Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Sukumar Roy

Classics

0  

Sukumar Roy

Classics

পাস্তুর

পাস্তুর

4 mins
3.1K


মানুষের যতরকম রোগ হয়, আজকালকার ডাক্তারেরা বলেন, তার সবগুলিই অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর কীর্তি। এই জীবাণু বা "মাইক্রোব" (Microbe) গুলিই সকল রোগের বীজ। পথে ঘাটে বাতাসে মানুষের শরীরের ভিতরে বাইরে ইহারা ঘুরিয়া বেড়ায়। আজকালকার চিকিৎসাশাস্ত্রে ইহাদের খাতির খুব বেশি। এই জীবাণুগুলির ভালরূপ পরিচয় লওয়া, ইহাদের চালচলনের সংবাদ রাখা এবং এগুলিকে জব্দ করিবার নানাপ্রকার ব্যবস্থা করা, এখনকার ডাক্তারিবিদ্যার খুব একটা বড় ব্যাপার হইয়া পড়িয়াছে এবং তাহার ফলে চিকিৎসাপ্রণালী আশ্চর্যরকম উন্নতি লাভ করিয়াছে। এই সমস্ত উন্নতি এবং এই নূতন প্রণালীর মূলে ফরাসী পণ্ডিত লুই পাস্তুর। পাস্তুর একা এ বিষয়ে নূতন আবিষ্কার ও নূতন চিন্তা দ্বারা মানুষের জ্ঞান ও চেষ্টাকে যে কতদূর অগ্রসর করিয়াছেন, ভাবিলে আশ্চর্য হইতে হয়।

প্রায় ৯৪ বৎসর আগে পাস্তুরের জন্ম হয়। অতি অল্প বয়স হইতেই শিক্ষকদের মুখে তাঁহার বুদ্ধির প্রশংসা শুনা যাইত। সেসময়কার বড় বড় বৈজ্ঞানিকদের কাছে তিনি বিজ্ঞান শিক্ষা করিয়াছিলেন এবং সেই সময় হইতেই রসায়নবিদ্যায় তাঁহার খুব নাম শুনা গিয়াছিল। ৪৫ বৎসর বয়সে যখন তিনি অধ্যাপক নিযুক্ত হইয়া প্যারিসে আসেন তখনও লোক তাঁহাকে খুব বড় রাসায়নিক পণ্ডিত বলিয়াই জানিত। কিন্তু দেখিতে দেখিতে তাঁহার চোখ পড়িল আর একটা ব্যাপারের উপর—'জিনিস পচে কেন?' এই প্রশ্ন লইয়া তিনি ভারি ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। তাঁহার বন্ধুবান্ধবেরা এবং পুরাতন শিক্ষকেরা ইহাতে ভারি দুঃখিত হইলেন। সকলেই বলিতে লাগিলেন "পাস্তুরের এমন বুদ্ধি ছিল, চেষ্টা করিলে সে রসায়নশাস্ত্রে কত কি করিতে পারিত; সে কিনা একটা বাজে বিষয় লইয়া সময় নষ্ট করিতে বসিল।"

কিন্তু পাস্তুর ছাড়িবার লোক নহেন। তিনি ভাবিলেন ব্যাপারটা তলাইয়া দেখিতে হইবে। আগে লোকের ধারণা ছিল সব জিনিস বাতাস লাগিয়া 'আপনা-আপনি' পচিয়া যায়। পাস্তুর দেখিয়ালেন, দুধে একপ্রকার জীবাণু থাকে যাহার জন্য দুধ টকিয়া নষ্ট হাইয়া যায়। মাখন যে পচে তাহাও আর একপ্রকার জীবাণুর কাণ্ড। ভাত চিনি বা ফলের রস পচাইয়া যে মদ প্রস্তুত হয়, সেখানেও জীবাণু। নানাপ্রকার জীবাণু বাতাসে ঘুরিয়া বেড়ায়, সেইজন্য অনেক জিনিস আদুল রাখিলে তাহা শীঘ্র নষ্ট হইয়া যায়। পাস্তুর আরও দেখাইলেন যে, খুব গরম লাগাইলে এই জীবাণুগুলি মরিয়া যায়। এইরূপে জীবাণু নষ্ট করিয়া দেখা গেল যে, এ অবস্থায় সেগুলি আর পচিতে পারে না। আজকাল লোকে দুধ জমাইয়া টিনে আঁটিয়া বিক্রি করে, নানাপ্রকার ফল চিনির রসে ফুটাইয়া মাসের পর মাস বোতলে পুরিয়া রাখে, কতরকম মাছ মাংস, কতরকম খাবার জিনিস বাতাসশূন্য পাত্রে করিয়া চালান দেয়। পাস্তুর যদি জীবাণু তাড়াইয়া জিনিস বাঁচাইবার সংকেতটি বলিয়া না দিতেন, তবে এ সকল কিছুই সম্ভব হইত না।

এই সময়ে ফ্রান্সে রেশম পোকার একরকম রোগ দেখা দিয়া, রেশমের কারবারের ভয়ানক ক্ষতি আরম্ভ করিল। পাস্তুর এই ব্যাপারটার সন্ধান করিতে গিয়া দেখিলেন, এই রোগের মূলে একপ্রকার জীবাণু। সেই জীবাণুটাকে নষ্ট করিবার উপায় আবিষ্কার করিয়া তিনি রোগ দূর করিলেন। ইহার পর পশুপাখির রোগের কথা আপনা হইতেই আসিয়া পড়িল। খেয়ো জ্বরের উৎপাতে দেশের ছাগল গরু উজাড় হয় দেখিয়া তিনি সেই খেয়ো জ্বর দূর করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। খেয়ো জ্বরের জীবাণুর সন্ধান করিয়া তাহার উপর নানারূপ পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন। ইহার ফলে তিনি যে চিকিৎসাপ্রণালী আবিষ্কার করিলেন, ডাক্তারমহলে এখনও তাহার জয়জয়কার চলিতেছে।

তিনি বলিলেন, রোগের বীজকে কাহিল করিয়া সেই বীজের টীকা দাও—তাহাতেই রোগ সারিবে। যাহার রোগ হইয়াছে তাহার দেহ হইতে জীবাণু সংগ্রহ করিয়া সেগুলিকে সাবধানে বাড়িতে দাও, তারপর অন্য প্রাণীর দেহে সেই জীবাণুর সাহায্যে রোগ প্রবেশ করাও। এই প্রাণীটি যখন রুগ্ন হইবে এবং তাহার দেহে লক্ষ লক্ষ জীবাণু দেখা দিবে—তাহার শরীর হইতেই টীকার বীজ পাওয়া যাইবে। পাগলা কুকুরে কামড়াইলে মানুষের 'জলাতঙ্ক' রোগ হয়। এই ভয়ানক রোগের জীবাণুগুলি এতই ছোট যে, সেগুলিকে অনুবীক্ষণেও দেখা যায় না। কিন্তু পাস্তুর বলিলেন, "চোখে দেখা যাউক আর নাই যাউক, জীবাণু আছেই।" সেই অদৃশ্য জীবাণুর দ্বারা তিনি অন্য প্রাণীর মধ্যে রোগ জন্মাইয়া, টীকার বীজ প্রস্তুত করিলেন। একটি চাষার ছেলেকে নেক্‌ড়ে বাঘে কামড়াইয়াছিল—পাস্তুরের সর্বপ্রথম পরীক্ষা হইল তাহার উপরে। এই বালক যখন বাঁচিয়া গেল, তাহার পর হইতেই পাস্তুরের চিকিৎসাপ্রণালী ডাক্তার মহলে একেবারে পাকা হইয়া পড়িয়াছে। পারিস নগরে পাস্তুরের নামে যে বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছে, তাহার সম্মুখে এই কৃষক বালকের একটি সুন্দর মুর্তি আছে।

এক সময়ে ডাক্তারেরা মানুষের দেহে একটু ছুরি চালাইতে হইলেই কত ব্যস্ত হইতেন, কিন্তু এখনকার অস্ত্রচিকিৎসক মানুষের হাত পা কাটিতেও আর ইতস্তত করেন না, কারণ তিনি জানেন, রোগের বীজ তাড়াইলেই আর ভয় নাই। তাই এত হাত ধোয়াধোয়ি, ফুটন্ত জলে ছুরি কাঁচি ডুবান, এত সাবান আর এত কার্বলিক এসিড, নির্দোষ তূলা ও ব্যান্ডেজের জন্য এত কাড়াকাড়ি—দুষ্ট জীবাণু যাহাতে কোন ফাঁকে ঢুকিতে না পারে। যুদ্ধের জায়গায় হাজার হাজার লোক আহত হইতেছে; তাহার শতকরা আশিজন বাঁচিয়া উঠিতেছে কেবল পাস্তুরের প্রসাদে। আজ বিশ বৎসর হইল পাস্তুর মারা গিয়াছেন; ফরাসি জাতি রাজসম্মানে তাঁহার সমাধি দিয়া, সেই সমাধির উপর তাঁহারই নামে বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, সেখানে একনও নূতন নূতন আবিষ্কার চলিতেছে। পাস্তুরের শিষ্যেরা এখন পৃথিবীর চারদিক ছাইয়া ফেলিতেছেন, তাঁহারই পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া এখনও কত লোক কত কীর্তি সঞ্চয় করিতেছে।

পাস্তুরকে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল, "তুমি সারা জীবন ধরিয়া কি দেখিলে এবং কি শিখিলে?. পাস্তুর বলিলেন, "দেখিলাম, এ জগৎব্যাপারের সকলই আশ্চর্য, সকলই অলৌকিক।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics