Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Debdutta Banerjee

Crime

2.2  

Debdutta Banerjee

Crime

বন্ধু যখন

বন্ধু যখন

6 mins
17.4K


সাউথ সিটি থেকে বার হতেই বৃষ্টিটা শুরু হয়েছিল। অর্চি একবার তিতির কে বলে, -"চল, তোকে আমার গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।"

-"দরকার নেই, বনির সাথে একটু কাজ আছে। একবার গড়িয়হাট যাব রে। " তিতির এড়িয়ে যায়।

বনির দিকে একবার তাকিয়ে এগিয়ে যায় অর্চি। রাই আর অরীণ একটু পিছিয় পড়েছিল। অর্চিকে চলে যেতে দেখে রাই বলে, -"ওর আবার কি হলো!!"

অর্চি ,রাই, অরীণ, বনি আর তিতির কলেজের বন্ধু। বনি একটা মেসে একাই থাকে। ওর বাবা- মা মালদায় থাকে। অর্চির বিশাল ফ্ল্যাট গল্ফগ্ৰীণে। ওর বাবা-মা সেপারেট হয়ে যাওয়ার পর একাই থাকে। বাকিদের বাড়ি এই বাঘাযতীন আর যাদবপুরেই। ওদের বৈকালিক আড্ডা এই সাউথ সিটি মলে। আর কিছুক্ষণ আড্ডা দিতেই বৃষ্টিটা কমে এসেছিল। তিতির আর বনি একটা অটোয় গড়িয়াহাট চলে যেতেই অরীণ রাইকে নিয়ে বাইকে বেরিয়ে গেল।

তিনঘন্টার বৃষ্টিতে গড়িয়াহাট যে এভাবে ভাসবে ওরা বুঝতেই পারেনি। রাত প্রায় আটটা, আর রাত করা যাবেনা। যাদবপুর অবধি বাসে এসে যখন আর কিছু পেলনা, জল ভেঙ্গে হেঁটেই যাবে ভেবেছিল তিতির। বনি ওকে এই বৃষ্টির রাতে একা ছাড়তে চায় না। অন্ধকারেই জল ভেঙ্গে এগিয়ে চলে দুজন।

তিনঘন্টা বৃষ্টিতেই দক্ষিন কলকাতা পুরো জলের তলায়। জল কেটে গাড়ীটা ড্রাইভ করছিল সুজিত। বাঘাযতীনের কাছে পরিত্যক্ত কারখানাটার সামনে এসে জোরে ব্রেক কষলো। রাস্তার পাশে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে ছেলেটা। গাড়ীর হেড লাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছিল মাথার পাশে রক্তের নদী বয়ে চলেছে। সুজিত যেই দরজাটা খুলতে যায় হাতটা চেপে ধরে মালিয়া, "ছেড়ে দাও, নেমো না। পুলিশ কেস হবে!!" আতঙ্কে মালিয়ার গলাটা কেঁপে যায়। আর একমাস পর ওদের বিয়ে। মালিয়া চায় না সুজিত এ সময় এসব কিছুতে জড়িয়ে যাক। কিন্তু তবুও সুজিত ওর হাতটা ছাড়িয়ে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে নেমে পড়ে। ছেলেটাকে এপাশে ফেরাতেই মুখটা দেখে চমকে ওঠে মালিয়া, এ যে বনি, তার ভাই অরীণের বন্ধু।

অরীণ আর রাই হাসপাতালের বাইরে ওয়েট করছিল। বনির বাড়ি সেই মালদা, ওর বাবা মা রওনা দিয়েছেন। ওদিকে তিতিরের এখনো কোনো খবর নেই। অর্চির ফোনটা কাল রাত থেকেই বন্ধ। ওকে এখনো খবরটা দেওয়া যায় নি। বনির জ্ঞান তখনো ফেরে নি।

সুজিত পুলিশের এক অফিসারকে পুরোটা বুঝিয়ে বলছিল ওধারে। অরীণরা যেটুকু জানে আগেই বলেছে, কিন্তু বিকেল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বনি আর তিতির কোথায় কি করছিল এটা বনির জ্ঞান না ফিরলে জানা যাবে না বোধহয়।

আরেক বার সুইচ অফ মোবাইলটা হাতে নিয়েও রেখে দেয় অর্চি। রাতের নেশার ঘোর এখনো কাটেনি। রাত জাগা লাল চোখ দুটো নিয়ে আয়নার দিকে তাকায়। আবার দেখতে পায় ঐ জ্বলন্ত চোখ দুটো, এখনো ঐ ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে মেয়েটা। ভীষণ ভালবেসেছিল মেয়েটাকে!! কিন্তু ও বুঝলো না এটাই দুঃখ!!

আরেকবার ওর ওপর চড়াও হয় অর্চি। এই বেডরুমের বন্ধ দরজা জানালার বাইরে মেয়েটার চিৎকার পৌঁছায় না। পুরো ডুপ্লেক্সে আর কেউ নেই। কাজের লোকটা পাঁচদিনের ছুটিতে গ্ৰামে গেছে। ওকে যন্ত্রণা দিয়ে এক পৈশাচিক আনন্দ পায় অর্চি।

মেয়েটার মুখটা চেপে ধরে অর্চি, বলে, -"বনির থেকে আমি তোকে অনেক বেশি ভালবাসি তিতির। অনেক ভালো রাখবো তোকে। একবার শুধু বল তুই আমার। "

মুখটা ছাড়তেই একদলা থুতু ছুঁড়ে দেয় তিতির। হাত পা তখনো বাঁধা। বনি শেষ অবধি চেষ্টা করেছিল বাধা দেওয়ার। তিনটে গুন্ডা ভাড়া করেছিল অর্চি। তখনো আসলে তিতির বোঝে নি অর্চি এসবের পেছনে। জ্ঞান ফিরেছিল অর্চির বেডরুমে। বনিটার যে কি হল!!

বাঁধা পায়েই জোরে একটা লাথি মারে অর্চিকে। এবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না অর্চি। পাশের টেবিল থেকে চাকুটা তুলে নেয়।

কোনো ভয় ছিল না তিতিরের চোখে, ছিল শুধুই ঘৃণা। কাল থেকে ঐ জ্বলন্ত চোখ দুটো তাড়া করে ফিরছে অর্চিকে। কিছুতেই পালাতে পারছে না। মাঝে মাঝে ঐ বিকৃত দেহটার উপর আক্রোশ মেটাচ্ছে অর্চি।

সব ঐ বনির জন্য। কি যে তিতির দেখেছিল ঐ বনির ভেতর ভেবে পায় না অর্চি। সর্বক্ষণ ঐ বনির সাথেই ঘুরঘুর করতো মেয়েটা, অর্চির দিকে আলাদা করে তাকাতই না। নতুন অডিটা কিনে প্রথম তিতিরকেই চড়াবে ভেবেছিল, ও পাত্তাই দিল না!! ঐ বনির সাথে বাসে, অটোতে সারাক্ষণ টো টো!! একটা দিন একা ওকে কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি। ঐ বনিটাই যত নষ্টর মূল। বোতলটা তুলে তরলটা গলায় ঢেলে দেয় আর একবার। ভেতরের জ্বালাটা তবু কমে না।

বৃষ্টিটা কমলেও আকাশটা মেঘলা, গাছের পাতা থেকে টুপটাপ জল ঝরেই চলেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল মালিয়া। 

আজ তিতিরের ছবি এতবার টিভির পর্দায় দেখাচ্ছে, তবু মনটা কেমন কু ডাকছে। বড় ভাল ছিল মেয়েটা। বনিও খুব ভাল। ওদের পাঁচ বন্ধুকেই খুব ভাল করে চিনত মালিয়া, কত একসাথে আড্ডা মেরেছে এই বাড়িতে। একসাথে সিনেমা দেখেছে। কি যে হয়ে গেল !!!

কেঁদে কেঁদে চোখের জল শুকিয়ে গেছে সরমার। আজ দু'দিন মেয়েটা বাড়ি ফেরেনি। তিতিরের মত নিরীহ একটা মেয়ের ক্ষতি কে করল!ভাবতে পারে না সরমা। মেয়েটা বন্ধুর মতো ছিল। সব কথা বলত বাড়িতে। বনিও খুব ভালো ছেলে। কি যে হয়ে গেলো!!

থানার লোকগুলো বার বার কুৎসিত ইঙ্গিত দিচ্ছিল। বনিকে নিয়েও নোংরা কথা বলছিল!! সরমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিল তার মেয়ে অমন নয়। কিন্তু কে শুনবে? বাপ মরা মেয়েটার ছোট থেকেই কপালটা পোড়া।

ফোনটা একটানা বেজে চলছে। একটু আগেও বার বার আশা নিয়ে ফোন ধরছিলেন সরমা। কিন্তু সেই এক আত্মীয়দের ফোন আর সহানুভূতির মোড়কে কিছু অপ্রয়োজনীয় কথা।

অরীণ আর রাই আজ অর্চির ফ্ল্যাটে এসেছে। বনি কোমায় আচ্ছন্ন আজ তিন দিন। অত্যধিক রক্তক্ষরণে ওর মাথায় চাপ পড়েছে। অথচ এই অসময়ে অর্চির কোনো খবর নেই। ওর বাবা মায়ের সেপারেশনের পর ছেলেটা কেমন বদলে গিয়েছিল। টাকা পয়সার অভাব না থাকলেও ভালবাসা আর নির্ভরতার অভাবে কেমন যেন হয়ে গেছিল ধীরে ধীরে। তিতিরকে মনে হয় একটু বেশিই পছন্দ করতো!! তবে বলেনি কখনো মুখ ফুটে। বরাবর কথা কম বলে অর্চি। ইদানিং আরো চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল।

বার বার বেল বাজিয়েও সাড়া পাওয়া যায় না, কাদা মাখা অডিটা নিচের গ্যারেজে দেখে ওরা আরো অবাক হয়। গাড়ী ছাড়া অর্চি কোথাও যায় না আজকাল!! তবে কি মুম্বাই উড়ে গেলো বাবার কাছে !! নাকি দিল্লিতে, মা-এর কাছে !!

দরজার নিচে দু দিনের বাসি পেপার পড়ে রয়েছে। নিচের দারোয়ান কিছুই বলতে পারলনা এ ব‍্যাপারে। ফোনটা এখনো বন্ধ।

সুজিত বনির বাবার সাথে থানায় এসেছিল। পুলিশগুলো কোনো কাজই করেনা আজকাল। সুজিতের বাবার এক বন্ধু লালবাজারে আছে, সে ফোন করায় আজ একটু নড়েচড়ে বসেছে এই থানা। তিতিরের ফোনটাও পাওয়া যায়নি।

অরীণ আর রাই অর্চিকে নিয়েও টেনশন করছিল। আজকের দিনটা দেখে অর্চির কথাও থানায় জানানো হবে ওরা ভেবে রেখেছে।

থানার সেকেন্ড অফিসার একটা ফোন এ্যাটেন্ড করছিলেন। রিসিভারটা রেখে ভাবলেশহীন মুখ করে বললেন -"দুটো লাশ আইডেন্টিফিকেশনে যেতে হবে। একটা বাইপাসের ধারে পাওয়া গেছে অন্যটা উষাগেটের কাছে। বয়স আর বর্ণনা অনেকটাই মিলে যাচ্ছে, এখন চলুন , মেয়েটার মাকেও ডেকে নিন।"

সুজিতের গা-টা কেমন গুলিয়ে ওঠে। অরীণ আর রাই ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কি করবে বুঝে পায় না......।

মর্গের থেকে বেরিয়ে রাস্তায় বসে পড়েছিল রাই। আর এক পা চলার ক্ষমতা ছিল না। প্রথম মেয়েটা তিতির নয়, ওরা দেখেই বুঝেছিল। কিন্তু পরেরটার মুখটা এতটাই বিকৃত ছিল, আর সারা গায়ে এত অত্যাচারের চিহ্ন ছিল যে ওরা বুঝতেই পারছিল না কিছু।

অরীণ তাকাতেই পারছিল না ভাল করে। মৃতার শরীরে কোনো কাপড় বা চিহ্ন ছিল না। খুনি সব প্রমাণ আগেই লোপাট করে দিয়েছিল। তিতিরের মাকে সাহস করে ওরা ফোন করতেও পারে নি।

অরীণের ফোনে অর্চির ফোনটা এসেছিল চতুর্থ দিন। ফোনটা তুলতেই ওপাশে অর্চি ভাঙ্গা গলায় বলেছিল -"আমি আর পারছি না রে অরীণ, আমায় বাঁচা...."

-" তুই কোথায়? কি হয়েছে তোর?"

-" ঐ চোখ দুটো আমায় মেরে ফেলবে। আমি ... আমি ভয়ে কোথাও যাই না, লুকিয়ে আছি"

-"কোথায় আছিস? কে মারবে তোকে ?...অরীণের কথা শেষ হওয়ার আগেই অর্চি বলে,-" এতদিন তিতির একা ছিল। আজ বনিটা আবার এসে জুটেছে। দুজনের জ্বলন্ত দৃষ্টি...ওরা আমায় শেষ করে দেবে... আর পারছি না রে....."

ফোনটা কেটে যায়।

পিছন থেকে রাই বলে -" এই মাত্র সুজিতদা ফোন করেছিল রে। আমাদের যেতে হবে। বনি আর নেই। ভোর রাতেই সব শেষ।"

সমাপ্ত

#positiveindia


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime