Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Rituparna Rudra

Inspirational Others

3  

Rituparna Rudra

Inspirational Others

বন্ধন (প্রথম পর্ব)

বন্ধন (প্রথম পর্ব)

7 mins
7.4K


(গল্পের সময়কাল নব্বই দশকের প্রথম দিক)

দৌড়তে দৌড়তে অফিসে ঢুকলো কলি, আজ আবার খ্যাচখ্যাচ শুনতে হবে, সাধে কি আর বসের নাম খ্যাচখ্যাচা রেখেছে ওরা, এমনিতে খুব ভাল হলেও, সময়ের এদিক ওদিক হলে বড্ড রাগ করেন উনি। পৌঁছে দেখলো সাক্ষী সব কাজ গুছিয়ে রেখেছে, সত্যি মেয়েটা খুব ভাল, আর বসও এখোনো আসেননি। যাকগে খুশি খুশি মুখে কাজ শুরু করে কলি, সাক্ষীকে ধন্যবাদও দেয়, কিন্তু খেয়াল করে সাক্ষীর মুখ শুকনো, যেন খুব মন খারাপ। "কি হয়েছে রে"? মাথা নাড়ে সাক্ষী গোয়েল, অবাঙালী হলেও ও খুব ভাল বাংলা জানে আর ওর বাড়িতে সবাই নিরামিষাশী হলেও ও দিব্বি মাছ মাংস খায়। টিফিন টাইমে রোজ রোজ মাছের ঝোল ভাত, বিরিয়ানি, এসবই ওর খাদ্য। বছর তেইশের সাক্ষী এই অফিসে কাজে যোগ দিয়েছে বছর খানেক, এর মধ্যেই নিজ গুনেই ও সবার খুব প্রিয়। সবসময় হাসিমুখ, কাজ ফাঁকি দেয় না আর খুব সরল মনেরও বটে। এ হেন সাক্ষী আজ বিষন্ন মুখে কেন। কলির মন খারাপ হয়ে যায়। না ওর থেকে জানতেই হবে।

টিফিন টাইমে ওকে জানতে চায় কলি। "তোর কি হয়েছে বলতো, এতদিন পাশাপাশি বসে কাজ করছি , তোকে দেখেই বুঝতে পারছি তোর মন ভাল নেই"

একটু চুপ করে থেকে, সাক্ষী কথা বলে। সাক্ষীর বাবারা তিন ভাই। হাওড়াতেই ওদের তিনপুরুষ এর ব্যবসা। যৌথ পরিবার, মাথার ওপর ঠাকুরদা (ওরা বলে দাদাজী) বর্তমান। ওদের পরিবার এখনো মধ্যযুগীয় ধ্যান ধারণাতে চলে। বাড়ির বৌদের মাথায় ঘোমটা, মেয়েরা কলেজে পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে যায়, ছেলেদের ও পঁচিশের মধ্যেই। সকালে উঠে পুজোপাঠ অবশ্য কর্তব্য। দাদাজী নিয়মিত গঙ্গাস্নান করেন। তার দাপটে ব্যবসা আর বাড়ি দু জায়গাতেই বাঘে গোরুতে এক সাথে জল খায়। এর মধ্যে মূর্তিমান ব্যাতিক্রম হলেন সাক্ষীর বাবা, তার জন্যই সাক্ষী নামকরা কনভেন্ট স্কুলে পড়েছে, ভাল কলেজে পড়েছে আর পাস করার পরে চাকরি করার আবদারও বাবা মেনে নিয়েছেন। যদিও এই নিয়ে দাদাজী খুব অসন্তুষ্ট। সাক্ষীর মাও মেয়ের বিয়ে নিয়ে চিন্তিত। এত বেশি বয়েসে ওদের বাড়ির কোনো মেয়ের বিয়ে হয়না। এখন সাক্ষীর জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে, কিন্তু সত্যি সমস্যা রয়েছে, এত বেশি বয়েসের এত লেখাপড়া জানা মেয়েকে কেউ বৌ করতে চায় না। যদিও বিয়ের পরে সাক্ষীকে চাকরি ছেড়ে দিতেই হবে তবুও চাকরি করে শুনে পাত্রপক্ষ ভুরু কুঁচকোচ্ছে, তাদের ধারণা মেয়ের কোনো ত্রুটি আছে, নাহলে এত বয়েস পর্যন্ত অবিবাহিত কেন। এ অবস্থায় দাদাজীর বিধান, সাক্ষী চাকরি ছেড়ে বাড়িতে থাকুক, রূপচর্চা করুক, এমনিতেও কালো মেয়ে। দরকার হলে সাক্ষীর বিয়েতে দ্বিগুন টাকা আর একটি ফ্ল্যাট দিতে তিনি রাজি আছেন। সেই মতো সব ব্যবস্থা করেও রেখেছেন ,কিন্তু পাত্র কৈ? এই নিয়ে মেজ ছেলের সাথে রোজ রাগারাগি চলছে দাদাজীর। সাক্ষীর কাকার মেয়ে যে কিনা ওর থেকে দু বছরের ছোট তার বিয়ে হয়ে গেছে অথচ সাক্ষীর জন্য পাত্রের আকাল। সব মিলিয়ে খুব চাপে আছে ও, মায়ের বকুনি খাচ্ছে, বাবা আর কত দিন বাঁচাবেন। 

চোখ থেকে জল পড়ছে সাক্ষীর, " বিয়ে ঠিক হলেও আমি তো জানি, সারাদিন কোনো কাজ থাকবেনা, পুজো করো, নিরামিষ খাবার খাও, শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করো আর টিভি দেখো।তুই তো আমাকে জানিস কলি, আমি ছোটোবেলা থেকে এসব ভালবাসিনা, আমি আমাদের পাশের বাড়ির বাঙালি কাকিমার কাছে মানুষ হয়েছি, তাই তো মাছ ভাত খেতে ভালবাসি, রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি, স্কুল কলেজ সব জায়গাতে আমার বাঙালি বন্ধু, চাকরি ছেড়ে এক গলা ঘোমটা দিয়ে আমার দম আটকাবে রে। কিন্তু কি করবো বল তো, রোজ রোজ এ অশান্তি আর কত সহ্য করবো "?

কলি ঘাবড়ে গেছে, সত্যি খুব দুরূহ সমস্যা। ওর বাড়ির লোকের ও দোষ নেই, তারা তো চেষ্টা করবেনই বিয়ে দিতে। ভেবে ভেবে কলি বলে," তুই বরং কোনো বাঙালি পরিবারে বিয়ে কর।" ম্লান হাসি ফুটে ওঠে সাক্ষীর ঠোঁটে "কেউ মেনে নেবে না রে! তাই জন্যই তো "। 

"তাই জন্য কি সাক্ষী? "

"কিছু না চল, লাঞ্চ টাইম শেষ, কাজ শুরু করি"। 

কলির মনে হোল সাক্ষী কিছু লুকিয়ে রাখল ওর থেকে, কাল আবার জানতে চাইবে।

কলির চাপাচাপিতে সাক্ষী পরদিন বলতে বাধ্য হোল, প্রায় বছর তিনেক আগে সাক্ষী একবার রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি যায়, বাড়ির সবাই আগেই সেখানে ছিল ওর পিসির নাতির মুখেভাত অনুষ্ঠানে। পরীক্ষার জন্য সাক্ষী একদিন পরে রওনা দেয়। ওখানে বাবা নিতে আসবেন, এখানে মামা তুলে দিয়ে গেল ট্রেনে। শুধু পথটুকু সে একা। সেই ট্রেনে আলাপ অভিজিৎ এর সাথে, ও একা অফিসের ট্রেনিং এ দিল্লি যাচ্ছে।কি করে যে অল্প সময়ে এত ভাব হয়ে গেল! বন্ধুত্ব, একসাথে খাওয়া, আর সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প, সকালে দুজনেই বুঝতে পারছিল কিছু একটা হয়েছে তাদের কিন্তু চলে যেতে হবে। অভিজিৎ নিজের অফিসের আর বাড়ির দু জায়গার ফোন নাম্বার দিল তাকে। দিল্লি পৌঁছেও সাক্ষীর কেবলই ওর কথাই মনে পড়ে, অদ্ভুত টান, অদ্ভুত মন খারাপ। 

তারপর দিল্লি তে একদিন সবাইকে লুকিয়ে অভিজিতের অফিসে ফোন করলো সে।কেনাকাটার অজুহাতে বেরিয়ে সেই সন্ধ্যায় দুজনে দেখাও করে। একটা কফিশপে আধঘন্টার জন্য। সাক্ষীর হাত ধরে অভিজিত বসে রইল কিছুক্ষণ, কেউ কোনো কথা বলতে পারছিল না। তারপর অভিজিতই বলল, "সাক্ষী, একদিনের আলাপেই তোমাকে ভালবেসেছি আমি, মনে মনে শুধু তোমার কথাই ভাবি। তুমি বল তোমার কথা।" সাক্ষী কেঁদে ফেলেছিল, তারও একই অবস্থা। অনেক আলোচনা হোল, কিন্তু সাক্ষী ভাল করেই জানত তার বাড়িতে এ সম্পর্ক কেউ মেনে নেবেন না। দাদাজী জানতে পারলে হয়তো তাকে মেরেই ফেলবেন। 

"তারপর? " কলি খুব উদ্বিগ্ন। 

"তারপর কিছু নেই রে" ম্লান হাসে কলি। "অভিজিতের সাথে আমার আরও দুবার দেখা হয়েছে, ফিরে এসে কলকাতাতে, কিন্তু এর সমাধান কিছু নেই তো। আমি জানি বাড়িতে কেউ মেনে নেবে না, আমার বলার সাহস ও নেই। বাবা পরিবারের সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে এত সাহায্য করেছে, বাবাকে কি ভাবে দুঃখ দেব বলতো? আমার এত কষ্ট হয়েছিল যে শেষবার অভিজিত আমাকে বলে ,তুমি যা চাও তাই হবে সাক্ষী। আমার কথাই ও মেনে নিয়েছিল, চুপচাপ চলে গিয়েছিল আর যোগাযোগ করে নি। তারপর কেটেও গেল তিন বছর। "সাক্ষীর গলা আবেগে থরথর। 

"ভালোবাসিস এখোনো ওকে? "

"চিরকাল বাসবো কলি।" আর কথা এগোয় না, দুই বান্ধবী কাজ শুরু করে। পরের দিন,তার পরের দিন দুই বান্ধবীর প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে অভিজিত। কলি বুঝতে পারে শুধু অভিজিত্‌ নয়, সাক্ষী ও ভীষণ ভালোবাসে অভিজিত কে ।তাই হয়ত বিয়ের নামে এত আতঙ্ক ওর।(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational