Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sanghamitra Roychowdhury

Classics

3  

Sanghamitra Roychowdhury

Classics

অশ্বমেধের ঘোড়া

অশ্বমেধের ঘোড়া

3 mins
1.2K


সকাল থেকে রাত..... পুরো চব্বিশটা ঘন্টা জুড়েই কেকা ছেলেকে নিশ্ছিদ্র রুটিনে বেঁধেছে। কেকা অনীশের পাঁচ বছরের ছেলে অর্ক আপাতত পাড়াতেই এক বিখ্যাত প্রি-স্কুল চেইনের ব্রাঞ্চে পড়ে, প্রিপারেটরি ক্লাসে। আড়াই বছর বয়স থেকে পড়ছে প্রি-স্কুলে সে। তবে এবারে অর্ক ক্লাস ওয়ানের অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য তৈরী হচ্ছে, একী যে সে ব্যাপার? শহরের গোটা চারেক বাছাই করা প্রথম সারির স্কুল এর সাইট থেকে সমস্ত নিয়মাবলী কেকা কন্ঠস্থ করে ফেলেছে। অনীশ অফিসের পরে আর ছেলের জন্য তেমন সময় দিতে পারে না, সুতরাং ছেলের অ্যাডমিশনের ব্যাপারে এ টু জেড সর্বস্ব কেকাকেই সামলাতে হচ্ছে।


বাড়ীতে সর্বক্ষণ একটা হুলুস্থুল কাণ্ড চলছে, রুটিন মাফিক চলতে হবে, নিয়মের বাইরে একপাও চলা যাবে না। এই কটা মাস তো মোটে সময়, এর মধ্যে কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। ঐ স্কুলগুলোর মধ্যে যে কোনো একটায় চান্স পেয়ে গেলেই হয় ঠাকুর ঠাকুর করে, কেকার আর আপাতত কোনো চাহিদা নেই। কেকার সমস্ত ধ্যান জ্ঞান এখন ছেলের অ্যাডমিশনের উপর কেন্দ্রীভূত। যত দিন এগিয়ে আসছে ততই কেকা ধৈর্য্য হারাচ্ছে।



রান্নাঘরে কেকাকে কোনো দিনই ঢুকতে হয় না, শাশুড়িমাই এখনো ওদিকটা পুরোপুরি সামলান, শখ করে কেকা মাঝেমধ্যে পোশাকী এক আধটা কিছু রান্না করতো আগে, তবে আজকাল ছেলেকে কাঁচাঘুম থেকে তুলেই সেই যে তাকে রুটিন অনুযায়ী দৌড় করাতে শুরু করে থামে গিয়ে যখন ছেলে ঘুমিয়ে উল্টে পড়ে যায়। অবশ্য ততক্ষণে তার নিজের অবস্থাও তথৈবচ।

এতদিন অর্ক সকালে স্কুল থেকে ফিরে দুপুরে খেয়ে দেয়ে ঘুমোতো। তারপর বিকেলে খেলাধুলা ফেলে এক ম্যামের কোচিং ক্লাসে যেতো সপ্তাহে পাঁচদিন। কিন্তু এমাস থেকে অর্ককে ভর্তি করা হোলো আরেক ম্যামের স্পোকেন ইংলিশ ক্লাসে, সোম-বুধ-শুক্র..... সপ্তাহে তিনদিন। কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না কেকা, কিছু খামতি যাতে থেকে না যায়। ফলশ্রুতিতে অর্কর চিঁড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা।




অর্ক আজকাল কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে, যন্ত্রের মতো স্কুলে যায় আসে। স্কুলের আর কোচিং ক্লাসের হোমওয়ার্ক, আর সবসময় পড়া মুখস্থ করা আর মাকে পড়া দেওয়া... এইই করে চলেছে। আর পড়া ঠিকমতো তৈরী না হলে তো কপালে উত্তম মধ্যম লেগেই আছে। আর কেকার চেঁচানির চোটে কাকচিল কেবল বাড়ীছাড়া নয়, তারা একেবারে পাড়াছাড়া।



কেকার শ্বশুর শাশুড়ি মৃদু প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিষম কঠোর ধাক্কা খেয়েছেন নিজের ছেলের কাছ থেকেই। এই মুহূর্তে ওনারা অর্কর সমব্যথী নীরব দর্শক মাত্র। ছুটির দিনে অনীশও ছেলেকে ইডিয়ট, হোপলেস.... ইত্যাদি নানাবিধ গালমন্দে ভূষিত করছে ইদানিং। অর্ক দিন দিন আরও গুটিয়ে যাচ্ছে। কেকার বোন কুহু এসেছে কয়েক দিনের ছুটিতে দিদির বাড়ীতে। কুহু আইআইটি খড়্গপুরের রিসার্চ স্কলার। অর্ককে বড়ো স্কুলে ভর্তি করার জন্য তৈরী করা নিয়ে কেকার এই অমানবিক টানাপোড়েনকে কুহুর নির্যাতন বলে মনে হোলো। সেকথা দিদিকে বলতেই দুই বোনে তুমুল অশান্তি, কুহু চলেই গেলো মনখারাপ করে।



সব স্কুলেই অ্যাডমিশনের অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম জমা দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ইন্টারভিউয়ের কললেটার চলে আসবে। কেকার ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে, লাস্ট মিনিট ঝালাই চলছে এখন, আর সেটা করতে গিয়েই বিপত্তির শুরু। অর্ক সব ভুলে যাচ্ছে, গুলিয়ে ফেলছে। এক প্রশ্নের উত্তর অন্য প্রশ্নে দিয়ে দিচ্ছে, খুব ভালো করে জানা উত্তরও বলতে পারছে না। কেকা চেঁচামেচি কান্নাকাটি ছেলেকে মারধোর করেও বিন্দুমাত্র হাল ফেরাতে পারছে না। বেদম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেকা। এবার অনীশও ছুটি নিয়ে নিয়েছে, আর ঠিক দু'দিন বাকী প্রথম ইন্টারভিউয়ের।



বাড়ীতে ঝড় চলছে, খাওয়া দাওয়া বন্ধ হবার উপক্রম। অর্ক এবার বোবাদৃষ্টি মেলে মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকছে, বুঝতে পারছে না কোন প্রশ্নের কি উত্তর দেবে। কেকার মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা হোলো, যখন অর্ক স্মল লেটার এলকে ওয়ান বলে বসলো। কেকা অর্কর কচিগালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে চড় মারার পর কেকার শাশুড়িমা আর থাকতে পারলেন না। অর্ককে কোলে তুলে নিয়ে বললেন, "অনীশকে জিজ্ঞাসা করো তো বৌমা, লেখাপড়ার জন্য ও কোনো দিন মার খেয়েছে কিনা? পাড়ার স্কুলে পড়েই তো ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে! বড়ো স্কুলে ভর্তির আগেই যদি বাচ্চার এই অবস্থা করে ফেলো তবে বড়োমানুষ হয়ে ওঠার জন্য ছেলে প্রাণে বেঁচে থাকবে তো?"



রাত দুটো বাজে, অর্কর একশো তিন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। অনীশ ডাক্তারবাবুকে ফোন করে জানালো ওষুধে হয়তো কাজ হচ্ছে না, জ্বর ক্রমশঃ বাড়ছে। ডাক্তারবাবু বলছেন হাসপাতালে ভর্তি করতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সারাবাড়ীতে শ্মশানের স্তব্ধতা।

অর্ক ভুল বকছে, "ওয়ান ওয়ান ইলেভেন, ওয়ান টু টুয়েলভ, ওয়ান থ্রি..... ওয়ান থ্রি...... ওয়ান থ্রি..... ওয়ান থ্রি থ্রিটিন.... নানা... এইচওআরসি....... হর্স,

হর্স লিভস্ ইন নেস্ট...." অর্কর চোখের কোণ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো, অচেতন হয়ে পড়েছে অর্ক!



নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান করে অর্কর দাদুর গলা,

"হে দয়াময় জগদীশ্বর, এই অশ্বমেধের ঘোড়ার জীবনীশক্তিটুকু জোগান দাও!"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics