Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy

4  

Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy

অবাস্তবে

অবাস্তবে

10 mins
1.7K



- তুই সত্যিই চলে যাচ্ছিস?আর কোনোদিনও দেখা করবি না আমার সাথে?


- তুইও তো তাই চাস।


-তোর কি সেটাই মনে হয়?


-তাহলে তুই চাস না আমি চলে যাই?

কি হলো বল, চুপ করে থাকিস না।


- আমার চাওয়া না চাওয়াতে তো বাস্তবটা পাল্টাবে না।


-বাস্তব ! ইউ মিন ফ্যামিলি,সোসাইটি... রাইট?


- হুম


- রাবিশ।

তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তোর কাছে সব কিছুই বাস্তব শুধু আমাদের রিলেশনটা ছাড়া,আমি ছাড়া।


- প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না।।


- থাক।আমি একদম ঠিকটাই বুঝেছি।তুই আর চাস না আমি থাকি তোর কাছে।


- তোর সত্যিই এটা মনে হয়?


- মনে হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?


- আমাকে কেন এভাবে দুর্বল করে দিস বারবার?আমারও তো ভীষন ইচ্ছে করে সারাজীবন তোকে... কিন্তু বাস্তবটা যে বড্ড কঠিন।


- এই... এই প্লীজ কাঁদিস না।চুপ কর।

 একবার শুধু মুখ ফুটে বল তুই কি চাস।

আমার দিকে তাকা, তাকিয়ে বল।


- তুই কি সত্যিই জানিস না আমি কি চাই?


- আবার !! তুই কি সোজাসুজি কোনো কথাই বলতে পারিস না?


- না পারিনা।পারলেও তোকে বলবো না। আড়ি। যা চলে যা।


- হাঃ হাঃ হাঃ পাগলী কোথাকার।


- হুম।


- আই প্রমিস ইউ,আমি তোকে ছেড়ে কোত্থাও যাবো না।যদি তুই পালাতেও চাস আমি তোকে এমন শক্ত করে ধরবো যে তুই আর ছাড়াতে পারবি না।


 - তাই নাকি?


- হুম।আর এটা যদি তোর বাস্তবে সম্ভব না হয় তবে অবাস্তবেই সম্ভব করে তুলবো।


- মানে?


- নাথিং।


                          ২


- সমস্যা টা তাহলে কতদিন ধরে হচ্ছে?


- তা প্রায় মাস চারেক।মানে মাস চারেক আগে আমরা প্রথম খেয়াল করি,হয়তো তার অনেক আগে থেকেই হচ্ছে।



- চার মাস !! তাহলে এতদিন পর এলেন কেন? জানেন না যত সময় যায় অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে?


- জানি ডাক্তারবাবু। কিন্তু আমরা ঠিক কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলাম না। কেউ কেউ আমাদের বলছিলো কোনো গুনীন বা ফকিরের কাছে যেতে,শিলুকে নাকি ভুতে পেয়েছে।


- ডিসগাস্টিং। এই টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি তে দাঁড়িয়ে আপনার মত একজন শিক্ষিত মানুষের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।


- আমিও এসব বিশ্বাস করিনা ডাক্তারবাবু কিন্তু কি করবো বলুন সন্তানের বিষয়ে প্রত্যেক মা বাবাই দুর্বল। যৌক্তিক অযৌক্তিক সব যেন কেমন গুলিয়ে যায় তখন।


- সন্তান!

হুম...


- কি হলো ডাক্তারবাবু?


- নাথিং। বলুন, আপনার মেয়ে কি পড়ে?


-আজ্ঞে মাস্টার্স করছে। লাস্ট ইয়ার।


- কোথায় পড়ে?


- উড়িষ্যা।


- হুম। এবার বলুন কে প্রথম দেখে ওর এই অস্বাভাবিকতা এবং কবে নাগাদ।


- প্রথম লক্ষ্য করে সুরভী, ওর রুমমেট। প্রায় মাস চারেক আগে একদিন মাঝরাতের দিকে সুরভীর ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে খেয়াল করে শিলু যেন কার সাথে চাপা গলায় হেসে হেসে কথা বলছে। সামনে কেউ নেই,হাতে ফোন নেই... যেন মেয়েটা হাওয়ার সাথে গল্প করছে।


- তারপর?


- এরপর সুরভী শিলুকে ডাকতেই সে চমকে ওঠে এবং সুরভী বারবার জিজ্ঞেস করাতেও স্বীকার করে না ব্যাপারটা।


- হুম।


- এরপর আরেকদিন রাত্রে ঘুম ভাঙতে সুরভী আবার একই দৃশ্য দেখে। এই দিন ও আর শিলুকে না ডেকে ওদের আরেকজন যে রুমমেট রোশনি, তাকে ডেকে দেখায়।


- আপনারা কবে জানলেন তাহলে?


- সুরভী আর রোশনি এরপর পরে আরও দুদিন ধরে ওকে খেয়াল করে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে ওরা শিলুকে লুকিয়ে আমাদের ফোন করে সব জানায়।


- তারপর আপনারা ওকে বাড়িতে নিয়ে আসেন?


- হ্যাঁ। আমি গিয়ে ওকে মিথ্যেমিথ্যই বলি ওর মা অসুস্থ, এই বলে বাড়িতে আনি।


- এরপর আপনারাও লক্ষ্য করেন ব্যাপারটা?


- হ্যাঁ। ওকে বুঝতে না দিয়ে আমরা ওকে নজরে রাখতাম। সুরভীরা ওকে রাত্রে কথা বলতে শুনেছিল আর আমরা শুনতাম দুপুর বেলায়।


- আন্দাজ করতে পারেন কার সাথে কথা বলছে? মানে কোনো বিশেষ নাম?


- হ্যাঁ পারি তো, ঋক।


- ঋক !! 


- হ্যাঁ।


- এই নামে কাউকে চেনেন আপনারা?


- চিনি মানে ওর মুখে শুনেছি নাম টা অনেকবার। ওর কলেজের বন্ধু ছিলো।


- ছেলেটির সম্বন্ধে আর কিছু জানেন?


- না। আসলে আমার মেয়েটা ছোটো থেকেই শান্ত প্রকৃতির। খুব একটা মিশুকে নয়। বন্ধু বান্ধবও তাই বিশেষ নেই। যারা আছে বাড়িতে তারা কেউ কেউ এলেও ঋক কখনোই আসেনি। আর সবার কথার সাথেই ঋকের কথা বলতো তাই আগে আগে খুব একটা গুরুত্ব দিইনি।


- আগে দেননি মানে? পরে দেয়ার প্রয়োজন পড়েছিল?


- না ... মানে... আসলে কলেজের শেষের দিকে আমার স্ত্রীর সন্দেহ হতে শুরু হয় যে আমাদের শিলু ওই ছেলেটির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমার স্ত্রী শিলুকে সাবধানও করে। কিন্তু শিলু কোনো কথা বলতে চায়নি এ নিয়ে।


- হুম। ছেলেটির কোনো সন্ধান জানেন?


- নাহ। ওর কলেজের কোনো বন্ধুরই ঠিকানা বা ফোন নম্বর জানিনা আমরা। আর শিলুর কাছেও চাইতে পারছিনা।

.....

কি হলো ডাক্তার বাবু?


- কিছু না। আচ্ছা কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে যখন আপনার মেয়ে এরকম আচরণ করে?


- সুরভী বলছিলো ওরা চারদিনই রাত দেড়টার দিকে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে। আর আমার স্ত্রী দুপুরের দিকেও খেয়াল করেছে।


- ওকে, ঠিক আছে। আপনার মেয়েকে আনুন একদিন।


- আচ্ছা।

ডাক্তার বাবু...


- হুম?


- একটা কথা বলবো?


- বলুন।


- আমার স্ত্রী বলছিলেন যে.... 


- কি হলো বলুন।


- বলছিলেন যে ঋক বোধহয় আর বেঁচে নেই। কোনো দুর্ঘটনায় ....

আর ওরই আত্মা শিলুকে…


- আপনি মেয়েকে নিয়ে আসুন।


- সরি ডাক্তারবাবু।

আসছি।


                         ৩


- তোমার নাম?


- শায়লা।


- বাহ্ বেশ সুন্দর নাম তো তোমার। কে রেখেছে ?


- বাবা।


- ইকবাল সাহেবের পছন্দ আছে বলতে হবে।

তো শায়লা কি নিয়ে পড়ছো তুমি?


- ফিলজফি, মাস্টার্স। লাস্ট ইয়ার।

ডক্টর..


- বলো।


- বাবা তো এগুলো সবই আপনাকে বলেছে তাই না?


- হ্যাঁ কিন্তু তাও তোমার মুখ থেকে একবার শুনতে চাইলাম।


- ডক্টর আমি পাগল নয়। আমার মাথাটাতে কোনো রকম কোনো গোলমাল নেই। আয়াম পারফেক্ট।


- আরে কে বলেছে তুমি পাগল? আমি জানি তুমি পাগল নও।


- প্লিজ ডক্টর। আমি একজন প্রাপ্ত বয়স্কা সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে, তাই আমার সাথে এসব ছেলে ভোলানো কথা বলবেন না।


- আমি ছেলে ভোলানো কথা বলছিনা। আমি সত্যিই জানি তুমি পাগল নও। পাগল কেন হতে যাবে !! তোমার শুধু....


- কোনো হ্যালুসিনেশন হয় না আমার। ও সত্যিই আসে।


- কে আসে?


-ঋক।


- আসে মানে? কিভাবে আসে?

কি হলো বলো।চুপ করে গেলে যে।


- আপনি বিশ্বাস করবেননা।


- আমি তোমায় বিশ্বাস করছি। তুমি বলো।

কি হলো চুপ করে গেলে কেন? তুমি কি জানো তুমি ছাড়া ঋককে আর কেউ দেখতে পায়না?


- না জানার কি আছে ! সেটাই তো স্বাভাবিক।


- মানে?


- ডক্টর আমি আপনাকে সব বলতে পারি কিন্তু বিনিময়ে আপনাকে একটা প্রমিস করতে হবে?


- কি প্রমিস?


- বাবাকে বোঝাতে হবে যে আমি সুস্থ আছি। আমি সাইকো নই বা ভুতেও ধরেনি আমায়।

বলবেন তো বাবাকে?


- আচ্ছা বলবো।


- প্রমিস?


-প্রমিস।


- মনে রাখবেন কিন্তু।


- রাখবো।


- জানেন ডক্টর ঋক যখন আমাকে সেই প্রমিসটা করেছিল ও ঠিক আপনার মত করে হেসেছিল।

ওকে যখনই কোনো প্রমিস করতে বলতাম ও হাসতো আর বলতো আমার নাকি শুধু শরীরটাই বেড়েছে মন টা এখনো প্রাইমারি স্কুলেই পড়ে আছে।


- তুমি বুঝি ওকে সব সময় সব বিষয়ে প্রমিস করতে বলো?


-হুম। এটা আমার মুদ্রাদোষ বলতে পারেন।


- আচ্ছা, তা কোন প্রমিসটা করতে গিয়ে ঋক হেসেছিল বলছিলে?


- ওকে যে কোনো প্রমিস করতে বললেই হাসতো।


- না না, একটু আগে স্পেসিফিক কোনো একটার কথা বলছিলে…


- ওহ হ্যাঁ। ও আমাকে প্রমিস করেছিল যে কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাবেনা আর আমাকেও যেতে দেবে না।


- ও প্রমিস রেখেছে?


- হ্যাঁ। ও আমাকে খুব ভালোবাসে তাই এত কষ্ট করে রোজ আমার কাছে আসে।


- কষ্ট কেন?


- আসলে ও যেখানে থাকে সেখান থেকে এখানে আসা সহজ নয়, খুব কষ্ট হয় আসতে। ও তাও আসে। কতো বোঝাই কিন্তু শোনেনা।

চিরকালই বড্ড জেদি।


- ও কোথায় থাকে?


- আমি জানিনা। ও বলতে চায়না, বলে সেখানকার কথা নাকি আমায় জানতে নেই।


- কেন?


- বলেনি।


- কি হলো কাঁদছো কেন?


- জানেন ডক্টর ও আমার কাছে আসে বলে আমার ভালো লাগে কিন্তু তাও কেন জানিনা আমি ঠিক খুশি হতে পারিনা।


- কেন? তুমি তো ওকে ভালোবাসো !


- বাসি তো । কিন্তু যখনই মনে পড়ে ও আমার জন্য ওর পেরেন্টসকে এতো বড় আঘাত দিলো তখন কিছুতেই ক্ষমা করতে পারিনা নিজেকে। আল্লাহ জানেন ওদের এখন কি অবস্থা !


- চোখ মোছ। তুমি চেনো ওর পেরেন্টসকে?


- ওর বাবাকে চিনিনা। আঙ্কেল বাইরে থাকেন। তবে আন্টিকে চিনি।

একবার বাজারে দেখা হয়েছিল। খুব সুইট উনি। আমার সাথে খুব মিষ্টি করে কথা বলেছিলেন। আসলে তখন তো উনি আমাকে ঘৃনা করতেননা....


- উনি তোমাকে এখন ঘৃণা করেন!


- হুম। আসলে আমাদের তো রিলিজিওন আলাদা তাই যবে থেকে আমাদের রিলেশনের ব্যাপারটা জেনেছেন তবে থেকে আমায় ঘৃণা করেন।


- হুম।


- ডক্টর, রিলিজিওন আলাদা বলে ফিলিংস আসা কি আটকানো সম্ভব? তবুও তো দুটো বছর দুজনেই নিজেদের ফিলিংস গুলোকে নিজেদের মনের মধ্যেই বন্দি করে রেখেছিলাম। তারপর একদিন এক দুর্বল মুহূর্তে দুজনে দুজনের কাছে কনফেস করে ফেলি। ঋক এমনিতেই একটু জেদি ছিল তারপর যখন জানতে পারলো আমিও ওকে .... ও আর কোনো বাধা মানতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করেছিলাম ওকে বোঝানোর যে আমাদের ফ্যামিলি, সোসাইটি কোনোদিনও মেনে নেবে না। কিন্তু ও আমার কোনো কথা শুনতে চাইতো না। আমিও মাঝে মাঝে ভেঙে পড়তাম, ওকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবলে বুক ফেটে যেত আমার। আমিও তো মানুষ ডক্টর,কি করে নিজেকে পাথর করে তুলবো?


- কেঁদো না শায়লা, জল খাও। শায়লা…


- ইয়েস ডক্টর


- ঋক মারা গেল কিভাবে?


- সুইসাইড। থার্টি স্লিপিং পিলস। আন্টির লাগে, পুরো ভর্তি শিশি পেয়ে গিয়েছিল।


- ও কেন নিজেকে শেষ করে দিলো কিছু জানো?


- ঠিক জানিনা তবে আন্দাজ করতে পারি।

ও একবার আমায় বলেছিলো বাস্তবে আমার সাথে থাকা সম্ভব না হলে অবাস্তবেই তাকে সম্ভব করে তুলবে। সত্যিই তাই করল।


- হুম। তুমি কি আন্দাজ করতে পারো বলছিলে যেন?


- বলছি।


- হুম।


-যেদিন ঘটনাটা ঘটে সেদিন আন্টি মানে ঋকের মা আমাকে ফোন করে বলেন আমি যেন ওর জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাই। ঋক ছোটবেলা থেকে নাকি অন্য একজনকে ভালোবাসে। সে মেয়েটি ওর বাগদত্তা। আমি ওর মাথা খেয়ে নিচ্ছি। আমি বশিকরণ করেছি ওকে ইত্যাদি...এরকম অনেক অপমানজনক কথা উনি বলেছিলেন। আমার পেরেন্টস সম্পর্কেও ....


- সামলাও নিজেকে। বলো তারপর কি হলো?


- আমার তখন অপমানে মাথা ঘুরছিলো। আমি নিতে পারছিলাম না আর। ওনাকে কিছু বলিনি। ফোনটা কেটে সুইচড অফ করে দি শুধু। তারপর কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাই। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তখন। আমার ঘুম ভাঙে আমার রুমমেট রোশনি ডাকে। ডিনার করার জন্য ডাকছিল। আমি গেলাম না। জানলার ধারে এসে বসলাম। মনে হচ্ছিল পাগল হয়ে যাবো কষ্টে। এরপর আবার কখন যেন ঘুমিয়ে যাই।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙার পর ফোনটা অন করার সাথে সাথেই একের পর এক মিসড কল আলার্ট ঢুকতে থাকে। দেখি ঋকের বাহান্নটা মিসডকল। কিন্তু যখন কলেজের অন্য বন্ধুদের অনেক গুলো করে মিসড কল দেখলাম তখনই আমার মনটা কেমন যেন কু ডাকতে শুরু করে দিলো। তারপর এক বন্ধুকে ফোন করতেই.....


-খবরটা পেলে,তাই তো?


-হ্যাঁ। আমারও তৎক্ষণাৎ মনে হয়েছিল নিজেকে শেষ করে দি। রোশনি আর সুরভী না থাকলে সেদিন হয়তো ওটাই করেও ফেলতাম। কিন্তু পরে ভেবে দেখেছি আমি যদি মরে যাই তাহলে আরও দুটো মানুষ মরে যাবে ... আমার মা বাবা। ঋক এই ভুলটাই করলো। ওর মা বাবা না জানি কত কষ্টেই না আছেন ! আন্টির ওপর সেদিন খুব রাগ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ওনার যা ক্ষতি হলো তার তুলনায় আমার অপমানটা তো নেহাতই তুচ্ছ। মা হিসেবে ওনার যেটা ঠিক মনে হয়েছিল উনি হয়তো সেটাই করেছিলেন কিন্তু ঋক বোকার মতো ...

আমার মনে হয় কি জানেন সেদিন আন্টি আমাকে ফোন যা যা বলেছিলেন সেগুলো হয়তো ঋক সবই শুনেছিল, আর তাই ...


- ঋক ঠিক কবে থেকে তোমার কাছে আসছে?


- প্রমিসটা মনে আছে তো ডক্টর?


- কোন প্রমিস?


-বাহ্ এরই মধ্যে ভুলে গেলেন ! 

তাহলে মনে করিয়ে দিচ্ছি আবার, আমার বাবাকে কি বলবেন।


- আমার মনে আছে।


- গ্রেট। তাহলে আমার গল্পটা কেমন লাগলো? বেশ থ্রিলিং না?...


আরে চমকে উঠলেন যে! চমকানোরই কথা অবশ্য। এরকম কেস আগে আসেনি না?


- শায়লা …


- ইয়েস ডক্টর, আমি আপনাকে একটা গল্প বললাম জাস্ট। নাথিং এলস।

ঋক আমার কাছে আসেনা, ও মরে গেছে। ও আর কি করে আসবে?


- তাহলে তুমি কার সাথে কথা বলো?


- ঋক আমার হ্যালুসিনেশন নয় ডক্টর, ঈমাজিনেশন।


- ঈমাজিনেশন?


- হ্যাঁ। পরিষ্কার করে বলছি। ঋক মারা যায়, ওকে শেষ দেখাটাও দেখতে পাইনি। আমি মানতে পারতাম না এটা। আমার মনে হতো ঋক বেঁচে আছে, ও আছে। ভীষণ কষ্ট হতো। ওই রাত্রে আর ছুটির দিন গুলোতে দুপুরে আমরা ফোনে কথা বলতাম। এই সময় গুলো আমার আরও বেশি করে দম বন্ধ লাগতো। নিজেকে এই নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে আমার এই খেলাটা শুরু করলাম।

হ্যাঁ খেলাই তো। রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি কল্পনা করি ঋক আমার সামনে বসে আছে সেই আগের মতো। তারপর ওই কাল্পনিক ঋক-এর সামনে আমি আমার প্রতিদিনকার সুখ দুঃখ আনন্দ সব উজাড় করে দিতে থাকি যেমনটা আগে করতাম।


- কোনটা সত্যি তাহলে !!!


- আপনার যেটা পছন্দ হবে।


- যদি বলি দ্বিতীয়টা …


- তাহলে বলবো ,আমি জানি আমি মানসিক বিভ্রমের স্বীকার আর আপনি চাইলে তা সারিয়েও তুলতে পারেন। কিন্তু আমি চাইনা আপনি সেটা করুন।


- কেন তুমি সুস্থ হতে চাওনা?


- আমি ঋককে হারাতে চাইনা।আপনি যদি আমার মন থেকে ঋক-এর স্মৃতি গুলো মুছে দেন তাহলে... তাহলে আমার জীবন আরো বড় শূন্যতায় ডুবে যাবে।

আমি জানি আপনি ঠিক বুঝতে পারছেন না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ভালো আছি, বেশ ভাল আছি। আমি ওর স্মৃতি গুলো নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।


- হুম। আর যদি আমি প্রথমটা বিশ্বাস করতে চাই?

...


কি হলো হাসছো কেন?


- বেরিয়ে গিয়ে বাবাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি বুঝিয়ে বলুন,প্লিজ।

আসছি।



                          ৪


স্বনামধন্য সাইকোলজিস্ট ডাঃ অনিমেষ রয় জীবনে অনেক রকম কেস হ্যান্ডেল করেছেন কিন্তু শায়লার কেসটা তাঁর কাছে অন্যরকম গুরুত্বপূর্ণ।

রোজ তিনি নিজেই ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরেন,কোনো অসুবিধা হয়নি কোনোদিন। কিন্তু আজ তিনি বেসামাল হয়ে পড়ছেন মাঝেমাঝেই .... তার চোখ দুটো ঝাপসা।

আগে তিনি চাকরি করতেন মেডিক্যাল কলেজে কিন্তু বছর খানেক আগে তার পরিবারে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনার দরুন চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন বাড়িতেই থাকেন। প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করছেন।

চাকরিসূত্রে তাঁকে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ গুলোতে ঘুরতে হতো আর এখানে বাড়িতে তাঁদের একমাত্র ছেলে ঋগ্বেদ ওরফে ঋককে নিয়ে থাকতেন তাঁর স্ত্রী অদিতি।

একদিন হঠাৎ করে অদিতি ফোন করে তাকে জানান যে তাদের ছেলে একটি মুসলিম মেয়ের "খপ্পরে" পড়েছে। ব্যস্ততার দরুন ডক্টর রয় এ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে অদিতিকে বলেছিলেন সব কিছু সামলে নিতে। ছেলে তাদের খামখেয়ালি ছিল কিন্তু অবাধ্য নয়। সে মাকে শর্ত দেয় সে তার প্রেমিকাকে বিয়ে করবেনা কিন্তু পরিবর্তে তাকে যেন অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে না বলা হয়। এদিকে অদিতি নিজের ছোটবেলার বান্ধবী শ্রিতমাকে কথা দিয়ে রেখেছিলেন যে তার মেয়েকেই নিজের বৌমা করবেন। ঋক একথা আগে থেকে জানতো না।

জানার পর তাই মা ছেলের এই দ্বন্দের মাঝেই একদিন অদিতি ঋকের সেই বান্ধবীটিকে ফোন করে অপমান করেন। তিনি ভেবেছিলেন এরপর মেয়েটা তার ছেলের জীবন থেকে সরে যাবে। ঋক বোধহয় আড়াল থেকে এই কথোপকথন শুনে নেয়।

ডাঃ রয়ের চোখে আর প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। কোনো রকমে একহাতে স্টিয়ারিং ধরে অন্য হাতে চোখ মুছলেন। অদিতি যখন তাকে ফোন করেছিলেন তখন তিনি যদি একবার এসে ঠান্ডা মাথায় কথা বলতেন দুজনের সাথে তাহলে হয়তো দুর্ঘটনাটা এড়ানো যেত। ছেলেটার বড্ড অভিমান ছিল। সুইসাইড নোটে শুধু লিখেছিল - "এটা কি করলে মা?"

   অদিতি আজ একবছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। সারাবাড়ির আনাচে কানাচে তিনি দেখতে পান ঋক দাঁড়িয়ে, তাকে প্রশ্ন করছে - " এটা কি করলে মা?" "এটা কি করলে মা?"

বেশ কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন অদিতি,সফল হননি।এখন বাড়িতে দুজন আয়া থাকে তাঁর দেখাশুনা করার জন্য। যথাসাধ্য চিকিৎসা করা সত্ত্বেও অদিতির অবস্থার অবনতি হচ্ছে দিনকে দিন।

  ডাঃ রয়ের চোখদুটো আবার ঝাপসা হয়ে উঠলো।চোখ দুটো মুছতে যাবেন এমন সময় গাড়ির ভেতর থেকে একটা খুব চেনা গলায় কেউ বলে উঠলো,

"দেখে বাবা,সামনে ট্রাক।"


শেষ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy