Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

arijit bhattacharya

Horror

2.5  

arijit bhattacharya

Horror

মধ্যরাতের আতঙ্ক

মধ্যরাতের আতঙ্ক

6 mins
1.4K


স্কটল্যান্ডে আগাগোড়া গ্রাণাইট পাথর নির্মিত ধূসর ব্ল্যাক কুইলিন পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ছোট্ট সুন্দর ছবির মতো গ্রাম পলফেল। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে অজানা পাহাড়ি নদী। অক্টোবর মাস। নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘপুঞ্জ ভাসমান। নানা সাজে সেজে উঠেছে প্রকৃতিরাণী। পাহাড়ি উপত্যকা ভরে উঠেছে নানা রঙের ফুলে। তাদের মধ্যে আবার একটির নাম "Joy of Autumn." অর্থাৎ শরতের আনন্দ।সত্যিই এই ফুলের যা বাহার তাতে একে নিঃসন্দেহে শরতের আনন্দ রূপে অভিহিত করাই যায়। দিগন্তবিস্তৃত শস্যক্ষেত,পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে আর পাহাড়ের ঢালে ততোধিক সুদৃশ্য ছোটছোট বাড়ি। বইছে শরতের মন মাতাল করা ফুরফুরে হাওয়া।শরতের এক সোনালী সকাল। কিন্তু এই সব সুন্দরতম জায়গাতেই কুৎসিততম ঘটনা ঘটে থাকে। সূর্যাস্ত হতেই সবাই নিজের বাড়ির জানলা দরজা বন্ধ করে দেয়, কারণ রাত বাড়তেই এই অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় নাকি এক বিভীষিকাময় স্কন্দকাটা। পরণে কালো কোট,স্যুটেড-বুটেড ,একহাতে তার দাড়িওয়ালা রক্তচক্ষু কাটা মুণ্ড, যা থেকে অবিরত রক্ত ঝরছে। দুচোখ দিয়ে যেন অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে। মূর্তিটা মস্তক ছাড়াই সাত আট ফুট লম্বা হবে। তাকে সামনে দেখে অনেকেরই হৃদস্পন্দনের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। সে এখনো কারোর প্রত্যক্ষ ক্ষতি না করলেও এখন সে এক বিভীষিকায় পরিণত। তাকে সচক্ষে দেখলে শুধু নয়,তার কথা মনে হলেই সবাই আতঙ্কে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। রাত নামলেই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। আজ প্রায় দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে। গ্রামের মানুষ একটা জিনিস ভালোভাবেই জানে এই আতঙ্কের তখনিই পরিসমাপ্তি ঘটবে যখন এই অভিশপ্ত আত্মা মুক্তি পাবে। 


নিকটবর্তী শহর ক্যাসেলটাউন। একদম পাহাড়ের গায়ে। এখানেই হানিমুন কাটাতে এসেছে বছর সাতাশের নামী সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অনির্বাণ আর তার প্রেমিকা স্ত্রী লীলা। এমনিই এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুপম। প্রকৃতির যতো গভীরে যাওয়া যাবে প্রকৃতি ততোই পলে পলে খুলবে তার অন্তর্বাস। আর ওয়েস্ট হাইল্যান্ড রেলওয়ের জ্যাকোবাইট( jacobite) ট্রেনের তো কথাই নেই! কু ঝিক ঝিক সেই সাঁদা ধোঁয়া বার করা স্টীম ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়ে ন্যারোগেজ লাইনের এই ট্রেন যখন পাহাড়ের গা বেয়ে চলে তখন তা নিঃসন্দেহে দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনে চড়ার অনুভূতি মনে জাগিয়ে তোলে। আর ইউনাইটেড কিংডমে তো দর্শনীয় স্থানের কোনো অভাবই নেই। 

কিন্তু নিউক্যাসেলে আসার অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে অনির্বাণের। সে তার নারায়ণকাকুর কাছ থেকে জানতে পেরেছে এই অভিশপ্ত উপকথাটির ব্যাপারে। নারায়ণকাকু আবার দেশ বিদেশের সুপারন্যাচরাল ব্যাপার নিয়ে চর্চা করেন। তিনি পলফেল গ্রামের এই অভিশপ্ত উপকথাটির সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি অনির্বাণকে পাঠান এই ব্যাপারটির সত্যতা যাচাই করার জন্য। অনির্বাণ তো হানিমুনে ইউ কে(UK) যাচ্ছেই , এই ব্যাপারটিও একটু যাচাই করে আসুক না হলে। কিন্তু, অনির্বাণ ঠিক করেছে যে লীলাকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেবে না এই ব্যাপারে। এটাকে সে গোপনই রাখবে। কারণ অনেকক্ষেত্রেই এই রকম ঘটনায় প্রাণহানির ঝুঁকি থাকে। কিছু কিছু অভিশপ্ত জায়গা এখনোও আছে,যেখানে সত্যিই প্রেতাত্মার অস্তিত্ব আছে। প্রাজ্ঞ বর্ষীয়ান নারায়ণকাকুর কাছ থেকে অনির্বাণ জেনেছে সেই কথা।


যাই হোক,নিউক্যাসেলের হোটেলে এসেই প্রাণ ভরে গেল অনির্বাণের। হোটেলের ব্যালকনি থেকেই দেখা যায় ক্যালিডোনিয়ান অরণ্য,কোনো সুদক্ষ চিত্রশিল্পী দ্বারা অঙ্কিত সুদৃশ্য ক্যানভাসের ন্যায় বিরাজ করছে। পাইন,ফার,স্প্রুস, আসপেন,ওক কি নেই সেখানে! শোনা যাচ্ছে অজানা পাখির কূজন। সুদূরে আদিগন্তবিস্তৃত ধূম্র পর্বতশ্রেণী। প্রকৃতি তার সৌন্দর্য দুহাত ভরে দিয়েছে। যেন দুহাত মেলে উদ্ভিন্নযৌবনা প্রেমিকার মতো আহ্বান করছে তার প্রেমিককে। 

পলফেল গ্রামের কথা বলতেই শিউরে উঠল ওয়েটার। বারণ করল অনির্বাণকে ওখানে যাবার, তা সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্যে অনড় অনির্বাণ। সে প্রতিজ্ঞা করেছে,জানবেই পলফেল গ্রামের রহস্য। এবার অনির্বাণের লক্ষ্য পলফেল।

পাহাড়ের বুকে পলফেল গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা জানতে পেরে লাফিয়ে ওঠে লীলা। ভালো একটা গাইডও জুটে যায়।

এক সোনালী সকালে তারা রওনা দেয় পলফেল গ্রামে। গ্রামে যখন পৌঁছায় তখন বিকাল হয়ে আসছে। সূর্যদেব পশ্চিম দিগন্তকে সোনালী রঙে রাঙিয়ে সুন্দর পৃথিবীকে বিদায় জানাচ্ছেন। গ্রামে এক সম্পন্ন ব্যক্তির ফার্মহাউসে উঠল অনির্বাণ। পরের দিন সকালে স্থানীয় চার্চে গেল সে। যদি বৃদ্ধ প্রাজ্ঞ পাদ্রীর কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়।


কিছু কিছু লোক আছেন যাদেরকে দেখলেই প্রথম দর্শনে মনের মধ্যে শ্রদ্ধার ভাব জেগে ওঠে। এই পাদ্রী তেমনই একজন। পাদ্রীর কাছ থেকে অনির্বাণ জানতে পারল অদ্ভুত এক শিহরণ জাগানো তথ্য। 


1807 সালের কথা ফ্রান্সের সর্বাধিপতি নেপোলিয়ান বোনাপার্টের সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ পুরোদমে চলছে। কেউ কাউকে এতটুকু জায়গা দিতে প্রস্তুত নয় । ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন বিশ্বস্ত গোলন্দাজ ছিলেন আর্থার লিন্টন। তিনি এই গ্রামেরই ছেলে ছিলেন। শুধু দক্ষ গোলন্দাজ নয়,তার নৈতিকবোধও অন্যদের থেকে উচ্চমানের ছিল। নিয়মিত চার্চে যেতেন। পাদ্রীর কাছ থেকে নিয়মিত উপদেশ নিতেন। কিন্তু,শত্রু আর নিন্দুক তো জগতে সকলেরই থাকে। যীশুখ্রীষ্টেরও ছিল,সাধারণ পুরুষ আর্থারের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অভাব ছিল না।

শত্রুরা আর্থারের খ্যাতিতে ইর্ষায় আর পরশ্রীকাতরতায় জ্বলে তৈরি করে ষড়যন্ত্র। তাদের সঙ্গীর অভাব ছিল না, আর্থারকে প্রমাণ করা হয় মদ্যপায়ী,ঘুষলোভী,দায়িত্বজ্ঞানহীন আর অকর্মণ্য হিসাবে। ব্রিটিশ এমনিতেই হারছে,একথা উপরতলার কানে পৌঁছালে তাদের সমস্ত রাগ এসে পড়ে আর্থারের ওপর। দণ্ডস্বরূপ আর্থারের মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়।যে মানুষটাকে সবাই ভালোবাসত,সবাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করত,সেই মানুষটাই এক লহমায় সবার ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিল। তাই আর্থারের পারলৌকিক ক্রিয়াও ঠিকঠাক সমাপন করা হয়নি।

পাদ্রী নিশ্চিত,এ প্রেতাত্মা আসলে আর্থারেরই। একমাত্র কেউ যদি এর নিরাপরাধ হবার কথা নিজমুখে স্বীকার করে আর বাইবেলের পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণ করে তাহলেই তার আত্মা মুক্তি পাবে।


সূর্য অস্ত গেছে। রাত প্রায় আটটা। ফার্মহাউসে লীলা একা। লীলাকে অনির্বাণ আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে,সে এক প্রতিবেশীর ফার্মে যাচ্ছে। ফিরতে রাত হবে। সবথেকে ভালো কথা হল,বিজ্ঞানমনস্কা তরুণী লীলা এই স্কন্দকাটার কথার এতটুকুও সত্যতা বিশ্বাস করে না। অনির্বাণকে এই ব্যাপারে চিন্তিত দেখে সে অনির্বাণকে নিয়ে রসিকতা করতেও ছাড়ে নি। সুতরাং ফার্মহাউসে একা সে নিশ্চিন্তই আছে। এটা অনির্বাণকেও নিশ্চিন্তে রেখেছে।


রাত গভীর হচ্ছে। হাড় হিম করা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে।মেঘমুক্ত আকাশে কুমড়োর ফালির মতো একলা চাঁদ। শোনা যাচ্ছে কোনো অজানা রাতজাগা পাখির ডাক। তাহলে কি স্কন্দকাটার উপকথা সম্পূর্ণ মিথ্যা! নিজের ওপরেই প্রচণ্ড রাগ হল অনির্বাণের। তারপর একটা সময় মনে হল,তার প্রয়াস তো সফল হয়েছে। নারায়ণকাকুর কাছে সে এই উপকথার অসত্যতাই বিবৃত করবে।


হঠাৎই দূর থেকে কানে ভেসে এল কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃদু পদধ্বনি। ভালো করে শুনে বুঝতে পারল অনির্বাণ যে এটা বুটের আওয়াজ।এতো রাতে গ্রামের কে বাইরে বেরোবে,তাছাড়া বেশ ভারী বুট। এরকম বুট যে পলফেল গ্রামের কেউ পরে না,একথা অনির্বাণ একদম নিশ্চিত। বুটের শব্দ ধীরে ধীরে মৃদু থেকে স্পষ্ট হচ্ছে,অর্থাৎ রহস্যময় আগন্তুক এইদিকেই আসছে। প্রকৃতিতে এক অদ্ভুত নিঝুমতা। এই নিঝুমতা স্বাভাবিক নয়,যেন কোনো ভয়ঙ্কর অলৌকিক ঘটনার পূর্বাভাস। নিজের অজান্তেই হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে যাচ্ছে অনির্বাণের। না ,ভয় পেলে চলবে না। সে শেষ দেখে ছাড়বে এর।


এরপর অনির্বাণের সামনে এসে যিনি দাঁড়ালেন,আর কেউ নন সেই বিভীষিকাময় স্কন্দকাটা আর্থার লিন্টন। পা থেকে ঘাড় পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে,কিন্তু তারপরেই গণ্ডগোল। ঘাড়ের ওপরে মাথাটাই নেই।হ্যাঁ,মাথাটা আছে,হাতে ঝোলানো,গলা থেকে টপটপ করে লাল রক্ত ঝরছে, দুই চক্ষু রক্তবর্ণ,আর তাতে জগতের সমস্ত প্রতিহিংসা নিহিত আছে। মুখে একরাশ দাড়ি। লম্বায় কম করে সাত ফুট তো হবেই। স্কন্দকাটার কথা আগে শুনেছে অনির্বাণ,কিন্তু নিজের চোখে এই প্রথম স্কন্দকাটাকে দেখছে। তাও আবার নিজের দেশ নয়,সুদূর ইউরোপে। এবার না এই স্কন্দকাটার পাল্লায় পড়ে এই সময় বিদেশে না বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়।

পাদ্রীকে ডাকল অনির্বাণ,কোনো সাড়া নেই,গাইডেরও এক অবস্থা,দুজনেই স্থানুবৎ। এই স্কন্দকাটার সম্মোহনী ক্ষমতা বিদিত রয়েছে অনির্বাণের কাছে,হয়তো সম্মোহনের মাধ্যমেই পাদ্রী আর গাইডকে স্থানুবৎ করেছে এই স্কন্দকাটা। ধীর লয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে সেই বিভীষিকা। না,তাকে একটা কিছু করতেই হবে। না হলে হয় আতঙ্কে তার মৃত্যু ঘটবে,নয়তো সেও এইরূপ প্রস্তরবৎ হয়ে যাবে। আতঙ্কের চরম মুহূর্তে লীলার সুন্দর মুখমণ্ডল মনে পড়ল অনির্বাণ। না,সাত পাঁকের বন্ধন আছে লীলার সাথে। লীলার কাছে করা প্রতিজ্ঞা সে কোনোমতেই মিথ্যা হতে দেবে না।

সাহিত্যসম্রাট বলেছিলেন,'নারী ঈশ্বরের ছায়া'।নারী পুরুষের মনোবল,নারীই পুরুষের সাহস। লীলার কথা মনে পড়তেই হৃত সাহস ফিরে পেল অনির্বাণ। পাদ্রীর হাত থেকে পবিত্র ক্রুশ নিয়ে ছুটে গেল স্কন্দকাটার দিকে,ছিটাতে লাগল পবিত্র জল(holy water) স্কন্দকাটার ওপর,ভক্তি ভরে পাঠ করতে লাগল বাইবেলের পবিত্র মন্ত্র "Hail Mary..............."ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল স্কন্দকাটা। অনির্বাণ বুঝতে পারল, মুক্তি পেয়েছে আর্থারের আত্মা। এদিকে হুঁশ ফিরে এসেছে পাদ্রী আর গাইডের। পাদ্রী অনির্বাণকে বললেন,"God bless you,My Son!Many people have tried before. But you are God's chosen."


টলতে টলতে অনির্বাণ যখন ফার্ম হাউসে ফিরল তখন রাত দুটো। পরের দিনের সোনালী সকালে এক চিরকুট পেল অনির্বাণ। 

"Thank you brother for making me free from the cursed afterlife.

            From Arthur Linton."


সমাপ্ত

কলমে অরিজিৎ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror