Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Suravi Roy

Horror Thriller

5.0  

Suravi Roy

Horror Thriller

আমার স্নোকি

আমার স্নোকি

13 mins
950


চাকরীটা ব্যাঙ্গালোরে। চাকরীটা নিয়ে ব্যাঙ্গলোরে এসেছি মোটে দশ দিন হল। এখানে আমি একদম নতুন। এখানে থাকার জন্য একটা ভাড়া বাড়ি খুজতে হবে, এর উপর আমি একা মেয়ে, যার তার বাড়িতে ভাড়া থাকাও সম্ভব না। কিন্ত এখানে আমি কিছুই চিনিনা ঠিক ভাবে। তাই আপাতত অফিসের কয়েকজন স্টাফই ভরসা।......  


          তিন দিন হল, একটা ভাড়াবাড়ি পেয়েছি। অফিসের একজন স্টাফ ওটা ঠিক করে দিয়েছে। বাড়িটা বেশ ভালো। আমার একা থাকারও কোনো অসুবিধা নেই। বাড়ির মালিক বলতে, দুই জন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাদের দুই ছেলে-মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ে শশুরবাড়িতে আর ছেলে আমেরিকাই এক বিদেশিনীকে বিয়ে করে ওখানেই থেকে গেছে। ওই বৃদ্ধার কাছে শুনেছি তাদের ছেলে নাকি তাদেরও আমেরিকা নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ওনারা যেতে চাননি। অবশ্য এর কারণ বৃদ্ধা না বললেও আমি ঠিকই বুঝতে পারি যে, বিদেশিনী বৌমার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন বলেই ওনারা আমেরিকা যাননি। কারণ বৃদ্ধা খুবই আচার নিয়ম মেনে চলা আর কর্তব্যপরায়ন......তিনি আমার সাথেও তেমন কথা বলেন না ওই কর্তব্য হিসেবে সকাল ও রাত্রে একবার করে খোঁজ খবর নেন। কিন্তু আমার জন্যে ওই টুকুই যথেষ্ট। আমাকে যে বাড়িটা ভাড়া দেওয়া হয়েছে আর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যেটাই থাকেন, দুটো বাড়ি পাশাপাশি হলেও সম্পূর্ণ আলাদা। শুধুমাত্র একটা রেলিং দেওয়া বড়ো বারান্দা দিয়ে দুটো বাড়িকে জুড়ে দেয়া হয়েছে। কেন যে এই রকম ভাবে বাড়ি করেছেন, ভগবানই জানে।.....


        এই ভাড়াবাড়িটায় একটা বেডরুম, একটা বড়ো ডাইনিং রুম আর একটা ছোট্ট মতো কিচেন আর বাথরুম।....আমি এসেই প্রথমে ঘরগুলোকে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছি। আমার একার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। ও বলা হয়নি,,,আসলে আমি ঠিক একা নয় আর একজনও আমার সঙ্গেই আছে। সে হল ছয় মাসের স্নোকি , আমার প্রানের চেয়ে অনেক বেশী প্রীয় একটা স্নুকার ডগ্। ও একদমই আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না তাই ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে ব্যাঙ্গালোরে চাকরি করতে আসার সময় স্নোকিকেও সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়েছে।


       আমি প্রায় সারাদিনই অফিসে থাকি ,,, মানে সকাল ন’টাই বেরিয়ে যায় আর রাত্রি এগারোটাই ফিরি। যদিও অফিস থেকে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে....তাই অতো রাতে ফিরতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আসল অসুবিধাটা হচ্ছে স্নোকিকে নিয়ে, আমার ছাড়া বাইরের কারো হাতে খাবে না। আমি এতোটা সময় বাইরে থাকি তাই সকালে স্নোকিকে ভালো করে খাইয়ে, ওর জন্য আরো অনেকটা খাবার রেখে তবে বেরিয়ে আসি।

 এই বাড়িটাই আমার বেশ ভালো লাগছে।

প্রথম দুই দিন রাতে ঘুমটাও ভালো হয়েছে। তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। স্নোকির প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও এখন ঠিক ভাবে মানিয়ে নিয়েছে।


         আজ এই বাড়িতে আমার চতুর্থ দিন। এখন রাত 11.15 pm. আমি এই মাত্র অফিস থেকে বাড়ি ফিরলাম। অফিসের গাড়িটাও আমাকে নামিয়ে দিয়ে,,,ব্যাক করে চলে গেল। ......আমি ঘরের তালা খুলছি .....এই শব্দ শুনে স্নোকি ঘরের ভিতর থেকে, ঘেউঘেউ করে উঠল। আমি ওকে নিজের আওয়াজ দিলাম, তবুও ওর ঘেউঘেউ করা বন্ধ হল না। অন্য দিন আমার আওয়াজ শুনে চুপ করে যায়, কিন্তু আজ তা হল না। আমি একটু অবাক হলাম,,,,ভাবলাম," কোনো কিছুতে ভয় পেল নাকি???....কিন্তু স্নোকিতো ভয় পাওয়ার কুকুর নয়....। শরীর খারাপ হলো নাতো??...." আর কিছু না ভেবে সরাসরি দরজা খুলে ঘরে ঢুকলাম। আমি ঘরে ঢুকতেই স্নোকি এমন ভাবে আমার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল যে ,,আমি প্রায় চমকেই গেলাম ওর প্রথম এই রকম ব্যবহারে।


           আমি ওকে কোলে তুলে নিলাম, কিন্তু ওর গায়ে হাত দিতেই বুঝলাম স্নোকি কোনো কিছু একটা দেখে খুব বেশি ভয় পেয়েছে.....ওর গায়ের লোমগুলো সব খাড়া হয়ে গেছে....আর মনে হচ্ছে ওর হৃৎস্পন্দনটা চারগুন জোরে বেড়ে গেছে। এমনিতে আমি কোনো কিছুকেই ভয় পাই না, কিন্তু, ,,ওর এই রকম অবস্থা দেখে আমার শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল। স্নোকি হঠাৎই আমার কোল থেকে নেমে পড়ে, কিচেনের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে খুব জোরে ঘেউঘেউ করতে শুরু করে। এর পর মুহূর্তে আমার কাছে এসে, আমার গলায় জড়ানো স্কার্ফটার ঝুলন্ত শেষ প্রান্তটা ধরে টানতে টানতে আমাকে কিচেনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমি ওর অবস্থা বুঝে, কি না কি ভেবে, হাতের কাছে থাকা মোটা লাঠিটা তুলে নিয়ে, স্নোকির সাথে কিচেনের দিকে পা বাড়ালাম। কিচেন রুমের লাইটটা অন্ করতেই দেখলাম, রুমের ছোট জানালাটা দিয়ে কালো রঙের একটা লেজযুক্ত প্রাণী লাফিয়ে পালালো। আমি শুধু ওটার কালো রঙের লেজ আর পিছনের একটা পা দেখতে পেলাম। ওই টুকু দেখেই বুঝলাম ওটা একটা কালো বিড়াল ছাড়া আর কিছুই না। কিন্ত যে কুকুরটা একটা বাঘকে দেখেও ভয় পাই না সে কিনা একটা বিড়ালকে দেখে এতোটা ভয় পেল,,,আমার কেমন যেন একটু অবাক লাগলো। অন্যদিকে স্নোকি চারিদিকে শুকে শুকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বিড়ালটাকে। ওকে শান্ত করতে হবে এই ভেবে স্নোকিকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু ওর খাবারের জায়গাটা দেখে মনটা দুঃখে ভরে গেল। দেখলাম, সকালে দেওয়া সব খাবার পড়ে আছে অর্থাৎ স্নোকি সকাল থেকে কিছু খাইনি।


 আমি বেশিরভাগ দিন বাইরে থেকে খাবার এনে খেয়েনি কারন আমার রান্না করতে খুবই বিরক্ত লাগে। আর প্রতিদিন রান্না করে খেয়ে অফিসে যাওয়ার পর আর কোনো কাজে এনার্জি থাকে না। কিন্ত আজ অফিস থেকে ফিরে খুবই ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু স্নোকির এই রকম অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে কিচেনে ঢুকলাম স্নোকির জন্য কিছু রান্না করবো বলে। স্নোকিও আমার পাশে চুপ করে বসে রইল। অন্যদিন লাফালাফি করে আজ তাও করল না। স্নোকির পছন্দসই রান্না করলাম, ওকে খেতে দিলাম কিন্তু ও খেল না। তার পর ওকে আধঘন্টা বুঝিয়ে আদর করে খাবারগুলো খাওয়ালাম। খাওয়ানোর পর ওকে শুইয়ে দিলাম। এর পর আমি নিজে খেয়ে, ঘুমাতে গেলাম তখন রাত 1.30 am.


        জানি না কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎই খুব গরম লাগতে শুরু করায় জেগে গেলাম। চোখ খুলে দেখি ঘরের চারিদিকে প্রচন্ড অন্ধকার, আবার ফ্যানটাও চলছে না । বুঝলাম লোডসেডিং হয়ে গেছে। কিন্তু ভাবলাম আমিতো প্রতিদিন একটা এমারজেন্সি লাইট সুইচ বোর্ডের সাথে লাগিয়ে রাখি যাতে লোডসেডিং হলে যেন ওই লাইটটা জ্বলে ওঠে। কিন্তু ঘরটাতো পুরোপুরি অন্ধকার আবার শুধু অন্ধকার নয় কেমন যেন একটা গুমট ভাব,, ঠিক ভাবে শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে উঠছে তার উপর অস্বাভাবিক রকম গরম।.... ওই অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে বালিসের পাশে মোবাইলটা পেলাম আর মোবাইলের টর্চটা অন্ করে এদিক ওদিক ঘোরালাম কিন্তু একি! স্নোকি কোথাই গেল?...ওতো আমার বেডের ওপরেই আমার পায়ের বা মাথার কাছে ঘুমায়....ও কোথাই? বিছানা থেকে নেমে টর্চটা ঘরের দরজার দিকে ঘোরাতেই দেখলাম দরজাটা যেমন বন্ধ ছিল তেমনই আছে আর ঠিক দরজার নিচেই স্নোকি শুয়ে আছে। ওর কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম ,দেখলাম অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওকে আর জাগালাম না। ভাবলাম গরম লাগার জন্যই হয়তো বিছানা ছেড়ে মেঝেতে এসে শুয়েছে। কিন্তু আমি অনবরত ঘেমেই চলেছি আর এই রকম গরম সহ্য করতে পারছি না। মাথাটা ঘুরছে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছি না। আমার আন্দাজ অনুসারে ঘরের তাপমাত্রা চল্লিশ-পয়তাল্লিশ ডিগ্রির কিছু কম হবে না বরং বেশি হতে পারে। ঘরের দরজাটা খুলবো সে উপায়ও নেই, স্নোকি একদম দরজার নিচেই শুয়ে আছে। দরজা খুলতে গেলে ওকে আগে ঘুম থেকে তুলতে হবে।


        হঠাৎই সুইচ বোর্ডের দিকে চোখ যেতেই আমার চোখ ছানাবড়া হবার মতো অবস্থা। দেখি ইন্ডিকেটারের লাল আলোটা জ্বলছে অর্থাৎ লোডসেডিং হয়নি।.. কিন্তু লাইট, ফ্যান দুটোই তো অফ্। ...আমি বিশেষত নতুন জায়গা বলে রাতে লাইটটা অন্ করেই ঘুমাই কিনবা একটা বেশি পাওয়ারের নাইট বাল্ব জ্বেলে রাখি। কিন্তু কোথাই কি!! সবই তো অফ্।

       আমি ওই অবস্থাতেই সুইচ বোর্ডের কাছে এগিয়ে গেলাম এবং যা দেখলাম আমার সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল.....এ কি!!!!!....লাইট আর ফ্যানের সুইচ কে অফ্ করল???....আমারতো বেশ ভালো ভাবেই মনে আছে আমি লাইট ফ্যান অন্ করেই ঘুমিয়ে ছিলাম।.....ভাবতেই আমি সুইচ অন্ করার জন্য সুইচে হাত দিতে গিয়ে এক ঝটকায় সরিয়ে নিলাম। মনে হল সুইচে নয় ,,কোনো লোমযুক্ত কিছুতে হাত পড়ল। একটু সাহস করেই মোবাইলের টর্চটা দিয়ে সুইচ বোর্ডটা ভালো করে দেখলাম। না!! কিছুই তো নেই। আবার সুইচে হাত দিয়ে সুইচ দুটোকে অন্ করলাম। মুহুর্তে লাইট জ্বলে উঠল আর ফ্যান ঘুরতে লাগল। আর আকস্মিক ভাবে ঘরের গরম ভাবটা কমে গেল।


       আমি এবার শান্ত ভাবেই শ্বাস নিলাম। মনে হল বাঁচলাম। অন্যদিকে স্নোকি ঘুম থেকে উঠে পড়েছে,, লেজ নাড়তে নাড়তে আমার কাছে এসে আমার পা চাটতে শুরু করল। আর আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শুতে গেলাম।....শরীর খারাপ লাগছিল তাই তাড়াতাড়িই ঘুম এসে গেল।


       পরদিন সকালে উঠতে দেরী হয়ে গেল তাই তাড়াতাড়িই রেডি হয়ে খেয়ে আর স্নোকিকে খাইয়ে অফিসে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু কেন জানি না, স্নোকি বাড়িতে একা থাকতে চাইছিল না, আমার সাথেই যেতে চাইছিল। কিন্তু অফিসে ওকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাই অগত্যা ওকে বাড়িতে রেখেই অফিসে এলাম। কিন্তু অফিসে কাজ করতে করতে কাল রাতের কথাগুলো মনে পড়ছিল। ভূতপ্রেতে একদম আমার বিশ্বাস নেই তা নয়। কিন্তু আমি ভূতপ্রেত কে একবারেই ভয় পাই না একথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছে স্নোকিকে নিয়ে, ওটা ভূতপ্রেত যা ই হোক স্নোকির কোনো ক্ষতি করতে পারে আর স্নোকি বাড়িতে একা আছে......ভাবতেই গা টা শিউরে উঠল। হঠাৎই এক স্টাফের ডাকে হুশ ফিরল,,, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত্রি সারে দশটা বেজে গেছে। স্নোকির কথা ভেবে,, বস্ এর কাছে আমার শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে এলাম। গাড়ি এসে বাড়ির বাইরে নামিয়ে দিয়ে গেল। ঘরের তালা খুলে ঘরে ঢুকতেই স্নোকি আবার আগের দিনের মতোই আমার উপর কুইকুই করতে করতে ঝাপিয়ে পড়ল ওর চোখে মুখে ভয়ের চিহ্ন স্পষ্ট । ও ঠিক আছে দেখে আমার মনটা শান্ত হল। ওকে কোলে নিয়ে অন্যান্য ঘরের জানালা গুলো ভালো করে বন্ধ করে দিয়ে বেডরুমের দিকে আসতেই স্নোকি আমার কোল থেকে লাফিয়ে নেমে ঘেউঘেউ করে কিছু একটা জিনিসকে তাড়া করে বেডরুমে ঢুকে পড়ল। আমি কিছুটা অবাক হয়ে ওর পিছু পিছু দৌড়ে বেডরুমে ঢুকেই চমকে উঠলাম। দেখলাম কালো রঙের কিছু একটা রুমের জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। বুঝলাম কালকের সেই বিড়ালটাই। কিন্তু যেটাকে দেখে কাল স্নোকি ভয় পেয়ে গিয়েছিল আজ সেটাকে দেখেই স্নোকি বাঘের মতো তেড়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করলাম। স্নোকির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করলাম ওকে। মনে মনে স্থির করলাম কাল থেকে যে ভাবেই হোক স্নোকি কে অফিসে নিয়ে গিয়ে বাইরে কোথাও রাখবো আবার ফেরার সময়ে নিয়ে আসবো। আর এই বাড়িটা আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছাড়তে হবে। আমি অফিসের কিছু কাজ সেরে, ,,খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম। 


         আবার রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল কিন্তু গরমের জন্য নয় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। উঠে দাঁড়াতে পারছি না। মোবাইলের টর্চটা অন্ করে দেখলাম স্নোকি মাটিতে পড়ে ছটফট করছে বোঝা যাচ্ছে ওর অক্সিজেনের অভাব হচ্ছে। ওর অবস্থা দেখে রাগে আমার চোখ ফেটে জল এল। ভাবলাম , স্নোকিকে যে ভাবেই হোক বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমার সেই অক্সিজেনের অভাবে একই অবস্থা। অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। নিজের শরীরটাকে একপ্রকার জোর করেই টেনে নিয়ে গেলাম সুইচ বোর্ডের কাছে। কিন্তু সুইচে হাত দিতেই বুঝলাম কালো লোমযুক্ত কিছু একটা সুইচ টিপে জোর করে বন্ধ করে রেখেছে। আমি অনেক কষ্ট করেও সুইচ অন্ করতে পারলাম না। কিন্ত ভয় পাওয়াতো দুরের কথা ,, আমার ওই অবস্থাতেই ,স্নোকির অবস্থা দেখে আমার শরীরে রাগের জোয়ার বইছিল। হঠাৎই মনে পড়ল, এই সব ক্ষেত্রে কোনো ঠাকুর পুজোর ফুল বা পুজোর কোনো জিনিস প্রয়োজন। ব্যাঙ্গালোরে আসার আগে মা , একটা বিপদতারিনী পুজোর লাল সুতো আমার হাতে বেঁধে দিয়েছিল। ভাবার সঙ্গে সঙ্গেই নিজের হাতে থেকে লাল সুতোটা খুলে আমার আঙুলে জড়িয়ে নিলাম। আর রাগে ওই অন্ধকারের মধ্যে একটা হুংকার দিয়ে বললাম," আমার সামনে থেকে কোনো ক্ষতি না করে সরে যা....। নাহলে তোর ফল ভালো হবে না।" কথাগুলো বলার সাথে সাথেই নিজের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে, স্নোকির দিয়ে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে লাল সুতোসহ আঙুলটা সুইচে দিলাম আর সঙ্গে সঙ্গেই আমার হাতটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওই লোমযুক্ত জিনিসটা সুইচের উপর থেকে সরে গেল আর মুহূর্তের মধ্যে লাইট ফ্যান অন্ হয়ে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেল। আমি স্নোকির দিকে তাকিয়ে দেখি ও পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। আমি তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে স্নোকি স্নোকি বলে ওকে নড়াতে লাগলাম আর জল নিয়ে ওর মুখে চোখে ছিটে দিতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর স্নোকি আলতো করে চোখটা খুলল। ওকে একটু জল খাওয়ালাম। এর ও ওঠার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল, শুধু একবার বললাম," স্নোকি ওঠ...ওই শয়তানের কাছে হেরে গেলে চলবে না। তুই শেষ পর্যন্ত একটা বিড়ালরূপি শয়তানের কাছে হেরে ,,মরে যাবি?? আমি তোকে মরতে দেব না..... স্নোকি ...তুই ওঠ। তুই না থাকলে ওর হাত থেকে আমাকে কে বাঁচাবে?? ওঠ স্নোকি তুই ই ওকে মারবি।...." জানি না ও কি বুঝলো....জোর করে চোখ মেলে তাকিয়ে অনেক চেষ্টা করে উঠে বসল আমার স্নোকি। লেজ নাড়তে নাড়তে আমার হাত চাটতে শুরু করল। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে, আমার হাতে থাকা লাল সুতোটা খুলে স্নোকির গলায় বেঁধে দিলাম।....তারপর ওকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুমাতে গেলাম তখন ঘড়িতে ভোর চারটে বাজছে।


 পরের দিন সকালে অফিস যাওয়ার সময়ে স্নোকিকে নিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু কেন জানি না,,, ও আমার সাথে কিছুতেই যেতে রাজি হল না। শেষে আমি অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখে একাই অফিসে চলে গেলাম।.....


      আজ অফিসে অনেক কাজ ছিল। সব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে অনেক দেরী হয়ে গেল। অফিসের গাড়িটা যখন বাড়ির সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে গেল তখন হাত ঘড়িটাই তাকিয়ে দেখলাম পুরো বারোটা। ভাবলাম স্নোকি ঠিক আছে তো? ....দরজার দিকে তালাটা খোলার জন্য একটু এগিয়ে যেতেই,,, মনে কেউ যেন আমাকে লক্ষ্য করছে। এদিকে ওদিকে তাকালাম কাউকে দেখলাম না। তালাটা খুলতে শুরু করলাম হঠাৎই কোথাও থেকে একটা বিড়াল" ম্যাওওওও......." করে ডেকে উঠল। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল, আমার নিজের থেকে স্নোকির কথা মনে হল, স্নোকি ঠিক আছে তো??....ঠিক তখনই বিড়ালের আওয়াজে বাড়ির ভিতর থেকে ঘেউঘেউ করে উঠল। স্নোকির আওয়াজ শুনে মনটা শান্ত হল। বাড়ির তালা খোলা বন্ধ করে ,সাহস করে বাইরের দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম,,,মোবাইলের টর্চটা অন্ করে এদিক ওদিক ঘোরালাম, দেখলাম টর্চের আলো পড়তেই অনেকটা দুরে একটা কালো বিড়াল দৌড়ে পালাল। আমি এবার ঘরের তালা খুলে ঘরে ঢুকলাম দেখলাম সব কিছু স্বাভাবিক। স্নোকিও সুস্থ। ও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে ঘরে। ওকে খুশি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। ওকে একটু আদর করে। ফ্রেস হয়ে খেতে বসলাম। স্নোকিও খেল। কিন্তু স্নোকিকে দেখে মনে হল ও খুব সতর্ক ভাবে কান খাড়া করে ,লেজ উঁচু করে সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।....


    আমি খুব ক্লান্ত হয়ে ছিলাম....ঘুম পাচ্ছিল....আর কিছু ভাবতে পারলাম না। খাওয়া দাওয়া শেষ করে স্নোকিকে নিয়ে ঘরে শুতে গেলাম। কিন্তু কি যেন একটা মনে করে আজ বেডরুমের দরজাটা খুলেই রাখলাম। খুব তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়লাম।


         হঠাৎই স্নোকির ঘেউঘেউ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি চমকে উঠলাম। না। সব ঠিকই তো আছে । ঘরের লাইটটা অন্ আছে। ফ্যানও চলছে। স্নোকি কোথাই? ঘরে তো নেই ....বাইরে এতো চ্যাচাচ্ছে কেন?....ভাবতে ভাবতে উঠে বাইরে অর্থাৎ ডাইনিং রুমে এসে দেখলাম, বাইরের দিকে দরজার কাছে গিয়ে স্নোকি ঘেউঘেউ করছে আর বাইরে যাওয়ার জন্য নখে করে দরজাটা আঁচড়াচ্ছে। আমি একবার ভাবলাম এতো রাতে দরজা খুলবো না। কিন্ত স্নোকির ওই রকম করা দেখে, ওকে থামতে বলে আস্তে আস্তে দরজাটা খুললাম আর যা দেখলাম তাতে আমার হৃদপিন্ডটা একশো গুন জোরে লাফিয়ে উঠল...দেখি একটা কালো কুচকুচে বন বিড়াল ঠিক আমার সামনে মানে দরজার সামনে বসে আছে। আর ওর চোখ দুটো যেন মৃত মানুষের মতো ফ্যাকাশে, একদম স্থির। যে কোনো মানুষ ওর চোখের দিকে একবার তাকিয়ে হার্টফেল করবে। 


      ঠিক সেই মুহূর্তেই স্নোকি ওই বিড়ালটাকে দেখে একটা গর্জন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে গেল আর আমি ওই অবস্থাতেই জোর করে স্নোকিকে আটকে সশব্দে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।......জোর শব্দে স্নোকি একটু থেমে গেল। আর ঠিক তখনই বাইরে থেকে ওই বিড়ালটা এক অদ্ভুত নাকি সুরে চিৎকার করে উঠলো," ম্যাআআআওওওওওওওওওওও.........!!!!!!!!! " এই আওয়াজটার সাথে আমার সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল, আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল, ,,, মনে হল যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। স্নোকি ঘেউঘেউ করে উঠে আবার থেমে গেল,,,একদৃষ্টে আমাকে দেখতে লাগলো স্নোকি। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম 3.15 am..... এক পা এগিয়ে যেতে গিয়ে মাথাটা কেমন ঘুরে গেল,,, আমার চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে এল। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম শুধু একবার অস্ফুট স্বরে বললাম," স্নোকি...! স্নোকি।" এর ঘরের আলোটা দপ্ করে অফ্ হয়ে গেল।..........


                এর পর আর আমার কিছু মনে নেই। হঠাৎই চোখে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে আমার জ্ঞান ফিরল। চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে আর স্নোকি আমার চোখ চেটে চেটে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে। আমি অনেক চেষ্টা করে উঠে বসলাম। স্নোকিও আমাকে উঠতে দেখে খুশিতে লেজ নাড়তে লাগল। আমি উঠে স্নোকির দিকে তাকাতেই চমকে উঠি, এ কি! স্নোকি কে এই ভাবে মারল? স্নোকির গোটা শরীরে ক্ষত আর তা থেকে রক্ত ঝরছে আর স্নোকির মুখে এতো রক্ত কেন?....আর ..মেঝেতে আমার আসে পাশে এ তো কুকুর বিড়ালে র আঁচরের দাগ!!....


              হঠাৎই দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখি সেই কাল রাতের ওই কালো বন বিড়ালটা মরে পড়ে আছে ক্ষত বিক্ষত হয়ে।.......আমার কাছে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল, এর মানে কাল রাতে ওই বিড়াল রূপি শয়তানটা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল আর আমার স্নোকি আমাকে রক্ষা করেছে। ওই শয়তান বিড়াল আমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি শুধুমাত্র স্নোকির জন্য। আমার সেদিনের বলা কথাগুলো স্নোকি মনে রেখেছে, তাই ওই শয়তানকে মেরে আমাকে বিজয়িনী করেছে। সত্যিই স্নোকি আমাকে খুবই ভালোবাসে তাই আমার সেদিনের বলা কথাগুলো রাখতে আর শুধুমাত্র আমাকে বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করে ওই শয়তানের সাথে লড়াই এ নেমেছে। আর ও শয়তানকে মেরে নিজে জিতেছে। আমি জানি স্নোকি ওর সাথে লড়াই এ এতো ক্ষতের পর আর বাঁচতো না। ওর গলায় থাকা ওই লাল সুতোটা ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে। স্নোকিকে বাঁচতেই হবে শুধু আমার জন্য। আমি ওকে সুস্থ করে তুলবোই। একটা কুকুর হয়ে ও যা করেছে আমার জন্য,,,,ওর জায়গায় একটা মানুষ থাকলেও করত না। ওকে ধন্যবাদ জানানোর কোনো ভাষা নেই আমার কাছে।


            আমি স্নোকিকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেলাম। ও আদরে খুশি হয়ে লেজ নাড়তে লাগল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এগারোটা বাজে। আজ অফিস মিস্ হয়ে গেল। মনে একটু আনন্দ অনুভব করলাম যাই হোক আমরা দুজনেই সুস্থ।


আমি বারান্দার দরজাটা খুলেই বাড়ির মালিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে ডাকলাম। ওদের আগের সব ঘটনা জানালাম। এবং ওদের আমি স্পষ্ট ভাবে বললাম," দেখুন। ওই বিড়াল বা আপনাদের বাড়ির কোনো ভৌতিক ব্যাপার জানতে আমি আগ্রহী নই। ওই মৃত বিড়ালটা কি করবেন,,, সেটা আপনারা বুঝুন। আমি এই অভিশপ্ত বাড়িতে আর একমুহূর্তও থাকব না।"

  একমাসের বাড়িভাড়ার টাকা অ্যাডভান্স দেওয়া আছে। তাই কথাগুলো বলে আমি জিনিসপত্র গুছিয়ে স্নোকিকে পরিষ্কার ভাবে স্নান করিয়ে,,,নিজে স্নান করে রেডি হয়ে, অফিসের গাড়িটাকে ফোন করে আসতে বললাম। গাড়িটা আসার পর সব জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে নিয়ে আমি আর স্নোকি ওই অভিশপ্ত বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। আর অফিসের এক স্টাফকে ফোন করে অফিসে না যাওয়ার কারণ হিসেবে আমার শরীর খারাপের অজুহাত দিলাম।

আর কোথাও না গিয়ে সোজা স্নোকিকে নিয়ে পশু হসপিটালে গেলাম। স্নোকির অবস্থা দেখে ডক্টর জানালেন, স্নোকি তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে যাবে। ডক্টর স্নোকিকে দুটো ইনজেকশন দিলেন। আর কিছু ওষুধ দিলেন।.....


       স্নোকির সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে আমি যেন আবার প্রাণ ফিরে পেলাম। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে স্নোকিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। এবং ঠিক করলাম আপাতত কোনো হোটেলে গিয়ে উঠবো। আর পরে অফিসের কোয়ার্টার পেলে, সেখানে গিয়ে থাকবো।.... স্নোকিকে জড়িয়ে ধরে আগের দিনের জন্য মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিলাম আর স্নোকি আনন্দে লেজ নাড়তে নাড়তে আমার গাল চেটে দিল আর আমি হেসে উঠলাম।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror