Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Classics

2  

Sayandipa সায়নদীপা

Classics

তোমাকে না লেখা চিঠিটা

তোমাকে না লেখা চিঠিটা

4 mins
1.1K


দাদু,


আজও বিকেলে গেটে আওয়াজ হলেই ছুটে যাই, ক্রাচের ঠুকঠাক শব্দ, সেই চেনা গন্ধ আবার ফিরে পেতে চাই। দাদু তুমি জানো, বড্ড মিস করি তোমায়? আজও সেই দিনটা মনে পড়ে ভীষণ, ১১ই ডিসেম্বর, ২০১৮; আর পাঁচটা দিনের মতোই তো অতি সাধারণ ছিল দিনটা, তবুও কেন আচমকা সব পাল্টে গেল দাদু? 


  সেই যে যেদিন ডাক্তার বলে দিয়েছিল আর বড়জোর মাস ছয়েক, ঘরে ফিরে নিঃশব্দে কেঁদেছিলাম। সবাই বলেছিল তোমাকে না জানাতে যে তোমার শরীরেই বাসা বেঁধেছে সেই মারণ রোগ যে রোগকে ভয় পায়না এমন একটা মানুষও হয়তো নেই পৃথিবীতে। দাদু জানোতো সেই যে সেই প্রথমবার তোমার যখন লিভারে সিস্ট হল, অপারেশন করার আগে ডাক্তার বলেছিল এই সিস্ট নাকি ওই মারণ রোগ সঙ্গে নিয়েই আসে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম সেবার। তারপর যখন বায়োপসি রিপোর্ট নেগেটিভ এলো, ডাক্তার বলল "মিরাকল", আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, ভেবেছিলাম "যাক ফাঁড়া কেটে গেছে।" কাটেনি দাদু, সাত বছর পর সে ফিরে এলো, আবার একই জায়গায় আক্রমণ। এবার আর সে একা এলো না, মারণ রোগটাকে সঙ্গী করে তবেই ছাড়ল। ডাক্তারের বলে দেওয়া ছয় মাসের যখন পাঁচ মাস হয়ে গেল তখন থেকে জানোতো দাদু রোজ একটা আশঙ্কা নিয়ে ঘুমোতে যেতাম, সকালে উঠে সবার আগে তোমার ঘরে উঁকি দিতাম। তোমায় ঠাকুর নাম করতে দেখলে তবেই স্বস্তি মিলত। তুমি চিরকালের লড়াকু ছিলে, তাই হয়তো যেদিন তুমি প্রথম বাবাকে বললে, "আমাকে ছেড়ে দিয়ে আসবি না?" মেনে নিতে পারিনি সেদিন।

বাবার গায়ে সেদিন জ্বর, দুপুরের রোদ চড়া। ওপরের বারান্দা থেকে চুপি চুপি সেদিন তোমায় দেখেছিলাম দাদু। তুমি পিসিমণির বাড়ি যাচ্ছিলে। তুমি হয়তো ভেবেছিলে আমি তোমাকে টাটা করতে এলাম না, কিন্তু জানোতো দাদু সেদিন আমি তোমার সামনে যেতে পারিনি। যে মানুষটা কোনোদিনও কারুর সাহায্য নেয়নি, একটা পা অক্ষম হওয়ার পরেও যেখানে যেতে ইচ্ছে করছে নিজেই গেছে, সেই মানুষটা নিজের ছেলের অসুস্থতা সত্ত্বেও যখন বলে,"আমাকে ছেড়ে দিয়ে আসবি না?" বিশ্বাস করো দাদু মেনে নিতে পারিনি। শুধু ভেবেছিলাম তার মানে ভেতরে ভেতরে তোমার কতটা কষ্ট হচ্ছে যে তুমি সাহায্য চাইলে আজ। তুমি কিন্তু নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে চাওনি, তুমি সবসময় বলতে, "এই তো আমি একদম ফিট আছি।"


   তুমি গ্রামের বাড়িতে যেতে চেয়েছিল। চলেও গিয়েছিলে। যাওয়ার আগে ডাক্তার দেখাতে যেতে ডাক্তারবাবু যখন বলেছিলেন, "পরের বার এই ওষুধটা পাল্টে দেব মেসোমশাই।" 

তুমি নাকি তখন বলেছিল, "আর কি আসার প্রয়োজন পড়বে?" 

তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে দাদু যে তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে? তুমি এতটাই শক্ত, লড়াকু মানসিকতার মানুষ ছিলে যে অতবড় একজন ডাক্তার যে হয়তো হাজার হাজার ক্যানসার পেশেন্ট নিয়ে কাজ করেছে, সেই মানুষটার হৃদয়কেও তুমি নাড়িয়ে দিয়েছিলে ওই একটা কথায়। বাবাকে পরে ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, "সেদিন আপনার বাবার কথায় আমার খুব কষ্ট হল জানেন? ওই মানুষটার মুখে এমন কথা শুনবো ভাবিনি।"


    মা বাবা তোমার কাছে ছিল। আমি জানতাম তুমি আছো। রোজকার মত ঘুম থেকে উঠেছিলাম, ব্রাশ করে, ব্রেক ফাস্ট করেছিলাম। পিচাই বায়না ধরেছিল কোকো সন্দেশ বানিয়ে দিতে হবে। আমি বানাতে লেগেছিলাম। যখনই আমি নতুন কিছু বানাতাম তখনই তুমি সেটা টেস্ট করতে এবং মন্দ হলেও বলতে, "অপূর্ব।" সেদিন কোকো সন্দেশ বানাতে বানাতে তোমার কথা ভীষণ মনে পড়ছিল তাই। সন্দেশ বানানো শেষ, কাজু আর কিশমিশটা ওপরে সাজানো বাকি। ফোনটা বাজলো আমার। বাবা… ভাবলাম হয়তো আমরা কি করছি খোঁজ নিতে ফোন করেছে বাবা। স্বাভাবিক গলায় ধরলাম ফোনটা, "হ্যাঁ বাবা বলো।"

ওপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো মাত্র কয়েকটা শব্দ, "দাদু… দাদু আর নেই বুঝলি?"

আর কোনো কথা বলতে পারিনি আমি, ধপ করে বসে পড়েছিলাম মেঝেতে। পিচাই এসে বারবার জিজ্ঞেস করছিল, "কি হয়েছে?" "কি হয়েছে বল না…"

বলতে পারিনি আমি।


   গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছিল আমাদের বারান্দায়। আত্মীয় স্বজন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিল। তুমি সারাজীবন সবাইকে এতো ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়েছিল, সবাইকে এতো সাহায্য করে গেছ… তাই তো তোমার সারা শরীর ঢাকা পড়েছিল হলদে সাদা সব ফুলে। তোমার গলায় রজনীগন্ধা দিতে দিয়ে কেঁপে উঠেছিলাম দাদু, তোমার সামনে উল্টে পড়েছিলাম। মেনে নিতে পারিনি তোমার মত দীর্ঘদেহী মানুষটার অমন কুঁকড়ে ছোটো হয়ে যাওয়া শীতল শরীরটা। তোমার পায়ের কাছে বসে গীতা পড়েছিলাম দাদু। সবাই বলেছিল তোমার আত্মা নাকি শান্তি পাবে এতে। আমি জানিনা মৃত্যুর পর আর কিছু আছে কিনা, আমার গীতা পড়ায় সত্যিই তোমার আত্মা শান্তি পাবে কিনা। কিন্তু সারাজীবন আমার আফসোস রয়ে যাবে দাদু, তুমি বেঁচে থাকতে কিচ্ছু করতে পারলাম না তোমার জন্য, কিচ্ছু না। 


   সবাই বলে তুমি নাকি ঠাকুর নাম করতে করতে চলে গিয়েছিলে নিঃশব্দে। ঠাকুরকে তাই বলি তুমি যেখানেই থাকো তোমায় যেন ভালো রাখে। যদি পরের জন্ম বলে কিছু থাকে তাহলে সে জন্মে যেন এই জন্মের মত আঘাত না পাও। 


   তোমায় খুব ভালোবাসি দাদু। খুব মিস করি তোমায়। খুব মিস করি।


       ইতি, 

        তোমার তাতাই


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics