Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Aziza Nasrin

Romance Tragedy

4  

Aziza Nasrin

Romance Tragedy

ফার্স্ট_ভ্যালেন্টাইন

ফার্স্ট_ভ্যালেন্টাইন

11 mins
1.3K


সকালবেলা উঠে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল মিস্টুর, কাল প্রতাপের সাথে ব্রেক আপ হয়ে গেছে |যদিও একটু পরেই university, আর সেখানে থেকে বন্ধুদের সাথে movie দেখার প্ল্যান আছে, তাই এই মন খারাপের পালা টা শেষ হতে বেশি দেরি লাগবে না তার | Break up ব্যাপার টা অভ্যেস এ পরিণত করে ফেলেছে সে রীতিমত, কি আর করা যাবে যদি প্রেম আর না টিকিয়ে রাখা যায়? ব্রেক আপ ছাড়া তো আর গতি নাই | আর অত সিরিয়াসলি সে রিলেশনশিপ টা কখনও নেয় নি | এই যেমন অপর্ণা, তার সম্পর্কের প্রতি এত নিষ্ঠাবতী, এত সচেতন..... এসব দেখে মিস্টুর হাসিই পায়, যেন শেকল বাঁধা হাতে পায়ে, মিস্টু তো উড়তে চায় , তাকে কেউ বেঁধে রাখতে পারবে না, কিন্তু সে প্রেমে পড়তে ভালোবাসে, ভীষণ ভালোবাসে, একদিন সে তার মনের মত কাউকে খুঁজে পাবে এই তার বিশ্বাস | এই নিয়ে চার বার ব্রেক আপ হল | আর বেছে বেছে তার ব্রেক আপ গুলো এই ফেব্রুয়ারি মাসেই হয়, ফেব্রুয়ারি তার কাছে ভালোবাসার মাস নয়, ব্রেক আপের মাস | আজ ২ তারিখ, আর কয়েকটা দিন পর ভ্যালেন্টাইন্স ডে, প্রতিবারের মত এবারও সে অনেক প্রোপোজাল পাবে, ভেবেই মুখে একটু খানি হাসি ফুটল, কিন্তু আর নয়, সে কোনোটাই accept করবে না | খুব হয়েছে, এখন কার মত প্রেমের এখানেই ইতি, কিছুদিন নিজের মত "সিঙ্গেল" হয়ে বাঁচা যাক, ঝামেলাহীন জীবন | খাট থেকে উঠে আয়নায় একবার দেখল নিজেকে | ভীষণ সুন্দর মুখ তার, নিজের প্রতিবিম্বের প্রতি তাকিয়ে হাসল সে, | ফোন বাজছে | মুখের হাসিটা এবার বিরক্তি তে পরিণত হল, নিশ্চয় প্রতাপ, উফফ এই ছেলে গুলো কেন বোঝে না যে ব্রেক আপ মানে ব্রেক আপ, আবার কেন এই সিম্পল ব্যাপার টা খুঁচিয়ে ঘা করে কে জানে | ফোন সে রিসিভ করবে না প্রতাপের | কিন্তু নাম্বার টা দেখল অজানা, তার মানে প্রতাপ নয় |

-হ্যালো, 

-মিস্টু আমি |

-আমি? আমি কে? 

-ভয়েস টাও ভুলে গেছ? 

-আচ্ছা, বুঝেছি , তোমার কি এখনো কোন গার্ল্ফ্রেন্ড জোটেনি? 

-প্লিজ মিস্টু, আর কত বাজে কথা বলবে? একটা কথা ছিল তোমার সাথে |

-আমি শুনতে চাইছি না, তুমি আর কতদিন আমার পিছনে পড়ে থাকবে বলত? 

-আর থাকব না, শুধু একবার আমার কথা টা শোনো |

..........এই হচ্ছে দীপ, মিস্টুর প্রথম প্রেমিক, বেচারা প্রথম প্রেমকে এখনও ভুলতে পারেনি | কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে প্রেম, আলাদা কলেজ কিন্তু সেম সাব্জেক্ট |কিন্তু মিস্টু বছর খানেক পরেই অসিতের প্রেমে পড়ে গেল| অসিত তখন মিস্টুর কলেজের সবথেকে ফেমাস ছেলে, আর ছেলের চেহারা টাও সেই রণবীর কপূর, আর মিস্টু নিজেও তো মারমার কাটকাট সুন্দরী |অসিত এমন ভাবে approach টা করেছিল যে মিস্টু আর নিজেকে সামলাতে পারেনি, সে দীপ কে বোঝাতে পারেনি তার situation টা| দীপ হল সেই "দেবদাস" ক্যাটেগরির, তারপর থেকেও মিস্টু কে ফোন করেছে, মিস্টু ইগনর করেছে |বেশ বছর খানেক মত দীপের ফোন আসেনি আর, আজ আবার বহুদিন পর |

-আচ্ছা, বলো |

-আমার সাথে আজ একবার দেখা করো প্লিজ |

মিস্টুর মাথা গরম হয়ে গেল |

-কখনও নয় |

-প্লিজ একবার |

-না, 

-প্লিজ, 

____অনেক জোরাজুরি করার পর মিস্টু রাজি হল, আগামীকাল, তার ইউনিভার্সিটি এর সামনের রেস্টুরেন্ট এ দীপ আসবে |

(২)

-কি!!?? 

দীপের কথায় প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠল মিস্টু | আশেপাশের টেবিল থেকে লোকজন তাকাচ্ছে | দীপ বলল "অত চিৎকার করার কিছু হয়নি, কথাটা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দ্যাখো |" 

-তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমার সাথে কথাও নাইট স্পেন্ড করতে যাব? 

-কথা টা অন্য ভাবেও বলা যায় মিস্টু |আমরা নাইট স্পেন্ড নয়, একসাথে জাস্ট একটা সপ্তাহ ঘুরতে যাব |এটা রিক্যুয়েস্ট, প্লিজ |

-আমার ভীষণ অবাক লাগছে, হঠাৎ করে এসে এরকম একটা প্রস্তাবের মানে কি? 

-একটু একসাথে সময় কাটানো ছাড়া কিছুই নয় |

-উফফ, আমি তোমার সাথে সময় কাটাতেই বা যাব কেন, এটাই তো ভেবে পাচ্ছি না |আমি কোনমতেই যাব না |

----মিস্টু টেবিল থেকে ব্যাগ টা তুলে নিয়ে উঠে পড়তেই দীপ অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বলল "তুমি কি চাও তোমার আমার কিছু অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি সবাই দেখুক??" 

মিস্টু আকাশ থেকে পড়ল, কিছুক্ষণ মুখে কথা সরল না |

-কি বললে তুমি? 

-যা বলার বলে দিয়েছি, তুমি না গেলে ফল টা খারাপ হবে আর গেলে কিছুই হবে না |

-তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেল করছ? আমি না গেলে কি করবে? ওই ফোটো গুলো দেখিয়ে আমাকে ছোট করবে? করো, আমি সঙ্গে গেলেও তো, তুমি আমাকে রেপ করবে |" 

রাগ আর উত্তেজনায় কথা গুলো বলে মিস্টু কাঁপতে থাকল থর থর করে | শেষের কথাটায় দীপ অত্যন্ত রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল " আমি অতশত বুঝি না, তুমি আমার সাথে যাচ্ছ 11 তারিখ, পুরুলিয়া, ভালোপাহাড় , রাত ৯ টার ট্রেন, " | কথা গুলো বলেই দীপ বেরিয়ে গেল ঝড়ের বেগে |মিস্টু আবার চেয়ারে বসে পড়ল, মাথায় হাত, পায়ের তলার মাটি যেন সরে পড়েছে, মিস্টু মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এসেছে আর যাই হোক দীপ কখনও তাকে এভাবে ব্ল্যাকমেল করবে না, দীপ তো অন্যরকম, কিন্তু আজকের দীপকে সে আগে কখনও দ্যাখেনি |

(৩)

দীপ খুব নরম গলায় অনুরোধ করল কিছু খাওয়ার জন্য, মিস্টু রাগের গলায় বলল "খেয়ে এসেছি" | সাইডের আপার আর লোয়ার বার্থ দুটো তাদের, মিস্টু লোয়ার বার্থে বসে আছে, কাঁচের মধ্য দিয়ে বাইরের অন্ধকারে তাকিয়ে আছে, দীপ সামনে বসে আছে তার দিকে তাকিয়ে |মিস্টুর কি যে রাগ হচ্ছে সে বোঝাতে পারবে না |সেদিন বাড়ি গিয়ে অনেক বার ভেবেছে, কিন্তু দীপ নিজের কথায় জিদ ধরে আছে, এই প্রথম নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিল মিস্টুর |মায়ের অভাব এই প্রথম ভীষণ ভাবে অনুভব করতে পারছিল, যে মাকে সে দ্যাখেনি, যার স্পর্শ সে কখনও পায়নি, গত কয়েকদিন তাঁকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা টাও সে অনুভব করেছে |বাবাকে বলতে পারেনি | সবথেকে কাছের বান্ধবী মিঠির কাছে আলোচনা করা করে সে শেষপর্যন্ত দীপের সাথে যাওয়ায় ঠিক করেছে, একবার ইচ্ছা করছিল পুলিশ রিপোর্ট করতে, কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছুই করা গেল না |অনেক দ্বিধা, রাগ, অনিচ্ছা আর খুব সামান্য ভরসার উপর নির্ভর করে বাবাকে বন্ধুদের সাথে যাচ্ছে, মিথ্যা কথা বলে ট্রেনে চেপেছে আজ | 

রাত্রের ট্রেনের সফর আলাদাই এক অনুভূতি আসে, কিন্তু আজকে মিস্টুর চোখ ফেটে জল আসছে |বাইরের অন্ধকার জলের গতি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফেব্রুয়ারির শীত মিস্টুর গরম মেজাজে যেন কিছু টা প্রলেপ লাগিয়েছে, আজ সে অনেকটা শান্ত, ধীর, স্থির.... |

(৪)

ঘুম ভাঙ্গল পাক্কা বিকাল ৩ টায়, ভালোপাহাড় জায়গা টা পুরুলিয়ার এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য প্রকাশের জায়গা |এখানে এসে দীপ একটা ছোট্ট অথচ ভীষণ সুন্দর ডাবল বেড কটেজ বুক করেছিল | আটাচড বাথরুম | আর একটা ছোট্ট ব্যালকনি আছে |ঘুম থেকে উঠে মিস্টু ব্যালকনি তে এসে দাঁড়াল |সামনে টা একদম সবুজে ঘেরা, যত দূর চোখ যায় কোন কংক্রীটের বাধা পায় না, চোখ চলে যায় বহুদুর, আহ চোখের ভীষণ আরাম আসে, সবুজ আর সবুজ, অনেকটা বইয়ের পাতার মত সুন্দর |কয়েকদিনের জমে থাকা রাগ আর মানসিক তিক্ততা গুলো ছাড়া পেয়ে যায় এই সবুজের মাঝে, মাথা টা ভীষণ আলগা লাগে |দীপ বোধহয় বাইরে ছিল, ভিতরে এসে, মিস্টুকে বলল, "ঘুম হল? অনেকটা ক্লান্ত ছিলে তাই ডাকিনি, চলো বাইরে একটু ঘুরে আসি |মিস্টু আর না করল না |

________________________

বাইরে ভীষণ ঠান্ডা পড়েছে, বিকালের আকাশটা লাল, একটা ছবির মত লাল মাটির রাস্তা দিয়ে তারা হেঁটে যাচ্ছে |পাশে মাঝে মাঝে পুকুর, পুকুরের জল শান্ত, স্নিগ্ধ, |এখানের জায়গা গুলো দেখে মনে হচ্ছে কোন শিল্পী এঁকে রেখেছে, যেদিকে তাকাও শুধু মুগ্ধতা | কিছু টা গিয়ে একটা চায়ের দোকান, দুজনে চা খেল, ওখানকার কিছু মানুষের মধ্যেকার কথা বার্তার নির্বাক শ্রোতা হয়ে রইল দুজন |

-আচ্ছা দীপ তুমি আমাকে এখানে কেন আনলে? 

-জায়গাটা ভীষণ সুন্দর তাই | এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম, খুব ইচ্ছা হল আসতে |

-কিন্তু আমাকে কেন? 

-তোমার ভালো লাগছে না? 

-অবশ্যই খুব ভালো, তবে তুমি বন্ধুদের সাথে আসতে পারতে তাহলে ভালো enjoy করতে পারতে |

-এনজয় করব বলে তো আসিনি, অনুভব করব বলে এসেছি |

-------কথা টা মিস্টুর বোধগম্য হল না বোধহয়, একটা অদভূত দৃষ্টিতে সে তাকাল দীপের দিকে |

(৫)

মিস্টুর রাগ কোথায় যেন উবে গেছে, ভালো পাহাড়ের স্নিগ্ধতা তার মনকে শান্ত করে দিয়েছে | কাল সারাটা দিন দুজনে অনেক জায়গায় ঘুরেছে | দুটো মানুষ নিজেদের পূর্ব স্মৃতি ভুলে যেন ভালোপাহাড়ের সূর্যোদয়ের মত লাল টকটকে সুন্দর এক বন্ধুত্ত্বের চাদরে নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে | দীপ এখানে এসে পর্যন্ত আর পুরানো স্মৃতি, প্রেমিকের দাবী নিয়ে কিচ্ছু টি বলে নি, তাই মিস্টুর স্বাভাবিক হতে খুব বেশি দেরি লাগেনি | তবে প্রথম রাতে মিস্টুর ঘুম আসেনি, কিছু টা দ্বিধা, কিছুটা ভরসাহীনতা আর কিছু টা রাগের সমন্বয় | আজ সকালে উঠতে বড্ড দেরি হয়ে গেল |ঘুমটা ভাঙ্গল কপালে দীপের হাতের স্পর্শে |

-এখনও ঘুম ভাঙ্গেনি যে? শরীর খারাপ? 

-না তো |

-আমাদের আরো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে তো, চলো ঝট পট উঠে রেডি হয়ে নাও, ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ব |

---------------------------------------------------------

কটেজ থেকে কিছুটা দূরে একটা বাগান আছে, ফুলের বাগান | রঙ বেরঙের ফুলে বাগানটা স্বর্গীয় উদ্যানে পরিণত হয়েছে | বাগানের নরম সবুজ ঘাসে খালি পায়ে মিস্টু খানিক টা হেঁটে নিল, কি যে ভালো লাগছে |দীপ দূরে দাঁড়িয়ে আছে, মনে হয় তাকেই দেখছে |হঠাৎ মিস্টুর কিছু একটা মনে পড়ল, সে তাড়াতাড়ি দীপের কাছে গিয়ে বলল "তুমি যে বলেছিলে আমাদের সেই ফোটো গুলো সবাইকে দেখাবে সেগুলো ডিলিট করে দাও, আমি তো তোমার শর্ত রেখেছি |"

দীপ মুচকি হেসে পকেট থেকে মোবাইল বার করে, একটা ফোটো দেখিয়ে বলল "এই ফোটো টা ছাড়া আমার কাছে আর কোন ফোটোই নাই মিস্টু, আমাকে ক্ষমা করো, আমি একরকম ভয় দেখিয়ে তোমাকে এনেছি,কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম,আর আমি এরকম কিছুই করার কথা স্বপ্নেও ভাবি না যাতে তোমার ক্ষতি হয় " |

মিস্টু মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখল সে দীপের ঘাড়ে মাথা দিয়ে আছে, গঙ্গার ধারের বেঞ্চে বসে আছে দুজন |ফোটো তুলেছিল অমিত |মূহুর্তমধ্যে কি যে হয়ে গেল মিস্টুর মধ্যে কে জানে , গলাটা বুঁজে আসছে, চোখে জল এসে গেল বোধহয়, বহুদিনের পুরানো স্মৃতির তলায় পড়ে থাকা দিনগুলো আজ বুকে ধাক্কা দিয়ে যেন উঠে আসার চেষ্টা করছে, |চোখের জল টা আর সামলাতে পারল না সে |দীপের দিকে পিছন ঘুরে বলল " এখানে বড্ড ধুলো, চোখে পড়ল মনে হয়, আমি ধুয়ে আসছি | ভালোপাহাড়ের কাঁচের মত স্বচ্ছ পরিবেশ বোধহয় আড়ালে মুচকি না হেসে আর পারল না, এই মিথ্যা অভিনয় টা পরিবেশের সেই দোষী অদৃশ্য ধূলিকণাগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে দিল ভালোপাহাড়ের প্রতি টা কোণে কোণে, প্রেমের অদভুত এক রসিকতায় মত্ত হল চারিদিক |

__________________________________

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী, ভ্যালেন্টাইন্স ডে |কিন্তু কেউ কথাটা মুখে উচ্চারণ করল না |আজ বিকাল ৫টায় তারা ফিরে যাবে, নিজের নিজের বাড়ি, তারপর আর কেউ কিছু চাইবে না অপরের কাছে | আজ তো মিস্টুর আনন্দ হওয়ার কথা কিন্তু সে হতে পারছে না, | সকালবেলা দীপ এসে তাকে একটা তার আঁকা ছবি দিল, দুজন নারী পুরুষ, দুজনেই সূর্যাস্ত দেখতে ব্যস্ত একসাথে, কেমন যেন মন কেমন করা একটা ছবি, অথচ ছবি টা বার বার দেখতেও ইচ্ছা করে, এর মধ্যে কিসের যেন এক শান্তি পাচ্ছে সে |মিস্টু বলল, " ওরা সূর্যাস্ত কেন দেখছে দীপ,সূর্যোদয় নয় কেন? "

-সম্পর্কের বড় সফলতা হল জীবনের সত্যতা,সব সত্যি টা একে অপরের কাছে উজাড় করে দেওয়া, আর জীবনের বড় সত্যি টা হল সূর্যাস্ত, যারা একসাথে সেই সূর্যাস্ত দেখে তারাই হয় সবথেকে সুখী " |

মিস্টু অবাক হয়ে যায়, দীপ ভীষণ বড় হয়ে গেছে যেন, দীপের সামনের চুলগুলো এলোমেলা, খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে দেখতে এই মূহুর্তে, মিস্টু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে, চোখের পাতা তার পড়ছে না |

(6)

কি পরিমাণ মানসিক অস্বস্তি আর অশান্তিতে যে মিস্টু তার সেমিস্টার এক্সাম শেষ করল টা সে ছাড়া এক ঈশ্বর জানেন |সেই ফেব্রুয়ারী তে ফিরে এসে দীপের সাথে আর কোন কথা হয়নি, অবশ্য না হওয়ারই কথা |কিন্তু মনের কোন এক কোণে মিস্টু একটু হলেও দীপের ফোন পাওয়ার আশাটা জমিয়ে রেখেছিল |কিন্তু আজ এপ্রিলের ২৫ হয়ে গেল দীপের কোন পাত্তা নাই |মিস্টু চাইলেও ফোন করতে পারছে না.... নিজেকে ছোট করতে সে চায় না, ইগো তে যেন বাধছে |এক্সামের শেষে সে আর থাকতে পারল না, ঠিক করল, ফোন নয় সে দীপের বাড়ি যাবে | সেই কটা দিনের মধ্যেই দীপের জাদুমন্ত্র তার মধ্যে যে প্রবেশ করেছে তাতে মিস্টু দিন দিন বশীভূত হয়ে চলেছে | 

__________________________________

- গত বছর জুন মাসে একটা বাস আক্সিডেন্টে বুকের পাঁজরে ভীষণ ভাবে আঘাত লাগে দীপের | তার পাঁজর দুটোর স্থান উঁচু নীচু হয়ে যায়,ডানদিকের পাঁজরটা ভেঙ্গে গেছিল প্রায় |অসহ্য যন্ত্রণায় প্রতি টা দিন ছটফট করত ছেলেটা | সেই ছোট থেকে মা বাপ মরা ছেলেটাকে পিসি হলেও নিজের ছেলের মত মানুষ করেছি | অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোন কাজ হচ্ছিল না, তারপর নিয়ে গেলাম, ব্যাঙ্গালোর |অনেকটাই উপশম হল যন্ত্রণার |বেশ সুস্থ স্বাভাবিক হল ছেলেটা আমার | কিন্তু ডাক্তার বলল অপারেশন করে পাঁজর দুটো ঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে, অপারেশন না করে বেশিদিন ভালো সে থাকবে না তবে অপারেশন টা ভীষণ রিস্কি, ৩৫%সফল হওয়ার চান্স আছে, তবে যত তাড়াতাড়ি পারে অপারেশন করে নেওয়ার ভালো, |গত মার্চ মাসের ৩০তারিখ তার অপারেশন এর ডেট ছিল | ছেলেটা সুস্থ ছিল, দেখে মনে হত না তার কোন অস্বাভাবিকতা আছে শরীরে, খুব হাসিখুশি ছিল গত দুটো মাস, সে বোধহয় জানত উপরওয়ালা তাকে খুব শিগগির ডেকে নেবেন, সে বলল কিছুদিন সে ভালোপাহাড় বেরাতে যেতে চায়, একা, আপত্তি করেছিলাম কিন্তু সে বলেছিল সে নিজের জীবনের সবথেকে ভালো মূহুর্ত কাটাতে চায় কিছুদিন একান্তে থেকে, যেতে দিলাম, তখন কিন্তু জানতাম না সে তোমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, পরে ওখানে থেকে ফিরে এসে আমায় বলেছিল, ভালোবাসার কাঙাল ছেলে আমার |অপারেশন করা হল, কিন্তু সাকসেসফুল হল না, |যে পাঁজর ভেঙ্গে গেছে একবার তাকে সারিয়ে তোলা তো আর সহজ নয় রে মা " 

_______পিসিমা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন, মিস্টু হতবাক | সে ধীরে ধীরে যেন তলিয়ে যাচ্ছে জলের গভীরতায়, নিজের কান্না টাকে প্রকাশ করা যাচ্ছে না, শ্বাস রোধ হয়ে আসছে |মুখে চিৎকারও আসছে না |কোন মতে দীপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিভাবে নিজের বাড়ির দরজায় এসে সে পৌঁছালো তা সে বুঝতেও পারল না | 

বাবা দরজা খুললেন, তার উদভ্রান্ত অসহায়,ভালোবাসায় তৃষ্ণার্ত,মুখটা সেই জন্মদাতার চোখ এড়াল না | কিন্তু বাবা কিছু বলার আগেই সে ছুটে গেল নিজের ঘরে , দরজা বন্ধ করে হাঁফাতে শুরু করল, জীবন থেকে কিছু হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা তার শরীরের শিরায় শিরায় অনুভব করতে লাগল সে, তার হৃদয়জাত অনুভূতি গুলি রক্তপ্রবাহের সাথে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরকে স্পন্দিত করতে লাগল | ফলস্বরূপ তার আটকে থাকা কান্নাটা বন্ধ ঘরের চার দেওয়ালে ছড়িয়ে পড়ল একসময় |বাইরে বাবা দরজায় বার বার ঠোকা দিতে থাকেন "মিস্টু কাঁদিস কেন মা? দরজা খোল |" কিন্তু এ কান্না যে বলার মত নয়, এ কান্না রাগের, অভিমানের, এ কান্না সেই প্রতারক প্রেমিকের, যে ভালোবাসার বীজ বপন করে সরে পড়েছে নি:শব্দে,এ কান্না সেই প্রেমিকের যে নতুন প্রস্ফুটিত ভালবাসার খাতায় সূর্যাস্তের ছবি এঁকে দেয়, সে ভন্ড, সে মিথ্যা, সে প্রতারক, প্রতারক, সে বড্ড বেশি প্রতারণা করেছে |এর কোন ক্ষমা নাই | সেই প্রেমিকার চোখ বেয়ে নেমে আসা কান্নার জলের আয়নায় ভেসে ওঠে সেই ভালোপাহাড়ের ছোট্ট কটেজ, তার ব্যালকনিতে নেমে আসা সকালের রোদ্দুর, লাল মাটির রাস্তায় দুজনের পায়ের ছাপ, চায়ের কাপে লেগে থাকা তাদের ঠোঁটের স্পর্শ | সবকিছু মনে রেখে দেয় সেই ভালোপাহাড়,জমিয়ে রাখে নিজের অভিজ্ঞতার গল্প ঝুলিতে, তারপর আসে দিনশেষে সূর্যাস্ত, বিষন্নতার অন্ধকার নেমে আসে ভালোপাহাড়ের চারিদিকে এক ব্যর্থ প্রেমের প্রাপ্তি হীনতার উদ্দেশ্যে |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance