Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Prerona Goswami

Romance

3.4  

Prerona Goswami

Romance

ম‍্যাজিক অফ লাভ

ম‍্যাজিক অফ লাভ

10 mins
16.4K


রঞ্জনা আর থাকতে চায় না ঋষির সাথে।যেই মানুষটা ওকে একটুও বোঝেনা তার সাথে থেকে কি লাভ!আকাশে অস্তগামী সূর্যের লাল আভার দিকে তাকিয়ে মনে মনেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল,"আমাদের মাঝে সব শেষ,নাকি কোনোদিন কিছু ছিলই না!হাতে হাত ধরে বছর সাতেক আগে যে নতুন দিনের সূর্যোদয়কে সাক্ষী রেখে এগিয়েছিলাম আজ সেই সূর্যই কি অস্তগামী পশ্চিমাকাশে!"ও কি এই বাড়ির বউ ছাড়া আর কিছুই নয়!আলাদা করে ওর নিজের কিছু দাবি,প্রত‍্যাশা থাকতে পারে না!সবটাই কি তবে শুধুই ঋষিকে ঘিরেই!

ঋষির পরিবারে এসে একা হাতে সব সামলেছে ও।যেই মেয়ে সিন্থেটিক শাড়ি পরতেই হিমশিম খেত,বারবার হোঁচট খেত বিয়ের আগেও, সেই মেয়েই শাশুড়ির মন রাখতে ভারী কাঞ্জিভরম পরে সত‍্যনারায়ণ পূজোর জোগান দিয়েছে নিপুণভাবে।যেই মেয়ে বিয়ের আগে খাটে বসেই বলত,"মা জলটা দাও তো",সেই মেয়েই সকালে উঠে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে "বেড টি" দিয়েছে।যেই মেয়ে রাত ১০টাতেও কোনো কারণে বাড়ি ঢুকলে জবাবদিহির সম্মুখীন হয়নি সেই এই বাড়িতে এসে সন্ধ্যার পর একা বেরোয়নি কখনো,গেলে ঋষির সাথেই গেছে কখনো।যেই মেয়ে কলেজে পড়তে পড়তেও নাচের সপ্তম বর্ষ শেষ করতে গিয়ে আপোষ করেনি নিজের স্বপ্নের সাথে, সেই মেয়েই বাড়িতেও দুটো নাচের ক্লাসের অনুমতি পায়নি এ বাড়ি এসে।শুনতে হয়েছিল,"নাচিয়ে হবে নাকি!এ বাড়িতে ওসব চলেনা।"এমন আরও কত কি আছে তার হিসেব করা বৃথা।তারপরও শাশুড়ির মুখে শুনতে হয়,"বাড়িতে থেকে করো কি!","বেকার বাড়ি না বসে দুটো বাচ্চা পড়াতেও তো পারো!"রঞ্জনা শুধু এটাই বোঝাতে পারে না যে ও তো দুটো বাচ্চাকে নাচও শেখাতে পারত!ঋষির হয়তো রাতের আদরেই সব শেষ তবে ও যে সারাদিনের ছোটোখাটো কথাগুলোও কাউকে বলার জন্য মুখিয়ে থাকে!সেগুলো শোনার সময় ঋষির ব‍্যস্ত সকালেও হয় না,ক্লান্ত রাতেও হয় না।রঞ্জনাও চায় আইনক্সে একটু সিনেমা দেখতে যাবে,গঙ্গার ধারে গিয়ে সন্ধ্যের প্রাণবায়ুটা শুষে নেবে নিশ্বাসে,যখন ও ক্লান্ত হবে বা কষ্ট পাবে তখন ওর কপালে চুমু এঁকে বুকে টেনে নেবে সুঠাম পুরুষালি দুটো হাত।না,আর কারো থেকে নয় তো!নিজের একান্ত কাছের মানুষের থেকেই তো এগুলো চায়।সমাজও ঠিক যার থেকে চাওয়ার অধিকার দিয়েছে সেই পুরুষের থেকেই।তবে ওর দোষ কোথায়!

অন্তর্দ্বন্দ্বে এমন কত রজনী কেটেছে ওর নির্ঘুম; তার হিসেব পাওয়া যায় না।

ঋষি অফিস বেরিয়ে গেলে রঞ্জনা ঘরের কাজ করতে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে।হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে ছেদ পড়ে।রঞ্জনা তমালিকে দেখে আনন্দে প্রায় নেচেই ওঠে।তমালি সেই ছোট্ট থেকেই ওর প্রাণের বন্ধু।তবে কলকাতা থেকে সুইজারল্যান্ডে যোগাযোগ রাখাটা অতটাও সহজ তো আর নয়।কথাবার্তা বেশ হয় তবে সামনাসামনি আড্ডার মধ্যে আগলহীন এক স্বাধীনতা থাকে যেটার অভাব ওরা দুজনেই উপলব্ধি করতে পারে বেশ।আলিঙ্গনপর্ব শেষ করেই দুই সখীতে খুব গল্প শুরু হল।

তমালি: তোর মুখটা ওমন ফ‍্যাকাশে লাগছে কেন রে!ভালো করে ঘুমাস না নাকি?

রঞ্জনা: ধুর,সারাদিন ঘুমাই।কাজ আর কি আমার বল তো!কাজের লোক আছে, শুধু রান্নাটাই যা করি।

তমালি: আহা রে,তবে আর কি।আমরা উটি যাওয়ার প্ল্যান করছি।চল না ঘুরে আসি।একসাথে ভীষণ মজা হবে।তোর অনেকদিনের শখ,আমি কিন্তু জানি।

রঞ্জনা: ধুর,এখন কি আর সেইসব দিন আছে নাকি!কখনো নন্দন তো কখনো বইপাড়া আবার কখনো বাবুঘাট....উফ কি মজাই না করেছি বল!ভাবতেও আনন্দ লাগে।

তমালি: তাই!আর তোর মনে পড়ে না বল যে আমাদের লেজকাটা বাঁদরগুলো মনের সুখে হিল্লিদিল্লি বেড়াতো, শুধু আমরাই পারতাম না।আমি তো তবুও মেসে থাকতাম বলে একবার দুদিনের জন্য দীঘা বেড়িয়ে এসেছিলাম।তুই পেরেছিলি বল!

রঞ্জনা: না,তা ঠিক।পারিনি আমি।রাতের বাড়ির বাইরে থাকব সেটা বাবা-মা তো দূর আমিই ভাবতে পারিনি তখনো।

তমালি: তবে বল আমরা মেয়ে বলে আমাদের ঘুরতে যাওয়াও মানা।বিয়ের আগে কি বিয়ের পর,আমরা মানুষ না! আচ্ছা আমরা মেয়েরা যখন আমাদের বরেদের বিশ্বাস করতে পারি,ওরা ঠিক কেন পারেনা বলতে পারবি!

রঞ্জনা: ধুর,জানিনা আমি।তুই একটুও পালটাসনি এখনো।কথায় এমন মাতালি যে চা টুকুও আনা হল না।

তমালি: এখন আবার উঠে যাবি!বেশ,চল আমিও রান্নাঘরে গিয়ে বকবক করে তোকে উৎসাহ দিই।

রঞ্জনা(মুচকি হেসে): আচ্ছা বাবা,চল।

রান্নাঘরে...

তমালি: আচ্ছা,ঋষিকে বল না ছুটি নিতে দিন চারেক।তবে আমরা দুই বন্ধুতে মিলে একবার তো অন্তত ঘুরতে যেতে পারি।

রঞ্জনা ভালোই জানে ঋষির ওকে ছাড়া চলেনা।রাজি হবে কি!সেই হানিমুনে সিকিম গিয়েছিল কবে,তারপর আর কোথাও যায়নি ওরা একসাথে।ঋষি কেমন যেন উদাসীন হয়ে গেছে আজকাল।মুখে শুধু বলল,"হুম,বলব"।

রঞ্জনা: ঋষি তোমার সাথে একটু কথা ছিল!

আজকাল অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হয় ওকে!নিজের কাছেই বড় অচেনা লাগল নিজের সুর।

ঋষি: হুম,বলো।

-সুইজারল্যান্ড থেকে তমালি এসেছে কলকাতায়,ওর জ‍্যাঠা শ্বশুরের বাড়িতে।ও বলছিল কদিনের জন‍্য যদি আমরাও ওর সাথে ঊটি,মাইসোর এগুলো ঘুরতে যাই তো কেমন হয়!যাবে?

-আমার এখন কাজের খুব চাপ রঞ্জনা।তুমিই যাও না।আমি তো তোমাকে নিয়ে ঘুরতেও যেতে পারিনা।অফিস ট‍্যুরে তোমায় নিয়ে যাওয়া যায় না আসলে।তুমি যাও,তোমার ভালো লাগবে।

রঞ্জনা: তোমাকে ছাড়া তো কোথাও!

ঋষি: হ‍্যাঁ,যাওনি জানি।তবে এখন মা বাড়ি থেকে যাওয়ার পর তোমার তো ঝাড়া হাত-পা।আর তো কেউ বাধা দেবে না।

রঞ্জনা চুপ করে থাকল।আর কিছু বলল না।কথাটা ওর ভালো লাগেনি।ঝাড়া হাত-পা মানে!মা-বাবা কখনো বাধা হয় নাকি!হলেও শাশুড়ি,ও তো মায়ের নজরেই দেখত।রঞ্জনা চেয়েছিল ঋষি বলুক "যেও না,আমরা পরের মাসেই কোথাও গিয়ে ঘুরে আসব"।

ঋষির দেওয়া এই স্বাধীনতাগুলো ওর অবহেলা মনে হয় আজকাল।

ফোনে রিং হচ্ছে....

তমালি: হ‍্যালো।

রঞ্জনা: কবে যাবি বলছিলি!

-ঊটি!

-হ‍্যাঁ।

-কাল।

-আচ্ছা,আমিও যাচ্ছি।

-মানে!আর ঋষি দা!

-না,আমি একা।

-সে কি!কেন রে?

-শুধু আমি গেলে যাবি না তাই তো!আচ্ছা রাখি তবে।

-ধুর,হনু।সেটা বললাম আমি?

-বল কটায় যেতে হবে স্টেশন!

-ঠিক সকালে পৌনে পাঁচটায়।

-আচ্ছা।রাখি তবে।

-আর একটু টিফিন করে আনিস তো!আমি ভোরে উঠতে.....

-আনব।রাখি।

বিপ....বিপ.....বিপ.....

ফোন বাজছে.....

সমার্পণ: হ‍্যালো।

রঞ্জনা: আমি রঞ্জনা।

-বলো দিদি,তিস্তাকে ফোন দেবো?

-না,তিস্তা বলছিল যে তোদের কোম্পানিতে রিসেপশেনিস্ট দরকার?

-উমম,হ‍্যাঁ।কেউ আছে তোমার চেনা জানা?

-আমিই করব।নেক্সট মানডে জয়েন করলে হবে?

-ওকে,তাই হবে।তবে তুমি অনেক ভালো চাকরি পেয়ে যেতে গো।

-এখন আমার এই চাকরিই দরকার।ভালো পরে খুঁজে নেবো।

রঞ্জনা ঋষিকে ছেড়ে দেবে ঠিক করেই একটা নোট লিখতে বসল।

“ঋষি অবহেলার এ জীবন আমি আর সহ্য করতে পারছি না।আমি এখন তোমার কাছে বিছানার অভ‍্যাস ছাড়া আর কিছুই না।তাই তোমার দীর্ঘ প্রত‍্যাশিত মুক্তি দিলাম আজ.....”

রাতে ঋষি ফিরে যখন শুনল রঞ্জনা তমালির সাথে যাচ্ছে তখন বেশ খুশিই হল।রঞ্জনার শুধু হঠাৎ মনে হল,"তবে কি অভ‍্যেসটুকুও নয় ও ঋষির!"কোনো খারাপ কথা বলেনি ঋষি,কখনো গায়ে হাত তোলেনি, উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলেনি....হয়তো আশপাশের পাঁচটা মানুষ ওদের আদর্শ ভাবে।অথচ সেই সম্পর্কই বহন করতে পারল না রঞ্জনা!

মনে মনেই ভাবল,"তবে হয়তো ও সত‍্যিই অযোগ‍্য স্ত্রী।"

ট্রেন ছুটে চলল....তীব্র অভিমানে রঞ্জনা ফোনটাও অফ করে দিল।কে বা আছে ওর খবর নেওয়ার!বাবা তো ছোটোবেলাতেই মারা যায়।মা ও এক বছর আগে চলে গেল ক‍্যান্সারে।যদিও একটা ফোন তাও আসবে।ও যে বেরোনোর আগেই নোটটা ঋষির আলমারিতে একদম সামনেই রেখে এসেছে।

তমালি আর স্বপ্নীল খুনসুটি করছে দেখে রঞ্জনা উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসটুকু গিলে নিল।এতে তমালির অমঙ্গল হোক তা ও চায় না।বরং গল্পের বই বের করতে ব‍্যাগে হাত দিল।হাতে ডায়েরীটা এল আগে।কিন্তু এটা ওর ডায়েরী তো নয়!সে কি!ঋষির ডায়েরী ওর ব‍্যাগে কি করে!নিজের ডায়েরীটাও হাজার খুঁজে পেল না।এই ডায়েরীটা কখনো ঋষি ওকে দেখায়নি,সবসময় লকারে রাখত।খুলবে কি!খোলাটা কি ঠিক!সেই মানুষটার উপর ওর কি অধিকার আছে আর!ভাবতে ভাবতেই শেষে খুলে ফেলল ডায়েরীটা....

১৩:০৮:২০১০

“আজ অগ্নিকে সাক্ষী রেখে নিজের প্রেমিকাকে বৌ হিসাবে পেলাম।আমার রঞ্জনা আজ থেকে শুধু আমার।”

তাই তো....রঞ্জনা তো ঋষির প্রেমিকাই ছিল এককালে।৫ বছরের প্রেমে ঋষি কোনোদিন অবহেলা দেয়নি তো ওকে।

১৫:০৯:২০১০

“শরীর-মনের সমস্তটুকু দিয়ে রঞ্জনা আমায় পূর্ণ করেছে।ঈশ্বরের দূত এসেছে আমার জন‍্য....সাক্ষাৎ পরী।”

পরী!এত সুন্দর ও!রঞ্জনার মনে পড়ে গেল সেইসময়টার কথা।তখন ঋষি রোজ বলত,"তুমি এত সুন্দর হলে কি করে!",

"আমার দেখা সবথেকে সুন্দরী তুমি"।ঠোঁটের কোণে একফালি হাসি খেলে গেল।

১৬:১০:২০১০

“আমি প্রোমোশন পেলাম আজ।রঞ্জনার জন‍্যই সব।ও আমার জন‍্য ভাগ‍্যদেবী হয়ে এসেছে।”

রঞ্জনার মনে পড়ল কলেজের কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচেই তো ঋষি ওকে বলেছিল ও নাকি ঋষির জীবনের "সবথেকে ভালোটা"।

বেশ কিছু পাতা উল্টে...

১৭:০৪:২০১২

“মা যখন রঞ্জনাকে খারাপ কথা বলে তখন আমার খুব খারাপ লাগে।তবুও আমি কিছু বলতে পারিনা।রঞ্জনা হয়তো কোনোদিন জানবে না কারণ।জানবে না উনি আমার নিজের মা নয়।আমার বাবার বৌ হয়েও উনি আমায় যেভাবে ভালবেসেছেন সেভাবে হয়তো কেউ পারবে না।তাই রঞ্জনার সবসময় ভুল না হলেও ওকে আড়াল করে দাঁড়াতে পারিনি আমি।”

রঞ্জনার মনে পড়ছে ওর শাশুড়ি ঋষির সাথেও বেশ দূরত্ব রেখেই চলত।শুধু ঋষিই মা বলতে পাগল ছিল।ওর শাশুড়ি তো ঋষিকে 'Investment' ভাবত।সুদেআসলে গুনে নিয়েছিল সত‍্যিই।

১৬:০৮:২০১৪

“আমি বাবা হতে চলেছি।একটা ছোটো প্রাণ পৃথিবীর আলো দেখবে ৯ মাস পর,যে আমায় বাবা বলে ডাকবে।সারা পৃথিবীর খুশী এনে দেব ওর পায়ে।”

রঞ্জনার মনে স্মৃতির মেঘ সরে ধরা দিল সেই দিনটা।এত খুশি হয়েছিল ঋষি যে সেদিনই বাচ্ছাদের পোস্টার ছবি আর জামা-কাপড় কিনে এনেছিল।আনন্দে যেন মাটিতে পা পড়ছিল না ওর।

১৮:০৯:২০১৪

“আমার খুব ভয় করে আজকাল।সারাদিন আমি বাড়িতে থাকিনা।রঞ্জনা আর ছোটো সোনাটার জন্য খুব ভয় করে আমার।আমার শুধু মনে হয় মা রঞ্জনার ক্ষতি করতে চায়।রঞ্জনাও বলেছে মা ওকে পছন্দ করে না।”

রঞ্জনার মনে পড়ছে একদিনের কথা।ওর শাশুড়ি ওকে পাকা পেঁপে কেটে দিয়ে গিয়েছিল।একটা মুখে দিয়েছিল সবে ঋষি এসে ট্রে ফেলে দিয়েছিল।খুব আস্তে আস্তে বলেছিল এটা খেলে বাচ্ছা নষ্ট হতে পারে।রঞ্জনা অনেক রাগ করেছিল সেদিন।বারবার বলেছিল ঋষিকে মা'র কাছে গিয়ে কিছু অন্তত বলতে।কিন্তু ও নির্বাক ছিল সেদিন।বরং তারপরই রমলা দিদিকে নিয়ে আসে ওর দেখাশোনার জন‍্য।

১৪:১১:২০১৪

“আমরা আমাদের বাচ্ছাকে হারালাম।রঞ্জনা সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল।রমলাও ছুটি নিয়েছিল।মা মন্দিরে গিয়েছিল।মাটিতেই অনেকক্ষণ কাতরেছে যন্ত্রণায় আমার রঞ্জনা।”

রঞ্জনার চোখে জল এসে গেল।ঐ দূর্ঘটনার পর থেকেই ঋষি বদলে যেতে থাকে।ক্রমশ আরো উদাসীন হতে থাকে।হয়তো ঐ কষ্টটা মেনে নিতে পারেনি ও!তবে কি রঞ্জনাকেই দোষী ভেবেছে!

২২:১১:২০১৪

“রঞ্জনার মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা আজকাল।ওর কি দোষ ছিল!আমার মা আমাদের সন্তানকে মারতে পারে এটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।রমলাকে ইচ্ছে করে ছুটি দেওয়া, সিঁড়িতে তেলের উপস্থিতি বলছে সব সত‍্যিটা।আজ মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলাম।এক বাড়িতে থাকা সম্ভব নয় আর।আমার রঞ্জনাও ভুল বুঝেছে আমায়।”

রঞ্জনার চোখে জল নেমে এল।কোনোমতেই তা বাঁধ মানছে না।সেদিন ওদের ঝগড়া হয়েছিল খুব।রঞ্জনা চায়নি একা বাড়িটা ওকে গ্ৰাস করুক।সেদিন ও বোঝেইনি যে কেন ঋষি মাকে রেখে এসেছিল।

১২:০৮:২০১৫

“রঞ্জনা আমার কাছে আসতে চায়।আমার পাপবোধ আমায় আটকে রাখে ওর কাছে যেতে।ওর চোখের দিকে তাকাতে পারিনা।নিজের উপর ঘৃণা ধরে যায়।সত‍্যটা জানলে রঞ্জনা আমায় কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবে না।চেয়েও পারি না বলতে।ওকে হারাতে চাই না আমি।”

রঞ্জনার খুব কষ্ট হচ্ছে।ঋষিকে ও কি এই ভালবাসত যে ওর যন্ত্রণাটা একবারের জন্যও অনুভব করতে পারল না ও!আজ রঞ্জনার নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে।

১৭:০৯:২০১৬

“আমি নিজেকে কাজের মধ্যেই ডুবিয়ে নিয়েছি।ব‍্যস্ততায় আড়াল করেছি আমাদের কাছে আসার মূহুর্তগুলোকে।রঞ্জনাও এখন এই পরিবর্তনেই অভ‍্যস্ত হয়ে গেছে।হয়তো মনে মনে খুব ঘৃণা করে আমাকে।করুক,তবুও দিনের আলোয় হাতে হাত রেখে সাহস দিতে পারব না।ও বুঝে যাবে আমি ওর শিশুর হত‍্যাকারী।যদি আগেই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসতাম তবে মা এত বড় অনিষ্ট করতে পারত না।”

রঞ্জনার মনে পড়ে গেল ও ওর শ্বশুরের উইল দেখেছিল।সব সম্পত্তি ঋষির নামে ছিল।তবে ও নিজেই সেটা ভাগ করে তনুজকে দিয়ে দিয়েছিল।তনুজ সেই টাকা উড়িয়েছে।মায়ের কোনো দায়িত্ব সে পালন করেনি কোনোদিন।ঋষিকেই সব করতে দেখেছি এতদিন।তবুও শাশুড়িমা চায়নি আমাদের সন্তান ঐ টাকার মালিক হোক।তাই হয়তো এই নীচ কাজ.....

১৩:০৭:২০১৭

“রঞ্জনা আজকাল আর আমার সাথে থাকতে চায়না।হয়তো আমায় তেমন পুরুষ ভাবে যে শরীর ছাড়া কিছুই চেনে না।তাই আমিও এখন আর ওর শরীর ছুঁইনা।আমি পাষন্ড তো না রঞ্জনা।ওর দোষ নেই,আমিই নিজেকে খারাপ করেছি ওর সামনে।”

রঞ্জনা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।তমালি বারবার জিজ্ঞেস করলেও উত্তর করল না।ও চিৎকার করে বলতে চায় শুধু,"না,তুমি পাষন্ড না ঋষি,আমি আজও শুধু তোমায় ভালবাসি।"

০৭:০৮:২০১৭

“আজ রঞ্জনাকে তমালির সাথে যেতে বললাম।ও আমায় আবার ভুল বুঝেছে।তবুও আমি চাই ও খুশি হোক ক্ষণিকের জন্য হলেও।আমার অপরাধবোধ ওকে বাঁচতে দিচ্ছে না।আজকাল ওর চাউনিটাও বড় নিষ্প্রভ,যেন কিছুই চাহিদা বাকি নেই।হয়তো খুব তাড়াতাড়িই ও আমায় ছেড়ে চলে যাবে চিরকালের জন‍্য।হয়তো আমার এই শাস্তিই প্রাপ‍্য।”

রঞ্জনা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল বাচ্ছাদের মতো করে।তমালি সান্ত্বনা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করল কিন্তু পরিস্থিতি সামলানো দায়।এমন অবস্থায় ঋষির বুকে মাথা রাখলেই একমাত্র শান্তিবর্ষা নামবে রঞ্জনার মনে।ফোনটা অন করল।তাও ঋষিকে ফোনে পেল না।বুকটা অজানা ভয়ে কম্পিত হতে লাগল।

ঋষি ওর নোটটা পড়ল অনেকটাই নিরুত্তাপ দৃষ্টিতে।ও তো জানত এটা হবে।হয়তো এটার চেষ্টায় ছিল।তবুও বুক ঠেলে নিঃস্বতার হাহাকার কেন বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস হয়ে!বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে একটা ফুচকা ভাগ করে খাওয়ার সেই তৃপ্তিটা,মনে পড়ে যাচ্ছে বিয়ের আগের রঞ্জনা নাচে মত্ত থাকত তখন ওর মুখের সেই প্রশান্তির হাসি,আবার খোলা জানলার দক্ষিণাবাতাসে এলোমেলো চুলে রঞ্জনার মায়াবিনী সেই মুখশ্রীটা.....উফ অসহ্য এক যন্ত্রণা কেমন বিষের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে ওর সমস্তটায়।

অফিসে না গিয়েই খাটে চুপচাপ এলিয়ে শুয়ে আছে ও।আজ ওর যাবতীয় সব ব‍্যস্ততার অবসান হয়েছে।

দুদিন পর.....

আজ ও আর অফিসে গেলেও কি,না গেলেও কি!চোখ বুজে স্মৃতিচারণে ব‍্যস্ত যখন তখন রঞ্জনা ফিরে আসে।মনে একঝাঁক প্রশ্নেরা ভীড় করে....রঞ্জনা তো চলে যাবে বলেছিল তবে এখানে কেন!তবে কিছুই জিজ্ঞেস করার অবকাশ দেয়নি ওর রঞ্জু।কলার ধরে এক হ‍্যাঁচকা টানে ঋষির ঠোঁট দুটোকে নিজের ঠোঁটে ডুবিয়ে নিল।উপায়ন্তর না দেখে ও অনেকদিন পর রঞ্জনার পাপড়ির মতো ঠোঁটের স্বাদটা পেল,ঠিক আগেকার মতো।

ঘটনার আকস্মিকতায় ঋষি একদম ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে গেছে।

"নিজেকে কি ভাবো তুমি হ‍্যাঁ!আমাকে কষ্ট দিয়েছো,খুব ভালো,তোমায় অধিকার দিয়েছি তাই দিয়েছো।কিন্তু নিজেকে কষ্ট দিয়েছো কোন সাহসে!জানো না তুমি আমার?কৈ আমার কাছে তো অনুমতি চাওনি একবারো!কি হলো?বলো,প্রেম করার সময় বলতে তো তুমি আমার আর আমি তোমার,এখনো মনে পড়ছে না!"

রঞ্জনা অধিকারের স্বরে বকেই চলেছে ঋষিকে।

"না,মা...নে...আমি নিজেকে কষ্ট দিলাম কবে!"

"এই তোমার কষ্টের সাক্ষী",বলেই ডায়েরীটা রঞ্জনা ঋষির হাতে ধরিয়ে দিল।এতদিনের জমাট বাঁধা অনুতাপের,অভিমানের প্রাচীরটা ভেঙ্গে যেতে লাগল ভালবাসার ছোঁয়ায়।

"ক্ষমা করো রঞ্জনা,আমি সত‍্যিই ভাবিনি মা আমাদের বাচ্চা....",রঞ্জনা ঋষির ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁয়ে থামায়।

"ক্ষমা তোমায় করতে পারি ঋষি,আগে কথা দাও আর কোনোদিন কোনো কথা লুকাবে না!কেন এতটুকুও বিশ্বাস করে বললে ঋষি!কেন?প্রেমটা কি এতটাই ঠুনকো ছিল আমাদের?"ঋষি ওর হাতটা হাতে নিয়ে বলল,"সোনাটা আমার আমি বড় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম যদি তুমিও আমায় ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যাও!অথচ কাছে রেখেও কি লাভ করলাম!তুমি পাশে ছিলে অথচ কাছে না!আমি ভুল করেছি,মারাত্মক ভুল।কথা দিচ্ছি আর কিছু লুকাবো না কোনোদিন।"

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণতা বিনিময় করল বহুবছর পর।শরীর মন সবই সমর্পণ করল প্রেমার্ঘ।

রঞ্জনা আর ঋষির ফুটফুটে একটা বাচ্ছা মেয়ে হয়েছে।ওরা দুজনেই খুব খুশি।অবশেষে ভাগ‍্য থেকে সুখ ছিনিয়ে নিতে পারল ওদের ভালবাসা।যদিও এই দিনের জন‍্য ও দুজনের কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ।

১ম রঞ্জনার মায়ের কাছে,ওদের কারো কোনোদিন ডায়েরী লেখার অভ্যাস ছিল না।বিয়ের দিন মা ওদের এটা উপহার দিয়েছিল আর নিজেদের প্রতিদিনের কিছু অনুভূতি লিখতে বলেছিল।মায়েরা মনে হয় সব জানে।তাই না থেকেও সব গুছিয়ে দিয়ে গেল আবার করে,যেমনটা ছোটো থেকেই করেছে।আর সবশেষে মিনতিদির কাছে কৃতজ্ঞ ও থাকবেই,সেদিন দিদি যদি ঋষির বুকটেবিল গোছাতে গিয়ে ডায়েরীটা ওর খাটে না ছেড়ে যেত তো তাড়াহুড়োয় ও ওটা ব‍্যাগেও ভরত না!তাই নিজের জীবনের সেরা প্রাপ্তির দিনটায় ওদের মনে মনে ধন‍্যবাদ দিয়ে দিল আরেকবার।ওরা ওদের ম‍্যাজিক অফ লাভ ফেরত পেয়ে গেল আবার নতুন রূপে নব আঙ্গিকে।

-সমাপ্ত-

#ভালবাসা


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance