Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Maheshwar Maji

Horror Inspirational

2.6  

Maheshwar Maji

Horror Inspirational

একটি সামাজিক ভূত

একটি সামাজিক ভূত

6 mins
2.9K


(এক)

শুভ বলে উঠল,চল শক্তি এবার শুয়ে পড়া যাক।রাত অনেকটা হল।

শক্তি সাবধানে এদিক,ওদিক তাকিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিল।

তারপর শুভকে ডাকল,শোন।

শুভ সামনে আসার পর বলল,প্যাকেটটা কোথায় রেখেছিস?

শুভ চোখদুটো বড়,বড় করে বলে উঠল,তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমি তোকে আসার আগেই বলেছিলাম।ওসব বাজে জিনিস এখানে একদম চলবে না। তখন কী বলেছিলি মনে আছে?

শক্তি বলে উঠল, সব মনে আছে।তোর মত অত শর্ট মেমোরি আমার নয়।ক্যামেস্ট্রিতে দু নাম্বার হলেও তোর থেকে বেশি পেয়েছি।আরে ইয়্যার আমি কী তোদের বাড়িতে খাচ্ছি নাকি? চল বাইরে।মাঠের দিকে খোলা হাওয়ায় একটু পায়চারি করে আসি।বিহু তিনবার কল করেছিল।ঠিক মত কথাও বলতে পারিনি।তোদের এইটুকু ঘরে ..এত মানুষের সব সময় আসা-যাওয়া! পাশ থেকে কে কি আওয়াজ দিয়ে চলে যাবে।সেই ভয়ে পরে করব বলে পাস কাটিয়ে গেছি।একবার ওর সাথেও খুলে কথা বলা হবে।

শুভ একটু হেসে জবাব দিল,তোর মাথা,টাথা খারাপ হলেও আমার তো ঠিক আছে। এই সময় আর বাইরে?

আমাদের গাঁয়ের কথা জানিস কিছু?চুপচাপ সিগারেটের কথা ভুলে শুয়ে পড়।


----কেনরে তোদের গায়ে কী রাতের বেলায় আমজাদ খান ঘোড়ায় চেপে ডাকাতি করতে আসে?

----তার থেকেও ভয়ঙ্কর!

---তাহলে নিশ্চয়ই সানি লিওন হবে?

----ইয়ার্কি না শক্তি।আমাদের গাঁয়ে রাত নটার পর আর কেউ বাইরে ঘোরে না। বছর তিনেক হল ভূতের উপদ্রব বেড়েছে।সেই ভয়ে রাতের বেলায় কেউ বাইরে বেরোই না। অনেকেই সেই ভূতের দেখা পেয়েছে।


শক্তি কথাটা শুনে একটু হেসে বলে উঠল, আরে কিচ্ছু হবে না শুভ।তুই না সায়েন্সের স্টুডেন্ট! এসব ফালতু জিনিসেকে কবে থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করলি?

---ফালতু! তোর কী মনে হয়,আমি ফালতু বকছি?আরে বাবা...আমার কাকু নিজের চোখে দু-দুবার দেখেছে।একবার তো বাড়ি এসেই দুম করে উঠোনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।ভাগ্যিস সেদিন আমি হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরেছিলাম তাই রেহায়।মুখে জলের ঝাপটা আর নার্ভ পয়েন্টে আকুপাংচার করে জ্ঞান ফেরায়।তারপর নিজের মুখে আমি সব কথা সেদিন শুনেছিলাম। দ্যাখ শক্তি তুই সাধ করে আমাদের বাড়ি একদিন ঘুরতে এসেছিস।জেনেশুনে তোকে বিপদে ফেলতে পারিনা।আর আমারো শুধু,শুধু ঝুঁকি নেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।একটা রাত সিগারেট না খেয়ে অনায়াসে থাকা যায়।আমি তো সাতদিন পর্যন্ত থেকেছি।আর বিহুকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দে। চল এবার শুয়ে পড়ি।

----তাহলে চল ছাদে গিয়ে দু টান মেরে আসি।

----ওখানে দাদু আর বাবা ঘুমোচ্ছে।সারা গ্রীষ্মকাল ওখানেই ঘুমোয়।আর বাথরুমে তো একদম চলবে না। কে,কোন সময় ঢুকবে..কোন ঠিক আছে কী?..ভস..ভস গন্ধ বেরুবে।ও সব বেহায়াগিরী ছাড়।চল গিয়ে শুয়ে পড়ি।একবার চোখ লাগলেই সকাল।তারপর আমি তোকে পুকুর পাড়ে নিয়ে যাব ।যতগুলো ইচ্ছে টানবি।


(দুই)

শক্তি মোবাইলের সুইচ টিপে একবার সময়টা দেখে নিল।

বারোটা পনেরো।পাশেই শুভ মড়ার মত শুয়ে আছে।ঘর্ ঘর্ করে নাক ডাকছে।

শুধু তার দুচোখে ঘুম নেই। সিগারেটের নেশাটা মস্তিস্কের স্নায়ুগুলোকে শিথিল হতে দিচ্ছে না।

তাই এখনো অব্দি দু চোখ এক হল না।

শক্তি বুঝে গেল।সিগারেটের ধোঁয়া অল্প না পেলে তার ঘুম আর আসবে না।

তাই সাবধানে আস্তে করে ওঠে পড়ল।ফ্ল্যাসটা না জ্বেলে শুধু স্ক্রীনের আলোতে শুভর জিন্সের পকেটদুটো ঘাঁটল।প্যাকেটটা হাতে লাগল না।

এবার সে উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে বালিসের তলায় ধীরে, ধীরে হাতটা বোলাল।প্যাকেট এবং মাচিস দুটোই পাওয়া গেল।

শক্তি মনে মনে অল্প হাসল।

তারপর পা টিপে,টিপে সদর দরজার লকটা নিঃশব্দে খুলে পরে সেটা আলতো ভেঁজিয়ে দিয়ে মনের আনন্দে বাইরে বেরিয়ে পড়ল।

বাইরের বাতাসটা একটু ঠান্ডা হয়ে এসেছে।

এলোমেলা ঝাপটা মারছে।বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি ফুটে উঠল শক্তির সারা গায়ে।

চাঁদটা অর্ধেক হয়ে এসেছে।তবু জ্যোৎস্নাটা এখনো বেশ উজ্বল আছে।

একেবারে দিন বলেই মনে হচ্ছে।

কিছুদূর হেঁটে যেতেই গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা কালভার্ট পাওয়া গেল।উচু মত করা আছে।বসার একদম উপযুক্ত জায়গা।

শক্তি পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাল।দু টান দিয়েছে।

তারপরেই বিহুর কথা মনে পড়ে গেল।রাতও হয়েছে।আজ আর থাক।ওকে অসময়ে জাগিয়ে তোলাটা ভাল হবে না।

সিগারেটের প্রথম ছাঁইটা আঙুল ঠুকে ফেলতে গিয়ে প্রথম শব্দটা কানে এল।

প্রথমে ভাবল নিশ্চয়ই আশেপাশে কোথাও ইঁদুর চেঁচাচ্ছে।সেই রকম ধরণের একটা চি,চি আওয়াজ আসছে।

তারপরেই বুঝল।না,তা নয়।কারণ ডাকটা ক্রমশ জোরে শোনা যাচ্ছে।

তখনি একটা বিকট শব্দ তার কানের পর্দায় এসে ধাক্কা খেল।

সম্ভবত রাতচরা পাখিদের মধ্যে ঝগড়ার কারণে হবে।

পিছন ফিরে যেই তাকিয়েছে,এমনি তার হাত,পা ঠান্ডা হয়ে এল।

সত্যি সত্যিই একটা প্রকান্ড মূর্তি হাত দশেক দূরত্বেই একদম খাঁড়া দাঁড়িয়ে আছে।শুধু অবয়বটুকুই সে বুঝতে পারল।হাত,পা,মুখ আছে কিনা জানা নেই।

ভয়ে গলাটা শুকিয়ে আসছে ঠিক,তবু হিম্মতটুকু পুরোপুরি হারায়নি।

নিজেকে বোঝাল। নিশ্চয়ই কোন কাপড়,টাপড় টাঙানো আছে।

সেটা জ্যোৎস্নার আলোয় অন্য রূপ ধারণ করেছে।

হাতের সিগারেটটাই আর একটা টান দিয়ে শক্তি, মূর্তিটার দিকে ধীর পায়ে অগ্রসর হতে লাগল।

যত ভয় পাচ্ছে..তত ঘন,ঘন সিগারেটে টান দিচ্ছে।সামনে যেতেই সিগারেটের আগুনটা ছ্যাত করে আঙুলের ডগায় লাগল।

মোক্ষম সময়ে শেষ হয়ে গেল।

আর একটা ধরাতে গিয়ে দেখল অবয়বটা নড়ছে।

ঝপাত করে একটা পর্দা আকাশে ওড়ে গেল।তার ভেতর থেকে বীভৎস একটা ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এল।

শক্তি ছুটতে গিয়ে টাল খেয়ে ধড়াম করে শুকনো মাটিতে পড়ে গেল।সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গেছে।


(তিন)

দু হাতের তালির শব্দ পেয়ে মানুষটা মোমবাতির আলোয় ঘুরে দাঁড়াল।

প্রায় ছ ফুট উচ্চতা।তাগড়ায় চেহারা।এক মাথা ঝাঁকড়া চুল।

শক্তি হাততালি থামিয়ে বলে উঠল, আর একটা সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে ছিল।কিন্তু আপনার তো আবার সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য হয় না।...কী ঠিক বলেছি তো?

লোকটা জড়ানো গলায় বলে উঠল,আ...আ....পনি!!..এখানে কী করে এলেন?

----প্রথমেই বলে রাখি।আমি কিন্তু শহরে বড় হয়েছি।আর ভূতকে আমি কোন কালেই ভয় পাই না।আমি বিজ্ঞানের ছাত্র বলে বলছি না। আসলে ওসব আমার ধাতে নেয়।আমি যেমন ভগবান আছে বলি বিশ্বাস করি না।তেমনি ভূতকেও না।

ভূত যে সিগারেটের ধোঁয়ায় কাশে এটা আমার ঠিক ধারণা ছিল না।

তাই ইচ্ছে করেই অজ্ঞান হওয়ার নাটক করে দুম করে পড়ে গেলাম।ঠিক তার পরের দৃশ্যগুলো দেখার জন্য।

তারপর পিছু নিয়ে এখানে এসে পৌঁছলাম।তা ভূতবাবু, কেন করেন এসব? একটু খুলে বলবেন কী?

   

লোকটা বুঝে গেল।আর লুকিয়ে কোন লাভ হবে না। একদম হাতে,নাতে ধরা পড়ে গেছে।

তাই শান্ত গলায় বলে উঠল, আমার নাম মিলন চৌধুরি।বাংলায় এম.এ করেছি।তারপর অনেকদিন যাবৎ বেকার বসে ছিলাম।এই কয়েক বছর আগে ব্লক অফিসে একটা ছোটখাটো কাজ পেয়েছি।বাড়িতে একা থাকি।মা,বাবা কেউ বেঁচে নেই। বিয়েও করিনি।বেকার ছিলাম তাই।

আসলে শিক্ষিত বলেই কষ্ট হত। জন্মভূমির বেহাল অবস্থা দেখে।

কয়েক বছর আগে গ্রামটা একেবারে নরকপুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

রাত হলেই কুপির আলোয় ঝোঁপে,ঝাড়ে সর্বত্র জুয়াখেলার আসর বসত।তারসাথে চলত চোলায় মদের ঠেক।

ঘরে,ঘরে অশান্তি লেগেই ছিল।তাছাড়া মানুষজন রাতের অন্ধকারে রাস্তার দুদিকে মল ত্যাগ করে একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা করে রেখেছিল। আমি ব্লক থেকে বি.ডি.ও সাহেবকে ডেকে গ্রামের সমস্ত পরিস্থিতি দেখায়।উনি ঘরে,ঘরে শৌচালয় করার ডাক দিলেন।কেউ আর এগিয়ে এলেন না।

মাইকে করে ঘোষণা করা হল।যাতে রাতে জুয়ো এবং মদের আড্ডা বন্ধ করা হয়।

কেউ কানে তুললেন না।

তখনি আমি একদিন গভীরভাবে চিন্তা করতে বসলাম।কী ভাবে জন্মভূমির এই জঞ্জালকে সাফায় করব?

তখনি হঠাৎ মাথার মধ্যে বুদ্ধিটা খেলে গেল।

মানুষ বিনম্র মানাকে উপেক্ষা করে।কিন্তু ভূতের ভয়কে উপেক্ষা করার সাহস কারু নেয়। তাই আমি ঠিক করলাম।এবার থেকে আমি ভূত হব।

তাই পরের রাত থেকেই আমি নেমে পড়লাম।

বিভিন্ন রকম ভূতের বই পড়ে ভূত সম্বন্ধে নানা ধারণা জোগাড় করে ফেললাম।সেইমত সবাইকে ভয় দেখাতাম।ভূতকে আমি বিশ্বাস করি না।তবে মানুষের নৈতিক অধঃপতনকে অবশ্যই করি।যা ভূতের ভয় থেকে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর!

কিন্তু গাঁয়ের সাধারণ মানুষ সেসব বোঝেন না। তাই এসব করতে বাধ্য হয়েছি।

তার ফলে আজ গ্রামের প্রত্যেক ঘরে পায়খানা,বাথরুম হয়েছে। এখন রাত কেন দিনের বেলাতেও অনেকেই মাঠে পায়খানা করেন না। ভূতের ভয়ে,জুয়ো,মদ সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অন্য গ্রামে বসে।

এখন যা পরিস্থিতি সব গাঁয়ে আমার মত একজন করে শিক্ষিত,বিবেকবান ভুতের খুব দরকার।

কিন্তু কে করবে এসব? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে? রাতের ঘুম বিসর্জণ দিয়ে?শুধু আমার মত একজন পাগল ছাড়া?

আপনি অনায়াসে সত্য ঘটনাটা সবাইকে জানাতে পারেন।তবে ভেবে দেখুন...তার ফলটা কিন্তু এই গ্রামের পক্ষে মোটেও ভাল হবে না।

      

(চার)

কানে,কানে খবরটা এই ভর রাতেও চাউর হয়ে গেল।

শুভদের বাড়ি ঘুরতে আসা শহুরে ছেলেটাকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক ভূতে টেনেছে!

তাই এই রাত তিনটের সময় সকলে লাইট নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে শক্তিকে খুঁজতে বেরিয়েছেন।

জানলার ফাঁকে গ্রামবাসিদের হৈ চৈ শব্দ শুনে মিলন এবং শক্তি বাইরে তাকিয়ে দেখল।সকলেই শক্তিকে খুঁজছেন।

ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মিলন বলে উঠল, আপনার আর ভেতরে থাকাটা ভাল হবে না। চলুন দেখা দিই।

শক্তি শান্ত গলায় বলল,ঠিক বলেছেন।আসুন তাহলে।

বাইরে বেরুতেই একজনের নজরে পড়ে গেল।তিনিই চিৎকার করে সকলকে ডাকলেন।

শুভ হাঁপাতে,হাঁপাতে বলে উঠল,কোথায় ছিলি এত রাতে? তোকে আমি কত করে মানা করলাম।বেরুবি না। কেন এলি তুই বাইরে?

শক্তি বলে উঠল,আমাকে ডাক পাড়ছিল তো।শক্তি আয়...শক্তি আয় বলে ।আমি ভাবলাম..কেউ বোধ হয় বিপদে পড়ে আমাকে সাহায্য করার জন্য ডাকছেন? তাই আমি বেরুলাম।

তখনি এই ভদ্রলোক বাইরে আমাকে দেখে থামালেন।নিজের কাছে ডেকে বসালেন।তারপর সব কথা খুলে বললেন।আমাকে নাকি ভূতে পেয়েছে।তাই উনি আমাকে কোথাও যেতে দিলেন না। নিজের কাছে টেনে বসিয়ে রাখলেন।

সবাই বলে উঠলেন,যাক এই যাত্রায় বড় বেঁচে গেছো।মিলনের দয়ায়।জানো না তো বাপু...এই গ্রামে ইয়া লম্বা,তাগড়ায় চেহারার এক দাপুটে ভূত আছে। সম্ভবত কোন অতৃপ্ত জমিদারের আত্মা,টাত্মা হবে বোধ হয়।

তখনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে শক্তি টুক করে মিলনের পা ছুঁয়ে একটা প্রণাম করে বলে উঠল,প্রথম কোন দেবতার আজ দেখা পেলাম।ভাল থাকবেন। 

-----সমাপ্ত----


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror