Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Others

1.0  

Debdutta Banerjee

Others

এক অন‍্যরকম জন্মদিন

এক অন‍্যরকম জন্মদিন

3 mins
9.7K


বানভাসি হয়ে কলকাতার উপকন্ঠে এসে উঠেছিল দশ বছরের রাজা আর তিন বছরের রানী। বাবা শহরে কাজ করত। মা বানের জল ভেঙ্গে ওদের স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে শেষবারের জন‍্য বাড়ি গেছিল যদি আর কিছু বাঁচানো যায়। কিন্তু এতো ভালো সাঁতার জানা মা আর ফিরে আসে নি।চার দিন বন‍্যা-ত্রাণ শিবিরে মা এর অপেক্ষায় থেকে অনেক বড় হয়ে গেছিল রাজা। বোনকে নিয়ে কলকাতায় এলেই বাবার খোঁজ পাবে এই আশায় ট্রেনে চড়ে বসেছিল। কিন্তু মালদার এক গ্ৰামের ছেলেটা বোঝেনি শহর কলকাতায় এভাবে কাউকে পাওয়া যায় না। অনেক ঘাটের জল খেয়ে এক পার্কের মালির কাছে আশ্রয় পেয়েছিল কচি প্রাণ দুটি। ছোট্ট পার্কের একপাশে ক্লাব ঘর । তার পেছনে বাঁশের বেড়ার ঘরে মালি কাকু ওদের নিয়ে তুলেছিল। ক্লাবঘরটা আর পার্কটা পরিস্কার রাখা আর গাছ লাগানোয় সাহায‍্য করতো দুই ভাই-বোন। আধপেটা, সেদ্ধ খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটছিল কোনোরকমে।

সেদিন ক্লাবঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছিল বেলুন আর রঙ্গীন কাগজ দিয়ে। ক্লাবের সেক্রেটারীর ছেলের জন্মদিন, এসব অনুষ্ঠানে ক্লাবঘর ও পার্ক ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। ছোট্ট রানী অবাক হয়ে সব দেখছিল। ভালো ভালো রান্নার গন্ধে শিশুদুটির মনে পড়ে যাচ্ছিল বাড়ির কথা, মায়ের কথা। ছোট্ট রানীকে তার দাদা সারাদিন বুঝিয়েছে আজ তারা পেট ভরে ভালো খাবার পাবে। যদিও মালি কাকু বলেছিল সন্ধ‍্যার পর ওরা যেন আর ওদিক পানে না যায়, সব অতিথিরা আসবে তখন। সে নিজেই রাতের খাবার নিয়ে আসবে। 

কিন্তু কৌতূহলী শিশুমনকে বেঁধে রাখা কি যায়, যেখানে এত আনন্দ আর প্রলোভনের হাতছানি। রানী গুটিগুটি পায়ে পার্কের দোলনার কাছে এসে দেখছিল নানাবয়সী ছেলেমেয়েরা রঙ্গীন জামা পরে প্রজাপতির মত উড়ছে। বেলুনে সাজানো টেবিলে একটা আস্ত পার্কের মডেলের কেক। এমনটা ওরা আগে দেখেনি। উপহারের সমারোহ আর ফিরতি উপহারের বাহুলতা। কত রঙবেরঙের পানীয় আর কত রকমারী খাবারের আয়োজন। রানী দাদাকে বলেছিল এমন জন্মদিন তাদের কেন হয় না !

রাজা বোনকে ডাকতে এসে হারিয়ে গেছিল এই আজব দুনিয়ায়। সম্বিত ফিরল বোনের কান্নায়। বোনকে চড় মেরেছে একটা লোক।অপরাধ, বোন একটা উড়ে আসা বড় বেলুন কুড়িয়ে নিয়েছিল। মুহূর্তে ভিড় জমে উঠেছিল। সেই ভিড় ঠেলে ঢুকতেই কিল চড়ের বৃষ্টি নেমে এসেছিল রাজার উপর। অভিযোগ ছিল চুরির। দশ বছরের রাজা রানীকে আড়াল করে রেখেছিল যতক্ষণ জ্ঞান ছিল। 

ভালো খাবার আর খাওয়া হয় নি রাজা রানীর। মালীকাকা নোংরা ফেলার ভ‍্যানে করে দু জনকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছিল ক‍্যাটারিং-এর একটা ছেলের সাথে। রানীর আঘাত গুরুতর না হলেও ভয়ে কেমন হয়ে গেছিল একরত্তি মেয়েটা। হ‍্যামারেজের থেকে রাজার এসেছিল ধূম জ্বর। জ্বরের ঘোরে ও দেখছিল বোনের জন্মদিন হচ্ছে বড় করে। বাবা শহর থেকে একটা পার্কের মডেলের কেক নিয়ে এসেছে। কত উপহার আর বেলুনের ছড়াছড়ি। রানীকে ঠিক পরীর মতো লাগছিল। শেষ রাতে জ্বরের ঘোরে ভুল বকছিল রাজা। ভোরের সূর্যের প্রথম আলো যখন ওর বেডে এসে পড়লো, এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি মুখে মেখে অনন্ত ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে সে।

সদ‍্য অনাথ রানীকে নিয়ে ক‍্যানিং লোকালে উঠে বসেছিল মালী অমল। ছোট্ট রানী বোধহয় এক ধাক্কায় বড় হয়ে উঠেছে, দাদা যে আর নেই হয়তো বুঝেছে।

সুন্দরবনের 'আয়লায়' অমলের বৌ আর মেয়ে হারিয়ে গেছিল গত বর্ষায়। কাজের খোঁজে শহরে এসেছিল অমল। বাচ্চাদুটোকে পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল আরেকবার। কিন্তু নিষ্ঠুর সমাজের অত‍্যাচারে থাকতে না পেরে ফিরে চলেছে নিজের গ্ৰামে। গরীবের যে প্রতিবাদ করার অধিকার নেই। এই ক্লাবের লোকেরাই নাকি বন‍্যাত্রাণ নিয়ে যায়, আয়লায় বিধ্বস্তদের পাশে দাঁড়ায়!চাঁদা তুলে সাহায‍্য করে! ছোট্ট রানীর মুখটা দেখে নিজের মেয়ে রাধার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল বারে বারে। দিনটা যে তার মেয়ে রাধার জন্মদিন। শেষ সম্বল টাকা কটায় একটু টান পড়লেও মেয়েটার মুখে একটু হাসি ফোটার আশায় ক‍্যানিং ষ্টেশন থেকে দুটো রঙ্গীন বেলুন আর একটা টিফিন কেক কিনে দেয় অমল। কে জানে তার রাধা আজ কোথায় , কিভাবে আছে !!


Rate this content
Log in