Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Bhattacharya Tuli Indrani

Children Fantasy

4.0  

Bhattacharya Tuli Indrani

Children Fantasy

প্রজাপতির দেশে

প্রজাপতির দেশে

4 mins
4.0K


'টুসি, টুসি... কোথায় গেলি? এই মেয়েটা এত দুষ্টু হয়েছে যে, কী আর বলব! পড়াশোনা নেই, সারাদিন হুট্টি হুট্টি করে বেড়াচ্ছে।'

বাড়ির আনাচে কানাচে দেখার পরে মৌটুসীর মা, কবিতা বাগানে এলেন।

'যা ভেবেছি তাই... কী করছিস তুই এখানে, হোমওয়ার্ক হয়েছে?'

একটু বাকি আছে মা, এক্ষুনি যাচ্ছি। মা দেখ, এই প্রজাপতিটাকে! ওর পায়ে ফুলের ডাঁটিটা ধতিয়ে দিয়েছি, কেমন ঘোরাচ্ছে...'

'এ'সব কী হচ্ছে টুসি, ওকে কষ্ট দিচ্ছ কেন? তোমার হাত পা যদি কেউ বেঁধে দেয়, ঘরে বন্ধ করে রাখে... কেমন লাগবে? ছেড়ে দে ওকে।'

আজ স্কুল ছুটি। মা জোর করে শুইয়েছেন টুসিকে দুপুরবেলা। টুসির একদম ভাল লাগে না দুপুরে ঘুমোতে। মা ঘুমিয়ে পড়তেই, পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানে এল সে। ওর বিশেষ বন্ধু নেই। গাছপালা, ফুল- পাখি- প্রজাপতি এরাই ওর খেলার সাথী। গাছে জল দেয়, ফুলের, প্রজাপতির সঙ্গে গল্প করেই সময় কাটে তার। সকালে দেখেছিল, ডালিয়া গাছে কুঁড়ি ধরেছে...

'দেখি তো কতটা খুলেছে ফুলটা। ওমা, কোথায় গেল ডালিয়া গাছগুলো?' এদিক ওদিক তাকিয়ে, কূল কিনারা পেল না টুসি। এই বাগান তো তার সম্পূর্ণ অচেনা। কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না সে তার চিরপরিচিত বাগানে। হঠাৎ একটা প্রজাপতি এসে বসল ঘাস ফুলের ওপরে। বাবারে! কত্ত বড় প্রজাপতি... কোনোদিন দেখেনি সে আগে। কাছে গিয়ে ভাল করে দেখবার চেষ্টা করতেই ভয় পেয়ে গেল টুসি, কী বিরাট চোখগুলো প্রজাপতির। টুসি শুনতে পেল, প্রজাপতিটা ডাকছে টুসিকে।

'মৌটুসী, ও মৌটুসী! ভয় পেলে কেন তুমি আমাকে দেখে? আমি তো তোমার বন্ধু। রোজ খেলা কর তুমি আমার সঙ্গে।'

ভাল করে দেখে, টুসি চিনতে পারল... ওমা এ তো হলদে বেগুনী পরী প্রজাপতি।

'তুমি এত বড় হয়ে গেলে কী করে, পরী? ঘাসের ফুলগুলোও কত বড়। বাকি ফুলগাছগুলোই বা গেল কোথায়?'

'সবাই আছে তাদের নিজের জায়গাতেই। তুমিই বদলে গেছ গো মণি। এস আমার সঙ্গে, তোমার ডালিয়ারানী পাপড়ি মেলেছে দেখবে না?'

'কোথায় সেই ডালিয়া, খুঁজেই তো পাচ্ছিনা।'

'ওই ওপরে তাকাও, এস আমার সঙ্গে...' বেগুনী পরী হাত ধরল টুসির আর টুসিও হুউউউশ করে উড়ে গিয়ে বসল আধখোলা ডালিয়া ফুলের ওপরে।

'একি, একি আমি উড়লাম কী করে?'

'কতবার ভেবেছ মনে মনে, প্রজাপতি হতে চেয়েছ... আজ তো তুমি প্রজাপতি হয়ে গেছ সোনা। এবারে মধু খাও আমার সঙ্গে।'

টুসি দেখল, একজোড়া ডানা গজিয়েছে তার, মাথার ওপরে রয়েছে প্রজাপতির মত নল, মধু চোষার জন্যে। খুব আনন্দ হল টুসির, আবার মা'র জন্যে একটু কষ্টও হল। মা কত খুঁজবে তাকে, কাঁদবে কত। কিন্তু আর বকতে পারবে না।

'তাহলে কী আমাকে আর স্কুলে যেতে হবে না, পরী?'

'হবে বইকি! হ্যাঁ, মানুষের স্কুলে আর যেতে হবে না, প্রজাপতির স্কুলে যাবে। সেই স্কুলে কোনও পড়াশোনা নেই... খালি খেলা আর খেলা।'

ফুলে ফুলে অনেক মধু খেয়ে বেড়াল টুসি, বেগুনী পরীর সঙ্গে। লাল টুকটুকে সুয্যিমামা যেই না বাড়ি ফিরে গেল, সে ই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল। পরী প্রজাপতি এসে হাত ধরল টুসির... 'চল এবারে তোমাকে নিয়ে যাব প্রজাপতির দেশে।'

ও মা, কী সুন্দর সেই প্রজাপতির দেশ! স্কুলের ড্রয়িং বুকের মত সব যেন ছবি আঁকা। প্রজাপতির দেশে আছে মধুর নদী, ফুলের পরাগের ঘাস, পাপড়ির বিছানা... আর কী সুন্দর গন্ধ সেখানে। ভীষণ ভীষণ ভালবেসে ফেলল টুসি তার এই নতুন জীবন, প্রজাপতির। শুধু মা'র কথা ভেবে একটু কান্না পেল। মা'কে ছাড়া যে ঘুম আসে না তার। কে তাকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াবে? ভাবতে না ভাবতেই সুন্দর বাঁশির সুর মন ভরিয়ে দিল টুসির।

'কে বাঁশি বাজাচ্ছে গো পরী?'

টুসির গালে তার নরম বেগুনী পাখা বুলিয়ে দিল বেগুনী পরী।

'বাঁশি নয় গো টুসিরানী, এ হল ছোট্ট পাখি রুংমার গান।'

'রুংমা! সে আবার কেমন পাখি, নাম শুনিনি তো কখনও।'

'পাখিরা তো আমাদের বন্ধু হয় না, দেখতে পেলেই খেয়ে ফেলতে চায়... কিন্তু রুংমা একটা ছোট্ট পাখি। ও আমাদের মতই ফুলে ফুলে মধু খায়। আমাদের বন্ধু ও। জানি না কোত্থেকে এসেছে ও, ওর কেউ নেই। আমরাই ওর সব। চল, তোমার সঙ্গে ভাব করিয়ে দিই।

বেশ দিন কাটছিল টুসির। স্কুলে যেতে হয় তাকে, আরও সব ছোট্ট প্রজাপতিদের সঙ্গে। কোন ফুলের মধু কেমনভাবে খেতে হয়, টিকটিকি, গিরগিটি, পাখিদের হাত থেকে কীভাবে বাঁচতে হয় এইসব শেখান সেখানে প্রজাপতি দাদু। টুসি স্কুলে পড়ে জেনেছিল শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি জন্ম নেয়... কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারত না, কেমন করে। শুঁয়োপোকাকে খুব ভয় পায় টুসি। বেগুনী পরী ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাল তাকে। গুটি কেটে কেমন করে প্রজাপতি বেরিয়ে আসে তা ও।

বেগুনীর মত আরও অনেক বন্ধু হয়ে গেছে টুসির। রুংমার সঙ্গেও খুব ভাব টুসির। রুংমার কাছে কত রকমের সুর শেখে সে। রুংমাকেও শেখায় সে ছড়া গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত।

মধুনদীর পাশে একদিন একা একা ঘুরছিল টুসি। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এল। প্রজাপতির দেশে তো অন্ধকার নেই, আকাশে সবসময় রামধনু আঁকা থাকে। সাদা ফুরফুরে মেঘেরা ভেসে বেড়ায়। মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকাল টুসি, বিরাট বড় বড় ডানাওয়ালা একটা অদ্ভুত পাখির মতন কী একটা যেন নেমে আসছে নীচে। খুব ভয় পেয়ে গেল টুসি। ভুলেই গেল যে তার ও পাখা আছে, উড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্যে। আশে পাশে লুকোবার যায়গা খুঁজল টুসি, কিচ্ছু নেই। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলতেই, শূন্যে উড়িয়ে নিল তাকে... কে জানে কে। খুব বাজে গন্ধ নাকে এল তার। ভয়ে ভয়ে আধখোলা চোখে দেখল বড় বড় নখওয়ালা একটা পায়ে বন্দী সে।

'এত্তবড় পাখি আমাকে নিয়ে কী করবে, ওর তো পেটও ভরবে না, এইটুকু একরত্তি প্রজাপতিকে খেয়ে। দু"চোখ বেয়ে জল নেমে এল টুসির। মা'র কথা খুব মনে পড়তে লাগল তার। তাকে হারিয়ে মা কত দুঃখই না পেয়েছেন। মা'কে ছেড়ে কেমন আনন্দে দিন কাটাচ্ছে টুসি।

'মা, ও মা! আমি তোমার কাছে ফিরতে চাই মা। তুমি কোথায়?'

'টুসি এ্যাই টুসি, দেখ মেয়ের কাণ্ড। বাগানে, গাছের গোড়ায় ঘুমিয়ে রয়েছে। কাঁদছিস কেন রে মা, স্বপ্ন দেখেছিস?'

চোখ খুলে টুসি চারিদিকে চাইল, কোথায় সেই মধু- নদী, কোথায়ই বা বড় পাখি! মা'র গলা জড়িয়ে ধরল টুসি।

'তোমাকে ছেড়ে আমি কোত্থাও যাব না মা...'

ডালিয়া ফুলের ওপর থেকে মিট মিট করে তার দিকে চেয়ে রইল হলুদ- বেগুনী প্রজাপতি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Children