Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Debdutta Banerjee

Drama Crime

3  

Debdutta Banerjee

Drama Crime

মাতাহারি

মাতাহারি

9 mins
1.1K


একটা গুরুত্ব পূর্ণ কেসের কাজে বাইরে গেছিলাম।বেশ কিছু সাক্ষ‍্য প্রমান জোগাড় হয়েছিল। মনটা বেশ ফুরফুরে। ফেরার পথে ট্রেন লেট করল, রাত প্রায় দুটোর সময় আমায় স্টেশনে নামিয়ে ট্রেনটা ধীরে ধীরে চলে গেলো। প্লাটফর্মে তাকিয়ে দেখলাম আমি ছাড়া মাত্র দু জন মানুষ নেমেছে। তারা মনে হল লোকাল লোক। নেমেই লাইন ধরে উল্টোদিকে হাঁটা দিল। ট্রেনের শেষ কামরাটা যখন প্লাটফর্ম ছাড়ছে তখন লাফিয়ে লামল আরেকজন। আর সাথে সাথে পড়তে পড়তে সামলে নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে গেল। আমি সেদিকে দুপা এগোতেই অবয়বটি চট করে একটা বড় গাছ আর চায়ের গুমটির মাঝে ঢুকে পড়ল। কাপড়ে জড়ানো চেহারাটা কোনো মহিলার মনে হল আমার। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে চলেই আসছিলাম। হঠাৎ কতগুলো কুকুরের মিলিত চিৎকারে ওদিকে এগিয়ে গেলাম। কুকুর গুলো যাকে দেখে চিৎকার করছে সে একটি যুবতি। শাল দিয়ে আপাদমস্তক এমন ভাবে মুড়ে রয়েছে যে কুকুর গুলো সন্দেহ করছে ওকে। হুট হাট করে কুকুর গুলোকে সরিয়ে দিতেই যুবতি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।


বললাম -''এত রাতে আপনি একা কোথায় যাবেন? এখানে থাকলে ওরা আবার আসবে। চাইলে আমার সাথে বেরিয়ে আসতে পারেন। বাংলা বোঝেন তো ?''


মাথা নাড়ল যুবতী, আমার পিছন পিছন এগিয়ে এল। শুনশান প্লাটফর্ম, একটা চা ওয়ালাও নেই। দুটো ভিখিরি ঘুমোচ্ছে শেডের তলায় বেঞ্চে। বাইরে এসে একটা রিক্সা বা গাড়ি কিছুই পেলাম না। শহর এখান থেকে এক মাইল হবে। চা বাগানে ঘেরা এই ছোট্ট স্টেশনের নাম হাসিমারা, দিনে বেশ কয়েকটা ট্রেন গেলেও রাতে বড্ড শুনশান। আমাদের ট্রেনটার রাইট টাইম ছিল সন্ধ‍্যা সাতটা। স্টেশন মাষ্টার দরজা বন্ধ করে ঘুমোচ্ছে হয়তো। কারণ জায়গাটা একদিকে বিখ‍্যাত আবার কুখ‍্যাতও বটে। চারদিকে চা বাগান আর জঙ্গল, একটু দূরেই ভুটানের পাহাড়, হাতির দলের নিত‍্য আনাগোনা। এছাড়া বন্ধ চা বাগানের কল‍্যানে ডাকাতি ও অসামাজিক কাজকর্ম বেড়েই চলেছে দিন দিন। জঙ্গী কার্যকলাপের গোপন খবর ও রয়েছে। আমি এখানেই কর্মরত দু বছর, এলাকাটা ভাল করেই চিনি। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম তখনো ও ভাবে আপাদমস্তক ঢেকে রয়েছে। মে মাস, বাতাসে ঠান্ডার ছিঁটেফোটাও নেই। তবুও....।


-''ওভাবে নামলেন কেন? কোথায় যাবেন ?'' আমি প্রশ্ন করলাম।


কিন্তু কোনো উত্তর নেই। দীর্ঘশ্বাস অথবা জোরে শ্বাস টানলো। বললাম -''বাড়ি কোথায় ? এত রাতে একা যেতে পারবেন ? নাহলে স্টেশনে আমার সাথে বসে অপেক্ষা করুন। দিনের আলো ফুটলে না হয় চলে যাবেন। '' যুবতির চাদরটা একটু সরলো মনে হয়। মাথা নাড়লো যেন।


আমি টিকিট কাউন্টারের পাশে একটা বেঞ্চে উঠে বসলাম। ফোন করলেই অফিস থেকে গাড়ি আসবে আমার জন‍্য। কিন্তু মেয়েটাকে ছেড়ে যেতে কেমন লাগছিল। মেয়েটি তখনো বাইরের সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে ছিল। ছটার আগে রিক্সা বা অটো পাওয়া যাবে না, ঘুমিয়েই নি। এই ভেবে ব‍্যাগটা মাথায় দিয়ে শুয়ে পড়লাম।


চোখটা লেগে এসেছিল, হঠাৎ মনে হল কেউ পায়ের কাছে বসল। চোখ খুলে দেখি সেই মেয়েটি এত বেঞ্চ খালি থাকতেও আমার পায়ের কাছেই এসে বসেছে। কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু চাদরের ফাঁক দিয়ে একটা করুণ মুখ দেখা দিল, দু চোখে জলের ধারা। মেয়েটা কাঁদছে। হঠাৎ দেখি দু টো লোক টিকিট কাটছে, চারটায় একটা ট্রেন আছে বোর্ডে দেখলাম। দুরপাল্লার ট্রেন। লোক দুটো প্লাটফর্মে ঢুকে গেল। আমি উঠে বসলাম। এতক্ষণে খেয়াল হল মেয়েটির সাথে কোনো ব‍্যাগ বা লাগেজ নেই। পালিয়ে আসেনি তো বাড়ি থেকে ?? দিনকাল ভালো নয়, কি বিপদে জড়াবো কে জানে!! বললাম -''কিছু বলবেন আমায় ? চাইলে সাহায‍্য করতে পারি, যদি বিশ্বাস করেন।''


-''আমার না খুব বিপদ !! আমি.... আমি....''


আমি এমনি কিছু আশা করেছিলাম। জলের বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বললাম -''খুলে বলুন একটু, ঠিক কি হয়েছে। ''


মেয়েটার চাদর আরেকটু সরলো, বেশ মিষ্টি দেখতে, তবে মুখটায় সরলতার সাথে আতঙ্ক, দুঃখ, বেদনার সহাবস্থান। পরনে চুড়িদার তবে বেশ মলিন। কেমন যেন একটু মায়া জাগল। বললাম -''আমায় ভরসা করতে পারেন। আমি এখানকার লোকাল থানার ইনচার্জ ''


এবার মনে হয় একটু সাহস পেল মেয়েটি। ঢকঢক করে খানিকটা জল খেলো। তারপর চোখ মুছে বলল -''ওরা আমায় বিক্রি করে দিয়েছিল। আমায় পাচার করে দিচ্ছিল । চলন্ত ট্রেন থেকে বাথরুমে যাবো বলে পালিয়েছি। এতক্ষণে হয়তো আমায় খুঁজতে শুরু করেছে। ''


আমি যে ট্রেনটায় ফিরলাম সেটা আসাম থেকে ছেড়ে উড়িষ‍্যা যাচ্ছিল। বললাম -''বাড়ি কোথায় ? ফোন নম্বর থাকলে দাও। কথা বলিয়ে দিচ্ছি।''


মেয়েটা আবার কেঁদে ফেলল। বলল -''বাড়ি নগাও, কাকা কাকিমার কাছে থাকতাম। ওরাই বিক্রি করে দিয়েছে। "


কথায় বাংলা আসামের বর্ডারের টান রয়েছে। আসামের বাঙ্গালীরা এভাব কথা বলে। আর এমন পাচারের ঘটনা এদিকে খুব ঘটে। বাংলা, বিহার, ঊড়িষ‍্যা ঘুরে দক্ষিণ পশ্চিমে পাচার হয়ে যায় মেয়ে গুলো। এর আগেও একটা বড় গ‍্যাং কে ধরেছি আমরা। কেস চলছে, অনেক বড় বড় মাথা জড়িয়ে রয়েছে এই কেসে। দু তিনটে র‍্যাকেট রয়েছে এই অঞ্চলে। মেয়েটাকে নিয়ে স্টেশনে বসা নিরাপদ নয় মনে হল। এখনি ডাউন একটা ট্রেন আসবে দেখাচ্ছে, আপ ট্রেনটা থেকে যদি ঐ লোকগুলো ওর খোঁজে নেমে ডাউন ট্রেনটা ধরে এখানে চলে আসে আমরা বিপদে পড়ব। থানায় ফোন করে জিপ আনিয়ে নিলাম। অযথা এসব সাহায‍্য আমি নেই না। তবে এখন এটা জরুরি। মেয়েটাকে বললাম -''আমার সাথে থানায় চলো, দেখছি কি করতে পারি। ''


কিন্তু মেয়েটার কান্না আরো বেড়ে গেলো, থানা পুলিশ এরা বড্ড ভয় পায়। তাছাড়া কেসটা রেল পুলিশের আওতায় পড়ে। বললাম -''এখানে বসে থাকলে বিপদ বাড়বে। যে কোনো সময় ওদের লোক এসে পড়তে পারে। ওদের নেটওয়ার্ক সাংঘাতিক। বাঁচতে চাইলে চলো আমার সাথে। ''


মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল -''রাতটা একটু থাকার ব‍্যবস্থা করে দিন। সকালে ঠিক চলে যাবো কোথাও।থানা পুলিশে জড়াতে চাই না আর। ''


জিপ এসে গেছিল। বললাম -''আমি একা থাকি, চাইলে রাতটা আমায় বিশ্বাস করে থাকতে পারো আমার ঘরে। কয়েক ঘন্টার ব‍্যাপার। ''


ও করুণ দুটো চোখ তুলে চাইল। থানার পেছনেই আমার ছোট্ট কোয়াটার।আমি একাই থাকি। বাবা মা বোন আসামে রয়েছে গ্ৰামের বাড়িতে। মাঝে মাঝে আসে এখানে। মেয়েটার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না দেখে কেমন মায়া হলো। বললাম -''আপাতত আমার বাড়ি চল। কাল দেখছি কি করা যায়। তবে গাড়িতে উঠে কাঁদবে না আর।''


কি বুঝল কে জানে, মাথা নেড়ে উঠে পড়ল আমার সাথে।


বাড়ি যখন পৌছলাম পূব আকাশে অরুণিমার ছোঁওয়া লেগেছে, আকাশ প্রায় ফরসা। সকাল নটায় আমার জয়েনিং। একটা বড় কেস চলছে, কাল কোর্টে উঠবে।তার তথ‍্য প্রমাণ জোগাড় করে কেস সাজানো চলছে। আজ সারাটা দিন দৌড়াদৌড়ি আছে।


ঘরে ফিরে ওকে বললাম -''আমি একাই থাকি এখানে, তুমি ফ্রেশ হবে তো? আলমারিতে মা এর শাড়ি রয়েছে, বোনের চুড়িদার ও আছে বোধহয়। বার করে দিচ্ছি দাঁড়াও। তারপর দেখছি কি করা যায়। ''


ওর ভয় বোধহয় একটু একটু করে কাটছিল। ফ্রেস হয়ে ও ঢুকে গেল আমার ছোট্ট রান্নাঘরে। সকালে একটা মাসি এসে জলখাবার আর রান্না করে যায়। তবে সে আসবে নটার পরে। ও দেখলাম নিজেই চা বানিয়ে আনল।


গরম চা য়ে চুমুক দিয়ে মেয়েটাকে ভালো করে দেখলাম। সদ‍্যস্নাত তাজা জুঁই ফুলের মতো চেহারা, বোনের চুড়িদারটায় মানিয়েছে বেশ। চুল দিয়ে টুপটাপ জল ঝরছে । ভিরু চোখে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। একটা আলত ভয়ের চাদর সারা শরীর জুড়ে। নাম বলেছিল ঝুমা, বয়স কুড়ি বাইশের বেশি নয়, কম ও হতে পারে। চাপা গায়ের রঙ হলেও চোখ নাক মুখ খুব সুন্দর। নিজেকে শাসন করলাম, কে না কে? এর প্রতি দুর্বল হলে চলবে না!! একটু গলা পরিস্কার করে বললাম ,-" কি ভাবলে? কি করবে এবার ? ''


চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়েছিল ও। বলল -''আজকের দিনটা থাকতে দিন। একটু ভেবে দেখি। কাল চলে যাবো। ''


আমি একা থাকি, ওর মত অল্প বয়সি মেয়ে আমার ঘরে থাকলে লোকে কি বলবে !! এই চিন্তা তো ছিলই, তাছাড়া মেয়েটা যাবে কোথায় এটাও একটা প্রশ্ন। বললাম -''কোনো যাওয়ার জায়গা থাকলে বলো আমি গাড়ি করে পৌঁছে দেবো। ''


ওর কাজল কালো চোখ দুটো জলে ভরে উঠল মুহূর্তের মধ‍্যে। বলল -''তেমন কাছের কেউ নেই, এক বান্ধবী ছিল পায়েল। ওদলাবাড়িতে বিয়ে হয়েছিল। আর শিলিগুড়িতে এক মাসি থাকে। হাসপাতালের কাছে বাড়ি। এর মধ‍্যে কোথাও একটা যাবো। তারপর দেখি কি হয় !!''


-''পড়াশোনা কতদূর ?''


-''উচ্চমাধ‍্যমিক পাশ করে কলেজে যেতেই বাবা মারা গেল। মা আগেই মারা গেছিল। কামাক্ষ‍্যাগুড়িতে বাড়ি ছিল।কাকা এসে বাড়ি বিক্রি করে নগাও নিয়ে গেছিল দেড় বছর আগে। ''


ফুঁঁপিয়ে কান্না শুরু আবার। বললাম -''ঠিক আছে, ঠিক আছে, এভাবে কেঁদ না। আমার কাজের মাসি আসবে এখনি। বলবে তুমি আমার বোন রিয়ার বান্ধবী। আমার অতিথি। ও গৌহাটিতে থাকে। আমি অফিস যাচ্ছি। তারপর দেখছি। ''


ও চায়ের কাপ প্লেট নিয়ে চলে গেল ভেতরে। আমিও রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম। সারাদিনের কাজের ফাঁকে এক দু বার ঝুমার কথা মনে পড়েছিল। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল যে ভাবার সময় পাই নি। সন্ধ‍্যা পার করে বাড়ি ফিরলাম।


আমাদের থানার পেছনে কোয়াটার গুলো বেশ ছাড়া ছাড়া, ফাঁকা জায়গা ঘিরে অনেকেই বাগান করেছে। আমার কোয়াটারের সামনেটা ঘিরে আমার আগে যিনি থাকতেন অনেক সুপুরী গাছ লাগিয়ে ছিলেন। একটা ঝাঁঁকড়া আম গাছ, ছাড়াও জবা, টগর, গন্ধরাজ, আর শিউলি গাছ ছিল। বাবা আবার লতানো কি সব ফুলের গাছ করেছিল এখানে এসে। দূর থেকে সেই ঝুপসি আঁধারের ফাকে ক্ষিণ আলো আসছিল ঘরের জানালা দিয়ে। মনে পড়ল ঝুমার কথা। একা একা সারাদিন কি করছে মেয়েটা কে জানে!! কোনো বিপদ হলো না তো। একবার খবর নেওয়া উচিত ছিল আমার সারাদিনে।


তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এগিয়ে গেলাম। ঝুমা বসে ছিল চুপচাপ, টিভিও চালায় নি। এখনো চোখে মুখে আবছা ভয়ের ছাপ। আমায় ফিরতে দেখে চা করে আনল তাড়াতাড়ি । টুকটাক কথা হল ওর সাথে। বেশ ভালোই লাগছিল ঘরে ফিরে ওকে দেখে। মনে হচ্ছিল আমার কত দিনের চেনা নিজের কেউ। আবার মনকে শাসন করলাম। ও ক্ষণিকের অতিথি। আজ বাদে কাল চলে যাবে।


রাতে খেতে বসে ওকে বললাম -'' তাহলে কি ঠিক করলে? কোথায় যাবে?''


ও ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। আমার কথায় চুপ করে থালার দিকে তাকিয়ে বসে থাকল। হঠাৎ দেখি চোখ দিয়ে বড় বড় ফোটা ঝরছে। তাড়াতাড়ি বললাম -''আরে, কোনো তাড়া নেই। তুমি আর দু দিন ভেবে নাও। আমিও চাপে আছি একটু। দু দিন পর ফ্রি হয়ে না হয় ওদলাবাড়ি বা শিলিগুড়ি যাবো।''


ও থালা নিয়ে উঠে যাচ্ছিল। টেনে বসালাম। বললাম -''তুমি চাইলে কেস করতে পারো কাকার বিরুদ্ধে। আমি ব‍্যবস্থা করব। বিশ্বাস করতে পারো আমায়। ''


ও মাথা নেড়ে বলল -''লাভ নেই। কাকা পার্টি করে, টাকার জোর আছে। আর ঐ লোক গুলো খুব সাংঘাতিক। ''


আমি জানি এই সব র‍্যাকেট গুলো খুব সাংঘাতিক হয়। মেয়েটার জীবন সংশয় হতে পারে। তার চেয়ে কোথাও চলে গেলেই ভালো।কেস চললে তো হোমেই থাকতে হবে। আসামে এ সব খুব হয় , প্রশাসন তৎপর নয় তেমন। পরদিন আলিপুর কোর্টে যেতে হবে আমার কেসের জন‍্য। শুতে চলে এলাম তাড়াতাড়ি।


আমার অগুছালো ঘর পরিস্কার করে গোছানো ফিরেই লক্ষ‍্য করেছিলাম। শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখি পরিপাটি করে মশারি টাঙিয়ে বিছানা করা। আলনাটাও গুছানো। টেবিলে ফুলদানিতে কয়েকটা গন্ধরাজ গন্ধ ছড়াচ্ছে। গ্লাসে জল রাখা ঢাকা দিয়ে। ড্রইং রুমের পাশে একটা ছোট ঘরে একটা খাট পাতা আছে। আমার বোন এলে ও ঘরে শোয়। ঝুমা ও ঘরে চলে গেছিল । বহুদিন পর কোয়াটারটাকে বাড়ি মনে হচ্ছিল।মেয়েলি হাতের ছাপ চারদিকে। কেমন একটা ভালোলাগার আবেশ আমায় জড়িয়ে রেখেছিল। এই মেয়েটাকে যদি চিরদিনের জন‍্য নিজের করে রেখে দেওয়া যায় !! ...ধুর!! কি সব ভাবছি আবার। পাগল হলাম নাকি!!


পরদিন একটা গুরুত্বপূর্ণ কেসের কাজে আলিপুর কোর্টে যেতে হবে। পকেট থেকে পেন ড্রাইভ টা বার করে চেক করলাম।এই পেন ড্রাইভে রয়েছে সব তথ‍্য প্রমান।থানায় রেখে আসতে ভরসা হয়নি। কিছু দরকারি কাগজ ফাইলে গুছিয়ে রাখলাম। ফাইলটা ভীষণ দরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ। শুয়ে শুয়ে এটা সেটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছিলাম।


পরদিন সকালে উঠতে বেশ দেরি হল। মাথাটা একটু ভার ভার। শরীরটাও কেমন একটু ম‍্যাজম‍্যাজে । ঘড়ির কাঁটা বলছে নটা, নটায় তো বেরিয়ে যাওয়ার কথা আমার!! এক লাফে উঠে বাথরুমে গেলাম। স্নান করে বেরিয়ে দেখি মাসি এসে জলখাবার করছে, ঝুমাকে দেখতে পেলাম না। তাড়াতাড়ি রেডি হতে হতে মাসিকে বললাম-''খাবার সময় নেই, চা দাও শুধু, ঝুমা কোথায়?''


মাসি বলল সে দেখে নি। সদর দরজা নাকি খোলা ছিল। বারান্দায় বেরিয়ে চারপাশে দেখলাম। না, নেই। বাগানেও নেই। চটি জোড়াও নেই। তবে কি চলে গেলো একা একাই!! আমার কথায় দুঃখ পেয়েছিল কি? খারাপ তো কিছুই বলি নি আমি। তবে ??


ভাবার আর সময় ছিল না। তবে কি একাই চলে গেল। যাক গে !! এতো ভাবার সময় নেই হাতে। টিংটং করে মোবাইল বেজে উঠল, আমার সিনিয়ারের ফোন, বলল তাড়াতাড়ি ফাইল আর পেন ড্রাইভ নিয়ে থানায় যেতে। সবাই রেডি হয়ে ওয়েট করছে। জিপ ছাড়বে এবার। কিন্তু এরপর যে চরম বিস্ময় আমার জন‍্য অপেক্ষা করছিল তা তখনো বুঝি নি। ফাইলটা হাতে নিয়ে ভাবলাম একবার সব দেখে নেই। কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও রিপোর্ট ছিল ফাইলে। আর ছিল ছোট্ট পেন ড্রাইভটা।


একটা মেয়ে পাচারকারী দলের বিরুদ্ধেই সব নথী জোগাড় করা হয়েছিল। দু জন লোকাল এমএলএর বিরুদ্ধে প্রমাণ ছিল ঐ ফাইলে আর পেন ড্রাইভে। সব ছিল আমার দায়িত্বে!!


কিন্তু খুলেই......আমার মাথায় হাত। কিছুই নেই, পড়ে রয়েছে শুধু একটা চিরকুট


-'অজানা অচেনা মেয়েদের বিশ্বাস করা উচিৎ নয়। বাড়িতে নিয়ে আসা তো একদম ঠিক নয়।অতিথি বিদায় দক্ষিনা নিয়ে গেলাম। '



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama