Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Bhaswati Mal

Tragedy Romance

3  

Bhaswati Mal

Tragedy Romance

হঠাৎ দেখা

হঠাৎ দেখা

13 mins
1.2K


(1)


“শালা পেটের জ্বালায় রাস্তায় দাঁড়ানো মেয়েরা অচ্ছুৎ পস্টেটিউড আর তোদের ঘরে যে ছেলে দেখলেই ছোঁক ছো‌ঁকানি মোমের পুতুল গুলোর সে খবর রাখিস গান্ডু গুলো?অবশ্য মালগুলো নিজেরাও তো সমান।বউএর সামনে আঁচল ধরা পেড ডগ আর পেছনে এক একটা….”


নিলয়ের টেম্পার দেখেই অর্ক বুঝতে পারে আজকে পার্টির বাড়িতে বোধহয় কিছু হয়েছে।”আরে আরে কুল বার্দার।কি হল রে আবার”-হেসে জিজ্ঞাসা করে ও।


মাফলার টা গলায় জড়িয়ে নিয়ে নীলয় মুখ দিয়ে একটা বিরক্তি সূচক শব্দ করে বলে-”আর বলিস কেন ভাই মালটা তিন দিন ধরে যেতে বলছে আমি ভাই সকালে টাইম দিলেই দুপুরে কর দুপুরে কর


ঘ‍্যান ঘ‍্যান মারাচ্ছিল।ভাই খোদ্দের লক্ষী আজ দুপুরে তাই ছুটলাম।ও মা মাল দেখি কাজের লোক কে আউট করে পাতলা নাইট গ্রাউন্ড পরে দেখা করতে এসেছে”


অর্ক এবার শব্দ করে হেসে ওঠে।নীলয়ের বিরক্তিকর মুখটা দেখে কোন রকমে হাসিটা গিলে নিয়ে আগ্রহ ভরে জিজ্ঞাসা করলো -”


তারপর চাকলি নাকি বে”


হা রে তোদের মতো নিলয় আরও রেগে গিয়ে বললো।


“তাহলে কি করে বৌদির বাহুডোর থেকে মুক্ত হলে চাঁদ?”


অর্কের বলার ধরণে নিলয় এবার হেসে ফেলে।-”কেন ভাই চিরপরিচিত ট্রিক্স জল আনবেন একটু প্লিজ।”-হালকা হেসে বলে নীলয়।ওদের কথার মাঝেই নীলয়ের ট্রেন এসে পড়ে।


অর্ক হঠাৎ করেই ভারী গলায় বলে ওঠে -”আসলে সেলসে


চাকরি করা আমাদের শালা সব দিকেই….এদিকে টার্গেট ফুল ফিল না হলে বসের খিঁচুনি আর অন্য দিকে এই রকম কিছু সেক্স adactrade পাবলিকের চোখে আমরা হলাম সস্তা মাল।দূর দূর ঘেন্না ধরে গেল লাইফে।”


নীলয় হাল্কা করে অর্কের পিঠে হাত রেখে ট্রেনের দিকে এগিয়ে যায়।


(2)


সামনের রোতে বসা ভদ্রলোককে তিনবার ডাকার পরেও চোখ না খোলায় নীলয় মনে মনে কাঁচা খিস্তি করে তিন নম্বর রো এর দিকে এগিয়ে যায়।জানালার ধারে বসা বয়স্ক ভদ্রলোকটি মুচকি হেসে জানালার পাশটা নিলয় কে ছেড়ে দেয়।অনেকক্ষণ পর বিরক্তিটা একটু কাটে।এখন প্রায় এক ঘন্টা নিশ্চিন্ত।হেডফোন টা পকেট থেকে বার করার সাথে সাথেই পরের স্টেশন চলে আসে।গেটের মুখে ফ্রেডেড জিন্স,ব্লাক টপ আর পিঙ্ক সোয়েটারে হঠাৎই চোখটা আটকে যায় নিলয়ের।হাতে দামি মোবাইল, মাথায় পরে থাকা পিঙ্ক স্টাইলিশ ম‍্যাঙ্কি ক‍্যাপটা আরও মিষ্টি করে তুলেছে ধারালো লালচে মুখটাকে।স্টেট চুলটা কোনো রকম দুষ্টুমি ছাড়াই ছড়িয়ে পড়েছে ঘাড় ছাড়িয়ে।সাথে ঠোঁটে পুরু লিপস্টিক এর জাদু।কিন্তু চোখ!!!! নিলয় এর অভিজ্ঞ দৃষ্টি আটকে যায় মেয়েটার চোখ দুটোয়।মৃদু হাসি খেলে যায় নিলয়ের মুখে।হেডফোনটা কানে গুঁজে আরামের শব্দ করে মাথাটা হেলিয়ে দেয় সিটে।


এতক্ষণ ঘুমের জগৎ-এ সাঁতার কাটা ভদ্রলোকটি হঠাৎই ব্যাস্ত ভাবে জায়গা ছেড়ে দেয় মেয়েটিকে।


“শালা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই চুলকানি বেড়ে যায়”-বিরবির করে নিলয়।পাশে বসা বয়স্ক ভদ্রলোকটির কানে পৌছে যায় কথাটা।হাহা করে হেসে উঠে নিলয়ের পিঠে হাল্কা চাপড় দিয়ে বলেন-”যা বলেছ দাদু ভাই”।


কিছু কিছু মানুষ থাকে কখন যেন মামুলি আলাপ করতে করতেই অজান্তেই হয়ে ওঠে আপন।বয়স্ক মানুষ টিও তেমন ভাবে নিলয়কে বেঁধে ফেলে দাদু নাতির সম্পর্কে। কথা বলতে বলতে কখন যে আধ ঘন্টা কেটে গেছে নিলয়ের খেয়ালই থাকে না।হুশ ফেরে দাদু ঘখন গন্তব্য নামবার জন্য উঠে দাঁড়ায়। ”প্রফেসারি জীবনে অনেক তো ছাত্র ঠেঙালাম, চোখ আজো তাই জহর চিনতে ভুল করে না ।জীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে ফাইট দাদুভাই ফাইট,ফাইট”।-দাদুর বলে যাওয়া কথাগুলো অনেক দিন পরে বুকে কেমন একটা চাপ দিয়ে যায় নীলয়কে।দুরন্ত জীবন, হাতে ফাস্ট ক্লাস ফাস্টের রেজাল্ট,পায়ে পায়ে দূরন্ত বলের সট, দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় তরুণ হৃদয় ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া কবিতার রামধনু বৃষ্টি। ছিল সব ছিল।আর এখন!এখন শুধুই ডাল ভাতের জোগাড়। একের পরে দুই, দুই এর পরে তিন শুধু জীবনের হিসাব কষা।একটা বেদনার হাসি ছেয়ে যায় নীলয়ের মুখে।


(২)


“বাজপাখির চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সহজ নয় ফুলপরী।তোমার ঐ লাট্টুর মত ঘুরে যাওয়া চোখই আমায় বলে দিয়েছে, তোমার মাল ধান্দা অন‍্য।শুধু কয়েক সেকেন্ড একটু আনমনা হয়েছি শালা দাদুর পকেট টা মেরে দিলে!”-পিছন থেকে নীলয়ের ফিসফিস করে বলা কথা গুলো শুনে একটু থমকে যায় মেয়েটি।পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে হিসহিসে গলায় বলে ওঠে-”আমি কিন্তু চিৎকার করলে….”


মেয়েটির কথা শেষ করতে না দিয়েই নীলয় বলে ওঠে-”হুম করতেই পার চিৎকার কিন্তু তোমার ব‍্যাগের মধ‍্যে লুকানো দাদুর ব‍্যাগটা যে অন‍্য কথা বলবে সুন্দরী।”


“দাদু”....-তুতলে ওঠে মেয়েটি।


“হুম দাদু ফুলপরী,ওসব কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি ব‍্যাগটা দাও ওনাকে হয়তো এক্ষুনি পেয়ে যাব”-ধমকের সুরে বলে ওঠে এবার নীলয়।


কিন্তু ছোট্ট স্টেশনের কোথাও দেখা যায় না মানুষটিকে।আপশোষ হয় নীলয়ের।একটু আগে যদি খেয়াল করত।ট্রেন টা প্রায় ছাড়ার মুহূর্তে খেয়াল করেছে।ছুটে নামতে গিয়ে পায়েও হালকা চোট লেগেছে।কিন্তু এত কষ্ট করার পরে জিনিসটাই ফেরৎ দিতে না পারলে….


চল আশেপাশে দাদুর নাম ধরে খোঁজ করি।যদিও ও জানে দাদুর নাম বললে ,এখানে কেউ বোধহয় চিনবে না।এখানে তো কোন বন্ধুর বাড়ি আসছিলেন বললেন।তবু একটা শেষ চেষ্টা।।


মেয়েটির চোখ দুটি হঠাৎ জলে ভরে আসে।কেমন একটা মায়া লাগে নীলয়ের।হয়তো নতুন এই লাইনে।”ভয় নেই ভয় নেই চল বলব তুমি কুড়িয়ে পেয়েছ ব‍্যাগটা”-আশ্বাস দেয় নীলয়।


কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটা চায়ের দোকানে খোঁজ নেয় কিন্তু যথারীতি এ নাম অচেনা তাদের কাছে।


জায়গাটা গ্রাম ঘেঁসা ছোট্ট মফঃস্বল।রোজী এই স্টেশন পার হয়ে চলে যায় নীলয়।এই প্রথম নামা এখানে।টাইট জিন্স টপে মেয়েটি আশেপাশের লোকজন এর কৌতূহল জাগিয়েছে ,তাদের বার বার ঘুরে ফিরে দেখা থেকে সহজেই বুঝতে পারে নিলয়।কিন্তু এই শীতের সন্ধ্যা তে গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের আমেজ উপেক্ষা করতেও ইচ্ছা যায় না ওর।মেয়েটিকে ইশারায় বসতে বলে নিজেও পাশে বসে ।মিটমিট করে নীলয়কে হাসতে দেখে মেয়েটি চোখ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে -”কি ব‍্যাপার হাসছেন কেন?”


“তোমাকে দেখে।”-হেসে বলে নিলয়।


মেয়েটি এবার বিরক্ত হয়ে বলে-”অপরের অসহায়ত্ব দেখে সকলের হাসিই পায়।!”


নিলয় তাড়াতাড়ি বলে-”না না সে ব‍্যাপার না আসলে নিখুঁত মেকাপের ডাকসাইটের সুন্দরী এই চায়ের দোকানে আমার মত একটা মালের পাশে বসে আছেন দেখে আশপাশের লোকজন বমকে গেছে।নিশ্চই ভাবছে সকলে এমন একটা মালকে বাগালো কি করে….যাই বলো কার বাবার সাধ‍্যি বুঝবে তুমি পকেট কাটো”....


“কেন আপনি তো বুঝলেন”-কিছুটা যেন দির্ঘশ্বাসের সাথে কথাটা বলে মেয়েটি।নিলয় এতক্ষণে কিছুটা গভীর চোখে তাকায় মেয়েটির দিকে,কেমন একটা মন খারাপের বাতাস যেন ছেয়ে আছে মেয়েটিকে ঘিরে।নিলয় এবার কিছুটা হাল্কা স্বরে বলে-”হ‍্যাঁ মানুষকে দেখে কিছুটা বোঝার ক্ষমতা এই অধমের আছে।”


মেয়েটি এবার কিছুটা ব‍্যাঙ্গের স্বরে বলে-”তাই নাকি!এত কনফিডেন্স?সকল কেই ঠিক ঠাক চিনেছেন ভেবে দেখুন তো।”এবার যেন কিছুটা থমকে যায় নিলয়।কয়েক মিনিট নীরব থেকে নিজেই বলে-”একজন কে ভুল চিনেছিলাম।


“কাকে?নিশ্চই এক্স এর ব‍্যাপার।যা দির্ঘশ্বাস ফেললেন…”-হেসে জিজ্ঞাসা করে মেয়েটি।


দূরের দিকে তাকিয়ে নিলয় আনমনেই উত্তর দেয়-”না সে আমার বর্তমান আমার একমাত্র বাঁচার আকাশ , মেঘলা আকাশ শেষের একমুঠো সোনালী রোদ”।


“গল্পটা তা হলে একটু শোনা যাগ-আগ্রহ নিয়ে বলে মেয়েটি।


হেসে ফেলে নিলয় ছেলে মানুষের মত বলার ধরনে।না মেয়েটার মাঝে এখন রয়েছে একটা সবুজ হৃদয়।হয়তো অভাবের তাড়না বেচারিকে এনে ফেলেছে এপথে।


নরম গলায় বলে নিলয়-


”শুনবেন?কিন্তু রাত যে বাড়ছে ম‍্যাডাম।চলুন স্টেশনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলা যাবে।”চায়ের দাম মিটিয়ে দুজনে হাঁটতে থাকে পাশাপাশি।


রাস্তার স্টিট লাইট তেরছা ভাবে এসে পড়েছে দুজনের মুখে।চোখের তারার মধ্যে যেন জোনাকির মিটমিট।শীতের কুয়াশার চাদর মফঃস্বল এর ছোট্ট রাস্তা টিকে অল্প অল্প ঘিরে ফেলেছে।মাঝে মাঝে দুএক জন পথচারীর কৌতূহলী চাহনি অচেনা মুখ দেখে।দুজনেই হঠাৎ করে যেন নিজের নিজের জগৎ -এ হাড়িয়ে যায়।হঠাৎ রাস্তার কোনে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা নেড়ি কুকুরের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ে।মেয়েটিই আবার জিজ্ঞাসা করে-”কই বলুন?”


“কোথা থেকে শুরু করি বলো তো”-মাফলারটা গলায় ভালো করে পেঁচিয়ে নিতে নিতে বলে নিলয়‌।


“আগে বলুন দেখতে কেমন ছিল, নিশ্চই অসাধারন সুন্দরী?”মেয়েটির বলার ধরণে শব্দ করে হেসে ওঠে নিলয়। হাসি থামলে যেন এক দূর থেকে ভেসে আসে নিলয়ের কন্ঠ”আমি তো তাকে দেখেনি।কথা ছিল একে অপরকে দেখবো সাক্ষাৎ এ দুচোখ দিয়ে।আসলে দেখার বাইরে যে না দেখা টুকু থাকে আমার চোখে সে ছিল তাই।”ক্কি ক্কি নাম ছিল তার?”-কিছুটা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে মেয়েটি।


“দীপ্তি!নিলয়ের দীপ্তি!”


কিছুটা কেঁপে ওঠে মেয়েটি।অস্ফুটে দুবার উচ্চারণ করে -””দীপ্তি নামটা”।নীলয় তখন আনমনে বলে যেতে থাকে ওর দীপ্তির কথা-”ফেসবুকের এক কবির সাথে পাঠিকার কবিতার আলাপচারিতার মাঝে ধীরে ধীরে বাড়ে কথার পরিধি।কবি বুঝতে পারে পাঠিকার মনেও রয়েছে এক কবি মন।কবির উৎসাহে পাঠিকাও কলম ধরে।দুজনেই খুঁজে পায় একে অপরের মনের মাঝে বড্ড মিল।তবু কেউ ব্যাক্তিগত পরিধিতে চায় না অকারণে উঁকি দিতে।দেখতে চায় না একে অপরকে ছবির মধ্যে।


কবি শুধু কল্পনার রঙে রাঙিয়েছে তার মানুষির মূর্তি।সে কল্পনা বহুবার মিলে গিয়ে অবাক করেছে পাঠিকাকে।ডিভোর্সী মা এর বহু কষ্টের মাঝে তাদের ভাই বোনকে মানুষ করার সংগ্রাম পাঠিকার হৃদয় কে করে তুলেছিল প্রেমহীন ধূ ধূ মরুভূমি।তবু তিরতির করে কেঁপে উঠেছে পাঠিকার গোলাপি ঠোঁট, কবির কবিতার লাইনে-”আমার মৃত্যু ঘটুক মানষী তোমার ওই চিবুকের কালো তীলে।”অকারণেই কেন লজ্জ্বায় দুগাল রেঙে উঠেছে আবির লালে বোঝেনি পাঠিকা।কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখা করার পাশে থাকার শপথ ভুলে পাঠিকা হাড়িয়ে গেছে কোন কিছু না বলে কবির জগৎ থেকে।ফেসবুকের আ্যকাউন্ড ডিলিট হয়ে গেছে কবির অজান্তেই।তবুও বার তন্ন করে খুঁজে ফিরেছে কবি তার পাঠিকাকে।আর কোন মাধ্যমও ছিল না কবির কাছে যোগাযোগের ।তবে কি আর পাঁচটা ভার্চুয়াল ফেন্ডের সমগোত্রীয় সে কবির হৃদয় কে বিদ্ধ করেছে সংশয়ের তীর।কিন্তু সে যে অন্য রকম।কিছুতেই কবি মেলাতে পারেনি তাকে আর পাঁচের দলে।ভুলতে পারেনি কবির হৃদয় সেই কালবৈশাখী ঝড়ে ওলট পালট হয়ে যাওয়া দিনে তার দৃড় হাতের বন্ধন।


চিট ফান্ডে মাসমাইনের কর্মচারী হয়ে চিটিংবাজ যচ্ছোর আরও বাছা বাছা বিষেষণে ভূষিত হয়েছে কবি অথাৎ নিলয়ের নির্বিবাদী বাবা।চিরদিন সকলের চোখে সৎ মানুষটি হঠাৎ ঘৃণিত হয়ে পারেনি সেই ধাক্কা সামলাতে।চিরকালের জন্য ব্রেইন হ‍্যামারেজে চলে গেছেন সমস্ত বোধ বুদ্ধির অন্তরালে।পড়াশোনা খেলা ধূলা আর নিজস্ব জগতে ব‍্যস্ত নীলয়ের জীবনে হঠাৎ নেমে এসেছে নিকষ কালো অন্ধকার।চেনা মুখ গুলো হঠাৎ হয়ে উঠেছে মুখোশে ঢাকা এক একটা মুখ।এতদিন সকলের চোখে হিরো নিলয় এক নিমেষে হয়ে উঠেছে চোরের ছেলে চোর।বন্ধু মহলে হয়ে উঠেছে অচ্ছুৎ।তার সাথে বাবার মৃত প্রায় অবস্থায় অসহায় বোন আর মায়ের একমাত্র আশ্রয় স্থল হয়ে উঠেছে নিলয়।এতদিনের তীল তীল করে দেখা সপ্নগুলোকে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে দেখেছে নীলয়।প্রফেসর হবার সপ্ন গুমড়ে কেঁদে হাড়িয়েছে অন্ধকাররে ।কবির তারা ফুলে ঘেরা জগৎ, বাস্তবের খটখটে গদ্য ময় জগতে বারেবারে মাথা কুঁটে ফিরে গেছে কবিকে শূণ্য করে।সব কিছুর জন্য নিলয় দায়ী করেছে বোধ বুদ্ধিহীন শুধু ফ‍্যালফ‍্যাল করে ভাষাহীন ভাবে চেয়ে থাকা বাবার দেহটাকে।নিজেকে শেষ করে নিতে চেয়েছে প্রতিশোধ নিলয়ের অভিমানী মন।


কিন্তু সেই অন্ধকারে আচ্ছন্ন অভিমানী হৃদয় কে পাঠিকা অথাৎ দিপ্তী তার বন্ধুত্বের আলোয় ভড়িয়ে তুলেছে।অবুঝ নিলয় কে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছে নিলয়কে আজ কতটা প্রয়োজন তার অসহায় পরিবারের।কতটা অসহায় আজ তার নির্দোষি বাবা।নিজের সপ্ন নিয়ে বাঁচা সে তো সার্থপরতা।জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া সে তো কাপুরুষতা।সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ভাবনায় তলিয়ে যাওয়া নিলয় আবার নতুন করে খুঁজে পেয়েছে বাঁচার মানে।


সেই !সেই দৃপ্তীকে কিছুতেই নিলয় বসাতে পারেনি দুদিনের আসা যাওয়া ভার্চুয়াল ফেন্ডের আসনে।নিলয়ের হৃদয় দিপ্তীর জন্য রক্ষিত গোপন কুঠুরিতে বসাতে পারেনি আর কোন মেয়েকেই।নীলয়ের প্রেমিক মন আজও অপেক্ষায় তার জীবনের দিপ্তীর।


(3)


কথা শেষ হয় অনেকক্ষণ।এক নিশ্ছিদ্র নীরবতা হঠাৎ করে ভীষণ ভাবে ঘিরে ধরে দুজনকেই।স্টেশনের একটা সিমেন্টের বেঞ্চে পাশাপাশি বসে দুজনে।হঠাৎ এক মেলগাড়ি তীব্র শব্দতুলে স্টেশন পার হয়।নীলয় তখনি আবিষ্কার করে মেয়েটির আইলাইনারে আঁকা দুচোখ জলে টলমল।আর দেহ জুড়ে তীব্র কাঁপুনি।


“কি হল তোমার?এনি প্রবলেম?”-অবাক গলায় প্রশ্ন করে নিলয়।


“না আসলে শীতে”....কোন রকমে ভাঙা গলায় উত্তর দেয় মেয়েটি।


নিলয় ব‍্যস্ত হয়ে একটু গরম চায়ের খোঁজে যায়।


(4)


“আমার ট্রেন এবার আসবে।এই নিন ব‍্যাগটা।”-মেয়েটা ব‍্যাগটা এগিয়ে ধরে নিলয়ের দিকে। 


“কি করবো আমি?”-নিলয় হাল্কা হেসে বলে।


“যদি খুঁজে পান মানুষ টাকে দিয়ে দেবেন।”-মেয়েটি বলে।


“কি হবে তাতে আবার তো কাল অন্য কারো”...নিলয়ের কথা সম্পূর্ণ হবার আগেই মেয়েটি হাল্কা স্বরে হুম বলে।


নিলয় যেন একটু ব্যাথিত গলায় বলে-”আমার মন কিন্তু বলছে এ কাজ তোমার উপযুক্ত নয়”


“কি ভাবে বুঝলেন?না সুন্দরী মেয়ে দেখে মনে হলো?”-ব্যাঙ্গের গলায় বলে ওঠে মেয়েটি।


নিলয় এবার যেন এক অচেনা গলায় বলে ওঠে -”না আসলে আমি তোমার চুলে দেহ জুড়ে পেয়েছি নদীর মতো পবিত্র এক আবেশ,যে আবেশে শরীরের বাইরে যে মানবী থাকে তার প্রতি করে তোলে নতজানু।এমন গন্ধ আমি শুধু পেতাম আমার দীপ্তিরর শরীরে।এরপর আজ কেন জানি না আবারও পেলাম তোমাকে ঘিরে”


হঠাৎ ছটফট করে ওঠে মেয়েটি,কাঁপা গলায় বলে ওঠে-”আপনি তো দীপ্তি কে দেখেন নি তবে কেমন করে পেলেন তার গায়ের গন্ধ?”


নীলয় এবার শব্দ করে হেসে ওঠে,কয়েক সেকেন্ড বাদে হাসি থামিয়ে বলে -”দীপ্তি আমার সমস্ত চেতনায়,না ছুঁয়ে ও তাকে ছুঁয়ে থাকে আমার বাহুপাস,তার ভিজে চুলের গন্ধ এসে ঝাপটা মারে আমার চোখে মুখে।”


“এসব পাগলামি আপনার একটা দু-দিনের ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড এর প্রতি এ ভালোবাসা শুধু সময়ের অপচয়, ভুলে গিয়ে তাকে নতুন ভাবে আবার শুরু করুন জীবনটাকে”।-কিছুটা চিৎকার করে মেয়েটা বলে ওঠে।


নীলয় এবার সরাসরি তাকিয়ে প্রশ্ন করে -”ভালোবেসেছেন কখনও কাউকে?”


মেয়েটা এবার শব্দ করে হেসে ওঠে-”যার ভাই এর চিকিৎসার জন্যে দ-ু লাখ টাকা চাই ছয় মাসের মধ্যে ,না হলে….সেই দিদির অন্তত ভালোবাসা নামক আদিখ্যেতায় গা ভাসালে চলবে না বুঝলেন?”.....


“কি হয়েছে ভাই -এর?”-নরম গলায় জিজ্ঞাসা করে নীলয়


“একসিডেন্ট চোখ দুটো….”


“বাবা?”


“নেই”-কেমন এক বিরক্তি মেশানো গলায় বলে মেয়েটি।


আবার চুপচাপ হয়ে যায় দুজনেই।নিলয় এর ইচ্ছে করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে।তবু এক সংকোচ….প্লাটফর্ম কাঁপিয়ে ট্রেন ঢোকে।মেয়েটি উঠে যায়।হামাগুড়ি দিয়ে গরায় ধাতব চাকা।


এই যে শুনুন”-রিনরিনে কণ্ঠ-এর ডাকে নীলয় এগিয়ে আসে।


চার ভাঁজের একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দেয় মেয়েটি।


একটু অবাক চোখে তাকিয়ে নিলয় পাতাটা খোলে-


“উপায়হীন আমি কবি,কর্তব্য আমার কেড়ে নিয়েছে ন‍্যায়বোধ,


যখন আমার স্বপ্নের আঁখি কবি তোমায় নিয়ে পেতে ছিল সপ্ন বাসর


হঠাৎ তখনই অন্ধকারে কালো হলো দীপ্তির আলো,


পারেনি বন্ধু কর্তব্য অবহেলা করে তোমার কাছে চলে যেতে ।


এটাও পারেনি দীপ্তি নগ্ন রূপে তোমার সামনে দাঁড়াতে।


শুধু হঠাৎ আমাদের পাওয়া, তারায় সাক্ষী রাখা এই একটুকরো সন্ধ্যা ,


নাহয় চিরকাল থাকবে যেন অমলিন ।


দিপ্তীর এই তৃষিত হৃদয়ে।”


(4)


দীপ্তির দ-ু চোখের বরফ গোলে এতক্ষনে নামতে থাকে ট্রেনের মধ্যে কিছু কৌতূহলী চোখকে উপেক্ষা করে।


“তোমার সবুজ গজিয়ে ওঠা এলোমেলো দাড়ির মাঝে লুকিয়ে থাকা সিগারেটের দাগ খুঁজে নেবে আমার লজ্জায় আরক্ত ঠোঁট।


বুকের প্রতিটা লোমকূপে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার ভাপে গলে যাবে আমার তৃষিত হৃদয়।


তোমার আমার প্রেমের বাষ্প রাতজাগা তারা আর জ্যোৎস্না মেখে লাল আবির রঙে রাঙাবে পলাশ কৃষ্ণচূড়া।


দখিনা বাতাস আমাদের ঠোঁট ছোঁয়া ভালোবাসা মেখে নামহীন কোনো পাহাড়ি ফুলকে ভরিয়া দেবে আদরে আদরে।”-ভেবেছিলাম কবি উত্তাল সমুদ্রের পারে বসে তোমার কাঁধে মাথা রেখে জোস্না মাখা ভোরে , গিটারের বুকে তোলা তোমার আঙুলের প্রতিটা স্ট্রোকে পাগল হতে হতে ,বুকের মাঝে গোপনে লুকিয়ে রাখা এই কবিতা খানি ফিসফিসিয়ে বলে যাবো তোমার কানে কানে।


কিছুই হলো না কবি। কিছু কিছু সপ্নের বোধায় এভাবেই মৃত্যু ঘটে।


ঠান্ডা বাতাস এসে এলোমেলো করে দিতে থাকে দীপ্তির স্ট্রেইট করা বাদামি চুল।ধীরে ধীরে নীলয় এর বিন্দুটুকু চোখের আড়ালে চলে যায় দীপ্তির।


(5)


হঠাৎ একবিন্দু শিশির ঝরে পড়ে নীলয় এর চোখের পাতায়।দীপ্তির অবয়ব ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে ট্রেন এর গতির সাথে।


“দীপ্তি ছাড়া অসম্পূর্ণ যে নীলয়।তোমাকে আমি আবারও খুঁজে নেব দেখে নিও দীপ্তি। ঠিক খুঁজে নেবই।”-বিড়বিড় করে নীলয় এর প্রত‍্যয়ি ঠোঁট।


দূরের আকাশে বাঁকা চাঁদও যেন আর একটু জ্বলে উঠে সায় দেয় নীলয়ের সাথে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Bhaswati Mal

Similar bengali story from Tragedy