Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Bhaswati Ghosh

Drama

3.0  

Bhaswati Ghosh

Drama

দি পা ব লী

দি পা ব লী

4 mins
15.4K


সৌমি একটা ফুলঝুরি বোনের হাতে ধরিয়ে দিল।রঙীন আলোগুলো রিফ্লেক্ট হয়ে

বোনের মুখে পড়ছে আর বোন খিলখিল অবোধ হাসিতে ভরিয়ে তুলেছে তার মুখ।অবাক

হয়ে সৌমি তাকিয়ে থাকে।এত মিষ্টি এত সুন্দর ওর বোন আজ থেকে একবছর আগেওখেয়াল করেনি!

"তুই এখানে?ও শিট্ মা দেখ বোন এখানে ,তুমি না একটু খেয়াল রাখো না।কতবার

বলেছি ওকে আমার কাছে আসতে দেবে না?"-কথাগুলো বলে সৌমি একটু পিছিয়ে যায়।

কৌশিকী হল সৌমির ছোট বোন।কৌশিকীর বয়স দশ বৎ্সর।দশ বৎসর আগে কালীপূজার

রাতে ওর জন্ম তাই মা আদর করে নাম রাখে কৌশিকী।গায়ের রঙ টা ও মা কালীর মতই

কালো কৌশিকীর দিদি কৌশিকীর থেকে দশ বছরের বড় আর গৌরি বর্ণা ।তাই জন্মের

দিন থেকেই বাড়ির লোকের একমাত্র তার বাবা মায়ের ছাড়া সকলের চোখের বালি হয়ে

যায় কৌশিকী।কিন্তু এখানেই শেষ নয় কৌশিকী জন্মাবার কিছুদিন পরেই বোঝা যায়

সে কালা ও বোবা। কৌশিকীর দাদু দিদা কৌশিকীর জন্মের পর কপাল চাপড়ে ছিলেন

কালো মেয়ের জন্মের জন্যে। আবার বোবা কালা জানবার পর তো তার মৃত্যু কামনা

করতে ও ছাড়েন নি ঘরের নিত্য পূজিতা কালো কালীর পায়ে। সকলেই তাকে সংসারের

বোঝা ভাবতে থাকে।কিন্তু কৌশিকীর মা -বাবা তাকে বুকে আগলে বড়ো করতে

থাকেন।একটি স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য প্রতিষ্টিত স্কুলেও ভর্তি করে দেন

তারা তাকে।সেখানে কিছুদিন থাকার পর স্কুলের প্রিন্সিপাল নিজে পরামর্শ দেন

কৌশিকী কে সাধারণ স্কুলেই পড়াবার কারণ ওর আই কিউ ভেরি হাই।নাচে,হাতের

কাজে সবেতেই দক্ষ হয়ে ওঠে কৌশিকী অচিরেই। প্রপার গাইডেন্স পেলে কৌশিকী যে

একজন সাধারণ বাচ্চার উপরে যাবে সেটাও উনি জানান।এমন কি ওর তৈরি হাতের

জিনিস স্কুল থেকে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া ও স্পিচ্- থেরাপির

মাধ্যমে কিছু শব্দ উচ্চারণ করতেও কৌশিকী শিখে যায়।সবই ঠিকঠাক চললে ও

বাড়ির লোকের আর কৌশিকীর দিদি সৌমির দৃষ্টিভঙ্গী বদলায় না।বোন মাঝে মাঝে ই

আধো আধো স্বরে দিদি -দিদি বলে কাছে আসার চেষ্টা করে, কিন্তু সৌমির

কৌশিকীকে অসহ্য লাগে।ওর হাইসোসাইটির বন্ধুদের সামনে বোনের পরিচয় দিতেও

দ্বিধা বোধ করে।তাই মাকে ওর বলাই আছে ওর বন্ধু বান্ধবীরা এলে ওকে একদম

আমার কাছে আসতে দেবে না।সেদিন ও ছিল কালী পূজা। হঠাৎ মায়ের অসতর্কতার

মূহুর্তে কৌশিকী বেরিয়ে ছাদে উঠে আসে দিদির কাছে।সৌমি তখন কালী পূজার

স্পেশাল বাজি পোড়াচ্ছিল ওদের ছাতে তে বন্ধুদের সাথে।বোনকে দেখে চরম

বিরক্তিতে ফেটে পড়ে ও।কিন্তু কৌশিকী সেসব দিকে বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে

ছুটে যায় ছাদের কোনার দিকে। ওখানে একটা ইলেকট্রিক লাইন আনা হয়েছিল ছাদেে

আলো দেবার জন্যে।সেখানেই সৌমি বা ওদের বন্ধুদের মধ্যে কেউ একটা, বাজি

পোড়েনি ভেবে ছুঁড়ে ফেলেছিল।কিন্তু কৌশিকীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়ায় না।

বাজীটার পলতে তে আগুন ধরেছে যেকোন সময় যদি ওটা ফাটে, মারাত্মক দূর্ঘটনা

ঘটে যাবে সারা বাড়িতে আগুন লেগে যেতে ও পারে।কৌশিকী ছুটে গিয়ে বাজীটা

তুলে নেয় ,কিন্তু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গে্‌ছে,বাজিটায় আগুন ধরে গেছে। বাজিটা

দূরে ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতেই বাজিটা ফেটে ওঠে।আর এক মুহুর্ত কৌশিকী দেরী করলে

সারা বাড়িকে সেদিন আগুনের শিখা গ্রাস করে নিত।কিন্তু কৌশিকী সাথে সাথেই

মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারায়।বাজিটা তেমন জোরালো না হলেও কৌশিকীর ডান

হাতটা আর গালের একপাশ পুড়ে যায়।হসপিটাল থেকে যেদিন বাড়ি আসে কৌশিকী,

কৌশিকীর সামনে সৌমি দাঁড়াতে পারে না।কিন্তু কৌশিকী আধো আধো স্বরে দিদি-

দিদি করে ডাক দিয়ে দিদির কোলের উপ়র ঝাঁপিয়ে পড়ে।সৌমির সমস্ত

অপরাধবোধ,গ্লানি চোখ বেয়ে নামতে থাকে।কৌশিকী কিন্তু সব ভুলে দিদিকে আদরে

ভরিয়ে দেয়।

এবছর দুবোনেই প্ল্যান করতে থাকে কিভাবে আরো স্পেশাল করে দীপাবলী বানানো

যায়।রঙ্গোলী আর প্রদীপের মালায় দুজনে মিলে সাজিয়ে তোলে ঘরের প্রতিটা কোন।

সৌমি আর কৌশিকি মিলে ওদের ছোট্ট ছাদটা আলোর মালায় সাজিয়ে তোলে।কৌশিকী

নিজের হাতে বানিয়েছে প্রদীপ,বাতি।দিদিকে ও শিখিয়েছে কি ভাবে করতে হয়,

কিন্তু সৌমি অপারক এই সব হাতের কাজে। কিন্তু এতে ওর কোন দুঃখ নেই ।ও না ই

বা পারলো ওর বোন তো পারে।ওর কোন বন্ধুর ই এত ট্যালেন্টেড বোন নেই ।ওর বোন

আজ ওর কাছে গর্ব। সারা ছাদটা কৌশিকীর হাতে বানানো প্রদীপ আর মোমবাতির

আলোয় আলাদা মাত্রা এনেছে।আসলে এ তো শুধু আলো না, ভালবাসায় পূর্ণ আলোক।

চোখে জল নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্নেহা দেবী, কৌশিকীর মা।মাকে চুপ করে

দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌশিকী ছুট্টে গিয়ে মাকে হাত ধরে টেনে আনে একটা

ফুলঝুরি নিয়ে মায়ের হাতে ধরিয়ে দেয়।ইশারায় জানতে চায় কেমন হয়েছে ওদের

দুইবোনের সাজানো?স্নেহাদেবী বুকে চেপে ধরেন কৌশিকী কে, সৌমি ও এগিয়ে এসে

বোনের কাঁধে মাথা রাখে।দুজনের চোখের জলে ভিজতে থাকে কৌশিকী।কৌশিকী তার

পুড়ে যাওয়া কালো হয়ে যাওয়া হাত নিয়ে স্নেহের পরশে মুছিয়ে দেয় দুইজনের

চোখের জল।তারপর চোখ পাকিয়ে ইশারায় বোঝায় আজ খুশির দিনে কাঁদতে নেই তাই

হাসো।কৌশিকীর বাবা আর ঠাম্মা,দাদু ছাদে উঠে আসেন কেমন সাজানো হয়েছে

দেখতে। সকলকে ঘিরে কৌশিকী দেখাতে থাকে ওদের দুই বোনের সাজানো।কৌশিকীর

বাবা কৌশিকী কে কোলে তুলে নেন।ওদের হাসির আনন্দের স্নেহের ভালোবাসার

স্পর্শে কেটে যেতে থাকে সমস্ত অমাবস্যার অন্ধকার।দূরের আকাশের বুকে জেগে

থাকা তারারাও ওদের খুশিতে আরো একটু উজ্জ্বল হয়ে ঝিকমিক করে হেসে ওঠে।আর

দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশপ্রদীপটা মুচকি হেসে ওঠে ,আসলে কৌশিকীর জীবনের দশটা

কালীপূজার সাক্ষী যে ও।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama