Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Himangshu Roy

Drama

2.9  

Himangshu Roy

Drama

মোবাইল ও একটি গল্প

মোবাইল ও একটি গল্প

4 mins
10.5K


-বাপি,কি করতো?

-দেখছিস না ,কাজ করতেছি

মোবাইলটা নিয়ে ব্যস্ত রিপন ,পাশে ঘোরাঘুরি করছে ওর ছোট্ট মেয়ে তিন্নি।তিন্নির বয়স পাঁচ বছর,গোলগাল হাসিমুখ চোখদুটো যেন ছোট্ট দুটি ডিম।তিন্নির হাসিমুখ দেখলে যে কেউ কোলে তুলে নেয়,শুধু নেয় না ওর বাবা রিপন।আর নেবেই বা কেন, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বউটাকেও কোনদিন স্ত্রীর মর্যাদা দেয় নি।শুটকি মাছের মত হারগিলে চেহারা,দেখতেও তেমন খাস না।এর থেকে অফিসের মেয়েগুলা অনেক বেশি ডবকা।তবে রিপনকে কোনদিন অসন্মান করে নি ওর বউ।

তিন্নিকে জন্ম দেবার সময় ওর মা মারা যায়।অবশ্য মরেছে ভালই হয়েছে,কিন্ত রেখে গেছে আর এক আপদকে তিন্নিকে।

রিপনের মা আর তিন্নি জলপাইগুড়িতে একটা ফ্লাটবাড়িতে থাকে।রিপন মাসে এক দুবার আসে দেখা করতে,বলা ভালো অনিচ্ছার কর্তব্য পালন করতে।আসলেই তিন্নির এত ঘ্যানর ঘ্যানর ভাল্লাগেনা রিপনের।যত রাজ্যের প্রশ্ন যেন ওর মাথায়।বাবা এটা কী ,বাবা ওটা কী করে মাথা শেষ করে দেয় ।

-বাপি জানো দিদুন আমাকে কালকে গল্প বলেছে টুনটুনির গল্প কত্ত মজার গল্প,জানো রাজার নাক কাটা যায়!!পড়শু উকুনি বুড়ির গল্প শুনেছিলাম।আজকে দিদুন সুয়োরানি দুয়োরানির গল্প বলবে।

-বাপি,জানো আমি কবিতা বলতে পারি, শুনবে

বলে তিন্নি রিপনের উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলতে শুরু করে

আতা গাতে তোতা পাখি

ডালিম গাতে মউ

হীরেদাদার মমড়ে থান.....

তারপর ভুলে গিয়ে বলতে শুরু করে দিদুন ও দিদুন তারপর কী ভুলে গেতি বল না বাপি শুনবে

তিন্নির দিদুন চা নিয়ে আসে,বলে- তারপর ঠাকুরদাদার বউ মানে আমি

তিন্নি আবার শুরু করে বাপি শোনো

আতা গাতে তোতা পাখি

ডালিম গাতে মউ

হীরে দাদার মমড়ে থান

....

...ঠাকুরদাদার দিদুন।

রিপনের মা মানে তিন্নির দিদুন হাসতে থাকে।কিন্ত রিপন মোবাইলেই ব্যস্ত ,তিন্নির দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার।

-আসিস তো দুই একবার মাসে,মেয়েটাকে একটু সময় দিতে পারিস না আসার পর থেকে মেয়েটা তোর পিছনে ঘুরঘুর করছে ,একটু আদর তো করতে পারিস

রিপনের মা বলল

-না ,পারি না । ঘেন্না হয় আমার বুঝেছ।আর বিয়েটা তো তোমরাই দিলে ,টিকল। দুদিনেই তো তিনি ফুরুৎ উপরে আর আমি এখন...। বাচ্চাটাকেও সামলাতে হবে।মাসে মাসে এত টাকা দেই হয় না ,আমি ওসব পারব না ।রাগে গজগজ করতে থাকে রিপন।

তিন্নি পাশের ঘর থেকে আঁকার খাতা নিয়ে আসে,টেবিলে খাতাটা রাখে, বলে

-দেখ বাপি আমি তবি একেতি

টেবিলে মোবাইলটা ছিল,খাতার কোন লেগে মোবাইলটা মেঝেতে পড়ে যায়।মোবাইলের ডিসপ্লেটা ফেটে যায়।রিপন মোবাইলটা নিয়ে দেখে টাচ কাজ করছে না । রাগে একটা চড় কষিয়ে দেয় তিন্নির গালে।তিন্নি কাঁদতে কাঁদতে পাশের ঘরে চলে যায়,বলে

-বাপি ভাল না ,ভাল না। দিদুন বাপি ভাল না।

রিপনের মা ও রেগে নাতনির কাছে যায় চুপ করানোর জন্য।রিপন ফ্লাট থেকে নেমে আসে।বাজারে মোবাইল রিপেয়ারিং এর দোকানে মোবাইলটা রিপেয়ারিং এ দেয়।তারপর বাজারে ঘোরাঘুরি করে , মেজাজটা আজকে খিঁচড়ে আছে।বাজারে আজ কেন জানি খুব ভিড়,অনেক পরিবার ছোট্ট বাচ্চাদের নিয়ে এসেছে।

-আচ্ছা দাদা আজকে এত ভিড় কেন

একটা দোকানে জিজ্ঞাসা করল রিপন

-আপনি কি নতুন নাকি জানেন না আজকে মেলা হচ্ছে ডিবিসি রোডের পাশে।

রিপন মেলায় যাওয়া লোকদের দেখছে।একটা বেলুন বিক্রেতা বেলুন নিয়ে যাচ্ছে,একটা মেয়ে ওর বাবার কাঁধে চড়ে যাচ্ছে।হঠাৎ চিৎকার করে উঠল

-বাবা , বেলুন বাবা বেলুন

-বেলুন নিবি,বলে লোকটা একটা দু টাকার সরু লম্বা হলুদ বেলুন কিনে মেয়েটার মাথায় পেঁচিয়ে দেয়।মেয়েটাকে দেখতে রাজকন্যের মত লাগছে।

হঠাৎ রিপনের তিন্নির কথা মনে পড়ল।মেয়েটাকে মারার জন্য খারাপ লাগল।রিপন তিনটে ওইরকম বেলুন নিল,তারপর বাড়ির রাস্তা ধরল।

তিন্নি আর ওর দিদুন শুয়ে আছে।তিন্নি বলল,

-দিদুন সুয়োরানি আর দুয়োরানির গল্প বল না

-এখন না রাতে শোনাব ঠিক আছে,এখন ঘুমা।

-আমি এখনই শুনব ,তিন্নি জেদ ধরে

রিপনের মা বিরক্ত হয়,রাগ করে বলে শুয়ে পড় নাহলে কিন্ত মার খাবি

তিন্নি কাঁদতে শুরু করে।

রিপন গিয়ে বলে,

-গল্প শুনবি

-তুমি মারো আমাকে ,আমি শুনব না। তুমি ভাল বাপি না।কাঁদতে কাঁদতে বলে তিন্নি

বেলুনগুলো দেখায় রিপন।তিন্নি বেলুন দেখে লাফিয়ে ওঠে বেলুন ,বেলুন দিদুন বেলুন বেলুন

রিপন বলে

-মেলায় যাবি

তিন্নি লাফাতে থাকে

- দিদুন দিদুন মেলায় যাব,বাপি মেলায় নিয়ে যাবে কী মতা কী মতা!!

রিপন তিন্নিকে নতুন জামা পরিয়ে দুটো বেলুন হাতে আর একটা মাথায় বেঁধে দেয় আর মনে মনে বলে এইতো আমার রাজকন্যে ,আমার রাজকন্যে সবার সেরা ।কাঁধে করে সারা মেলা ঘোরায় রিপন তিন্নিকে।ফিতে কিনে দেয় ,পুতুল কিনে দেয় ,চুড়ি কিনে দেয়।আরও অনেক কিছু। বাড়ি ফিরে রিপনের কাঁধ থেকে নেমে তিন্নি লাফাতে লাফাতে ওর দিদুনের ঘরে যায় বলে

-দিদুন দিদুন দেখ কি কি কিনেতি ,বাপি কিনে দিয়েতে

ঘুমাবার সময় রিপন বলল

-মা,আজকে আমি তিন্নিকে নিয়ে ঘুমাই

রিপনের মা হাসিমুখে বলে –আচ্ছা

ঘুমানোর সময় তিন্নি বলে –বাপি গল্প বল সুয়োরানি,দুয়োরানির

রিপন বলে,

-এক যে ছিল দুয়োরানি,কেউ তাকে ভালবাসতো না,দেখতে ভাল ছিল না কিন্ত মনটা ভাল ছিল।রাজাও তাকে ভালবাসতো না ।একদিন রাজা অসুখে পড়ল ,কেউ যখন আসলো না ,তখন দুয়োরানি রাজাকে বাঁচাল।রাজা দুয়োরানিকে ভালবাসতে শুরু করল তারপর একদিন রাজকন্যের জন্ম হল কিন্ত দুয়োরানি মারা গেল।তারপর রাজা আর কাউকে ভালবাসেনা।একদিন অন্য দেশের রাজকন্যেকে দেখে রাজার হিংসে হল।রাজা নিজের রাজত্ব দিয়ে দিল রাজকন্যেকে।আর সেই রাজকন্যে কে জানিস

-কে বাপি

-তুই

-আর রাজা

-আমি

-বাপি ,কিন্ত রাজা হলে যে নাক কাটা যায়

-সে যাক, বলে হাসতে থাকে রিপন,তারপর তিন্নির কপালে চুমু দেয়।

হঠাৎ মনে পড়ে যে মোবাইলটাতো আনা হল না!!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama