Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Bhaswati Ghosh

Inspirational Comedy

3.4  

Bhaswati Ghosh

Inspirational Comedy

ভাই-ফোঁটা

ভাই-ফোঁটা

6 mins
9.5K


জামা, প্যান্ট টা ঝোপের মধ্যে থেকে বার করে এনে বুধো পরে নেয়।লোকটা এগিয়ে এসে 100টাকা হাতে দেয়।আনন্দে তিড়িং করে লাফিয়ে ওঠে বুধো।ইস্ কি মজা !এই একশো আর জমানো দেড়শো মোট আড়াইশো টাকা।টাকা গুলো আর একবার গুনে নিয়ে বাজারের দিকে ছুট লাগায় বুধো।সন্ধ্যা প্রায় হব হব করছে।তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢুকতে হবে।এত বেলা পর্যন্ত বাইরে থাকা দিদি একদম পছন্দ করে না।বাজারে লাল্টু কাকুর দোকানে গিয়ে জিনিসটা কেনে বুধো।আগে থেকেই পছন্দ করাই ছিল।এবার একছুট্টে বাড়ি।নাঃ দিদি এখনও আসেনি নিশ্চিন্ততার হাঁফ ছাড়ে বুধো।ঘরে ঢুকেই জিনিসটা তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেলে।দিদিকে দেখালে হবে না।কিছুক্ষণের মধ্যেই বুধোর দিদি এসে যায়।বুধো ততক্ষণে হাত মুখ ধুয়ে বই নিয়ে বসে গেছে।

 

বুধো আর লক্ষী দুই ভাইবোনের একটা ছোট্ট সংসার।তবে বুধো আর লক্ষী দুজনে কেউ আপন ভাই বোন নয়।বুধোর বাবা ছিল মিস্ত্রির জোগাড়ে।প্রতিদিন উনি সকাল সকাল কাজে বেরোতেন।সেদিনও বেরিয়েছিলেন কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই একটা সদ্যোজাত বাচ্ছাকে কোলে নিয়ে ফিরতে দেখে অবাক বুধোর মা।বিস্মিত ভাবে জিজ্ঞাসা করেন -"এ আবার কে?কোথায় পেলে?"প্রশ্নের উত্তরে বুধোর বাবা যা জানালেন তার সারবত্তা হল-উনি ট্রেন ধরবার জন্য যে সর্টকাট্ রাস্তাটা দিয়ে যান, আজও ঐ পথেই যাচ্ছিলেন। হঠাত্‍ই পাশের ঝোপ থেকে একটা ছোট্ট বাচ্ছার কান্না কানে আসে।ছুটে যান ঐ দিকে, গিয়ে দেখেন একটি সদ্যোজাত ছোট্ট বাচ্ছা পড়ে।কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন বাচ্ছাটা একটি মেয়ে।কি করবেন কিছুই বুঝতে পারেন না, তারপর ভেবে চিন্তে বাড়িতেই নিয়ে আসেন।মেয়েটির গায়ে একটি দামী টাওয়েল জড়ানো ছিল যা দেখে দুজনে সহজেই অনুমান করেন ধনী পরিবারের ই মেয়ে। হয়তো মেয়ে বা অবৈধ সন্তান যে কোন একটি কারণে তার স্থান হয়েছে রাস্তার ধারে ঝোপে।এরপর থেকে মেয়েটিকে বুধোর মা আর বাবা সন্তান স্নেহে প্রতিপালিত করতে থাকেন।মেয়েটির তারা নাম দেয় লক্ষী।লক্ষীর বয়স যখন নয় বত্‍সর তখন বুধোর জন্ম হয়।এর আগে তিনটি সন্তান বুধোর মায়ের গর্ভাবস্থায় নষ্ট হয়ে যায়, ডাক্তার তাই বলেছিলেন এটা খুব রিস্কের হবে।সেটাই হল বুধোর জন্মের সময়েই বুধোর মা মারা যায়।মাতৃহারা বুধোকে মায়ের স্নেহে মানুষ করতে থাকে ঐ নয় বছরের ছোট্ট লক্ষী, বুধোর দিদি।সবি ঠিকঠাক চলতে থাকে কিন্তু বিনা মেঘে আবার বজ্রপাত।একদিন দশতলা একটি বিল্ডিং এর কনস্ট্রাকশনের সময় জোগাড় দিতে গিয়ে পা পিছলে বাঁধা ভারা থেকে পড়ে যায় বুধোর বাবা।তিনদিন হসপিটালে থাকার পর উনি মারা যান।লক্ষীর বয়স তখন আঠেরো আর বুধোর নয়।লক্ষী তখন শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরে।একটা ছোট বাচ্ছাদের স্কুলে বাচ্ছা দেখাশোনার কাজ জুটিয়ে নেয়।আবার ওখান থেকে লক্ষীর ব্যাবহারে মুগ্দ্ধ হয়ে বাচ্ছাদের অভিভাবকরা স্কুলের ছুটির পর ও তাকে গভর্নেস হিসাবে নিযুক্ত করেন।লক্ষী শুধু নামেই লক্ষী না, দেখতেও অপূর্ব সুন্দরী।একমাথা লম্বা চুল,গৌর বর্ণা,টানা টানা চোখ।কেউ একঝলকে দেখলে বা কথা বললে ধারণাই করতে পারে না ও নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরে লালিত।অনেকেই তাকে অভিজাত বংশের বলে ভুল করে।লক্ষীর রুপে মুগ্দ্ধ অনুরাগীর সংখ্যাও কম নয়।কিন্তু লক্ষী কখনোই ওর আশেপাশে ঘোরা স্তাবকদের কাছে আসার সুযোগ দেয়নি।অনেকেই শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে তার চন্ডীরুপ প্রত্যক্ষ করেছে।লক্ষীর এখন একটাই ধ্যানজ্ঞান তার ভাইকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করা।বাবার মৃত্যুর জন্য নিজের পড়াশোনার ইচ্ছাকে মাঝপথেই জলাজ্ঞলি দিতে হয়েছে।তার অপূর্ণ ইচ্ছা ভাইয়ের মধ্যে দিয়ে বাস্তব রুপায়ণ ঘটাবার স্বপ্নে বিভোর এখন লক্ষী।হাজার দুঃখ,কষ্টের মধ্যেও সে ভাইকে কারো কাছে হাত পাততে, দয়া নিতে বারণ করেছে।ভিক্ষাবৃত্তি বা অপরের করুণা আদায়কে লক্ষী ঘৃণা করে।

লক্ষীর হাত থেকে প্যাকেট টা পড়ে যায়।বুধো তখন ফেরেনি ঘরটা আগোছালো হয়েছিল তাই একটু গুছাতে গিয়েই প্যাকেট টা হাতে পড়ে।স্তব্ধ হয়ে বসে পড়ে, সেই সময়েই বুধো ঘরে ঢোকে।দিদিকে ঐভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়, তারপর পাশে প্যাকেট টা পড়ে থাকতে দেখে দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে অসুবিধা হয় না।বুধোকে দেখে লক্ষী উঠে আসে কোনো কথা না বলেই বুধোর গালে চড় বসায়।লক্ষী ভেঙে পড়া গলায় বলে-"কোথা থেকে তুই টাকা পেলি?"বুধোর চুপ করে থাকা লক্ষীর রাগকে আরো বাড়িয়ে তোলে আবার জিজ্ঞাসা করে," বল কোথা থেকে টাকা পেলি?"এবারেও নিরুত্তর বুধো।লক্ষী আর নিজেকে সামলাতে পারে না, বুধো কে চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকাতে থাকে।পাশের বাড়ির নিতাই এর মা এসে লক্ষীকে ছাড়ায়।লক্ষী কান্না ভেজা গলায় চিত্‍কার করে বলতে থাকে,"-তুই পরের কাছে হাত পাততে শিখলি না, চুরি ধরলি? হায় ভগবান! এত কষ্টের আমার তুই এই দাম দিলি?আমার স্বপ্নকে সব শেষ করে দিলি।"বুধো কিছু বলে না চুপ করে দাঁড়িয়ে থা্কে, শুধু বড় বড় চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে ফাটা মেঝের উপর।

সকালবেলা দিদির ডাকে ঘুম ভাঙে বুধোর।সকাল হয়ে গেছে অনেকক্ষণ উঠতে ইচ্ছা করছে না বুধোর।কি হবে উঠে? দূর্ এই দিনটাকে ঘিরে একবছর ধরে কত স্বপ্নের জাল বুনে চলেছিল সে, সেই আগের বছর যখন নিতাই কে ওর দিদির জন্য লালরঙের শাড়িটা কিনে আনতে দেখেছিল, সেই দিন থেকে।তারপর থেকেই তো..."কি রে ওঠ?" দিদির ডাকে বুধোর ভাবনায় ছেদ পড়ে।দিদি নিজে হাতে বুধোকে স্নান করিয়ে দেয়, এরপর তার জমানো টাকায় কেনা জামা প্যান্ট টা ভাইকে পরিয়ে দেয়।লক্ষী এবার নিজে তৈরি হয়।বুধো চুপ করে বাইরে গিয়ে বসে থাকে।লক্ষী হাঁক পাড়ে ঘরে আসতে বুধোকে।বুধো ঘরে ঢুকতে গিয়ে লক্ষীকে দেখেই অবাক। লক্ষী তখন পিছন ফিরে চন্দন বাটছিলো।বুধো একলাফে ঘরে ঢুকে পেছন থেকে দিদিকে জড়িয়ে ধরে।লক্ষী হেসে বলে," ওরে ছাড়রে পাগলটা।"বুধো ছাড়ে না ।লক্ষী বুধোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে -"কাল অত মারলাম তাও বললি না শাড়িটা তোর নিজের রোজগারে কেনা?খুব লেগেছে না রে?কেন বললি না ভাই অত মারলাম তাও?" 

বুধো ঠোঁট ফুলিয়ে বলে," তুমি কেন বুঝলে না তোমার ভাই কোনদিন খারাপ কাজ করতেই পারে না।আমি তো ভেবেছিলাম তোমায় আজ অবাক করে দেব তার আগেই তো..." লক্ষী এবার কেঁদেই ফেলে। "তাইতো ভাই, একদম ঠিক বলেছিস ভাই একদম ঠিক বলেছিস, আমার বড় ভুল হয়ে গেছে রে।আজ সকালে নিমাই আমায় ভাগ্যিস সব বললো। কাল তোকে মেরেছি ওর মায়ের থেকে জানতে পেরে, তুই নাকি ছুটির পর বাসুদার চায়ের দোকানে ফাই ফরমাস খেটে দিতিস।তার মানে তুই খেলতে যাবার নাম করে ওখানেই যেতিস নারে?"

বুধো চোখ নামিয়ে অস্ফুটে 'হ্যাঁ' বলে।

লক্ষী জড়িয়ে ধরে বুধোকে -"আমি আজ খুব খুশি ভাই এমন ভাই কজনের হয়? আমি বড় ভাগ্যবতী রে তোর মত একটা ভাই পেয়েছি।তুই সত্‍ ভাবে উপার্জন করতে শিখে গেছিস এর থেকে সুখের আমার কাছে আর কিছু নেইরে।তোর মত ভাই কজনের ভাগ্যে জোটে?"কথাগুলো বলতে বলতে লক্ষীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। বুধো লক্ষীর চোখের জলটা মুছিয়ে দিয়ে বলে," তুমি কেঁদো না দিদি, আমার বড় কষ্ট হয় তোমায় কাঁদতে দেখলে।?এরপর লক্ষী চোখের জলটা মুছে নিয়ে বুধোর কাঁধ দুটো ধরে চোখ পাকিয়ে বলে,-"আমি কিন্তু একটা ব্যাপারে খুব রাগ করেছি।"বুধো ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে -"কেন দিদি?"

লক্ষী বলে,"-আমি শুনলাম তুই নাকি গঙ্গায় কাঠামো তুলেছিস টাকা জোগাড় করতে?কেন করলি ভাই এমন কাজ?ঐ অত বড় গঙ্গা তোর যদি কিছু হয়ে যেত?"

বুধো বলে, -"কি করব ঐ শাড়িটার দামতো আড়াইশো টাকা।এর থেকে কম দামে তো আর নেই।বাসুদার ওখানে কাজ করে একশো টাকা পেয়েছিলুম বাকি টাকাটা তাই..." 

লক্ষী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,-"পাগলটা তুই বড় হয়ে যত পারিস শাড়ি দিবি এখন আর কোনদিন অমন পাগলামি করবি না।তোকে গঙ্গায় কাঠামো তোলার বুদ্ধি কে দিয়েছিল?"

বুধো দিদির বুকে মুখে রেখে বলে,"-কেউ না। নেপাল,রাজু ওরা প্রতিবছর দূর্গা ঠাকুর বিসর্জনের পর গঙ্গা থেকে কাঠামো তুলে দিয়ে টাকা পায় আমি দেখেছিলুম।তাই আমিও..কিন্তু দিদি আমার কিছু হয়নি..."

বুধোর কথা থামিয়ে দিয়ে লক্ষী বলে,-"না ভাই লক্ষীটি আর কোনদিন অমন কাজ করবি না।কথা দে আর কোন দিন আমায় না বলে কিছু করবি না?''

বুধো দুহাতে লক্ষীকে জড়িয়ে ধরে বলে, ''আচ্ছা দিদি আচ্ছা।‍'' ''সৎ উপায়ে টাকা রোজগার করে আমায় শাড়ি কিনে দিয়েছিস আমার খুব আনন্দ হচ্ছে ভাই। কিন্তু তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকব বল?কথা দে আর কোন দিন আমায় না বলে কিছু করবি না?"

এরপর লক্ষী বুধোকে হাত ধরে আসনে বসায়।লক্ষীর গর্বে বুক ভরে ওঠে তার ভায়ের দেওয়া শাড়ি পরে। এ যে তার কাছে সোনার চেয়েও দামী।লক্ষীর আঙুল চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেয় তার ভাইয়ের কপালে। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় জ্বেলে দেওয়া মঙ্গল আলোক ছড়িয়ে পড়ে ওদের ভাই বোনের স্নেহের কুঠিতে।প্রদীপের আলোর মত ওদের ভাই বোনের স্নেহের বন্ধন আরো উজ্বলতর হয়ে ওঠে। লক্ষীর কন্ঠে উচ্চারিত হয় তার ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় চিরকালীন অমোঘ বানী-"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা...."



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational