Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy

3  

Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy

দাদা আমি বাঁচবো

দাদা আমি বাঁচবো

5 mins
840


দাদা আমি বাঁচবো

(সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী)

-------------------------------


টুকু অনেকক্ষণ শুয়েই ছিলো চুপচাপ, একলা ঘরে।

কতদিন ধরে ওর শরীরটা খারাপ, স্কুলে যেতে পারে না। এতদিন তো হাসপাতালেই ছিলো, সেই কতমাস ধরে। একদম ভালো লাগতো না ওখানে। সবার কেমন গম্ভীর গম্ভীর মুখ। খালি সবসময় ওষুধ আর ইঞ্জেকশনের কথা। কী বাজে গন্ধ! সেই একঘেয়ে সাদা আর সবুজ রঙের বিছানা বালিশ, পরার জামাকাপড়, সব কেমন যেন, সবকিছুতে মাখামাখি দুঃখগুলো ওখানে যেন ফ্যানের হাওয়ায় পাক খেয়ে বেড়ায়। একটা আয়না পর্যন্ত নেই! সবকিছুই তো সিস্টাররা আর আয়াদিদিরাই করিয়ে দেয়। তাই হয়তো কোনো আয়না রাখে না হাসপাতালে, কে জানে? ঐজন্যই তো টুকু হাসপাতালে আর কিছুতেই থাকতে চায়নি। দাদার কানের কাছে মুখ নিয়ে চুপিচুপি বলেছিলো, "দাদা, এখানে আর থাকবো না, বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে চলো।"

ক'দিন হোলো টুকুকে বাড়ীতে ফিরিয়ে এনেছে দাদা, টুকুর কোনো কথা দাদা ফেলতেই পারে না। বাবা মা'কে তো টুকুর তেমন মনেই পড়ে না। দাদাই টুকুর সব। টুকুও দাদাকে প্রাণাধিক ভালোবাসে। দাদাই তো টুকুকে বাবা-মায়ের স্নেহ দিয়ে বুকে করে আগলে রেখেছে।

দাদাকে অফিসের কাজে অনেকক্ষণ বাইরে থাকতে হয়, তাই টুকুর কাছে সর্বক্ষণ থাকার জন্য বাড়ীতে নতুন আরো একজন আয়ামাসী এসেছে। তবে দাদাও সর্বক্ষণ খেয়াল রাখে, টুকুর সুবিধা অসুবিধার দিকে। তাই বাড়ীতে ফিরে এসে থেকেই টুকু দাদাকে বলে চলেছে, "দাদা, আমি স্কুলে যাবো। বাড়ীতে এরকম ভাবে একাএকা বিছানায় শুয়ে থাকতে আমার একদম ভালো লাগে না।" দাদা টুকুর পাশে বসে মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে বলেছে, "এই তো, আর কয়েকটা দিন, একটু ভালো করে খেয়েদেয়ে, ওষুধপত্র ঠিকঠাক খেয়ে আরেকটু ভালো হয়েনে, তারপর আমি নিজে তোকে স্কুলে পৌঁছে দেবো, সেই আগের মতো।"

টুকুর ঠোঁটে একটুকরো মলিন হাসি, চোখদুটো উজ্জ্বল, পরম বিশ্বাসে। টুকু শুয়ে শুয়েই ভাবলো, "তবে ঠিকই আছে, দাদাও ভাবছে যখন, তখন খুব শিগগিরই টুকু আবার স্কুলে যাবে, ঠিক সেই আগের মতো, গাড়ীতে দাদার পাশে বসে। সেই আগের মতো আবার লাঞ্চব্রেকে বন্ধুদের সাথে হৈহৈ করে কতরকমের গল্প করবে! ভাবতে ভাবতেই চোখ বুজলো টুকু। বাইরে তখন সকাল ধীরে ধীরে গড়াচ্ছে দৈনন্দিন ব্যস্ততায়। একা টুকুরই কোনো কাজ নেই এখন, শুধু দিন রাত্তির শুয়ে থাকা ছাড়া।

কতক্ষণ আর টিভি দেখবে? টুকুর তো খেলা আর গানের শো ছাড়া টিভিতে আর কিছুই দেখতে ভালো লাগে না। বারান্দার দোলনাটায় বসতে খুব ইচ্ছে করে, কিন্তু একা একা যেতে পারে না। তাছাড়া দাদা বলেছে আর ক'দিন পরে, আরেকটু সুস্থ হবার পরে।

হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে এসেও তো টুকুকে সব সময় বিছানায় শুয়ে নিজের ঘরেই বন্দী থাকতে হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, বাড়ীতে ঐ দুঃখী দুঃখী, গম্ভীর গম্ভীর ব্যাপারটা নেই, তাই যা স্বস্তি।

*********

"টুকু, অ্যাই টুকু, খেয়ে নে দুধটা। কতক্ষণ আগে খেয়েছিস। ঠিকমতো না খেলে তো আরো দুর্বল হয়ে যাবি," রবি টুকুর মাথায় হাত রেখে বললো। রবি টুকুর দাদা নাম, আসলে রবিই টুকুর মা বাবা ভাই বন্ধু সব কিছু। ওদের বাবা মা দু'জনেই একবছরের আড়াআড়িতে মারা গেছে। তখন টুকু এই এত্তোটুকু, সবে বছর দুয়েকের। তারপর থেকে বুকে করে আগলে রেখেছে রবি বাপ-মা মরা একমাত্র বোনটাকে। রবি ভাবে, "ভগবান বলে কিচ্ছু নেই, আর যদিওবা থাকে তার আক্কেল বিবেচনা বিচারবুদ্ধি কিচ্ছু নেই। নইলে ছোট্ট বোনটাকে এমন একটা কঠিন মারণ রোগে বিছানায় ফেলে দেয়?"

টুকু হয়তো আর অল্পই কিছুদিনের অতিথি। লিউকোমিয়ার শেষ পর্যায়ে।

রবি টুকুকে বাড়ীতে নিজের কাছেই রেখেছিলো, সতেরো বছরের টুকু আর হাসপাতালে থাকতে চায়নি। নিজের মনে মনে কিছু বুঝেছিলো হয়তো, তবে তা বলেনি। টুকু বলেছিলো যে ওর নাকি ওখানে, মানে হাসপাতালে একটুও ভালো লাগে না, ওখানে সব নাকি দুঃখী দুঃখী, গম্ভীর গম্ভীর। কথাটা অবশ্য খুব ভুল নয়। হাসপাতালে থাকতে কার আর কবে ভালো লাগে? আর ডাক্তারবাবুও কোনো আপত্তি জানাননি, রবির এই টুকুকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে।

রবিও ওর নিজের থেকে প্রায় পনেরো বছরের ছোট বোনটাকে নিজের চোখের সামনেই রাখতে চেয়েছিলো। বাবা গাড়ী অ্যাক্সিডেন্টে হঠাৎ করে মারা যাবার পরে মা ঐ শোকটা কিছুতেই আর সামলাতে পারলো না। মাত্র একবছরের মাথায় মাও চলে গেলো সেরিব্রাল স্ট্রোকে। বাবা মা অকালে চলে গেছে ঠিকই তবে ব্যবসা আর সম্পত্তি মিলিয়ে যা রেখে গেছে তাতে ওদের দুই ভাইবোনের চলে যাবে। কিন্তু এই টাকা পয়সা সম্পত্তি সব অর্থহীন রবির কাছে যখন থেকে টুকু বিছানা নিয়েছে। রবি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে একেবারে। টুকুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারে না রবি। নেহাত অফিসে না গেলে ব্যবসাপত্র বন্ধ হয়ে যাবে তাই নিয়মরক্ষার মতো দিনে একবার গিয়ে তদারকি করে আসে। বাদবাকি সময় রবি বাড়ীতেই থাকে, টুকুর মুখোমুখি হতে পারে না খুব বেশীক্ষণের জন্য ঠিকই, তবে টুকুর থেকে দূরেও থাকতে পারে না। বাড়ীতে থেকেই টুকুর দেখভাল করে সারাক্ষণ, কাজের লোক, আয়ামাসী, কারুর ওপরেই রবি আজকাল আর পুরো ভরসা রাখতে পারছে না। বাবা-মা নেই, টুকুর যেন মনে কষ্ট না হয় এই কঠিন সময়ে, ওর সাহসটুকু যেন ধরে রাখতে পারে রবি। রবিরও তো ঐ একমাত্র বোন, টুকুটা ছাড়া আপন বলতে আর কেউ নেই। টুকুর সামনে কোনো বেফাঁস আলোচনা রবি চায় না। তাই দূরসম্পর্কের আত্মীয় পরিজন বা বন্ধু বান্ধব কাউকেই আজকাল আর বাড়ীতে আসতে দেয় না রবি।

এমনকি টুকুকে হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে আনার আগের দিনই রবি আয়ামাসীকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের সবগুলো আয়নাই সরিয়ে দিয়েছে। যাতে টুকুর চোখ কোনোভাবেই আয়নায় না পড়ে। রবি সেদিন দাড়ি কামানোর সময় কিছুক্ষণের জন্য বাথরুমের দরজার পাশের ওয়াশবেসিনের উপরের দেওয়ালে লাগানো থাকতো যে আয়নাটা, সেটাই ওখানের ঐ দেওয়ালেই লাগিয়েছিলো। তারপর দাড়ি কামানোর পরে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো আয়নাটা ওখান থেকে সরিয়ে নিতে। সেদিন টুকু কিছুতেই বেডপ্যানে বসতে চায় নি। তাই আয়ামাসী ধরে ধরে আস্তে আস্তে টুকুকে বাথরুমে নেওয়ার সময় হঠাৎ টুকুর চোখ পড়ে যায় ওয়াশবেসিনের ওপরের দেওয়ালের ওপরে রবির দাড়ি কামানোর আয়নাটায়।

আয়ামাসীকে দু'হাতে জড়িয়ে প্রবল কাঁপতে কাঁপতে টুকু চিৎকার করতে থাকে, "দাদা আমি বাঁচবো, দাদা আমি বাঁচবো, দাদা আমি বাঁচবো.....!" টুকু আয়নায় নিজের চুলহীন ফাঁকা মাথা, কালচে ছোপ ছোপ ধরে যাওয়া নিজের শুকনো মুখ, নিজের কঙ্কালসার চেহারার প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই সহ্য করতে পারে নি। হাসপাতালে নেওয়ার অবকাশও দাদাকে দেয়নি টুকু। হার্টফেল করেছে টুকুর। রবির সামান্য অসতর্কতার কী চরম শাস্তি! টুকু যে রবির রাখীর বন্ধনটুকুও ছিঁড়ে নিয়ে চলে গেলো।

-------------------------------------------

© সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy