বাবাই
বাবাই
‘বাবাই উঠে পড়। সকাল হয়েছে। স্কুলে যেতে হবে।’ রোজকার নিয়মের এই কথাগুলি বলতে বলতে মিতালি সুব্রতর জন্য এককাপ চা নিয়ে এগিয়ে গেল বেডরুমের দিকে। সকালের এই সময়টা তার বড্ড কাজের চাপ থাকে। সুব্রত ও বাবাইকে নিয়ে তার এই ছোট্ট সংসারে সারাদিনের কাজের লোক রাখেনি সে নিজের ইচ্ছাতেই।
বাবাইয়ের বয়স এখন আট বছর। ক্লাস থ্রি তে পড়ে। পড়াশোনায় বেশ ভালো। তবুও ওকে নিয়ে মিতালির চিন্তার শেষ নেই। মাঝে মাঝেই সুব্রতকে বলে ‘কখনো কখনো তো ছেলেটাকে একটু পড়াতে বসাতে পারো। আমি একা কত দেখব। জানি না ছেলেটা বড় হয়ে কি হবে।’ যদিও সুব্রতর এটা নিয়ে খুব একটা ব্যস্ততা নেই। সময় পেলে সে ছেলেকে পড়াতে বসানোর পরিবর্তে তার সাথে খেলতে ও তাকে ভালো ভালো গল্প শোনাতেই পছন্দ করে আর মিতালি কে বলে ‘এই বয়সে ওকে বেশি প্রেসার দিওনা।’
মিতালি ঠিক করল আজ সে নিজেই বাবাইকে স্কুল থেকে আনতে যাবে। তার একটু বাপের বাড়িতে দরকার আছে। বাবাইকে নিয়ে মায়ের কাছ থেকে ঘুরে আসবে। সুব্রত বেরোনোর সময় বলে গেছে আজকে গাড়িটা পাঠাতে পারবেনা। সুব্রত বলল ‘তুমি একটা ট্যাক্সি নিয়ে নিও।’ মিতালি একটু হেসে বলল ‘তুমি তো জানো বাবাইয়ের স্কুল থেকে মায়ের বাড়ির দূরত্ব যা তাতে কোন ট্যাক্সিই যেতে চায়না। তবুও একই কথা বল। তুমি চিন্তা কোরোনা ঐটুকু আমি বাসেই যেতে পারব। তুমি বরং ফেরার সময় আমাদের নিয়ে এস তাতেই হবে।’
সকালের কাজ সেরে মিতালি রওনা দিল বাবাইয়ের স্কুলের উদ্দেশ্যে সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে রওনা দিল বাপের বাড়ির দিকে। এই সময় বাস গুলিতে একটু ভিড় থাকে, তবুও
বাবাই বসার জায়গা পেল। কিন্তু একি! মিতালি দেখল বাবাই নিজে না বসে একটু দূরে দাঁড়ানো
একজন বৃদ্ধা কে বলল ‘দিদা তুমি বস এখানে।’
বৃদ্ধাও একটু অবাক হল ভাবল সে তো অনেকক্ষণ হল দাঁড়িয়ে আছে, কেউ তো বসতে বলেনি তাকে! ছেলের এই কান্ড দেখে বৃদ্ধার সাথে অবাক হল মিতালিও। বৃদ্ধা বললেন ‘নানা বাবু তুমি বস, তুমি ছোট। আমি ঠিক আছি।’ কিন্তু বাবাই নাছোড়বান্দা, বলল ‘না দিদি তোমাকেই বসতে হবে। জানো আমাকে বাপি সবসময় বলে মহিলা ও বয়স্কদের সবসময় সাহায্য ও সম্মান করতে হয়। প্লিজ তুমি বস দিদা। আমি মায়ের হাত ধরে ঠিক দাঁড়াতে পারব।’ বৃদ্ধা শেষ পর্যন্ত বাবাইয়ের কাছে হেরে গিয়ে বসতে বাধ্য হলেন ও বাবাইয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন ‘তুমি অনেক বড় হবে।’
সন্ধ্যের সময় মিতালি বাবাইকে নিয়ে সুব্রতর সাথে বাড়ী ফেরার সময় বাসের ঘটনাটা তাকে শোনালো আর বলল ‘আজ আমি নিশ্চিন্ত হলাম বাবাই বড় হয়ে নামকরা কেউ না হলেও একজন ভালো মানুষ হবে।’