Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debasmita Ray Das

Abstract

2  

Debasmita Ray Das

Abstract

ডাইনিং টেবল

ডাইনিং টেবল

4 mins
9.6K


 বাড়িতে মোট পনেরো জন সদস্য। পুরো বিশ্বাস পরিবার। বাবা মা, তিন ছেলে ও তাদের পরিবার.. কাচ্চা বাচ্চা সব। কর্তা বেণীমাধব বাবু তো মনে করেন পুরো বাড়িটাই একটা চিড়িয়াখানা। কে যে কি করে না করে, কে কখন আসে কখন যায়.. কিছুরই যেন কোন তাল থাকেনা!! শুধু ওই রাতে ডাইনিং টেবলে সকলে হয় একসাথে! আবার তার একটা পূর্ব নির্ধারিত সময়ও আছে.. রাত এগারোটা!! যে যেখানেই থাকুক ঠিক সেই সময়ে সক্কলে হাজির সেখানে, হতেই হবে। বেণীমাধব বাবুর কড়া হুকুম....

"দেখো, তোমরা সারাটা দিন যে যেখানেই চড়ে বেড়াও না কেন, রাতের খাওয়ার সময় যেন সকলকে একই সময় একই জায়গায় দেখতে পাই... এই বলে দিলুম..!!

ব্যস্ আর কি, কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। এর পর থেকে সারা দিন যে যেখানেই থাক,, রাতের ওই সময়ে সব হলঘরের ওই মেহগানি কাঠের কারুকাজ করা বিশাল ডাইনিং টেবলে এসে হাজির। টেবলটাও দেখবার মতোন। সুন্দর বাহারী কারুকাজ করা সারা গায়ে। চারপাশে খান কুড়ি চেয়ার। ঠিক মাঝখানের চেয়ারটা একটু অন্যরকম কাজ করা বড়ো মাপের,, আমাদের কর্তাবাবুর জন্যে।।

   

   এমনি অবশ্য চাকর বাকর মালী ড্রাইভার মিলিয়ে বাড়ির সদস্য আরো খান পাঁচেক বেশি, কিছু পুষ্যিও আছে। তা তারা বাবুদের খাওয়া হলে পরে তাদের জন্য একটা ছোট ঘর আছে, সেখানে বসে খায়। কিন্তু বাবুদের নৈশভোজের সময়টা তাদের ওখানেই থাকতে হয়, খুব দৌড়াদৌড়িও চলে। আশেপাশে যারা জানে, তারা হয় অভ্যস্ত হয়ে গেছে, আর নয় ওই সময় তারা জানলাটা কিছুক্ষনের জন্যে বন্ধ করে রাখে। কিন্তু, নতুন কেউ যদি সেই সময়টা বিশ্বাসবাড়ির পাশ দিয়ে যায়, তো অদ্ভুত সব আওয়াজে তার প্রায় কানে তালা লাগবার জোগাড় হয়। বাবুদের হাসি ঠাট্টা, বড়ো গিন্নির মাঝে মাঝে একটু বকা, বাচ্চাদের উচ্ছ্বাস চিৎকার, একদম ছোটগুলোর টেবলটাকেই প্রায় খেলার জায়গা মনে করার একটা প্রবল চেষ্টা.... ইতিমধ্যে তাদের মায়েদের মৃদু ধমক.... চাকর বাকরদের ছোটাছুটি এবং কিছু পুষ্যিদের ম্যাও ফ্যাঁশফ্যাঁশ আওয়াজে সে যেন এক অদ্ভুতুড়ে সঙ্গীতোল্লাস!!!!

   

    বিশ্বাসবাবুর ওষুধের কারবার। একদম ছোট অবস্থা থেকে উঠে আজ দোকানের পরিধিও অনেক বেড়ে শাখা প্রশাখা ছড়িয়েছে, আর এই তিনতলা বাড়িটাও খুব শখে তাঁর নিজের হাতে গড়া। এর প্রতিটা ইঁট পাজর তাঁর নিজের তৈরি,, আর তাই ছেলেদের সবসময় শিক্ষা দিয়েছেন একে অপরের হাত ধরে সামনের দিকে পা বাড়াতে। এই ডাইনিং টেবল ছিল প্রথম কয়েকটি আসবাবের মধ্যেই, তাই এর আয়ু অনেক। এটা তিনি তাঁর এক বন্ধুর দোকান থেকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বানিয়েছিলেন। আর তাই আর বিশেষ কোনো কিছুতে, তাদের কোনো কাজে বা ইচ্ছায় বাধা না দিলেও ডাইনিং টেবলের হুকুমটা শুরু থেকেই জারি করেছিলেন!!

   ছেলেদের গাছের মতোনই বড়ো করেছিলেন বেণীমাধব বাবু। আর তাই ছেলেরা কেউই আর তাঁর ব্যবসায় নাম লেখায় নি। বড়ো ছেলে উমাকান্ত ছিলেন নামকরা ব্যারিস্টার আর খুব রাশভারী মানুষ, যদিও বাবার কাছে কখনো গলা উঁচু করতে দেখা যায় নি। তার তিন ছেলে মেয়েই বেশ বড়ো, বড়ো দুটি কলেজে, মেয়েটা এখনো স্কুলে। মেজো জন নিশিকান্ত, ডাক্তার, প্রচন্ড ব্যস্ত। তার তো বাড়িতে প্রায় দেখা মেলা ভার!! এ হেন নিশিও বাবার হুকুমে যতো রাতই হোক, এগারোটার মধ্যে কোনোক্রমে টেবলে! তার এক ছেলে এক মেয়ে দুজনেই স্কুলে.. একদম পিঠোপিঠি। আর ছোটজন পড়াশুনার দিকে ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ তার একটু কমই ছিল,, সে বিশ্বাস কর্তার একরকম ইচ্ছার বিরুদ্ধেই কনট্রাকটর। দাদাদের থেকে সে একটু অন্যরকম বলেই বা তার নামেও হয়তো একটু ছন্দপতন, সরোজ। সরোজের দুই পুত্র। একমাত্র বেণীমাধব বাবুর এই ছেলেটিই বোধহয় পুরো বাড়ির মধ্যেই ছিল একটু ছন্দপতনের মতোই। আর সে একটু আলাদা বলেই বোধহয় তাঁদের ছোট পুত্রবধূ অনিমা ছিল শান্ত স্নিগ্ধ সুন্দর স্বভাবের বাড়ির সব থেকে লক্ষ্মী সদস্যা। বাবার এতো কড়া হুকুম সত্বেও সরোজকে কম হলেও মাঝে মাঝেই নৈশভোজে পাওয়া যেত না। সারা পাড়া যেন এই বাড়িটার কিছু ঘন্টার এই প্রাণে গমগম করে উঠতো....

   

   পুরোনো এলবামগুলো ঘাঁটতে ঘাঁটতে যেন ফুল নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েছিল আমাদের আজকের ছেলে, সরোজ বিশ্বাসের কনিষ্ঠ প্রত্যুষ বিশ্বাস!! ছোটবেলার বেশ কিছু কথা স্মৃতিমাঝে ধূসর হয়ে যাওয়া সত্বেও,, এই ডাইনিং টেবল কিন্তু সে কখনোই ভুলতে পারে নি। আজ আর সেই স্বর্ণযুগ নেই, সময়ের ঘোড়দৌড়ে সে কোথায় হারিয়ে গেছে। তাই বাবার মতোন উমাকান্ত, নিশিকান্তরা আর সেই আনন্দ ধরে রাখতে পারেন নি। যে যার মতোন ডালপালা গুছিয়ে নিয়ে নিজের ইছামতোন জায়গায় শিকড় গেঁথেছেন। সত্যিই গেঁথেছেন কি? নাকি গাঁথবার বৃথা চেষ্টাই শুধু করেছেন!! তাই তো আজ তাদের যোগ্য সন্তানরা বিশ্বাসবাড়ি কাকা সরোজের হাতে তুলে দিয়েছে,, নতুন ঢঙে আবার সাজিয়ে নিতে! বড়দা, ওরফে উমাকান্তের বড়ো ছেলে নিখিল প্রত্যুষকে গতকাল রাতেও ফোন করেছিল,, তাড়াতাড়ি কাজ মেটানোর তাগাদা জানিয়ে, সে ইন্ডিয়ায় থাকতে থাকতেই। নয়তো একদম বাইরে গিয়ে পড়লে আর এক্ষুনি তার আসা হবে না,, সেইখানে নাকি তার মেলাই কাজ বাকি! প্রত্যুষ অনিমার নিজের হাতে গড়া,, তাই বাবা জ্যাঠা দাদাদের অসীম আগ্রহ সত্বেও সে একটা ব্যাপারে মন স্থির করে ফেলে.... না:, আর যাই নামবদল করুক না কেন, ডাইনিং টেবল কিন্তু একদম নামবদল করবে না, তার জন্য বাকিদের সাথে যতো লড়াই করতেই হোক না কেন!! আর কেউ না নিক সে তার নিজের কাছে এনে রাখবে। বিশ্বাসবাড়ির সেই ডাইনিং টেবল যুগ যুগ ধরে তাদের প্রাণেই প্রাণ বিতরণ করবে। কে জানে একদিন তার অমোঘ টানে যদি আবার সেই সঙ্গীত বেজে ওঠে.... সেই স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসা উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ অদ্ভুতুড়ে সঙ্গীতোল্লাস!!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract