Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy

2  

Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy

তুমি কথা দিয়েছিলে

তুমি কথা দিয়েছিলে

3 mins
482


পরশু থেকে, গত দু'দিন ধরে আভেরী একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। বাবা মায়ের ভারী আদরের একমাত্র সন্তান আভেরী। আভেরীর এই অবস্থায় চুপ করে বসে থাকাটা আভেরীর বাবা মা আর ঠিক নিতে পারছে না।আভেরীর বাবা মা ওর সামনে আসার সাহসটুকু পর্যন্ত হারিয়েছে। আভেরীর দৃষ্টি কোনো কিছুর ওপর নিবদ্ধ নেই। কেমন যেন একটা শূন্য দৃষ্টি নিয়ে নিজের ঘরের বিছানার এককোণে বসে আছে পাথরের মূর্তির মতো। 


লতিকাদি আভেরীকে কোলেপিঠে করে বড়ো করেছে সন্তানস্নেহে। আভেরীও লতিকাদি বলতে অজ্ঞান। লতিকাদির কোনো কথা আভেরী সচরাচর ঠেলতে পারে না, কিন্তু আজ লতিকাদিও পারলো না কিছুতেই আভেরীকে একঢোঁক জলও খাওয়াতে। কোনোরকমে বুক বেঁধে তাও লতিকাদি দাঁড়িয়ে আছে আভেরীর ঠিক পেছনটাতে। গোটা বাড়ীটা থমথম করছে। কেউ জোরে কোনো কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। খুব দরকারী কথা হলে একে অপরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে সেরে নিচ্ছে, নয়তো ইশারায়।


আভেরীর মা বাবা মেয়ের এই অবস্থায় আতঙ্কিত, আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীদের মতে, এভাবে এই অবস্থায় চলতে থাকলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ডঃ সেনেরও মত আভেরীকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে ভর্তি করা হোক। নয়তো দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। সবার আশংকা সত্যি করে দিয়ে আভেরী জ্ঞান হারিয়েছে। হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটেছে, কিন্তু তাও সবাই বড্ড চুপচাপ, প্রায় নীরবেই। ডঃ সেন অত্যন্ত দ্রুত সব ব্যবস্থা করে ফেললেন ফোনেই। অ্যাম্বুলেন্স থেকে হসপিটালের কেবিন সব ব্যবস্থাই ডঃ সেন নিজের দায়িত্বেই করলেন।


ডঃ সেন শুধু আভেরীদের পারিবারিক ডাক্তারই নন, উনি যে ওদের পারিবারিক বন্ধুও বটে। জন্ম থেকেই আভেরী ডঃ সেনেরও চোখের সামনেই বড়ো হয়ে উঠেছে। সকলের মতোই তিনিও কিছুতেই প্রাণচঞ্চল, হাসিখুশি, তারুণ্যে ভরপুর এক মেয়ে আভেরীর এই নির্মম করুণ পরিণতিকে মেনে নিতে পারছেন না। অ্যাম্বুলেন্সে আভেরীর মা অচৈতন্য মেয়ের হাতটা নিজের মুঠোয় ধরে নিয়ে স্ট্যাচুর মতো বসে আছে।

গালে চোখের জলের শুকনো দাগ। মনের মধ্যে সিনেমার শোয়ের মতো ভেসে যাচ্ছে মেয়ের জন্ম মুহূর্ত থেকে বড়ো হয়ে ওঠার সম্পূর্ণ পথ পরিক্রমা। অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়িয়েছে হসপিটালের কম্পাউন্ডে। এম্বুলেন্স থেকে নামানোর সময় আভেরীর মায়ের মনে হোলো, আভেরীর ঠোঁটদুটো যেন ক্ষণেকের জন্য নড়ে উঠলো। জ্ঞান আসছে কী আভেরীর? বুঝতে পারছে না ওর মা। বুকটা শুধু হু হু করে উঠলো, মায়ের মন যে, খালি কু গাইছে। কিছুতেই শক্ত হতে পারছে না।


আভেরীকে কেবিনে রাখা হয়েছে, ভেতরে সঙ্গে কেউ একজন থাকতে পারবে। আভেরীর মা রইলো ভেতরে, আর ঠিক দরজার বাইরে একধারে লতিকাদি অনড় দাঁড়িয়ে, যদি দরকার পড়ে কিছু! কেবিনে আভেরীর চারদিকে নানানরকম নল ঝুলছে। আভেরীর মুখের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে ওর মা, ঈশ্বরকে ডাকতেও ভুলে গেছে যেন।


ডাক্তারদের সঙ্গে গভীর আলোচনা চলছে ডঃ সেন আর আভেরীর বাবার। আর দেরী করার মতো সামান্য সময়ও হাতে নেই, অবিলম্বে সিজার করতেই হবে, বাচ্চাটা হাঁফিয়ে উঠেছে। 

ওটিতে নেওয়া হচ্ছে আভেরীকে। সিজারিয়ান অপারেশন করে ডেলিভারি করাতে হবে। আভেরীর মা মেয়ের অচৈতন্য মুখটার দিকে চেয়ে থরথর করে কাঁপছে। লতিকাদি আঁকড়ে ধরে রেখেছে আভেরীর মা'কে শক্ত করে।

ট্রলি নিয়ে প্রায় ছুটছে ওয়ার্ড বয়রা, পাশে পাশে সিস্টাররা। ডাক্তারবাবুরা আগেই এগিয়ে গেছে।

ট্রলির পেছনে পেছনে হাঁটছে আভেরীর বাবা আর মা'কে ধরে ধরে নিয়ে লতিকাদি। পিন পড়লেও আওয়াজ হবে, শুধু ট্রলির চাকার ঘড়ঘড়ে আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই। 


হঠাৎই প্রবল গোঙানি মেশানো আর্তনাদ করে উঠলো আভেরী, "অভীক, অভীক তুমি কথা দিয়েছিলে, তুমি থাকবে ওটিতে আমার পাশে......."

আভেরীর আর্তনাদে নিঃশব্দতা খান খান করে যেন হসপিটালের করিডোরের দেওয়ালও কেঁপে উঠলো।

হায় ঈশ্বর, কী নিষ্ঠুর নির্মম নিয়তির লিখন! ঈশ্বর কী আছে, আদৌ? অভীকের বাবা যে তখন নীরবে দাঁড়িয়ে শ্মশানে, চুল্লীর সামনে, আঠাশ বছরের একমাত্র ছেলে, অভীকের অস্থি'র জন্য অস্থির অপেক্ষায়!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy