Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Classics

3  

Debdutta Banerjee

Classics

হিউয়েন-সাং এর বাতিদান-৪

হিউয়েন-সাং এর বাতিদান-৪

7 mins
17K


-"হে মহান লেখিকা, আপনি আপনার কল্পনার চক্ষে উহা পর্যবেক্ষণ করুণ। তাহলেই বুঝিব আপনার বুদ্ধি এই অধমের সাথে থাকিয়া পরিপক্ব হইতেছে।" অয়ন কপট গাম্ভীর্যে বলে উঠলো। রাতে ডিনারের পর ঘরে ফিরে দিঠি বুঝল ঘরে কেউ এসেছিল। অয়ন কিন্তু একটুও চিন্তিত নয় এ ব্যাপারে।পরদিন এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনের শুরুতেই ওরা বেরিয়ে পড়ল তাওয়াং এর উদ্দেশ্যে।

 অসাধারণ সুন্দর গ্ৰাম দিরাং, পাশে বয়ে চলেছে দিরাং নদী। সবুজ সতেজ পাহাড়ি গ্ৰামের লোকজন খুব হাসিখুশি। পাসাং এর বাড়ি এই গ্ৰামেই। ও চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিন্তু, আজ তাওয়াং পৌছতেই হবে বলে অয়ন রাজি হয়নি। বলেছিল ফেরার পথে ঢুকবে। দিঠি ভাবছিল হেলিকপ্টারে এলে এই সুন্দর জায়গাগুলো অদেখাই থেকে যেত। খুব ইচ্ছা করছিল কিছুটা সময় এই দিরাং এ কাটাতে। কিন্তু যে কাজে এসেছে তার গুরুত্ব চিন্তা করে ওরা এগিয়ে চলে পাহাড়ি পথে। কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছে যায় 'সেলা-পাসে', ১৩০০০ ফিট উচ্চতায় মেঘে ঢাকা 'সেলা-পাস' ও সেলা-লেক দেখে দিঠি অভিভূত। ঠাণ্ডা হওয়ায় শরীরের খোলা অংশ কেটে যাচ্ছিল। বোমডিলা থেকে কেনা জ‍্যাকেট আর মাফলার , টুপিতেও ঠাণ্ডা আটকানো যাচ্ছিল না। প্রিমুলা ফুলের কার্পেট আর সবুজ ঘাস-জমি পার করে সবাই নেমে গেছিল লেকের ধারে।অয়ন তাড়া দেওয়ায় সবাই আবার গাড়িতে উঠে আসে। গাড়ি এগিয়ে চলে। হাওয়ায় ভেজা ভাব। সামনেই যশবন্ত-গড়। কদিন আগেই দিঠিরা সিকিমের বাবা'মন্দির ঘুরে এসেছিল। গল্পটা সেই একই রকম রোমাঞ্চকর। এই ভদ্রলোক জীবন মৃত্যুর সীমানা ছাড়িয়ে সীমান্তে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন দিবারাত্র। সরকার এদের অস্তিত্ব মেনে নিয়েছে। বাবা-মন্দিরের মত বড় না হলেও এই মন্দিরটাও বিখ্যাত। এদিকে কর্তব্যরত সেনাবাহিনীর কাছে উনি মহানায়ক। পাশেই 'ওয়ার মেমোরিয়াল'। কফি ও মোমো আর ডিমের অমলেট দিয়েই দুপুরের খাওয়া মিটিয়ে আবার পথ চলা শুরু। পাসাং দূর থেকে দেখাল জং ফলস্। অয়ন বলেছে সব দেখবে ফেরার পথে। নদী এখানে শীর্ণকায় ও খরস্রোতা। হঠাৎ দূরের পাহাড়ে মৌমাছির চাকের মত সাদা হলুদ তাওয়াং মনাষ্ট্রি দেখাল পাসাং। বহু দূর থেকে এই মনাষ্ট্রি দেখা যায়। পাসাং জানালো মহাকাশ থেকেও নাকি এই মনাষ্ট্রি দেখা যায়। এই বিখ্যাত মনাষ্ট্রির অধিকারের দাবী জানিয়ে আসছে চীন। এই নিয়ে দিল্লিতে বহু চাপাচাপি চলছে। কূটনৈতিক চালে ভারত এগিয়ে রয়েছে। হঠাৎ একটা টাটা'সুমো দ্রুত গতিতে এসে পথ আটকালো পাসাং এর গাড়ির। তিনজন আগন্তুকের একজন সেই প্লেনের লোকটা। অয়ন সবাইকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে বলেছে। ওদের একটাই দাবী ঐ জিনিস দুটো ওদের চাই। অয়ন বলল যে তাদের কাছে ঐ জিনিস নেই। কেউ মানতে রাজি নয়। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে সবাইকে নামিয়ে ওদের সবার ব্যাগ চেক করেও যখন ওরা কিছু পেল না, হতাশ হয়ে সু-তাং কে ফোন করলো লোকটা। এই পথে গাড়ি খুব কম। হঠাৎ কয়েকটা মিলিটারি ট্রাকের আগমনে ওরা চটপট ফিরে গেল তাওয়াং এর দিকেই। বরুয়া-দার ফোনে সু-তাং এর ফোন। তবে ধরার আগেই সিগন্যাল লস্ট হয়ে গেল। পাশাং বেশ ঘাবড়ে গেছে। অয়ন বলল, -"কাল রাতে তবে গুপ্তার লোক এসেছিল আমাদের ঘরে।" দিঠি,বরুয়া-দা, বৌদি সবাই ভাবছে জিনিসটা তবে গেল কোথায়! তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যখন ওটা পাওয়া গেলো না তারমানে অয়নের সাথে ওটা নেই। অয়ন তবে কি এসব বুঝে ওটা কলকাতাতেই ফেলে এলো। তবে এই ভাবে এসে কি লাভ হল!

 বিকেল বিকেল সবাই তাওয়াং পৌঁছল। অয়নের অফিস থেকে গরমেন্ট গেস্ট- হাউস বুক করে দিয়েছিল। সবাই সেখানেই উঠল। আগেরবার ও অয়ন এখানেই উঠেছিল। ম্যানেজার ওর বন্ধু হয়ে গেছিল। এ বার অয়ন আগেই ফোন করে দিয়েছিল আসছে বলে। বেশ রাজকীয় ব্যবস্থা তাই সবার জন্য। অয়ন পৌঁছেই থানায় যোগাযোগ করে রাস্তার ঘটনা জানিয়ে দিয়েছিল। গাড়ির নম্বর বলায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ড্রাইভারকে তুলে নিয়ে এলো। কিন্তু ওর বক্তব্য ওকে ভাড়া করেছে তেজপুর থেকে ঐ তিনজন। উঠেছে তাওয়াং ভিউ হোটেলে। সেই হোটেলে গিয়েও পুলিশ ঐ তিনজনকে পেল না। তবে আশ্বাস দিল এই ছোট্ট তাওয়াং শহরে কারো পক্ষে লুকিয়ে থাকা সম্ভব নয়। ওরা ধরা পড়বেই। রাতে এবার অয়নের ফোনেই সু-তাং এর ফোন এলো। ও তখনো বলে যাচ্ছে জিনিসটা ওর চাই। অয়ন বলল,-"আপনার লোক তো দেখেছে ওটা আমাদের কাছে নেই।"

সু-তাং কাটা কাটা ইংরাজিতে বলে চলেছে ঐ জিনিস না পেলে ও কাউকে কলকাতা ফিরতে দেবে না। অয়ন ইংরাজিতে উত্তর দিলো, -"তাহলে জিনিসটা কোনোদিনও আর পাবেন না। ওটা আবার অন্ধকারেই চলে যাবে যে ভাবে এত বছর অন্ধকারে ছিল।" রাতটা সবাইকে অবাক করে নির্ঝঞ্ঝাট কাটল। সকালে সবাই রেডি হয়ে চলল মনাষ্ট্রি দর্শনে। বিশাল মনাষ্ট্রি, বৌদি গাইডের কাজ করছিলেন। কাকার সাথে বহুবার এসেছেন এখানে। একপাশে সবাই অধ্যয়ন করছে। একদিকে ধ্যানমগ্ন লামার দল। বাতাসে ফুল, ধুপ মিশ্রিত এক পবিত্র গন্ধ। বেশ কয়েক জন টুরিস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রধান লামার সাথে দেখা করবে বলে ওরা মন্দিরের চাতালে ওয়েট করছিল। হঠাৎ তিনমুর্তির আগমন। সবাই লামার পোশাকে, চুল ছোট করে ছাঁটা। প্রথমে অয়ন চিনতে পারেনি এবার। আগ্নেয়াস্ত্রে ওদের একপাশে নিয়ে শুরু হল ব্যাগ তল্লাসি। কিন্তু যথারীতি কিছুই পাওয়া গেল না। অয়ন আবার বলল,-"জিনিসটার গুরুত্ব বুঝে ওটা আমি কলকাতায় রেখে এসেছি। আগে নিশ্চিত হই এখানে ওটা নিরাপদে থাকবে তবেই ওটা দিতে আসবো।" তিনজন দ্রুত বাইরে বের হতেই সাদা পোশাকের পুলিশ ওদের ধরে ফেলল এবার।

 

প্রধান লামা চিপা যথেষ্ট বিরক্ত, এক মাসেই বার বার পবিত্র প্রাঙ্গণে পুলিশের আগমনে। কয়েক দিন আগেই প্রাক্তন জামাই চুরি করেছিল সেই তেরতন ।তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের ভুটানি নিংগমা শাখার পাঁচজন রত্নাকর রাজার মধ্যে প্রধান হলেন পেমা লিংপা। পদ্মসম্ভবের পরেই মর্য্যাদায় পেমা লিংপার স্থান বলে মানা হয়। তাওয়াং মঠের প্রধান সন্ন্যাসী বা চীপার ঘরেই সযত্নে রাখা থাকতো দ্বাদশ শতকে তৈরি মূর্তিটি। ৩১শে মে দরজা ভেঙ্গে প্রাক্তন জামাই গাওয়াং ঐ তেরতন চুরি করে প্রেমিকা গাকের সাথে দিল্লি পালিয়ে গেছিল। দিল্লি পুলিশ ওকে ধরে মূর্তি উদ্ধার করে।

বরুয়া বৌদি নিজের পরিচয় দিতেই ওদের নিয়ে গিয়ে একটা ঘরে বসালেন লামা চিপা। বৌদি নিজেই পুরো ঘটনাটা বললেন। চিপা বললেন যে লিংপা তাকে জানিয়েছিল জিনিসটার কথা। জিনিসটা বহু পুরানো। পুঁথিটা বৌদ্ধ ধর্মে যে তন্ত্র সাধনা হতো তার নিদর্শন। বাতিদানটি হিউয়েন সাং এর পাণ্ডিত্যে তুষ্ট হয়ে তৎকালীন কামরূপের মহারাজ ওনাকে দিয়েছিলেন । বহু হাত ঘুরে ওটা হিমালয়ের এক প্রাচীন মঠে ছিল। চিপা একসময় সেই মঠে ছিলেন। উনি দেখেছেন জিনিস দুটো। তবে ঐ মঠের প্রধান বুঝতে পেরেছিলেন যে জিনিস দুটো ওখানে সুরক্ষিত নয়। প্রথমে ধর্মশালার মঠে পাঠিয়েছিলেন উনি। লিংপা বুঝতে পেরেছিল ওখানেও ও দুটো সুরক্ষিত নয়। তাই আমাদের এখানে নিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু ঐ জিনিস ওর হস্তগত হওয়ার পর ওর জীবন সংশয় দেখা দেয়‌, একবার গৌহাটি এসেও ওকে ফিরে যেতে হয় এদের জন্য। বাধ্য হয়ে ও নিজের ভাইঝির হাতে দায়িত্ব দিয়ে ঐ দুষ্কৃতীদের ভুল পথে চালনা করে। অবশেষে জিনিসটা এসে পৌঁছল এখানে।

অয়ন বলে -"আপনার কি মনে হয় জিনিসটা এখানে নিরাপদ?" প্রধান লামার মুখে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে ওঠে। উনি বলেন যে মঠ হল পবিত্র স্থান। প্রচুর প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য মুল‍্যবান জিনিস রয়েছে এ সব মঠে। তবে মানুষজন জানলেই বিপদ। লোভ মানুষের শত্রু। এই লোভ বিপদ ডেকে আনে। তবে এই মঠেই মিউজিয়াম আছে যা সুরক্ষিত। সেখানেই রাখা হবে ঐ ঐতিহাসিক বাতিদান ও পুঁথি। দিঠি বলে,-"সব বুঝলাম, কিন্তু সেগুলো কোথায়? কলকাতায় ফেলে এসেছ বিশ্বাস হয় না আমার।" সবাইকে অবাক করে ও বাইরে বেরিয়ে যায়। একটু পরেই একটি ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ঢোকে। দিঠির মনে পড়ে এরা একটু আগেও বাইরে ঘুরছিল টুরিস্টের মতো। এদের বোধহয় গেস্ট হাউসেও দেখেছিল কাল রাতে। কিন্তু আগে কোথায় দেখেছে মনে করতে পারেনা।

বরুয়া দা এবং বৌদিও অবাক নতুন চরিত্রের আগমনে। অয়ন পরিচয় করায় -"এ আমার ছোটবেলার বন্ধু আলোক, ওর বৌ সাহানা। ওরা ছোট্ট একটা ইনভেস্টিগেশন হাউস চালায়। আলোক আগে 'আই-বি' তে ছিল।" সবার সাথে সবার পরিচয় করানোর পর অয়ন বলে,-" আমি জানতাম আমাদের বেশ কয়েক জোড়া অপরাধী সর্বদা লক্ষ্য করছে। জিনিসটা পথেই ছিনতাই হয়ে যাবে। তখন মনে পড়ে ওদের কথা। পরদিন সকালেই জিনিসটা নিয়ে দৌড়ে যাই আলোকের কাছে। আলোকরা বিকেলের সরাইঘাটে স্পেশাল টিকিট কেটে রওনা দেয়। সড়ক পথে কাল ওরাও এসে পৌঁছায় তাওয়াং। কথা ছিল আমি আগে এলে ওয়েট করবো, কেউ কাউকে প্রয়োজন ছাড়া ফোন করবো না, দেখা হলেও চিনবো না। অপরাধীরা আমাদের ফলো করে গেছে যথারীতি। আর ওরা ঐতিহাসিক বাতিদান আর পুঁথি নিয়ে নিরাপদে পৌঁছে গেছে তাওয়াং।কাল রাতে গুপ্তার লোক ধরা পড়েছে গেস্ট হাউসে ঢুকতে গিয়ে। ওরাই বোধহয় ভেরুকে ফিট করেছিল। সু-তাং এর লোক এখানেই ধরা পড়ল। লামা অবশ্য বোমডিলায় খবর পেয়েছিল জিনিস আমাদের কাছে নেই। ওরা ভেবেছে কলকাতাতেই আছে ওগুলো। তাই ফিরে গেছে। এই লামাও একজন ক্রিমিনাল কিন্তু। "

 আলোকের পিঠের ব্যাগ থেকে বের হল সেই বাতিদান আর পুঁথি। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। প্রধান লামা চিপা ওগুলো হাতে নিয়ে খুব খুশি। শুদ্ধিকরণ করেই সবাইকে নিয়ে মিউজিয়ামে গেলেন। একটা কাচের বড় বাক্সে কিছু দুষ্প্রাপ্য মূর্তির পাশে স্থান পেল হিউয়েন-সাং এর বাতিদান। ম‍্যাগনেটিক লকে বন্দি হল। আরেকটা কাচের দেওয়াল আলমারিতে পুঁথিটি সাজিয়ে রাখলেন উনি।

 বরুয়া দা এবং বৌদি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। আলোকের হাত ধরে বরুয়া দা বললেন,-"অয়ন ওর যাতায়াত ভাড়া , খরচা কিছুই নেয় নি। আপনাকে কিন্তু বলতে হবে আপনার ফিজ্ কত। নাহলে আমাদের তথাগত ক্ষমা করবে না।"

আলোক হেসে বলে -" সে সব নিশ্চই হবে, এখন চলুন আপনারা আমাদের তাওয়াং ঘুরিয়ে দেখাবেন। হিউয়েন সাং এর জন্য আমাদের অরুণাচল ট্যুরটা হয়ে গেল বেশ।" দিঠি আর সাহানার ভালই বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল কিছুক্ষণের ভেতর। ওরা প্ল্যান করছে পরদিন 'বুমলা-পাস','মাধুরী লেক' এসব ঘোরার। অয়ন আলোককে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, -"তোর জন্য আজ এই মহান কাজটা করতে পারলাম।" আলোক হেসে বল্‌ -"আর তোর জন্য এই মহান দায়িত্ব পালন করতে পারলাম।",

সবাই আজ মঠের অতিথি। অয়নের বন্ধু পুলিশের দুই অফিসার ও প্লেন ড্রেসে মঠ চত্বরেই উপস্থিত ছিল।এমন সময় অয়নের ফোনে খবর এলো আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল 'সু-তাং-লাই' দমদম এয়ারপোর্টৈ ধরা পড়েছে একটু আগেই।

বাইরে তখন সুন্দর রোদ উঠেছে, পাহাড় হাসছে।(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics