Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Bhattacharya Tuli Indrani

Comedy Drama

0.8  

Bhattacharya Tuli Indrani

Comedy Drama

ভ্যালেন্টাইন্স ডে

ভ্যালেন্টাইন্স ডে

4 mins
2.6K


মকর সংক্রান্তির পিঠে- পুলির স্বাদ তখনও মুখ থেকে মেলায় নি, রবিবারের সান্ধ্য আসরে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করল স্বস্তিক, বিশ্বাস আর মুখার্জি। ‘আরে, জানুয়ারি মাস তো শেষ হয়ে এল- পরের মাসের প্রোগ্রাম ঠিক হয়েছরায়দা হাসি হাসি মুখ করে বললেন, ‘বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ র কথা সবাই ভুলে যাচ্ছ?’ উৎসুক হয়ে সকলে রায়দার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ভ্যালেন্টাইন্স ডে ব্যাপারটা তখনও এত প্রচার পায়নি। বিশ্বাস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে?’

মিটি মিটি হাসতে হাসতে রায়দা বললেন, ‘নিজেদের কৈশোর ভুলে গেলি রে, এত সহজে? সরস্বতী পুজো! সব মেয়েরা সেদিন শাড়ী পরবে, আর ছেলেগুলোর সে যে কি দুর্দশা! সকাল থেকে রেখা টানা শুরু।সকলেরই মুখ হাঁ হয়ে রইল, কি যে বলছেন রায়দা… কোন কথাই বোধগম্য হচ্ছে না। বয়েসে অনেক ছোট, মধুপা বলে উঠল, ’রেখা টানা বুঝলে না? লাইন মারা…ফিক করে হেসে মুখ ঢাকলো, সমুদ্রর সঙ্গে ঘন হয়ে বসে থাকা পাপিয়া|ও ও ও… সকলের হাঁ মুখ বন্ধ হল এবং সকলে সমস্বরে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, এবারে আমরা খুব বড় করে সরস্বতী পুজো করব|’ ফাল্গুনী- অমিত- দাড়ি সরকারের মেস বাড়িটা বেশ বড়… ঠিক হল, ওখানেই পুজো হবে।

স্বস্তিকের বউ অপর্ণা বলল, ‘কিন্তু ওকে বলে দাও- ওইদিন যেন মাংস মাংস না করে’।

স্বস্তিক বলল, ‘কেন, সরস্বতী পুজো তে তো জোড়া ইলিশ দেওয়ার প্রথা আছে। খাওয়ার ব্যাপারে ঘটি- বাঙালে ভেদ করি না… যার যেটা ভালো, সেটাই সট করে আপনিয়ে নিই‘আরে আমাদের দাড়ি তো কলকাতা থেকে ফিরছে, ওকে ডাল-চাল আনতে বলে দাও|’ বললেন অতীনদা| মেনু নির্ধারিত হল। খিচুড়ি, ভাজা, বাঁধাকপির ঘন্ট, চাটনি ও পায়েস।

এই প্রবাসে, সব রকম অনুষ্ঠান ও পিকনিকের দিন সাধারনত ছেলেরাই রান্নার ভার নেয়, কিন্তু এবারে ঠিক হল মেয়েরাই ভোগ রাঁধবে। জিনিসপত্র কেনাকাটা, বাসন যোগাড়, মুর্তির ব্যবস্থা সবই চলতে লাগল জোর কদমে। মেয়েরা বসে গেল, কে কি শাড়ী পরবে তার আলোচনাতে। ব্যানার্জী বৌদি অনুষ্ঠানের আয়োজনে লেগে গেলেন, নাচ গান ছাড়া আবার সরস্বতী পুজো হয় নাকি! বাচ্চাদলের কেউ কেউ বিমর্ষ হয়ে পড়ল। সরস্বতী পুজোতে ছুটি তো থাকেই না, কোন কোন স্কুলে আবার পরীক্ষাও রয়েছে। ‘আমরা কোথায় থাকি দেখ! কোলকাতায় আমাদের ভাই বোনেরা দুদিন ধরে বইয়ে হাতই দেয় না, শক্ত শক্ত বিষয়ের বইগুলো তারা মা সরস্বতীর পায়ে নিবেদন করে, ভাল রআসলে পড়াশোনা থেকে একদিন মুক্তি, আর অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠা। সত্যি, নিজের যায়গা থেকে উৎপাটিত, এই প্রবাসী বাচ্চারা কত কি জানা-শোনা-দেখার থেকে বঞ্চিত হয়ঠিক হল যাদের পরীক্ষা রয়েছে, তাদের বাবা বা মা স্কুলে গিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটি করিয়ে তাদের নিয়ে আসবে। ঐ দলে ছিল মিতাও| তার বড় মেয়ে পড়ে একটি কনভেন্ট স্কুলে, সিস্টারদের রিকোয়েস্ট করতে গিয়ে সে দেখল তাঁরা সকলেই অনুষ্ঠানটির সম্বন্ধে ‘ওহ, দ্যাট ফেস্টিভ্যাল! অন হুইচ ইউ ডোন্ট টাচ বুক্স…’

‘সন্তুদা এলেন পুজো করতে। পুজোর আয়োজনে জুটে পড়ল সকলে। দুই মেয়েকে নিয়ে সান্যালদির দেওয়া আলপনা থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিল সন্তুদার আসল নামটা যে কি কেউ জানে না, তিনি এই প্রবাসে ‘একমেবাদ্বিতীয়ম পুরহিত’ এক কথায় কাঁঠালিকলা। খুব খুঁতখুঁতে স্বভাবের। নৈবেদ্যের চাল ঠিকমত ধোওয়া হয়েছে কিনা, সকলে স্নান সেরে এসেছে কিনা, ফুল গাছ থেকে তোলা না বাজার থেকে আনা ইত্যাদি ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ল রমণীকূল। স্বস্তিক আশায় আশায় রান্নাঘরের আসে পাশে ঘোরা ঘুরি করতে লাগল, যদি বৌদিরা কিছু টেস্ট করতে ডাকে। দীপিকা হাসতে হাসতে বলল, ‘পথ দেখ...আজ সে গুড়ে স্যান্ড- এটা পুজোর ভোগ। আর খাবে কী, অঞ্জলি দেবে না?’ স্বস্তিক পেটে হাত বোলাতে বোলাতে রণে ভঙ্গ দিল।

মিলি একবার রান্নার তদারকিতে গেল, ওর রান্নার হাত খুব ভাল। আগের দিন সন্ধ্যেবেলা মিলিত ভাবে চাল ডাল বাছা, তরকারী কাটা সমাপন হয়েছে। শীতের বাঁধাকপি তাড়াতাড়ি গলে যাবে, সে অনুপাতে আলু কাটা হয়েছে খুবই বড় বড়। মিলি বলল, ‘করেছ কি, এই আলু তো সসমবেত কণ্ঠ প্রতিবাদে সোচ্চার হল, ‘হবে হবে, সেদ্ধ হবে’। বাঁধাকপি নামাবার সময় দেখা গেল, আলু শক্ত রয়েছে। সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে রইল। ভাজা, চাটনি, পায়েস রান্না শেষ। বসানো হল খিচুড়ি। পুজোর কাজ ছেড়ে দৌড়ে এল সকলে, সোনামুগ ডাল ভাজার স্বর্গীয় গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে। পুজো তো যেমন তেমন, সকলের মন পড়ে রয়েছে খাওয়া দাওয়ার দিকে, একা স্বস্তিককে দোষ দেওয়াটা ঠিক না। পৌঁছে দেখা গেল সেখানে প্রবল হাসির ধূম পড়েছে। কলকাতা থেকে আনা গাওয়া ঘিয়ের সদ্ব্যবহার করছেন মহিলারা মুক্ত হস্তে, আর বোল তুলছেন, ‘ঘি ভালো? অঞ্জলি, প্রসাদ, মধ্যাহ্ন ভোজে সরস্বতী পুজোর বেলাটা তো দারুন কাটল। কেউ কেউ একটু গাঁইগুই করল, বাঁধাকপির আলু শক্ত, ডালটা বেশী ভাজা হয়ে গেছে...ইত্যাদি ইত্যাদি। রাঁধুনিরা কেউই কোন পাত্তা দিল না যদিও। সন্ধ্যাটি ব্যানার্জীদা ও বৌদির অনুষ্ঠানের নামে উৎসর্গ করা হল, ‘ব্যানার্জীদার ভ্যান্তাড়া’।

সেজেগুজে নিশ্চিন্ত মনে অনুষ্ঠানে পৌঁছল সবাই, কেন না জানা ছিল রাতের খাওয়া ওখানেই হবে, প্রচুর খাবার বেঁচে গেছে। ও! কি শান্তি, একবেলা রান্নার হাত থেকে মুক্তি। সুরে-বেসুরে, তালে- বেতালে বাচ্চারা, বড়রা নাচে গানে অংশ গ্রহণ করল। পেছনের সারি থেকে ফুট কাটার লোকের অভাব ছিল না… কিন্তু কিছুই সিরিয়াসলি মীন করার জন্যে না, সবই শুধুই মজা। সবশেষে ঠিক হল সকলে মিলে ধন ধান্য পুষ্প… গানটি গাওয়া হবে। খুব ভাল ভাবেই শুরু হল, জন্মভূমির বন্দনাতে সমবেত সঙ্গীতটি শুনতে ভালই লাগছিল। স্থায়ী শেষ হল ‘সে যে আমার জন্মভূমি…

হঠাৎ একি বিপত্তি! কটি কর্কষ কন্ঠের বেসুরো চিৎকারে সকলে চমকে ওঠে…

ঢ্যা ঢ্যা ঢ্যা ঢ্যা!!

প্রথমে সকলে আঁতকে উঠলেও, পরে হাসির রোল উঠল। কলকাতার ব্যান্ডপার্টি গুলোর ইন্টারলুড মিউজিক এরেঞ্জমেন্ট, ধন ধান্য গানটির জন্যে এই রকমই হয়। এই মুখবাদ্যে অংশ গ্রহণকারীরা ছিলেন- সরকার, স্বস্তিক, ফাল্গুনী, আশিস অমিত এবং একেবারেই আশার অতিত, প্রচন্ড গম্ভীর অতীনদা। ব্যানার্জী বৌদির ছোট্ট একটি কমেন্টের সঙ্গে সেবারের মত সমাপন হল, বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে|‘তোরা কি অসভ্য রে!’ মুখটা যদিও তাঁর হাসি হাসিই ছিল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy