Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sandipa Sarkar

Children Stories Drama

2.2  

Sandipa Sarkar

Children Stories Drama

মাতৃত্ব

মাতৃত্ব

3 mins
1.4K


পাড়ার কুকুর গুলো তারস্বরে চেঁচাচ্ছে।সারারাত ধরে সেই চিৎকার চলছে।ওদের চিৎকারে পাড়ার লোকদের রাত্রের ঘুম উড়ে যাওয়ার উপক্রম।জালনা দিয়ে জল ছুঁড়ছে কেউ,কেউ বা ঢিল ছুঁড়ছে,কেউ বা লাঠি নিয়ে মারতে নেমেছে।কুকুরগুলো তাড়া খেয়ে চুপ করে গেলো।কিন্তু একটা কুঁই কুঁই করে কান্না সারারাত চলল একটা বাড়ির সামনে।  


"কুঁই-কুই,এই চুপ কর কেউ শুনে নিলে তোকে কেড়ে নিয়ে চলে যাবে।মাম্মা আসছে চুপ চুপ"।

"কিসের আওয়াজ আসছে রে কুটুস?এ বাবা এটা কাকে নিয়ে এসেছিস?ছিঃছিঃ কুকুরছানা।ফেল ফেল এখনি।কোথা থেকে পেলি এটাকে?"।

"ওই বাড়ির পাশের ভাঙাবাড়িটাতে বল পড়েছিলো সেটা আনতে গিয়ে দেখলাম অনেকগুলো পপি চুপ করে চোখ বুজে শুয়ে আছে।এই পপিটাকে নিয়ে চলে এসেছি। পপিটাকে মাম্মা ফেলো না প্লিজ! এই পপিটাকে আমি পুষবো"।

"কই দেখি দে,ওলে বাবা লে,কি মিত্তি রে।আচ্ছা কুটুস এ কিন্তু খুব ছোট।এখনও চোখ ফোটেনি,একে চটকাস না বেশী।দে আমার কোলে দে"......বলে শ্রীজা কুকুরছানাটাকে কোলে নিয়ে দেখছে ওর পেটটা একদম নেতিয়ে গেছে খিদের জন্য।শ্রীজার কোলে গিয়ে কুকুরছানাটা কুঁই কুঁই করছে।শ্রীজা বুঝতে পারলো কুকুরছানাটার খিদে পেয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে শ্রীজা কুটুসের ছোটবেলার একটা ফিডিং বোতল বের করে কুকুরছানাটাকে দুধ গুলে মুখের কাছে ধরতেই চুক চুক শব্দ করে দুধটা খেতে শুরু করে দিলো।শ্রীজার বাড়ির সামনে কিন্তু কুকুরছানাটার মা রোজ এসে বসে থাকে আর কান্না স্বরে ডাকতে থাকে।শ্রীজা বাড়ির বাইরে বেরোলেই কুকুর মা-টি শ্রীজার পায়ে পায়ে ঘোরে।শ্রীজা বেশ বুঝতে পারে ওই ছানাটার জন্যই আসছে।শ্রীজার গায়ে যে ওর বাচ্চার গন্ধ পায়।শ্রীজার গা শুঁকতে থাকে।হাবভাবে শ্রীজা বুঝতে পারে ওকে নির্বাক পশুটা ওর বাচ্চার কুশল জানতে চায় বা ওর কাছে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানায়।কুটুসকে আর শ্রীতমাকে একসাথে দেখলে এখন ভৌ ভৌ করে এমন ভাবে ডাকে মনে হয় শ্রীতমার মা কুকুরটা ওকে বলছে তোমার বাচ্চাকে আঁটকে রাখলে কেমন লাগবে?কষ্ট হবে তো?আমারও ঠিক এমনই কষ্ট হচ্ছে। 


কদিন পর কুকুরছানাটার চোখ ফুটলো।শ্রীজা আর কুটুসের সারাদিন এখন কাটে কুটুসকে নিয়ে।কুটুসও বড্ড ওদের ঘেঁষা হয়েছে।সারাবাড়ি লাফিয়ে, দৌড়ে ঘুরে বেড়ায় ওদের পেছন পেছন।কুটুসের বাবাও কুকুরছানাটার ভক্ত হয়ে উঠেছে।কুটুস একটা অন্নপ্রাসন বাড়ি খেয়ে এসেই বায়না ধরলো ওর পপিরও অন্নপ্রাসন দেবে।শ্রীজাও রাজি হয়ে গেলো।আজ কুটুসের পপির নামকরণ হবে।লোক সমারোহে নামকরনের আয়োজন হচ্ছে, কুটুসের বাবা ভাত খাওয়ালো।নামকরণ হলো কুটুসের সাথে মিলিয়ে কুটুল।প্রতিদিনের মতো কাল রাতেও কুটুলের মা কেঁদেছে শ্রীতমাদের বাড়ির কাছে বসে।দরজা খোলা পেয়ে কুটুলের মা উর্ধ্বশ্বাসে বাড়ির ভেতর ঢুকে এলো গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে,এসে সোজা শ্রীতমার পায়ে হাত দিয়ে পা ধরার মত কুঁই করে কেঁদে উঠলো।কিছুতেই পা ছাড়ছে না।শ্রীতমা একজন মায়ের মনের কথা বুঝতে পারলো,ও বলছে ছেড়ে দাও নাগো আমার বাচ্চাটাকে।মায়ের গায়ের গন্ধ পেয়ে  কুটুলও ছটফট করে কুটুসের বাবার কোল থেকে দৌড়ে এসে মায়ের কাছে কুঁই কুঁই করে গা চাটতে লাগলো।নিজের বাচ্চাকে কাছে পেয়ে ভৌ-উ-উ করে ভালোবাসা জানিয়ে গা চাটতে লাগলো।মুখে মুখ দিয়ে মানুষের মত চুমু খেতে লাগলো।শ্রীতমা লক্ষ্য করছে চোখ দিয়ে কুটুলের মায়ের জল গড়িয়ে পড়ছে নিজের বাচ্চাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে।নিজের বাচ্চাকে নিয়ে চুপচাপ শ্রীতমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।কুটুস খুব কাঁদলো কুটুল চলে গেলো বলে।শ্রীতমার ওর বরেরও খুব মন খারাপ।পরদিন সকালে কুটুসকে স্কুলে দিতে যাওয়ার সময় দরজা খুলতেই শ্রীতমা দেখছে কুটুল দরজার বাইরে বসে ছিলো মায়ের সাথে।দরজা খুলতেই লেজ নাড়তে নাড়তে চলে এলো ভেতরে।দু হাত তুলে কুটুসের পায়ের কাছে দাঁড়ালো। কুটুস আনন্দে আত্মহারা হয়ে কুটুল কে কোলে নিলো।শ্রীতমার কোলে উঠে গাল চাটলো।কুটুস আর কুটুল খুব খেললো।সেদিন আর স্কুল যাওয়া হলো না কুটুসের।কুটুলের মা কিন্তু ভেতরে এলো না।দরজায় হেলান দিয়ে শুয়ে রইলো।অনেক পরে ঘেউ করে ডেকে উঠতেই কুটুল লেজ নাড়িয়ে বাচ্চা গলায় ভৌ বলে মায়ের কাছে চলে গেলো।শ্রীতমার মনে হচ্ছে যেন কুটুলের মা ওকে খেলতে পাঠিয়েছে বন্ধুর বাড়ি।অনেকক্ষন খেলার পর ডেকে নিলো চলে এসো বলে।কুটুলও বাধ্য সন্তানের মত যাচ্ছি বলে চলে গেল বাড়ির বাইরে।পশুদের হয়ত ভাষা থাকে না।তবে মা মাই হোন।নিজের শিশু সবার কাছে সমান।নিরীহ পশুদের আঘাত করার আগে এটা সকল মানুষের খেয়াল রাখা উচিত।।


       সমাপ্ত:-

        *****


Rate this content
Log in