Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Inspirational

2.5  

Sayandipa সায়নদীপা

Inspirational

সবে মিলে করি কাজ

সবে মিলে করি কাজ

7 mins
2.3K


মুগ্ধ দৃষ্টিতে গাছের পাতার আড়ালে খেলা করতে থাকা কোকিল দুটোকে দেখছিল প্রচেতা। বড় ভালো লাগছিল দেখতে। গ্রাম থেকে শহরের ইস্কুলে চাকরি করতে আসার আগে মনে মনে একটু ভয়ই পেয়েছিল সে। ভেবেছিল কংক্রিটের জালে আটকা পড়ে সে নিঃশ্বাস নিতে পারবে তো ঠিক করে! এই স্কুলটায় প্রথমদিন এসেই মনের সব ভয় দূর হয়ে গিয়েছিল তার। শহরের বুকেও যে এমন বিশাল সবুজ ঘেরা মাঠ থাকতে পারে তা ছিলো তার কল্পনার বাইরে। আজ শনিবার, একসপ্তাহ পূর্ণ হয়ে যাবে তার এই স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করার। সব মিলিয়ে শুরুটা মন্দ না।

“ম্যাডাম ম্যাডাম তাড়াতাড়ি আসুন বিয়াস আর সন্দীপ মারপিট করছে।”


এক ছাত্রের ডাকে সম্বিৎ ফিরল প্রচেতার। এখন টিফিনের সময় বলে স্টাফ রুমের বাইরের বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে ছিল সে। এখন ছাত্রের ডাকে একটা ঢোঁক গিলল, এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন সে এখন অবধি হয়নি। কি করবে, অন্য কাউকে ডাকবে? নাহ থাক! নিজেই গিয়ে একবার দেখা যাক।


  অকুস্থলে পৌঁছে প্রচেতা দেখলো দুটো ক্লাস ফোরের ছেলে একে অন্যের কলার ধরে মারতে উদ্যত। ওদের ঘিরে আরও অনেক ছেলের ভীড়।

“এই এসব কি হচ্ছে…!” 


এগিয়ে গেল প্রচেতা। ম্যাডামকে দেখে ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। আর যে দুটো ছেলে মারপিট লেগেছিল তারা একে অন্যের কলার ছেড়ে দিলেও ফুঁসতে থাকলো দুজনেই। প্রচেতা ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে? এভাবে মারপিট করছিলে কেন?”


সন্দীপ বলে ছেলেটা বলে উঠল, “ম্যাডাম ও আমার বাবাকে অপমান করেছে।”

“অপমান আবার কি! ঝাড়ুদারকে ঝাড়ুদার বলবো না তো কি বলবো?” গর্জে উঠল বিয়াস।

সন্দীপ প্রচেতার দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখলেন তো ম্যাডাম ও তখন থেকে এরকম যা নয় তাই বলে যাচ্ছে।”

“আমাকে শুরুর থেকে বলো কি ঘটেছি।” জানতে চাইল প্রচেতা।


ম্যাডামের কথা শুনে ছলছল চোখে সন্দীপ বলতে শুরু করল, “ম্যাডাম বিয়াস কেক আর চকোলেট খেয়ে ক্লাসে প্যাকেট গুলো ফেলে দিয়েছিল। আমি বললাম ওগুলো ক্লাসে কেন ফেললি? পরিষ্কার কর। ও তখন বলল, আমি কেন পরিষ্কার করব? তুই কর। আমি বললাম কেন, তুই ফেলেছিস তুই কর। তাতেই ও বললো…” 

বাকিটা আর বলতে পারল না, গলাটা ধরে এলো সন্দীপের।


ওর কথার সূত্র ধরে পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠল,

“তারপর ম্যাম বিয়াস সন্দীপকে বলল তুই তো ঝাড়ুদারের ছেলে তুই পরিষ্কার কর। তুইও তো বড় হয়ে ঝাড়ুদার হবি। আর এই শুনেই সন্দীপ বিয়াসকে মারতে গেল।”


মেয়েটার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল প্রচেতা, সে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না একটা ক্লাস ফোরের বাচ্চা এমনটা বলতে পারে। বিয়াসের দিকে তাকিয়ে প্রচেতা জানতে চাইলো, “এসব সত্যি কথা?”

বিয়াস জবাব দিলো না। প্রচেতা বলল, “ছিঃ বিয়াস এরকম কাউকে বলতে আছে! সরি বলো সন্দীপকে।”


বিয়াসের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলোনা। সে আগের মতোই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। প্রচেতা আরেকবার বলল তাকে ক্ষমা চাইতে। এবার কাজ হলো। কিন্তু প্রচেতা পরিষ্কার বুঝতে পারলো এই সরিটা শুধু বিয়াসের মুখ থেকেই বেরোলো, মন থেকে নয়। 


স্টাফ রুমে এসে মাথাটা ধরে বসেছিল প্রচেতা। তার এখনও যেন ঠিক বিশ্বাস হতে চাইছেনা একটা ওইটুকু বাচ্চার মনে সহপাঠীর সম্বন্ধে এরকম ধারণা থাকতে পারে। কই তাদের স্কুলেও তো বিভিন্ন শ্রেণী থেকে উঠে আসা বাচ্চারা পড়ত কিন্তু তারা তো এমন ভেদাভেদ করেনি বন্ধুত্বে!

“কি হল নতুন ম্যাডাম চিন্তিত মনে হচ্ছে!”


পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে তাকাল প্রচেতা। বড়দি যথারীতি তার মন ভালো করা হাসিটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ওর সামনে। কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়, বড়’দিও সেরকমই। শুধু প্রথম দেখাতেই যে ভালো লেগেছিল তা নয়, এই এক সপ্তাহে সে এটুকু বুঝেছে যে বড় দির মত অমায়িক মানুষও খুব কমই হয়, এমন মানুষের কাছে নির্দ্বিধায় নিচের মনের ভার লাঘব করা যায়। তাই বড়দিকে দেখে খানিক ভরসা পেলো প্রচেতা। অকপটে জানাল ওর মনের মধ্যে চলতে থাকা দ্বন্দ্বের কথা। সব কিছু শুনে কিছুক্ষণ গুম হয়ে রইলেন বড়দি। তারপর আস্তে আস্তে বললেন,


“এখন যুগটাই এমন প্রচেতা। তবে আমাদের হার মানলে চলবেনা। শুধু পুঁথি পাঠ করিয়ে শিক্ষা দেওয়াই নয়, এই শিশু মন গুলোকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য।

প্রচেতা…”

“হ্যাঁ দিদি বলুন।”

“আমি তোমাকে একটা দায়িত্ব দিতে চাই। কাল রবিবার, হাতে সময় পাবে। তাই কাল সারাদিন ভেবো কিভাবে বিয়াস বা ওর মত আর যারা আছে তাদের এই ধরণের মানসিকতাটা পাল্টানো যায়।”

“আমি…! আমি পারবো?”

“পারতে তোমাকে হবেই। ওদের শিক্ষিকা হিসেবে এটা তোমার দায়িত্ব।”

এই বলে বড়দি উঠে গেলেন। সব কিছু যেন তালগোল পাকিয়ে গেলো প্রচেতার। সে কিভাবে করবে এই কাজ! কিভাবে ভাঙবে বিয়াসদের এই অহং!


সোমবার ফোরে ক্লাস নিতে ঢুকেই প্রচেতা দেখলো বিয়াস আর সন্দীপ অনেক দূরে দূরে বসেছে। মুখটা গোমড়া হয়ে গেল ওর। গম্ভীর মুখে চেয়ার টেনে বসতেই রিঙ্কি বলে উঠল, “ম্যাডামের কি শরীর খারাপ?”

“কেন?” অবাক হয়ে জানতে চাইলো প্রচেতা।

“আজ আপনাকে কেমন গম্ভীর দেখাচ্ছে।” বলল রিঙ্কি।

প্রচেতা আগের মতোই গম্ভীর হয়ে উত্তর দিলো, “শরীর নয় মন খারাপ।”

সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসের মধ্যে একটা গুঞ্জন শুরু হল, সবাই একসঙ্গে জানতে চাইলো তাদের নতুন ম্যাডামের মন খারাপের কারণ।

প্রচেতা জবাব দিলো, “তোমরা তো জানোই আর একমাস পরে বড়দিন। তা সব স্কুলে স্কুলে নাকি স্যান্টা ক্লজ আসবেন বাচ্চাদের জন্য গিফট নিয়ে।”

স্যান্টা ক্লজের নাম শুনেই বাচ্চাদের মধ্যে একটা খুশির হিল্লোল বয়ে গেলো। প্রীতম জানতে চাইলো, “আমাদের স্কুলেও আসবে স্যান্টা দাদু?”

“কি করে আসবে বলো আর কেনই বা আসবে!”

“কেন কেন!” সমস্বরে জিজ্ঞেস করলো বাচ্চারা।


প্রচেতা উত্তর দিলো, “স্যান্টা ক্লজ তো নোংরা একদম পছন্দ করেন না, আর তোমরা দেখো তোমাদের প্লে গ্রাউন্ডটার অবস্থা। এখানে সেখানে কেমন কাগজ, প্লাস্টিক এসব পড়ে আছে। এতে স্যান্টা কি করে আসবেন?”


ম্যাডামের উত্তরে একদম চুপ করে গেলো বাচ্চাগুলো। তারা ভাবতে পারেনি যে কেক, চকোলেট খেয়ে প্যাকেটগুলো এখান সেখানে ফেলে দেয় তার ফল এরকম হতে পারে। আচমকা সন্দীপ উঠে দাঁড়াল,

“ম্যাডাম আমি যদি স্যান্টা আসার আগে সব পরিষ্কার করে দিই?”


ঠোঁটের কোণে একটা হাসি খেলে গেলো প্রচেতার,

“তুমি? একা একা এতো বড় মাঠ কি করে পরিষ্কার করবে? তোমার কোনো ফ্রেন্ড কি হেল্প করবে তোমাকে?”


প্রচেতার কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই বেশ কয়েকটা ছেলে মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মহা উৎসাহে বলল, “ম্যাডাম আমরাও করবো।”

মনে মনে বেশ খুশি হলো প্রচেতা কিন্তু মনের ভাবটা মুখে ফুটে উঠতে না দিয়ে বলল, “বেশ তাই হোক।”


সে খেয়াল করলে বিয়াস সহ বেশ কিছু ছেলে মাঠ পরিষ্কারের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখালো না, কয়েকজনের আবার চোখেমুখে ইতস্তত ভাব স্পষ্ট ফুটে উঠল। তবুও ভালো, কিছুজন তো রাজি হয়েছে।


ওই কয়েকটা বাচ্চাকে নিয়েই শুরু হয়ে গেলো প্রচেতার এক নতুন লড়াই। রোজ প্রার্থনা শুরুর আগে ওদের নিয়ে খানিকটা করে মাঠ পরিষ্কার করে ফেলতো, নিজেও হাত লাগতো ওদের সঙ্গে। দিন দুয়েকের মধ্যেই ইতস্তত করতে থাকা ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকেও কয়েকজন এগিয়ে এলো হাত লাগাতে। একজন ছাত্রী তো আবার দিনের শেষে বলেই বসলো, “পরিষ্কার করার মধ্যেও যে এতো আনন্দ তা তো আগে জানতাম না ম্যাডাম।”


এইভাবেই একেকটা দিন কাটছিল। কিন্তু প্রচেতা লক্ষ্য করছিল বিয়াস সহ কয়েকটা ছেলে মেয়ের মুখে তখনও অবজ্ঞার ভাব। ক্ষণিকের জন্য প্রচেতার মনে হল শেষ অবধি সে পারবে তো! ওর মনের দ্বিধা দূর করতে এগিয়ে এলেন বড়দি। ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,


“কোনো ভালো কাজ করার পথই সহজ হয়না। কিন্তু যা পথ চলাটাকে সহজ করে দিতে পারে তা হলো আমাদের অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাস। হাল ছেড়ো না।”


বড়দির কথার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা ওকে আবার মনের জোর এনে দিলো। কচি কচি হাতগুলোর মিলিত কাজে এক সপ্তাহের মধ্যেই অতো বড় মাঠটা একদম পরিষ্কার হয়ে উঠল। শুধু তাই নয় সকলে এবার তাদের প্রিয় নতুন দিদিমণিকে প্রমিস করলো এবার থেকে তারা টিফিন খেয়ে প্যাকেট গুলো এখান সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনেই ফেলবে।


মাঠ পরিষ্কারের কাজ শেষ হতেই এবার শুরু হলো প্রচেতার উৎসাহে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি। বন দপ্তরের সাহায্যে বেশ কিছু চারাগাছের ব্যবস্থা করেছিলেন বড়দি। সেই মতো ঠিক হলো শিশু দিবসের দিন স্কুলে গাছ লাগানো হবে। কাজ করবে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরাই। তাই চৌদ্দ তারিখ সকালে স্কুলে এসের থেকে তাদের উৎসাহের অন্ত নেই। সবাই উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটেছে। তাদের আলোচনার একটাই বিষয় কে কোন গাছটা লাগাবে, কিভাবে লাগাবে! যে সব ছেলেমেয়েরা এতে অংশগ্রহণ করেনি তারা ক্লাসের একপাশে বসে চুপচাপ লক্ষ্য করে যাচ্ছিল সহপাঠীদের। তাদের মনের মধ্যে তখন কি চলছিলো বলা মুশকিল!

একটু পরেই বড়দি, নতুন মিস আর রাহুল স্যার এলেন হাতে কতকগুলো ছোটো ছোটো বেলচা আর বালতি নিয়ে। ছেলে মেয়েরা সব হৈহৈ করে ওদের হাত থেকে জিনিসগুলো নিয়ে মাঠে নেমে পড়লো। তারপর মহা উৎসাহে শুরু করলো মরশুমি ফুলের রং বাহারি গাছ লাগাতে। ওদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠলো গোটা স্কুল প্রাঙ্গণ। ক্লাসের মধ্য থেকে কয়েক জোড়া উৎসুক চোখ সহপাঠীদের আনন্দ দেখে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেললো। 


সব চারা লাগানো যখন শেষের মুখে তখন প্রচেতা দেখলো ক্লাস থেকে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে আসছে বিয়াস। ওর সামনে এসে ছেলেটা হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, “সব গাছ শেষ? আর একটাও নেই?”

প্রচেতা যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না। কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছিল। তারপর সম্বিৎ ফিরতেই ওর ঠোঁটের ফাঁকে খেলে গেলো চওড়া হাসি। বললো, “আছে আছে। দিচ্ছি দাঁড়া।”


 সব কটা গাছ লাগানো শেষ হতেই বাচ্চারা সব কলের কাছে জড়ো হলো হাত ধুতে। প্রচেতা দেখলো সন্দীপ আর বিয়াস একসঙ্গে হাসছে খিলখিলিয়ে। সন্দীপের কাদা মাখা হাতটার ওপর বিয়াস ওর কাদা মাখা হাতটা রেখে বললো,

“দেখ আমার হাতে বেশি কাদা। তোর থেকে বেশি কাজ করেছি আমি।”


এই বলে দুজনেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। ওদের দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো প্রচেতা। কাদার রংও যে এমন মিষ্টি হতে পারে তা তো আগে কোনোদিনও মনে হয়নি। নিজের কাদা মাখা হাতটা ওই কচি হাতগুলোর তলায় ধরে প্রচেতা বলে উঠল, “সবে মিলে করি কাজ…”

বাচ্চারা সুর মেলালো, “হারি জিতি নাহি লাজ।”

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational