,কোনো বিপদের সংকেত বুঝতে পেরে,আমরা প্রত্যেকেই আমাদের গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম,খুব সতর্ক ভাবে বন্দুক তাক্ করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।কিন্তু সামনে যা দেখলাম তাতে শরীরে শিহরণ খেলে গেল।দিনের আলোতে একসাথে এতো গুলো মানুষ রূপী দানব কিছু একটা নিয়ে যেন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে,ঠিক সেই বড়ো গাছটার নিচে।হ্যা,সেই গাছটা যেটাতে আমি ও আমার সব বন্ধুরা কাল রাতে বিশ্রাম নিয়েছিলাম।এই বিভৎস কান্ড দেখে এঞ্জেলা আর স্থির থাকতে পারলো না,চিৎকার করে কেঁদে উঠতে গেল আর ঠিক সেই মুহূর্তে কার্ল পিছন থেকে ওর মুখটা চেপে ধরল এবং খুব আস্তে করে বলল,"কেউ কোনো চিৎকার করবে না, ওই দানব গুলো একটু শব্দ বুঝতে পারলেই আমাদের দিকেই ধেয়ে আসবে। আর তখন আর আমাদের পালানোর কোনো উপায় থাকবে না।"আমরা সবাই কার্ল এর কথা শুনে চুপ করে থাকলাম।"কিন্তু ওই দানব গুলো গাছের নিচে কি নিয়ে এতো মারামারি করছে?ওই গাছের নিচে তো সেই বড়ো গর্তটা ছিল যেটাতে কাল ইসাবেলাকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। তাহলে কি ইসাবেলাকে নিয়ে...না..না.. ভাবতেই পারছি না।"


অ্যালবার্টের কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলাম বাস্তব জগতে।অ্যালবার্ট কিছুটা সন্দেহজনক ভাবে বলল,"ওই দানবগুলোর মাঝখানে ব্ল্যাক সার্ট পরিহিত কাউকে দেখা যাচ্ছে।"আমরাও ওর কথা মতো তাকালাম,দেখি ওদের মধ্যে এডওয়ার্ড পড়ে আছে আর প্রানপনে ওই মানুষ রূপী দানবদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।


আমি বললাম,"ওটাতো এডওয়ার্ড।আমার আর একজন বন্ধু।ওকে যে ভাবেই হোক বাঁচাতে হবে।"

কিন্তু মিঃ উইলসন বললেন,"অতো গুলো দানবের মধ্যে থেকে এডওয়ার্ডকে বের করে আনা অসম্ভব,এতে আমদেরও প্রান হানি ঘটতে পারে।"


ওনার কথা শুনে আমার মাথায় রাগ চেপে গেল।"একজন অতো গুলো দানবের মধ্যে থেকেও বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে আর এরা বাইরে দাঁড়িয়ে ভয়ে মরে যাচ্ছে। এরা নাকি অফিসার!!"


আমি বেশ মেজাজের সাথেই বললাম," কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে মজা দেখুন।আমি একাই যাবো আমার বন্ধুদের বাঁচাতে।" 


হঠাৎই আমার এমন কথায় মিঃ উইলসন সহ সবারই মগজের কোষ নড়ে উঠলো। আর সাথে সাথেই এঞ্জেলা বলে উঠল, "আমিও যাব তোর সাথে।" 


এঞ্জেলা যত ভীতুই হোক না কেন আমাদের বন্ধুদের কেউ বিপদে পড়লেই এঞ্জেলাও সাহসী হয়ে ওঠে।অন্যদিকে অ্যালবার্ট ও কার্ল কিছু অস্ত্র হাতে নিয়ে জোর গলায় বলল,"আমরাও এডওয়ার্ডকে বাঁচাতে তোমাদের সাথেই যাব এবং সাহায্য করবো।"এবার মিঃ উইলসন আর চুপ থাকতে পারলেন না,একপ্রকার বাধ্য হয়েই তিনি নিজের পাঁচজন সহকারী অফিসারকে আমদের সাথে যেতে বললেন।এবার আর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি একটা প্ল্যান বানিয়ে ফেললাম আর প্ল্যান মতো কাজ শুরু করে দিলাম। আমি দৌড়ে কিছুটা দূরে সরে একটা জোরালো চিৎকার করে একটা সশব্দে গুলি চালালাম,যাতে ওই সব দানব গুলো এডওয়ার্ড কে ছেড়ে আমার দিকে ধেয়ে আসে।আর হলও ঠিক তাই,গুলির শব্দ আর চিৎকার শুনে ওরা আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল এবং আর দিকে এগিয়ে আসতে লাগল ভয়ংকর শব্দ করতে করতে। আর আমিও দৌড়াতে শুরু করলাম।আর ওই দানব গুলো আমার পিছনে পিছনে আসতে শুরু করল।আর কিছুটা দুরে প্ল্যান মতো ডিনামাইট লাগিয়ে রেখে ছিল অ্যালবার্ট।আমি লাফিয়ে ডিনামাইট টাচ্ না করে এগিয়ে গেলাম আর ওই দানব গুলো ডিনামাইটের কাছে আসতেই "বুম..ম ....বুম...."।ডিনামাইটের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল ওই দানবগুলো। কিন্তু এর পরেও অর্ধ পোড়া অবস্থায় দুটো দানব, রক্তের লোভে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল,আর কোনো উপাই না দেখে আমি ওদের দুজনের অক্টোপাসের ন্যায় মুখ লক্ষ্য করে গুলি করলাম। দুজনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা গেল। 


অ্যালবার্ট কাছেই ছিল,আমি একটা জয়ের হাসি হেসে অ্যালবার্টের সঙ্গে গাছটার দিকে এগিয়ে গেলাম।ততক্ষণে কার্ল আর এঞ্জেলা আর কিছু অফিসার মিলে এডওয়ার্ডকে উদ্ধার করেছে এবং সঙ্গে ইসাবেলাকেও। কারণ ইসাবেলা ওই গর্তটার মধ্যেই ছিল। এতক্ষণে মিঃ উইলসন এগিয়ে এলেন এবং বললেন," কনগ্রাচুলেশনস্ উল্কাগ্নী। সত্যিই তুমি জিনিয়াস।তুমি না থাকলে ওদের বাঁচানো সম্ভব হতো না।একটা সাধারণ প্ল্যান করে অতো গুলো দানবকে একসাথে মেরে ফেললে।"আমি শুধুমাত্র একটু হেসে ধন্যবাদ জানালাম।কেন জানি না ওনাকে কেমন যেন একটা সন্দেহ লাগল।আরো দুই বন্ধুকে খুঁজে পেয়ে আমার মনে একটু হলেও খুশির উদয় হলো।এরপর ইসাবেলা আর এডওয়ার্ডকে আমাদের গাড়িতে তুলে নিলাম।এবং দুটো গাড়ি আবার ল্যাবরেটরি আর আমার বন্ধুদের খোঁজে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলতে শুরু করলো।


অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি চলছে, অন্যদিকে অন্ধকারও হয়ে গেছে। রাতে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা খুঁজতে হবে,গাড়ির মধ্যে এতজনের বিশ্রাম নেওয়া সম্ভব নয় আবার রাতে বাইরে থাকাও বিপজ্জনক।ওই যে সামনে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে,মনে হচ্ছে কোনো পুরোনো ফার্ম হাউস্। বাড়িটার সামনে আমাদের দুটো গাড়ি থামল।সবাই গাড়ি থেকে নেমে এলাম, কাছাকাছি আর কোনো দানবকে দেখা যাচ্ছে না তাই কিছু সময়ের জন্য নিশ্চিন্ত। সবাই মিলে ঠিক করা হল যে আজ রাতে এখানে থাকাই নিরাপদ।নিজের নিজের জিনিসপত্র নিয়ে এগিয়ে গেলাম বাড়িটার মেন্ গেট্ এর সামনে,গেটটাই একটা মরচে পড়া তালা ঝুলছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে বহুদিন কেউ এখানে আসেনি।যাইহোক, আমাদের ভিতরে যেতে হবে তাই আর সময় নষ্ট না করে একটা ছোট ইঁট নিয়ে তালাটাই আঘাত করতেই তালাটা ভেঙে গেল,আর আমরা বাড়িটার ভিতরে ঢুকে পড়লাম এবং ভিতর থেকে গেটটা বন্ধ করে দিলাম যাতে ওই দানবগুলো ভিতরে না ঢুকতে পারে।

     

  বাড়িটা দোতলা,তাই অনেকগুলো ঘর। ঘরের মেঝেতে এক ইঞ্চি পুরু ধুলোর স্তর আর সারা ঘরে মাকড়সার জালে ভর্তি।ওপরে দুটো ঘর আর নীচে তিনটে।আর ঠিক সিঁড়ির পাশে বাথরুম আর একটা ছোট্ট কিচেন।সব ঘর গুলো ঘুরে দেখার পর ঠিক হল, আমি, এঞ্জেলা আর ইসাবেলা দোতলার একটা রুমে থাকবো আর অ্যালবার্ট, কার্ল আর এডওয়ার্ড তার পাশের রুমে।আর মিঃ উইলসন সহ আরো দশ-বারো জন অফিসার নিচের তিনটে রুমে নিজেদের মতো থাকবে।এবার আমরা নিজের নিজের ঠিক করা রুম থাকার মতো পরিষ্কার করে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলাম।সকাল থেকে ঠিক মত খাওয়া হয়নি তাই সঙ্গে থাকা কিছু খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম,ক্লান্ত লাগছিল,তাই ঘুমটা আসতেও দেরি হল না আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমটা গভীর হল।


  হঠাৎই একটা অস্বাভাবিক শব্দে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল।ঘরের মোমবাতির আলোটা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।মোবাইলের টর্চটা অন্ করে আরো দুটো মোমবাতি জ্বালালাম ঘরটা সম্পূর্ণ আলো হয়ে গেল। না,ঘরে তো কিছু নেই,তাহলে শব্দটা কিসের?শব্দটা আরো জোরালো হতে লাগল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ভোর সারে তিনটে।পাশে শুয়ে থাকা এঞ্জেলা আর ইসাবেলাকে ডাকলাম।অন্যদিকে রুমের দরজায় কেউ খুব জোরে ধাক্কা দিচ্ছে।সামনে পড়ে থাকা একটা লাঠি নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম," কে?" ওপাশ থেকে বলল,"আমি অ্যালবার্ট।তাড়াতাড়ি দরজাটা খোলো।"

 

আমি একটু ভেবেই,লাঠিটা ফেলে তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে দিলাম।অ্যালবার্ট হাঁপাচ্ছে,চোখেমুখে আতঙ্কের চিহ্ন সুস্পষ্ট।আমরা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ও বলতে শুরু করলো,"আমাদের সবার খুব বিপদ,প্রায় একশোরও বেশি মানুষ রূপী দানব এই গোটা বাড়িটার উপর হামলা চালাচ্ছে।ওরা সবাই আমাদের রক্তের গন্ধ পেয়ে গেছে,ওরা ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করেছে।যে কোনো সময়ে ওরা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়বে।তাই আমদের লুকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপাই নেই,সবাই রুমের দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে থাকবে,আর কাল দুপুর না হওয়া পর্যন্ত কেউ দরজা খুলে বাইরে আসবেনা।"এই পর্যন্ত বলে দুটো বন্দুক আর কিছু গুলি হাতে দিয়ে আমাদের রুমে থেকে দৌড়ে বেরিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেল।কথাগুলো শুনেই ইসাবেলা দিকবিদিক শুন্য হয়ে মাটিতে বসে পড়ল আর এঞ্জেলা,ইসাবেলাকে তাড়াতাড়ি জল খাইয়ে শান্ত করতে লাগল।অন্যদিকে, আমি তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।এঞ্জেলা আর ইসাবেলাকে একটু শান্ত হতে বলে একটা মোমবাতি নিয়ে ঘরের জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং নিচের দিকে তাকিয়ে অগনিত দানবকে দেখলাম যারা রক্ত খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছে।আর কিছু না ভেবে, বাড়িটার সব থেকে কাছে থাকা একটা দানবের মুখে বন্দুক তাক্ করে গুলি করলাম।আর অতো দুর থেকে হলেও গুলিটা ঠিক নিশানায় লাগলো,দানবটা ছিটকে পড়ে মারা গেল আর অন্য দানব গুলোও মনে হল যেন একটু ঘাবড়ে গিয়ে বাড়িটা থেকে কিছুটা পিছিয়ে গেল।এবার সুযোগ বুঝে পরপর বেশ কয়েকটা গুলি করলাম,প্রায় দশ-পনেরো জন দানব মারা গেল,আর পাশের ঘরের জানালা থেকে অ্যালবার্টরা আমার গুলি করা দেখে ওরাও দানবদের গুলি করে মারতে শুরু করেছে। কিন্তু আর কত দানবকে মারবো?শেষই হয় না।কিছুক্ষণ গুলি চলার পর ওদের দরজা ধাক্কা-ধাক্কি বন্ধ হয় এক বা দুঘন্টার জন্য..আবার শুরু হয় একই অত্যাচার।

এমনি করে সকাল হল,এরপর দুপুর হল, দুপুর গড়িয়ে রাত হল।এভাবেই আরো দুটো দিন দুটো রাত পার হয়ে গেল আমরা ওই বাড়িটার মধ্যেই আটকে রইলাম। ভাগ্যিস ওই দানব গুলো বাড়ির মেন গেটটা ভাঙতে পারেনি নাহলে আমরাও আর বাঁচতাম না,ওদের মতো দানব হয়ে ঘুরে বেড়াতাম।


  তিন দিনের দিন দুপুরে ওই দানবের অত্যাচার কিছুটা হলেও কমলো।আর এই ভাবে বসে থাকা যায় না।আমদের এখান থেকে বেরুতেই হবে এবং খুব তাড়াতাড়িই ওই সংরক্ষণাগার খুঁজে সমস্ত দানবদের ধ্বংস করতে হবে।সবাই এতে রাজি হল, হাতে বন্দুক নিয়ে বাড়িটার গেট খুলে বাকি দানবদেব এড়িয়ে আমি দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে গেলাম এবং গাড়িটা ড্রাইভ করে বাড়ির গেটের কাছে নিয়ে এলাম। এঞ্জেলা, ইসাবেলা, এডওয়ার্ড, অ্যালবার্ট আর কার্ল সহ দুই জন অফিসার এই গাড়িটাই উঠে পড়ল।আর মিঃ উইলসন এবং বাকি অফিসারেরা জিপ্ এ ওঠার সময়ে চারজন অফিসার ওই দানবগুলোর শিকার হয়ে গেল।আমদের আর কিছু করার নেই,ওই আহত অফিসাররা দানব রূপ নেওয়ার আগেই,মিঃ উইলসন তাদের গুলি করে হত্যা করলেন।আমরা তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে ওই দানব গুলোর হাত থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলাম।


অনেকটা জঙ্গলের ভেতর চলে এসেছি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু এখনও ওই গোপন সংরক্ষণাগারের দেখা পাই নি।এবং আমার বাকি চারজন বন্ধুদের কোনো খোঁজ নেই। আর আমাদের হাতে মাত্র ত্রিশ ঘন্টা ত্রিশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড সময় আছে।এর মধ্যেই যে ভাবেই হোক ওই ল্যাবরেটরিটা খুজে বের করতে হবে।কিন্তু এই রাত্রের অন্ধকারে কোনো কিছুই খোঁজা সম্ভব নয়,কাল সকালের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।এবং আজ রাতটা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটা নিরাপদ জায়গা খুঁজতে হবে।আমি সেই তখন থেকে গাড়ি ড্রাইভ করছি খুব ক্লান্ত লাগছে, দুটো রাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারি নি।আমি কার্লকে গাড়িটা ড্রাইভ করতে বললাম এবং সাথে সাথেই কার্ল ড্রাইভার সিটে চলে গেল আর আমি পিছনের সিটে চলে এলাম এবং চোখ বন্ধ করতেই চোখের পাতায় ঘুমের ঢেউ নেমে এলো।কেউ কেউ আগেই গাড়িতে একটু ঘুমিয়ে নিয়েছিল।কতক্ষণ ধরে ঘুমিয়েছি জানি না,গাড়িটা ব্রেক কষতেই ঘুমটা ভেঙে গেল।চোখ খুলেই ঘড়ির দিকে তাকালাম, 10:30 pm. 

"কি হল? গাড়ি থামালে কেন?" বলতেই অ্যালবার্ট সামনের সিট থেকেই বলল," সামনে একটা বাংলো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আর তার আশেপাশেও কেউ নেই।ওখানে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।"


আমি বললাম,"বাংলো বাড়ি? তাও আবার এই গভীর ভয়ানক জঙ্গলে?গাড়িটা বাংলোর সামনে দাঁড় করাও।দেখতে হবে জায়গাটা নিরাপদ কিনা।সবাই সাবধান হয়ে যাও।"


গাড়িটা দাঁড়াতেই আমরা সাবধানে নেমে এলাম।অন্যদিকে মিঃ উইলসনও জিপ্ থেকে এলেন।এদিক-ওদিক লাইট ফেলতেই একটা সাইন বোর্ড দেখলাম বাংলোর সামনে, তাতে লেখা "হন্টেড হাউস্, দ্য কিলার ওয়ান"।ওটা দেখে প্রায় সবাই ভয়ে চিৎকার করে উঠল এবং আমারও গা-টা ছমছম করে উঠল। সবাই আলোচনা করতে শুরু করল,এখানে থাকা সম্ভব নয়। আর আমি অন্য দিকে আলো ফেলতেই ঝোঁপের মধ্যে একটা দোমড়ানো পোস্টার দেখতে পেলাম।ওদের সবার আলোচনার সুযোগের আমি ঝোপটা থেকে পোস্টারটা তুলে,তাড়াতাড়ি দেখেই সবার অলক্ষ্যে নিজের ব্যাগে ভরে নিলাম।


এবার সবার আলোচনা থামিয়ে বললাম," এই ভয়ানক জঙ্গলের মানুষ রূপী দানব গুলোর থেকে এই হন্টেড হাউস্ অনেক ভালো।তাই দানব হয়ে ঘুরে বেড়ানোর থেকে এই বাংলোর ভিতরে যাওয়ায় ভালো।" আমার এই রকম কথা শুনে সবাই কেমন থতমত খেয়ে গেল।কিন্তু মিঃ উইলসন এই প্রথমবার আমার কথার সঙ্গে একমত হয়ে বললেন,"এর থেকে আর নিরাপদ জায়গা আর হতেই পারে না। চলো সবাই ভিতরে যাওয়া যাক্।"এই বলেই তিনি হনহন করে বাংলোর গেটের দিকে চলে গেলেন আর তার পিছনে অন্য অফিসাররাও।এবার মিঃ উইলসনের উপর আমার গভীর সন্দেহ হল।এমন সময়ে হঠাৎই কার্ল আমাদের বলল,"বাবাকে আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে।"এবার অ্যালবার্টও মুখ খুলল,"আমার তো প্রথম থেকেই আঙ্কেলকে সন্দেহ লাগছে।" 


আমি বললাম,"কি রকম সন্দেহ?" অ্যালবার্ট বলল,"ঠিক সিয়র নয় কিন্তু,এই সব ঘটনার পিছনে আঙ্কেল নেই তো? মানে জেনেবুঝে ভুল পথে যাচ্ছি নাতো?"


এমন সময়ে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিঃ উইলসন আবার ডাক দিলেন। 

কার্ল আমাদের সতর্ক থাকতে বলে এগিয়ে গেল আর আমরাও গেলাম পিছনে পিছনে।বাংলোর গেটের সামনে যেতেই দেখলাম গেট খোলা আর আশেপাশে অনেক রক্ত পড়ে আছে,মনে হচ্ছে যেন কিছুক্ষন আগে মানুষ রূপী দানবের হামলা হয়ে গেছে।ওপরে দিকে তাকিয়ে কিছুটা হলেও চমকে উঠলাম।দেখি উপরের একটা জানালায় আলো দেখা যাচ্ছে এবং সেই আলোতে একটা মানুষের ছায়া খুব ব্যস্ত ভাবে কিছু একটা করছে।এটা যে ভুত নয় সেটা আমি নিশ্চিত।তাই আর কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বললাম না।সবাই বাংলোর ভিতরে ঢুকে পড়লাম।এক তলায় বড়ো বড়ো চারটে ঘর আর একপাশে উপরে যাওয়ার সিঁড়ি।আমি ওপরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম।কিন্তু হঠাৎই মিঃ উইলসনের গলার আওয়াজে থমকে গেলাম।তিনি খুব গম্ভীর মুখে আমাকে ওপরে যেতে নিষেধ করলেন।কিন্তু আমি তার কথা না শুনে এগিয়ে গেলাম।এবার তিনি মেজাজের সঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন।তার এই রকম ব্যাবহারে সবাই চমকে গেল।আমি এবার নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, মিঃ উইলসন কোনো না কোনো ভাবে এই সব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।আমি আর কথা বাড়ালাম না একটা রুম ঠিক করে সেখানে চলে গেলাম।সবাই নিজেদের রুমে চলে গেল।


প্রায় রাত আড়াইটা,আমি রুম থেকে বন্দুক হাতে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম।এবং সেখানে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু স্থির হয়ে গেল।এসব আমি কি দেখছি...একটা বিশালাকার বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি।....ধীরে ধীরে আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম, পৃথিবী থেকে অনেক লুপ্ত হওয়া জিনিসও এখানে সংরক্ষিত আছে।আরে এটা!! এটাতো সেই পাইথনটা...যেটা সেদিন রাতে ওই দানবগুলোর হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছিল।কিন্তু এটা এখানে এল কীভাবে?আর কে ই বা আনল এটাকে বন্দি করার জন্য?এই সব ভাবতে ভাবতে পাইথনটার দিকে তাকালাম।


পাইথনটা,কাঁচের বাক্সের ভিতর থেকে এক দৃষ্টে আমার দিকে চেয়ে আছে,যেন বলতে চাইছে,"আমাকে এখান থেকে মুক্ত করো।আমাকে বাঁচাও।"

আমার চোখে জল এসে গেল। ওই পাইথনটাকে আমি সেদিনের জন্য মন থেকে ধন্যবাদ জানালাম।কিন্তু এটা এখানে বন্দি হল কিভাবে?আমি আর কিছু না ভেবে ওই কাঁচের বাক্সটা খুলে পাইথনটাকে মুক্ত করে দিলাম কিন্তু সে আমার কোন ক্ষতি না করে আমার পাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে পড়ল।সত্যিই এই পাইথনের মতো ভয়ানক সাপও ভালোবাসা আর উপকার দুই-ই বোঝে।আমি ওকে চলে যেতে বলে আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।


এবার আমার সামনে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। দেখলাম," একজন লোক সম্ভবত একজন বিজ্ঞানী একটা মানুষ রূপী দানবকে নিয়ে রিসার্চ করছে আর মিঃ উইলসন দু-ব্যাগ টাকা তার হাতে তুলে দিচ্ছে। আমাকে দেখেই ওরা চমকে উঠল আর আমার দিকে বন্দুক তাক্ করে এগিয়ে এল এবং বলল," ওহ্ তাহলে তুমি সব কিছুই জেনে গেছ! "


আমি একটুও ভয় না পেয়ে বললাম," সব কিছুই আর জানলাম কোথাই? আপনারা তো সব কিছু গোপন করেই রেখেছেন। "


মিঃ উইলসন এক নিষ্ঠুর হাসি হেসে বললেন," তুই তো এবার মরবি, তাই তোকে বলতে আর আপত্তি নেই, তাহলে শোন, আমি পাঁচ বছর আগে এই ভয়ানক প্লাজমা লিকুইডের আবিষ্কারক ডক্টর রিচার্ড এর বডিগার্ড ছিলাম আর আমি ওই লিকুইডটার সম্পর্কে সব কিছুই জানতাম। তাই যখন শুনলাম ওই দানবগুলো আর ওই লিকুইডটিকে শেষ করে দেওয়ার প্ল্যান করছে বিজ্ঞানী মহল। ঠিক তখনই আমি ল্যাবরেটরি থেকে ওটা চুরি করি আর এটাকে মানুষ মারার যন্ত্রের মতো ব্যবহার করার কথা ভাবি। আর এই কাজে আমাকে সাহায্য করে ডক্টর পেল্ আর এই ডক্টর ফ্রান্সিস্। ওরা দুজনে এই জঙ্গলে নিজের নিজের ল্যাবরেটরি বানিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। আর আমি এই জঙ্গলের ফরেস্ট অফিসারের কাজ নিয়ে ওদের সাহায্য করতে থাকি। কিন্তু এর মধ্যে তোদের টিম এসে সব প্ল্যান ভেস্তে দেয়। তাই আমরা একটা নতুন প্ল্যান করি এবং তোদের সবাইকে একে একে খুঁজে উদ্ধার করে তোদের সামনে ভালো সাজার অভিনয় করে,তোদের প্ল্যানের জালে ফাঁসিয়ে এবং আরো বোকা বানিয়ে এখানে নিয়ে আসি; তোদের সবাইকে একসাথে মেরে দানব বানাবো বলে, কিন্তু তুই এসে আরো গোলমাল করে দিলি।"


আমি এই সন্দেহ আগেই করেছিলাম তাই আর আশ্চর্যের কিছু নেই, তাই বললাম," শুধু গোলমাল কেন? সমস্ত দানবদেরও আমিই ধ্বংস করব।"


এই কথা শোনার সাথে সাথেই মিঃ উইলসন ক্ষেপে উঠলেন এবং আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বললেন," তোর মরার খুব ইচ্ছা হয়েছে। মরতে তো তোকে হবেই ।" আমি ভয় না পেয়ে বললাম," কিন্তু অ্যালবার্ট আর কার্লের কি হবে? আর কার্ল তো আপনার নিজের ছেলে। ওরাতো আপনার সাথেই এসেছে।" আমার এমন কথা শুনে মিঃ উইলসন দাঁত চিবিয়ে বললেন," ওরাও মরবে। কার্ল আমার ছেলে তো কি হয়েছে ও তো আর টাকার থেকে বড়ো নয়।তোরা সবাই মরবি আর আগে তুই।" 


কথাটা বলেই এবার বন্দুকের ট্রিগারটা টিপটে যাবেন এমন সময়ে অ্যালবার্ট, মিঃ উইলসনের হাতে গুলি করল। বন্দুকটা ছিটকে গেল ওনার হাত থেকে। তার মানে অ্যালবার্ট আমাকে লক্ষ্য করে আমার পিছু পিছু উপরে এসে পৌঁছে ছিল। গুলি আর চিৎকারের আওয়াজ শুনে,ততক্ষণে সবাই চলে এসেছে। এবার ডক্টর ফ্রান্সিস্ এক নিষ্ঠুর হাসি হেসে বললেন," এবার নিজের বন্ধুকে চোখের সামনে, ল্যাবের 'গিনিপিগ' হিসেবে ব্যবহার হতে দেখবে।" ওনার কথা শুনে তাকিয়ে দেখি, উনি একহাতে আমার বন্ধু জেনিকে ধরে রেখেছেন আর অন্য হাতে একটা বড়ো ইনজেকশন সিরিঞ্জ।


"জেনি? জেনি এখানে এল কিভাবে? ও তো ওই বড়ো গাছটার উপরে ছিল। আর জন্ স্মিথ, এলিস কোথায় তাহলে?

কিন্তু এখন আর সময় নষ্ট করা যাবে না, জেনিকে ডক্টর ফ্রান্সিসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।কিন্তু কি করব ভেবে পাচ্ছি না। জেনি কে কিভাবে বাঁচাবো? এমন সময়ে ঘটল এক অবিশ্বাস্য কান্ড, কোথাই থেকে সেই পাইথনটা ডক্টর ফ্রান্সিস্ এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে গিলতে লাগল। আর জেনি কিছুটা দুরে ছিটকে পড়ল। আমরা কিছুটা চমকে উঠলাম। সেই সময়ে মিঃ উইলসন ভয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন," এই ভয়ানক পাইথনটা বাইরে এল কিভাবে? মানুষকে দানবে পরিনত করার এই বিষাক্ত প্লাজমা লিকুইডটা এই পাইথনটার কোষ থেকেই তৈরী হয়ে ছিল। এ বাইরে থাকলে আর আমাদের কাউকে জীবিত রাখবে না।" কথাটা শেষ করার সাথে সাথে তিনি পালানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু কার্ল তাকে ধরে ফেলল। কিন্তু তিনি পালানোর জন্য নিজের ছেলে কার্লকে মারতে উদ্যত হলেন এমন সময়ে পাইথনটা, মিঃ উইলসনকে ছিনিয়ে নিয়ে গিলতে শুরু করল। এবার কার্লের জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগল কারন, মি: উইলসন যত খারাপ হোক না কেন কিন্তু এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, তিনি কার্ল এর বাবা।অ্যালবার্ট আর এডওয়ার্ড, কার্লকে জোর করে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এল এবং আমরা জেনিকে সঙ্গে নিয়ে সবাই কোনো রকমে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম। কিন্তু ,জেনি যাতে পালাতে না পারে সেই জন্য,ওরা হয়তো জেনির শরীরে কোনো ড্রাগ ইনজেকশন ইনজেক্ট করে ছিল। তাই জেনি সোজা ভাবে দাঁড়াতে পারছিল না, বার বার ঝিমিয়ে পড়ছিল। আমরা ওকে সবাই মিলে ধরে নীচে নামিয়ে আনছিলাম। কিন্তু,আমদের সাথে থাকা চারজন অফিসার ছাড়া সবাই মিঃ উইলসনের সাহায্যকারী ছিল। তারা আমাদের পথ আটকালো।


কিন্তু আবার পাইথনটা ওপর থেকে ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং আমাদের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিল। আমরা তাকে মন থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওই বাংলো থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠলাম। গাড়িতে উঠে এডওয়ার্ড, কার্লের সাথে অন্য উল্টো-পালটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করল,যাতে ও একটু ভালো অনুভব করে।অ্যালবার্ট ড্রাইভ করতে শুরু করল।সকাল হয়ে গেছে। আমিও গাড়িতে উঠে ,জেনিকে জল খাওয়ালাম এবং ওর চোখেমুখে জলের ছিটে দিলাম। ও একটু  স্বাভাবিক হয়ে উঠে বসল। আমি ওকে  জিজ্ঞাসা করলাম," জেনি তুই এই ল্যাবরেটরির মধ্যে কিকরে এলি? আর বাকি বন্ধুরা কোথায় গেল?"


জেনি একটু সুস্থ হয়ে বলল, " সেদিন রাত্রে তোদের তিনজনের চলে যাওয়ার পর, কতকগুলো ওই ভয়ংকর প্রাণী আমাদের রক্তের লোভে গাছের উপর চড়তে শুরু করে। তখন আমরা গাছ থেকে যেদিক সেদিকে লাফিয়ে নেমে পড়ে আমরা চারজনেই প্রানপনে দৌড়াতে থাকি। তখনও ইসাবেলা ওই গর্তটার মধ্যেই সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু ওই ঘন অন্ধকারের মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে, আমি ওদের তিনজনের থেকে আলাদা হয়ে পড়ি। এবং হঠাৎই ওই রাক্ষসগুলো সহ একটা বিশালাকার পাইথন সাপ আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, আর আমি ভয় পেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে মাটির নীচের একটা গুহামুখ দেখে সেখানে ঢুকে পড়ি। কিন্তু, ভিতরে ঢুকে যা দেখি তা ছিল কল্পনারও বাইরে। ওটা একটা গুপ্ত ল্যাবরেটরি, যার চারপাশ ওই রাক্ষসগুলোর মৃত দেহতে পরিপূর্ণ। আর তার পাশে ল্যাবকোর্ট পরিহিত দুজন বিজ্ঞানী আর একজন অফিসার দাড়িয়ে ছিল। আমি তাদের কাছে সব কিছু জানিয়ে সাহায্য চাই, কিন্তু কেন জানিনা ওনারা আমাকে দেখে হকচকিয়ে যান এবং ওই অফিসার তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে, আমাকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন। এরপর ওনারা আমাকে এক গ্লাস জল খেতে দেন। কিন্তু জলটা খাওয়ার পর আমার মাথাটা কেমন যেন ঘুরতে লাগে এবং ওই ঘোরের মধ্যেই ওনারা আমাকে একটা ইনজেকশন দেন আর তার পরই আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। কিন্তু কিভাবে যে আমি এই ল্যাবরেটরিতে এলাম,কিছুই জানি না।"


এবার আমি বলি," ওহ্ তাহলে ওরা তোকে প্রথমে জলের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে আর তার পর কোনো হাই পাওয়ার ড্রাগ ইনজেক্ট করেছে, যাতে তুই ওদের কাজে বাধা না হয়ে যাস। আর ওই ড্রাগটা এতোটাই পাওয়ারফুল ছিল যে তুই প্রায় চারদিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলি। কিন্তু তুই এই জঙ্গলের মধ্যে গুহা কোথায় পেলি? আমরাতো গাড়ি নিয়ে প্রায় সমগ্র জঙ্গলটাই চষে ফেললাম কিন্তু কোথাও তো কোনো গুহা দেখতে পেলাম না।"


জেনি একটু ভেবে বলল," ওই ঘুটঘুটে কালো রাতের অন্ধকারের মধ্যে আমি ওই গুহাটাই ঢুকে ছিলাম তাই সঠিক ভাবে বলতে পারবো না যে গুহাটা জঙ্গলের ঠিক কোথায়; কিন্তু এটুকু বলতে পারি যে গুহাটা মাটির নীচে কোনো গর্তের মধ্যে ছিল আর তার আশেপাশে কোথাও কোনো স্রোতযুক্ত জলাশয় ছিল কারন, আমি গুহাতে ঢোকার আগে স্রোতযুক্ত জলপ্রবাহের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম এবং গুহাতে ঢোকার পর, গুহার ল্যাবরেটরির অল্প আলোতে, গুহার ভিতরে এক পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলস্রোত দেখেছিলাম।"


এবার জেনির এই মাটির নীচের ল্যাবরেটরি থেকে মাটির উপরের ওই ল্যাবরেটরিতে পৌঁচ্ছানোর রহস্যটা কি সেটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। সব কিছু বুঝে সবাইকে আসল ঘটনাটা বলতে শুরু করলাম," ও তাহলে, সেদিন রাত্রে আমি ওই দানব গুলোর ভয়ে দৌড়াতে গিয়ে ওই বিশালাকার পাইথনটার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পাথরের উপর পড়ে, মাথা আঘাত লেগে জ্ঞান হারায়; যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন আমি আমার কিছুটা পাশেই একটা খরস্রোতা ঝরণা দেখতে পাই। আর ওই ঝরণার জলটা কোনো উঁচু জয়গা থেকে প্রবাহিত হয়ে এসে মাটির একটা গর্তের মধ্যে প্রবেশ করছিল; সম্ভবত ওটাই গুহার ভিতরের একপাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর ওটার পাশেই গুহায় প্রবেশ করার রাস্তা ছিল, যেটা দিয়ে জেনি প্রবেশ করেছিল। আর এটাই এই মেক্সিকোর জঙ্গলের প্রথম গুপ্ত ল্যাবরেটরি যেটা ডক্টর পেল্ আর মিঃ উইলসন মিলে বানিয়ে ছিলেন, ডক্টর রিচার্ডের ল্যাব থেকে চুরি করা সেই বিষাক্ত প্লাজমা লিকুইড নিয়ে গবেষণা করার জন্য এবং সেটা খারাপ ভাবে ব্যাবহার করে মানুষকে রক্তখেক দানবে পরিনত করে, পৃথিবীতে দানব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র তাদের দুজনের দ্বারা এতো কিছু সম্ভব ছিল না, তাই তারা ডক্টর ফ্রান্সিস্ কে অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে নিজেদের কাজের সাথে যুক্ত করেন এবং পরে কিছু অফিসারকেও সঙ্গে নেন। কিন্তু সম্ভবত গবেষনা শুরুর কিছু সময় পরে টাকাপয়সাকে কেন্দ্র করে ডক্টর পেল্ ও ডক্টর ফ্রান্সিস্ এর মধ্যে মনমালিন্য শুরু হয় এবং পরে বিবাদ বাধে। কিন্তু এতে মিঃ উইলসনের কোনো অসুবিধা হচ্ছিল না বরং তিনি দুজন বিজ্ঞানীকেই সমানভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছিলেন। পরে তারই পরামর্শে এই গুহা ল্যাবরেটরি থেকে অনেকদুরে মাটির উপরে আরো একটা ল্যাবরেটরি বানানো হয়, যেখানে ডক্টর ফ্রান্সিস্ কাজ করতে শুরু করেন।এবং সেটার সামনে রাখা সাইনবোর্ডে লেখা হয়,' হন্টেড হাউস্, দ্য কিলার ওয়ান '।যাতে এই জঙ্গলে বেড়াতে আসা কেউই এই ল্যাবের কাছে না আসে এবং কাজকর্ম ঠিকঠাক চলতে থাকে। আর এই ল্যাবরেটরি দুটির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করার জন্য মাটির তলা দিয়ে একটা সুরঙ্গ তৈরী করা হয়। যেটা দুই ল্যাবরেটরির মধ্যে যাতায়াতের গোপন মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। আর সম্ভবত ওরা জেনিকে অজ্ঞান অবস্থায় ওই সুরঙ্গ পথ দিয়েই এই ল্যাবরেটরিতে এনে রেখেছিল।"

এতক্ষণ সবাই চুপচাপ বসে আমার কথাগুলো শুনছিল , হঠাৎই অ্যালবার্ট বলল, " উল্কাগ্নী, তুমি কি আগে থেকেই জানতে যে, মিঃ উইলসন ই কালপ্রিট? আর ওই বাংলোটা হন্টেড নয়।"

আমি বললাম," আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে মিঃ উইলসন কিছু একটা লুকিয়ে, একটু বেশীই ভালো সাজার চেষ্টা করছেন, আর এখানে আসার পর ওই হন্টেড হাউস্ বোর্ডের নিচে একটা দোমড়ানো পোস্টার পেয়ে নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম যে মিঃ উইলসন ই কালপ্রিট।কারণ, ওই পোস্টারে লেখা ছিল,"দ্য সিক্রেট ল্যাবরেটরি"। কিন্তু অ্যালবার্ট তুমি কি করে জানলে যে আমি উপরের রুমের দিকে গেছি?"

এবার অ্যালবার্ট বলল," আসলে কাল রাতে, মিঃ উইলসনের ওই রকম একটা কদর্য ব্যবহারের পরও যখন তুমি কোনো রকম জবাব না দিয়ে চুপচাপ রুমে শুতে চলে গেলে তখনিই আমি বুঝতে পেরে গেছিলাম যে, তুমি নিশ্চয় কিছু একটা করবে। তাই না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। তার পরেই দেখলাম তুমি নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলে আর আমিও ,তোমার কোনো বিপদ হতে পারে এই ভেবে তোমাকে ফলো করলাম।"

ওর কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে বললাম," বাঃ! তুমিতো এই কয়েকদিনে আমাকে ভালোই চিনে গেছ দেখছি...।"

আমার কথায় অ্যালবার্ট একটু হেসে চোখ নামিয়ে নিল। লজ্জা পেল বোধ হয় ,,,তার পর আবার বলতে শুরু করল,"যখন আমি কার্ল এর সঙ্গে প্রথম এখানে আসি তখন থেকেই ,আমার সন্দেহ হয়েছিল মিঃ উইলসনের উপর তাই ওনাকে আমি নজরে রেখে ছিলাম। কিন্তু এই বাংলো বাড়িতে আসার পর হঠাৎই আমি কোনো ম্যাপের কথা জানতে পেরে, সুযোগ বুঝে ওই ম্যাপ অর্থাৎ সংরক্ষণাগারের ম্যাপটা বের করে নিয়েছিলাম মিঃ উইলসনের পকেট থেকে, আমাদের হাতে অনেক কম সময় আছে দানবগুলোকে মেরে পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য।"

এতোক্ষণ কার্ল নিশ্চুপ হয়ে ছিল এবার কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল ," আমি অ্যালবার্টের পিছু পিছু উপরে না গেলে নিজের বাবার আসল চেহারাটা দেখতে পেতাম না।যে বাবাকে এতোদিন আদর্শ ভেবে বড় হয়েছি, সেই বাবা আসলে এতোবড়ো একটা শয়তান। যে নিজের ছেলেকে টাকার সাথে তুলনা করে ,নিজেকে সেই বাবার সন্তান ভাবতেও ঘৃণা বোধ হচ্ছে।মনে হচ্ছে নিজেকে এই মুহুর্তে শেষ করে দিই।" বলেই কার্ল নিজের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করতে গেল আর এডওয়ার্ড তৎক্ষণাৎ বন্দুকটা কার্লের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে, ওকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে লাগল। ওই রকম একটা অবস্থা দেখে, অ্যালবার্টও গাড়িটা থামালো এবং কার্লকে কোনো রকমে বোঝাতে শুরু করল।

কার্লের ওই রকম অবস্হা দেখে আমারও কান্না পেয়ে যাচ্ছিল তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "দুঃখ কোরো না কার্ল, মিঃ উইলসন বহু নির্দোষ মানুষের প্রাণ নিয়েছেন এবং এই ঘটনার মূল দোষী ছিলেন তাই তিনি এইভাবে শাস্তি পেলেন। তুমি যোগ্য ছেলে হিসাবে পরিচয় দিলেও, মিঃ উইলসন তোমার যোগ্য বাবা হয়ে উঠতে পারেন নি।তার কাছে টাকার গুরুত্বই বেশি ছিল। এর জন্য তুমি নিজেকে দোষ দিও না,, এতে তোমার কোনো দোষ নেই ।" আমার কথাগুলো শুনে কার্ল কিছু একটা ভাবল এবং শান্ত হয়ে বলল, "তুমি ঠিকই বলেছ উল্কাগ্নী । দোষ করলে শাস্তি অনিবার্য। আর বাবা যা দোষ করেছে তার পরেও বাবাকে কোনো ভাবেই ক্ষমা করা যায় না। আমি সত্যিই কোনো দোষ করিনি। কিন্তু এতো সবের পরেও যদি আমি বাবাকে ক্ষমা করে দিতাম তাহলে, আমিই সব থেকে বড়ো দোষী হতাম।" বলে ওর মুখ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল। 

এরপর আমরাও কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকালাম, তারপর আবার গাড়িটা চলতে শুরু করলো ।আর আমি অ্যালবার্টের কাছ থেকে ম্যপটা নিয়ে দেখলাম,ওই সংরক্ষণাগারটা ওই স্বচ্ছ জলের ঝরণার কাছে।মিঃ উইলসন আমদের ভুল পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। সময় অনেক কম,অনেকটা পথ তাই তাড়াতাড়িই যেতে হবে। 

  আমরা ম্যাপ ধরে অনেকটা পথ চলে এসেছি ওই ঝরণাটা কাছাকাছি কোথাও একটা হবে।এর মধ্যে হঠাৎই কয়েকজন গাড়ির সামনে এসে পড়ল, অ্যালবার্ট তাড়াতাড়ি ব্রেক কষল। আমরা প্রায় চমকে গেলাম,, কিসের সাথে ধাক্কা লাগল বুঝতে পারছি না। সেটা কি দেখার জন্য বন্দুকটা হাতে নিয়ে আমি আর এডওয়ার্ড গাড়ি থেকে নেমে এলাম এবং দেখলাম, আমদের বাকি তিন জন বন্ধু, জন্ , এলিস আর স্মিথ গাড়ির সামনে এসে পড়েছে। ওরা সুস্থ আছে দেখে আমি নিশ্চিন্ত হলাম। ওদেরও গাড়িতে তুলে নিলাম, গাড়ি চলতে শুরু করলো।গাড়িতে বসে ওদের সব ঘটনা সংক্ষেপে বললাম। এবং আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম যে আমরা একসাথে ওই দানবদের সংরক্ষণাগার ধ্বংস করে এই পৃথিবীকে রক্ষা করবো।

   

     কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখলাম, পরন্ত বিকালের রোদে চকচক করছে সোনালী রঙের একট বিশাল সংরক্ষণাগার। এখন আমাদের হাতে মাত্র ছ ঘন্টা ত্রিশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড সময় আছে এটিকে ধ্বংস করার জন্য।আমরা গাড়ি থেকে নেমে নিজের নিজের কাজ শুরু করে দিলাম। এতো বড়ো সংরক্ষণাগারের চারিপাশে ডিনামাইট সেট্ করাতো আর কম ব্যাপার নয়। সব কাজ করতে করতে প্রায় চার ঘন্টা পার হয়ে গেল।সব কিছু ঠিক করে এবার যেই ডিনামাইটে আগুন দিতে যাবো ঠিক তখনই আকাশে মেঘ কালো হয়ে গেল, বিদ্যুতের চমকানির সাথে সাথে মেঘের গর্জনে আকাশ চিরে যেতে লাগলো।অন্ধকার হয়ে গেছে। আমরা কোনো কিছু বোঝার আগেই শুরু হল মুশল ধারে বৃষ্টি।আমাদের মধ্যে সবাই প্রায় হাহাকার করে উঠল," এই বৃষ্টিতে ডিনামাইট ব্লাস্ট করানো সম্ভব নয়...আমাদের হাতে আর এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড সময় আছে। কিভাবে ধ্বংস করব এই মানুষ রূপী দানবদের?" কথাগুলো বলতে বলতে এই মুশলধারার বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য সবাই গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল।


   গেলাম না শুধু আমি। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওই মুশলধারার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম এক দৃষ্টিতে, মাঝে মাঝে আকাশ চেরা বিদ্যুতের ঝলকানি বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে তারা আমার কত আপনজন। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার বারবার মনে হচ্ছিল, শয়তানের বিনাশ হবে। ওই মানুষ রূপী দানবেরা ধ্বংস হবে। আজ এখুনি।


    হঠাৎই আমার চোখে ভেসে উঠলো এক অতীতের প্রতিচ্ছবি ," একটা বিশাল নার্সিংহোমের চাইল্ড ওয়ার্ড। অনেক ছোট্ট ছোট্ট সদ্যোজাত শিশু আপন মনে খেলা করছে , নিজের নিজের দোলনায়।ওয়ার্ডের দরজার কাছের একটা ছোট্ট দোলনায় সদ্যোজাত ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে, শুয়ে শুয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে আর হাসছে।আরে!! এটাই তো আমি। কিন্তু ওটা কে? একটা কালো কোট পরা, মুখে একঝাড় দাড়ি যুক্ত একটা লোক।হাতে একটা ইনজেকশন সিরিঞ্জ নিয়ে এক নিষ্ঠুর হাসি হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এমন সময়ে এক বাঙালী নার্স এসে লোকটাকে বাধা দিতে শুরু করলো।কিন্তু পারল না, লোকটা ওই নার্সকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। আর ঠিক সেই সময়ে নার্স ওয়ার্ডের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল বৃষ্টির মধ্যে একটা বিশালাকার আগুনের গোলা বাইরে থেকে নার্সিংহোমের চাইল্ড ওয়ার্ডের দিকে ধেয়ে আসছে।তিনি চিৎকার করে উঠলেন তাতে লোকটিও থতমত খেয়ে গেল। ওই অবস্থাতেই নার্সটি আমাকে দোলনাকে তুলে নিয়ে ছুটলেন বাইরের দিকে। এমন সময়ে ঘটল এক ভয়ংকর বিস্ফোরণ। ওই আগুনের গোলা এসে লাগল ওই কোট পরা লোকটার গায়ে।লোকটা ঝলসে ছাই হয়ে গেল, সেই ছোট্ট আমি জখম নার্সের কোল থেকে হেসে উঠলাম, শয়তানের বিনাশ দেখে

    হঠাৎই বন্ধুদের চিৎকার আর মেঘের গর্জনে আমি বর্তমানে ফিরে এলাম। এবং সময় উত্তীর্ণ হয়েছে ...দানবের দল সংরক্ষণাগার ভেঙে বেরিয়ে আসছে। আমি পিছনের দিকে যেতে শুরু করলাম। আর অন্যদিকে বন্ধুরা ভয়ে চিৎকার করতে শুরু করেছে, বৃষ্টির মধ্যে কিছুতেই গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। এবার ওরাও গাড়ি থেকে নেমে ওই বৃষ্টির মধ্যে দৌড়াতে শুরু করল। 


হঠাৎই সমগ্র আকাশ আলোকিত হয়ে উঠল। আমরা সবাই থেমে গিয়ে ফিরে আকাশের দিকে তাকালাম। দেখলাম এক অত্যন্ত বিশালাকার আগুনের গোলা পাগলের মতো ধেয়ে আসছে। ওই সংরক্ষণাগারের শয়তান মানুষ রূপী দানব গুলোর দিকে। আমরা আরো দৌড়াতে লাগলাম। আমার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরুল,

" ফায়ার বল লাইটিং...."


   আকাশ-বাতাস-পাতাল কাঁপিয়ে এক ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটল। আগুনের তাপে আমরা সবাই চারিদিকে ছিটকে পড়লাম।

আমি পড়ে যাওয়ার পর একবার তাকিয়ে দেখলাম, দাউদাউ করে জ্বলছে ওই মানুষ রূপী দানবসহ সমগ্র সংরক্ষণাগার।

আমার চোখ বন্ধ হয়ে এল। আমি জ্ঞান হারানোর আগে শুধু বললাম," শয়তানের বিনাশ হল। মানুষ রূপী দানব ধ্বংস হল। প্রকৃতিকে আমার অসংখ্য ধন্যবাদ।"


আমার জ্ঞান ফিরল, আমি ধীরে ধীরে চোখ খুললাম কিন্তু " একি আমি কোথাই? এটা কোনো স্বর্গলোক নয় তো? মানে আমি মরে যাইনি তো?"


 "কি রে চোখগুলো ছানাবড়ার মতো করে কি দেখছিস?" মেয়েদের গলায় কেউ একজন বলল। 

"এটা যমরাজের বউ নয় তো?" একটু ভ্রু কুঁচকে ঘুরে তাকালাম। "মা,...মা এখানে কি করছে? তার মানে আমি মরি নি?" কথাগুলো আস্তে আস্তে বললাম। কিন্তু পাশে বসে থাকা মা ঠিকই আমার কথাটা শুনতে পেয়ে গেছে। চোখ বড়ো করে বলল," তুই বেঁচে আছিস। আর হসপিটালে আছিস।"


আমি একটু ঢোক গিলে বললাম," আমি হসপিটালে কি করে এলাম? আমি তো....."

মা রেগে বলল," কোথায় ? কোন জঙ্গলে গিয়েছিলি তুই? আমদের না জানিয়েই! তার ওপর আবার বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়েছে,' কুড়ি দিন হয়ে গেলে আর খুঁজো না'! তার ওপর আবার বজ্রপাত বিদ্যুতসহ বৃষ্টিতে ভিজছিলি। আবার ওই ফায়ার বল লাইটিং এর ভয়াবহতার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলি। এতো বার করে নিষেধ করেছিলাম তবুও...."


  মা বকতে শুরু করলে থামানো প্রায় অসম্ভব। আমি এদিক ওদিক তাকাতেই বুঝলাম যে এটা সেই হসপিটাল যেখানে আমার জন্ম হয়েছিল। এটা ওই অগ্নি কান্ডের পর আবার পুননির্মান করা হয়েছিল। অন্যদিকে দেখি আমার পাশের বেড গুলোতে আমার সব বন্ধুরা আছে, ওরা ওই আগুনে আহত হয়েছে। আর ঠিক আমারই মতো ওদের মাও একই ভাবে ছেলেমেয়েদের বকে চলেছে। পাশের বেড থেকে এঞ্জেলা হেসে আমাকে "বেস্ট্ অফ লাক্ " জানালো ইশারা করে। আমিও হাসলাম।


 এমন সময়ে ডাক্তার আমাদের ওয়ার্ডে এলেন এবং আমার মাকে বললেন," সত্যিই মিরাক্কেল! এতো বড়ো একটা ফায়ার বল লাইটিং এর ভয়াবহ আগুনের সামনে থেকেও আপনার মেয়ের একচুলও ক্ষতি হয়নি। যেখানে বাকিরা প্রত্যেকেই একটু না একটু আহত হয়েছে।"

এই কথাগুলো শুনে মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি ডাক্তারবাবু কে জিজ্ঞেস করলাম, সবাই সুস্থ আছে কিনা। ডাক্তারবাবু জানালেন, আমার বন্ধুরা সবাই ভালো আছে কিন্তু ওই চারজন অফিসারের মধ্যে মাত্র একজন অফিসার বেঁচে আছেন কিন্তু বাকি তিন জন ওই অগ্নি বলের ধ্বংসলীলায় মারা গেছেন। এটা শুনে খারাপ লাগলো কারণ ওনারা আমাদের খুব সাহায্য করেছিলেন।

ডাক্তারবাবু চলে যাওয়ার পর আমি মাকে কাল রাতের সমস্ত ঘটনা এবং ঘোর চোখে দেখা আমার জন্মের দিন কি কি হয়েছিল এবং কেন ফায়ার বল লাইটিং ঘটেছিল, সব কিছু বললাম। সব কিছু শুনে মায়ের চোখে জল এসে গেল, মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল," আর কোনো দিন কোথাও যেতে, তোকে আটকাবো না। তোর যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবি।"


    আমি বললাম," মা, আমরাও জঙ্গলে ছিলাম এখানে এলাম কিভাবে?"

মা চোখের জল মুছে বলল," কাল রাতে বৃষ্টি থামার পরও যখন জঙ্গলের মধ্যে ফায়ার বল লাইটিং এর ভয়ংকর আগুনে দাউদাউ করে সবকিছু জ্বলছিল তখন জঙ্গলের বাইরের বসতি এলাকার মানুষদের সন্দেহ হয়। তাই ওদের মধ্যে কয়েকজন জঙ্গলের মধ্যে কি ঘটছে দেখার জন্য জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যায় এবং সঙ্গে পুলিশকেও ফোন করে। তারপর ওরা আর পুলিশ মিলে তোদের সবাইকে উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য প্রথমে মেক্সিকো তারপর লন্ডনের এই হসপিটালে নিয়ে আসে। আর তোদের সবার ব্যাগে থাকা আইডেন্টিটি কার্ড দেখে, আমাদের ঠিকানা আর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে, আমাদের এখানে আসার জন্য বলে।

আর অন্যদিকে আমারও তোদের খোঁজ করছিলাম তাই খবর পেয়েই, একটুও দেরী না করে এখানে চলে আসি।"

কথাগুলো শুনে মনে মনে আমি নিশ্চিন্ত হলাম।


   যাইহোক, ডাক্তারের কথা মতো আমাদের আরো তিন দিন থাকতে হল হসপিটালে। তিন দিন পর, আজ আমরা হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরবো। সব বন্ধুদের সঙ্গে আজ শেষ দেখা, আবার কবে দেখা হবে তার ঠিক নেই।


আমাদের সবার চোখেই জল, বন্ধুদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। সবার সাথেই কথা বলছি আর বিদায় জানাচ্ছি। এমন সময় অ্যালবার্ট আর কার্ল এল। ওদেরও চোখের জল এসে গিয়েছে। তিন-চার দিনে ওরা আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে।


ওদের সাথে কথা বলতে এগিয়ে গেলাম, অ্যালবার্ট বলল," আবার কবে আসবি উল্কাগ্নী? আমরা অপেক্ষা করবো একটা নতুন অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপের...তুই আসবি তো?"


আমি বললাম," নিশ্চয় আসবো। নতুন অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপ আর আমি আসবো না! তাই কি হয়। কিন্তু তার আগে তোকে আর কার্লকে আমাদের গ্রুপে যোগ দিতে হবে।"


"নিশ্চয়ই। আমরাও চাই তোদের গ্রুপে যোগ দিতে।" কার্ল উৎসাহিত হয়ে বলল।

  " হ্যা, আর তোমাদের গ্রুপের নাম হবে,

' অ্যাডভেঞ্চার অফ্ ফ্রেন্ডস্ '।" কেউ একজন পাশে থেকে বলল। 

আমরা সেটাকে দেখার জন্য ঘুরতেই দেখি, আমাদের সাহায্যকারীদের মধ্যে একমাত্র জীবিত অফিসার, মিঃ রবার্ট; হাসতে হাসতে আমাদের দিকেই আসছেন।


আমি বলল," মিঃ রবার্ট, আপনি কেমন আছেন? "

উনি বললেন," আমি ভালো আছি, একদম সুস্থ আছি। কিন্তু আমি তোমাদের সবাইকে একটা খুশির খবর জানাতে এসেছি। যেটা হল, ওই মানুষ রূপী দানবের ধ্বংস করার জন্য আমার চাকরির প্রমোশন হচ্ছে। কিন্তু এই সব সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তোমাদের জন্য, আমি এটা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। আর সেই জন্য আমাদের রাষ্ট্রপতি মহাশয়, তোমাদের সবাইকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করতে চাইছেন আজ সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে। তিনি তোমাদের গ্রুপের একটা নতুন নাম দেবেন।

তাই তোমরা সবাই আসবে এই ঠিকানায়।" বলে তিনি একটা কার্ড দিলেন আমার হাতে। আমদের মন খুশিতে নেচে উঠল। আমরা ওনাকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম।


    উনি চলে যাওয়ার পর আমরা আনন্দে প্রায় লাফালাফি করতে শুরু করলাম। প্রত্যেকেই নিজের নিজের বাড়ি ফিরে গেল এবং আমিও মা-বাবার সাথে হোটেলে ফিরে গেলাম। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তৈরী হতে লাগলাম।

   

    প্রায় সন্ধ্যা সাতটাই আমি এবং আমার নয় জন বন্ধু এসে পৌঁছলাম অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে। আমাদের জন্য স্পেশাল সিট রাখা হয়েছিলো, সেখানেই বসলাম।


অনুষ্ঠান শুরু হল। একটু পরেই মিঃ রবার্টকে প্রমোশন দেওয়া হল এবং সম্মানিত করা হল। এরপর আমাদের দশজনকেই ডাকা হল এবং সকলকে রাস্ট্রপতি নিজে সম্মানিয় পুরস্কার দিলেন।


মানুষ রূপী দানবের মতো ভয়ংকর প্রাণীদের ধ্বংস করে পৃথিবীর সমস্ত মানুষদের নিরাপদে রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানালেন। এবং শেষ মুহূর্তে তিনি আমাদের বন্ধুত্ব কে সম্মান জানিয়ে আমাদের গ্রুপের নাম দিলেন, "অ্যাডভেঞ্চার অফ্ ফ্রেন্ডস্"।


অনুষ্ঠান শেষ হল। মঞ্চ থেকে নেমে আসার আগে তিনি আমাকে বললেন," সত্যিই তুমি উল্কার আগুন, উল্কাগ্নী।" আমি ওনাকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম।


  এরপর আমি সবাইকে ধন্যবাদ ও বিদায় জানিয়ে মা-বাবার সঙ্গে লন্ডন এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিলাম। কিন্তু এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেখি আমার সব বন্ধুরা এখানে চলে এসেছে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। আমি ওদের দেখে এক অদ্ভুত অনুভূতির আনন্দে হেসে উঠলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেন এসে ল্যান্ড করল। আমার 'অ্যাডভেঞ্চার অফ্ ফ্রেন্ডস্' গ্রুপকে হাসি মুখে "গুড্ বাই" বলে মা-বাবার সাথে প্লেনে উঠলাম। আর প্লেন উড়তে শুরু করল।আমি আকাশপথে ইন্ডিয়া রওনা দিলাম।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action