তিন্নি (পর্ব ৪)
তিন্নি (পর্ব ৪)
রোজানার সঙ্গে তিন্নির দেখা হল ডিনার টেবিলে। তিন্নি মায়ের সঙ্গে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙল বেশ রাতে। মোবাইলে সময় দেখল রাত নটা। ও তাড়াতাড়ি উঠে ঘরের আলো জ্বেলে দিলো। তারপর হাতে মুখে জল দিয়ে ঘর থেকে বেরল ডিনার খেতে। টেবিলে একটি মেয়ে বসে ডিনার খাচ্ছিল। গায়ের রঙ বেশ কাল, মাথার চুল কোঁকড়ানো, অনেকটা আফ্রিকানদের মত। মেয়েটি বেশ দীর্ঘাঙ্গী। সারা শরীরে একটা অদ্ভুত পুরুষালি ভাব। তিন্নি বুঝল এই রোজানা। মেয়েটি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। তারপর নিজের প্লেট টা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওর খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তিন্নি দেখল ও তিন্নির চেয়ে অন্তত ছয় ইঞ্চি লম্বা। পরনে একটা হাত কাটা সাদা টপ আর একটা হট প্যান্ট। তিন্নি ঠিক এত খোলা মেলা জামাকাপড় পরা পছন্দ করে না। নিজের থালাটা রান্নাঘরের সিঙ্কে নামিয়ে রাখতে রাখতে মেয়েটি বলল,” সো ইউ আর দ নিউ চিক? আই অ্যাম রোজানা। ইঊ ক্যান কল মি রোজি।“
“ হাই রোজি , আই অ্যাম তিন্নি।“
রোজি আর কোন কথা না বলে একটা জলের বোতল হাতে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। তিন্নির মৃগ কে যেমন নিজের বন্ধু মনে হয়েছিল, এর সাথে সেরকম সান্নিধ্য অনুভব করলো না।
একটা থালা রান্নাঘরের তাক থেকে নিয়ে ও ফ্রিজের কাছে চলে গেল রাতের খাবারের সন্ধানে। রান্না খুবই সামান্য, ভাত, ডাল আর একটা মিক্সড ভেজি টেবিল। তিন্নির নিজের জন্য খাবার নিয়ে সেটা মাইক্রো ওয়েভে গরম করে নিল। টেবিল এর ওপর নানা রকমের আচার রাখা আছে। তিন্নি তাড়াতাড়ি নিজের খাবার খেয়ে শুতে চলে গেল। কাল অফিসের প্রথম দিন। তাই রাতেই কি জামা কাপড় পরবে সব গুছিয়ে রাখল।
পরের দিন মোবাইলের অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল তিন্নির। বিছানায় শুয়ে একটু আলসেমি করে গড়াগড়ি খাচ্ছিল এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো। মা।
“ কি রে ঘুম থেকে উঠেছিস? না কি প্রথম দিনেই লেট পৌঁছবি ? ওঠ ওঠ!”
“ উঠে গেছি মা। এখন টয়লেট যাচ্ছি। রাখি?”
“ আচ্ছা আচ্ছা। যা।“ মা ফোনটা কেটে দিল।
মুচকি হেসে ফোনটাকে চার্জে বসিয়ে তিন্নি তৈরি হতে চলে গেলো। স্নান করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে দেখল মৃগ সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে । সামনে ধূমায়িত কফির কাপ।
ওকে দেখে মৃগ হেসে বলল,” গুড মর্নিং! কফি পাউডার আর চিনি সেলফে আছে। আর দুধ ফ্রিজে। “
তিন্নি মাথা নেড়ে নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসে ওর সামনে বসলো। মৃগ খবরের কাগজের একটা পাতা ওর দিকে এগিয়ে দিল।
“ তোমার ডিউটি কটায় ?”
“ আমায় সাড়ে নটা নাগাদ পৌছতে বলেছে।“
“ তাহলে তুমি আজ আমার সঙ্গে যেতে পারো। “
তিন্নির বেশ নিশ্চিন্ত লাগলো। নিজের কফি টা শেষ করে মৃগ তৈরি হতে চলে গেল।
ওদের বিল্ডিঙের থেকে খানিকটা দূরেই অটো স্ট্যান্ড। মৃগ ওকে চিনিয়ে দিল।
অফিস পৌঁছে সিকিউরিটি তিন্নির অ্যাপয়েন্ট মেনট লেটার দেখে ওকে ভিতরে ঢুকতে দিল। মৃগ ওকে ওর ডিপার্টমেন্ট এর সামনে পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।
ওকে একটা ওয়েটিং এরিয়াতে বসতে বলা হল। ওর সামনে দিয়ে একজন খুব সুপুরুষ প্রায় ছফুট লম্বা লোক পাশের একটা কেবিনে ঢুকে গেল। তার পরনে একটা সাদা সার্ট আর নীল জিন্স। তার ডিওর গন্ধে চারিদিক ভরে গেল। তিন্নি অনেক চেষ্টা করেও তার দিকে আর একবার না তাকিয়ে পারল না। যদিও ছেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকার বদ অভ্যাস ওর নেই। সত্যি কথা বলতে কি বেশির ভাগ সময় উল্টো ঘটনাটাই ঘটে, মানে ছেলেরাই ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারে না।
“ আপ কো অন্দর বুলায়া হ্যায়।“ একজন বেয়ারা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার গলার আওয়াজে সম্বিত ফিরে পায় তিন্নি। নিঃশব্দে তাকে অনুসরন করে ও।
একটা দরজার দিকে ইশারা করে বেয়ারাটা চলে গেল। দুরু দুরু বুকে দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকল তিন্নি।
“ মে আই......”
“ হাই সুতনুকা ! আই আম শুভম। প্লিজ হ্যাভ অ্যা সিট। ইউ উইল বি ওয়ারকিং ইন মাই টিম।“
তিন্নির সামনে যে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয়, একটু আগে দেখা সেই হ্যান্ডসাম লোকটি। তিন্নির বুকের ভিতরতা ধড়াস করে উঠলো।
(ক্রমশ...)