Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Debdutta Banerjee

Drama

2.4  

Debdutta Banerjee

Drama

গাছটা

গাছটা

4 mins
1.3K


 এবছর হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছে প্রকাশ। ঐ যে ন‍্যাশন‍্যাল হাইওয়ের ধারে বড় স্কুল, সেখানে ক্লাস ফাইভে ভর্তি করে দিয়েছে ডাক্তার দিদি। আসলে ওদের বাগানের ছেলেগুলো ক্লাস ফোরের পর আবার ওয়ানে ভর্তি হয়, একবেলা খিচুরী বা গরম ভাত পায় ওরা, সাথে ডিম বা সয়াবিন। সকালে ছাতু মাখা, মেরি বিস্কুট। এই খাবারের লোভেই সবাই স্কুলে যায়। দূরে যাবে কেনো? বুধুয়ার মা রান্না করে ওদের বস্তির স্কুলে। আগে বাগানে পাতা তুলত। সেই যে দু বছর আগে বাগান বন্ধ হল তখন এই কাজটা ধরেছিল বুধুয়ার মা। 


প্রকাশরা বেঁচে আছে ডাক্তার দিদির দয়ায়। প্রকাশের নামটাও ডাক্তার দিদির রাখা, মা বলে। বাবা ছিল ওদের কুলি বস্তির সর্দার। বাগান বন্ধ যাতে না হয় খুব লড়েছিল বাবা। সবাইকে বোঝাতো, কত মিটিং মিছিল হত তখন! কিন্তু দু বছর আগের সেই ঝড় জলের রাতে বাবাটা যে কোথায় চলে গেলো.... সাতদিন পর লাশটা ঝুলছিল ঐ শুখা ঝোরার পাশের বড় ডেউয়া গাছটায়। কয়দিন খুব মিছিল হয়েছিল। পুলিশ এসেছিল। প্রকাশদের ঘরে কত নেতা এসেছিল।সাদা কাগজে কত কি লিখে মায়ের টিপ ছাপ নিয়েছিল। তারপর সব কমে গেল। বাগান বন্ধ।যখন ওর ছোট ভাইটা খিদের জ্বালায় কাঁদত তখন খুব বাবার কথা মনে পড়ত প্রকাশের। এই ডেউয়াগাছটার বদনাম হয়ে গেছিল হঠাৎ করে। বাবার আত্মা নাকি ঐ গাছেই বাধা পড়েছিল সবাই বলত। সন্ধ‍্যার পর কেউ এদিকে আসত না আর। মা-টা এর ওর থেকে চেয়ে চিন্তে, নিজের রুপার বালা আর পায়েল বিক্রি করে কয়েক মাস টেনেছিল ওদের পেট। তারপর মা ডাক্তার দিদির ঘরের কাজে ঢুকেছিল।


 প্রকাশ কিন্তু আর সবার মতো গাছটাকে ভয় পেত না। বাবার আত্মা যদি থাকেও ও কেন তাকে ভয় পাবে? বাবা তো বাবাই হয়। সবজে রঙের পাকা ডেউয়া পড়ে থাকত গাছের নিচে। ভাঙ্গলে ভেতরে কমলা রঙের কোয়া। মুখে পুড়লে টক মিষ্টি স্বাদে চোখ বুজে আসত। হলুদ স্পঞ্জের মত ডেউয়া ফল গুলো দিয়ে স্লেট মোছা যেত। পেট ভরে ডেউয়া খেয়ে ভাইয়ের জন‍্য নিয়ে যেত প্রকাশ। এভাবেই গাছটাকে ভালোবেসে ফেলেছিল প্রকাশ। গাছটার গায়ে কেমন বাবা বাবা গন্ধ পেত ও। এটাই বোধহয় আত্মা!!

বিকেলে যখন বন্ধুরা একটা বাতাবি লেবুকে বল বানিয়ে রেল লাইনের ধারের মাঠে খেলত ওর মন পড়ে থাকত এই গাছের কাছে। সবার চোখ এড়িয়ে ও চলে আসত এখানে। কতদিন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যেত এই গাছের ছায়ায়। আস্তে আস্তে গাছটা ওর বন্ধু হয়ে উঠেছিল। সুখদুঃখের গল্প হত ওর সাথে। গাছটা নির্বাক শ্রোতা হলেও ডালপালা নেড়ে মতামত প্রকাশ করত। তবে এসব প্রকাশের একান্ত গোপনীয় ব‍্যাপার, মা ভাই এমনকি ডাক্তার দিদিকেও বলেনি কখনো ও!


মা ভাইকে নিয়েই কাজে যেত। সন্ধ‍্যায় ফিরে রাতের রুটি করত। ও তখন দুলে দুলে পড়তে বসত। পড়তে প্রকাশের খুব ভালো লাগত। কত কি জানা যায় বই পড়লে। জানার ইচ্ছাতেই ও পড়ত খুব। ডাক্তার দিদি ওকে পড়ার বাইরেও অনেক বই দিত।পড়া দেখিয়েও দিতো। ইংরাজিতে সাহায‍্য করত। মাঝে মাঝে প্রকাশের মনে হয় ঐ দিদি না থাকলে ওরাও কোথায় ভেসে যেত। যেমন ওদের বস্তির কত পরিবার হারিয়ে গেছে বাগান বন্ধের পর।

এখন অবশ‍্য বাগানের পাতা তোলা হয়। ফ‍্যাক্টরি আর খোলেনি। পাতা বেচে দেয় বাবুরা। অনেকেই এই কাজ করে। তবে সেই আগের রমরমা অবস্থা কারোর নেই। 


আজ মনটা ভালো ছিল না প্রকাশের। স্কুলের নগেন মাষ্টার খুব হেসেছিল ওর উপর। আসলে বস্তির ছেলে হয়েও ও হাইস্কুলে পড়ে এটা অনেকেই মানতে পারে না। তাতে ও আবার পলু সর্দারের ছেলে। প্রকাশ কে নিয়ে অনেকেই দু চার কথা শোনায়। ও গায়ে মাখে না। নগেন মাষ্টার ওদের ইংরেজী পড়ায়, একটা 'এসে' লিখতে দিয়েছিল আমার বাবা। প্রকাশের লেখাটা নিয়ে আজ ক্লাসে খুব হাসাহাসি করেছে স‍্যার। ওর বাবা নেই তাও ও এই 'এসে' কি করে লিখল এ নিয়ে নোংরা কথাও বলেছে। কান মাথা গরম হয়ে গেলেও কিছুই বলতে পারেনি প্রকাশ। ওদের মতো ঘরে ছেলের নাম প্রকাশ কেন এ নিয়েও কথা হয়েছে!

স্কুল থেকে ফেরার পথে গাছটাকে জড়িয়ে ধরে ও খুব কেঁদেছে আজ। বাবা থাকলে ওকে এমন কথা শুনতে হতো না। এই এগারো বছরে ও বুঝে গিয়েছিল মাথার উপর বাবা নামের ছাতাটা না থাকলে কি হয়! গাছটার শীতল হাওয়ায় আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসছিল ওর ভেতরের আগ্নেয়গিরিটা। ডালপালাগুলো হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল মাথায়। সন্ধ‍্যার আগে বাড়ি ফিরে পড়তে বসেছিল ছেলেটা। 


পরদিন সকালে নগেন মাষ্টারের দেহটা পাওয়া গেছিল ডেউয়া গাছের নিচে। ভোর বেলা হাঁটার অভ‍্যাস ছিল ওনার। মধুমেহ ছিল দীর্ঘদিন। অনিন্দ্য বাবুর সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছিল। ফেরার পথে গাছটার নিচে বসেছিল বিশ্রাম নিতে।খুব ঘাম হচ্ছিল। অনিন্দ্য বাবুর একটা ফোন এসেছিল তখন। ছেলে বিদেশে থাকে। ফোনে কথা বলে গাছের নিচে এসে দেখে সব শেষ। ম‍্যাসিভ হার্ট এটাক। 

খবরটা শুনে চমকে উঠেছিল প্রকাশ। দেড় বছর আগের ঘটনাটা মনে পড়ে গেছিল। বাবুলাল খুব জ্বালাতো মাকে। ওদের তখন পেটে খাবার নেই। কাজ নেই। তাও বাবুলাল যে একটা শয়তান, ছোট্ট প্রকাশ সেটা বুঝতো। একদিন থাকতে না পেরে গাছটাকে সব বলেছিল। পরদিন বাবুলালের দেহটা গাছের নিচে শুখা ঝোরার জলে ভাসছিল। চুল্লুর বিষে মরেছিল আপদটা। অতিরিক্ত মদ গেলার ফল।

 

কিন্তু নয় মাস আগে ছোটা সর্দার যখন মাকে বলেছিল ওকে কাজ পাইয়ে দেবে কেরলে। অনেক টাকা আনবে ও। ভয় পেয়েছিল প্রকাশ। গাছটাকে বলেছিল কথাটা। দু দিন পর ছোটা সর্দার ঐ গাছেই গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলেছিল!


না, সবার মত গাছটাকে ভয় পায় না প্রকাশ। মাথার উপর গাছটার ছায়া ঠিক ছাতার মত মনে হয়। বাবা বাবা গন্ধটা ফিরে আসে বারবার। গাছটা ওকে শক্তি দেয়। ওকে ভরসা দেয়। ওর স্বত্ত্বার সাথে জড়িয়ে থাকে ঐ ডেউয়া গাছটা। টুপটাপ ডেউয়া ফুল ঝরে পড়ে ওর মাথায়। 

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama