Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Silvia Ghosh

Drama

2  

Silvia Ghosh

Drama

সম্পর্ক

সম্পর্ক

3 mins
1.3K


রাত থেকেই বৃষ্টি তার নানা রূপ দেখিয়ে চলেছে। কখন ঝমঝম, কখন টিপটিপ কখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে....এর মাঝে আজ নিশ্চিন্তে ঘুমালো জয়তী.... 


নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গা, নতুন সব। সম্পর্কের ভালো নাম ডাক নামগুলোর সাথে তেমনভাবে জড়াতে পারে নি জয়তী এখনও।

কারোর নতুন বৌদি, কারোর বউমণি, কারোর সোনা মামী, কারোর কাছে মামনি এ সবটা এখনও তার রপ্ত হয়নি। বেশ নতুন নতুন সম্পর্কের মায়াজালে নিজেকে দেখতে ভালো লাগছে জয়ীর।

 

মাত্র ত্রিশ দিন হয়েছে , জয়তী ধ্রুব'র স্ত্রী হয়েছে, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ... ফলে ধ্রুবকে সঠিক চেনা ফুলশয্যার রাতেই।

ফুলশয্যার পরেরদিন সকালে একটু দেরি করে ঘুম ভাঙায় দরজা একটা জোরে লাথি মারার শব্দ পায় জয়ী  তখনই মনে পড়ে গেল। গতরাতে ধ্রুব'র অতিরিক্ত ড্রিঙ্ক করে বাড়ি ফেরার পর ফুলশয্যার খাটে বসে জয়তীকে একটা হিরের আংটি দিয়ে বলেছিল, পুরুষ মানুষ আনন্দ- উৎসবে একটু আধটু মাল টাল খাবে আর মেয়ে মানুষের কাজ হল ঘরটাকে সামলে রাখা, বাচ্চা কাচ্চাদের মানুষ করা।পুরুষদের একটু আধটু বাইরের দিকে নেশা থাকবেই। এই সব নিয়ে পরবর্তীকালে কোন রকম অশান্তি যেন না করে জয়তী। 


সবকটা কথা সে বলেছিল উত্তর কলকাতার 'স' এর প্রাধান্য যুক্ত ভাষাভাষির মানুষগুলোর মত করে। ও কাছে আসতেই জয়তীর পেট উগড়ে বমি ঠেলে এলো ঐ মদের গন্ধে। মাতাল অবস্থাতেও সেই বমির কারণ জানতে ভুললো না ধ্রুব। জয়তীকে বলেই বসলো,

----কি ব্যাপার মদের গন্ধে গা গুলিয়ে উঠলো, না কি অন্য কোন কেস আছে গুরু ?

বলেই হো হো হো করে হেসে ওঠে আর তারপর চলে রাত-ভোর জয়তীর উপর তার জোর জুলুম। 


সকাল বেলায় ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে চোখাচোখি হয় অবিবাহিতা ননদের সাথে আর শাশুড়ি মা হেমবালার সঙ্গে। আড়চোখে দেখে নিয়ে শাশুড়ি বলে ওঠেন,

--- নবাব নন্দিনীর ঘুম ভাঙলো? স্নান সেরে সকলকে চা দিতে হবে তো নাকি?

 

কথা কটা শুনে জয়ী যেই না কলঘরের দিকে পা বাড়াতে যাবে হঠাৎ বাড়ি ভর্তি লোকজনের মধ্যে থেকে একটা ফুটফুটে বাচ্চা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,

---- গুড মর্নিং মামনি।

গতরাতের সব চিন্তা ভাবনা দূর হয়ে গেল যেন এক নিমেষে তার। 

 

আত্ম বিশ্লেষণ এবং জীবন-দর্শণ থেকে জয়তী একথা উপলব্ধি করেছে যে শুধু কি সম্বন্ধের বিয়েতে অপশন থাকে না, না কি ভালোবাসার বিয়েতেও কোন অপশন থাকে না। আসলে সবটাই নির্ভর করে সময়ের উপর।কার কখন কাকে দরকার হয় কে বলতে পারে! 


তবে আজ যদি অনিমেষবাবু জয়ীকে দেখতেন তবে বুঝতেন পরিবেশ পরিস্থিতি কিভাবে একটা অন্তর্মুখী ,লাজুক, নরম স্বভাবের মেয়েটিকে দায়িত্বশীল ও হাসিখুশির রাণী করে তুলেছে তা সত্যিই সকলের শেখার বিষয়। নিজের দুঃখকে চেপে রেখে বাড়ির আর সকলকে সুখী করতে কি আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে ঐ মুর্শিদাবাদের মেয়েটা!


আজকাল আর বমি পায়না মদের গন্ধে তার। তবে পরিবর্তনও হয়েছে ধ্রুব'র। আগের মতো রোজ দিন আর সে ড্রিঙ্ক করে না। তবে শনি রবি বাড়িতে সে থাকে না। আবার সোমবার থেকে এক সুস্থ মানুষ সে। জয়তী নিজেকে সংসারের কাজে মগ্ন রেখেছে। দোকান বাজার করে নিজেই। আর দেওরের ছেলেটি তার সারাক্ষণের সঙ্গী হয়েছে। হানিমুন বলতে দুজন মিলে কাঠমান্ডু আর গ্যাংটক ঘুরে এসেছে। তারপর আর কোথাও বের হয় নি তারা।


আজ সব কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে জয়ীর । এই তিনটে মাস কিভাবে যে রাত দিনটা কেটেছে তা বাড়ির আর সবাই এর চেয়ে জয়তী বোধ হয় বেশী অনুভব করেছে। 


 যে মানুষটা সকাল বেলায় দেরি হলে ঘুম থেকে উঠতে দরজায় লাথি মেরে যেতেন সেই মানুষটা রোগ শয্যায় জয়তীর হাত ধরে অনেকবার ক্ষমা চেয়ে গেছেন। যোনিতে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। সারাক্ষণ ন্যাপি বদলানো, হাইজিন মেইন্টেন করা, বেড সোরের উপর পরিষ্কার করা সব কাজই করত জয়তী। পচা গন্ধে প্রথম ক'দিন খেতে পারে নি। তারপর ধীরে ধীরে সবটা সহ্য হয়ে এলো তার। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিল জয়ী, মা বিছানা নেওয়া সাথে সাথেই মা ছেলের সম্পর্কের মধ্যে একটা ফাটল দেখা দিয়েছিল। যে মা সারাক্ষণ ধ্রুব, ধ্রুব করে প্রশ্রয় দিতেন সব বাজে কাজের, সেই মা ধ্রুবকে দু চোক্ষে দেখতে পারতেন না। এতে একদিকে ভালো হল জয়তীর। ধ্রুব যেন আস্তে আস্তে বাইরের দিক থেকে নিজেকে গুটাতে লাগলো। মা যেন এটাই চেয়েছিলেন।


শেষের তিনটে মাস শাশুড়ি আর বৌমা যেন বন্ধু হয়ে গিয়েছিলো। আজ মাকে দাহ করে ফেরার পর ধ্রুব'র কাছে যেতেই সে জয়তীকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদতে থাকলো, সেই সময় জয়তী কানে ভেসে আসতে লাগলো হেমবালার শেষ কয়েকটা কথা,

''বৌমা আমি তোমার কোলে ফিরতে চাই।''


জয়ীর দুচোখ গড়িয়ে কখন যে বন্যা বইছে সে নিজেও জানে না!

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama