Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sonali Basu

Fantasy

0  

Sonali Basu

Fantasy

বনানিগড়ের বুদ্ধিমান সুমন্তর গল

বনানিগড়ের বুদ্ধিমান সুমন্তর গল

5 mins
830


বহু বছর আগের কথা। বনানিগড়ের রাজা চন্দ্রকুমার আর তার রাণী ঊর্মিমালা বেড়াতে বেরিয়েছেন। ওনাদের ইচ্ছে রাজ্যের সব জায়গা ঘুরে দেখা আর প্রজারা কে কেমন আছে তা নিজের চোখে পরখ করা। তার অবশ্য কারণ আছে বৈকি। চন্দ্রকুমার রাজা হওয়ার পর অনেক রকমের প্রকল্প চালু করেছেন প্রজাদের স্বার্থে। কাজগুলো যাতে ঠিকভাবে হয় তা দেখার জন্য প্রচুর লোকও নিয়োগ করেছেন। তাদের ওপর আবার রাজ্যের মন্ত্রীকে নিয়োগ করেছেন সব কাজ সুচারু রূপে হচ্ছে কি না দেখার জন্য। তা মহামন্ত্রী ওনার কাছে মাঝেমধ্যে খবর দিচ্ছে যে প্রতিটা কাজ কতদূর এগোলো। তবু রাজামশায়ের ইচ্ছে হল নিজের চোখে দেখার। রাণীমাকে বললেন ওনার মনের ইচ্ছে। রাণী ঊর্মিমালা বললেন “এতো খুবই সাধু ইচ্ছে মহারাজ তবে আমি বলবো কাউকে জানাবেন না যে আপনি কি কাজে বেরোচ্ছেন”

“তা নাহয় বললাম না কিন্তু এই রাজকার্য তো কাউকে বুঝিয়ে যেতে হবে। পুরো রাজ্য ঘোরার ইচ্ছে যে আমার”

“তাহলে মহামন্ত্রীকে বলে যান কদিনের জন্য মৃগয়া করতে যাবেন সে কদিন উনি যাতে রাজকার্য দেখেন”

“এটা ভালো বুদ্ধি রাণী”

সেইমতো মন্ত্রীকে বললেন “মন্ত্রীমশাই আমি আর রাণী কদিনের জন্য মৃগয়া করতে বেরবো। উত্তরের বনে যাবো আমরা। সে কদিন আপনারা সবাই মিলে রাজকার্য ঠিক করে সামলাবেন”

মন্ত্রী বললেন “ভাববেন না মহারাজ। আপনি যেমন চাইছেন তেমনই হবে”

এক শুভ দিনে রাজা রাণী আর বেশ কিছু সৈন্যসামন্ত উত্তরের বনের দিকে রওনা দিলো। রাজা যে কাজের জন্য বেরিয়েছিলেন সেটা খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে করতে যেতে থাকলেন। রাজবাড়ির কাছাকছি এলাকায় কাজ ভালোই চলছে প্রজারাও বেশ আনন্দিত মনে হল কিন্তু যত রাজ্যের শেষ সীমার দিকে যেতে থাকলেন তত মনে হল কাজ ঠিকমতো যেন হচ্ছে না। রাণী ব্যাপারটা দেখে বললেন “আগে পুরো রাজ্য ঘুরে পুরো কাজের অগ্রগতি দেখে নিন তারপর ফিরে এসে মন্ত্রীকে তলব করবেন”

ঘুরতে ঘুরতে উত্তরের বনে এসে পৌঁছোলেন ওঁরা। রাজা মৃগয়ায় নামলেন। জঙ্গল এতোই গভীর যে অচিরেই উনি হারিয়ে ফেললেন রাণীকে আর সাথে আসা সৈন্যসামন্তকেও। দিন পেরিয়ে রাত এলো কিন্তু রাজা ফিরলেন না। রাণী ঊর্মিমালাও পড়লেন বিপদে। সারা রাত জেগে অপেক্ষা করলেন যদি রাজামশাই ফিরে আসতে পারেন এই ভেবে। কিন্তু উনি না ফেরাতে রাণী রাজামশাইকে খুজতে জঙ্গলের চারদিকে সৈন্য পাঠালেন কিন্তু তারাও কেউ খবর আনতে পারলো না। রাণী সৈন্যদলের প্রধানকে ডেকে বললেন “আপনি রাজ্যে ফিরে গিয়ে আরও লোকলস্কর নিয়ে আসুন রাজাকে খুঁজে বের করার জন্য আমি ততদিন এখানেই অপেক্ষা করি যদি রাজামশাই ফিরে আসেন”

কয়েকটা সৈন্যকে রেখে, বাকিরা চলে গেলো রাজ্যের উদ্দেশ্যে। দিন গেল মাস গেলো বছর পেরিয়ে গেলো কিন্তু তারা আর এই রাস্তায় ফিরে এলো না। ওদিকে রাজাও রাস্তা চিনে বনের বাইরে আসতে পারলেন না। রাণী পড়লেন বিপদে। বাকি সৈন্যদেরকে রাজ্যে ফেরত পাঠাতে চাইলেন সাহায্যের আশায়। ওদের মধ্যে সুমন্ত বেশ বুদ্ধিমান ছিল। সে সুযোগ বুঝে একা দেখা করে বলল “রাণীমা আপনি আমাদের ফেরত পাঠাচ্ছেন ঠিকই তবে ফিরে গেলে আর হয়তো আসতে পারবো না আর এখানে”

রানী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন “কেন?”

“আগে যারা ফিরে গেছে তারা আর ফিরে আসেনি। আমার মনে হচ্ছে মন্ত্রী মশাই তাদের এদিকে আর পাঠাননি। মন্ত্রীমশাই শত্রুতা করেছেন। এখন মন্ত্রীমশাই রাজ্যের মাথা। উনি না চাইলে কিছু হবে না”

রাণী খানিক ভেবে বললেন “এই সন্দেহ অবশ্য আমারও হয়েছে কিন্তু তোমাদের তো ফিরতেই হবে কারণ রাজকন্যা রূপমতি তো রাজমহলেই রয়ে গেছে। তাকে তো নিয়ে আসতে হবে নাহলে তো তারও বিপদ”

“জানি রাণীমা তবে রাজকুমারীও চলে এলে রাজ্য একেবারেই শত্রুদের হাতে চলে যাবে। তাই আপনি বরং সৈন্যদের সবাইকে পাঠালেও আমাকে রেখে দিন ফাইফরমাশ খাটার জন্য। অন্তত এখন যে সৈন্যদলের মাথা তাকে একথাই বলুন। ওঁরা চলে গেলে ওদের পিছন পিছন আমি যাবো একা। চুপিচুপি রাজ্যে ঢুকে দেখবো কোথায় কি ঘটছে। চেষ্টা করবো রাজকন্যার সাথে দেখা করে সব বলার। তারপর ঈশ্বরের কৃপা থাকলে একটা পথ ঠিক বেরিয়ে আসবে”

উরমিমালার কাছে আর কোন রাস্তা খোলা ছিল না তাই তিনি রাজি হলেন। সুমন্তর কথা মতো বাকিদের পাঠিয়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়ে। ওদের যাওয়ার একদিন পর ভোরে সুমন্ত রওনা হল বনানিগড়ের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে রাণী ওর হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললেন “চেষ্টা করো এটা রাজকুমারীর হাতে দিতে”

সুমন্ত গিয়ে দেখলো ও যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে। মন্ত্রী রাজা হয়ে বসেছে গদিতে। ব্যাপারটা দেখে সুমন্তর ভয় হল তাহলে রাজকুমারী কোথায়? খোঁজখবর নিয়ে জানলো রাজকুমারীকে তার মহলেই আটকে রাখা হয়েছে। কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয় না শুধু একবার মন্ত্রীপুত্র দেখা করতে আসে। সুমন্ত সুযোগ বুঝে মন্ত্রী পুত্রের সাথে দেখা করে কাজ চাইলো। মন্ত্রী পুত্রের খাস চাকর ছিল না। ও তাই সুমন্তকে বলল “তোমাকে দুদিনের জন্য রাখছি যদি ভালো কাজ দেখাতে পারো তাহলে তোমাকে খাস চাকর করে নেবো নাহলে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দেবো”

রাজার সৈন্যদলে কাজ করলেও ও জানতো কাকে কিভাবে খুশি করতে হয়। ও সেই পথে গিয়ে দুদিনেই মন্ত্রীপুত্রের খাস চাকর হয়ে গেলো। এখন সে তার সাথে সব জায়গায় ঘোরাফেরা করে। এক সন্ধ্যায় মন্ত্রীপুত্র ওকে রাজমহলে নিয়ে এলো। সুমন্ত চিনতে পারলো রাজমহলকে। ওর মনে হল আজ হয়তো রাজকন্যাকে দেখতে পাবে। যেখানে রাজকুমারী বন্দি সেই দরজার বাইরে সুমন্তকে পাহারায় বসিয়ে মন্ত্রীপুত্র গেলো তার সাথে দেখা করতে। খানিকক্ষণ থেকে ওঁরা আবার ফিরে গেলো। দু চারদিন পর একদিন রাজকুমারীর ঘরে ঢোকার সময় মন্ত্রীপুত্র তার সাথে সুমন্তর আলাপ করিয়ে দিলো। সুমন্ত দেখলো রাজকুমারী খুবই বিষাদগ্রস্ত। সেদিন কিছু বলল না ও শুধু অভিবাদন করে বেরিয়ে এলো। পরে একদিন সুযোগ বুঝে সেই চিঠি ফেলে এলো জেতা রাণী দিয়েছিলেন।

পরের সন্ধ্যায় সুমন্ত রাজকুমারীর বন্দিশালার চারপাশে ঘুরে দেখে নিলো কথা দিয়ে ঘরে ঢোকা যেতে পারে। সেদিন গভীর রাতে সুমন্ত রাজকুমারীর জানলায় টোকা দিলো। রাজকুমারী জানলা খুলতে ও ফিসফিস করে বলল “বেরিয়ে আসুন। আপনার মা আমায় পাঠিয়েছেন। উত্তরের বনে যেতে হবে ওনার সাথে দেখা করতে”

রাজকুমারী বেরিয়ে এসে সুমন্তর ঘোড়ায় চেপে বসলো। সুমন্ত বলে দিলো “ঘোড়া জানে কোথায় যেতে হবে”

রাজকুমারী পালিয়ে যাওয়ার দুদিন পরে সুমন্ত বনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। রাণীমা সুমন্তকে কাছে পেয়ে বললেন “বাবা আরেকটা কাজ যে তোমায় আর রাজকুমারীকে করতে হবে” বলে সব বুঝিয়ে দিলেন। পরেরদিন ওরা পাশের রাজ্যের উদ্দেশ্যে ছদ্মবেশে রওনা দিলো। পাশের রাজা চন্দ্রকুমারের বন্ধু ছিলেন। ওনার রাজসভায় পৌঁছে সব বলাতে উনি আশ্বাস দিলেন সাহায্য করার।

ওনার সাহায্যে গোটা বন খুঁজে রাজাকে বার করা হল। তারপর দুই রাজা মিলে বনানিগড় আক্রমণ করলেন। মন্ত্রী ধরা পড়লো। বিচারে তার ফাঁসি হল। আর মন্ত্রীপুত্রকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হল। রাজা চন্দ্রকুমার আবার সিংহাসনে বসলেন। সুমন্তর সাহসিকতার আর বুদ্ধিমত্তার পুরস্কার হিসেবে ওকে নতুন মন্ত্রী ঘোষণা করা হল আর রাজকুমারীর বিয়ে হল তার সাথে। রাজা চন্দ্রকুমার ঘোষণা করলেন সুমন্ত আর রূপমতির সন্তান পরবর্তী রাজা হবে এই রাজ্যের। প্রজারা খুব খুশি হল।           


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy