Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sampa Maji

Abstract Inspirational

3  

Sampa Maji

Abstract Inspirational

আমি বসন্ত ভালোবাসি

আমি বসন্ত ভালোবাসি

5 mins
517



রহিম ক্লাস V উঠেছে, নতুন স্কুল সবাই অচেনা। প্রথম প্রথম এতো বড় স্কুল এতো ছাত্র একসাথে দেখে ভয় করে, ওর আগের স্কুলে এতো ছাত্র ও ছিল না, তাছাড়া সেটা বাড়ির সামনে ছিল তাই কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এখানে সবাই নিজের বন্ধু সাথে কথা বলে , ওর সাথেই কেউ কথা বলে না । রহিম ভাবে ওতো মুসলিন , তাই হয়তো  কেউ ওর সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইবে  না এই ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখে ।কারো সাথে আগবাড়িয়ে কথা বলে না, শেষ বেঞ্চে এক কোণে বসে ,টিফিনে ও বাইরে বেরোয় না একা একা থাকে। এই ভাবে কয়েক দিন যায় ,এরপর একদিন ঘটনা চক্রে অনিমেষ,ইন্দ্র এবং সুজিত দেরি করে স্কুলে আসে, প্রথমের দিকে জায়গা না পেয়ে শেষ বেঞ্চে রহিমের পাসে বসে।ওরা তিনজন এক স্কুলে পড়ত এবং ওরা একা পাড়ায় বাসা করে , তাই ওদের খুব বন্ধুত্ব। তিন জন বন্ধুর এই হাসি মজার কথা শুনে রহিম ওদের কে একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে । রহিমের এই ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে  অনিমেষ, রহিম থেকে পরিচয় জানতে চায়,ওর কোনো বন্ধু আছে কিনা জানতে চায় ।যখন শোনে এই স্কুলে ওর কোনো বন্ধু নেই তখন ওরা তিনজনে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় সাথে ওর নাম , আগে কোন স্কুলে পড়ত , বাড়ি কোন দিকে এইসব জেনে নেয় , রহিম ভয়ে ভয়ে ওদের কথার উত্তর দেয় , কিন্তু নিজে কিছু জিজ্ঞেস করে না , তখন অনিমেষ  রহিমের এই ভিতু ভাব দেখে নিজের থেকেই একে একে নামগুলো বলে । টিফিনে তিন জনে অনিমেষের কৌটো নিয়ে ওরা তিনজনে কারা কারি করতে থাকে , রহিম কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সুজিত টিফিনের কৌটা এগিয়ে দিয়ে রহিম কে নিতে বলে । কিন্তু রহিম খাবার নেয় না, ওদের  বলে, 

-আমার খিদে নেই, আমি খাবো না।

সুজিত- আমরা বুঝতে পেরেছি তুই কেন আমাদের টিফিন নিতে চাইছিস না।

রহিম- না , আসলে ...

অনিমেষ- তুই আসলে মুসলিম এইতো।

রহিম- হ্যাঁ,

সুজিত- তাতে কি হয়েছে ,ইন্দ্র ও তো ব্রাহ্মন ,কউ ওর তো আমাদের খাবার খেতে অসুবিধা নেই।

অনিমেষ- তুই যদি আমাদের সাথে খেতে চাস আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

সুজিত- কিন্তু তোর যদি আমাদের সাথে খেতে সমস্যা থাকে তাহলে বলতে পারিস , আমরা জোর করবো না।

রহিম- না তেমন কোন অসুবিধা নেই।

ইন্দ্র- তাহলে আর কি ,আজ থেকে আমরা তোর বন্ধু হলাম।

এইভাবে ওদের বন্ধুত্ব বারতে থাকে , টিফিনে একে অন্যের খাবার খায় , মাঝে মাঝে রহিম ও  বন্ধুদের জন্য বেশি করে টিফিন বানিয়ে নিয়ে আসে ,চার জনে এক সাথে টিফিন খায় এবং ছুটির পরে সবার সাথে খেলে । অনিমেষ এর বাড়িতে ভিডিও গেম আছে ,ছুটির দিনে ইন্দ্র আর সুজিত অনিমেষ দের বাড়িতে ভিডিও গেম খেলতে আসে একদিন ওরা রহিম কে ও ওদের বাড়িতে ভিডিও গেম খেলতে আসতে বলে , তখন রহিম বলে - তোর বাড়িতে গেলে তোর বাড়ির লোক কিছু বলবে না তো ।

অনিমেষ- আমার বাড়িতে শুধু মা আর আমি থাকি ,বাবা  দিল্লিতে থাকে , আমার মা এসব নিয়ে কিছু বলে না ,বরন বলে অন্য ধর্মের বন্ধু করবি তাহলে তাদের উৎসবে যোগ দিতে পারবি।

রহিম- তাহলে যাবো।

সুজিত- ওর মা খুব সুন্দর রান্না করে ,চল তোকেও খাওয়াবে।


 2 মাসে রহিমের অনেক বন্ধু হয়ে যায় তার মধ্যে তিনটে বেস্টফ্রেন্ড পেয়ে যায় , এখন রহিমের স্কুল যেতে খুব ভালো লাগে, আবার কেউ স্কুলে না আসলে মন খারাপ হয়ে যায়।

 একদিন পরে দোল উৎসব তাই স্কুল ছুটির পর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাতে একে অন্যের গালে রং লাগিয়ে দেয় , রহিম রং খেলা দেখতে থাকে , রহিম কে কেউ রং লাগায় না এমনকি ওর বন্ধুরাও না , আসলে রহিমের কাছে শুনেছে বাড়িতে এসব পছন্দ করে না , তাই শেষে অনিমেষ একমুঠো আবির নিয়ে এসে বলে,

- তোকে রং মাখালে সমস্যা হবে কিন্তু তুই তো আমাদের রং মাখাতে পারিস,নে এটা আমাদের গালে লাগিয়ে দে।

রহিম আনন্দের সঙ্গে ইন্দ্র, অনিমেষ, সুজিতের গালে রং মাখিয়ে দেয়।আজ প্রথম রং মাখিয়ে রহিমের খুব আনন্দ লাগছে , সত্যি কি আনন্দের এই খেলা। বাড়ি যাওয়ার সময় রহিম ওদের কে বলে,

- দোলের দিন আসবি তোরা আমাদের ওখানে ,দেখবো রং মেখে তোদের কেমন দেখতে লাগছে ।

ইন্দ্র-কিন্তু তোর বাড়ির লোক।

রহিম- আমি তোদের জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো।

অনিমেষ- ঠিক আছে আমরা যাবে।

রহিম- ঠিক 12টার সময় । আমাদের বাড়িটা ,12নম্বর , কবির হোসেন।

ইন্দ্র- আচ্ছা।


ওরা যে যার বাড়ি চলে যায় , আজকে রহিমের মাথায় অন্য কথা ঘুরছে , যদি আমিও ওদের মতো রং খেলি খুব মজা হবে। কিন্তু বাড়িতে ,যাহয় হোক আগে আমাকে কিছু রং জোগাড় করতে হবে কিন্তু বাজার পাড়ার দোকান থেকে কেনা যাবে না, দূরের দোকান থেকে কিনতে হবে, শুধু রং কিনলে হবে না দোলের দিন রং মাখবে এর জন্য আমাকে রাজি করাতে হবে, মাকে রাজি করাতে পারলে মা বাকিদের রাজি করিয়ে নেবে ।



দোলের দিন সকাল ১০টার সময় ইন্দ্র, অনিমেষ, সুজিত রং মেখে কেমন দেখাচ্ছে এমন ভুতুড়ে সাজ দেখাতে রহিম কে দেখাতে এসেছিল। কিন্তু রহিম কে দেখে ওরা অবাক হয়ে যায়।এটা কাকে দেখছে ,এতো রহিম মনে হচ্ছে, আজ রহিম ও তাদের মতো রং মেখে বাড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সাথে মুখে সুন্দর হাসি দেখা যাচ্ছে । এমন দৃশ্য দেখে ওরা প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না কারণ আগের দিনে যে বলেছি আমাদের বাড়িতে এসব পছন্দ করে না ,সেই কি না রং মেখেছে। ওদের কে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রহিম বলে- আগে দিন তোরা ভয়ে আমাকে রং মাখাতে চাইছিলি না তাই আজ আমি নিজেই রং মেখেছি, এই দেখ আমিও রং লাগাতে পারি আমি ও বসন্ত ভালোবাসি শুধু তাই না রঙিন হয়ে নতুন সাজে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি। তোরা তো আমার গায়ে রং দিতে ভয় পেয়েছিলি ,পাছে আমার বাড়ির লোক আমাকে বকে তাই আজ তোদের কে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছিলাম ,আজ সব কিছু একটু অন্য রকম করতে চাই।

ইন্দ্র- তোর আজ কি হয়েছে , তোকে এই ভাবে দেখে তোর আব্বু কিছু বলবে না।

রহিম-  তোরা ভেতরে আয় সব বলছি।

তিনজনে ভয়ে ভয়ে রহিমদের বাড়ির ভেতরে যায়, ওরা কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে।

ভিতরে গিয়ে দেখে রহিমের মা ওদের জন্য খাবার সাজিয়ে রেখেছে।

রহিম- আমার মা তোদের জন্য পছন্দের সিমুই বানিয়ে রেখেছে, আজ আমরা একসাথে খাবে।

খেতে খেতে সুমিত সাহস করে জিজ্ঞেস করে- রহিম তোকে আজ কে রং মাখিয়ে।

রহিম- আম্মি ,আব্বু ।

ইন্দ্র- তুই বলেছিলি না, তোদের বাড়িতে ...

রহিম মা - আসলে রহিম কাল থেকে আমাকে রাজি করানো চেষ্টা করেছিল ,ওর আব্বু কে বলার জন্য যদি একটা দিন ওকে বন্ধু দের সাথে রং খেলতে দেয় , কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম ওর আব্বু রাজি হলেও অন্যরা না ও মানতে পারে । আমাদের ধর্মের অনেকেই পছন্দ করে না কিন্তু আজ আমার বলার আগেই ওর আব্বু সব কিছু ভুলে মনের আনন্দে ছেলে কে রং লাগিয়ে দিচ্ছে ,রহিম আজ খুব খুশি  রং মেখে । ওর নানি ও আজ ওকে রং মাখিয়ে দিয়েছে। আসলে সে দিন তোমাদের স্কুলে রং মাখা মাখির দৃশ্য রহিমের বাবা দেখেছিল, সাথে দেখেছিল রহিমের মনমরা মুখ। তখন ওর আব্বু অনুভব করেছে  বসন্তের বাতাস , কোকিলের মধুর ডাক কোনো ধর্মের না সমস্ত মানুষের , তাহলে আমাদের মনকে  কেনই বা রঙিন আনন্দে ভাসাবো না। তাই সব ভুলে এই বসন্তের বাতাসকে আলিঙ্গন করে আজ আমরাও সবার মতো রং আনন্দে মেতে উঠেছি । রহিমের মতো ওর বাবাও গিয়েছে রং খেলতে বন্ধুদের বাড়ি।

এসব কথা শুনে ওদের খুশি দেখার মতো ইন্দ্র আর অনিমেষ রহিমকে আলিঙ্গন করে বলে, চল আজকে তোকে দেখাবো কেমন করে রং মাখতে হয়। ওরা চারজনে রঙিন খেলায় মেতে ওঠে, ধর্মের বিভেদ ভুলে একে অপরকে রং মাখিয়ে দেয় , রং লাগানো মুখ দেখে চেনায় যায় না কে রহিম,কে ইন্দ্র, এখন ওরা সবাই রঙিন ভুতু।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract