Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sayandipa সায়নদীপা

Children Drama

4.5  

Sayandipa সায়নদীপা

Children Drama

হজমি দাদুর গল্প

হজমি দাদুর গল্প

4 mins
8.3K


আমি যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুলে প্রাচীরের মধ্যেই শিশু বিভাগ থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ অবধি ছিলো, তাই জীবনের চোদ্দটা বছর কাটিয়েছি ওই একই স্কুলে। যাইহোক স্কুলে ভর্তি হওয়া ইস্তক দেখতাম ছুটির সময় আমাদের স্কুলের “বড় গেট” এর বাইরে একটা বড় চট পেতে নিয়ে এক দাদু বসতেন নানান রকম রঙিন স্টিকার, হজমি পাউডার আর হজমি চকোলেট নিয়ে। আমরা আদর করে ডাকতাম “হজমি দাদু”। আমার থেকে নয় বছরের বড় দিদিভাইয়ের মুখে শুনেছি ওরাও যখন স্কুলে পড়তো তখনো একই রকম ভাবে হজমি দাদু স্কুল ছুটির সময় হলেই এসে বসতেন আর এতো বছর ধরে তাঁর চেহারাও একই রকম আছে প্রায়; ওই টাক পড়া মাথার চারপাশে কয়েকগাছি সাদা চুল, তোবড়ে যাওয়া গাল, ধপধপে ফর্সা গায়ের রং, পরনে সাদা ধুতি আর ফতুয়া। মায়ের কাছে মাঝে মাঝে টাকা চেয়ে স্টিকার কিনতাম কিন্তু ওই হজমি চকোলেট বা পাউডার কখনো চেখে দেখিনি।

আমি ক্লাস ওয়ান থেকে রিকশায় স্কুলে যাওয়া শুরু করি, তাই সাথে এমনিতে কোনো টাকা থাকতো না। শুধু মা দু’টাকা দিয়ে রাখতেন ব্যাগে, কারণ কোনো দরকার হলে যাতে টেলিফোন বুথ থেকে বাড়িতে ফোন করতে পারি। বেশ চলছিল সবই, মাঝে মাঝে হজমি দাদুর কাছে স্টিকার কেনা আর ফনিদার দোকানে ফুচকা খেতে খেতে কখন যে হাইস্কুলে উঠে গেলাম টেরই পাইনি। হাইস্কুলে ওঠার পর কেন জানিনা হজমি দাদুর স্টিকারের প্রতি আকর্ষণটাও হারিয়ে গেছিল, তাই বহুদিন আর দাদুর কাছে যাইনি। গেট পেরিয়ে উঠে যেতাম রিকশায়।

ক্লাস ফাইভ, এরকমই একদিন ছুটির পর বেরিয়ে দেখছি রিকশা কাকু আসেননি তখনও, কি করবো দাঁড়িয়ে আছি চুপচাপ। হঠাৎ কি মনে হতে গুটিগুটি পায়ে হজমি দাদুর কাছে এগিয়ে গেলাম। অনেকেই স্টিকার আর হজমি কিনতে ব্যস্ত। আমি বসে বসে দেখছি শুধু। ইচ্ছে থাকলেও কিছু কেনার উপায় নেই কেননা সেদিনই এক বন্ধুকে আমার ব্যাগে থাকা দু’টাকাটি ধার দিয়েছি। সুতরাং সেই মুহূর্তে আমার “পকেট শূন্য”। কিন্তু হঠাৎই হজমি দাদু একটা সরস্বতী ঠাকুরের ছবি আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “এটা নিয়ে যা।” আমি চমকে উঠে বললাম, “না না দাদু আমার কাছে আজ টাকা নেই।”

“টাকা দিতে হবে না এমনি নিয়ে যা না।”

“না না এমনি কি করে নেব।”

এইভাবে দাদু বারবার করে ছবিটা নিতে বললেন আর আমারও যেন রোখ চেপে গিয়েছিল। আসলে কি জানেন তো বয়সটাই হয়তো এরকম ছিলো, বাস্তব জগতের অনেক ধারণা তখন পেতে শুরু করেছি কিন্তু তার সঠিক অর্থগুলো আত্মস্থ করতে পারিনি তখনও। মা সবসময় সাবধান করে দিতেন যে “কেউ কিছু দিলে নেবে না।” এই “কিছু” টার সঠিক প্রকৃতি বা তার শ্রেণীবিভাগ তখনো বুঝে উঠতে পারিনি। কোন জিনিসগুলো নেওয়া খারাপ আর কোনটা নয় সে পার্থক্য করার মতো বুদ্ধিটা আসেনি তাই সব “কিছু”কেই একই গোত্রে ফেলে দিয়েছিলাম, “নেওয়া চলবে না।” তার ওপর আরেক খানা অর্ধ সমাপ্ত জ্ঞান, “গরিব মানুষকে কখনো তার প্রাপ্য টাকা না দিয়ে তার জিনিস নেবেনা।” এই “প্রাপ্য টাকা”র ব্যাপারটাও ছিল ধোঁয়াটে। তাই হজমি দাদুর কয়েকবার বলা সত্ত্বেও শেষমেশ আর নিলাম না ছবিটা। দাদুর মুখের আঁধারটা বুকের মধ্যে যে মোচড় তোলেনি তা না, কিন্তু… ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে কি চলছিল আমি জানিনা, কেমন একটা রোখ চেপে গিয়েছিল যেন।

বাড়ি ফিরে যখন মাকে বললাম সবটা মায়ের তো তখন মাথায় হাত। বললো তোকে কি বোঝাই আর তুই কি বুঝিস। এরপর মা আমার মনে থাকা ধোঁয়াটে ধারণা গুলোকে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে শুরু করলেন। বোঝালেন যে দাদু তো স্বেচ্ছায় দিচ্ছিলেন তাই ওটা নিতে হতো, নিইনি বলে বরং দাদু কষ্ট পেয়েছেন নিশ্চয়। মায়ের কথাগুলো শুনে কেঁদে ফেললাম আমি। মাকে বললাম আমি কালই গিয়ে দাদুকে চাইবো ছবিটা। মা বললেন, “ঠিক আছে।”

সারারাত ঠিক করে ঘুমোতে পারিনি, পরের দিন স্কুলেও পড়ায় মন বসেনি। ছুটি হতেই ছুটে গেটের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম কিন্তু হজমি দাদুর বসার জায়গাটা ছিলো ফাঁকা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম মনে নেই, হুঁশ ফিরেছিল রিকশা কাকুর ডাকে। মনে একটা পাহাড়ের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম সেদিন। সেই পাহাড়টা এরপর বয়ে যেতে হয়েছিলো বাকি পুরো বছরটা। তারপর আস্তে আস্তে পাহাড়টা হয়তো ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে কিন্তু তার অংশ একটা ভারী পাথর আজ এগারো বছর ধরে বয়ে চলেছি, জানি এই পাথরটা আর ক্ষইবে না কোনদিন।

হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, আশ্চর্যজনক ভাবে সেদিনের পর থেকে হজমি দাদু আর কোনোদিন আসেননি স্কুলের সামনে, কোনোদিনও না। স্কুলের শেষ দিন অবধি গেট থেকে পেরিয়ে একবার হলেও তাকিয়েছি ওনার বসার জায়গাটার দিকে কিন্তু উনি আসেননি। জানিনা দাদু বেঁচে আছেন কিনা, কিন্তু ছোটবেলায় হয়তো খানিক অজান্তেই করে বসা ভুলটার কারণে আজও কষ্ট হয় মনে; ভাবি একবার যদি দাদুর দেখা পেতাম ক্ষমা চাইতাম ওনার মনে আঘাত দেওয়ার জন্য। কিন্তু সব ভুলের বোধহয় প্রায়শ্চিত্ত হয়না, সময় একবার চলে গেলে তা আর ফিরে আসেনা...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Children