Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Classics Inspirational

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Classics Inspirational

ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা - অজন্তা ই

ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা - অজন্তা ই

8 mins
919


প্রাক-কথন


"Afoot and light-hearted I take to the open road,

Healthy, free, the world before me,

The long brown path before me leading wherever I choose.

Henceforth I ask not good-fortune, I myself am good-fortune,

Henceforth I whimper no more, postpone no more, need nothing,

Done with indoor complaints, libraries, querulous criticisms,

Strong and content I travel the open road.

The earth, that is sufficient,

I do not want the constellations any nearer,

I know they are very well where they are,

I know they suffice for those who belong to them.

(Still here I carry my old delicious burdens,

I carry them, men and women, I carry them with me wherever I go,

I swear it is impossible for me to get rid of them,

I am fill’d with them, and I will fill them in return.)"


    ------ by WALT WHITMAN (SONG OF THE OPEN ROAD)


 


      ঠিকই বলেছেন কবি, আমরা কখনওই আমাদের জীবনের সাথে জড়িত থাকা কিছু জিনিসকে ছুঁড়ে ফেলতে পারিনা, আমাদের রোজনামচায় সামিল যারা তারা আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতোই আমাদের সাথে আটকে থাকে প্রতিনিয়ত। আর এই আটকে থাকাই একসময় হাঁফ ধরিয়ে দেয়, বোঝা মনে হয় তাদের, মনে হয় কোনোভাবে যদি পালাতে পারতাম এদের থেকে! কবির মতোই প্রশান্ত চিত্তে যদি একটা মুক্ত সজীব পথ ধরে পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যেতে পারতাম, তাহলে কতো না ভালোই হত। কিন্তু বাস্তবে তো তেমনটা সম্ভব না, তবুও আমরা আমাদের ওই দৈনিক রুটিনের বেড়াজাল থেকে কিছুটা সময় চুরি করে মাঝেমাঝেই বেরিয়ে পড়তে পারি আমাদের হৃদয়টাকে খানিক স্বস্তি দিতে। এমনই এক সময় চুরি করতে পেরেছিলাম এ বছর পুজোর সময়। সপরিবারে গিয়েছিলাম মহারাষ্ট্র-গোয়া। 


                 ★★★★★


প্রস্তুতি পর্ব


---- গোয়া যাবি! মা বাবার সাথে!

---- মুম্বাই যাবি মা বাবার সাথে!


   সমীর আর টিয়ার এমন আঁতকে ওঠার কারণটা ঠিক বুঝতে পারল না তাতাই। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই, তার ওপর ওদের এই অতি নাটকীয়ভাবে আঁতকে ওঠাতে বেশ বিরক্তিই লাগলো তাতাইয়ের,

---- কেন কি সমস্যা?

---- আরে বাবা বম্বে গোয়া হল প্রেম করার জায়গা আর সেখানে তুই যাবি মা বাবার সাথে!! তুই কি মানুষ রে!!!

---- আমি এমনই, আপাতত মা বাবার সাথে ছাড়া অন্য কারুর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারিনা।


   কলেজ থেকে ফিরেও মনটা ভার হয়ে ছিল তাতাইয়ের। কত পড়া, কত খাতা লেখা জমে আছে! আজ বাদে কাল ষষ্ঠী। সবাই যখন পুজোতে আনন্দ করবে তখনও তাতাইকে বই খাতা সামনে নিয়ে বসে থাকতে হবে। আগেকার পদ্ধতিই ভালো ছিল, বছর শেষে একটা পরীক্ষা, তাতে বছরের কয়েকটা দিন মিস গেলেও কোনো সমস্যা হতনা। কিন্তু এই সেমিস্টার সিস্টেম বড়ই বালাই। তাতাইয়ের মনে হয় যেন একটা সেমিস্টার দিয়ে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই আরেকটা সেমিস্টার হাজির হয়ে যায়। এ বছর বাবা ট্যুর প্ল্যান করার আগে তাতাইকে জানালেন না অবধি, সব কিছু রেডি করে পেমেন্ট করে দেওয়ার পর সব শুনলো তাতাই। শুনেই সে অনুযোগ করেছিল, 

---- আমাকে একবার জিজ্ঞেস করতে পারতে অন্তত।


---- জিজ্ঞেস করলে কি বলতিস? 


---- আমি যেতাম না। মাসিমণি বা পিসিমণি কারুর বাড়িতে রয়ে যেতাম।


---- কুড়ি দিন ওদের বাড়িতে থাকতিস?


---- কুড়ি দিন!!! তোমরা কি পাগল হলে নাকি? এতদিন ঘুরলে পড়া সামলাবো কি করে!


----পড়া যাতে ভালো করে সামলাতে পারিস, তাই তো বেড়াতে যাওয়া। দেখবি ঘুরে আসার পর মনটা ভালো হয়ে গেছে।


---- ধুরর, বেড়াতে গিয়েও কোনো এনজয় করতে পারবো না জানি। মাথায় সবসময় ঘুরতে থাকবে খাতা তৈরি করার চিন্তা।



ভ্রমণ ডায়েরি


কোনোভাবেই বেড়াতে যাওয়াটা এড়ানো গেল না। তার ওপর তাতাইরা যাচ্ছে ভারতের সবথেকে কস্টলি জায়গাগুলোতে কাজেই এক্ষেত্রে বায়না করে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল করা মানে বাবাকে বিপদে ফেলা ছাড়া কিছুই নয়। তারিখটা ১২ ই অক্টোবর, ২০১৯। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসে চড়ে বসল তাতাইরা, গন্তব্য জলগাঁও। ব্যস্ততার চোটে এ বারে বাবার কাছে ট্যুর প্ল্যানটাও জানা হয়নি, তাই কোথায় কোথায় যাওয়া হবে না যাওয়া হবে সেটাও সে জানেনা। ট্রেনের সময় ছিল রাত্রি দশটা কুড়ি, সে জায়গায় ট্রেন এলো প্রায় এক ঘন্টা লেটে। তাতাই ভাবল যে যাত্রার শুরুটাই এতো খারাপ সে যাত্রা কেমন হবে কে জানে! তার ওপর এসি কোচের ওই কাঁচের জানালাটা বড় অসহ্য লাগে তাতাইয়ের। মনে হয় যেন কেউ ওকে জোর করে বাইরের পৃথিবীটা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। পৃথিবীটাকে ও দেখতে যাচ্ছে, কিন্তু ছুঁতে পারছে না। নামার কথা পরের দিন রাত ন'টা পঞ্চাশে। এই ট্রেন যাত্রার সময় সন্ধ্যে নামলেই ভীষণ অস্বস্তি করে তাতাইয়ের, কোথাও কিছু দেখা যায়না, অন্ধকারের বুক চিরে ট্রেনটা ছুটে চলে দুরন্ত গতিতে।


   যাইহোক, ১৩ই অক্টোবর রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তাতাইরা পৌঁছালো জলগাঁও। ট্যুর কোম্পানির লোকেরা আগের থেকে হোটেলে পৌঁছে খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত করে রেখেছিল। তাতাইরা হোটেলে ঢুকতেই মিলল গরম গরম বাঙালি খাবার--- ভাত, ডাল, ফুলকপির ডালনা, মাছ ভাজা আর পাঁপড় ভাজা। খাবারটা খেয়ে পেটটা যেন জুড়োলো খানিক। খাওয়া শেষ হতেই ট্যুর ম্যানেজার বললেন, "কালকে আমাদের গন্তব্য ইলোরা কেভস…"

ম্যানেজার কাকু আরও অনেক কিছু বলে যাচ্ছিলেন কিন্তু সেসব যেন কানে ঢুকলো না তাতাইয়ের, সে ফিসফিস করে বাবাকে বলল,

---- বাবা ইলোরা!

---- হুমম।

তাতাইয়ের যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না, সেই ইতিহাসে পড়া অজন্তা ইলোরাকে ও ছুঁয়ে দেখতে পারবে! 


   ১৪ই অক্টোবর সকাল সকাল এসি বাসে চড়ে শুরু হল ইলোরার উদ্দেশ্যে যাত্রা। পথে বসেই গুগল করে তাতাই জেনে নিন ইলোরার সম্পর্কে কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদ জেলার থেকে ১৮ মাইল দূরত্বে অবস্থিত হচ্ছে ইলোরার গুহাগুলি। এই গুহার বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে তিনটি পৃথক ধর্মের স্থাপত্য দেখা যায়--- বৌদ্ধ, হিন্দু এবং জৈন। তার মধ্যে বৌদ্ধ গুহাগুলি হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন যেগুলি আনুমানিক ৫০০ থেকে ৭০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। আর সবচেয়ে নবীন হচ্ছে জৈন গুহাগুলি। 


  যাওয়ার পথেই ঘ্রিষণেশ্বর মন্দির দর্শন হল। ভারতে অবস্থিত বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলায় অবস্থিত এই ঘ্রিশনেশ্বর মন্দির। মন্দির দর্শন ও দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটতেই কিছু পরেই বাস এসে উপস্থিত হল তাতাইয়ের বহু প্রতীক্ষিত গন্তব্যে--- ইলোরা, UNESCO স্বীকৃতি একটি "WorldHeritage Site"। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকতেই বেশ অনেকটা দূরে নজর পড়ল প্রাচীনত্বের গন্ধ মাখা একটা সুবিশাল গুহায়--- পাঁচ নম্বর গুহা। সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল তাতাইয়ের। অবশেষে ওর চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে ইতিহাসকে! পাঁচ নম্বর গুহা হচ্ছে এখানকার গুহাগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় এবং সব থেকে শৌখিন। "১১৭ ফুট×৫৬ ফুট" এই গুহা আদপে একটি বৌদ্ধ বিহার। ২৪ টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই স্থাপত্য। এখানে বুদ্ধদেবের মূর্তি, উপাসনা কক্ষ থেকে শুরু করে সারিবদ্ধভাবে হাতি সহ অন্যান্য আরও অনেক পশুর মূর্তি রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আক্রমণে আর প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে ক্ষয়েও গেছে অনেক কিছু। মূর্তিরগুলোর গায়ে হাত রাখতেই কেঁপে উঠছিল তাতাই। ভাবতেও অবাক লাগছিল এতো যুগ আগে এভাবে একেকটা বিশাল পাথরকে কেটে কেটে এমন সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ নিখুঁত কারুকার্য করা হয়েছে!!! ১ থেকে ১২ নম্বর গুহা হচ্ছে বৌদ্ধদের স্থাপত্য। সঙ্গী অনেকেই পাঁচ নম্বর গুহা দেখতে দেখতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু তাতাই আর বাবা ঘুরে ঘুরে বাকি প্রতিটা গুহা দেখলেন। সেগুলো পাঁচ নম্বর গুহার তুলনায় অনেকটাই ছোটো। গুহাগুলোর কোনোটা বৌদ্ধ চৈত্য, আবার কোনোটাতে রয়েছে বুদ্ধদেবের বিভিন্ন আসনে বসা মূর্তি। 


   পরবর্তী ষোলটি গুহা হিন্দু ধর্মের স্থাপত্যের সাক্ষ্য বহন করছে। প্রতিটা গুহাতেই মূলত শিব পার্বতীর মূর্তি বা তাদের নিয়ে ছোটো ছোটো গল্প মূর্তির আকারে গুহার দেওয়ালে খোদাই করা রয়েছে। 


   বৌদ্ধ ও হিন্দু গুহাগুলোর থেকে প্রায় এক কিলোমিটারেও বেশি দূরে রয়েছে জৈন গুহাগুলি। এগুলি সংখ্যায় অল্প, ৩০ নম্বর থেকে ৩৪ নম্বর গুহা। ওখানকার বাস সার্ভিসের মাধ্যমে এই গুহার কাছে পৌঁছাতে হয়, হেঁটে যাওয়া যায়না। ৩০ নম্বর গুহাটি অনেকটা ১৬ নম্বর গুহার আদলে তৈরি, এর নাম "ছোটো কৈলাস"। এই গুহার ছাদে পদ্ম ফুলের সূক্ষ্ণ কারুকার্য সত্যিই মুগ্ধ করে। বাকি গুহাগুলিতে খোদাই করা রয়েছে বিভিন্ন জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তি, ইন্দ্র দেবের মূর্তি, ইন্দ্র সভা ইত্যাদি। 



   পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই অক্টোবর তাতাইদের গন্তব্য ছিল অজন্তার গুহা চিত্র। জলগাঁও থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অজন্তার গুহাগুলি মূলত বৌদ্ধগুহাচিত্র। এগুলি খ্রিস্টের জন্মের আগে তৈরি হয়েছিল। সেই অর্থে ইলোরার থেকে অনেক প্রাচীন অজন্তার গুহাচিত্রগুলি। এখানে মোট ৩০টি গুহা থাকলেও তার মধ্যে অনেকগুলি গুহার কাজই অসম্পূর্ণ। মোট ষোলটি গুহাতে রয়েছে দেওয়াল চিত্র, তার মধ্যে ১,২,১৬,আর ১৭ নম্বর গুহার কাজ সত্যিই মুগ্ধ করে। দেওয়ালের গায়ে আটকানো সাদা প্লেটের ওপর রঙিন ছবির মাধ্যমে একেকটা গল্প খোদাই করা। যত দেখছিল তত বিস্ময়ে অভিভূত হচ্ছিল তাতাই। অত যুগ আগে কিভাবে এমন সূক্ষ্ণ কাজ সম্ভব! তখন তো এতো আধুনিক যন্ত্রপাতিও ছিলো না, কিছু না! ১৯ নম্বর গুহা থেকে শুরু হয়েছে ভাস্কর্য, এখানকার গুহাগুলির সাথে ইলোরার কাজের অনেকটা মিল রয়েছে। ১৯, ২৬ আর ২৯ নম্বর গুহা হল চৈত্য এবং বাকিগুলি বিহার। অজন্তার গুহাগুলি কিন্তু ইলোরার মত সমান জায়গায় নেই, এখানে পাহাড়ি পথের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হচ্ছিল একটার পর একটা গুহায়। ১৬ নম্বর গুহার পর চড়াই দেখে ক্ষান্ত দিলেন অনেকেই। তাতাই আর বাবা দুজনে চড়া রোদের মধ্যেও এগিয়ে চলল। বাবার একটাই বক্তব্য, "আর কোনোদিনও আসতে পারব কিনা জানিনা, এসেছি যখন তখন দেখেই যাবো। কোনো আফসোসের জায়গা যেন না থাকে।"

  কাজ চলছিল বলে ১৭ আর ১৮ নম্বর গুহা বন্ধ ছিল। ১৯ নম্বর গুহায় পৌঁছাবার পথে পাহাড় থেকে নিচের দিকে তাকাতেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল তাতাইয়ের। খাদের মধ্যে সবুজ বনানীর সমাহার, রংবেরঙের ফুল ফুটে আছে সেখানে, ছোট্ট উচ্ছল ঝর্ণার জল নামছে তার আপন গতিতে, খাদের ওপর দিয়েই একটা কাঠের সেতু বাঁধা রয়েছে। কারা ওই পথে যায় কে জানে! একপাশে প্রাচীনত্বের গন্ধ আর অন্যপাশে প্রকৃতির অপরূপ শোভা। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে ভেবেই পাচ্ছিল না তাতাই। বাবার তাগাদায় সম্বিৎ ফিরল। ১৯ নম্বর গুহার সামনে আরও চমক অপেক্ষা করছিল ওদের জন্য। এই গুহার বাইরের কারুকার্যই দেখার মত, ভেতরের রয়েছে বুদ্ধদেবের মূর্তি সহ গুহার দেওয়ালে খোদাই করা চিত্র, স্তম্ভ। ১৯ নম্বর গুহা দেখা শেষ করে এগোলো তাতাই আর বাবা। ওরা যত এগোচ্ছিল লোকজনের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় নেই হয়ে গিয়েছিল। বেশিরভাগ মানুষই এই প্রচন্ড রোদে চড়াই রাস্তায় ওঠার ধকল নিতে পারছিলেন না। এতদূর এসে তাতাইয়েরও কষ্ট শুরু হয়েছিল খানিক। বাবা ইশারায় দেখালেন শেষের দিকের গুহাগুলো বন্ধ তাই আর মাত্র কয়েকটা গুহা রয়েছে বাকি। অতএব এগোলো তাতাই। দেখতে দেখতে সব শেষে পৌঁছালো ২৬ নম্বর গুহায়। আর এখানে ঢুকেই তাতাইয়ের সব ক্লান্তি যেন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল। সত্যিই এখানে না ঢুকলে কি জিনিসের থেকে যে বঞ্চিত হত বলার নয়। অন্যান্য স্থাপত্যের মাঝেই এখানের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল ২৩ ফুট দৈর্ঘ্যের বুদ্ধদেবের শায়িত মূর্তি--- মহাপরিনির্বানে বুদ্ধ। নিজের অজান্তেই বুকের কাছে দুটো হাত জড়ো হয়ে গেল তাতাইয়ের, মনে হল এতো কষ্ট, ক্লান্তি সব সার্থক হয়ে গেল বুদ্ধদেবের এমন মূর্তির দর্শন পেয়ে। বিশাল দৈর্ঘ্যের মুর্তিটা মায়ের জন্য ক্যামেরা বন্দি করে আনবে ভেবেছিল তাতাই কিন্তু সম্ভব হলোনা, বিশাল দৈর্ঘ্য আঁটলো না ক্যামেরার লেন্সে। সে হোক, এই অপূর্ব কীর্তি মনের ক্যামেরায় বন্দি করে আবার নীচের দিকে নামতে শুরু করল তাতাইরা। 



    অনেকখানি ক্ষয়ে গেছে, কিছুটা আবার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলার জন্য বন্ধ, তবুও যেটুকু ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়েছিল তাতেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল তাতাইয়ের। সে কোনোদিনও ভাবেনি এমন করে ইতিহাসকে ছুঁতে পারবে বলে। ওই গুহা… তার মধ্যে ওই সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ কারুকাজ, এসব ছুঁয়ে চোখ বন্ধ করলেই তাতাই যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিল হাজার হাজার শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালে ওই উঁচু উঁচু গুহায় বসে ছেনি হাতুড়ি নিয়ে ঠুকঠুক করে কাজ করে চলেছে নিরলস ভাবে। ইতিহাসের পাতায় তো আমরা শুধু রাজরাজড়াদের বাহবা দিই। বলি অমুক রাজা তৈরি করেছিলেন… কিন্তু সত্যিই কি রাজা তৈরি করেন! হ্যাঁ রাজরাজড়ারা বিপুল ধন সম্পদের অধিকারী, তারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন, অর্থের বিনিময়ে হাজার হাজার মানুষকে কাজে নিযুক্ত করেন; হয়তো রাজারা না থাকলে এমন অপূর্ব শিল্পের সৃষ্টিও হত না। তাই ইতিহাস রাজাকে মনে রাখে, কিন্তু সেই মানুষগুলো যারা সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিবারাত্র অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই রাজার পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেন, তাদের আমরা ভুলে যাই, ইতিহাস তাদের নাম লেখে না কোথাও। 


    মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলা… যার উপকন্ঠে রয়েছে দু দুটো World Heritage Site, জেলাটা ছেড়ে বেরোবার সময় তাতাই বাবাকে একটা ধন্যবাদ জানালো, আজ বাবার জন্যই ওর একটা স্বপ্ন সত্যি হল, আজ বাবার জন্যই ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে পারল ও। সেই সাথে ও সেই সমস্ত শ্রমিক তথা শিল্পীদের উদ্দেশ্যে মনে মনে প্রণাম জানালো ইতিহাস যাদের ভুলে গিয়েছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics